-
কবিতা- অ- শাস্ত্রীয়
অ-শাস্ত্রীয়
– সঞ্জিত মণ্ডলভুলটা করতে চাইনি বন্ধু তবু ভুল হয়ে যায় জানি,
বলি, ভুল হলে ক্ষমা করে দিও ভুলের স্বীকার মানি।
ভুল কেন বলি অ- শাস্ত্রীয় যে শাস্ত্রের এই বাণী,
ধর্মপিতা যে নিজ পিতা নয় সেকথা সকলে মানি।এমন অনেক ধর্ম রয়েছে দেখে লাগে বড়ো ভয়,
ধর্ম মা হলে কি হবে বন্ধু জন্মদাত্রী নয়।
নিজ পুত্রকে আত্মজ বলি কতো না স্নেহের হয়,
ধর্মপুত্র বাবা ডাকে বটে আপন পুত্র নয়।ভাই ভাই করে আত্মহারা যে সহোদর বলে জানি,
ধর্ম ভাই যে সহোদর নয় সেকথা সকলে মানি।
দিদি বোন হয় কতো আদরের সহদরা তাকে বলে,
ধর্ম যুক্ত দিদি ও বোন কি সহোদরা কোনো কালে?এমনি করেই ধর্ম যুক্ত কাকা জ্যেঠা খুড়ো খুড়ি,
আপন নয়কো কেউ তারা যেন সবই কল কাটা ঘুড়ি।
ধর্ম যুক্ত মাসীমা পিসিমা তারাও আপন নয়,
ধর্ম বন্ধু পাতানোটা জানি অতোটা সহজ নয়।কিন্তু ধর্মপত্নীরা জেনো একেবারে আপনার,
তার বেলাতেই ধর্ম সদয় আর কারো বেলা নয়।
কি করে বিচার করলো ধর্ম সে কথা কে আর বলে,
নিজ পিতা মাতা ভাই বোন দিদি ধর্ম মতেই চলে।সকল ধর্ম মেনেও যখন কেউ আপনার নয়,
তবে কি ধর্ম বাবা মা ও ভাই বোনেরা নকল হয়!
কি করে এমন ভাবনাটা এলো সে কথাটা বলি শোনো,
ধর্ম নিয়েই বাড়াবাড়ি করা মানতে পারিনা জেনো।ধর্মের কাজ ধারণ করা যে ঘৃণা ছড়ানোটা নয়,
ধর্ম মানেই সাত্ত্বিকভাব মন প্রফুল্ল হয়।
মন যদি হয় সংশয়হীন শান্ত নম্র ধীর,
এই পৃথিবীতে স্বর্গ রচনা করে যায় সে সুধীর। -
কবিতা- পাতাবাহার
পাতাবাহার
– সঞ্জিত মণ্ডলফাঁদ পাতা এই দুনিয়াটাতে সবই পাতাবাহার-
কেউ বা আহার করে সে পাতাতে পাতাই কারো আহার।
বিছুটি পাতাটি ঘষলে গায়েতে চোরেও কথা বলে-
কাঁঠালের পাতা খেয়ে দেখি ছাগ লাফিয়ে লাফিয়ে চলে।
চিনিপাতা দই স্বাদে ষোল আনা সে কথা সবার জানা-
আড়ি পাতা কভু রসে মজে যায় ফুলশয্যায় হানা।
নিমপাতা খায় ওষধি গুণেতে মড়াকে পুড়িয়ে এলে-
আলুভাতে আর নিম শিম হলে ভাজা শুধু ভাতে চলে।
তুলসীপাতা তো পুজোতেই লাগে চিবিয়েও খাওয়া যায়-
মুখে বুকে গলে জিভেও দাঁতের কতোনা ব্যাধি পালায়।
কারিপাতা লাগে ডালের ফোড়নে তেজপাতাটাও দেয়-
দু’টো পাতাতেই অশেষ গুণ সে জানুন মহাশয়।
কলাপাতা আর লাউপাতাতেও ইলিশ পাতুরী হয়-
ভেটকি মাছের বাহারী পাতুরী দু’টো পাতাতেই হয়।
লাউয়ের পাতা পালং পাতা কনকে নটে যতো-
দুখের দিনে নয়কো শুধু সুখের দিনেও চাখো।
বেল পাতাতে পুজো হবে তাই এটা সকলের জানা-
সে বেলপাতাটি চিবিয়ে খেলেও ওষুধটা হবে কিনা।
পান পাতাতে লজ্জা ঢাকে নতুন বউয়ের মুখ-
খাবার পরে চিবিয়ে খেলে হয় ভোজনের সুখ।
খাতার পাতায় সবাই লেখে বিদ্যা পরিচয় –
চোখের পাতা জড়িয়ে আসে ঘুমান মহাশয়।
মনের পাতায় চিরকালই স্মৃতি জমে থাকে-
ব্যাংকে খাতা খুললে পাতায় সুদও এসে থাকে।
গোল করলে খাতা খোলা রান করলে তাই-
জীবন খাতার প্রতি পাতায় হিসেব লিখে যাই।
কচুপাতায় জলের মতন জীবন নড়েচড়ে –
ফাঁদপাতা এই দুনিয়াটাতে সবাই ধরা পড়ে।
জাবদা খাতার পাতায় বা হোক খেরো খাতার পাতা-
এমনি খাতার পাতায় যতো হিসেব নিকেশ করা।
আলতা পাতা কানের পাতা পায়ের পাতায় কি –
হাতের পাতায় পাতাবাহার মেহেন্দি করেছি।
হাত পাতা দোষ অনেক আছে কান পাতা দায় হয়-
গাছের পাতায় হরেক প্রাণী বাসা বেঁধে রয়।
পাতার আমি পাতার তুমি জামপাতা হয় গুণী –
পিয়ারাপাতা ঘৃতকুমারী পাতার মধ্যমণি।
কলমী পাতা হিঞ্চে পাতা কতো যে নাম করি-
পাতাবাহার কাব্য লিখে খাতার পাতা ভরি।। -
কবিতা- গেরো
গেরো
– সঞ্জিত মণ্ডলএকটা বন্ধু বললো হেসে হাড় পড়েছিস কেন,
বন্ধু বলে মুচকি হেসে হাড় পড়বো কেন।
হারের মালা গলায় পরে সেটা পড়া নয়,
হারের বিষয়ে লেখাপড়া করলে পড়া হয়।বাধা বাঁধা সাদা সাধা কখনো এক নয়,
মরা মড়া করা কড়া ভিন্ন মানে হয়।
সারা সাড়া কতো কে তো বড়া বরা বলে,
নিদেন পক্ষে না জেনে সব জোরে জোড়েই চলে।ঝরা ঝড়া ছরা ছড়া ভরা ভড়ার দলে,
কতো কে যে সামিল হলো তাড়ি তারি বলে।
চড়া চরা পাড়া পারা একই হলে পরে,
লেখা পড়া জামা পরা অনেক কথার ছলে।গরুর কথা গড়ুর পাখি শুনেও যদি ফেলে,
মার আর মাড় এর মধ্যে যতো তফাতটা সে ভোলে।
পুড়ছে আর পুরছে যদি একই মানে করো,
হিসেব করা আর হিসেব কড়া মাথা খুঁড়ে মরো।তরকারি আর তড়কাড়ি সব একই হবে কি-না
আ- নারি আর আনাড়ি সব হাতে যাবে গোনা।ঝুরি ঝুড়ি এক নয়কো তাও বলে যাই,
সত্যি মিথ্যে সকল কথাই যাচাই করা চাই।চেয়ার-টেবিল লাইট বা ল্যাম্প বাংলা হয়ে গেছে
আত্তি করণ করলে ভাষার দৈনতাও ঘোচে।
জনপ্রিয় শব্দ সবাই নিজের করে নেয়,
অশ্লীল কুরুচিকর শব্দ বিসর্জনে যায়।বিচিত্র এই বাংলা ভাষার বৈচিত্র্য যে কতো,
একই মিষ্টি বাংলা ভাষার উচ্চারণের মতো।
বুনো ওলের বাঘা তেঁতুল যেমন গাছে আছে,
লড়াই করে বাংলা ভাষা দেশ বিদেশে আছে। -
কবিতা- মুড়ি মুড়কি
মুড়ি মুড়কি
– সঞ্জিত মণ্ডলমুড়ি মুড়কির এক দরেতে বাজার গরম বেশ,
চিনি মিছরি এক হলে তার যন্ত্রণার একশেষ।যখন দেখি কাব্য বিচার করেন সভ্যজন
কার মাদুলি কতো বড়ো হিসেব কুলক্ষণ।ড় এর ঘরে র বসে যায় মাথা নাড়ে না,
নাড়া নারা পড়া পরা মানেই বোঝে না।
রসিক সুজন চন্দ্রবিন্দু পেত্নীতে লাগায়,
ভূতের বাপের আদ্য শ্রাদ্ধ কে সামলাবে দায়।বাঁশির সুরে মন মজেছে বাজায় কালাচাঁদ,
আঁধার রাতে ভূতের ওঝা ঝাঁটায় তোলে ঝাঁজ।
ভূত পেত্নী দত্যিদানো নাকি সুরে কয়,
কে কেমনে শুনবে কথা সে বড়ো বিস্ময়।রবির আলো দিনেই ভালো রাতের বেলায় চাঁদ,
ঘুঘু তো অনেকেই দেখে কেউবা দেখে ফাঁদ।নিকষ কালো অন্ধকারে অমাবস্যার রাত,
ছাতা, কলম, বইও বেহাত পড়লে অচিন হাত।সের দরেতে কাগজ কলম লেখক বেসামাল,
কাছাখোলা সাহিত্যিকরা হয় শুধু নাকাল।
বড়ো লেখা পড়তে শেখা ধৈর্য থাকা চাই,
বিনা পয়সার লেখন বলে হচ্ছে যাচ্ছেতাই।বই কিনতে পয়সা লাগে ছাপার খরচ কতো,
মাথা নেড়ে হিসেব করে কেষ্টবিষ্টু যতো।
ভালো লেখা পড়া দুটোই ফেস বুকেতে হয়,
কষ্ট বিহীন অমূল্য সে খুঁজুন মহাশয়। -
কবিতা- বাঘ বিধবা
বাঘ বিধবা
-সঞ্জিত মণ্ডলবাঘ বিধবা শুনেছ কেউ আশ্চর্য সে কথা-
স্বামী হারা পতিব্রতা খুঁড়ে মরেন মাথা।
অনেক কষ্টে সংসার চলে উপার্জন নেই কিছু-
অভাব অনটনেও নেয় বাঘ বাবাজী পিছু।
মাছ, কাঁকড়া, মীন ধরে ছাকনি জাল টেনে-
শামুক, গেঁড়ি, গুগলি তোলে মাছের বিহনে।
জল জঙ্গল পোকা মাকড় বাদাবনে বাস-
পেটের দায়ে এটা ওটা কুড়ায় বারো মাস।
জলে কামট কুমির থাকে তবু নামতে হয়-
বনের বাঘও জলে নেমে মানুষ তুলে খায়।
বাঘ বিধবা তারাই যারা স্বামীকে হারায়-
যার স্বামীকে খায় বাঘা, তারে বাঘ বিধবা কয়।
অতি করুণ সেই কাহিনী চোখের জলে স্নান-
পেটের টানে বাদাবনে মাছ ধরতে যান।
বাঘের পেটে দারুণ ক্ষিদে তারাও খাবার চান-
নিঃশব্দে ঘাড় কামড়ে বাঘা বনে ঢুকে যান।
সঙ্গীরা কেউ দেখতে পেলে লাঠির বাড়ি দেন-
তাতে কি বাঘ কেয়ার করে টেনে নিয়ে যান।
মউলিরা মউ চাক ভাঙতে সুন্দরবনে যান-
দক্ষিণ রায়কে পুজো দিয়ে মানত করে খান।
জঙ্গলে বাঘ লুকিয়ে থেকে আড় চোখে তাকান-
সুযোগ বুঝে ঝপাৎ করে ঘাড়টা মটকে দেন।
বাঘ বিধবা কাঁদে তখন বাতাসটা খান খান-
নিয়তিকে দোহাই দিয়ে কপালটা চাপড়ান।
কপাল চাপড়ায় বাঘ বিধবা দীর্ঘ নিঃশ্বাস পড়ে-
সাপের লেখা বাঘের দেখা গণক বিচার করে।
বাঘ বিধবার দুঃখের কথা হলো সমাপন-
জলে কুমির ডাঙায় বাঘ তার নাম সুন্দরবন। -
কবিতা- কিম আশ্চর্যম
কিম আশ্চর্যম
– সঞ্জিত মণ্ডলকিম আশ্চর্যম অতঃপরম বলছি সবাই শোনো,
বিশ্বাস নিঃশ্বাস ফুরিয়ে গেলে আর ফেরে না জেনো।
কাপড় কপাল এক নয়কো তবু্ও যখন খোলে
যার খোলে সে বুঝতে পারে অন্তরাত্মা দোলে।
সম্মান আর ভালোবাসা অর্জন করতে হয়–
মেঘ আর কুকুর যখন ডাকে শুনুন মহাশয়।
বাচ্ছা হোক আর দুশ্চিন্তা হোক সময় হলেই বাড়ে,
জিরাফ গলা রোগের পালা লম্বা করেই ছাড়ে।
হাসা হাসি প্রতিবেশী এমনিতে প্যাক দেয়
ফাটা আয়না আর ফাটা ডিম জোড়া সহজ নয়।
সুন্দর মন আর সুন্দর বন দুটোই যে লোপ পায়,
সাগর আর মানুষের চলন জোয়ার ভাঁটায় ধায়।
জন জামাই ভাগনা জেনো কারোর আপন নয়,
অফিস বস আর কর্মচারী কেউই কারো নয়।
জ্যোতিষী আর নেতারা সব হাত যশেতে খায়,
বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়ো ভাবুন মহাশয়!
ছোটো বড়োর ভালোবাসা ক্ষণিক স্থায়ী হয়,
অগ্র পশ্চাত ভেবে তবে বিয়ে করতে হয়।
জীবন বড়ো বিচিত্র আর মানুষ যে কী চায়,
মানুষ হলো সেই রকম জীব পড়েও উঠে দাঁড়ায়।
দিন দুনিয়ার মালিক যে জন সবার ভালো চায়,
সবাই কি তাই বুঝতে পারে অন্ধকার হাতড়ায়। -
কবিতা- মনের মাঝে
মনের মাঝে
-সঞ্জিত মণ্ডলকবিতা তো রয়েছে মনেতে মন কেমনের মুখছবি-
প্রকাশ কি করে করি বলো আমি নই কোনো কালে কবি।
শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি মুখ পদ্মপলাশ দুটি চোখ,
একঢাল কুঞ্চিত কেশ কবিতাটা লেখা নাই হোক।
ধূপছায়া পরা শাড়ি খানি প্রজাপতি ওড়া ভ্রূ দুখানি –
শরমের লালিমা আভায় গোলাপের মাধুরীকে জিনি।
বিস্মিত কবি যুগে যুগে তুমি বুঝি পৃথিবীর মায়া,
আনমনে হৃদয়ে জড়াও একসাথে চলে তব ছায়া।বৈশাখী হাওয়া এলোমেলো সন্ধ্যা কি ঘনিয়ে আসে –
উজ্জ্বল চোখে মায়া তারা আঁধারে কি জোনাকিরা ভাসে।
জানিনা কোথায় তুমি ছিলে মগধে না গান্ধার দেশে-
পাঞ্চালী নাকি জানিনা সিন্ধু নদের তীরে বসে।
বিদিশার মেঘ আসে ভেসে বিন্ধ্য কি মাথা নীচু রাখে!
আসি বলে সেই চলে গেলে বিরহী কবিকে ভালোবেসে।
দারুচিনি দ্বীপ চিনি নাকো তুমি বুঝি সেখানেই থাকো,
নাটোরের বনলতা সেন তাকে তুমি যে নামেই ডাকো।
আশ্বাস দিয়েছিলে কবে ভালোবাসা বুঝিনি তখন –
এলোমেলো হাওয়া বয়ে গেলে অভাবটা বুঝেছিল মন।কতোদিন হয়ে গেছে পার পৃথিবীটা অন্যরকম,
বসন্তে বনবীথিকায় কালিদাস পায় নাকো মন।
তোমাকে কি নামে ডাকি বলো কি বলে ডাকলে খুশী হও-
মেঘদূত যাক বা না যাক তুমি অপ্সরী হয়ে যাও।
আকাশেতে মেঘ ভেসে যায় মৌসুমি হাওয়া দোলা দেয়,
ঘন কালো বাদলের মেঘ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ঝরায়।
এসো না দুজনে ভিজে যাই নীপবনে দুজনে হারাই,
বৃষ্টি যে সৃষ্টিকে আনে নতুন জীবনে পা মেলাই। -
কবিতা- প্রকৃত বন্ধু
প্রকৃত বন্ধু
– সঞ্জিত মণ্ডলআশ্বাসবাণী যত যারই শুনি নেই আজ কোনো ভয়-
সাম্রাজ্যবাদী শক্তি রয়েছে তারাই ভয় দেখায়!
সকলে জেনেছে বিশ্বের ত্রাস কারা ঘোরা ফেরা করে-
সমাজ বাদের মুখোশে লুকিয়ে কারা অন্যায় করে।
লাদাখ,তাওয়াং, ডোকালাম আর সিয়াচেন জুড়ে,
গোপনে গোপনে দখলদারিতে সেনা সমাবেশ করে।
জোর করে ঢুকে মারামারি করে যুদ্ধ বাধাতে চায়,
সীমা লঙ্ঘিত, জোর জুলুমেও তারা কম কিছু নয়।হুমকি তাদের জীবাণু অস্ত্র, লোকবল আছে ভারী,
ঘুষ দিয়ে করে দুর্নীতি আর রোগও ছড়ায় মারী।
সূঁচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে যায় গরীবের দেশ ঘরে,
মুখে ভাব করে কলা তো খাইনি তবু সন্দেহ করে।চোখ দেখি তার যত ক্ষুদে হোক লোভে চকচক করে,
ভালো মুখ করে ঢুকে যায় ঘরে পরে লুটপাট করে।
সাহায্য নিয়ে দাঁড়ায় পাশেতে সুদ চেয়ে নেয় পরে,
সুদে ও আসলে নাভিশ্বাস ওঠে যখন বুঝতে পারে।ততোদিনে বড়ো দেরি হয়ে যায় সাঁড়াশীর চাপ বাড়ে,
মুখেতে দোস্তি মিঠে বুলি কতো পিঠেতে ছুরিটা মারে।
যত পারে যেথা জমিটা হাতায় ঠিক পুরো জমিদার,
মঙ্গোলিয়া ও তিব্বত জানে হংকং এ হাহাকার।এতো বড়ো দেশ যেন মহাদেশ তবু চাই চাই রব,
হংকং চাই, সিঙ্গাপুর চাই, শুধু চেয়ে থাকে সব।
সিংহল পাক বুঝেছে বিপাক দরদী ভাইয়ের খেলা,
রাজকোষ যত সব লুটে নেয় এমনই বন্ধু ঠেলা।কিছু লোক আছে আমারই স্বদেশে মাই বাপ মানে তাকে,
চোখ কান বুজে এক সুরে গায় তারা যা বোঝায় বোঝে।
এমন ভালো তো আজও দেখিনিকো চৌষট্টির পরে,
কতো কিছু ওরা দখল করেছে তবু পা চেটেই মরে।আমাদের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছে বন্ধুরা দিকে দিকে,
আমি শুধু বলি পুরানো প্রবাদ বুঝে শুনে পা টা দিতে।
“উৎসবে ব্যসনে চৈব দুর্ভিক্ষে রাষ্ট্রবিপ্লবে,
রাজদ্বারে শ্মশানে চ য তিষ্ঠতি স বান্ধবঃ।। -
কবিতা- বাঙ্কার
বাঙ্কার
– সঞ্জিত মণ্ডলতোমাকে লুকাতে হয়েছে ইন্দ্র প্রতিবাদী ঝড়ে পুড়ে-
কালো মানুষেরা প্রতিবাদ করে নির্ভীক অন্তরে।
বাঙ্কারে কতো সুরক্ষিত তুমি সেটা জানা যাবে পরে,
পৃথিবীর বস নিজেই অবশ লুকিয়েছ বাঙ্কারে!এমনি করেই প্রতিবাদ ওঠে দিকে ও দিগন্তরে-
অন্যায় করে পার পেয়ে যাবে সেটা হবে কিটা করে।
একে ওকে তাকে হুমকি দিয়েছ ভয় দেখিয়েছ যারে-
মরিয়া হয়েই প্রতিবাদে ফাটে দুঃখিত অন্তরে।বরাবরই দেখি তোমার দেশেতে কালো মানুষেরা মরে-
বিক্ষোভটাকে উস্কে দিয়েছ তোমার অহঙ্কারে।
সুষ্ঠু বিচার হবে কিনা হবে ওরা প্রতিবাদ করে –
বুলেট ও কামানে দমে নাকো ওরা বিনা বিচারেও মরে!লুপ্ত বিবেক সুপ্ত বিচার উদ্ধত মার মারে –
তোমার গুন্ডাবাহিনী দেশের আদিবাসীদেরই মারে।
কালো হওয়া বুঝি জন্মের পাপ কালো লোক বলো কারে?
ওরাই গড়েছে আজকের দেশ ঘাম রক্তের জোরে।ইন্দ্র আজকে লুকিয়েছ তুমি প্রাণভয়ে বাঙ্কারে –
ক্ষুব্ধ জনতা টেনে আনবেই শেষ বিচারের তরে।
আকাশ এখনো লালে লাল দেখি বাতাস গুমরে মরে-
পৃথিবীর যত মানবিক মন বিমর্ষ অন্তরে।বাইরে বেরিয়ে এসোনা ইন্দ্র লুকিও না বাঙ্কারে-
ন্যায় বিচারটা তুমি শুনে নাও গর্ব করার ঘোরে।
শান্তি আসুক শান্তি নামুক গোটা দুনিয়ার ‘পরে-
সাদা কালো ভেদ মুছে যায় যাক আত্মীয়তার জোরে।। -
কবিতা- শতাব্দীর শোক
শতাব্দীর শোক
– সঞ্জিত মণ্ডলশতাব্দী শুনি কেঁদে ওঠে বারবার-
ধূম্র মৌন পৃথিবীটাও কি কেঁপে ওঠে আরবার!
মৃত্যু ঘন্টা বেজে ওঠে ওই নানা ঘরে চারিধারে,
শ্মশানে কবরে ভস্ম বহ্নি মাটি চাপা অন্তরে।
একে একে সব নিভে যায় দেখি বাতি দিতে কেহ নাই-
সমাধি পূর্ণ হয়ে গেছে বুঝি দেউল শূন্য তাই।
শোভাযাত্রা যে কবে থেমে গেছে ভুলে গেছি ইতিহাস,
প্রিয়তমা কবে বুকে টেনেছিলো জীবনের আশ্বাস।প্রভাত রবির আদর মাখানো সোনা রোদ মাখা দিন-
দিবা অবসানে থেমে গেছে সেই হারানো সুরের বীণ।
চকিত চাহনি, মনোময় ঠোঁট, সুধামাখা যৌবন-
ত্রস্ত প্রেমিক বুকে টেনে নিয়ে হারায় কতো জীবন।
অর্ঘের মালা শুকিয়ে গিয়েছে পৃথিবীর অভিশাপ-
মরমিয়া বঁধু আসেনিকো আর ছিঁড়ে গেছে ফুলবাস।
কতো তারা দেখি সুনীল গগনে কতো নেভে আর জ্বলে-
কুশলী নাবিক তারা চিনে চলে ভেঙে যাওয়া মাস্তুলে।আকাশের পানে চেয়ে আছে প্রিয়া ভাষাহীনা প্রার্থনা-
আশা নিরাশার দোলায় দোদুল প্রিয়াকে যায় না চেনা।
বিচ্ছেদ নিশিকে জাগিয়া বসি নীল আকাশেতে মিশে,
সব কোলাহল শান্ত হয়েছে বাতাসের নীল বিষে।
একবার চোখ খুলে দাও প্রিয়া চুম্বন আঁকি চোখে-
গরিমার দীপ জ্বেলে দেবো প্রিয়া মরু সাহারার বুকে।
বিদায় কুহেলী স্মৃতির শ্মশানে শেষ রবি ধুনি জ্বালে-
ভুলে যেও প্রিয়া নিমেষে চকিতে ভালো বেসেছিনু বলে।