Site icon আলাপী মন

কবিতা- গর্ভধারিণী

গর্ভধারিণী
– ডঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

 

দশ দশটা মাস কি নিদারুণ যন্ত্রনায়,
কাতর হতে হতে, কুঁকড়ে গিয়েছো,
সয়েছো দারিদ্র্যের নিদারুন ভ্রকুটি;
ক্লিষ্ট হয়েছো অনাহারে, তবুও বারবার,
তোমার ঋজুতার কাছে সব কিছু হয়েছে নত।

আকাশে কতবার ঘনিয়েছে মেঘ, নিকষ কালো-
বিদ্যুতের ছোবল, শ্রাবণে, বসন্তে, বৈশাখে;
হেনেছে কতবার; বজ্রপাত হয়, হয়েছেও-
তারপর দিগন্তের বুক চিরে রামধনু ওঠে,
দেখা যায় দূরে,শরতের নীলাম্বর!

লোমকূপে,মজ্জায় বিদ্রোহের বহ্নি,
ধমনী ঘুমিয়ে পড়ে, শোনিতের শীতল স্রোত,
নিভিয়ে দিতে চায় সব “আগুন”, তবু তুমি –
জেগে আছো,আগ্নেয়গিরির লাভায়; তবু তুমি
জেগে ছিলে মৃত্যুর চোখে, চোখ রেখে;
অপত্যর পথ চেয়ে, বহ্নিমান জীবনের,
সব জ্বালাকে, মধুতে জারিত করে-
বিষপান করে গেছো, অমৃতময় করে।

কত উৎকন্ঠিত মুখ, হাসপাতালের ভিড়ে,
তবু তুমি জেগে আছো, তোমার অপত্যর পথ চেয়ে,
তোমার স্বপ্নকে ঘিরে, হাজারো উৎকন্ঠিত মুখ-
শহরের হাসপাতালে, রবির মধ্যহ্ন পেরিয়ে,
এখনও এই শুক্রবারের সায়াহ্নেও
পলকহীন চোখ নিয়ে অপেক্ষায়-
শুধু তোমাকে ভালোবেসে,শুধু তোমারই জন্য,
মা- শুধু তোমারই জন্য।

কিন্তু তুমি যে নিঃশব্দে পৌঁছে দিয়েছিলে নিজেকে,
মরণের দরজায়, সকলের অজান্তেই বড় নিশ্চুপে-
চিরকাল যে ভাবে ধুপের মতো পুড়ে
গন্ধ বিলিয়ে দিয়েছো চারিধারে,
তেমন করেই, হাসিমুখে-
তোমার কড়া নাড়া, সেদিন
মৃত্যুর দরজায়, বড় অভিমানে!
শ্রাবণের ঘ্রাণটুকু নিয়ে,
বসন্তের উজানে-
জানতে পারেনি কেউ।

সেদিন মৃত্যুর কাছে হেরে বিজয়িনী হয়ে গেলে-
শুধু আমাকে ভালোবেসে, শুধুমাত্র আমার জন্য
গর্ভধারিনী, তুমি আমাকে ভালোবেসে-
মৃত্যুকে ভালোবেসে গেলে, জীবনের রঙ মুছে;
শুধুমাত্র আমাকে দেখাতে পৃথিবীর আলো,
গর্ভধারিণী তুমি,
শুধু আমার জন্য-
শুধুই আমারই জন্য।

Exit mobile version