-
কবিতা- বেঁচে থাকা দায়
বেঁচে থাকা দায়
-রাণা চ্যাটার্জীঅর্থ,যশ-কর্ম,খ্যাতি ধরতে গেলেই দেখি পালায়
নাজেহালে বেকার ছেলে,চামচা নেতার জ্বালায়।
রাজনীতি আঙিনায় কৈ কমিউনিস্ট মার্ক্স লেলিন
কলকারখানা লক আউট,আসবে যে কবে সুদিন।চাই না নেতা,দেয় ভাঁওতা শুধু আখের গুছায় সব,
ধুলো ছোঁড়ে রাঘব বোয়াল,জনতা ভোটে কলরব।
মালিক বলছে সব দিচ্ছি, ফাঁকিবাজ শ্রমিক দল
মিটিং মিছিল আন্দোলনে কত আর হাতাবি বল!কি যে রীতি,সম্প্রীতি ,দেখনদারির ভালো থাকা,
পাচ্ছি কষ্ট, বুঝছি স্পষ্ট ,জৌলুসেতে সব ঢাকা।
হৃদয় মনে, জিও-র ফোনে হৃদ্যতার মাখামাখি
প্রেম প্রীতি শুকিয়ে মরুক এভাবেই বেঁচে থাকি।ছুটছে নেতা,ভিড় জনতা,এই নরমে গরমে ভোট
প্রতিশ্রুতির মিথ্যা প্রলেপ,”যা ভাগ ,চল ফোট” ! -
কবিতা- ” ভুল “
” ভুল “
-রানা চ্যাটার্জী“ভুল”ই জীবন “ভুল”ই মরণ
ভুলেই জীবন ভরা
এই ভুলই শুধরে শেখায়
সঠিক জীবন গড়া ।ভুল হলে তাই চুপসে থাকা
খানিকটা মন মরা,
ভুল কিন্তু প্রবেশ দ্বার,
একটা ধাপ, জীবনের খরা ।ভুল করেছো? ভয়টা কিসের!
থাকুক চোখ পাকিয়ে,
ভুলই দেবে শুধরে দেখো
উঠছো বুঝি হাঁফিয়ে ?তেলের শিশি ভাঙলে পরে,
ধেড়ে খোকার অনেক রাগ,
ভুল করলে মুষড়ে তারা,
আসলে সব কাগুজে বাঘ ।তাকিয়ে দেখো চতুর্দিকে,
ভুল ভ্রান্তি কেবল ঢের,
জীবনে খাদ, চোরা বালি
সমস্যার রকম ফের।দেশ চলেছে, নগর ও জীবন
ভুলের ফাঁদে জড়িয়ে,
নেতা, মন্ত্রী, পেয়াদা সকল
অহংবোধ পথ মাড়িয়ে!এদের ভুলে দিশেহারা
মোদের ভুলেই কেবল রব!
তকমা সাঁটা বুড়ো খোকা
খুড়োর কল আমরা সব !তবুও বলি সজাগ হও,
দূরে হটাও ভুলকে,
এক আধটা, ভুল হতেই পারে
রোজ ভালো লাগে কি
এপ্রিল ফুলকে ! -
অন্তরালে
অন্তরালে
-রাণা চ্যাটার্জীতুমি না হয় হাত গুটিয়ে নিয়েছো আমি আজও আছি একই।
চোখ দু’টো মেলে আয়না দেখো কিছুই খুঁজে পাওনা কি!
অভিমানী মন আকাশ দেখে, কালো মেঘে ঘনঘটা,
এই সেদিনও জোয়ার ছিল আজ এক লহমায় ভাটা!
ফিসফাস কত কথা চলে, মন স্থবিরতায় গুঞ্জনে,
চলেই যাবার ভাবনা যখন কি দরকার ছিল মনোরঞ্জনে!
রং তুলিতে জল ছবি আঁক, রামধনু মন ক্যানভাসে,
আমি জানি, তুমি ভালো নেই অভিনয়ে মাতো অনায়াসে।
-
অশালীনতা
অশালীনতা
-রাণা চ্যাটার্জী“ইস ছ্যা ছ্যা, কি লজ্জা গো দিদি, এই এত্ত বড় দাড়ি গোঁফ বেরোনো ছেলেগুলো কিনা মাধ্যমিক দিচ্ছে, তার ওপর পরীক্ষাকক্ষে গার্ড দিতে গিয়ে কি নোংরা নোংরা কমেন্ট আমাদের দেখে..ইশ কি সব ভাষা! শুনে আমার মাথা, কান গরম হয়ে যাচ্ছে কি বলবো”
– “সেকিরে টুম্পা,তোর সাথেও এমন কিছু হয়েছে!”
পাশ থেকে পলি ফুটকি কেটে পড়লো, “আর গরম! আর দু’টো দিন জয় মা বলে কাটলে বাঁচি, যেভাবে যৌনতা মিশিয়ে মন্তব্য ছুঁড়ছে, কাকে কি কথা বলছি সে হুঁশ পর্যন্ত নেই গো!”
ঈশিতা টানা গার্ড দিয়ে চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিচ্ছিল, এসে বললো, “জানো আজ কি হয়েছে, বাপরে, লজ্জায় মরি আমি! একটা ছেলে অনেকক্ষণ টুকলি করছে দেখে, খুব রাগ ধরতেই সামনে গিয়ে বললাম- কি হচ্ছে এসব? বলে কি জানো?” সকলের কৌতূহলী মুখ উপলব্ধি করে ঈশিতা বলতে লাগলো,”আমায় ড্যাব ড্যাব চোখে যেন গিলতে আসা চোখে বলে কিনা- ভাবছি সামনেরটা দেখে লিখব না পেছনটা!” ইশ কি মুখের ভাষা গো, তা বলে দিদিমনিদের সাথেও নোংরামি! নিবেদিতা গার্লসে মাধ্যমিকে আশে পাশের দু’টো মার্কামারা বয়েজ স্কুলের সিট পড়েছে, বুঝতে নিশ্চয় অসুবিধা হচ্ছে না, সেই প্রসঙ্গে এই সব কথার অবতারনা।
পল্লবী ম্যাম ও ততক্ষণে পরীক্ষা শেষ করে, আলোচনায় যোগ দিতে দৌড়ে এসে বললো, “জানো কাল করিডোরে দু’জন ছাত্র নিজের মধ্যে কি কথা বলতে বলতে যাচ্ছে,”শালা, গার্লস স্কুলে কতগুলো সেক্সি মাল রয়েছে দেখেছিস!” আর একজন প্রত্যুত্তরে কি বিশ্রী গালি দিয়ে বলে কিনা, “পাশ তো করবো না,সামনের বছর আবার আসবো এখানে দেখিস শা..!”
সকলের বড় শোভাদি কিছু বলতে যাচ্ছিল, হেড দিদিমনির দায়িত্বে থাকা অপরুপাদি বয়েস স্কুলে ফোন করে অনুরোধ করলেন কাল থেকে যেন দু’ তিন জন বয়েজ টিচার এই নিবেদিতা গার্লসে গার্ড দিতে আসে।
গতকাল পরীক্ষা নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় ভিড় বাসেও টুম্পা, পলি, ঈশিতারা খুব বাজে ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে। সকলেই বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষা দিতে আসা উশৃঙ্খল ছাত্রগুলো ঠেলাঠেলি আর কি সব কটূক্তি!আজকাল যা দিনকাল, প্রতিবাদ করবে কি, কখন একা পেয়ে অঘটন ঘটাবে এই আশঙ্কায় দিন কাটানো- বোবা কালার শত্রু নেই আচরণে।
-
ন্যায়-অন্যায়
ন্যায়-অন্যায়
– রাণা চ্যাটার্জীন্যায় অন্যায়ের মাঝে ঝুলন্ত, দোদুল্যমান দিন যাপনে ভর করা আধুনিক গতিময়তা।
অদ্ভুত নিয়ম নীতির অক্টোপাস সমাজ বাঁধন সত্ত্বেও ভিন্ন জনের ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম বেড়াজালে অভ্যস্ত দ্বিপদ মনুষ্য আমরা ।
হাজার দোষ করে পার পাওয়া পেশী শক্তির
জয়ধ্বনি দেওয়া মানুষ, বিচার করে অসুস্থ মায়ের খিদের জন্য পাঁউরুটি চুরি করা
দোকানী শিশু শ্রমিকের অন্যায়ের।বড়ো গহির্ত, ছি ছি বলে সমাজসংস্কারকগণ, ছিঁচকে চোরকে দেয় গণধোলাই শিক্ষা।
গায়ে গরম জল ঢেলে প্রভু ভক্ত সারমেয়র
পিঠের ছাল ওঠা দগ দগে ঘা আসলে পচনশীল সমাজ ও মানসিকতারই প্রতিচ্ছবি ।আত্মসাৎ হয়ে যায় ব্যাঙ্ক লকার, ট্রেজারি, গ্রাচুয়েটি, পেনশনে তিল তিল জমানো টাকা।
অবসর নেওয়া বৃদ্ধার হাপিত্যেশে ভারী বাতাস,
মূল্যবৃদ্ধির উর্ধমুখীতা,সবেধন সঞ্চয়ের ক্রম হ্রাসমান সুদে সংসার চালাতে হিমশিমে মুখ লুকায়।
প্রোমোটারের করাল ছায়ায় চুরি হয় কুমারী রোদ্দুর ।
এক চিলতে প্রকৃতি দেখার হাতছানি প্রাণ পায় সপ্তাহান্তিক ভ্রমণে।ভিড় ট্রেনে মুখোশধারী ভদ্রকাকুর ছুঁক ছুঁক,
কিশোরী, বৃদ্ধার শরীর ছোঁয়ার বাহানা খোঁজে!
ছোট্টো বাচ্ছাও সুরক্ষিত নয় ন্যায় অন্যায়ের
গিরিখাদে আটকে থাকা অদ্ভুত সমাজে।তবু ভোর হয়, হলুদ বৃষ্টির আনাগোনা,
সূর্য্যের দাবদাহে ভস্মীভূত সকাল।
বেঁচে থাকে দূষিত ধূলিকণার মতো কলুষিত
মানুষগুলো বহাল তবিয়তে । -
বন্ধুত্ব বার্তা
বন্ধুত্ব বার্তা
-রাণা চ্যাটার্জীনতুন বছরের সুঘ্রাণ গায়ে মেখে ,
মুখ পুস্তিকায় এলো তোমার বন্ধুত্বের আমন্ত্রণ!,·
অপেক্ষার ডালি সাজিয়েও প্রশ্ন করে মন
“কোথায় ছিলে এতো গুলো মাস ?”নক্ষত্র ,গ্রহাণুপুঞ্জ,ছায়া পথের কোথায় না
কোথায় খুঁজেছি তোমায় !
বিন্দু বিন্দু ঘর্মাক্ত কপালের সিঁদুর চিন্হ,
আজও আপন উজ্জ্বলতায় অমলিন ।একবারও মনে কি পড়েনি,এত্ত প্রহর ,দিন, মাস পার করেও অগ্নিসাক্ষী অর্ধাঙ্গিনী কে!
শীতের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে আঁধার রাতে সেই টাইগার হিলে মধুচন্দ্রিমার মধু যাপন!সূর্যোদয়ের অপেক্ষার অবসানে তোমার হাতের উষ্ণতা,আজো ভাবলেই ওষ্ঠভেজায়।নববধূর সেই রঙিন অনাবিল মুহূর্ত,পাগল প্রেমে মত্ত অগোছালো সিঁথি,লাজুক ছবির দামাল দাপট ল্যাপটপময়,ডিলিট করলেও
বড়ো জীবন্ত,গিলে খেতে আসে ।গভীর মধ্যরাতে একাকীত্ব ,শির শিরানি ধরায় শিরায় শিরায়,শব্দ শুনি পাতা খসার!
অগুনতি পাতার ভিড়ে আমার স্বপ্নভঙ্গ,
পর্ণমোচি তকমায় বাঁচি আগামী ভ্রূণে।নিঝুম রাতে খোলা ছাদের দুষ্টু বাতাস,
তোমার আঁকিবুঁকি খেলায় মত্ত,উত্তাল করে
আমার শরীরী খিদে!একটা ভুল বার্তা,জন্ম জন্মান্তরের প্রেমিকার দুর্ঘটনার খবরে,
শোক বিহ্বল বাচ্ছার মতো,তোমার সঙ্কট দিনের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে আমার আবির্ভাব,সে সব উপেক্ষা করে চলে গেলে এক লহমায় অভিকর্ষ টানে!পেয়েছো কি খুঁজে সেই সোনার হরিণী কে !?
পরিকল্পনার মিথ্যা খবরে যাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তোমার দুনিয়া থেকে।
আজো সে বাঁচে,ভিন শহরে নতুন স্বপ্ন বুকে,
তোমাকে ভালো রাখার প্রতিশ্রতি
ছিনিয়ে আমার থেকে !মুখ পুস্তিকায় তাজা আপডেট ,প্রেমিকার ছবি বাড়ায় তোমায় অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ প্রবাহ ।
তবুও তাকে পাবার দুরন্ত খোঁজে আশাহত, তোমার ফিরে আসার ‘বন্ধুত্ব বার্তা’
নতুন আশায় প্রাণ সঞ্চার করে । -
“বাড়িয়ে দাও তোমার হাত”
“বাড়িয়ে দাও তোমার হাত”
– রাণা চ্যাটার্জীতোমার, আমার আশ্রয় আছে,
ছেলেটার নাই বাড়ি।
ফুটপাথেই ওর দিন কাটে,
টান মারে ক্ষুধায় নাড়ি!সেদিন রাতে বৃষ্টি ভীষণ,
ঝরছে অঝোর ধারায়।
ল্যাম্পপোস্টে নিভলো আলো,
নিস্তব্ধতা গোটা পাড়ায়!আমি তখন ব্যালকনিতে,
রাত্রি প্রায় দুটো,
ছেলেটা দেখি, ছেঁড়া কাঁথায়,
ভিজছে, কুণ্ঠিত।বেরিয়ে গেলাম চুপটি করে,
হাতে ছাতা, টর্চ লাইট,
সেলাম ছেলে, কুর্নিশ জানাই,
তোর বেঁচে থাকার ফাইট।“আয় উঠে আয়, এমন ভেজে”!
বৃষ্টি পড়ছে জোরে,
কনকনে রাত মোচড় দিয়ে,
হৃৎপিণ্ড যেন, নিচ্ছে ছিঁড়ে।দুর্যোগ রাত, কি আর করি,
হ্যাঁচকা টান মেরে!
আপাতত ঠাঁই দিলাম,
নিচের গ্যারেজ ঘরে।সকাল হতেই দৌড়ে দেখি,
একি, গ্যারেজ ঘর যে বন্ধ!
হায়রে, ওটা স্বপ্ন ছিলো,
চোখ থাকতেও আমরা অন্ধ ! -
ঠিক বেঠিক
ঠিক বেঠিক
-রানা চ্যাটার্জীআমি হচ্ছি একটা আপাদমস্তক ভুলে ভরা মানুষ,
নুন লঙ্কা মাখা কুচি কুচি পেয়ারা দেখলে যেমন
টপাটপ মুখে পুরতে ইচ্ছে করে ,
আমার সাথে তেমনি নিবিড়তা তৈরি হয় ক্ষনিকে।
বড়ো জলদি ভাবনার অবগাহনে নিজেকে সঁপে দেওয়া উচিত নয় জেনেও কই পারি স্বার্থপরতার মোড়কে কৃত্রিমতার লিটমাসে মুখোশ টানতে !হোক ভুলে ভরা ,নাই বা পারলাম স্পন্দনহীন রোবট হতে ,
অগুনতি মানুষের ভিড়ে মিশে যাওয়া আমি বিশ্ব দর্শনে মাতি,
গল্প করি , ছোটোখাটো হলেও মানুষের সমস্যায় চিন্তিত হয়ে বাঁচি,
ভুলে যাই , কি এর ভবিষ্যত !
হু হু পার হয়ে যাওয়ার সময় ভ্রুকুটি করে তবু আমি হেঁটে চলি রাস্তার রেলিং ধরে ,
ভুল পথ না ঠিক সেসব বিচার না করেই এগিয়ে। -
গল্প নয় সত্যি
গল্প নয় সত্যি
-রাণা চ্যাটার্জী“আপনি কোথাও ভুল করছেন ম্যাডাম। আমি তো আপনাকে কিছুতেই চিনতে পারছি না,একটু যদি নিজের পরিচয় দেন” এই ছিল সুনন্দ স্যানালের প্রথম উত্তর ওই অপরিচিতা মহিলার অনেকগুলো ম্যাসেজ,অনেকদিন ধরে ইনবক্সে পড়ে থাকা দেখে।
আসলে হয়েছে কি, সুনন্দের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কোনভাবে পাসওয়ার্ড হারিয়ে খোলাই যাচ্ছিল না। অনেক ঘাঁটাঘাঁটি, চেষ্টার পরেও ব্যর্থ প্রচেষ্টায় খুলতে না পেরে অগত্যা নিজের নামে আর একটা অ্যাকাউন্ট খোলে সে।কিন্তু প্রায়ই মিস করত সে, পুরনো ফেসবুক অ্যাকাউন্টের বন্ধুদের। তাদের বেশিরভাগই বাইরের দেশের হওয়ায়, তাদের আদব কায়দা, কথপোকথনে সেই সব দেশের আচার আচরণ, শিল্প সংস্কৃতি, উৎসব এসব সুনন্দকে আকর্ষণ করতো বরাবর। আসলে ওর মধ্যে একটা দারুণ গুণও ছিল। খুব সহজেই অন্যের সঙ্গে মিশে গিয়ে, মানিয়ে নেওয়ার, অন্যকে চটজলদি আপন করে নেওয়ার।পুরনো অ্যাকাউন্ট খুলতে না পারার কষ্টের প্রলেপে, নতুন ফেসবুক আইডি, মলম হয়ে যখন ক্ষত প্রায় সারিয়ে তুলছিলো, একদিন অফিসের লকারে, পুরানো ডায়েরির পাতায় পাসওয়ার্ডটা লেখা পেতেই আনন্দে আটখানা হয়ে ওঠে সুনন্দ। পাসওয়ার্ড ফিরে পাওয়ার শুভ মুহূর্তেই ফেসবুক লগ ইন করে দেখে বাপরে বাপ, পায় হাজারের উপর নোটিফিকেশন। সব ধীরেসুস্থে দেখতে দেখতেই নজর পড়ে রুশা চৌধুরী নামে এক অপরিচিতের প্রচুর ম্যাসেজ। যিনি কিনা খুব ঘন ঘন ম্যাসেজ করেই গেছেন লাগাতার এই ক’মাস। খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব মেসেজগুলো দেখে শুনে সুনন্দ, বুঝতে পারল ইনি নিশ্চয়ই তাকে ভুল ভেবে ম্যাসেজ করে চলেছেন হয়তো বা কাউকে খুঁজছেন, কেমন যেন হন্যে হয়ে!
ওনার ম্যাসেজ গুলো খুবই সরল ছিল,এই রকম
“কেমন আছো সাড়া দিচ্ছনা যে!”
“সনু,তুমি ভালো আছো তো?”
এভাবে ছেড়ে যাচ্ছ আমায়!
কতদিন কথাই বলো না!
কি হয়েছে তোমার?
এই ধরনের একটা একটা লাইনে-যেন একটা আকুতি, কাছের কাউকে খোঁজার! আপনারা কি ভাবছেন, কোনো ফাঁদ তাই তো? হ্যাঁ,সে তো দিনকাল খারাপ, সেটা সুনন্দ যথেষ্টই জানে, কিন্তু কোথায় যেন তার মন অনুভব করেছিল, হতেও তো পারে সত্যি সত্যি কাছের বন্ধুটিকে তার প্রয়োজন। কিন্তু একটা খটকাও লাগছিল, তাকে কেন ম্যাসেজ পাঠাচ্ছে!সে দিনটা ছিল শনিবার,সুনন্দ পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই, অপর প্রান্ত থেকে আবার প্রশ্ন আসে, “আগে বলো তুমি কেমন আছো? কেন আনফ্রেন্ড করেছো আমায়? একটা যেন কোথাও জোর, অধিকার প্রশ্ন করার মধ্যে, এটা উপলব্ধি করে সুনন্দ লিখেছিল,”হ্যাঁ, আমি ভালো আছি কিন্তু আপনি কে, আমাকে কি সত্যিই চেনেন?” পরক্ষণেই উত্তর এসেছিল “চিনতে পারছ না এখন আমায়, আমার কিন্তু মন বলছে তুমি আমার বন্ধু সনুই ।”
সুনন্দ সমাজ বিদ্যার ছাত্র হলেও এই বিষয়ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত “মনস্তত্ত্ব” ভীষণভাবে আকর্ষিত করতো তাকে। ফ্রয়েডের চিন্তাভাবনা, স্বপ্ন তত্ত্ব, মানুষের জটিল মন, চেতন অবচেতন এইসব আগ্রহের বিষয় বরাবরই তার অতি পছন্দের তালিকায় ছিল।
চাকরির শুরুতে সুনন্দ বছরখানেক দিল্লিতে সরকারী প্রকল্পে কাউন্সিলর হিসেবে কাজ করেছিল। সে সামনে থেকে উপলব্ধি করেছে সাক্ষাৎকার সহ কথাবার্তায়, মাতাল ব্যক্তি হোক আর প্রসূতি, বখে যাওয়া সন্তান বা আফিম নেশাগ্রস্থ ব্যক্তিগণ বা মানসিক ভারসাম্যহীনদের সাথে একটু বন্ধুর মতো মিশলে তারা গল গল করে সব উগরে দেয় তাদের যাবতীয় সমস্যা সহ। অর্থাৎ কথোপকথনে, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির একটা বন্ধুত্বমূলক পরিবেশ তৈরি করতে পারলে আখেরে উপকার হয় মানসিক চাপগ্রস্থ ব্যক্তির। যদিও সুনন্দ এটা নিশ্চিত নয় যে, এই অপরিচিতা রুশা চৌধুরীর কোনো মানসিক চাপ চলছে! তবে ওনাকে একটু সময় দেওয়া উচিত বন্ধুর মতো মিশে, আর এটা যে খুব দরকার সে বিষয়ে সুনন্দের কোনো দ্বিমত নেই,যদি সত্যিই ওনাকে উপকার করা যায়।
এই ক’দিনে সামান্য চ্যাট করে সুনন্দ, রুশাকে কিছুটা হলেও বোঝাতে সক্ষম হয়েছে- উনি যে সুনন্দকে খুঁজছেন,এই সুনন্দ সে নয়। প্রমাণ স্বরূপ সুনন্দ তার নতুন ফেসবুক আইডি দেখতে দিয়েছে, যেখানে তার পরিবার,সহধর্মিনী,মেয়ের ছবি আছে।সুনন্দ উপলব্ধি করেছে, যত সে নিজেকে অন্য সুনন্দ, তার সনু নয় এটার প্রমাণ দিয়েছে, রুশার যেন একটু একটু করে আফসোসের পাল্লা ভারী হয়েছে, ফুটে উঠেছে কখনো হতাশা, কখনো বিরক্ত করার জন্য দুঃখবোধ।
বন্ধুর মতো মিশে সুনন্দ পরিবেশ হালকা করে দিতেই জড়তা কাটিয়ে রুশা জানিয়েছিল, “এই নামে এক বন্ধু ফেসবুকে ভীষণ আপন হয়ে যায় তার। প্রতিদিন তারা কত গল্পই না করতো। তিনি ভয়ঙ্কর রকম অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সন্তান হওয়ার পর, নার্ভ জনিত সমস্যায় একপ্রকার জর্জরিত।এতটাই বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছিল যে,কচি বাচ্চার পাশে উনি মরার মত অবশ শরীরে শুয়ে দিন কাটাতেন। কোন শক্তি ছিল না, নড়া চড়া করার, চুপ করে মরা মানুষের মত পড়ে থাকতেন মাসের পর মাস আর সিলিং এর ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতেন, একদিন যদি দাঁড়াতে পারি, ঠিক ঝুলে যাবো।” এই সব কথাগুলো শুনে সুনন্দের একদম ছবির মতো ভাসতো রুশার অসহনীয় পরিবেশ, মানসিক অবস্থা। রুশা আরো জানিয়েছিলেন, “আশে পাশের প্রতিবেশী যারা দেখতে আসতো, তাঁদেরকে উনি জনে জনে আকুতি নিয়ে অনুরোধ করে বলতেন, আমার বাচ্চাটাকে নিয়ে যাও না গো তোমরা কেউ, নইলে ও মারা যাবে আর বাঁচবে না।”
ঠিক এই প্রতিকূল পরিবেশে সুনন্দ সান্যাল নামে এক বন্ধুর আবির্ভাব হয় রুশার ফেসবুকে, সে তাকে এতটাই উৎসাহিত করতো সে ঋণ ভোলা সম্ভব নয়। তার জন্যই রুশা, একটু একটু করে সুস্থ হয়ে উঠেছে।বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়ে রুশাকে, মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে স্বামীকে নিয়ে ফ্লাইটে করে মরা মানুষের মতো ব্যাঙ্গালোরে যাওয়া করিয়েছে। কখনো কলকাতার ডাক্তার, কখনো গৌহাটির ডাক্তার এই সব করে, ওই সুনন্দর জন্যই যখন বেঁচে ওঠা, নতুন এই জীবন, ঠিক সেই সময়েই হঠাৎ করে সুনন্দ তথা তার সনুর গায়েব হওয়া। যত শুনছিল, খুব খারাপ একটা মনকষ্ট সুনন্দকে আরো যেন গুম করে তুলছিল। কিন্তু কি আর করতে পারে, সে যে অক্ষম সেই রুশার সুনন্দের জায়গা পূরণ করতে।
তাকে হন্যে হয়ে খুঁজতে ফেসবুকে যত ওই এক নামের “সুনন্দ সান্যাল”পেয়েছে, রুশা তাদের প্রত্যেককে মেসেজ করেছে, যদি তার সুনন্দ, সনুকে খুঁজে পাওয়া যায় কিন্তু এটা দুর্ভাগ্য যে কেউ উত্তর দেয় নি কেবল সুনন্দ ছাড়া। আর একদিন রুশা, ভীষণ আবেগতাড়িত হয়ে বলেছিলো, “আমার মন বলছে আপনি আমার সেই বন্ধু, প্লিজ বলুন না, কেন এমন করে দূরে সরে গিয়ে শাস্তি দিচ্ছেন আমায়,আমি আবার অসুস্থ হয়ে পড়ছি আমি হয়তো আর বাঁচবো না” মাঝে মাঝে এসব শুনে ভীষণ অসহায় লাগতো সুনন্দের,ভাবতো এ কাকে ও এত করে বোঝালো, প্রমাণ দিলো, গিন্নির সাথে পরিচয়ও সব কি তবে বৃথা, এখনো কিনা ভেবে চলেছে এই সুনন্দই তার পূর্ব পরিচিত, হে ভগবান! এর উত্তর ও সে পেয়েছিল রুশার কাছে, রুশা বলতো আর অবাক হতো, দু’টি ভিন্ন মানুষ হয়েও আচরণ, ম্যাসেজে ব্যবহৃত শব্দ সমুহেরও কি সাংঘাতিক নাকি মিল। রুশার এসব কথার কোনো বিজ্ঞান সম্মত জবাব দিতে পারে নি সুনন্দ, বুঝতো রুশার জীবন ওই সুনন্দ নামেই বিভোর হয়ে রয়েছে।
ঘটনার গভীরতা যে কত দূর শেকড় ছড়িয়েছিল, বুদ্ধিমান সুনন্দের বুঝতে বাকি ছিল না। ততদিনে সুনন্দের জানা হয়ে গেছে তার বাপের বাড়ি মুর্শিদাবাদের কান্দিতে।উনার স্বামী কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদে কর্মরত ও রুশারা থাকে গৌহাটি । আস্তে আস্তে খুব ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে এরা দু’জন। এরই ফাঁকে লোকসভার ভোট চলে আসে, ভোটের ডিউটিতে কি কি নিয়ে যেতে হবে এত সুন্দর ভাবে যত্ন নিয়ে লিস্ট বানিয়ে দিয়েছিল রুশা যে সুনন্দ কল্পনাও করতে পারেনি যে সে এত ভাগ্যবান হবে।
সুনন্দের একটা বড় গুণ ছিল, কোন কিছু লুকোছাপা না করে, ফ্রি ভাবে বন্ধুর মতো মিশে যাওয়া, যেন কতখানিই না সে চেনে। তাই প্রতিটা বিষয়ে সে গল্প করতো, ছোট ছোট বিষয়গুলোকে চেষ্টা করত খেয়াল রাখার। ব্যস্ত কৃত্রিমতার জীবনে এই উপলব্ধিটাই সত্যি বলতে কি অনেক। সুনন্দ তার সহধর্মিনী রমার সাথেও ফেসবুকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলি। যখন ওরা দু’জন পরমা, ও রুশা গল্প করতো ভীষণ ভালো লাগতো দেখে সুনন্দের, আর তার মন বারংবার প্রার্থনা করতো যেন রুশার আগামী ভালো কাটে।
ভোটের ডিউটিতে সব কিছু ঠিকঠাক আছে কিনা, খাওয়া-দাওয়ার কি ব্যবস্থা হল, শোবার রাত্রে কোনো অসুবিধা নেই তো এই সব খুঁটিনাটি রুশা বার বার খবর নিচ্ছিল সুনন্দকে ফোন করে সুনন্দের সহধর্মিনী পরমার মতোই। পরে অবশ্য এক প্রশ্নের উত্তরে স্বীকার করে, সে তার অপরিহার্য বন্ধু সনুকে মনে করেই এত খুঁটি নাটি ফোন, খবরাখবর নিয়েছিল! ওই অচেনা পরিবেশ, কিন্তু অচেনা হলেও আপন করে নেওয়া রুশার খোঁজ খবর, নিজেকে খুব গর্বিত লাগছিল সুনন্দের। সে খুব অবাক হয়ে ভাবতো, এত ভালো বন্ধু পেয়ে যে কেউ হঠাৎ গায়েব হয়, এটাই চরম অবাক হওয়া বিষয়।কখনো তার মনে হতো, অনেকবার বলতে চেয়েও বলতে পারেনি যে, “রুশা,তোমার সনু হয়তো ফেক আইডি ছিল, তোমার ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে গায়েব হয়েছে” আবার এটাই বা বলবে কি করে, সে তো সত্যিকারের বন্ধুর মতো কাজ উৎসাহ দিয়ে সুস্থ করে তুলেছে, সত্যিই তার অনেক অবদান।
“কিন্তু সে চলে গেল কেন, তবে কি তার কোনো বিপদ হয়েছে” এই চিন্তা করে রুশা আবার একদিন বলছিল, “আমি কিভাবে বিশ্বাস করব বলতে পারেন আপনি অন্য ব্যক্তি, এতো মিল আপনাদের দু’জনের মধ্যে, আদব কায়দা,আচরণ, এমনকি ম্যাসেজ লেখার ধরনও”-এর কোনো উত্তর দিতে পারে নি সুনন্দ বিস্ময় ভরে। সুনন্দ অবশ্য বারবার, রুশার কাছ থেকে তার সনুর ছবি চেয়েও ব্যর্থ হয়েছিল, পরে অবশ্য রুশা ছবি দেখিয়েছিল কিন্তু বলেছিল, “ওর ছবি দেখানোর দিব্যি দেওয়া আছে।” সুনন্দের মাথায় ঢোকেনি, একটা ছেলে কখন বলতে পারে, যে তার ছবি কাউকে না দিতে, এর জন্য দিব্যি দেওয়া কিসের! তবে ছবিটা দেখে কিন্তু সুনন্দ সান্যাল এর মানুষটাকে বেশ ভালই লেগেছিল অনেকটা তার মত যেন ভাবুক, উদাস চাহনি, খুব সুন্দর মিষ্টি মুখমণ্ডল।
হঠাৎ করেই একদিন রুশা আবেগ তাড়িত হয়ে জানালো যে,”জানো কি হয়েছে, তার সুনন্দ মানে সনু ফিরে এসেছে”-হঠাৎ এক ঝলক খুশির মাঝেও উদাস, অভিমানী গলায় বলেছিল সুনন্দ, “খুব খুব ভালো খবর রুশা,ৎতবে তো আমার ছুটি বন্ধু, আসি বিদায়! “
কিন্তু সুনন্দ এসব চাইলে কি হবে, মনে আছে হোয়াটসঅ্যাপে রুশা ভয়েস দিয়ে আবেগ তাড়িত হয়ে বলেছিলো, “প্লিজ এভাবে বলোনা, আমি তোমাকেও কোনদিন হারাতে চাই না, কথা দাও কোনোদিন তুমি এভাবে ভাববে না, তুমি ওই সময় আমায় পাশে থেকে উৎসাহ না দিলে আমি হয়তো মরেই যেতাম এতদিনে,তোমরা দুই সুনন্দ আসলে আমার কাছে একই মুদ্রার দুই পিঠ।”এই কথাগুলো শুনে আর কিছু বলার থাকতে পারেনা, আজও সুনন্দ ও রুশা পরস্পরের খুব ভালো বন্ধু। মানুষের জীবনে কোথাও এমন ভালো বন্ধু, খুব খুব দরকার, একদম যেন দখিনা বাতাস হয়ে বিরাজ করে হাত বাড়ালেই বন্ধুর মতো। রুশার সুনন্দ ফিরে এলেও, সে আর রুশা আছে নিজেদের মতো, তাতে এই সুনন্দ সান্যাল ও রুশা চৌধুরীর বন্ধুত্বে কোনো চিড় ধরে নি, ধরবেও না এই বিশ্বাসেই উভয়ে কোনোদিন সাক্ষাৎ না করলেও দিব্যি খাসা আছে ফেসবুক আইডির পাস ওয়ার্ড ভুলে আলাপের সূচনা থেকে।
-
কামুক দৈনন্দিনতা
কামুক দৈনন্দিনতা
-রাণা চ্যাটার্জীতোমার তর্জনী কখন আমার অনামিকা ছুঁয়ে দিব্যি ভাব জমিয়েছে ভিড় বাসে খেয়ালই করিনি ,
সম্বিত এলো হেড়ে গলার কন্ডাক্টরের গুঁতোয় ।
এক রাশ দম বন্ধ করা ঠাসা ধর্মতলা মিনি তখন,ওভার টেকের খেলায় আপন খেয়ালে ।
পেছনের চাপে অনুভবের আঁশটে গন্ধ আমার
চোয়াল শক্ত করে তুলেছে,
হাঁফিয়ে উঠছি আমি ,এ কোন সমতার বিচরণ ভূমি,
মানুষ রূপি চারপেয়ের আচরণ ততক্ষনে আঙ্গুল ছোঁয়ায় আমার নিতম্বের মাপ নিতে উদগ্রীব ।
নীরবে কাজ সারার অন্যমনস্ক ভাবলেশহীন চাহনি,তাকে গিরিখাদ , উপত্যকায় অবগাহন খেলায় মাতিয়ে রেখেছে হেড ফোনের সুরে ।বিষাক্ত আচমকা ছোবল , ঘৃণার মিছিল ছড়িয়েছে আমার শরীরের শাখা প্রশাখায়!
তবু বড়ো বিধস্ত আমি আজ ,সৃস্টি কর্তা কেড়ে
নিয়েছে প্রতিবাদের ভাষা টুকুও !
পি জি হাসপাতালের বেডে ছটফট করা মা কে ,
দেখতে আসা আমি মফস্বলের শান্ত নিরীহ তন্বী ,
পাশে দাঁড়ানো বটবৃক্ষ বাবার বয়স যেন বেড়ে গেছে এক লহমায় !
বাবাকে শক্ত করে চেপে ধরা হাত আর অন্যদিকে পাশবিক লোমশতা সঙ্গী করে ট্রেন ধরার উদ্দেশ্যে ছুটে চলি কিশোরী মনের স্বপ্ন দলানো আমি স্বত্তা!ভালো থেকো তিলোত্তমা , পাশবিকতায় নয় ,
মনুষ্যত্বে বাঁচো ,স্নেহ ,শ্রদ্ধা ,ভালোবাসার
অবগাহনে পথ দেখাও ।