• কবিতা

    কবিতা- জাগতিক প্রেম বনাম অনন্ত প্রেম

    জাগতিক প্রেম. বনাম অনন্ত প্রেম
    – সঞ্চিতা রায় 

     

     

    নদীর তীরে বসে সূর্যাস্ত দেখছিলাম,
    মন এক অনাবিল আনন্দে ভরে যাচ্ছিল,
    দিনমনি তার লাল আভা ছড়িয়ে দিচ্ছিল
    দিকে দিকে, একেই কি বলে কনে দেখা আলো?
    প্রকৃতির সাথে মিলে মিশে এক হয়ে গিয়েছিলাম।
    হঠৎ তুই বলে উঠলি, ভালবেসেছিস কোনোদিন?
    ভা..লো..বা..সা- ভা..লো..বা..সা গুরুগম্ভীর শব্দ যেন,
    তবে বল প্রেম করেছিস কারুর সাথে কখন ও?
    হা হা করে হেসে উঠলাম, বললাম,
    আমার প্রেম জগৎ জুড়ে ব্যপিত।
    কখনও প্রেমে পরেছি, কারুর বুদ্ধিদীপ্ত চোখের!
    কখন ও বা হারিয়েছি, কারুর ঢেউ খেলান চুলে।
    কখন ও বা পাগল হয়েছি কারুর অপূর্ব কথার ভঙ্গিমায়।

    ওই যে নদীর স্রোতকে দেখছিস সেও আমার প্রেম।
    ওই যে দূর আকাশে উড়ছে পাখির দল,
    ওদের মুক্তির আনন্দ আমার অনন্ত প্রেম।
    আর সমুদ্র, সে তো আমার চিরপ্রেমিক,
    বা বলতে পারিস, আমি ওই তরঙ্গরাশির চিরপ্রেমিকা
    আমার প্রেম ছড়িয়ে আছে, গাছগাছালির সবুজে।
    আমার প্রেম বর্ণময় ওই ফুলেদের সাথে।
    তুই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলি আমার দিকে।
    আজ কেন যে, তোর চোখের তারায় হারিয়ে গেলাম!
    আমার জগৎ জুড়ে ব্যপ্ত প্রেম তোর কাছে ধরা দিল।
    তোর চোখে দেখলাম আমার সর্বনাশ।
    ছিলাম অনন্ত আকশের মুক্ত পাখি,
    এই সুন্দর মুহূর্তে ধরা পরলাম তোর প্রেমপাশে।
    ভালবাসা বাধলো বাসা তোর হৃদয় আকাশে।

  • কবিতা

    কবিতা- মেঘচিঠি

    মেঘচিঠি
    – সঞ্চিতা রায়

     

     

    তুমি আর আমি একসঙ্গে
    যখন মেঘদূত পড়তাম,
    মনে পড়ে তুমি বলেছিলে,
    কোনোদিন যদি দূরে চলে যাও,
    তুমিও মেঘের সাথে বার্তা পাঠাবে।
    আমি তাই পথ চেয়ে ছিলাম।
    আজ যখন জলদগম্ভীর স্বরে
    মেঘ ডেকে উঠলো, ছুটে আকাশের
    দিকে তাকিয়ে দেখি, মেঘের গায়ে
    লেখা আমার নাম, লেখা আছে
    “ভালবাসি আজও তোমায় খুউউব।”
    হঠাৎ করে বৃষ্টি এলো, বৃষ্টিকে যারা
    কান্না বলে,আমি তাদের দলে নই।
    মনে হল তোমার ভালবাসার বিন্দুগুলো
    এই মিষ্টি বৃষ্টিকে করেছে সৃষ্টি।
    ঠাণ্ডা লাগবে জেনেও, ভিজলাম
    প্রাণ ভরে। একি অপূর্ব অনুভূতি।
    যেন বহুদিন পরে তোমার স্পর্শ পেলাম।
    মেঘের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বললাম,
    “আমি আজও তোমারই আছি,ভালবাসি আজও।”
    মেঘটা ভেসে ভেসে কোথায় যেন চলে গেল।
    আরেক খণ্ড মেঘ উড়ে এসে, হালকা ভাবে
    ডেকে জানিয়ে দিল “প্রেয়সী আমার ভাল থেকো”
    পাখির পালকের মত হালকা হয়ে গেছে মন।
    ভাসছে মেঘের সাথে মন আমার।
    ভাল থেকো প্রিয় সাথী আমার।

  • গল্প

    গল্প- পরিপূর্ণতা

    পরিপূর্ণতা
    – সঞ্চিতা রায়

     

     

    হিয়ার আজ সাত বছরের জন্মদিন। যেদিন হিয়াকে আশ্রম থেকে সার্থক আর কোয়েল নিয়ে এসেছিল‘সেই দিনটাকেই তারা জন্মদিন হিসাবে পালন করে। মাত্র পাঁচ মাস বয়সে হিয়াকে তারা নিয়ে এসেছিল। অনেক স্নেহ অনেক ভালোবাসায় হিয়াকে তারা সব সময় ভরিয়ে রাখত। কোয়েল আর সার্থক যখন জানতে পারে তারা বায়োলজিকাল শিশুর বাবা মা হতে পারবে না,তখন ই তারা এই সিদ্ধান্ত নেয়। হিয়াকে সমাজের মানুষ ভুল বোঝানোর আগেই কোয়েল একদিন ওকে বলে,ছোট্ট সোনা ভগবান তোমাকে আমার জন্য আশ্রমে রেখে গিয়েছিল,আমি আর তোমার বাবা সেখান থেকে নিয়ে এসেছি। ঠিক করে সময় সুযোগ মত ওকে সব বুঝিয়ে বলবে। সার্থক ও খুব আদরে মানুষ। কিন্তু ওর যখন চব্বিশ বছর বয়স তখন ওর বাবা মা এক দুর্ঘটনা য় মারা যান। টাকা পয়সা যথেষ্টই রেখে গিয়েছিলেন তার বাবা মা। তিরিশ বছর বয়সে সে বিয়ে করে। এক সময় সার্থক দের বাড়ি তার ঠাকুমা, দাদু ,বাবা ,মা ,পিসি সবাইকে নিয়ে পরিপূর্ণ ছিল। প্রথমে ঠাকুমা পরে দাদু মারা যান। পিসির বিয়ে হয়ে যায়। সার্থক দাদু ঠাকুমার অভাবটা বড় বেশী অনুভব করত। তাই তার বাবা তাকে মাঝে মধ্যে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে যেত,সেখানে দাদু ঠাকুমার বয়সী অনেককে পেয়ে সার্থকের মন ভরে উঠত। রবিবার এলেই সে দাদু ঠাকুমাদের সম্পর্শ পেতে বৃদ্ধাশ্রমে চলে যেত। আজ হিয়ার জন্মদিনে হিয়া প্রচুর উপহার পেয়েছে। সে খুব খুশি । কিন্তু বাবার কাছে গিয়ে সে হঠাৎ বলে “বাবা তোমার কাছে আজ একটা উপহার চাইবো,দেবে?” সার্থক বলে “বলো ছোট্ট সোনা তোমার কি চাই”। “আমাকে ঠাকুমা দাদু এনে দাও,আমার বন্ধু আদৃযার বাড়িতে গিয়ে দেখেছি,ও কেমন ঠাকুমা দাদুর কোলে চড়ে গল্প শোনে,আমার ও খুব ইচ্ছা করে,দাও না বাবা ঠাকুমা দাদু এনে”। সার্থকের নিজের বাবা মা ঠাকুমা দাদুর কথা মনে পড়লো,চোখে জল এল। জন্মদিনে আসা অতিথিদের ও চোখে জল। সত্যি আজকের সমাজে সংসার যখন ভেঙে যাচ্ছে,বয়স্ক মানুষদের বাড়তি মনে করছে অনেক পরিবার তখন ঠাকুমা দাদুর ভালবাসা দেখে মুগ্ধ একটা শিশু।
    আর এটাও ঠিক সার্থক বাবা মায়ের অভাবটা সব সময় অনুভব করে। জ্বর আসলে মনে হয় মা এসে মাথায় হাত বোলালে বোধহয় ভাল লাগতো। বাড়ি থেকে বেড়ানোর সময় বাবা মায়ের বলা“সাবধানে যাস বাবু”!কথাটার ও অভাব অনুভব করে। বাবার সাথে সে বৃদ্ধাশ্রমে যেত,এখনও যায়। আর চলে আসার সময়“সাবধানে যেও বাবা”কথাটা শুনলে তার মনটা কেমন উদাস হয়ে যায়। ঘটনাচক্রে বৃদ্ধাশ্রমে থাকা এক দম্পতির ছেলের নাম সার্থক। এই দম্পতি তাদের ছেলেকে উচ্চশিক্ষা দেওয়ার ব্যায়ভার বহন করতে গিয়ে বাড়িটাও বিক্রি করে দিয়েছিলেন। ছেলেরএখন বিদেশে। বাবা মায়ের খোঁজ ও নেয় না। তারা জানেন তাদের এক নাতনী আছে,কিন্তু নাতনীকে তারা দেখেননি। ছেলের বিভিন্ন বয়সের ছবি দেখে দেখেই তারা ছেলেকে পাশে পাওয়ার সুখ অনুভব করতে চান। সার্থক আসলে তারা ভীষণ ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। হয়তো ছেলের সঙ্গে সমনাম হওয়ায় টানটা আরো বেরে যায়। মেয়ের কথা শুনে সার্থকের মনে পড়লো সেই বৃদ্ধ দম্পতি র কথা। মনে হ‘ল এনাদের যদি বাড়িতে আনা যেত,তবে হয়তো বাড়িটা আবার পরিপূর্ণতা লাভ করবে। আর ওই দম্পতির ও ভাল লাগবে একটা পরিবার পেলে। জন্মদিনের পরের দিন ছিল রবিবার। সার্থক বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে সরাসরি তাদের বলল“আমার নামটা তোমাদের ছেলের সঙ্গে এক,আমি তোমাদের ছেলে হয়েই থাকতে চাই,তোমাদের বাড়ি নিয়ে যাব। ”কিন্তু”!কোনো কিন্তু নেই ,আমি আশ্রম কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো।
    সন্তান দত্তক নেওয়া গেলে ,বাবা মা দত্তক নেওয়া যাবে না কেন?আচ্ছা বেশ এক্ষেত্রে আইনি জটিলতা থাকলে আমি এনাদের দত্তক সন্তান হ‘ব। মা বাবা তোমাদের ফর্ম এনে দেব, ফিল আপ করে দিও। আর যা যা করার আমি করবো। সার্থকের মুখে বাবা মা ডাক শুনে তাঁদের চোখে জল এল। হ্যাঁ তাঁরা এবং আশ্রম কর্তৃপক্ষ রাজী হ’লেন।
    আজ সার্থকের বাড়ি সত্যিই পরিপূর্ণ। হিয়া পেয়েছে ঠাকুমা, দাদু। কোয়েল আর সার্থক পেয়েছে বাবা মা। আর তাঁরা দুজন পেলেন ছেলে মেয়ে নাতনী। এ যেন চাঁদের হাট। সত্যিই সার্থকের নাম আজ সার্থক।

  • কবিতা

    কবিতা- নদী

    নদী
    – সঞ্চিতা রায়

     

     

    তুমি তো আমারই নদী ।
    সুউচ্চ পাহাড় থেকে ছুটে আসছো আমার কাছে।
    যখন তুমি খরস্রোতা, যখন তুমি উদ্দাম
    তখন তুমি পাহাড়কে ভালবেসে তাকে জড়িয়ে থেকেছো। ঝর্ণার বন্ধু হয়েছো।
    কখন ও ভাবনি, সাগর আছে তোমার প্রতীক্ষায়। ভাবার অবকাশ ছিল না যে।
    তখন তুমি যে পূর্ণযৌবনা ছিলে।
    গাছ, পাহাড় পাহাড়ী নুড়ি, সবাই
    মগ্ন ছিল তোমার উন্মত্ত স্পর্ষ কামনায়।
    মধ্যবেলায় সমতল ছিল তোমার সাথী।
    সমতলের সাথীরা ভেসেছে তোমার সাথে।
    হেসেছে, খেলেছে তোমার সাথে।
    কিন্তু দেখো শেষে কিন্তু আমার সাথেই মিলন হ‘ল। আমি যে তোমার নিয়তি।
    আমি যে তোমার জন্য অপেক্ষায় থাকি।
    সাগরের সাথে মিলনেই নদীর সার্থকতা।
    তখন হয়তো তুমি বিগত যৌবনা।
    আমি তবুও তোমার সাথে মিলি।
    যায় আসেনা কোনো কিছুতেই।
    আমি যে তোমায় ভালবাসি।
    তাই তো জীবনের শেষে বেলাতেও
    মিষ্টি সাগর সঙ্গম ঘটে।
    হ্যাঁ নদী ভালোবাসার জয়
    এমন ভাবেই চিরকাল ঘটে চলে।
    এমনি করেই সাগর নদীর প্রতীক্ষায় থাকে। থাকবে আবহমানকাল জুড়ে।

  • কবিতা

    কবিতা- মুক্ত ভালোবাসা

    মুক্ত ভালোবাসা
    -সঞ্চিতা রায়

     

    ভাবনারা মোর ভেসে বেড়ায় তোমায় ভেবে ভেবে।
    কল্পনাতে উড়ে বেড়াই তোমার সাথে সুখে।
    শীতের রাতে উষ্ণতা হয়ে ছুঁয়ে যাও আমায়।
    জীবনের এক খোলা বারান্দা তুমি।
    দখিনা হাওয়া হয়ে স্পর্শ করো আমায়।
    তবুও মন চায় না তোমায় কোনো বাঁধনে বাঁধতে।
    ভাললাগে বাঁধনহারা এই মিষ্টি ভালোবাসাকে।
    ক্ষণেকের এই কাছে আসার আবেশটাই থাক চির মধুর অনুভূতি হয়ে।
    মাঝে মাঝে মন বড় অবাধ্য হয়।
    চায় যে তোমায় নিবিড় ভাবে কাছে পেতে।
    মন’কে শাসন করি আবার।
    বাঁধনহারা ভালোবাসার মিষ্টি আবেশকে
    শৃঙ্খলে চাইনা বেঁধে ফেলতে।
    তোমার আমার এই মুক্ত ভালোবাসা
    বাঁধনহীন হয়ে উড়ুক নীল আকাশে।

  • অণু গল্প

    অণু গল্প- মানুষ

    মানুষ
    -সঞ্চিতা. রায়

     

    “আমার মেয়ে ভাল হয়ে যাবে তো! ”
    “আমি একজন চিকিৎসক, আমার কাজ রোগীকে সুস্থ করা। আমি তো চেষ্টা করবই, কিন্তু তার আগে বলুন আপনার ফর্সা মেয়েকে আমার মত শ্যামবর্ণার হাতে চিকিৎসা করাবেন কিনা?” ডাক্তার শুভা সেন মুখ তুললেন। এই এলাকায় তিনি ধন্বন্তরী চিকিৎসক। সবাই মনে করেন তাঁর কাছে গেলেই রোগী সুস্থ হয়ে যায়। কার্যক্ষেত্রেও অনেক ডাক্তার যে রোগীকে জবাব দিয়ে দেন, ডাক্তার শুভা সেন তাঁর চিকিৎসায় এই রুগীদের নতুন জীবন দেন। রজতাভ গুপ্ত চমকে উঠলেন। এ কাকে দেখছেন, ছোট বেলায় শুধুমাত্র কালো বলে যার সঙ্গে মিশতে চাইত না রজতাভ ওরফে রজত। মাধ্যমিক পর্যন্ত একই স্কুলে পড়ত রজতাভ ও শুভা। পরে শুভার বাবা বদলী হওয়ায় শুভারা অন্য জায়গায় চলে যায়। দশম শ্রেণীতে সরস্বতীপুজোর প্রসাদ বিতরণের দায়িত্বে ছিল শুভাদের গ্রুপ। শুভা রজতাভকে প্রসাদ দিতে এলে রজতাভ বলেছিল “কালঝ মেয়েদের কাছ থেকে আমি প্রসাদ বা খাবার নিই না..” শুভা খুব কষ্ট পায় মনে মনে। এক ব্যাচে পড়লেও রজত শুভাকে সবসময় এড়িয়ে যেত। পরবর্তীতে শুভা অন্য শহরে আসে, নিজেকে ক্রমাগত পড়াশোনায় উন্নত করে। জয়েন্টে চান্স পেয়ে কলকাতার সবচেয়ে নামী কলেজ থেকে ডাক্তারি পড়ে। চিকিৎসাবিদ্যায় আরো উচ্চ ডিগ্রী লাভ করে। নামী চিকিৎসক হিসাবে খ্যাতি পায়। আর রজত বি.কম পাশ করে বাবার ব্যবসায় যোগ দেয়। আজ তার মেয়ের কঠিন অসুখে সব ডাক্তার যখন নিরাশ তখনই সে শুভা সেনের নাম শোনে, ও আসে। জানতো না কে এই শুভা সেন।
    “কি উত্তর দিলেন না যে, আপনার ফর্সা মেয়েকে আমার মত শ্যামবর্ণার হাতের ছোঁয়া পাওয়াতে বা ওষুধ খাওয়াতে আপত্তি আছে কিনা আগে ভেবে দেখুন, অসুবিধা হলে শহরের কোনো ফর্সা ডাক্তার খুঁজে নিন।”
    “আমি ভুল করেছি, তুই আমার ছোটবেলার বন্ধু আমার মেয়েটাকে বাঁচা..”

    “ভুল করছেন, আমি আপনার বন্ধু নই, কারণ মানুষকে যারা রূপ রঙ দিয়ে বিচার করে আমি আবার তাদেরকে বন্ধু বলে মনে করি না। আর হ্যাঁ, সহপাঠী ছিলাম বটে বন্ধু ছিলাম না। তবে এই শিশুটিকে আমি বাঁচাব, কারণ আমি চিকিৎসক, আমি মানুষকে মানুষ হিসাবে ভাবতে জানি, যতই আপনার মত মানুষরূপী অমানুষের মেয়ে হোক না কেন?”

    রজতাভ হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে রইলো। হ্যাঁ, ডাক্তার শুভা সেনের চিকিৎসায় শিশুটি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।

  • গল্প

    গল্প- আশার আলো

    আশার আলো
    -সঞ্চিতা রায়(ঝুমা)

     

    দুর্গা পুজো এসে গেল,অথচ স্নেহার নতুন জামাকাপড় কেনার কোনো আগ্রহ নেই। চারিদিকে আলো লাগানো হচ্ছে দুর্গা পুজো উপলক্ষে অথচ সেদিকে তাকাতে ইচ্ছা করছে না স্নেহার । অথচ এই মেয়ে অন্যান্য বছর আলো লাগানো হলে অফিসে সারাদিন কাজ করার পরেও ছুটে চলে যেত কোথায় কিভাবে আলো সাজানো হয়েছে দেখার জন্য। কে কোন দিন কি পরবে তাই নিয়ে আলোচনা করতো। সে আজ ঘর অন্ধকার করে বসে আছে। দু’মাস হ’ল পরিস্থিতির চাপে পড়ে বেসরকারী সংস্থার কাজটা ছাড়তে হয়েছে স্নেহাকে। স্নেহা সংস্থাটাকে বা সংস্থার সমস্ত কর্মীদের বড় ভালবাসতো। সংস্থাটাকে এতটাই আপন করেছিল, এতটাই ভালবেসেছিল যে অনেক ভাল ভাল চাকরির অফার সে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তার ধারণা ছিল কাজ করতে গেলে ভালবেসে আবেগ দিয়ে কাজ করতে হবে। কিন্তু পেশাগত জগতে যে আবেগের কোনো দাম নেই সে আজ ভালভাবে বুঝতে পারছে। এই মুহূর্তে তার চাকরি নেই, এটা সে ভাবতেই পারছে না। তার কেবলই অফিসে সবার সাথে আনন্দ করে কাজ করা, টিফিন শেয়ার করা আরো কত মিষ্টি মুহূর্তের কথা মনে পড়ছে। দুপুরবেলা বাড়ি থাকতে বড় অসহ্য লাগছে। কর্মহীন দুপুরবেলা তাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। কিছুতেই পুজোতে নতুন পোষাক নিল না সে। দেখতে দেখতে ষষ্ঠি এসে গেল, পাড়ার চারিদিকে আলো আর স্নেহা ঘরে আলো নিভিয়ে বসে আছে। বাড়ির অন্যরাও স্নেহার জন্য পুজোতে আনন্দ করতে পারছে না। বাড়ির একজন এইরকম বিষন্ন হয়ে থাকলে অন্যদের কি ভাল লাগে। কেউ মন্ডপে যেতে চাইছিল না। স্নেহার মা বাবাকে একরকম জোর করে পাড়ার পুজোতে পাঠিয়ে দিলেন স্নেহার ঠাকুমা। নাতনীর ঘরে এসে আলো জ্বেলে দিলেন ঠাকুমা। “ঠাম্মি প্লীজ আলোটা বন্ধ করে দাও, আর আমাকে একটু একা থাকতে দাও”। পাশে এসে বসে নাতনীর মাথায় হাত বোলালেন ঠাকুমা। “আমাকে একটা গান শোনাবি সোনাই”। ঠাকুমা স্নেহাকে সোনাই বলে। ‘ঠাম্মি আমার ভালো লাগছে না”। “তোকে একটা কথা বলি শোন্ এক দরজা বন্ধ হলে দশ দরজা খুলে যায়”। তাকিয়ে দেখ তোর জন্য কত পথ খোলা আছে। আর তোর গলায় এত সুর, তুই তার অমর্যদা করবি? প্রতিভার অসম্মাান করলে কিন্তু ভগবান অসন্তুষ্ট হন। স্নেহার মনে পড়লো, সত্যিই তো সে যে গান গাইতে বড় ভালবাসতো। গান ছাড়া জীবন ভাবতেও পারতো না। মা সরস্বতী তার গলায় অপূর্ব সুর দিয়েছেন। স্কুলে, কলেজে সবাই তার গান মুগ্ধ হয়ে শুনতো। ঠাকুমা নিজেই হারমোনিয়ামটা নিয়ে এলেন। হারমোনিয়াম দেখে মনটা স্নেহার আবেগ আপ্লুত হ’ল। গান শুরু করলো। সত্যিই তো তার গলা থেকে সুর হারিয়ে যায় নি। সকাল আটটায় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে রাত আটটায় বাড়ি ঢুকে তার আর গান করার মত ইচ্ছা থাকতো না। রবিবার দিনগুলো পর্যন্ত মাঝে মাঝে কোম্পানিকে দিতে হ’ত। কাজের চাপে চাপা পরেছিল তার সকল সুকুমার বৃত্তি। গান, লেখালেখি, বইপড়া সবই যেন হারিয়ে গিয়েছিল। নিজের গলা শুনে নিজেই যেন মুগ্ধ হ’ল। হ্যাঁ, পুজোর অনুষ্ঠানে গান গাইল সে। মুগ্ধ হয়ে শুনলো সবাই। অভিভাবক অভিভাবিকারা এগিয়ে এসে তাদের ছেলে মেয়েদের গান শেখানে অনুরোধ করলেন। স্নেহার মনে হ‘ল সত্যিই তো সে যা শিখেছে তা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার। তার ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে লাগলো। কোম্পানিতে যা মাইনে পেত, তার চেয়ে অনেক বেশী রোজগার হতে লাগলো তার। যাদের ক্ষমতা কম তাদের একেবারে কম পারিশ্রমিক বা বিনা পারিশ্রমিকেও সে গান শেখাতে শুরু করলো। বাড়ির একটা ঘরেই সে গানের ক্লাশ নিত। গানে গানে মুখরিত তার ঘরে এক অপূর্ব পরিবেশ সৃষ্টি হ’ত। ক্রমে তার সিডি বেরালো। গান শুনে গান শেখা যায়, এমন শিক্ষামূলক সিডি-ও সে বার করলো। ইউটিউবেও গান শেখানো রেকর্ডিং তৈরী করলো। আজ দীপাবলী। ছাত্রছাত্রীরা সারা বাড়িতে প্রদীপ, মোমবাতি জ্বালিয়েছে। তার উপর টুনি দিয়েও ঘর সাজিয়েছে। অসাধারণ লাগছে বাড়িটাকে। গান শেখানো ছাড়াও সে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের পড়ায়। তারাও সামিল এই আনন্দ অনুষ্ঠানে। শব্দবাজী নয় আলোকবাজি জ্বালিয়ে আনন্দে উদ্বেল তারা। তাদের মিস’ই তাদের বাজি, বাতি সব কিনে দিয়েছেন। মিস’ও তাদের চোখের মণি । তারাও মিসের চোখের মণি। স্নেহার পরিবারের সবাই আনন্দ করছে। ঠাম্মি নিজে খিচুড়ি, বেগুনভাজা আর লাবড়া রান্না করছেন। সবাই মিলে আজ ছাদে খাওয়া দাওয়া। সব কিছুই বোধহয় সম্ভব হয়েছে ঠাম্মির উৎসাহ ব্যঞ্জক কথায়-তিনি বলেছিলেন, ‘এক দরজা বন্ধ হলে দশ দরজা খুলে যায়’। স্নেহা আলোক উজ্জ্বল বাড়িটার দিকে তাকিয়ে ভাবছে সে তার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে, মানুষের মধ্যে সব সময় আশাব্যঞ্জক বার্তা ছড়িয়ে দেবে সবসময়। খুঁজে দেখবে কার মধ্যে কি প্রতিভা আছে, চেষ্টা করবে সেই প্রতিভার যেন পূর্ণ বিকাশ ঘটে। এতদিন তার গানের বা পড়ানোর প্রতিষ্ঠানটার কোনো নাম ছিল না। এবার সে একটা নামফলক দিল, প্রতিষ্ঠান একই নামে পরিচিত হ’ল – ‘আশার আলো’।
    হ্যাঁ জীবনে বাঁধাবিঘ্ন যাই আসুক নিরাশার অন্ধকারকে দূরে সরিয়ে আনন্দ খুশির আলোকে জীবনে
    জ্বেলে দেওয়ার কাজ স্নেহা, তার পরিবার এবং ছাত্রছাত্রীরা করতে থাকবেই।

  • প্রবন্ধ

    প্রবন্ধ- আইসক্রীম

    আইসক্রীম
    -সঞ্চিতা রায় (ঝুমা )

     

     

    আইসক্রীম আমাদের প্রায় সকলেরই একটি বিশেষ ভালবাসার খাবার। আইসক্রীম ভালবাসেনা এমন মানুষ বেশ বিরল। তাই আমাদের এই পুজো সংখ্যায় আইসক্রীম নিয়ে ছোট প্রবন্ধ হিসাবে কিছু লিখতে মন চাইলো। তথ্যগুলো যথাসম্ভব সংগ্রহ করে শব্দ দিয়ে গেঁথে ফেলার চেষ্টা করছি। আচ্ছা আইসক্রীম শব্দের কোনো সঠিক বাংলা আছে কি?অনেকে আইসক্রীম কে কুলফী,মালাই,বা একসঙ্গে কুলফিমালাই ইত্যাদি বলে থাকেন। আবার আক্ষরিক ভাবে বললে আইস মানে বরফ আর ক্রীম মানে ননী ,নবনী ইত্যাদি ,অর্থাৎ একসঙ্গে বললে বরফ নবনী। কিন্তু এই কথাটি প্রচলিত নয়। যাই হোক না কেন,আইসক্রীম কে যে নামেই ডাকো তা খেতে সুস্বাদু এবং সুন্দর।
    এবার আসি,আইসক্রীম এর ইতিহাসে। কবে কিভাবে পৃথিবীতে প্রথম আবিষ্কার হয়েছিল তা খুব স্পষ্ট ভাবে জানা না গেলেও বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ ঘেটে মোটামুটি একটা ধারণা করা যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইওরোপের মানুষ বরফের সাথে মিষ্টি মিশিয়ে একধরণের পানীয় গ্রহণ করতো সেটাই আইসক্রীমের আদি রূপ। তথ্য ঘেঁটে অনেকে বলেছেন প্রাচীন গ্রীসে নাকি বরফের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। গ্রীক চিকিৎসক হিপ্পোক্র্যাটস নাকি বরফে মধু মিশিয়ে খাওয়ার কথা বলতেন রোগীদের। আবার অনেকে মনে করেন, যে খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দী তে রোম সম্রাট নিরো র রাজদরবারে পাহাড় চূড়া থেকে বরফ আনিয়ে সুরা ফলের রস ,মধু মিশিয়ে এক ধরণের পানীয় গ্রহণের যে রেওয়াজ ছিল, সেটাই আইসক্রীমের আদিরূপ। কেউ কেউ বলেন,মার্কো পোলো প্রাচ্য পরিক্রমা সেরে ইতালিতে ফেরার সময় নাকি বরফ থেকে পানীয় বা আইসক্রীমের রেসিপি নিয়ে এসেছিলেন। তিনি যখন চীন সম্রাট কুবলাই খানের দরবারে এসেছিলেন,একদিন বেজিং(পিকিং) এর রাস্তার বেড়ানোর সময় দেছেন, একজন লোক ঠেলাগাড়ি তে করে বরফ জমাট বাঁধা দুধ আর ফলের রসের মিশ্রণ বিক্রি করছেন। খাবার টি মার্কো পোলোর ভাল লাগে। তাই তিনি রেসিপীটি ইতালিতে নিয়ে আসেন। ইতালির মেয়ে ক্যাথেরিন ফ্রান্সের রাজপুত্রকে বিয়ে করে যখন ফ্রান্সে আসেন তখন সঙ্গে নিয়ে আসেন কিছু পাচক। তারা ক্যাথরিনের শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে আইসক্রীম খাওয়ান। ফ্রান্সেও জনপ্রিয় হয় আইসক্রীম। ফ্রান্সের মেয়ে হেনরিয়েটা মারিয়া ইংল্যাণ্ডে যখন বিয়ে করে আসেন,তার সাথে আইসক্রীমের রেসিপী পৌঁছায় ইংল্যাণ্ডে।
    ইংরেজরা আমেরিকায় উপনিবেশ স্থাপন করলে আমেরিকায় প্রচলন হয় আইসক্রীমের। ১৭৪৪ সালে ১৭ই মে মেরিল্যাণ্ড প্রদেশের গভর্নর উইলিয়াম ব্লাডেন এর বাড়ির নৈশভোজে জনৈক ব্যক্তি আইসক্রীম খেয়ে তাঁর স্ত্রীকে আইসক্রীম এর প্রশংসা করে একটি চিঠি লিখেছিলেন। সম্ভবত ওটাই ওদেশে আইসক্রীম এর সূত্রপাতের সময়। শোনা যায় প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন নাকি আইসক্রীমের পিছনে অনেক টাকা ব্যয় করেছিলেন। আমাদের দেশে প্রথম দিকে বরফ স্যাকারিন কৃত্তিম রঙের মিশ্রণকে আইসক্রীম হিসাবে খাওয়া হ’ত। মোঘল রাজারা নাকি হিন্দুকুশ পর্বত থেকে বরফ আনিয়ে তার সঙ্গে ফল কেটে মিশিয়ে একধরণের সরবতের মত খেতেন। কুলফি আইসক্রীম কে ভারতের আদি আইসক্রীম বলে মনে করা হয়। এটাকে “দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহ্যপূর্ণ আইসক্রীম ”বলে বর্ণনা করাহয়েছিল। মনেকরা হয় এটি পার্সিয়ান আইসক্রীম বাসটানি সোন্নাটিকে অনুকরণ করে করা হয়েছিল। একসময় কাঠি চুষে খাওয়া হ’ত। ঠেলাগাড়ি আইসক্রীম আইসক্রীম বলে হাঁক দিয়ে যেত। খিদিরপুরে এল ম্যাগনেলিয়া। সম্ভবত ৬০এর দশকে কোয়ালিটি আইসক্রীম এসে আইসক্রীম কে জনপ্রিয় করে। এরপর একে একে রলিক,তুলিকা,আমূল ভাইস মেট্রো ইত্যাদি আইসক্রীম বাজারে জনপ্রিয় হয়। ১৮৫১ সালে মেরিল্যাণ্ডে জেকব ফুসেল নামে এক ব্যাক্তি আইসক্রীম এর প্রথম বিপনন কেন্দ্র চালু করেন। ক্রমে তা শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে। ১৮৫১ সালে বাল্টিমোরে প্রথম কারখানায় আইসক্রীম উৎপাদন শুরু হয়। কারখানায় আইসক্রীম তৈরীর জন্য সাধারণত দুধ,ক্রীম(দুগ্ধজাত ফ্যাট),দুগ্ধজাতীয় প্রোটিন,জল,গ্লুকোজ,মাখন বা মাখন তেল,চিনি,সুগন্ধী ,স্টেবিলাইজার ও ইমালসিফায়ার (জল তৈলাক্ত পদার্থ মিশতে সাহায্য করে ও আইসক্রীমকে মসৃণ থাকতে সাহায্য করে)আইসক্রীমে বৈচিত্র আনতে ভ্যানিলা,স্ট্রবেরী,চকোলেট ,কাজু কিসমিস ,অরেঞ্জ ফ্লেভার,বাটার স্কচ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
    প্রাথমিক উপাদান বা উপকরণ গুলোকে প্রথমে মিক্সিং মেশিনে ভাল করে মেশানো হয়। তারপর উচ্চ উষ্ণতায় পাস্তুরাইজেশান পদ্ধতিতে জীবানুমুক্ত করে পরিশোধন করা হয়। এরপর স্টেবিলাইজার ও ইমালসিফায়ার মিশিয়ে হোমোজিনাইজার যন্ত্রের মাধ্যমে ফ্যাটকে সূক্ষাতিসূক্ষ করে ভেঙে মসৃণ করাহয়। এরপর ফলের চূর্ণ বা সুগন্ধী রঙ ইত্যাদি মেশানো হয় এবং মাইনাস ৪ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে কিছুক্ষণ রাখা হয়। এরপর একটানা হিমায়ক(কন্টিনিয়াস ফ্রিজার)এ মোটামুটি মাইনাস ৫ ডিগ্রী তে রেখে ঠাণ্ডা হাওয়া দেওয়ার পর বেরিয়ে আসে আইসক্রীম । এরপর কাপ ,ব্লক ইত্যাদিতে প্যাকিং করে মাইনাস ৩০ মাইনাস ৪০ সেন্টিগ্রেড ডিগ্রী তে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এরপর প্রয়োজন মত বিপণন করা হয়। যেহেতু ছোট থেকে বড় সকলেরই খুব প্রিয় খাবার এই আইসক্রীম ,তাই ঘরে আইসক্রীম তৈরী করার একটা প্রাথমিক ধারণা দিয়ে লেখাটা শেষ করছি। ধরা যাক ঘরে ভ্যানিলা আইসক্রীম তৈরী করছি,প্রথমে মিল্ক পাউডার ও জল ভাল করে মিশিয়ে ফেটিয়ে নিতে হবে। আঁচে বসাতে হবে। ফুটে উঠলে চিনি ভালোভাবে মেশাতে হবে। এক্ষেত্রে চিনির সাথে যদি জি এম এস ও সি এম সি মেশালে ভাল হয়। এগুলো বড়বাজার,এজরা স্ট্রীটে পাওয়া যায়। এতে আইসক্রীম মোলায়েম হয়। এবার ভাল করে নেড়ে নিতে হবে। এবার একটু এরারুট বা কাস্টার্ড পাউডার মিশাতে হবে। এবার মিশ্রণটা ঠাণ্ডা করতে হবে। ঠাণ্ডা হলে ভ্যানিলা এসেন্স মিশিয়ে আর একবার ভাল করে নাড়তে হবে। এবার নির্দিষ্ট কৌটো বা আইসক্রীম কাপে রেখে ,ডিপ ফ্রিজে (ডিপ ফ্রিজকে কোল্ডেস্ট পয়েন্টে রেখে )রাখতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পরে পরিবেশন করা যাবে। এটা একটা প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হ’ল মাত্র। ভ্যানিলার বদলে যে যা ফ্লেভার পছন্দ করেন,ব্যবহার করতে পারেন। যেমন স্ট্রবেরী ফ্লেবার বা চকোলেট আইসক্রীম তৈরী করতে চাইলে কোকো পাউডার। চাইলে ঘরে কাসাটা আইসক্রীম ও তৈরী করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আগে থেকে ভ্যানিলা ও স্ট্রবেরী আইসক্রীম চকোলেট আইসক্রীম তৈরী করে রাখতে হবে পূর্ব বর্ণিত পদ্ধতি অনুযায়ী। আর আনতে হবে ফ্যাটলেস স্পঞ্জ কেক। ঠাণ্ডা কেকটার উপর প্রথমে ভ্যানিলা তারপর স্ট্রবেরী তারপর চকোলেট স্তর দিতে হবে। ডিপফ্রিজের পয়েন্ট আগে থেকেই ঠাণ্ডা করে রাখতে হবে। ঠাণ্ডা করে রাখতে হবে আইসক্রীম রাখার পাত্রটাও। ঢাকা দিয়ে ডিপফ্রিজে রাখতে হবে। সম্পূর্ণ জমে গেলে কেটে পরিবেশন করা যাবে।
    কাঠি আইসক্রীম বা ললিপপ আইসক্রীম ও তৈরী করা যায় বাড়িতে। এক্ষেত্রে দুধ,কনডেন্সন্ড মিল্ক,জিলেটিন,অরেঞ্জরঙ,অরেঞ্জ এসেন্স,চিনি ইত্যাদি লাগবে। দুধ,কনডেন্সন্ড মিল্ক ও চিনি মিশিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে নেড়ে নিতে হবে। নামিয়ে জিলেটিন মিশিয়ে দুধ ঠাণ্ডা করতে হবে। ফ্রিজের পয়েন্টকে সব চেয়ে ঠাণ্ডা করে মিশ্রটি কিছুক্ষণ রেখে অল্প জমলে বাইরে এনে অরেঞ্জ এসেন্স ও রঙ মিশিয়ে স্টিক আইসক্রীম তৈরীর পাত্রে(কিনতে পাওয়া যায়)ঢেলে কাঠের স্টিক লাগিয়ে জমতে দিতে হবে। নির্দিষ্ট পাত্রটি না থাকলে কাগজের কাপ ব্যবহার করা যেতে পারে। জমে গেলে কাগজটা খুলে নিতে হয়।
    পরিশেষে একটা মজার কথা বলে শেষ করছি। আইসক্রীম সাধারণত কোনো পার্টিতে ডেসার্ট হিসাবে খাওয়া হয়। Stressed কথাটার উল্টালে desserts কথাটি পাওয়া যায়। তাই বলা যেতে পারে Stressed ও desserts পরস্পরের পরিপূরক বা desserts খেলে Stressed হওয়া থেকে বাঁচা যায়। এটা মজা। কিন্তু এটা সত্য যে আইসক্রীম খাওয়ার মধ্যে সত্যিই একরাশ মজা ও আনন্দ পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে আরো সুন্দর স্বাদে ভরপুর আরো অনেক আইসক্রীম আমরা পাব,এই আশা রাখি।
    তথ্য সংগ্রহ ইন্টারনেট ও কিছু পত্রপত্রিকা

  • গল্প

    গল্প- সময়

    সময়
    -সঞ্চিতা রায় (ঝুমা)

     

     

    পুরীর সমুদ্র তটে বসে বসে বেহালা বাজাচ্ছে প্রত্যুষা। আজকাল ও পদবী বর্জন করেছে রীতিমত আইনের স্বীকৃতি নিয়েই। সব জায়গায় শুধু প্রত্যুষা লেখা শুরু করেছে। বেহালা সুর ভীষণ সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরী করেছে সমুদ্র তটে। দিনমনি আজকের দিনের মত তার রাঙা আভা চারিদিকে ছড়িয়ে বিদায় নিচ্ছেন। সমুদ্র এবং পশ্চিম আকাশ লাল আভায়িত। প্রত্যুষা সান্ধ্য রাগ বাজাচ্ছে চারিদিকে অপূর্ব এক সঙ্গীতময় পরিবেশ সৃষ্ঠি হয়েছে। এক একটা রাগ বাজানো শেষ হলে প্রত্যুষা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিচ্ছে। আর সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। সমুদ্র যে তার খুব প্রিয়। নুলিয়াদের কাছ থেকে চেয়ার নিয়ে বসেছিল। খুব কাছে কারুর একটা অস্তিত্ব টের পেল প্রত্যুষা। কেউ একজন চেয়ার ভাড়া করে কাছেই বসেছে।
    “কেমন আছ ভোর?” প্রত্যুষা চমকে উঠলো। এই নামে তাকে তো শুধু একজনই ডাকতো। পাশের চেয়ারে বসে প্রভাত। হ্যাঁ প্রভাত’ই তো।
    “তুমি! বেড়াতে এসেছো?” খুব শান্ত গলায় বললো প্রত্যুষা।
    “হ্যাঁ বেড়াতে!”। ভোর, তুমি কার সাথে এসেছো?”
    “আমার সঙ্গীতের সাথে দেখছো না” বলে বেহালার দিকে তাকালো প্রত্যুষা।
    “তুমি”?
    ”আমিও একাই বেড়িয়ে পরেছি”।
    “এবার আমি উঠি, আমার হোটেলের ব্যালকনিতে বসে অনেক রাত পর্যন্ত আমি বেহালা বাজাই আর সমুদ্র দেখি। আমার ভাল লাগে। যাই।” প্রত্যুষার চলে যাওরার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলো প্রভাত।
    ব্যালকনিতে বসে সমুদ্র দেখছে প্রত্যুষা। বেহালাটা ঘরের বিছানায়। মন ফিরে ফিরে যাচ্ছে ফেলে আসা দিনগুলোতে।
    “এই প্রত্যুষা আর কত স্নান করবি? চল চল এবার হোটেলে চল।”
    “আরে দাঁড়াও না, আনন্দ করতে এসেছি এত তাড়া কিসের? আমি এখন ঢেউদের সাথে খেলা করছি এখন উঠবো না।” খুব খুব ভাল লাগে প্রত্যুষার সমুদ্রে স্নান করতে।
    “আরে আবার ঝিনুক কুড়াতে লাগলি, ভিজা জামা কাপড়ে, ঠাণ্ডা লাগবে। চল চল।” “যাচ্ছিরে বাবা যাচ্ছি”। প্রত্যুষার এই প্রাণ চঞ্চলতা দেখে একজন খুব মজা পাচ্ছিল। মনে মনে ভাবছিল, আমি যদি ওর হাত ধরে ঢেউয়ের সাথে লাফাতে পারতাম। হ্যাঁ, প্রথম দেখাতেই প্রত্যুষাকে ভালো লেগেছিল প্রভাতের। ধীরে ধীরে আলাপ পর্ব শেষ হ’ল। এরপর প্রভাত আর প্রত্যুষার ডুয়েট গান, জমজমাট আড্ডা এসব নিয়ে বেশ কেটে গেল কয়েকটা দিন। প্রভাতের বাবা মায়ের ও বেশ লাগলো প্রত্যুষাকে। ফিরে আসার দিন এসে গেল। ঠিকানা, ফোন নম্বর বিনিময় হ’ল। ঘটনাচক্রে দু’জনেই এক শহরের। প্রত্যুষার বাড়ি বর্ধমানে। আর প্রত্যুষ ওখানে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসেছিল। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বেরে ওঠে।
    প্রভাত বলে, “দেখো,আমাদের দু’জনের নামের মানে এক। আমরা দু’জনেই ভোর। আমি তোমাকে ভোর বলে ডাকবো”। বন্ধুত্ব প্রেমে পরিণতি পায়। প্রভাতের বাবা মা জলপাইগুড়ি থাকতো। আর প্রভাত কলকাতায় আই. টি. সেক্টারে চাকরি পায়। তাই প্রভাত চাকরি পাওয়ার সাথে সাথে প্রভাতের বাবা মা দু’জনের বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। প্রত্যুষার বাবা মায়েরও ছেলে খুব পছন্দ হয়। চারহাত এক হয়ে যায়।
    প্রাণভরা ভালবাসায় দু’জনে দু’জনের জীবন ভরিয়ে তুললো।;মিষ্টি আদর, বেড়াতে যাওয়া সব কিছু নিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো তাদের দাম্পত্য। প্রতি বছর প্রত্যুষার জন্মদিনটা অনেক কাজের মধ্যেও মনে রেখে নতুন নতুন চমক দিত প্রভাত। অনেকটা সময় একসঙ্গে গানে গল্পে কাটাতো। অফিসের এতো চাপ সামলেও এতটুকু ক্লান্ত বোধ করত না। বিবাহবার্ষিকীর দিনগুলোতে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়তো। ওই বিশেষ দিনে কাজের চাপ থাকলে রবিবার উদযাপন করতো। গাড়ি নিয়ে কোথায় যাবে, আগে থেকে প্রত্যুষাকে জানাত না প্রভাত। সেও এক মজাদার আনন্দময় চমক ছিল। ধীরে সব কিছু কেমন বদলে যেতে লাগলো। প্রভাত যেন ক্রমে দূরে চলে যেতে লাগলো। অফিস থেকে ফিরে ল্যাপটপ নিয়ে বসে যেত প্রভাত। প্রত্যুষা কিছু জিজ্ঞসা করলে কোনো রকমে সংক্ষিপ্ত হুঁ ,হ্যাঁ তে উত্তর দিত। প্রভাত চায়নি বলেই প্রত্যুষা চাকরি করেনি। নাহলে প্রত্যুষার যথেষ্ট যোগ্যতা ছিল। অথচ প্রভাত মাঝে মধ্যে বলতে শুরু করলো, “তুমি বড় আনস্মার্ট, আমার অফিসের মহিলা কলিগরা কত স্মার্ট। তারা ঘর অফিস দু’টোই কেমন সামলায়”। প্রত্যুষা আশা করেছিল, বিবাহবার্ষিকির দিন অন্তত প্রভাত ওকে একটু সময় দেবে। কিন্তু না প্রভাত শুভেচ্ছা জানালো না। রাতে ফিরে কোনোরকমে একটা হীরের দুল ধরিয়ে দিয়ে আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসে পরলো। প্রত্যুষা বললো, “এসো আজকে অন্তত আমরা গানে গল্পে রাতটা কাটাই”।
    “উফফ্, ঘ্যানঘ্যান কোরো না তো কাজ করতে দাও, দিয়েছি তো দামী উপহার সেটা নিয়ে খুশি থাকো।”
    “কিন্তু আমি যে একটু সময় চাই তোমার থেকে, দামী উপহার নয়।”
    “দামী শাড়ি, দামী গাড়ি কি দিই নি তোমায়?” “কিন্তু, আমি যে একটু সময়—-” কথা শেষ করতে না দিয়ে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয় প্রভাত।
    একটা চিঠি লিখে রেখে চলে যায় প্রত্যুষা। পাঠিয়ে দেয় ডিভোর্সের ফর্ম। সময় বয়ে চলে করপোরেট জগতের উন্নতির শিখরে পৌঁছায় প্রভাত। কিন্তু বড় একঘেয়ে লাগে এই জীবন। প্রতিনিয়ত প্রত্যুষার অনুপস্থিতি টের পায় সে। প্রত্যুষাও স্কুলে চাকরি পেয়ে যায়। ভোরবেলা সূর্যোদয় দেখতে এসেছে প্রত্যুষা। ভোরের রাগ বাজাচ্ছে। মুখে তার অপূর্ব প্রশান্তি। রাগ বাজানো শেষ করে ঢেউ এর উথাল পাথাল দেখছিল প্রত্যুষা।
    “আচ্ছা ভোর আমাদের কি আবার মিল হয়ে যেতে পারে না? আমরা দু’জনেই তো একা এখন ও।”
    “না, সেদিন সময়টা আমায় দিতে পারো নি আজ আর সেই সময় তোমার কাছ থেকে নেওয়া বা পাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। আজ আমি আর তোমায় সময় দিতে পারবো না। আমার সময় জুড়ে এখন আমার গান বাজনা প্রকৃতি সবাই আছে। তাদের নিয়েই বাকিটা জীবন কাটাবো।” খুব শীতল অথচ কড়া গলায় বললো প্রত্যুষা। ধীর পায়ে হোটেলে ফিরে গেল। একবার ও পিছনে ফিরে তাকালো না। প্রভাত সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার মনে পড়লো ইংরেজী সেই প্রবাদ‘ Time and tide wait for none’

  • গল্প

    গল্প- অজানা মন

    অজানা মন
    -সঞ্চিতা রায়(ঝুমা )

     

    একটু পরেই সুতপা আসবে। সুতপা আসবে,অথচ নির্ঝরের মনে কোনো আনন্দের ঝিলিক নেই। এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। সুতপার সঙ্গে আজ আবার অনেক দিন পর গঙ্গার ধারে গিয়ে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে ফুচকা খাওয়ার কথা, যা নাকি একদিন তাদের দু’জনেরই খুব খুব প্রিয় ছিল। শ্রীতমা এ বাড়ি থেকে চলে গেছে একমাস হয়ে গেল। ল্যাপট্যাপে কাজ করতে করতে নির্ঝরের চোখ বারবার সামনে সাজিয়ে রাখা টেডিবিয়ারগুলোর দিকে চলে যাচ্ছে। কত রকম সাইজের, কতরকম রঙের টেডি। শ্রীতমা এগুলো নিয়ে শিশুর মত খেলা করতো। হয়তো এভাবেই সে মনকে আনন্দে রাখতো। নির্ঝরের দিক থেকে কোনো মনোযোগ তো সে কোনোদিন পায়নি। বিয়ের পর থেকে তার সম্পর্কে বড় উদাসীন ছিল নির্ঝর। সেই উদাসীনতার কারণ খুঁজতে খুঁজতে একদিন শ্রীতমা জানতে পারে, সুতপার কথা। এক সময় নির্ঝর নিজেই জানায়, শ্রীতমাকে সে কোনোদিনও ভালবাসতে পারবে না, কারণ তার মন জুড়ে শুধুই সুতপা। কলেজ ফেস্টে তাদের পরিচয়। কাজলনয়না সুতপা যেমন আবৃত্তি করতে পারে, তেমনই সুন্দর গান গায়। মুগ্ধ নির্ঝর। নির্ঝরের সমাজসেবা, দৃঢ়চেতা মানসিকতা মন ছুঁয়ে যায় সুতপার। পরিণতি ভালবাসা । কেউ কাউকে না দেখে থাকতে পারতো না। বিশ্ববিদ্যালয় স্তর উত্তীর্ণ হয়ে দু’জনেই চাকরি পেয়ে যায়। সুন্দর একটা ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে দুজনে। কিন্তু জাত বর্ণ সংক্রান্ত বাধা দুই বাড়ির আপত্তিতে বিয়ে পর্যন্ত পরিণতি পায় না এই প্রেম। দু’জনেই ঠিক করেছিল,আর তারা বিয়ে করবে না। কিন্তু নির্ঝরের মা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয় নির্ঝরের অন্যত্র বিয়ের দাবীতে। পরিস্থিতির চাপে নির্ঝর বাধ্য হয় শ্রীতমাকে বিয়ে করতে। সব কিছু জানার পর শ্রীতমা কষ্ট পেলেও সিদ্ধান্ত নেয় নির্ঝরকে মুক্তি দেবে। তাতে অন্তত নির্ঝর সুতপার সঙ্গে অনেক বেশী সময় কাটাতে পারবে। ডিভোর্স পেপারে সই করে সে চলে যায়। সুতপাকে সব জানায় নির্ঝর । সে আজ মুক্ত। কি জানি, হয়তো অদূর ভবিষ্যতে তাদের ঘর বাঁধার স্বপ্ন পূর্ণ হবে। রান্নাঘরে বাসনগুলো পরিপাটি করে সাজান । খুব গোছানো ছিল শ্রীতমা। ফুলদানিতে রজনীগন্ধাগুলো শুকিয়ে গেছে। নির্ঝর রজনীগন্ধা ভালবাসে বলে রোজ স্কুল থেকে ফেরার পথে রজনীগন্ধা নিয়ে আসতো শ্রীতমা। স্কুলের ইতিহাসের শিক্ষিকা শ্রীতমা। ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় লাল টিপ লাগানো। মনে হচ্ছে এই বোধহয় বাড়িতে ফিরে টিপটা খুলে রেখেছে শ্রীতমা। সারা বাড়িতে শ্রীতমার অদৃশ্য উপস্থিতি । বাড়ির সামনে দিয়ে ঘন্টা বাজাতে বাজাতে ফুচকাওয়ালা যাচ্ছে। শ্রীতমা ফুচকা খেতে খুব ভালবাসে। ফুচকার ঘন্টা শুনে শিশুর মত দৌড়ে ফুচকা খেতে যেত। নির্ঝরকে বারবার বলতো তার সাথে খেতে। নির্ঝর রাজী হ‘ত না। কিন্তু নির্ঝর ঠিক যতটা ঝাল খেতে পছন্দ করে সেভাবে আলু মাখিয়ে নিয়ে, বাটিতে টকজল নিয়ে, প্যাকেটে ফুচকা নিয়ে ছুটে এসে নির্ঝরকে দিত। মোবাইলে রিং হচ্ছে, সুতপা জানাচ্ছে মিনিট দশের মধ্যেই সে পৌঁছাচ্ছে। কিন্তু কেন কেন নির্ঝরের আজ গঙ্গাপারে সেই প্রিয় জায়গায় যেতে একটুও ইচ্ছা করছে না। বারবার মনে হচ্ছে শ্রীতমা বড় অদ্ভূতভাবে মনে হচ্ছে ‘তার শ্রীতমা’ কথাটা। মনে হচ্ছে তার শ্রীতমা তাকে একবার বলুক “ওই যে ফুচকাওয়ালা যাচ্ছে, চল ফুচকা খাই”। অথবা ছুট্টে আসছে তার জন্য ফুচকা নিয়ে। দরজায় বেল বাজছে। সুতপা এসে গেছে। একটুও খুশী কেন হতে পারছেনা নির্ঝর। তবে কি আশা করেছিল, শ্রীতমা ফিরে এসেছে। হয়তো বা। কবে কিভাবে সে শ্রীতমাকে ভালবেসে ফেলেছিল, বোধহয় নিজেও বুঝতে পারেনি সে কথা। বারবার শুধু মনে হচ্ছে ওই বোধহয় শ্রীতমা একগুচ্ছ রজনীগন্ধা ফুল নিয়ে দরজায় এসে দাঁড়াবে। কিভাবে বেড়াবে সে সুতপার সাথে? তার পা দু’টো যেন অবশ হয়ে আসছে। সুতপার জায়গাটা তো সে তার অজান্তেই শ্রীতমাকে দিয়ে দিয়েছে।

<p>You cannot copy content of this page</p>