ঝিঁঝিঁ পোকার কান্না
– অমিতাভ সরকার
সব ছেড়ে চলে গেছে,
সবাই ছেড়ে চলে গেছে।
গ্রীষ্মের মধ্য দুপুরে ছিল আমার আশ্রয়,
বটের বাঁধানো স্নিগ্ধ ছায়া তল।
সুখ দুঃখের স্মৃতির পাতা উল্টানো, উদাস দুপুরে চেয়ে থাকা। কান পেতে শোনা পুকুর পাড় থেকে ভেসে আসা কলসে জল ভরার শব্দ। অষ্টাদশী নববধূর ভেজা কাপড়ের থপ থপ শব্দ। গৃহপথের পদচারণা। দোয়েল শ্যামার ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ। মধ্য দুপুর মুখরিত করা কাকের কা কা ডাক। হয়তো বা সভা বসানোর তারা। কখনো বা ঘুঘুর দুঃখ ভরা ডাক।
আজ এই ভারাক্রান্ত দুপুরে শুধু দেখি ধ্বংসস্তূপ;–নীড় হারা পাখিদের শবদেহ, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পাখিদের নীড়, মায়ের কোল ছাড়া হাজারো গাছ। ভগ্ন, রক্তাক্ত তাদের দেহ।
তোমরা কি শুনতে পাচ্ছো তাদের নীরব কান্না!
দেখতে পাচ্ছ কি গাঁয়ের মেয়েদের চোখের জল
শুকিয়ে ভাঙ্গা হাঁড়িতে কাঁচা কাঠ পুড়িয়ে এক মুঠো চাল সেদ্ধ করতে? পুরুষরা গালে হাত দিয়ে
দেখছে সব শেষ হয়ে যাওয়া জমির দিকে। কেউবা ভেঙ্গে পড়া মাথার ছাউনীর দিকে।শিশুরা না খাওয়া মায়েদের স্তন চুষছে। সত্যি কি তারা মায়েদের কাছে বেঁচে থাকার অমৃত পাচ্ছে!
সবকিছু হারানো জীবনে স্নিগ্ধ বটের ছায়াতলে বসে শুনতাম বাউলের পদধ্বনি, একতারার তান। কখনো বা চোখের কোন বেয়ে জল পড়তো ঝিঁঝিঁপোকার কান্নায়। আজ শুধু চারিদিকে জঞ্জাল। প্রিয় বটগাছ আজ পড়ে আছে রক্তাক্ত অবস্থায়। শেষ সম্বল টুকুর নীরব কান্না আমাকে চেপে ধরেছে, বাকরুদ্ধ আমি।
উপলব্ধির অনবদ্য প্রকাশ।