আবহমান

আবহমান – শ্ৰী ভট্টাচার্য্য দে সময় কাটে সময়ের হাত ধরে। বিষন্ন চাঁদ, কালো আকাশ বুকে, একলা সাঁতরে বেড়ায় সমস্ত রাত ধরে। আলোর প্রতিফলনে, প্রেমাস্পদে মাতোয়ারা করে গোটা জগৎ, দিনের আলোয় সেই আড়াল! কলঙ্কিত কালিমাদের সূর্যালোকে, জনসমক্ষে আসতে নেই যে! তাই না বলা কথাগুলো শুধু রূপকথা হয়েই থেকে যায়। সময় কেটে যায় সময়ের হাত ধরে। কালপ্যাঁচারা […]

বোধন

বোধন -শ্ৰী ভট্টাচার্য্য দে “ধুর ধুর আর ভালো লাগছেনা!” গজগজ করতে করতেই বাজারের ব্যাগটা নামিয়ে রাখল সুকুমার। প্রবীণ এই মানুষটির বাড়িতে তিনি আর তাঁর স্ত্রী ভিন্ন প্রাণী নেই দুটি। ছেলে অনিন্দ্য, স্ত্রী এবং তাদের একমাত্র কন্যা রাহীকে নিয়ে দিল্লীতে থাকে। রাহী বাড়ির সবচেয়ে ছোট সদস্যা এবং সবার আদরের। বিশেষত দাদানের প্রিয় নাতনী। পুজোর আর কটা […]

অপরাধী

অপরাধী -শ্ৰী ভট্টাচার্য্য দে     দুপুর সাড়ে বারোটায় হাজিরা। সমন এসেছে উঁচু তলার আদালতে। কৃত সব ভুলের নির্ভুল খতিয়ান! অপরাধী নিশ্চুপে দাঁড়িয়ে কাঠগড়ায়। শীর্ণ দেহ, প্রত্যয়ী দুটো চোখ কথা বলে, চিৎকার করে, আর্তনাদ করে! বিচারালয়ে নিস্তব্ধতা, মৃত্যুর পরোয়ানা হাতে স্বয়ং যমদূত। অপরাধ খুনের। হত্যা করা হয়েছে একটা স্বপ্নের। একটা মন স্বপ্ন দেখেছিল- মাঝ আকাশে […]

গিরগিটি

গিরগিটি -শ্ৰী ভট্টাচার্য্য দে রঙবদলের খেলাতে, খেলার ছলেই কবে যেন সামিল হয়েছিলাম। ঠিক মনে করতে পারিনা, তাই কালের কালান্তরে বদলাতে দেখি, আমার নিত্যদিনের রঙ! তুমি বলেছিলে রঙ খেলা পছন্দ নয় তোমার। তাই আবীর না, প্রথম যৌবন রাঙা করেছিলাম তোমার রঙেই। নেই রঙের রঙীন ক্যানভাসে তুমি এঁকে দিয়েছিলে- একটা জ্বলন্ত ভিসুভিয়াস! সমস্ত বুকজুড়ে দহনজ্বালা সাজিয়েছিলাম। সে […]

যুগান্তরে

যুগান্তরে শ্রী ভট্টাচার্য্য দে   অভিমানী কালিন্দির কালো জলে ডুবে যেতে যেতে, দিগন্তপারে দেখেছিলাম রাঙা সূর্যোদয়। ঠোঁট অস্ফুটে জিজ্ঞাসা করেছিল, এই কি সেই চিরকাঙ্খিত অমলিন ভোর? কালিয়ের বংশধরেরা তখনও ফনার বিস্তার সাজিয়ে প্রস্তুত; রমনসুখের আধিপত্য গড়ে তুলবে বলে! দিনের আলো যত স্পষ্ট হয়, কোন এক নাম না জানা ঘাট থেকে মাটির কলসী ভেসে যেতে দেখা […]

ইচ্ছে

ইচ্ছে -শ্ৰী ভট্টাচার্য্য দে সব স্বাদ জিভে এসে ধাক্কা দেয়না ঠিকই, তবে তাকে লাভ করার সাধ যে একবারও জাগেনা মনে; তেমনটা নয়। কিছু গন্ধ, শরীরে আল্পনা এঁকে দেয়, সরীসৃপের চলন! সে শীতলতা টের পাও তুমি? আমার মনে এক’শ ভিসুভিয়াস দাউ দাউ করে জ্বলে। অন্তরে অনুভূত হয় দাবাগ্নি। তোমার কলমের প্রতিটা আঁচড় না জানি কেন পোড়ায় […]

প্রতিশ্রুতি

প্রতিশ্রুতি -শ্ৰী ভট্টাচার্য্য দে     কথা দিয়েছিলে ছোট বড় সব বাঁকেই এমন থেকে যাবে তুমি, আগেও ছিলে যেমন। নির্লিপ্ত ভালোবাসা অঙ্গে কিছু মেখে, কিছুটা বুকপকেটে সামলে রেখে- পরিচিত সময়ের মাঝে, চিঠির ভাঁজে দেরাজে। আজ অনেক কাজ! অফুরান নাটকীয় সাজ, ব্যস্ততার মোড়কে ঢাকা মন আলোকিত রাস্তায় হেঁটে চলে অকারণ। হয়ত কথার কথাগুলো, হারিয়ে গেছে ভিড়ে; […]

রূপান্তরিত

রূপান্তরিত -শ্রী ভট্টাচার্য্য দে     পুরোনো হয়ে যাওয়া হলদে কাগজের পাতাটা সেদিন ভীষণ রকম জীবন্ত হয়ে উড়ে এসেছিল হাতে। ঝোড়ো হাওয়ায় ওর ইচ্ছেডানারা হয়তো প্রাণ এর শেষ নির্যাসটুকু পেয়েছিল আর তাইই সম্বল করে সে এসেছিল- না বলা কথাগুলো জানিয়ে দিতে। প্রথাগত কোন চিঠি লেখা ছিল না ওতে কিংবা ছিলনা পরিচিত প্রিয় সম্বোধনও। বরং একরাশ […]

আসমানী চিঠি

আসমানী চিঠি -শ্ৰী ভট্টাচার্য্য দে তিনটে জেলা, একটা নদী পার করে, আমার এই একরত্তি নীল চিরকুট তোমার ঠিকানায় কোনদিনই পৌঁছাবে না জানি। তবু বেনামে লেখা এই অখ্যাত চিঠিটা লেখা হয়েছিল কয়েক আলোকবর্ষ আগে। না না আলোয় না। আমি আঁধারেই ছিলাম। জানি আলো তোমার দুর্বলতা তাই জমাট বাঁধা একরাশ মিশমিশে কালো নির্জনতা ঢেলে দিয়েছিলাম তোমার শরীর […]

অন্তর্বাহি

অন্তর্বাহি -শ্রী ভট্টাচার্য্য দে একটা সমুদ্র দেখতে ইচ্ছে করে। একটা সমুদ্র, যাতে নোনা জলের ঢেউ নেই। যার কোলে ভেসে গেলে দূর দিগন্তে আকাশ ছুঁয়ে ফেলা যায়। যেখানে ঝিনুকে ঝিনুকে আদুরে আলাপন। আমার কাছে একটা সুপ্ত আগ্নেয়গিরি আছে। অগ্নুৎপাত হয়না এখন আর। কিন্তু অন্তরে তপ্ত লাভার গরম আশ্বাস অটুট। যেকোন দিন জ্বালামুখ ফাটিয়ে, দেহচূর্ণ করে চ্যুতিপথ […]