-
কবিতা- দরবার
দরবার
-অমল দাস
ছুঁয়ে দেখনি আমাকে —ছুঁয়ে দেখনি বহুকাল
এই তপ্ত মরুতে পাথর হয়ে আছি কাঁটা-ঘেরাটোপে!
বৃষ্টির জলে শেষ কবে অমৃতের স্বাদ পেয়েছি
মনে নেই —কবে জোছনার রাতে চৌকাঠে স্বপ্ন পুঁতেছি
অথবা স্বপ্নের বীজ খুঁটে খুঁটে খেয়ে গেছে মূষিকের দল…
ছুঁয়ে দেখনি আমাকে —বহুকাল ছুঁয়ে দেখনি
আমি ছুঁতে চেয়েও ছুঁতে পারিনি পলাশের লালে নিষিক্ত রস
কতগুলি ফাগুনের রাত হুতুমেরা উল্লাসে ছিঁড়ে ফেলে-
অ-শৃঙ্খল বনানীর ‘পরে
এলোমেলো উঠোনের ঘাস পিষে গেছে
বে-ফালতু পশ্চিমি ঝড়ে,
সমবেত সপ্রতিভ প্রতিবাদী স্বর রক্তের লালে নেয়ে
মুছে গেছে হাতেখড়ির কালশিটে স্লেটে
তবুও দেখনি ছুঁয়ে পোড়া পোড়া দাগ বিভেদের দ্বারে
আমি পেনসিল হাতে নিয়ে
‘স্বরে-অ’, অথবা ‘স্বরে-আ’ মনে রেখেছি? নাকি!
কবর দিয়েছি তোমার দরবারের বহু ক্রোশ দূরে!
-
কবিতা- আর্তনাদ
আর্তনাদ
-অমল দাস
বন্ধ দরজায় ফিসফিস কানাঘুষো
নিশ্ছিদ্র রজনীর কঠিন আর্তনাদ,
বাইরে টিমটিমাটি আলো অপ্রাসঙ্গিক
চাঁদ আজ পূর্ণতায় উচ্ছল উন্মাদ।
জ্যোৎস্নালোকে ধরণী উলঙ্গ যৌবনা
বাদুড়ের ডানায় বিচলিত আচরণ,
ওৎ পেতে বসে ডালে হুতুমের দল
ইঁদুরের মৃত্যু লড়াই খোঁজে গৃহকোণ ।
বাতাসে পাতা ঝরা সরসরানি শব্দ
ক্ষুধার্ত ব্যাঙেদের ঘোঁৎ ঘোঁৎ ডাক,
সালোকসংশ্লেষের অভাবে ধুঁকছে পাতা
কালো হয়ে ছায় পিপাসু মশার ঝাঁক ।
প্রান্তিক মাঠে আগুনের শিখা জ্বলে
ব্যস্ত কৃষক, চলছে আগাছার বিনাশ,
তৃপ্তির গহ্বরে ঢেলে দিয়েছি রক্ত
ঝুলিতে পুরষ্কার বসন্তের সর্বনাশ ।
রাত পোকার অস্তিত্বে আণবিক আতঙ্ক
আশ্রয় ঝলসে যাওয়া ঘাসেদের কোল,
দূর ওই রাস্তা- সমবেত কণ্ঠ ভাসে
শেষ শোভা যাত্রা “বল হরি বল” ।
-
কবিতা- শতাব্দীর আঙিনায়
শতাব্দীর আঙিনায়
-অমল দাস
মৃত কলরবের আকাশ-কান্নায় বায়বীয় গ্লানি ধুয়ে
খার-জল ঝরেছিল পৃথিবীর বুকে –নিম্নের চাপ।
স্রোত হয়ে ভেসে গেছে বহু –পাতা, খড়কুটো
নালী পথে দেয়ালের গায় লেখা ‘ব্রিগেড চলো’
কিছু ইঁদুর-স্নানের জল আস্তানা গড়েছিল
উলঙ্গ মাঠের কামুকে ডোবায়!
হাঁ করে চেয়ে ছিল দলচ্যুত মেঘেদের সমাবেশে…
আঁধারের পর্দাটা সরে গেলে নাটকের মহড়ায় জ্বলে ওঠে নিয়ন
জমায়িত জল প্রত্যাশার আলোয় চমকিত, ভীত-তটস্থ
যেন বিগত রক্তক্ষয়ী শতাব্দীর শাণিত তরবারির বীভৎস আভা..
পৃথিবীতে মানুষের বাস বহুকাল ধরে –বদলায়নি!
জলের আরশিতে প্রতিচ্ছবিতে দেখছি হিংস্র আদিমতা।
ইতিহাসের পাতা থেকে দুইটি শালিক উড়ে আসে -দিকভ্রষ্ট
আনন্দের সরোবর ভেবে সর্বস্ব ডুবিয়ে ডানা ঝাপটায়
ধুয়ে নেয় ধূসর হয়ে লেগে থাকা বিগত রক্তের দাগ
তারপর এক আকাশ রোদ মেখে উড়ে যায়
আগামী শতাব্দীর আঙিনার খোঁজে।
-
কবিতা- আমাকে যাবেনা ছোঁয়া
আমাকে যাবেনা ছোঁয়া
-অমল দাস
কার্ত্তিকের কুয়াশা সকাল -ভিক্ষুক ঘাসের পাতায় জল-অন্ন।
পায়ে পায়ে হেঁটে যাই প্রভাতী আবহে
পথ-পাশে আশ্বিনে ঝলসানো কাশের সারি সারি ঝোপ
হাওয়ার মৃদু ঝনঝন আর গোয়ালের গরু হাতে-
এক গোয়ালিনীর নূপুরের ধ্বনি নিস্তব্ধতা কেড়ে নেয়..
-মাঠে জনখাটা কৃষকের দল -নোনা ঘাম শস্যের শ্বসনে।
ভোরের সূর্যের লাল তখন অস্ফুট পূবের আকাশে
কোনো খুনি রক্তলীলায় খেলে আসে সদ্য -হাসে
তার আভা -জড়াতে চায় মাঠ ভাঙা পথে।
যেন আমায় তরবারি হাতে অপরাধী হতে বলে!
আমাকে যাবে না ছোঁয়া…
সবুজ ধানের শিষে দুগ্ধ দানার-মতো সতত
জেগে থাকি পতঙ্গের শাপিত মহারণে।
আমি আকাশের নীচে –পৃথিবীর’পরে
অন্ধকারের যোনির ভিতর থেকে জেগে উঠি..
খুঁজি সেই ভোরের বাউল, আজ-
মৃত সভ্যতার নীড়ে -কোথায় কোন জীর্ণ কবরে
অথবা ধ্বংসস্তূপে রয়েছে ঘুমিয়ে..
সবুজের ঘরে, নদী ভাঙা চরে..
কার্ত্তিকের নীল চাঁদের নগরে –মরুর সাগরে হেঁটে যাই
কস্তূরী মৃত্তিকার ঘ্রাণ আমার সমস্ত শরীরে।
আরও কিছু প্রেম-বিষ ঘ্রাণ দিয়েছিল প্রিয়ে
আঁতুড়ের উদ্বায়ী আতর সব -উবে গেছে বহুকাল
নীল প্রান্তসীমার ওপর দিয়ে অসীমের পারে
সাঁঝের শঙ্খনিনাদ-স্বরে সূর্যের মরণের আগে
যে সমুদ্র স্রোত লুটিয়ে পড়ে নুন-বালি-শামুক-ঝিনুকে
সেই বিষণ্ণ বিকালে তোমাকে পেয়েছি মুখচোরা শব্দের মতো
বিলাসী হাওয়ায় ভেসে কান ঘেঁষে-
দূরে অস্পষ্ট পাতাঝরা সেগুনের বনে…
পলাশের সব পাতা চুরি গেলো
-লালে, লালিত হওয়ার আগে।
সজনের ডাল ভেঙে আছে -ভাঙা কারও চালে
আমার অমীমাংসিত পথে পৃথিবী ঢলে পড়ে
কুমড়ো লতার মতো মনমরা হলদেটে মৃতপ্রায় ঘাসের উপর
আকাশের তারার আলো গিলে খায় কুয়াশার গ্রাস
অজানা পাখির ডানা ঝাপটায় অন্ধকার কালো রঙ মেখে
আমাকে যাবে না ছোঁয়া –যাবে..না.
কার্ত্তিকের রাতে..
আমি আঁধারের সুর ধরে আরও গভীর আঁধারে…
–আলেয়ার কিনারে…
-
কবিতা- নৈঃশব্দের মলাট
নৈঃশব্দের মলাট
-অমল দাস
সবুজের ঝোপঝাড় —সারি সারি গাছ পথের ধারে
রোজনামচায় বেড়িয়েছি আমি।
টুপটাপ ঝরে পড়া পাতা, ঘাসফুল -বনফুল
দেখি।মাদারের বন কবেই হারিয়ে গেছে!
আম, জাম, অশ্বত্থ দু’একটি ঢিল ছোঁড়া শৈশব
আজও আছে —বাঁশের আড়ালে যুবতী চুল ধুয়ে –
পুকুরের নাবালক জলে দেয় ডুব।
আগুনি শরীর উথলিয়া ওঠে তার বুকভরা জল।
দাঁড়াবার উপায় তো নাই —থেমে থেমে হাঁটি
পিছে পিছে চাই । নয়ন জুড়ায়ে যদি একবার তারে…
আমার দাঁড়াবার উপায় আর নাই! আহা রে…
গ্রাম ছাড়ি, ট্রেন ধরি —শেষে ধীরে
শহরের গলি পথে, সব অচেনা পরিযায়ী
পথচারী! আমার আপনার পরিচিত নাই..
এখানে ছায়ার মায়ায় গাঁথা পথের দু’ধারে
ঘেঁষাঘেঁষি গাছ দেখিনা প্রেম করে!
ছেঁড়া-ছিন্ন পাতার পা পেতে এলোকেশী গল্প
শুনতে পাইনা আর —শুধু নৈঃশব্দের মলাটে
গুমরে মরে ঘর, বাড়ি ,শুখা জানালা।
রঙচটা দেয়ালের ইতিহাস খসে খসে পড়ে।
কারো কারো জানালায় উঁকি দিয়ে ঝুঁকে থাকে-
ফ্যাকাসে নাগরী —নগরে।
চুরি যাওয়া মেঘের বাজারে খাঁ-খাঁ রোদ কিনে আমি হেঁটে যাই –
তোমার সেই চেনা রূপ ধীর-লয়ে চাপা পড়ে
ঘামে ধুয়ে- সভ্যতার কাগজের কবরে!
-
কবিতা- গুণ-দোষ
গুণ-দোষ
-অমল দাস
আমাবস্যার ঘুটঘুটে কালো রাত
তবুও উৎসব উপদ্রবে কতেক আলো
জীর্ণ ঘুলঘুলির ফোকরে যে পাখিটা
রাত্রি যাপনে বসেছিল –সে তো ডানা মেলেনি
সে কি আলোর খেলা জানতে পেরেছিল?
যদি জানতে পারতো ছেঁড়া কাপড়-কিশোরী
সমস্ত রাত উলঙ্গ জুনিটা মশারীর ফাঁকে এসে
চেটেছিল তার ঘর্মাক্ত শরীর
সে কি পারতো ঢাকতে লাজ – ছিনিয়ে নিতে পারতো
গগন তারে ঝুলিয়ে রাখা আকাশের নীল শাড়ি!
এতকালেও যারা ছিনিয়ে নিতে পারেনি
এতকালেও যারা বলতে পারেনি কথার উপ’কথা
তারা কথিত “মাটির মানুষ”
ধুলোয় মিশে এসেছে.. এবং গেছে..
তারা খুঁজতে চায়নি কোথায় পৃথিবীর সীমারেখা।
আজন্মকাল খুঁজেও তোমাকে পাওয়া যায়নি
পিয়াসার নলকূপে সাঁতার কাটে
ম্রিয় -আকাঙ্ক্ষার কালো কোষ
শেষ পেয়েছিল..
মাটির চরে মরা মানুষের খুলি
আবেগের মৃত কার্নিশে দোয়েলের বিদায়ী শিষ
ঘন জনস্রোত পিষে যায় জনপদের গুণ
দোষ…
-
কবিতা- প্রতারিত রঙ
প্রতারিত রঙ
-অমল দাস
প্রতিবিম্বের প্রতিটি রঙ আয়না দ্বারা প্রতারিত
অন্ধকারে মুখ খুঁজি নৈশকালীন আলেয়ায়,
-মনে অজ্ঞাত এক ভয়!
আজন্মকাল ভয়ের সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে
ক্ষয়ে যায় ভগ্ন হাঁটুর ক্যালোরির কৌলীন্য
অথর্বতার অস্থিরতা স্তূপাকারে সাজিয়ে রাখি কেদারায়।
শ্যাওলা আবহে যারা আমায় ঘিরে ধরে আগাছার মতো..
তাদের রসদ দিই নির্যাসের নীল রক্ত দিয়ে।
এদিকে পানসে দাঁতের পানসি ডুবে-
নোনা রক্ত জিহ্বা চাটে।
অবজ্ঞার ফেনিল-দানা ঠোঁটের থেকে ধুলোয় গড়ায়
ধুলোয় ঘেরা দৃশ্য দিশায় নেই কোথাও কেউ
নেই –সেই তুমিও না…
কেবল পায়ের কাছে নিঃশব্দে নিরিবিলি জীবন লিখে
জীবন কাটি শীর্ণ জীর্ণ আঙুল দিয়ে।
নেই কোথাও আলোর কণা
কণায় কণায় অশ্রু দানা।
আকাশের নীল আঁধার দ্বারে নত হলে নগ্ন সাঁঝে
শঙ্খ ধ্বনির অবোধ্য সুর অনতিদূর সংজ্ঞা হারায়।
সূচ শীতল দখিন হাওয়া স্পর্শ করে-
হন্তাকারী নারীর মতো!
ঘাতক স্বরের ফিসফিসানি বলছে যেন হাওয়ায় হাওয়ায়
-রক্ত আরও রক্ত ঢালো,
অথবা.. প্রতারিত সূর্যের রঙ অন্তর্হিত হলে,
‘তুমি’ পৃথিবীর বলিরেখা’পরে হেঁটে যেও!
একা…
-
গল্প- চোখ বুজে…
চোখ বুজে…
– অমল দাস
-রণ বউ এসেছে… রণ’রে বউ…
টুনি ডাকলো। রণজয় শুনেও শুনলো না। বেশ কয়েক বছর আগে বাড়িতে একটি ছোট্ট টিয়া নিয়ে আসে রিক্তা, রণজয়ের বউ। নাম রাখে টুনি -রিক্তার সর্বক্ষনের সঙ্গী। প্রথম প্রথম রিক্তা কথা শেখাতো, এখন পাখিটা খুব কথা বলে। যা শোনে তাও, নিজের থেকেও বাদ দেয়না। টুনি ওদের ছোট্ট সংসারের সদস্য।
টুনি আবার ডাকে –ওরে রণ দ্যাখ বউ …
রণজয় তাও দেখলো না। সে একটি আধখানা চাঁদের মতো চেয়ারে বসে, পা’দুটিকে তুলে দিয়েছে সামনের বারান্দার কার্নিশে। শরীরের ভঙ্গি ঠিক ছাউনি খোলা ডিঙি নৌকার মতো। চেয়ারের ঠিক পিছনেই টেবিল। হাতে খবরের কাগজ। খবরে গভীর ভাবে ডুব দিয়েছে। ভাবখানা -পারলে খবর ডুব দিয়ে তুলে আনে। রিক্তার অভিমান এমন মনঃসংযোগে রণজয় হয়তো তাকে কখনো দেখেইনি।
রিক্তা চা হাতে পিছনেই দাঁড়িয়ে। রণ দেখল না। রিক্তা ধৈর্য হারিয়ে বলল – এখানেই দেবো চা’টা..
রণ পিছনে না তাকিয়েই বলল – সক্কাল সক্কাল স্বামীকে চাটা। এ কি দজ্জাল বউ! তা.. অপরাধ কি হল দেবী ? স্বামী না.. স্ত্রীর পরম গুরু!
রিক্তা বলল – গুরু নয়.. গুরু নয়.. গরু, মাথায় শুধুই ভুষো। এ সুর রণজয়ের চেনা। প্রায়ই শুনতে হয়! যেমন কর্ম, ফল তো আর আলাদা হতে পারেনা! গতে বাঁধা। রণজয় কথা না বাড়িয়ে পিছন না ফিরেই বলল- ও চা এনেছো টেবিলে রাখো।
রিক্তা চা রেখে নিজের চায়ের কাপটা নিয়ে পাশের চেয়ারেই বসলো। রণ কার্নিশ থেকে পা নামিয়ে ভিজে বিড়ালের মতো । টেবিলের দিকে ঘুরে খবরের কাগজটি মুড়ে রাখতে গিয়েই যত বিপত্তি। চায়ের কাপ সটান মেঝেতে –ঝন্ ঝন্ ঝন্ আওয়াজ। কাচের টুকরো মেঝেতে গড়িয়ে গেলো। শুধু কাচ ভাঙার মতো একটা মুখের সহস্র ভাগ দেখা গেলো না।
রণ কাপের দিকে না দেখে রিক্তার দিকে ক্যাবলার মতো চেয়ে রইল। এগুলো রিক্তার খুব যত্নের জিনিস। এখন দেবী কি রূপ ধরে!
টুনি বলে উঠলো- রণ করলি তো কেলো..
রিক্তার চক্ষু রক্তবর্ণ। নাকের পাটা ফুলছে… কমছে। একেই ছুটির দিন, সকাল থেকে খবরের কাগজে মুখগুজে – কথা নেই। তার উপর সাধের কাপ টুকরো টুকরো।
চিৎকার করে উঠলো রিক্তা – দেখেছ.. দেখেছ..! দিলে তো সর্বনাশ করে। দামী কাপসেট’টার তিনটেই শেষ করলে তুমি! হাড়ে লক্ষ্মী নেই গো..
রণজয় চেয়ার নিচু হলো। কাপের টুকরো তোলার ভান করে সোজা রিক্তার পায়ে হাত। রিক্তা চমকে গেলেও পরক্ষনেই দু’পা সরে গিয়ে, কপট গম্ভীর্যে বলে উঠলো -থাক.. থাক.. পায়ে পড়ে মাফ চাইতে হবে না! ন্যাকামি বন্ধ করো।
-দেবী এ ন্যাকামি নয়, প্রান ভয়। গরম চা তোমার পায়ে পড়লো কিনা সেটাই দেখছি।
-পড়লে পড়ুক! তাতে তোমার কি যায় আসে…?
-বাঃ রে.. বউটা তো আমার। চা পড়ে এমন সুশ্রী বউয়ের শরীরে খুঁত ধরে গেলে নিজেকে মাফ করতে পারবো না তো ।
-আদিখ্যেতা। সকাল সকাল ফাজলামির আর জায়গা পেলে না?
– আদিখ্যেতা নয় গো! ও আমার বুকের খাঁচা থেকে বেরিয়ে পড়া ভালবাসা।
-শোন ওই সব ভালবাসা বুকের খাঁচাতেই রেখে দাও। ভালবাসার খাঁচা আর খোকার প্যান্টের কাছা দুই সমান। ঢিল দিলেই খুলে পড়ে মাটিতে।
– সেকি! এসব কি কথা সক্কাল সক্কাল ! (রণজয়ের ঠোঁটে মৃদুহাসি)
-গ্যাট হয়ে বসে না থেকে ঘর থেকে বিদায় হও। একসেট নতুন কাপ নিয়ে এসো।
– সে নয় যাচ্ছি। তবে খাঁচার ভালবাসার একটা ব্যবস্থা হবে না?
রিক্তা আন্দাজ করলো। আদুরে স্বরে বলল- খাঁচা সামলাবে না কাছা?
দুজনেই কাছাকাছি এলো। আবেশে চোখ বন্ধ।
টুনিও চোখ বন্ধ করে বললো- বাঃ রে লজ্জা নেই…
——–সমাপ্ত————-
-
কবিতা- পৃথিবী জেগে থেকো
পৃথিবী জেগে থেকো
-অমল দাস
হে পৃথিবী এ সকালে কিসের এতো কান্না
বুঝি না এমন নয়
–অন্তরে অনন্তের জ্বালা তোমারও।
তোমার বুকে ক্ষত –ক্ষত আরও কতো
ক্ষতের ধারা প্রবাহিত নদী
-চর ভাঙা মাটি ধুয়ে যায় আমারও।
আলো .. আকাশ আকাশ আলো
আলোর পিঠে অভিমানী আঁধার
পৃথিবী আঁধার কেন নিলে?
অন্ধকারের ইন্ধনে হারিয়ে যেও না
আবর্তনের আবর্তে আলোয় মুখ তোল
এই দেখো আমি প্রদীপ নিয়েছি জ্বেলে..
কুহক হাওয়ায় ঘুমিও না কুয়াশার প্রকোপে
নিখোঁজ রত্ন চাই না
-শঙ্খচ্যুত সমুদ্রের সমাহিত তীরে
যত ইচ্ছে ডানার স্রোত –ঘাস সবুজের বুক
স্বর্ণ আভার দিগন্তহীন কায়ায়-
পৃথিবী জেগে থেকো.. জেগে থেকো
-আমার শব্দ লেখার নীড়ে!
-
কবিতা- ছায়াপথে …
ছায়াপথে …
-অমল দাস
আগুন জ্বলে, বাইরে জ্বলে -ঘরে জ্বলে
মনের বনেও আগুন জ্বলে…
তখন আকাশ জুড়ে বৃষ্টি
ভিজতে চাইলে ভিজতে পারি কাক-পক্ষীর মতো
পারলাম না চার-দেয়ালের বন্দী ছেড়ে
পারলাম না…
ঠিক যেমন পারলাম না প্রতিবাদের প্রদীপ খানি জ্বালতে
প্রতিবাদের প্রতিঝড়ে আঁধার না ফের ফিরে আসে
তাই নিঝুম রাতের তারার মতো চেয়ে থাকি নিঃশব্দে
বৃষ্টি ভেজা মাটির মতো চুপসে থাকি ঘুম-পৃথিবীর বুকে
ইচ্ছে হলে শব্দগুলো ইটের মতো ছুঁড়তে পারি
মন চাইলে বন্দী ঘরের বদ্ধ দেয়াল ভাঙতে পারি
বদলা নিতে ছুরি বুকে -পাল্টা ছুরি গাঁথতে পারি
এই যে, আমার এপার ওপার লুট করেছো
দেয়াল-দেয়াল তোমার নামে বদ-স্লোগান লিখতে পারি
তবু মধ্যযামের একপশলা বৃষ্টি ’পরে
রাত্রি নিবিড় অন্ধকারে নীরব থাকি
-মৌন ছায়াপথে …