যখন স্মৃতিরা নির্বাসনে যায়
সুনির্মল বসু
রাতের অসমাপ্ত কবিতা গুলো দিনের আলোয় কখনো কখনো লজ্জা পায়, রাতে কি লেখায় সূক্ষ্মতা আসে, দিনে সেসব কোথায় যায়,
শব্দহীন রাতে বুকের ভেতর দিয়ে ট্রেন যায়, স্মৃতির বন্ধ দরোজা যেন খোলা হাট, স্মৃতিতে পুরনো মানুষ, প্রাচীন ভালোবাসা হেঁটে যায়, দেবদারু বন বাতাসে কাঁপে, দীঘল নদীতে সাম্পান ভাসে, স্মৃতিপথে পুরাতন প্রেমিকা হাঁটে,
একদিন যে সমস্ত মন জুড়ে জায়গা নিয়েছিল, আজ তাঁর দিকে তাকালে মনে কৌতূক জাগে, কেমন ছেলে মানুষী মনে হয়, গতানুগতিক দিন বাতাসের মতো বয়ে চলে,
সেই কবে নদীর পাড় ভেঙ্গে গেছে, আমার জানা হয়ে ওঠেনি, বল্গাহীন দিনে কে আর সময়ের সালতামামি নেয়, সে এক মুগ্ধ আচ্ছন্ন সময়,
নদীর মতো সম্পর্কেরও পাড় ভাঙ্গে,
একথা জানবার জন্য জীবনের কত মূল্যবান প্রহর কেটে গেল,
রাতের কবিতায় দুলে ওঠে ঝাউ পাইনের বন, ইউক্যালিপটাসের দীর্ঘ ছায়া স্মৃতিতে ছায়া ফেলে,
মনে পড়ে, কফি হাউসের কবিতা সন্ধ্যা, কিংবা, বাংলা একাডেমীর কবিতা সভা,
রাতের উড়ালপুল, নিয়ন আলো, হাইওয়ে, কিংবা গড়িয়াহাট মোড়, কিংবা পার্ক স্ট্রিটের বিকেল,
সে বয়সে সব মেয়েকেই যেখানে সুচিত্রা সেন মনে হোত, কি সব মোহময় দিন হারালাম,
দেশপ্রিয় পার্কের কাছে রাস্তা পেরিয়ে যেতেন কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়,
উড়তি সিরিয়াল নায়িকা বেনারসী কুঠিতে ঢুকতেন,
পর্দা ঢাকা রেস্তোরাঁয় সাদার্ন এভিনিউতে প্রেমিক প্রেমিকা চুপিসারে কথা বলতেন,
সংবাদপত্র অফিসের সামনে দেখা যেত বিজ্ঞাপনের জন্য দীর্ঘ লাইন, ফাস্টফুডের দোকানের সামনে জটলা,
সে সবসময় আজ দূর স্মৃতি,
রাতের অসমাপ্ত কবিতা গুলো দিনের আলোয় নাকি লজ্জা পায়, রাতে কি লেখায় সূক্ষ্মতা আসে,
দিনের বেলায় সেসব কোথায় যায়,
আসলে, রাত গভীরে স্মৃতিপথে কারা যেন অশরীরী ছায়ার মতো হেঁটে যায়, চারদিকে সাঁইসাঁই বাতাস বয়ে যায়, দিনের আলোয় এরা উধাও, গাছপালা নদী আকাশ ও সমুদ্র কোনো স্মৃতিকে ধরে রাখতে পারেনা,
অরণ্য বীথিতে কিংবা অরণ্য পাখির গানে সেই সব স্মৃতির কোনো ঠিকানা মেলে না,
মধ্যরাতে জীবন সুরে বেসুরে কত কথা বলে,
দিনের বেলায় স্মৃতিরা নির্বাসনে যায়।