• কবিতা

    গ্রহণ

    গ্রহণ
    -সায়ন্তনী

     

     

    তোমাকে হত্যা করে স্তনতটে পুষেছিলাম রাগ
    ঘুমন্ত টেলিফোন আজও বোবা সুরে মাঝে মাঝে ডাকে
    হয়তোবা আমি বেমানুষ এ সংসারে
    কিম্বা পেয়াদা হতাম পাগড়ি মাথায় নিয়ে
    পালন করেছো আমার ঘর্মাক্ত অভ্যেসগুলোকে
    লালন কেন করোনি বলতে পারো?
    বেণীমাধব কণ্ঠে ইঙ্গিত বারবার তোমার ঠোঁটের তলায়
    হতেও তো পারতো তোমার চোখে নতুন কবিতার জন্ম
    কিম্বা গুটিয়ে নিতাম নিতান্ত শুকনো অস্তিত্বকে
    বারোমাসই আমি হেরেছি প্রতিটা পরিচয়ে
    তুমিও তো পারতে সোনারকাটি ছুঁইয়ে দিতে
    একবার যদি বলতে আমাতে ভালো আছি

    বুঝে যেতাম আমার অপেক্ষার সন্ধি ঘটেছে
    আচ্ছা আজ কেন নির্বাচিত করো আমাদের স্বরূপকে
    তুমিকি দেখতে চাও বিষাক্ত জীবাণু কেমন ভাবে প্রবেশ করে ধমনী দিয়ে?
    আমিও এখন ভবঘুরে অন্ধকারে অজীবিত প্রাণী
    গিলে খাচ্ছে কারাগারের তরতাজা যন্ত্রণা

  • কবিতা

    নারকেল ফুল

    নারকেল ফুল
    -সায়ন্তনী

     

    মা ওই দেখো ওরা সবাই স্কূলে যচ্ছে,আমারওতো ইচ্ছে হয়

    ইচ্ছে হয় পড়াশুনা করি,বইগুলোকে স্পর্শ করি.

    মা আমিও পারবো জানো রবি ঠাকুরের কবিতা বলতে ওই সেই “বীরপুরুষ ”
    আমি মুন্নির মুখ থেকে শুনেছিলাম জানো? “মনে করো যেনো বিদেশ ঘুরে মাকে নিয়ে যাচ্ছিইইই “

    মা আমি কি দোষ করেছি মা
    কেন আমায় ঘরের মধ্যে আটকে রাখো বলতো?
    আমারও ইচ্ছে করে টিনু,রিন্টু,রিমিদের সাথে খেলা করি
    ইচ্ছে করে ওদের মতন ঘুগরো পোকা ধরি,
    রান্না বাটি,পুতুল খেলা কি মজা হয় তুমি খেলেছ কখনো?

    কি নিষ্ঠুর তুমি,বাবা থাকলে আমায় সব করতে দিতো হু

    জানো মা,আমার না বৌ সাজতে খুব ইচ্ছে হয়,তোমার মতন লাল টিপ,পায়ে আলতা,ঠোঁটে রং

    সেদিন মিলিকে কতো করে বললাম একটু আমায় দিবি ওই লাল রং টা?
    মিলি কিছুতেই দিলো না
    বললো তুই ছেলে আবার মেয়েদের জিনিস নিয়ে কি করবি?

    তুমি বলো মা আমি তো মেয়ে বলো?
    তবে কেনো আমায় ছেলেদের মতন সাজিয়ে রাখো?
    কেনো আটকে রাখো ঘরে?
    কেনো মিশতে দাও না আমকে ওদের সাথে?
    কেন জানতে দাও না রবিঠাকুরকে?
    কেনো কেনো কেনো

  • কবিতা

    শেষ নদী

    শেষ নদী
    -সায়ন্তনী

     

    আমার একটা কঠিন ব্যামো হয়েছে
    দীর্ঘদিন ধরে বেঁধেছে নতুন বাস,
    হৃদপিন্ড পুড়ছে গ্যাসের টানে
    দিনের শেষে ছেড়েছি বাঁচার আশা।
    আর হয়ত বা কাঁদবো না অভিমানে
    না হয় হাসবো বিকেলের আলগোছে,
    নতুন পৃথিবী বিদায় জানান দেবে
    ভেসে যাবো নিরাশার অন্তহীন খোঁজে।
    ডায়রির পাতা শুকিয়ে হবে খড়
    আমার ভালবাসা স্তব্ধ থুক্কূরি,
    চাঁদের পেয়ালায় স্বপ্ন ঠোঁটে আঁকা
    কয়েক মুহূর্তে রোদ যাবে চুরি।
    আমি তো নই আলাদীণের প্রদীপ
    এক ঝলকে চমক করে দেবো,
    জীবন তো রূপান্তরিত শিলা
    সত্যিটাকে মাথা পেতে নেবো।
    অভিমানগুলো থাকুক আবডালে
    ইচ্ছেরা গড়ে নিয়েছে আজ ঘাঁটি,
    আবেগ না হয় নিয়েই গেলাম সঙ্গে
    রাগ গুলকে করে ছাই মাটি।
    বছর ঘুরে আবার আসবো ফিরে
    না হয় স্মৃতি জমুক নদীর চড়ে,
    মানিয়ে নিও আমায় আলগোছে
    একলা নদী অন্তর কেঁদে মরে।

  • কবিতা

    প্রেম

    প্রেম
    -সায়ন্তনী 

     

    নাকের ডগায় প্রেম উঠেছে গোলে
    ঠোঁটের পাশে চাপা হাসির রেশ,
    এ শরীরের স্পর্শকতার টানে
    মেঘবালিকার হালকা কালো কেশ।
    একফালি রোদ সরায় মিঠে হাওয়া
    ভালোলাগা আলতা মাখি পায়,
    নিবিড় এক আকাঙ্খাতে হিয়া
    প্রাণের মাঝে রবীন্দ্র গান গায়।
    চোরাবালির সুদূর অতীত ঘাটে
    জীর্ণ শরীর প্রেমেরি হাত সেঁকে,
    মনের ন্যায় কণ্ঠ সহজাত
    বিদায় বেলায় অতীত ছবি আঁকে।
    আমি কেবল পাশ ফিরিয়ে খাটে
    শোয়ার বেলায় শরীরটুকু নয়,
    চুলের মাঝে বিলি কাটার ছলে
    উন্মাদনা রক্ষণশীল হয়।
    তুমি জড়িয়ে নিও তোমার গালে
    সোহাগী আদর মাখা গরদ,
    পুরনো উলের গন্ধ জাগায় নিশি
    উত্তেজনায় কাঁপায় তাপের পারদ।
    কাল ফির ডুববে নীহারিকা
    ভুলেই যাবে তোমার সকল আজ,
    পাশের বালিশ জাপটে ধরে আমি
    দুচোখ ভরে ঢাকবো আমার সাজ।
    তবুও নাছোড়বান্দা অকপটে
    কলম চালাই চাতক হয়ে পাখি,
    একবার তো ফিরতে তোমায় হবেই
    ভালোবাসার ছোঁয়া গায়ে মাখি।

  • কবিতা

    দিনকাল

    দিনকাল
    -সায়ন্তনী

     

    গুটিকতক ছলচাতুরী
    সবই হয় চতুষ্কোনে
    তাবলে কি প্রেম দেবনা ?
    ফুটেজের পরিত্রাণে
    টেলিফোনে শব্দ বারণ
    অফিসের ঝুট ঝামেলা
    কথা হোক ম্যাসেঞ্জারে
    একা বসে মিস পামেলা
    বখাটে বিচ্ছু ছেলে
    ওরা খায় পান্তা ইলিশ
    বাকিদের তাসের ঘরে
    ছাই পাশ কি যে গিলিস্?
    ঝিনুকের পাতলা খোসায়
    মুক্তার লুকোচুরি
    চকচকে সোনাও তো হয়
    জলতলে প্রাণ ডুবুরি
    আফিমের গভীর নেশায়
    ঘোর কাটে দিনের শেষে
    মিথেনের পচা ডোবায়
    শেষকালে সূর্য মেশে
    সাদা বক নদীর ধারে
    বালুচরে খাবার খোঁজে
    মিঠে ভাত কেমন যে হয়
    ভুখা পেট সেই তো বোঝে
    প্রতিদিন ছুটছে মানুষ
    অযথা আবিষ্কারে
    কিবা হবে এ দেশেতে ?
    পাচারে প্রথম বারে
    লেখকের শব্দ খোঁজে
    গোটাকত ভাষার চুড়ি
    সবই তো ছন্দে মাতে
    বিবেকের আত্ম কুড়ি
    ছেনালি নিত্য জিনিস
    গায়ে হাত ঘরের মেয়ে
    ইজ্জত লুটছে সবাই
    বাইরেতে একা পেয়ে
    দুটো চাল কেও দেবেনা
    সংসারে পেটের জ্বালা
    আমি ভাই হচ্ছি খারাপ
    ভাষাতে প্রকাশ শালা

  • কবিতা

    মৃত্যুঞ্জয়

    মৃত্যুঞ্জয়
    -সায়ন্তনী

     

    প্রদীপের সলতে কমে এসেছে
    সম্ভবত তাতে তেলের অভাব
    ঠাকুরঘরের সামনে আছড়ে পড়ে
    নিঃশব্দে কাঁদছে সুনয়নী
    ভগবান বরপ্রাপ্য দ্বিতীয় সন্তানকে
    ভাগ্য করে পেয়েছে সে
    ঘটা করে নাম রেখেছে মৃত্যুঞ্জয়
    আজ মৃত্যুঞ্জয় মৃত্যুর দিন গুনে চলেছে
    ডেঙ্গুজ্বরে আজ সতেরোদিন বিছানায়
    চিকিত্সা তো দূরে থাক,দুবেলার
    নীবালাটুকুও ঠিকঠাক জোটেনি
    বাবা নেই,মা লোকের বাড়ি কাজ করে
    মাসের মধ্যিখানে হাত ফাঁকা
    গ্রামের এক হাতুড়ে ডাক্তরকে দেখালেও
    কোনো সুসফল হয়নি
    রক্তের প্লেটলেট বর্তমানে নেমেছে কুড়িহাজারে
    প্লেটের সাথে সাথে নেমে চলছে
    তার বাঁচার প্রহর
    কপালে জলপটি লাগিয়ে অনবরত জল
    গড়িয়ে আসছে সুনয়নির্ নয়ন দিয়ে
    প্রলাপ একটাই “তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবি বাবা ”
    মায়ের হাতে আলতো স্পর্শ করে,মৃদু হাসির রঙ্
    বদলে পাড়ি দিলো সে এক অজানা দেশে
    কোথা থেকে অশৈল্য হাওয়া এসে
    নিভিয়ে দিলো তার জীবনের প্রদীপ
    সত্যি মৃত্যুকে বুঝি সে জয় করেছিলো
    তাই সুনয়নীর্ রাখা নাম আজ সার্থক

<p>You cannot copy content of this page</p>