কবিতা

কবিতা- আমি ফরিদ পুরের মেয়ে

আমি ফরিদ পুরের মেয়ে
-সুব্রত আচার্য‍্য

 

 

আমি ফরিদ পুরের মেয়ে , মা বলেছিল। দেশ জুড়ে যখন দাঙ্গা হল, আকাশে – বাতাসে বারুদ আর বারুদ। রাজপথের পথে পথে চাপ চাপ রক্ত। প্রতিটি রক্ত বিন্দু দিয়ে প্রতিবাদের ছবি আঁকা। আমার জন্ম হল , জন্ম লগ্নে না বেজেছিল শঙ্খ , না ছিল হাসি। মা শুধু শত চুম্বনে আগলে রেখেছিল আমায়।

জানোতো , আমার কোন জন্ম লগ্ন নেই। জন্মদিনও নেই। জন্মদিন কেউ কোনদিন পালন করেনি আমার। দূর থেকে দেখেছি , ঐ বড়লোকদের জন্মদিন পালন উৎসব।
জানোতো , বেশ কয়েকদিন আগের কথা , চৌধুরীদের পাড়ায় হঠাৎ জ্বলে উঠল বাহারি আলো , সঙ্গে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত , প্রতিবেশীরা সব দল বেঁধে একে একে এগিয়ে যাচ্ছে মাষ্টার মশাইয়ের বাড়িতে , মহা ভোজের আয়োজন। মাষ্টার মশাইয়ের বাড়িতে একটা বিলেতী কুকুর , শহর থেকে আনা , তার জন্মদিন।

আমার কোন জন্ম লগ্ন নেই। নেই জন্মদিন। একদিন মায়ের কাছে খুব কেঁদে ছিলাম , বলেছিলাম এবছর আমার জন্মদিন পালন করতে হবে। পরমান্ন খাওয়াতে হবে। মা বলেছিল , তোর জন্ম লগ্নে তোর বাবাকে ওরা – – – – -।
মা আর আমি একে অপরকে জড়িয়ে খুব কেঁদেছিলাম।

আমি আর জন্মদিন বা পরমান্নের জন্য বায়না করিনা। কেঁদেও উঠি না। মায়ের চোখের জলে ভিজতে ভিজতে আমার কণ্ঠ আরও শাণিত হয়। স্বরলিপি বিহীন সুর আমি আজও শুনতে পাই। মনে হয় কেউ আমায় ডাকছে।

আমি ফরিদ পুরের মেয়ে , মা বলেছিল। যার জন্ম লগ্ন নেই। নেই কোন জন্মদিন। দূর থেকে দেখেছি জন্মদিনের উৎসব।

Loading

2 Comments

Leave a Reply to AnonymousCancel reply

You cannot copy content of this page