গল্প

অসহায় মিষ্টি প্রেমের গল্প

অসহায় মিষ্টি প্রেমের গল্প
-অজয় চৌবে


প্রায় ঘন্টা দু’য়েক অপেক্ষার শেষে পিয়ালী এলো। কৌশিক রেগে প্রশ্ন করলো- এতো তাড়াতাড়ি এলে? পিয়ালী ওড়না দিয়ে মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বললো- তাড়াতাড়ি করে বের হতে গিয়ে মোবাইলটা বাড়িতে ভুল করে ফেলে রেখে এসেছি। বাসে চাপার কিছুক্ষণ পরেই প্রচণ্ড শব্দ করে বাসটার পেছনের বাম পাশের চাকাটা ফেটে গেলো। বাসটা কাত হয়ে রোডের ধারে একটা গাছে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। যাক বাসের মধ্যে সেরকম ভাবে কারুর কোনো কিছুই চোট লাগেনি।কৌশিক বললো- আমি দুই থেকে তিনবার তোমার মোবাইলে রিং করেছিলাম, সুইচ অফ বলছিলো। ভাবলাম বাড়ি থেকে বের হতে পারোনি, হয়তো সে কারনে লজ্জায় মোবাইলটা সুইচ অফ রেখে দিয়েছো? পিয়ালী বললো- মোটেই না। বাড়িতে বাবা সকালবেলায় সব্জির বাজার করতে বেরিয়ে যেতেই- আমি সেই সুযোগে ঝটপট করে বেরিয়ে পড়লাম। মা ঠাকুর ঘরে বসে পুজো সারছিলো। কৌশিক পিয়ালীকে থামিয়ে দিয়ে বললো- আর বলতে হবে না, তারপর তুমি তোমার মাকে বললে- মা আমার বাড়ি ফিরতে একটু দেরী হবে, অনিতার বাড়িতে চললাম। পিয়ালী রীতিমতো অবাক হয়ে বললো- হুমম ঠিক, অদ্ভুত তুমি কি করে জানলে? কৌশিক মুচকি হেসে বললো- কিছু কিছু ভাবনার অনুমান খুব সহজেই করা যায়, আবার কিছু কিছু অনুমান আকাশ -পাতাল ভাবিয়ে তোলে। পিয়ালী বললো- কই আমি তো তোমার মতো ভাবনার গভীরে যেতে পারিনা? আমার ভাবনাগুলো ইদানিং শুধু তুমি আমিতেই সর্বদা সবসময় ঘোরাফেরা করে। কৌশিক বললো- জানি, বুঝতে পারি ভীষণ। হয়তো সে কারনেই এখনও তোমার অদৃশ্য মায়ার বাঁধনে বাঁধা হয়ে থেকে গেছি। পিয়ালী বললো- আমার আজকাল আর কোনো কিছুই ভালো লাগছে না। বাড়িতে চার দেওয়ালের মাঝে কেমন যেন নিজেকে খাঁচা বন্দী পাখির মতো মনে হয়। কৌশিক মাটির দিকে মাথা নত করে বললো- আমার এখন এই মুহূর্তে কিছুই করার নেই। বাড়িতে অভাবের সংসারে আমি ভীষণভাবে দায়িত্ব, কর্তব্যেবোধে অদ্ভুতভাবে অসহায় জব্দ। একটা মোটা মাইনের কাজের খোঁজ পেয়েছি কিন্তু বাড়ি থেকে অনেক দুরে। আমি বাড়ি ছেড়ে, তোমাকে ছেড়ে দুরে থাকতে কিছুতেই পারবো না। কৌশিক চিন্তার ভাঁজ পড়া পিয়ালীর মুখের দিকে চেয়ে রইলো- তারপর আকাশের পানে চেয়ে বললো- মেঘলা মেঘে ঢাকা আমার জীবন।চারিদিকে অদ্ভুত জমাট যেন আমাবস্যার রাতের মতো গভীর ঘন অন্ধকার। আমি সেই অন্ধকারে চড়াই উৎরাই পথে জীবন সংগ্রামে টালমাটাল হাঁসফাঁস করতে করতে সম্মুখপানে হাঁটতে হাঁটতে চলেছি। আমি পারবো না কিছুতেই আমার অন্ধকার জীবনে তোমাকে জোর করে নিয়ে আসতে। পিয়ালী থমথমে গম্ভীর মুখে নির্বাক হয়ে কৌশিকের মুখের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ খিল খিল করে হাসতে লাগলো। কৌশিক হতবাক! হঠাৎ এভাবে পিয়ালীকে হাসতে দেখে বললো- এই কি হলো তোমার? একাকীত্বর বোবা কষ্টে মাথাটা একেবারেই গেছে। পিয়ালী হাসি থামিয়ে বললো- না, মোটেই মাথা খারাপ হয়নি আমার। মাথাটা এখনও ঠিক আছে বলেই আমি তোমার প্রেমে জীবনে বেঁচে থাকার ছন্দ হারায়নি। বরং তোমার কাছে আমি অদ্ভুতভাবে ঋণগ্রস্ত।
আমি শিখেছি কিভাবে সমস্যা,কষ্ট, যন্ত্রণাগুলোকে পা দিয়ে মাড়িয়ে জীবনযুদ্ধে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে হয়। না না আমি ভন্ড প্রেমিকার মতো তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। কৌশিক একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বললো -পিয়ালী এটা কঠোর বাস্তব।এখানে প্রকৃত প্রেম চড়া দরে বিক্রি হয়ে যায় । মোটা মাইনের ছেলেরা ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে যায়, -অসহায় দুর্বল প্রেমিকদের প্রেমিকাদের।পিয়ালী বললো -কৌশিক আমি আছি তোমার সাথে। তুমি দেখো একদিন ঠিক তোমার মেঘলা আকাশটা কেটে যাবে। পূর্ণিমার আলো হয়ে আমি তোমার সাথে জীবনের চড়াই উৎরাই পথে হাঁটবো।জীবনের ক্রমাগত কষ্ট,যন্ত্রণা, সমস্যাগুলোকে হাসতে হাসতে বলবো -আমাদের প্রকৃত প্রেমের কাছে তোমরা -তুচ্ছ, ভীষণ নগন্য তুচ্ছ।
#সমাপ্ত#

Loading

One Comment

Leave a Reply to AnonymousCancel reply

<p>You cannot copy content of this page</p>