• প্রবন্ধ

    প্রবন্ধ- দিবস পালনে নয় পাল্টাক দৃষ্টিভঙ্গি

    দিবস পালনে নয় পাল্টাক দৃষ্টিভঙ্গি
    – রাণা চ্যাটার্জী

     

     

    মেয়েদের যারা কাঠপুতুল ভাবে,যেন একটা দিন বরাদ্দ করলেই সম্মান দেখানো সেই সব ন্যায় বাগিস পুরুষ দের জানাই কিচ্ছু চায় না নারী-নিজেরা সুস্থ রুচির পরিচয় দাও পুরুষ এটাই বড় প্রাপ্তি হবে নারীদের।প্রতিটা দিন প্রতিটা মুহূর্তই নারীদের লড়াই করে সচেতন হয়ে চলতে হয়। মেয়েরা গড়তে জানে প্রয়োজনে দমন করতেও।

    ওহে নিজেদের পিঠ চাপড়ানো সেরা বলে উল্লসিত নাক উঁচু পুরুষ সবাই কে অবশ্য এক অভিযোগে বিদ্ধ করা অনুচিত জানি,কেউ ভুল ভাববেন না। সেই চিরাচরিত কাল থেকে ছোট বড় নানান নিয়ম নীতির শেকল চাপিয়ে নারীদের কব্জার দৃশ্য বড্ড খেলো লাগে।ছোটতে ধুপ ধুনো জ্বালিয়ে টিভির পর্দায় কি হয় কি হয়  অপেক্ষার চোখে মহাভারতে দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণ পর্বে রাস্তাঘাটে ভিড় কমে গেছিল।  খুশি হওয়া নিয়ম নির্ধারক গণ তোমাদের সেই নিয়ন্ত্রণ করতে চাওয়া যে কেমন স্বার্থ সিদ্ধির অজুহাত তা কালে কালে সকলের কাছে পরিষ্কার।আদতে খেলো করে ফেলেছো নিজেদের  ভাবমূর্তিকে এই ভাবেই নারীদের ওপর পরাধীনতার শেকল পড়াতে গিয়ে যুগে যুগে।

    পোস্টারে ফেস্টুনে ছয়লাপ নারী পুরুষ সমতার বুলি আউড়ানো পুরুষ,গলার পেশিতে টান পরে গেল মঞ্চ বেঁধে নারীদের সম্মান দেবার কথা বলে আর বাড়িতে এসে হম্বিতম্বি খবরদারি। একবারও কি মনে হয়না আয়নায় নিজেদের চরিত্রটা কে দেখি কখন ঢুকছি বাড়ি,কি কি আচরণ করছি কাকে ঝাড়ি মারছি বা ছুঁক ছুঁক! কবার মায়ের পাশে,সহ ধর্মিনীর পাশে বসে কি কি সমস্যা ওনারা ফেস করছে জানতে চেয়েছো, কতবার বোনকে বলেছো চল তোকে পড়তে দিয়ে আসি নিরাপত্তা দিয়ে!  সবাই বরং তার থেকে গুলতানি,পাড়ার ক্লাবের রকে বসে কোন মেয়ের ফিগার কেমন আকর্ষণীয়,শিথিল হচ্ছে ,বিধবা মহিলাটি কখন ফেরে,অফিসে ঠিক কি করে কার সাথে ফষ্টিনষ্টি সেসব আড্ডায় নিজের মত প্রতিষ্ঠা হাস্যরস পরিবেশন করতে করতেই দিন কাবার। না না রাগ করবেন না আপনি তো এসব দোষে দুষ্ট নন কেন ফোস্কা পড়ছে গায়ে মশাই,আহা শান্ত হন। সেই তো ক্লান্ত হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে আপন কাজে মনোনিবেশ আর এদিকে অতিথি এলে বাড়ির মহিলাদের খাবার টা স্বাভাবিক ভাবেই ধরে দিতে হলে কেউ জিগ্যেস করার ও প্রয়োজন মনে করে না কি খেলো সারাদিন ফ্রি তে সংসারের কাজ করা মহিলারা।অবশ্য এ দিন কাল ,পরিবার চিত্র বদলেছে “ছোট ছোট ফ্লাট চিন্তায় গালে হাত”দেওয়া আমাদের।এখন আমরা নিজেদের নিয়ে একটু বেশি সচেতন স্বার্থপরতার গন্ডি টানতে।নারীদের কে কেবল ভোগ্যপণ্য হিসাবে দেখানোর,দেখার মানসিকতা আরো পাল্টাক। আরে জানিতো খারাপ ভালো মিলিয়ে মানুষ,নারীরাও ধোয়া তুলসী পাতা নয় আপনি আচরি ধর্ম অপরকে শেখাও এটাই না হোক মান্যতা পাক।আসুন না বাড়িতে সন্তান দের শেখাই মা কে,দিদিকে,দিদা- ঠাকুমা,কাজের মেয়েটিকে সম্মান দিতে আর সে যাতে আপনার আচরণ থেকে বাজে কিছু না শেখে নিজেরাও সচেতন হই।

  • কবিতা

    কবিতা- অন্তসলিলা

    অন্তসলিলা
        -রাণা চ্যাটার্জী

     

     

    মায়ের কোলে গা ঘেঁষে
             আদর খাওয়ার অছিলায়
                   আশ্রয় নিতে যাওয়ার মুহূর্তে,
                          মায়ের স্নেহে ফুঁপিয়ে উঠলেই
      মা মাথায় হাত বুলিয়ে বলতেন ,
              মনি-কাঁদে না রে নদী হয়ে যা,
                           ওতেই পরম শান্তি মেয়েদের।

    ছোটবেলায় দাদু বলতেন”তুমি দিদিভাই দুগ্গামা”
          বাস্তবে স্বামীর ঘরে দুবেলা ঝামেলা অশান্তিতে
                  বিয়ের বছর গুলোই কেবল ঘুরছে কিন্তু
         সৌভাগ্যের চাকা পাঁকে বরং ক্রমশ তলিয়েই!

    মা কে হেঁকে বিধু মাস্টারের গলা
                “ওগো বৌমা, মেয়েকে আরো পড়িও
                          ওর মাথাটা খুব পরিষ্কার”
    মনে পড়ে যায় হাফ ইয়ারলি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ
            নম্বর থেকে তিন নম্বর পিছিয়ে থাকার কষ্ট,
                 দু রাত না খেয়ে সে কান্নার মূল্য কি তবে!

    কি দরকার ছিল তবে বাবার কষ্টের সংসারে
            কত জিদ করে এত দূর অব্দি পড়াশোনা!  

    সব কি তবে এই ভাবে হেঁসেল ঘরকন্নায় অস্তমিত
           তবু অন্তঃসারশূন্য উপলব্ধি,প্রেম-ভালোবাসা
       বিহীন অভিনয়ে দুঃখ নদী জীবন নিঃশব্দে বয়।

    যে যত সয়,দুখ ততো রয় গভীরতা ব্যর্থতা ,
                  তাবলে এভাবে  নীরবে কি কেউ বয়!

             যে নদীর গভীরতা বেশি ,
                 যার কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা প্রবল,
    তার কষ্টগুলো অন্ত সলিলা হয়ে বয় নিঃশব্দে!
         জমতে থাকে পাহাড় প্রমান বোঝা,
         নুড়ি পাথর গ্লানি,মুখ বুজে আঁকাবাঁকা পথ।
        যে নারী সাহসে এগোয়,বলে একলাই পারি
         একা হাতে সামলায় চাপ,সত্যি বলিহারি।
      যে কাজ করে কতো, আঁচড়ে দুঃখের ক্ষত
    জীবন এভাবেই  হিমশীতল থেকে বরফে অবিরত।

  • কবিতা

    কবিতা- রোমন্থন

    রোমন্থন
    -রাণা চ্যাটার্জী

     

     

    সরিয়ে নিয়েছি নিজেকে
                                 আর বলতে হবে না,
             “উফ জ্বালিয়ে মারলো..এই তুমি যাও তো
      আপদ একটা”,বা “একটু একা থাকতে চাই”..!

    মনে পড়ছে কথায় ফাঁসিয়ে টপ করে প্লেট থেকে পকোড়া খেয়ে সেই নির্ভেজাল হাসির কলতান,
    আর শুনতে না পেলেও প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে
                              হৃদয়ে আনবো জলপ্রপাত…

    প্রকৃতির কোলে পাখির কিচির মিচিরে
                   ঠিক খুঁজে পাবো তোমার কলরব।

    সময় দিতে না পারার খেসারতে ভঙ্গুর হয় সম্পর্ক,
    সব বুঝেও বিরাম হীন লক্ষ্য নিয়ে
              দেওয়াল বেয়ে চলেছি লাল পিঁপড়ের দল ।
    স্বার্থপর বলয়ে গুটিয়ে, বাধা এলেই কামড়ে
                      ছিঁড়ে লাল করে আবার যান্ত্রিক দৌড়।

    এভাবে অভিমানে সরে যাওয়া
    সমাধান নয় জেনেও বুক বাঁধি,ফিরে আসবে তুমি হেঁকে বলবে “কৈ কি আনলে দেখি,
             ইস এই নোংরায় থাকো কি করে!
         “সত্যি তুমি না জীবনে শুধরাবে না গো”

    প্রতি ক্ষণে জানান পাই তুমি বিরাজিত
                   আপন ছন্দে স্মৃতির রন্ধ্রে আপন মাধুর্যে।

  • কবিতা

    কবিতা- অভিযোজন

    অভিযোজন
     – রানা চ্যাটার্জী

    একটু খারাপ হওয়া খুব দরকার
    চারিদিকে জটিলতা মাঝে সহজাত সরলতা নিয়ে,
    বেঁচেছো কি পরোয়া করবে না কেউ  প্রকাশ্যে
                         রগড়ে কিংবা মাড়িয়ে দিতে।

    চেষ্টা করো বরং এক পোঁচ স্বার্থপরতা গুলে,
    বহুরূপী না সাজতে পারো,দুমুখো চরিত্রের তো হও

    যখন যেমন তখন তেমন রং বদলানোর সুযোগ
    তোমায় এনে দিতে পারে”খুব ভালো মানুষ তকমা”
                        বর্জন করো আগবাড়িয়ে সহায়তা,
    যার জন্য করছো ভুল ভাবনায় সে হয়তো
           ছোবল মারতে এক পা এক পা করে প্রস্তুত।

    নিজের সহজাত ভালো কিছুর ব্যাখ্যা নাইবা দিলে,

    যে ভুল বোঝার তাকে শুধরানোর দায় তোমার নয়
      বেঁচে থাক মনুষ্যত্ব,বাহারী প্রজাপতির রং ধার
        করে,খসে যাক চুন সুড়কির পলেস্তারা মুখোশ,
             সমৃদ্ধতায় ভরুক মানুষের ভালো গুণাবলী।

  • কবিতা

    কবিতা- বিশুদ্ধ তুমি চাই

    বিশুদ্ধ তুমি চাই
    -রাণা চ্যাটার্জী

     

     

    আমার একটা বিশুদ্ধ ‘তুমি’ চাই…
    আড়মোড়া ভাঙা ভোরে মায়ের ঠেলানিতে
    “চল উঠে পড়তে বোস”শুনে চোখ রগড়ানো
    ঘুম ভাঙা সকালের বারান্দা থেকে
    দেখতে পাওয়া উদাস নিষ্পাপ চাহনির
    টিউশানি পড়তে যাওয়া বিশুদ্ধ ‘তুমি’ !

    কখনো নচিকেতার সেই নস্টালজিক গান,
    “লাল ফিতে সাদা মোজা স্কুল ইউনিফর্ম” পরিহিতা মনে গাঁথা তুমি ছবির স্থায়ী ছাপ,

    তুফান তোলে মনে ,বাদশাহী হৃদয়
    আড়ালে দেয় “দিল মাঙ্গে মোর” রব।
    মনে গাঁথা তুমি ছবির ঝলক ঢেউ তোলে পাতা উল্টানো কেশব নাগের অঙ্ক কষা আমি’র হৃদয়ে।

    কল্পনায় ভাসতে ভাসতে ছুটি
    লতাপাতা জঙ্গল,ছায়া রোদ ,মাঠ-ঘাট,অলস জলাশয় পেরিয়ে ফড়িং ধরে সুতোয় বেঁধে অদ্ভুত
    শিহরণে ওড়ানোর নেশায়,ছুঁয়ে আসি
    তোমার নাকছাবি নীল পাথর।

    ভাবুক আমিকে আষ্টে পৃষ্টে বাঁধা “তুমি” ফিরছো জানান দিল ন’-টার ঢঙ ঢঙ দেওয়াল ঘড়ি…,
    এই বুঝি চৌরাস্তা লাগোয়া গলি থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে সাইকেল স্রোত ,বিধু মাস্টারের পড়ানোর
    ব্যাচের ছুটি ঘোষণা করে….!

    “এটুকুই তো চেয়েছি, তবুও পাবো না কেন…”
    ভাবনার অভিমানি মন ,ছাদের টবের মাটি
    আলগা করার কাজে লাগায় উসখুস আমি কে !

    চঞ্চলা বাতাস,কানে ফিসফিস করে বলে যায়, তোর একটা ওই দুষ্টু মিষ্টি বিশুদ্ধ “তুমি” চাই..!

    ঘাড় নেড়ে সহমত জানানোর ফাঁকেই ,
    গভীর,নিটোল সুখ শিড়দাঁড়া বেয়ে শিহরিত করে,
    ঐ তো আমাদের দরজার সামনে, বন্ধুদের সাথে কথা বলার অছিলায় দাঁড়িয়ে আমার বিশুদ্ধ”তুমি”
    যেন আমারই অপেক্ষায় এক যুগ যুগ সাধনায়।

  • গল্প

    গল্প- বর্ষায় ভরসায়

    বর্ষায় ভরসায়
     – রাণা চ্যাটার্জী

     

     

    “আরে নহি নহি, ছতরি হমে নাহি চাহিয়ে, আপ সমালকে বৈঠিয়ে ম্যাডামজি”- না গো তাতে কি, কাল থেকে কি বৃষ্টিটাই না হচ্ছে বলোতো! “আমি আরাম করে বসবো আর তুমি ভিজবে তা কি হয় ?” মনে মনে এই ভাবনা থেকেই ভিজে ছাতাটা খুলে বয়স্ক রিক্সা জ্যেঠুর মাথার উপর ধরেছে তিস্তা।

    এই প্রান্তিক অভাবী মানুষগুলো এমনই, শত কষ্ট সহ্য করে মেনে নিতে নিতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। ভাগ্যিস এনাকে পাওয়া গেল, নইলে আজ অফিস যাবার দফারফা! ততক্ষণে ঝড়ো দমকা হাওয়ায় খানা খন্দ পার করে এগিয়ে চলেছে রিকশা। তিস্তার হাতটা ব্যথা হবার উপক্রম এতক্ষণ এগিয়ে ধরে আছে ছাতাটা তবু এই সব কাজের মধ্যে মনে একটা আলাদা প্রশান্তি আসে। কাল সন্ধ্যায় ফেরার পথে সে যা ঝমঝম বৃষ্টি, একটা না আছে রিক্সা না টোটো। একদম জনশূন্য রাস্তায় থম থম করা লাইট পোস্টের সাক্ষী হয়ে ছলাৎ ছলাৎ করে জল পেরিয়ে বাড়ি ফিরেছে। আর এই যা বৃষ্টি আটকায় নাকি ছাতায়, তাই ফিরে থেকে নাক টেনে হেঁচে অস্থির মেয়ে।

    এদিকে দু’দিন পরই কালীপুজো, অফিসে বেশ কিছু কাজ পেন্ডিং, সদ্য দুর্গাপুজোর এতগুলো ছুটির পর সবে অফিস খুলেছে। অনিচ্ছাসত্ত্বেও রেনকোট পড়ে সকালে বেরিয়ে আরেক কাণ্ড! ইস গলির মুখটা কি যাচ্ছেতাই গা ঘিনঘিনে অবস্থা হয়েছে। ড্রেনের জল বৃষ্টির জল উপছে মিলে মিশে যা তা! বৃষ্টিটা যদিবা সকালে একটু থামল আবার সুর চড়িয়েছে। আজ কপালে দুঃখ আছে বেশ বোঝাই যাচ্ছে আটটা বিয়াল্লিশের স্টেট বাসটা পেলে হয়, না আছে দাঁড়িয়ে কোনো রিকশা, টোটো! খানিক তফাতে ওপারে থাকা চায়ের দোকানের জটলা থেকে কেউ একজন কটাক্ষে চাপা আওয়াজ তুললো। চোখ তুলে তাকাতেই সব ঝেড়েমেরে চুপ, ভদ্র মানুষ হয়ে মাটির ভাঁড়ে গরম চা’য়ে ফুঁ।

    সামনে যদি কিছু পায়, অগত্যা দু’ কদম এগুতেই চাল গদির বারান্দায় জড়োসড়ো আড়মোড়া ভাঙ্গা বিহারী রিক্সাওয়ালা রাস্তার দিকে তাকিয়ে, হয়তো যাত্রী আসবে অপেক্ষায়। “ও জ্যেঠু  যাবে নাকি?

    “-বলে কয়েক সেকেন্ড  অপেক্ষা তিস্তার। যা বৃষ্টি হচ্ছে, কাউকে যাবে কিনা প্রশ্ন, অনুরোধ করতেও খারাপ লাগে তবু দেখি না হলে বাড়ি ফিরব এমন স্থির করার মাঝেই ঝেড়ে মেরে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে দেওয়াল ধরে নিজেকে সামলে নিলো রিক্সাওলা। “কি হলো তোমার শরীর ঠিক তো জ্যেঠু, তাহলে নাহয় ছেড়ে দাও, বসো।”-হালকা করে কানে এলো কি বললো যেন,”নাতনি বিটিয়াকা ভুখার হ্যায় পাঁচ দিন সে কাম নাহি কিয়া, খানাপিনা রেশন কা খরচা ভি উঠানা হ্যায়-নাহি তো ভারী বারিস মে কৌন নিকালতা হ্যায়!,আপ আইয়ে ম্যাম.. “

    দাঁড়াও ভিজো না বলে তিস্তা ভিজে ছাতা বের করে মাথার উপর ধরল। এই মানুষগুলো আমাদের জন্য এত করে, একটু যদি সহমর্মী আমরা না হই তাহলে কিসের মনুষ্যত্ব! খুব কম যাত্রী নিয়ে স্টেট বাস ছাড়ার অপেক্ষায় আর একটু জিরিয়ে নিচ্ছিল। একটু জোর করেই কুড়ি টাকার বদলে পঞ্চাশ টাকার নোটটা হাতে গুঁজে আসছি বলে দৌড়ে বাসটায় চাপলো তিস্তা। প্রৌঢ় রিকশাওলা তখনও হাঁ করে তাকিয়ে বাসের দিকে টাকাটা মাথায় ছুঁয়ে।

  • কবিতা

    কবিতা- স্বপ্ন ভঙ্গ নয় বেঁচে থাক স্বপ্ন সন্ধানী”

    “স্বপ্ন ভঙ্গ নয় বেঁচে থাক স্বপ্ন সন্ধানী”
      – রাণা চ্যাটার্জী

    বরাবর পরীক্ষায় প্রথম হওয়া ছেলেটার
      খুব শখ ছিল একটা যদি সাইকেল কেনা যেত…

    পাঁচ ক্রোশ দূরে এই তল্লাটের একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহপাঠীরা যখন হই হই করে সাইকেলে হুঁশ হুঁশ পাশ কাটাতো খুব ছোট লাগতো নিজেকে।

    কোন কাকভোরে খোকার স্কুল যাবার রান্নায় মগ্ন মা সাড়ে সাতটা বাজলেই দৌড়াতো তিন বাড়ির
               এঁটো বাসন মাজার দায়িত্ব সামলাতে….

    কারখানা লক আউটের দৌরাত্ম্যে হাত ফস্কে
            বাবার কাজ খোয়ানোর ঘুরলো বছর..!

    এক মুখ কাঁচাপাকা উস্কোখুস্কো দাড়ির
             ফ্যালফ্যাল থমকে যাওয়া ঘোলাটে দৃষ্টি,
    পিঠের ভারী স্কুল ব্যাগে গোত্তা খাওয়ার আগেই মায়ের রেডি রাখা চিঁড়ে,;খই-মুড়কির সুঘ্রাণ
    পিঠ চাপড়ে বাহবায় “চল চল বেটা, জলদি পা চালা, বিধু মাস্টার অপেক্ষায় প্রিয় ছাত্রকে দেখার”!

    কড়া রোদের তীব্রতা, বাবার হতাশাগ্রস্ত চাহনি, মায়ের হাড়-পাঁজর বের হওয়া কঙ্কালসার দেহ,
                কস কস করে কান মূলে বলতো,
    “ফাইট খোকা ফাইট, স্বপ্নভঙ্গ নয় স্বপ্নসন্ধানীরাই
              বেঁচে থাকে সূর্যের আলো ধার করে।”

  • কবিতা

    কবিতা- স্বয়ংসিদ্ধা

    স্বয়ংসিদ্ধা
    – রাণা চ্যাটার্জী

     

    কই আর তোমাকে বললাম,
    পরিত্রাতা হও, রক্ষা করো, স্নেহ মায়া-মমতায় এসো
                        ছাতা হয়ে আবৃত করো এ সংসার।

    নিজ স্বভাব গুণেই তুমি, যেখানে যাও,অটুট বন্ধনে দায়িত্বশীলা, কাজে একাত্ম হও দেখি, কেননা তুমি
                             এক নারী, আপন গুণে স্বয়ংসিদ্ধা ।

    তোমায় ডুবুরি হওয়ার তালিম দিনই কোনদিনও, শেখায় নি কখনো উপোসী পেটে ঘন্টার পর ঘন্টা
                                         কিভাবে থাকতে হয়!

    তুমি নিজগুণে, সব কষ্ট সহ্য করেও, নিজের গ্রাস
                               তুলে দাও অতিথি আপ্যায়নে।
    কালবৈশাখীর ঝড়ের তাণ্ডবে তুমি হও জগৎজননী রক্ষাকারী, সকল আঁচ সব একাহাতে মোকাবিলা করে বাঁচাও স্বামী, পুত্র সন্তান।

    আমরা শিখেছি শুধু, এতো কিছু পেয়েও নেমক হারামের মতো দোষ ত্রুটি ধরে সমালোচনায় বিদ্ধ করতে, মজা লুটতে।
    ওদিকে নিঃশব্দে অভিমানী মেঘ হয়ে,আপন ছন্দে, আকাশের বুকে ভাসো, ঝরে পড়ো বৃষ্টি হয়ে আবার স্বয়ংসিদ্ধা রূপে ঝলমলিয়ে রোদ্দুর হওয়া।

  • কবিতা

    কবিতা- হয়তো কেউ অন্তরালে!!

    হয়তো কেউ অন্তরালে!!
     -রাণা চ্যাটার্জী

     

    বড় বেমানান হয়েছি বারেবারে,
    বলেছি এতো ভালোবাসা ভালো নয়
    “এড়াচ্ছি আমি” এ ভুল ভাবনায় বিঁধেছ নিজেকে,
                 লক্ষণ গণ্ডিতে আবদ্ধ রেখে
                               আঘাতে হয়েছে দিশাহীন।

    আঁকড়ে ধরেছো ধরো
                  শেকল না পড়াক অধিকারবোধ,
      আমি তো স্বেচ্ছায় ধরা দিয়েছি নিজেকে,
    ছেড়ে চলে যেতে নয়,বন্ধুত্বের দায়িত্ব কর্তব্য ছিঁড়ে।

    “হয়তো কেউ আছে” অর্থহীন এ চিন্তার নাগপাশ মুক্ত হয়ে স্বাদ নাও আমাদের শুভচিন্তক বন্ধুত্বের।
    যার মিঠাসে উদ্বুদ্ধ হয় হৃদয়, প্রাণ পায় গুমোট হাওয়া,
    বুঝেয়েছি, উপলব্ধিতে অনুভব করেছো বহুবার তোমার আমার মাঝে সন্দেহের বীজ বপনের নেই অবকাশ ,
          আমি যেটা নই কি করে তা সই
                      সন্দেহ বাসা মনে তবু জেগে রই।
    সহজে যায় সয়, নেই তাতে ভয়
          হয়তো কেউ আছে এ ভাবনায় অবক্ষয়।

    অন্যদের দ্বিধাহীন লাইক কমেন্টস ঝড় না তুলুক, থামুক মনের অলিন্দে “তারা কি কেউ” আলোড়ন।

    ভরসা বিশ্বাসের সুগঠিত বোঝাপড়ায় আঘাত নয়,
    খোলামকুচি হতে লাগে না বেশিক্ষণ,
     পড়ে যেন ভুল করেছি -এ বোঝা বয়ে বেড়াতে না হয় সামান্য না বুঝতে পাড়ার মাসুল দিয়ে।

  • কবিতা

    কবিতা- নোনা স্রোত

    নোনা স্রোত
    – রাণা চ্যাটার্জী

     

    এমন করেই বুক ভেসে যায় সাগর নোনা জলে
    একাকী মনে হাঁটছি ভাবছি আপন ছন্দ তালে।

    থেকেও তুমি আজ বহুদূর,পাই না স্পর্শ,ছুঁতে,
    কোন অছিলায় স্মৃতি কেবল,শরীর পঞ্চভূতে।

    চোখ ছল ছল,এ নোনা জল,সমুদ্রে আছড়ে ঢেউ,
    এ দুখ আমার, লক্ষণ কৈ থামার, বুঝবে কি কেউ!

    বেশ তো ছিল, কি যে হলো, তা বলে এভাবে ফেলে
    বাঁচার রসদ হারিয়ে আমি, একা বাচঁছি অবহেলে।

    কি করে ভুলি, সে সব কথা,পরাজয়ের যতো গ্লানি
    শুকতারা খসলো হঠাৎ, ছিলে জুড়ে অনেক খানি।

    পর হয়ে যায় ভীষণ আপন, আপন তো ঠেলে দূরে
    এই সেদিন ও গা ঘেঁষে পাশে, আজ একা ভবঘুরে।

    সঙ্গী যখন সব মায়া ছেড়ে, চলে গিয়েছে একা করে
    বিমর্ষতায় ভাবছি, নাড়ছি স্মৃতি, এ কষ্ট হৃদয় ফুঁড়ে।

    সেদিন দু’জনে কত কথা, বাড়ি ফিরে শুনি তুমি নেই
    এক লহমায় তাসের ঘর, যেন গুঁড়িয়ে নিমেষেই।

    ভিড় করে যেন আসছে স্মৃতিরা, ভগ্নাংশ অনুপাতে,
    আটকাতে পারলাম কৈ, জানি সব কিছু নয় হাতে।

    যেখানেই থাকো, সুখে থাকো, জীবনের মায়া ছেড়ে
    অদৃষ্ট আমার সাথ দেয়নি, নিলো তোমাকেই কেড়ে।

You cannot copy content of this page