• কবিতা

    কবিতা- প্রেমিকের ডাকনাম

    প্রেমিকের ডাকনাম
    -কাজল দাস

    -“তোকে তুমি বলে ডেকে ফেলি যদি
    কেন আকাশকে ছুঁয়ে ফেলে নদী।”

    হ্যাঁ, সেদিন তুমি ছিলে- তুই।
    আর তুই থেকে তুমিতে আসতে দীর্ঘ একটা পথ নদীর মতোই বয়ে গেছে অন্য ঠিকানায়।
    বলতে গেলে এক প্রকার উন্মাদনাই ছিল- তুমি শোনা আর তুমি বলার ভেতর।
    ছিল একটা লজ্জা সিক্ত উচ্চারণ- তুমি।
    বেশ অধিকারের জোরেই- তুমি ডাকা।
    তুমি!
    কি ভালো যে লাগতো, যেন নতুন একটা সম্পর্ক, নতুন একটা পরিচয়।

    তার পর এই পরিচয়ের জের টেনে-
    তুমি হয়ে উঠলে স্ত্রী, সীমন্তিনী।
    তোমাকে পেলাম নব রূপে,
    সেদিনের পাওয়াটা ছিল- সম্পূর্ণ অন্যরকম,
    সব গোপনীয়তা ভেঙে-
    আমি পেলাম তোমাকে,
    আর তুমি পেলে-
    শাঁখা, সিঁদুর, পলা, শ্বশুর শাশুড়ি,
    সম্পূর্ণ নতুন পরিবার।
    একটা রাস্তা ভেঙে রাজপথ হলো ঠিকই,
    কিন্তু ফুটপাত জুড়ে শুধুই একাকীত্ব।
    প্রেমিকার ডাকনাম গেল বদলে।
    ডাকতে ডাকতে ক্লান্তি এলো,
    সংসারের বেড়াজাল টোপকে-
    প্রেমিকা এলো না।

    তারপর একদিন বুকের ওপর মুখ রেখে বললে-
    আমি মা হতে চলেছি।
    সেদিন এক অদ্ভুত আনন্দে ছুটে গিয়েছিলাম তোমার কাছে।
    তোমার চোখে চোখ রেখে-
    খুঁজে নিয়ে ছিলাম নিজেকে,
    আমি সন্তান পেলাম,
    বাবা শব্দটার সাথে পরিচয় অনেক আগেই,
    কিন্তু এই পরিচয় যেন সম্পূর্ণ অন্যরকম।
    ভালো লাগা ভালোবাসার সাথে-
    আমি পেলাম- দায়বদ্ধতা,
    আর তুমি পেলে-
    অদৃশ্য এক ডানা, নিজস্ব এক আকাশ,
    নতুন একটা ঠিকানা,
    অতএব নিয়ম মেনে আবারও বদলে গেল ডাকনাম।
    রাজপথ গিয়ে পৌঁছাল কাজল লতায়।
    সেই অন্ধকারেও আমি ভীষণ একা।

    এভাবে ভাবিনি কখনো-
    ভেবেছিলাম প্রেমিকের কোনো ডাকনাম হয় না।
    ভেবেছিলাম হয়তো দূরত্ব কমিয়ে ফেলেছি।
    ভেবেছিলাম হয়তো হাতের কাছাকাছি।
    ভেবেছিলাম-
    একটা অপেক্ষার অপেক্ষায় আজো তুমি হয়তো জানালার দীর্ঘ নিঃশ্বাসে দাঁড়িয়ে আছো।
    সময় পেরিয়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে
    বলবে- ভালোবাসি।
    বৃষ্টির অবগুণ্ঠন সরিয়ে ভেজা ঠোঁটৈ-
    ভিজিয়ে দেবে ঘুমন্ত মরুভূমি।
    ভেবেছিলাম!

    তাই নিরুদ্দেশ সম্পর্কে ঘোষণায়-
    এখনো একটা হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকাকে খুঁজি।
    যাকে কয়েক বসন্ত আগে হারিয়ে ফেলেছি গাঁটছড়ার অচিরেই।
    লজ্জা বসনের আড়ালে আজো একটা প্রেমিকার মুখ মনে পড়ে।
    যাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলে-
    সহজ হয়, বিরক্ত নয়।
    যার আঙুলে আঙুল রাখলে-
    জগৎ জয়, অস্বস্তি নয়।
    এখন তার নতুন পরিচয়।

    কিন্তু আমি প্রেমিক হয়েই রয়ে গেলাম।
    জানো- আমি না, প্রেমিক হয়েই রয়ে গেলাম
    জানি হয়তো নামকরণের চৌহদ্দি পেরিয়ে-
    তোমার প্রেমিকা হয়ে ওঠা আর হবে না,
    তাই-
    ফিরে পেতে চাই ‘তোকে’,
    তুমির ভেতর থেকে ছোঁ মেরে তুলে নিতে চাই- ‘তোকে’।
    সেই না বলা কথার ভাঁজে ছেঁড়া মুহূর্তদের,
    জন্য আমি অপেক্ষারত।
    পাশাপাশি, ঘেঊষাঘেষি করে বসে আছে ‘তোকে’- ছুঁয়ে দেখার অনুভূতি।
    পুরনো রাস্তার নিস্তব্ধ অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছি, আজো একটা চিঠির অপেক্ষায়।

    জানিস আজো আমি স্কুলের পাঁচিল টপকাই।
    তোর বাংলার পিরিয়ডগুলো এখনও খুব দীর্ঘ, শেষ হয়েও যেন শেষ হয় না।
    সময় পেরিয়ে যায়-
    আমি রাস্তায়।
    বিশ্বাস কর আমি আজও অপেক্ষারত।
    আর কতো দাঁড়িয়ে থাকবো, আর কতো!
    রাস্তাগুলোও ক্রমেই চওড়া হতে হতে ফুটপাতে এসে দাঁড়িয়েছে।
    এখন আর আমার অপেক্ষা করার মতো জায়গা নেই।

    এমনো তো হতে পারে
    তুমি আবার- তুই হয়ে গেলি।
    তাহলে গোটা শহরটাই দেখবি কেমন আবার আগের মতো হয়ে গেছে।
    তার চেয়ে তুই আবার- তুই হয়ে যা,
    লুকিয়ে ফেলি তোকে সবার অলক্ষ্যে,
    তার চেয়ে তুই আবার স্কার্ট হয়ে যা,
    কিংবা নীল সাদা শাড়ি, না হয় অন্য কিছু,
    তার চেয়ে তুই আবার-

    পারিস তো তুই আবার প্রেমিকা হয়ে যা!

  • কবিতা

    কবিতা- ফাঁকি

    ফাঁকি
    -কাজল দাস

     

     

    দুই এক্কে দুই, দুই দু’গুনে চার
    তিন দু’গুনে ছয়, ছয়…. ছয়……
    ভুলে গেলাম, তার পরে’তে…
    কি যেন…. কি.. হয়?
    নামতাগুলো মাথার ভেতর
    কোথায়.. যেন থাকে,
    বলতে গেলেই হাতড়ে মরি
    ঘিলুর ফাঁকে ফাঁকে।
    অঙ্ক দেখলে বুকের ভেতর
    কেমন জানি হয়,
    কষতে গেলেই হারাই যেন-
    পিতৃ পরিচয়।

    মাষ্টমশাই রেগে বলেন-
    “কি করেছিস গাধা,
    সহজ কিছু অঙ্ক দিলাম
    বানিয়ে দিলি ধাঁধা?

    কি আর বলি মাষ্টোমশাই
    বোঝাই যে কি ব’লে!
    অঙ্কগুলো খাতায় ছিল
    নামলো গিয়ে জলে।
    অঙ্ক যখন কষতে বসি,
    খাতা কলম নিয়ে!
    কাগজ বলে পাল তুলে দে
    নৌকাটা বানিয়ে।
    কোথা থেকে জলের রাশি,
    উপচে পড়ে খাতায়,
    অঙ্কগুলো সাঁতার কাটে,
    আর থাকে না মাথায়।
    অঙ্ক ছোটে আমিও ছুটি
    মনও ছোটে পাছে,
    একটু তে যে হাঁপিয়ে মরি,
    আমার কি দোষ আছে?

    চুপ কর তুই- মাথা মোটা
    মাথায় গোবর পোড়া,
    কাল যদি না অঙ্ক মেলে-
    ভাঙবো রে ঠ্যাং জোড়া।

    মিছেই কেবল দোষ দিচ্ছেন
    মিছেই বকাবকি।
    সত্যি বলছি- দিব্যি করে,
    চোখ দু’টো দেয় ফাঁকি।
    পড়তে যখন বসি আমি
    সন্ধ্যে বলে এসে-
    “চল না একটু ঘুরে আসি,
    স্বপ্ন পরীর দেশে।”
    চোখকে বলি যাস নে রে ভাই
    থাক না আমার কাছে,
    কাল যদি না পড়া পারি-
    অনেক কষ্ট আছে।
    শোনে না সে আমার কথা,
    যতই বোঝাই তাকে।
    মা-ও ডাকে, আমিও ডাকি,
    নাকও তেমন ডাকে।

  • কবিতা

    কবিতা- তুমি স্বপ্নে বাঁচো

    তুমি স্বপ্নে বাঁচো
    -কাজল দাস

    তুমি স্বপ্নে বাঁচো, স্বপ্নেই বাঁচো
    প্রেমের উঠোনে নয়,
    আমার ভিতর ঘরে,- অন্তরালে
    তুমি নিষিদ্ধ পরিচয়।
    তুমি স্বপ্নে বাঁচো, স্বপ্নেই বাঁচো
    তাড়া নেই ঘরে ফেরার,
    রাত্রি যাপন- হোক জ্বালাতন
    চোখ হোক দিশেহারা।
    তুমি স্বপ্নে বাঁচো, স্বপ্নেই বাঁচো
    খোলা আকাশের মতো,
    খুলে ফেলো সব জড়তার মেঘ
    ভিজে যাও অবিরত।
    তুমি স্বপ্নে বাঁচো, স্বপ্নেই বাঁচো
    অশরীরি ছুঁতে চাওয়ায়,
    ভেঙে ফেলা সব নিয়ম জুড়ে
    অবাধ্যতার হাওয়ায়।
    তুমি স্বপ্নে বাঁচো, স্বপ্নেই বাঁচো
    ভয় নেই প্রেমে পড়ার,
    শুধু কল্পনাতেই অক্ষর-জাত’
    কবিতাতে- মনগড়া।

  • কবিতা

    কবিতা- প্রেমের মানে প্রেমিক জানে

    প্রেমের মানে প্রেমিক জানে
    – কাজল দাস

     

     

    ছেলের ইচ্ছে প্রেমিক হবে
    হবেই হবে কে ঠেকায়!
    মেয়ের ইচ্ছে ঘর বাঁধার
    সেই সুদিনের অপেক্ষায়।
    প্রেমিক মানে প্রেমিক জানে
    প্রেম কি আর ঘর চেনে,
    মেয়ের কি দোষ স্বপ্ন দেখে।
    চোখের জলের সুখটানে
    ছেলের আছে চৌরাস্তা,
    মেয়ের আছে অজুহাত
    ছেলের জন্য নিয়ন আলো
    মেয়ের চোখে বিষাদ রাত।

    মেয়ের ইচ্ছে আকাশ ছোঁয়া
    সিঁথির নদে ঘর সাজায়।
    ছেলের বুকে আকাশ যেন
    ছুটির দেশে ছুটতে চায়।
    প্রেমিক মানে প্রেমিক জানে
    প্রেম যে কতো অসহায়,
    ছেলের আছে চৌরাস্তা
    মেয়ের সফর বারান্দায়।
    রোদের জন্য হচ্ছে হন্যে
    মেঘের ঘরে বিপর্যয়
    ছেলের বুকে দারুন আশা
    মেয়ের বুকে সুপ্ত ভয়।

    লোকে বলে নষ্ট ছেলে
    চরিত্রহীন পরিচয়
    মেয়ের নাম লক্ষীছাড়ি
    অনায়াসে মুখ পোড়ায়।
    প্রেমিক মানে লোকে জানে
    নষ্টামির আঁতুর ঘর
    দিন ফুরালে জন্ম নেবে
    অশ্রু ধূসর বালুচর।
    তবুও জানি প্রেমের মানে
    নিসর্গের-ই পারিজাত,
    মরণ রোগে মারবি জানি
    মরতে মরতে বেঁচে থাক।

  • কবিতা

    কবিতা- ভানুর কীর্তি

    ভানুর কীর্তি
    – কাজল দাস

     

     

    চাইলে তুমি তোমারে লইয়া চাঁন্দে দিমু পারি,
    লক্ষ্মী সোনা রাগ কইরা মুখ কইরো না হাড়ি।
    কি চাও কও গিন্নি তুমি টাকা- কড়ি-সোনা,
    আজকে না হয় ভিক্টোরিয়ায়, ঘুরুম-নে দুই জনা
    ফুচকা, চানা, বাদাম লইয়া গড়ের মাঠে যামু,
    হরি দাসের বুলবুল ভাজা পরাণ ভইরা খামু।

    ও গিন্নী, আমি কি তোমার এতোখানি পর,
    কখনো তুমি বর্ষা নামাও, কখনো তোলো ঝড়।
    থুরি থুক্কি-আমারই দোষ, ঝগড়ুটে তুমি নও,
    এই কান মল্লাম, নাক মল্লাম, লক্ষীটি কথা কও।
    দেখ চাঁদ উঠ্সে ফুল ফুটসে জ্বালাইওনা আর,
    মাইনা পাইলে গড়ায় দিমু গজমতির হার।

    আজকে না হয় একটু খানি হইয়া গেছে দেরি,
    তার জন্য এমন কইরা মাথায় তুলবা বাড়ি?
    কালকে আমি য্যামনে পারি তাড়াতাড়ি আমু,
    শুধু মলে ক্যান, মল মূত্র যেখানে কইবা যামু।
    কি কইলা যাইবা না, ঠিক শুনতাসি কানে?
    আর যে কি কপালে আছে, কি কমু কে জানে?

    ঘাট হইসে আমি চললাম, ত্যাল দিমুনা আর,
    কথায় কথায় বাপের বাড়ি যাওনের কি দরকার।
    কি কইলা? বাপ তুইল্যা কথা কইলেই দোষ,
    আলবাত কমু, ভাবছ তুমি চইলা করুম আপসোস?
    ইসসসস, এতো বছর ধইরা শুধু একই কথা কও,
    যামু যামু করো ক্যান? যাইতে হইলে যাও।

    কাম সারছে, করো কি গিন্নী, কিসের এতো তাড়া?
    এতো বোঝো মালতি তুমি বোঝ না মশকরা।
    ঘাট হইসে তুমি জিতসো, আমি গেছি হাইরা,
    লক্ষ্মী আমার সোনা কইলাম, যাইওনা আমায় ছাইড়া।
    তোমারে ছাইরা ইহলোকে কেমন কইরা থাকি।
    এতো সহজে যাইতে দিমু মগের মুল্লুক না কি?

  • কবিতা

    কবিতা- নখদর্পণে

     

    নখদর্পণে 

    -কাজল দাস 

     

     

    আমরা যারা বুদ্ধি হত মানুষ
    বুদ্ধি কিনি সস্তা সহজ দামে
    হার মানতে সহজে নতজানু
    দোষটা লিখি অদৃষ্টের নামে

    রাজতন্ত্র সমাজতন্ত্র-এ পিষে
    পৌষ্টিকতন্ত্র- হয় যে নাজেহাল
    পোয়াতি চাঁদ অন্ধকারে মিশে
    ঘরে ফেরে, সঙ্গে বাসি ডাল

    তবু বড়াই আমরা বেমিসাল
    মোগো ছাড়া হয়না নির্বাচন
    হারি জিতি পোক্ত গাত্র ছাল
    ডাইনে বামে আমরাই জনার্দন

    তালিকা ভুক্ত সংখ্যায় বারোটা
    আবালবৃদ্ধবনিতা ও নর-নারী
    যদিও আমরা আকৃতিতে গোটা
    তবু মাথাই গোনে আদমশুমারি।

  • কবিতা

    কবিতা-আমন্ত্রণ

    আমন্ত্রণ

    -কাজল দাস

    এবার যখন আসবে নবীন, ফাগুন এনো মনে
    বসন্তেরই বাতাস মেখে নাচবো তোমার সনে।
    রামধনু রঙ ছড়িয়ে দেব ধূসর ধরনী তলে,
    রঙিন সুতোয় বাঁধবো সব-এ হোলি খেলার ছলে।
    সবাই যখন আবীর খেলায় ব‍্যস্ত রাঙিয়ে নিতে,
    আমরা তখন রাঙাবো আকাশ একান্ত নিভৃতে।

    এবার যখন আসবে নবীন, সাগর এনো মনে
    আমার সকল ভাসিয়ে দেব অতল সঙ্গোপনে,
    তোমার ঢেউয়ের আঘাত লেগে ভাঙবে আমার ঢেউ,
    কার আঘাতে কি ভেঙেছে জানবে না কো কেউ।
    সবাই যখন মুক্তো খোঁজে বাড়িয়ে দেবে হাত-
    আমি তখন তোমার বুকে খুঁজবো চাঁদনী রাত।

    এবার যখন আসবে নবীন, ঝঞ্ঝা এনো মনে,
    পাগল হয়ে ফিরবো আমি ফুলের বনে বনে।
    ভাসিয়ে ডানা পাখির মত উড়বো তোমার পাশে,
    তোমার ধূলা মাখবো গায়ে নিবিড় ভালোবেসে।
    সবাই যখন ঢাকবে দু’চোখ আঁচল খানি দিয়ে,
    পালিয়ে যাব অনেক দূরে তোমায় সাথে নিয়ে।

    এবার যখন আসবে নবীন, রৌদ্র এনো মনে,
    ছড়িয়ে দেব আলোর রেণু ধরা-র কোণে কোণে।
    মনের যত গোপন আঁধার ঘোচাতে- একবার
    সত্যি বলছি রোদ্র, তোমায় ভীষণ দরকার।
    সবাই যখন রঙিন কাঁচে লুকিয়ে নেবে চোখ,
    যীশুর মতই বলবো আমি সবার ভালো হোক।

    এবার যখন আসবে নবীন, স্বপ্ন এনো মনে
    গভীর রাতে তোমায় নিয়ে ফিরবো জনে জনে।
    শীত কাতুরে শিশুর পাশে পথের বিছানাতে,
    চুপিসারে জড়িয়ে থাকবো স্নেহের উষ্ণতাতে।
    সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়বে গভীর স্বপ্নাবেশে,
    আমরা তখন ক্লান্তি মেখে ফিরবো পরীর দেশে।

    এবার যখন আসবে প্রিয়, শান্তি এনো মনে
    শান্তি-সুধার অমৃত গান বাজুক সবার প্রাণে।
    তুমি ছাড়া তমসা ঘনায় সকল ঘরে ঘরে,
    আঁধার মোছা প্রভাত আনো একটি বারের তরে।
    দেখবো চেয়ে সবাই যখন পরম সুখে আছে,
    দিব্যি তোমার চাইবো না আর, কিছুই তোমার কাছে।

  • কবিতা

    কবিতা- নীলচে চাদর

    নীলচে চাদর
    – কাজল দাস

     

     

    কখন যেন যুদ্ধ হয়েছে শেষ
    ক্লান্ত আমি, আমার মহাদেশ
    রাত্রি যাপন বুকের স্তব্ধতায়
    নীলচে চাদর উগ্র মেজাজ কেশ।

    চাঁদ ছুঁয়ে যায় দীর্ঘ বনবাস
    দু’মুঠো নয়, দিগ্বিজয়ী আশ
    চিবুক- তিলে বন্য উষ্ণতায়
    আগুন হয়েই পুড়বো বারোমাস।

    অস্ত্রগুলো ইচ্ছে-পরাধীন
    যুদ্ধ করে মরছি সারাদিন
    রক্তক্ষয়ী জলন্ত বিছানায়
    ভিজছে সুখে পরাধীনতার ঋণ।

    লজ্জাবসন- হচ্ছে বয়কট
    ভীতর জলে চোরা ধর্মঘট
    যুদ্ধ করে মরছি নির্দ্বিধায়
    দু’হাতে আমার তীব্র যানজট।

  • কবিতা

    কবিতা- ধর্ষিতার রূপে মেশে দেবীর আদল

    ধর্ষিতার রূপে মেশে দেবীর আদল
    – কাজল দাস

     

     

    যে শরীর ছুঁয়ে দিলে কামনার বশে
    যমেরও সাধ্যি নেই ছোঁবে একবার
    রক্তের দাগে মেটে কবিতা,আপসে
    লাশকাটা ঘরে চলে যোনি সৎকার

    কিশোরী শরীর খোঁজে জন্ম জরায়ু
    মেঘভাঙা চিৎকারে মায়ের আঁচল
    পরিচিত ডাকনামে ছেদ টানে আয়ু
    ধর্ষিতার রূপে মেশে দেবীর আদল। 

    খুবলে নিল চোখ পারিজাত শোকে
    শব্দ নেভা শরীর বিস্বাদ বিনোদনে
    মানুষের ইতিহাস পিশাচের চোখে
    জিভ হীন দেবী কাঁদে মাতৃ বোধনে। 

  • কবিতা

    কবিতা- চরিত্রহীন

    চরিত্রহীন
    – কাজল দাস

     

     

    শালীনতার বাঁধ ভেঙেছে তোমার রূপ,
    তোমায় ছঁ’বো বলে আমি রোদ মেখেছি,
    বৃষ্টি ছুঁয়েছি, সন্ধ্যে মেখেছি গায়ে,
    ভিড় রাস্তায় ঘেঁষে গেছি শীতল উষ্ণতা,
    শুষে নিয়েছি গায়ের গন্ধ,
    দিনান্তে সবুজ মুছে ফেলে-
    কালো হাত তোমায় ছঁ’বে; নষ্ট মন,
    তাই শত বছরের ঝঞ্জা বুকে নিয়ে-
    ছুটে এসেছি অন্য গ্রহ থেকে,
    তোমার জনবহুল শহর, কলকাতায়।

    ট্রামে-বাসের শব্দে বিরক্ত মন,
    মেপে গেছে শব্দহীন পদচারণ।
    আর তুমিও শাড়ির ভাঁজ ঠেলে-
    বেড়িয়ে পড়েছো আমার স্পর্ধা যাচাই করতে,

    যদি বল চরিত্রহীন.
    আমি বলবো এই শতাব্দীর সেরা প্রেম,
    প্রতি মুহূর্তে লিপিবদ্ধ করেছি-
    তোমার অফিস ফেরা জরুরী হিসেব।

You cannot copy content of this page