• কবিতা

    নির্জনে ঢাকা…

    নির্জনে ঢাকা…
    -সত্য দেব পতি

     

     

    অপেক্ষার সকাল শেষ হবেনা কোনোদিন,
    হেমন্তের শিশিরে বিধৌত জীবন মরুর বালিয়াড়ি…
    কূলহীন প্রবহমান জীবনের গতিপথ।
    ঘন কুয়াশাবৃত অদুর পথে ধূঁয়াশা চাদর,
    ব্যাকুল করা বিশ্বাসের বাতাসে মিলনের অঙ্গীকার – – –
    অঘ্রাণের সোনা ঝরা রোদে হাসছে মাঠ ভর্তি সোনার ফসল,
    অপার মুগ্ধতা নিয়ে কাস্তে হাতে চাষীদের। মহোৎসব।
    একাগ্রতা নিয়ে তারা চলে সামনের লক্ষ্যে জয় করতে চায় জিবনের সব অনুর্বরতা,
    সারাদিনের খাটুনি শেষে বিকেলের সূর্য্যের মতো বাড়ী ফেরা এটাই নিয়ম…
    আকাশে আঁধারের ঘন্টা হলেই তুলসী তলায় জ্বলে সন্ধ্যা প্রদীপ,
    মাঙ্গলীক শঙ্খধ্বনিতে উৎরোলিত হয় গ্রাম প্রান্তর।
    মিট মিটে দীপক আলো আবছাতে শুরু হয় রাতের জীবন,
    শীতল বাতাসের স্পর্শ নিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে বুঝতেই পারেনি কখনো–
    পেরিয়ে যায় আরও একটি নির্জন রাত,
    সমস্ত মান অভিমান ভুলে আবার সকালের অপেক্ষা করে এক বুক সুপ্ত বাসনা নিয়ে,

  • কবিতা

    ভাবনা তাই

    ভাবনা তাই
    -সত্যদেব পতি

    পিছনে ফেলে আসা পথে পড়ে রইলো
    কিছু পুরাতন ছেঁডা মুখ বন্ধ খাম..
    পুর্ণিমার চাঁদের শুভ্রকান্তি জোছনায় বিধৌত দেহ মন,
    বিনিদ্র রজনী প্রাতে নিস্কাম শরীরে হেমন্ত শিশির!
    ভাঙাচোরা কাঠের আরাম কেদারাতে এলায়িত তনু,
    তৃষিত চারপায়ার ওপরে স্তুপিকৃত পুঁথির পাহাড়ে উই চিংড়ের মহাভোজ…
    ক্ষুাধার্থ পথিক রহে স্থবীর নয়নে নিথর,
    মনে তার অভিপ্রায় শীতল সুবাস__
    তুমি তো নির্ণয় করো নব্য রাজপথ আর
    যতেক কৌশল,
    আমি তাই নিরন্তর করি আনাগোনা
    সুগন্ধ লুটিব একা মনের বাসনা।

  • কবিতা

    হয়তো কখনো…!

    হয়তো কখনো…!
    -সত্য দেব পতি

     

     

    বিশ্বাসের বর্ণমালা থেকে বাস্তবের অক্ষর নিয়ে ভালোবাসা লিখেছি

    জীবনের সাদাপাতার বুকচিরে..
    মনের গভীর অমানিশায় ক্ষীণতর আলো,
    আবৃত প্রেম বেরিয়ে আসতে চায় স্ফুলিঙ্গাকারে সবার সামনে।
    তোমার সময়াভাবে অশ্রুত হয় মন,
    ভালোবাসার সজল ধারা প্রবাহিত বাতায়নে জুড়ে…
    নিয়মে বাঁধা জীবন স্রোতে খড়কুটোর মতো ভাসছে অসহায় সময়।
    তোমার ভালোবাসার ধরণ আমাকে বিমর্ষ করে লহমায়.,
    মন চাইলে ও তুমি বন্দি আছো সামাজিক বেষ্টনে-
    হয়তো বা সেই পরিধি তুমিই পেরিয়ে আসবে তোমার অজানা প্রবাহের স্রোত বেয়ে,
    আমি রইলাম আমার মন খোলা বাতায়নে নীরবে।

  • কবিতা

    ভাঙা আগল

    ভাঙা আগল
    -সত্যদেব পতি

     

     

    রাতের কুহেলিকা দ্বিতীয়ার চাঁদে কলঙ্কিত ছায়া,
    বিশ্বাসের বাতাসে জমানো তুহিন…
    হাজারো তারার ভীড়ে সন্ধ্যা বেলার জোনাকি
    বৃক্ষ শাখায় চড়ুই পাখির কিচিমিচি নিঝুম রাতের ঘুম ভাঙায়।
    নিশাচর পাখিটা ওৎ পেতে প্রহর গুনে মগডালে,
    গোয়ালের পোষ্য তার জাবরে মগ্ন…
    দুরে ঝোপের আড়ালে সরীসৃপের নাসিকা গর্জন।
    জানলার কাঠামোতে ঘুন পোকার কর্কশ শব্দ আমি শুনি প্রতিটা বিনিদ্র রাতে,
    রাত যত গভীর ভাবে আঁকড়ে বসে,
    চাঁদের আলো কমে গিয়ে হয় জমাট আঁধার…
    কান পেতে শুনি হেমন্ত শিশিরের শব্দ।
    বাইরের চৌহদ্দির একটা মাত্র খোলা দরজা…
    উত্তরের শীতল বাতাস এসে বলে তুমি বন্ধ কেন থাকো না?
    আমি যখন আসি তুমি হাট হয়ে থাকো!
    নীচু গলায় উত্তর আসে বন্ধ থাকবো কি ভাবে আমি যে ভাঙা আগলে দোল খাচ্ছি।

  • কবিতা

    মমি…

    মমি…
    -সত্যদেব পতি

     

     

    বিশ্বাসের কালরাত্রি,বড়ই নিষ্ঠুর নিয়তির অদৃশ্য কশাঘাত-
    বর্ষা মুখর দিনে অল্পক্ষণের পরিচয়ে মনের নদীতে ভরা ভাদরের বান এসেছিল..
    হাজার জমায়েতের মাঝে তুমি ছিলে নীল আকাশে পূর্নিমার পূর্ণ শশী,
    আমার মনের আঙিনা জোছনাময় হয়েছিল তোমার রঙীন রোশনাইয়ে-
    সেই দৃশ্য ভোলা যায় না…
    তুমি ভালো বন্ধুত্ব চেয়েছো আমি প্রেমিক হতে চেয়ে ভুলকরে তোমাকে হারিয়েছি,
    তোমার বাগানের মালিক অন্য কেউ…
    যেদিন বুঝেছি তখন সবকিছু শেষ,
    এখন তুমি আমার কথা মনেও করোনা হয়তো,
    কারণ তুমি তো আমাকে সেভাবে চাও নি-
    আমার চাওয়া আজ সাগর সলিলে,
    আমার ভালোবাসার সলিল সমাধি হয়েছে তোমার নয়ন সাগরের লোনা জলে…
    আমার বিশ্বাসের অপমৃত্যু হয়েছে,
    চিতায় জ্বলছে তার অশরীরী আত্মা;
    তোমার ভালোবাসা নিয়ে তুমি সূখে থেকো,
    এছাড়া কিছুই বলতে পারিনা তাই-
    আমার সুপ্ত ভালোবাসা থাক আমার পাহাড়ি বুকের অন্ধকার অলিন্দে ঠিক পিরামিডের মমি হয়ে…

  • কবিতা

    মৃত্যুর পরোয়ানা

    মৃত্যুর পরোয়ানা
    -সত্যদেব পতি

     

     

    ঘুমন্ত পৃথিবীর আলো আঁধারী খেলায় শিয়রে বাজে মৃত্যু ঘন্টা,
    মনের মন্দিরে হাজার কাঁসরের রনরনি…
    বিশাল আনন জুড়ে এ কার পদধ্বনি?
    নটরাজ বেশী প্রেম করে প্রলয় নাচন,
    কালো আকাশে সুদুর নিহারীকার উল্কাপাত—
    স্নিগ্ধ শান্ত চাঁদের আলো যেন সন্ধ্যার জোনাকি,
    নির্ঘুম চোখে আমি অপলকে দেখছি প্রকৃতির রূপের বৈচিত্র,
    তোমার মুখের সাদৃশ্যময় খন্ড মেঘ এসে চুপিসারে বললো সেও জেগে আছে,
    দুরের নক্ষত্র মালায় দীপাবলীর সাজ…
    আজকে তোমার মুখে হাসি নেই,
    কি ভাবছো প্রিয়া?
    তুমি কি এমনি করে সারারাত ঐ নির্ঘুম আকাশ দেখছো?
    সেখানে কি আছে আমার আষাঢ়ি় মেঘ মুখটা?
    তোমার আকাশে কি ধ্বনিত হচ্ছে মেঘ মল্লার বা মেঘ রাগ?
    আমি দেখছি আমার শারদ শশীতে গ্রহণের পূর্ব গ্রাস ছবি…
    ভয়ে চোখ বন্ধ হয়ে আসে সেখানেও তুমি,
    তোমার চোখে মহাসাগরীয় জলোচ্ছাস–
    সেই প্লাবনে ভিজে যায় দেহ মন,
    প্লাবন ভুমিতে জন্ম নেয় কিশলয়-
    সবুজের গালিচা বিছানো তটে আমি তোমার প্রতিক্ষার প্রহর গুনছি,
    সকালের সূর্য্যদয়ের সোনালী আভাতে স্পষ্ট হলো ম্রিয়মান মূখ,
    তোমাকে তো এভাবে দেখতে চাই নি…
    তোমার ঐরূপ দেখে মনে হলো এতো নাপাওয়ার প্রতিমুর্তি,
    সারারাতের চাওয়া পাওয়ার স্বপ্নগুলো তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়লো,
    বাঁচার ইচ্ছেগুলো সব একসাথে ছুটি নিল,
    আমি কি আমার ভালোবাসার অপমান করলাম?
    যদি না করি তাহলে কেন মনে হলো?
    হঠাৎ করে কেন সেই ভালোবাসার ঘরে অবিশ্বাসের গন্ধ?
    মনের বাগানের ফুলরেণুতে নতুন অলির পায়ের ছাপ?
    বিশ্বাস করে না মন,শুধু ডুকরে কেঁদে বলে হে ঈশ্বর এবার হয়তো সময় এসেছে…
    পাঠিয়ে দাও তোমার হাতে লেখা মৃত্যুর পরোয়ানা…

  • কবিতা

    উত্তাপহীন মন

    উত্তাপহীন মন
    -সত্যদেব পতি

     

     

    দীপ্ত দুপুরে তোমার প্রখরতায় বহ্নিমান থাকলেও,
    পশ্চিমের ঢলে মূহ্যমান সন্ধ্যাপ্রদীপ…
    আলো থাকলেও উষ্ণতা তলানীতে,
    তোমার মিষ্টি আলো গৃহকোণে সীমাবদ্ধ.
    রাতের নামহীন দানবীয় অন্ধকার তোমাকে সুপ্ত করে প্রতি পলে…
    আমি নীল আকাশের বৈষ্ণবিক নক্ষত্র,
    এক বিভূতি আলোর মালা নিয়ে এলাম তোমার প্রভাতে,
    হৃদয়ে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে ভরে দিতে চাইলাম সবটুকু,…
    আমার হাজার নাক্ষত্রিক তেজ বহ্নি-
    পারলে না তুমি গ্রহণ করতে,
    নিরুপায় মেঘবালিকা হয়ে করজোড়ে করলে সমর্পন,
    আমি বিস্মিত হলাম—
    তুমি মানবী হলেও কতো নিঃস্বার্থ তোমার প্রেম,
    আমার হৃদয় বাতায়নে তোমার প্রেমের আসন পাতা রয়েছে জনমের তরে,
    তোমার ভালোবাসাকে আমি সম্মান করি,
    আজ তোমার বাস্তবতায় দুঃখিত হলেও
    তোমার আকাশে রইলাম উত্তাপহীন ভাবে

    পূর্ণিমার চাঁদের স্বচ্ছ স্নিগ্ধ আলো আর শরৎ মেঘের ভেলা নিয়ে…

  • কবিতা

    মনের স্বপ্ন,,,

    মনের স্বপ্ন,,,
    -সত্যদেব পতি

     

     

    জীবনের অর্ধশত বছর পেরিয়ে এলো প্রেম,
    আনন্দময় করলো জীবন মন্দির চত্বর,
    কতো রঙিন ফুল,কতো পর্যায়ী পাখিরা কুজন করলো,
    বসন্ত এলো অসময়ে….
    আমি আপ্লুত তোমার রূপে গুনে কথার মালাতে,
    ভালোবাসার কোনো বয়স নেই না কোনো বাধ্যতা–
    তাই তো হৃদয়ের সবটুকু তোমার আঁচলে দিলাম ঊজাড় করে,
    তুমিতো সবটুকু দিয়েছো নিয়েছি সব কিছু.,
    জানতাম না প্রেমে এত জ্বালা,সবকিছু নিয়েও মনে আরো কিছু পাওয়ার বাসনা প্রতি পলে…
    তুমি তো কিছুই অদেয় করোনি,
    তাহলে কেন আরো বেশী চায় এই পাগল মন?
    তোমার মন, বিশ্বাস মান-সম্ভ্রম সবই তো আমাকে দিয়েছো,
    আর কিই বা আছে তোমার দেওয়ার?
    মনে হয় এই মনের চাওয়ার কোনো শেষ নেই…
    তাই সবসময় সে চিৎকার স্বরে বলে আরো চাই,
    তুমি কষ্ট পাও এ মন সেটাও মানতে পারে না,
    তেমনি তুমি দুরে যাও এটাও চায় না…
    তাহলে কি চায় এ মন?
    সব সময় চায় তুমি একান্ত নিবিড়তায় শুধু আমার হয়ে থাকো—

  • কবিতা

    জীবন প্রবাহে…

    জীবন প্রবাহে…
    -সত্যদেব পতি

     

     

    নীরবে ঝর্ণা বহে নিজ পথ ধরে মিলন পিয়াসে মহাসাগরের তরে,,
    আমি দুর হতে দেখি বিগলিত নয়নের নীর ঝরে ধরনীর পরে..
    আমি জিঞ্জাসা করেছি তুমি কাঁদো কেন?
    উত্তরে সে বলেছে এটা তার স্বভাব,
    উত্তরের হিমালয় তার জন্মদাতা,
    মাতা ধরিত্রীর কোল আলো করেছে অজান্তে…
    চারিদিকে সবুজ বনানী আর হরিৎক্ষেত্রের সমারোহে আজ সে উচ্ছল যৌবনা,
    সারা গায়ে বিচ্ছুরিত সুর্য্যালোকের তপ্ত দহন,
    রাতের আকাশে যখন পুর্নশশীর জোছনা স্নান করে তখন হয় পুণ্যতোয়া গঙ্গা,
    সন্ধাকাশের নীল ধ্রুবতারার আলোকস্পর্শে
    সে প্রতিদিন ঋতুব্রতী হয়,
    তার প্রেমের বন্যা প্রবাহিত হয় অথৈ তরঙ্গ নিয়ে,

    যৌবনের মৌবনে যখন মাতাল ভ্রমরের গান হয়,
    সেই গান তাকে ঘুমোতে সাহায্য করে প্রতি রাতে,
    কখনো বিনিদ্র কাটে কোনো অশান্ত বর্ষা রজনীতে..
    ভরা কোটালের গর্জনে শিউরে ওঠে মন,
    তবুও সে তার প্রবাহ বন্ধ করেনি,
    কারণ সে জানে তার প্রবাহে আছে হাজার জীবনের জীবিকা,
    নিজে অবলীলায় ভেসে চলে পাথর মাটি ভেদ করে.,
    তবুও জীবন যেন থমকে আছে কোনো অছিলায় নীল স্বপ্নের রঙীন আলোতে..

  • কবিতা

    শুষ্ক প্রবাহ

    শুষ্ক প্রবাহ
    -সত্যদেব পতি

     

     

    দিনান্তে প্রতি গোধুলীর রঙে তোমার ছড়ানো আবীরে লুটোপুটি খায় প্রেম,
    বিস্মিত নয়নে ভালোবাসার কাজল পরে
    অপলকে চেয়ে দেখি…
    ঐ যে দূরে মেঘ আর মেদিনীর সঙ্গম,
    সেখানে আমাদের মিলন ক্ষেত্র…
    সাগরের বুকের গভীরে যখন অস্তমিত হয়
    দিবাকর সেখানেও দেখা যায় সাগরীয় প্রেম,
    বিশ্বাসের মেঘবলাকা যখন রক্তিম হয়,
    তার মাঝে আনন্দ লহরী গায় ভালোবাসা…
    আমার কল্পনার স্মৃতি সৌধে তোমার উপস্থিতি,
    কখনো শ্রাবণী মেঘ তো কোথাও শরতের মহোৎসব..
    কল্পিত মনে ভালোবাসার বাতায়ন,
    হৃদয়ের প্রতি প্রকোষ্ঠে অনাবিল আনন্দের বসন্ত,
    যখন তোমার অনুপস্থিতির অনুভব হয়—
    আমার কল্পনার নদীর জল শুকিয়ে যায় সহসা কোনো দুরন্ত জৈষ্ঠের প্রখর দাবদাহে,
    প্রবাহ থাকে অবিরত, প্রেমের জোয়ার তখন ভাঁটার টানে হয় নিম্নগামী…
    কিন্তু কেন হয় উত্তর পাই না তার.
    মনের গভীরে শুরু হয় শুষ্ক প্রবাহ…

You cannot copy content of this page