-
কবিতা- চেতনার সেই রঙ
চেতনার সেই রঙ
– সমীর হালদারনীতিহীনতার নাগপাশে বন্দি হয়েছে মনুষ্যত্ব।
’20 হাজারের’ লোভ আর লালসা গ্ৰাস করেছে চেতনার সব রঙ!
বিবেক তুমি পথ হারালে দূর্নীতির এ কোন দিগন্তে!!
সবুজের সুস্পষ্ট আবেশে যে স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিল,
সে স্বপ্নের রং আজ ফিকে…
মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে ওঠে মনের অজান্তেই…
সবুজের মাঝে অন্য একটা রং ক্রমশ জেগে উঠছে।
খুব-ই চেনা সে রং;
যে রং ঐতিহাসিক! বৈপ্লবিক!
জলন্ত আগুনের ঝড় উঠবে একদিন….
ঝড় উঠবে মনের অজান্তেই।
এখনো সময় আছে,
এখনো ফুরায়নি বেলা,
এখনো বাজেনি বেলাশেষের গান।
বিবেক তুমি ফিরে এসো,
সামনে দাঁড়িয়ে মূর্তিমান আদর্শ,
তাঁকে ছুঁয়ে থাকো। গঙ্গাস্নানে পবিত্র হও।
ফিরে আসুক চেতনার সেই রং।
যে রং স্বপ্নের।
যে রং সত্যের। -
কবিতা- ভয় পাচ্ছি
ভয় পাচ্ছি
–সমীর হালদার
আমি ভয় পাচ্ছি,
হ্যাঁ আমি ভয় পাচ্ছি।
বড় ভয় পাচ্ছি।
বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে বিভৎস মুখটা।
কী নির্মম নিষ্ঠুর পরিতৃপ্তি সে মুখে,
বীরদর্পে গলার কাছে বসে।
শুনতে পাচ্ছি কৃষ্ণাঙ্গ যুবকটির করুণ আকুতি–
“আই কান্ট ব্রিদ, আমি নি:শ্বাস নিতে পারছিনা, আমায় ছেড়ে দিন”।
যুবকটি হতে পারতো আমার বাবা,
যুবকটি হতে পারতো আমার ভাই অথবা নিজের কেউই….
একান্ত নিজের।
অথবা আমি নিজেও হতে পারতাম।
কী ভয়ঙ্কর সে দৃশ্য!
ওদের পরিচয়: ওরা নাকি কালো,
ওরা নাকি বড় লাউড, অশিক্ষিত,
ওরা নাকি নোংরা,
ভয় লাগে ওদের দেখলে,
ওরা অপরাধপ্রবণ!অগ্নিগর্ভ আজ তথাকথিত সভ্যতার মহাপিঠ!
জ্বলছে আগুন, ফাটছে বোমা।
চিৎকারে, স্লোগানে ওদের মুখে আজ প্রতিবাদের নতুন ভাষা–
“কৃষ্ণাঙ্গ জীবনেরও মূল্য আছে,
বন্ধ হোক এই বর্ণবৈষম্য”।
এ কোন সভ্যতা! যেখানে শ্বাসরুদ্ধ হবে ‘কালো চামড়া’!
প্রতিদিন… প্রতিনিয়ত,
পথের প্রান্তে…. নির্জন গলিতে!
কখনও পণের দাবিতে,
কখনও অশ্লীল কটুক্তিতে,
আবার কখনওবা ফর্সা হওয়ার মিথ্যে বিজ্ঞাপনে!অসংখ্য ম্লান মূক মুখের মিছিলে হারিয়ে গেছে ওদের জীবন।
ওদের জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে উদাসীনতার সূক্ষ্ম সূতো।
সুতীব্র শোক আজ গ্ৰাস করেছে কোটি কোটি বিবেককে।
তাই ওরা আজ রাজপথে।
তাই আজ এই স্বতস্ফুর্ত জনরোষের প্রতিচ্ছবি।
যেমন দেখেছি কিং মার্টিন লুথার হত্যার প্রতিবাদে,
যেমন দেখেছি ইরাক যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে,
আবার যেমন দেখেছি–
৯/১১’ সন্ত্রাসবাদী হামলায় নির্দোষ অভিবাসীদের অত্যাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে।আজ অহিংস জনসমুদ্রের জোয়ার এসেছে।
এই স্বতস্ফুর্ত জনসমুদ্র-ই একদিন উপড়ে ফেলবে অত্যাচারী, মিথ্যাচারী, বর্বর শাসককেও।
এ শুধু-ই আবেগের কথা নয়।
এ শিক্ষা মানব সভ্যতার!
এ শিক্ষা ইতিহাসেরই!
হ্যা আমি ভয় পাচ্ছি!
খুব খুব ভয় পাচ্ছি! -
কবিতা- প্রিয়তমা তুমি
প্রিয়তমা তুমি
-সমীর হালদারতোমাকে ভেবেই হাজারটা বসন্ত কাটাতে পারি এখনো।
তোমাকে ভেবেই হাজারটা বসন্ত কাটাতে পারি এখনো….
অথবা তোমার ছবি এঁকে –
কয়েক হাজার নিদ্রাহীন রাত।
সেদিন বসন্তে সন্ধ্যা নামার আগে
তুমি আমি একা একা হেঁটে গেছি কত পথ কত দূরে দূরে!
তোমাকে ছুঁতে পারিনি কোনোদিনই।
ছোঁয়ার স্পর্ধাও করিনি।
পাছে তুমি উবে যাও কর্পূরের মতো,
অথবা আমি মোম হয়ে গলে যাই তোমার আগুনে!
সেদিন স্রোতের প্রতিকূলে হেঁটে গেলে তুমি।
তুমি আজ অন্য জগৎ,
তুমি আজ অন্য পৃথিবী।
আর নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে আজ এখানে এসে থমকে দাঁড়িয়েছি আমি।
চাওয়া না পাওয়ার এক অকরুণ জিজ্ঞাসার সীমান্তে।
তবু আজ যদি বল,
স্মৃতির সাগর থেকে খুঁজে আনা হাজারো মুক্তো দিয়ে এখনো তোমাকে সাজাতে পারি
আমার জীবন কবিতার পাতা জুড়ে।
সে কবিতার পান্ডুলিপিতে এতটুকু গোলাপের গন্ধ যদি পাও,
তবে মৃত্যুর পরে চিত্রাবতী নদীর তীরে, আমার জলন্ত চিতার পাশে দাঁড়িয়ে,
দুফোঁটা চোখের জলে তোমার বুকের আঁচল ভিজিয়ে নিও।
পবিত্র হবে আমার ভালবাসা,
পবিত্র হব আমি,
প্রিয়তমা তুমি।