• অণু গল্প,  প্রথম বর্ষ - ২০১৯,  বর্ষপূর্তি কলম

    আলাপ-আনন্দ

    আলাপ-আনন্দ
    -অমিত কুমার জানা

     

    কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রখ্যাত সাহিত্যিক ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় মঞ্চে উঠবেন। আজ ‘কল্পসাহিত্য’ পত্রিকার প্রথম সংখ্যার আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান উক্ত সাহিত্যিকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। সকাল থেকেই অজয়ের মন ঐ সাহিত্যিকের সঙ্গে আলাপের জন্য অধীর উৎকণ্ঠায় অপেক্ষমান। কল্পসাহিত্য পত্রিকায় অষ্টাদশ বর্ষীয় অজয়ের লেখা একটি গল্প স্থান পেয়েছে এবং সেই সুবাদে সে আজ এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত। অজয় সেই বাল্যকাল থেকেই ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের অনেক লেখা পড়েছে। আজ উনার সঙ্গে যদি একটু আলাপচারিতার সুযোগ পায় তাহলে সত্যিই তার মন অনাবিল আনন্দে ভরে উঠবে। বিশিষ্ট সাহিত্যিক মঞ্চে পদার্পণ করলেন। সারা হলঘর হাততালিতে ভরে উঠল। মোবাইল ক্যামেরায় কত যে ছবি তোলা হল তার কোন হিসেব নেই। মুখোমুখি এহেন বিখ্যাত সাহিত্যিককে অজয় যেন খুশিতে ফেটে পড়লো। মঞ্চে ডেকে নেওয়া অনেক নতুন কবি, লেখকদের। বিশিষ্ট সাহিত্যিক তাদের হাতে তুলে দিলেন নিজের স্বাক্ষর করা শংসাপত্র। অজয়ের নামও ঘোষণা করা হলো। সে এই জগতে একেবারেই নতুন। ভয় মিশ্রিত উত্তেজনায় দুরদুর করে বুক কেঁপে উঠলো। সে ধীরগতিতে মঞ্চে আসীন হলো। ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় তার হাতে তুলে দিলেন শংসাপত্র। অজয় তাঁকে বললো,-” আমি আপনার অনেক লেখা পড়েছি, আমি আপনার ভীষণ অনুগামী।”
    প্রখ্যাত সাহিত্যিক অজয়কে সানন্দে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। অজয়ের অনুরোধে তার সাথে একটা সেলফিও তুললেন।
    অনুষ্ঠানের শেষে বনভোজনের ব্যবস্থা ছিল। উক্ত সাহিত্যিক নিঃসংকোচে অজয়ের সাথে বসে পরম তৃপ্তিতে বনভোজন সারলেন। অজয়ের বহুদিনের দেখা স্বপ্ন আজ সত্যি হলো। তার চেয়েও যে ব্যাপারটা অজয়কে অভিভূত করলো তা হলো ঐ বিশিষ্ট সাহিত্যিকের নির্ভেজাল অমায়িক ব্যবহার। উনার সঙ্গে অন্তরের আলাপে সত্যিই অজয়ের মন অপার খুশিতে ভরে গেল।

  • কবিতা

    মনের ক্ষত

    মনের ক্ষত
    -অমিত কুমার জানা

     

     

    অদৃশ্য থাকলেও মোটেও নয় অননুভূত,
    সে অন্তরের গভীরে ক্ষত।
    কর্মব্যস্ততার ভিড়ে সে আপাত অন্তর্হিত হয়,
    অবকাশের আলতো হাওয়ায় জ্বলে ওঠে স্বশিখায়।
    ভস্মাবৃত বহ্নির ন্যায় এর রূপ
    নশ্বর দেহাবরণে আবৃত থাকে এর স্বরূপ।

     

    অতিথি সম আমোদ-প্রমোদ খেলা করে মনের আঙিনায়,
    ক্ষতর ঔদ্ধত্য আপাত প্রশমিত হয়,
    মন খুশির দোলনায় দোলায়িত হয়,
    কালস্রোতের তাড়নায় সে অতিথিরা বিদায় নেয়,
    ক্ষতরা তখনই সগর্বে মাথা উঁচু করে।

     

    বস্ত্র রাখার আলমারিতে সযত্নে রাখা ন্যাপথলিনও উবে যায় একদিন,
    তেমনই ক্ষতরাও যদি উবে হতো বিলীন!
    বেদনার্ত ব্যাকুল মন,
    নীরবে করে প্রতিষেধকের অন্বেষণ।
    ক্ষত নিরাময়ের প্রতিষেধক।
    দেহের ক্ষতের দাগ একে একে মুছে যায়,
    অন্তরের ক্ষত কেন আমৃত্যু বেঁচে রয়?

  • কবিতা

    কেবল জোকারের সার্কাস!

    কেবল জোকারের সার্কাস!
    -অমিত কুমার জানা

     

     

    রঙ্গভূমিতে সার্কাসের প্রদর্শন হয়ে চলেছে বছরের পর বছর,
    অলৌকিক কিছু উপভোগের আশায় গণতন্ত্রের দর্শকাসনে উপবিষ্ট জনতা আপামর।

    নিয়মমাফিক ভাষ্যকার আসে,হয় খেলা শুরুর ঘোষণা,
    উৎসুক দর্শকরা যেন খুঁজে পায় আনন্দলাভের প্রেরণা।

    জোকার আসে একের পর এক,আর ডিগবাজি খায়,
    উচ্ছল দর্শক হাততালি দেয়, এতেই কি মন ভরে যায়?

    ওরা চায় আরও কিছু আরও বিস্ময়কর,
    অপূর্ব দৃশ্যে ওরা হতে চায় বিভোর।

    ব্যবস্থাপক লোকদেখানো তোড়জোড় করে,করে জারিজুরি,
    কিন্তু রঙ্গমঞ্চে প্রেরিত হয় নতুন জোকার আহামরি!

    নতুন মুখ দেখেই শুরু হয় দর্শকের সমবেত হাততালি,
    নব ভেলকি দর্শনের আশা বৃথা,সে গুড়ে বালি!

    সার্কাস শেষ হয়, দর্শক আশাহত বুকে ঘরে ফেরে,
    ওদের পকেট খালি হয়,মালিকের পকেট যায় ভরে।

    নির্বোধ দর্শক তবু আশা ছাড়ে না,সামনের সারিতে বসার লড়াই করে,
    মালিক মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায়: অবাক করা উকহার দেবই পরের বারে।

  • কবিতা

    বেদনার কবিতা

    বেদনার কবিতা
    -অমিত কুমার জানা

     

     

    বেদনার বালুচরে হামাগুড়ি দেওয়া জীবন,
    নিঃশব্দে প্রমাদ গোনে প্রতিক্ষণ।
    টালমাটাল জীবন বয়ে চলে সময়ের সাথে,
    ভরসা রাখতেই হয় অস্থায়ী বালুচরের ভিতে।
    ভাঙা মনের দেওয়ালে অঙ্কিত কত স্বপ্ন,
    শুষ্ক মুকুলের ন্যায় ঝরে পড়ে, স্বপ্ন হয় চূর্ণ।
    আবারো স্বপ্নের বীজ অঙ্কুরিত হয় মনের চাতালে,
    হতাশ হয় মন,সেও শুকিয়ে যায় অকালে।
    বেদনার অযাচিত আবির্ভাব ক্রমান্বয়ে হতেই থাকে,
    সৌভাগ্যচক্র তার ঘূর্ণনের বৈপরীত্য বজায় রাখে।
    যন্ত্রণা-দানব ভেঙে পড়ে না,শুধুই আঘাত হানে,
    বেদনার অনুভূতিরা সঞ্চিত হয় এই পরিশ্রান্ত প্রাণে।
    তারপর শব্দরা নিঃসৃত হয় অনুভূতির দেহ থেকে,
    সুসজ্জিত হয়ে কবিতার পংক্তি গড়ে তোলে একে একে।
    পংক্তিতে পংক্তিতে বেঁচে থাকে কত অবিস্মৃত বেদনা,
    বেঁচে থাকে কন্টকাবৃত পথে দাঁড়িয়ে থাকা কবির ভাবনা।

  • কবিতা

    পুনর্বারের প্রতীক্ষায়

    পূনর্বারের প্রতীক্ষায়
    -অমিত কুমার জানা

     

     

    রূপকথার গল্পে হয়তো মাপতে পারিনি প্রেমের গভীরতা।
    তুমি ছেড়ে যাওয়ার পর অজান্তেই তা বুঝেছে অবুঝ মন।
    চলে গিয়েও রেখে গিয়েছ সেই স্বর্গীয় অনুভূতি গুলো।
    নিত্যদিনের এলোমেলো চিন্তা মনের গভীর রাস্তায় ট্রাফিকের মতো ভিড় করলেও,
    তোমা হেতু স্মৃতিগুলো ভিড় সরিয়ে জায়গা করে নেয়।
    আমার জন্য হয়তো তোমার হৃদয়ে নির্জনতা,
    আমি এই আশায় উন্মুখ হয়ে আছি,
    যদি আবারো দূরত্ব ঘুচিয়ে দুজনে আসি কাছাকাছি!
    নাকি অন্য কারো হৃদয়পথে ট্রাফিক হয়ে আছ?

  • কবিতা

    প্রতিকারেচ্ছা

    প্রতিকারেচ্ছা
    অমিত কুমার জানা

     

     

    যেদিন হতে পেয়েছি বোধশক্তি
    পাথেয় করেছি সত্য,সততাকে
    অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছি
    শিরায় শিরায় জিইয়ে রেখেছি মানবতাকে।

     

    মনুষ্যত্বে যারা করেছে পদপিষ্ট
    সমাজের বুকে এঁকেছে কলঙ্করেখা
    আমি তো প্রতিবাদ করবোই
    ওদের দিতে উচিত শিক্ষা।

     

    অকারণে যারা কেউটে-হিংস্র
    তাদের উৎপাটিতে বিষদন্ত
    সবীরত্বে লড়ে যাব আমি
    নির্দ্বিধায় সচেষ্ট হবো প্রাণান্ত।

     

    নির্মল প‍রিবেশে মিশিয়েছে যারা
    বিষাক্ত অশান্তির নিশ্বাস
    শ্বাসরুদ্ধ করতে তাদের
    থেমে থাকবে না মোর প্রয়াস।

     

    চেয়েছি শক্তি চেয়েছি বল
    চেয়েছি অপ‍র্যাপ্ত উৎসাহ
    দাবাগ্নি তেজে করতে চাই
    যত অনাচারের অগ্নিদাহ।

     

    অন্তরে সাহসকে বাঁচিয়ে রেখেছি
    যেন মনোবলও থাকে অগাধ
    জানি এপথ কন্টকময়,দুর্গম
    তবুও যেন গতিশীল হই অবাধ।

     

    কঠিন পটভূমিতে পথচলা পথিক
    আমি হারায়নি প্রতিবাদসত্তা
    এ তো নয় কেবল নিছক কবিতা
    এ মোর অন্তরাত্মার কথা।

  • কবিতা

    অন্তর্বেদনা

    অন্তর্বেদনা
    -অমিত কুমার জানা

    মনের কোঠরে বাসা বেঁধে আছে কত অন্তর্বেদনা,
    অপ্রকাশ্য থেকে মন সহ্য করে অন্তর্ঘাতের তাড়না।
    মুহুর্মুহু প্রজ্বলিত শোকাগ্নির শিখা,
    মুহূর্তেই দগ্ধিছে যত সুখরেখা।

    হঠাৎ উথলে ওঠা ক্ষণস্থায়ী বুদবুদ
    অবিলম্বে হারিয়ে ফেলে তার অস্তিত্ব,
    তেমনই নবসঞ্চারিত আনন্দসত্তাও
    প্রবল শোকপ্রবাহে নৈরাশ্যের মাঝে হৃত।
    সঞ্চিত যত বঞ্চিত চাওয়া ক্রমেই হয় অন্তর্হিত।

    একে একে বহিরাঙ্গের জ্বালা হয়তো বা হ্রাসমান,
    অন্তর্বেদনার অসহনীয় জ্বালা যেন অমর অনির্বাণ।

    সুকঠিন লৌহখণ্ডের নিয়ত আঘাত
    লৌহকাঠিন্য আনে আহত স্থানে,
    তেমনই নিত্যনৈমিত্তিক অন্তর্জালার বেদনায়
    বিষাদ-পাষাণ করেছে আমার মনে।
    হৃদয়াবদ্ধ আর্তনাদ আজ ক্লান্ত
    অন্তরাত্মার চাপাকান্নার সুর-কবে অন্তর্বেদনার অন্ত?

  • কবিতা

    স্বজন

    স্বজন
    -অমিত কুমার জানা

     

     

    কত সম্পর্ক গড়ে ওঠে কত প্রেয়সীও জোটে
    কর্পূরের মতো উবে যায়।
    স্বজন স্বজনই হয় হৃদয়ে গেঁথে রয়
    স্মৃতি থেকে কভু না হারায়।

    পর সদাই হয় পর হতে পারে সে গুণধর
    বেপাত্তা ফুরালেই প্রয়োজন।
    স্বজন নির্গুণ হতে পারে সংকটে ওই হাতটা এসে ধরে
    নির্ভরযোগ্য আপনার জন।

    আমার খুশির তরীতে ভাসে বিষাদেও থাকে পাশে
    এমনই রক্তের টান।
    যদি থাকে বিদেশে বহুদূরে মনের দুয়ারে নাড়া দেয় বারেবারে
    স্বজন এমনই দরদী প্রাণ।

    পুরনো যত মান-অভিমান ভেঙে করেছি খান খান
    কাছে টেনে নিয়েছি স্বজনে।
    স্বজন ছাড়া ভারি একা সব থেকেও লাগে ফাঁকা
    স্বজন প্রয়োজন মানবজীবনে।

  • কবিতা

    নিয়ম-নীতি

    নিয়ম-নীতি
    -অমিত কুমার জানা

     

     

    চলার পথ সুগম করতেই নিয়ম নীতি করতে হয় অবলম্বন
    সঠিক নিয়মে মানলে পরে নিখুঁত হয় মানবজীবন।

    সূর্যোদয় হয় পূর্বদিকে অস্ত যায় পশ্চিমে
    পৃথিবীরও আবর্তন হয় বাঁধাধরা সেই নিয়মে।

    শিশুদেহ প্রোষিত হয় ক্রমশ তাই বেড়ে ওঠে
    মুকুল ক্রমেই বিকশিত হয় নিয়মমাফিক কুসুমও ফোটে।

    কঠিন কাজও রপ্ত হয় নিয়মিত অভ্যাসে
    শিক্ষাদীক্ষাও অর্জিত হয় নিয়মমাফিক প্রয়াসে।

    বিশৃঙ্খল পরিবেশ শান্ত হয় ফিরে পায় ছন্দবদ্ধ শৃঙ্খলা
    সর্বাঙ্গীন সৌকর্য আসে যদি নৈতিকতায় না হয় অবহেলা।

    উত্তম সানন্দে চলে নীতিকে করে পাথেয়
    শত কষ্ট বুকে নিয়েও নৈতিকতায় করে না হেয়।

    নিয়মের অতি কঠোরতায় দেখা যায় মারাত্মক কুফল
    মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় স্বাভাবিকের চেয়েও হয় দুর্বল।

    ধর্মান্ধের বিচারশক্তি ঢাকা পড়ে কঠোর নীতির ঘেরাটোপে
    কত নিষ্পাপ অকালে হারায় এদের কু-নীতির মারণ কোপে।

    নিয়মের জন্য বাঁচা নয় নিয়ম হোক বাঁচার জন্য
    নিয়মের মূল্যায়নে সর্বদা মানুষের সুমতিই হোক অগ্ৰগণ্য।

You cannot copy content of this page