-
কবিতা- আদুরী জ্যোৎস্না
আদুরী জ্যোৎস্না
– সীমা চক্রবর্তীতোমার ধারায় শরীরে মোমের মতো গলে পড়ে আদর,
প্রতিদিনের এই টানাপোড়েন জীবনে সুখ বলতে তুমি…
অসহ্য কষ্ট আর তার অসহায়তা ঢেকে দেয়
তোমার সলমাজড়ির চাদর।
যখন তুমি ভিজাও আমার দগ্ধ শরীর
তোমার চন্দ্রালোকের প্রবল ঝড়ে——–
আমার সর্বাঙ্গ তখন অজানা আবেগে শিহরিত…
অনাঘ্রাত অঙ্গে প্রত্যঙ্গে জ্বলে রঙমশাল, নিস্পাপ জ্বরে।জমানো অতৃপ্তিরা খুঁজে নেয় তৃপ্তির সন্ধান…
চাতকীর জ্যোৎস্না পানে বুঝিবা আদিমতা খেলা করে,
জীবনের জটিল অঙ্কের হয় অমিল সমাধান।
এতো কলঙ্ক তোমার
তবু কত নির্দ্বিধায় এক বালার্ক মেঘের সাগরে ভাসলে…
তুমি কি জানো…..
ঠিক কতটা ব্যকুল হয় মন, কাউকে ভালোবাসলে?
তুমি তো ভালোবেসেই আকাশকে চাঁদ-জ্যোৎস্নায় করাও স্নান,
আমার কান্না… আমার আকুতি কখনো শুনেছো কি?
কখনো বাতাসে পেতেছো কি কান?আমি তবুও তোমাতেই অবগাহন করে যাবো —
জীবনের শেষ বিন্দু পর্যন্ত,
গোপন প্রাণে বেঁধেছি তোমাকে নিষিদ্ধ শরীর উৎসবে,
শিরা উপশিরা বেয়ে তুমি যে ছুঁয়ে আছো দেহ-মনের দিগন্ত। -
কবিতা- ঋতু’দের প্রেম
ঋতু’দের প্রেম
– সীমা চক্রবর্তীদগ্ধ জ্বলা গ্রীষ্ম দহনে রৌদ্র গলা তাপে,
দাবানলে জ্বললো বন, ভালোবাসার চাপে।সে দহনে পরলো খসে শীতল বৃষ্টি ফোঁটা,
অশনিপাতে বর্ষা বুকে প্রেমে শিউরে ওঠা।সেই শিহরণ লাগলো যখন কাশের সাদা বনে,
শিউলি তখন মনের কথা বললো জনে জনে।শিউলির প্রেম মিলিয়ে গেলো হিমেল হাওয়ার টানে,
আকাশ প্রদীপ উঠলো জ্বলে মন কেমনের গানে।সে গান গিয়ে ঝরিয়ে দিলো পর্ণমোচীর পাতা,
শীতের রোদে প্রেমের তখন খুনসুটিতে মাতা।জাফরানি রোদে রঙ লাগালো বসন্তসখার সুর,
পলাশের মন আগুন প্রেমে চুড়ান্ত ভাঙচুর। -
কবিতা- কাল কে দেখেছে
কাল কে দেখেছে
-সীমা চক্রবর্তীযদি কিছু দিতে চাও, কথা বা ব্যথা —
আজকেই দিয়ে ফেলো সব,
দ্রুত বেগে সময় আসছে কমে
চোখের পলকে ঝপঝপ…
কালের জন্য রেখোনা কোনো নিষিদ্ধ উৎসব।‘কাল’ বলে কিছু হয়না
যা আছে, সবই আজ… এই ক্ষণ…
যদি দাও শ্রাবণী সন্ধ্যার গান,
দু’হাত ভরে অজস্র রক্ত গোলাপ
অথবা উষ্ণ শরীরি আলোড়ন।
প্রেম দেবে…. দাও…
কাল কে দেখেছে…
অনেক ভুল যে নির্দ্বিধায় ঠোঁটে মেখেছে
অপবাদে তার কি ভয়…?
কালকের কথা ভেবে শুধু শুধু শরীর ক্ষয়…।কাল হয়তো দেখবে না তুমি… আমি….
থাকবে না দেওয়া নেওয়ার সালতামামি,
যদি চাও আজই মুছে দিতে পারো
আমাদের মাঝের দূরত্ব,
এই ক্ষণটুকুর এখন ভীষণ গুরুত্ব….
আর সব যাক —
আমাদের ন্যায় নীতি, ঘূণে ধরা পুরনো সংস্কার,
আজকের গভীরে বাঁচো
কাল বলে তুলে রেখোনা আর।লোকলজ্জা… চোখলজ্জা…. যাক… সব নিপাত যাক…
টুপ করে পাতার মতো খসে যাবো নিমেষেই
অশরীরী ছায়ার মতো ঝুলে আছি দুজনাই —
তার আগেই দিয়ে দাও….. যা দিতে চাও হামেশাই
শরীর যদি পুড়ে যায়… তো পুড়ুক
কাল বলে কিছু হয়না,
শুধু এই মুহূর্তটা থাক… -
কবিতা- প্রবঞ্চনা
প্রবঞ্চনা
– সীমা চক্রবর্তীআমার সেই প্রেমিক তুমি,
এখন জীবন সঙ্গী তুমি,
মিলাতে পারিনা আর,
তখন ছিলে অন্য রকম,
এখন যেন আর একরকম,
নদীর এপার ওপার।আমায় পাওয়ার ইচ্ছে সেদিন,
খুঁজতে বাহানা প্রতিটি দিন,
কারণে অকারণেই,
এলাম তোমার অঙ্গিকারে,
তোমার সাথে তোমার দ্বারে,
সেখানে তুমি নেই।একদিন যা লাগতো ভালো,
অন্ধ রাতও জ্বালতো আলো,
থেমেছে আলোর গতি,
দেখিয়ে ছিলে স্বপ্ন অনেক,
পূরণ যদি হতোও খানেক,
কিবা হতো ক্ষতি।আগের তুমি বদলে গেলে,
নতুন রূপে সামনে এলে,
সন্দিগ্ধ ভরা মন,
পুরনো তোমায় খুঁজি আমি,
প্রেমিক থেকে হয়েই স্বামী —
নেই তুমি সে-জন।শুনিনি তখন কোনো বারণ,
তোমাকেই হৃদে করে ধারণ,
অজান্তেই হলো ভুল,
কাউকে তাই যায়না বলা,
পাশে থেকেও একলা চলা,
যাচ্ছি গুনে মাশুল।বিশ্বাস করে ঠকে গেলাম,
অভাগী হয়ে রয়ে গেলাম,
মিথ্যে প্রবঞ্চনে,
এই কি ছিলো ললাট লিখন,
তপ্ত কড়ায় পুড়ি এখন,
যন্ত্রণারই সিঞ্চনে। -
কবিতা- পাষাণী
পাষাণী
– সীমা চক্রবর্তীযেখানে ভালোবাসা আছে
সেখানে তুমি নেই….
আমি তাই দু’হাতে ভরে
ভালোবাসার ফুল উপহার দেই
তোমার স্থির মনের আলিন্দে…
তারপরেও সব নিস্তব্ধ…
আমার ভালোবাসা ক্রমশ সাদা-কালো হয়ে যায়,
অবহেলায় পরে থাকে বিজন ঘরের কোণে….
তোমার নীরাবতার ভাষা আমি বুঝি না…যদিও ভালোবাসি তোমাকে…
তবুও কোনো রূপকথার জন্ম দিতে পারিনা –
সেই বন্দিনী রাজকন্যা
আর অচিনপুরের রাজপুত্র…
সোনার কাঠি…. রূপার কাঠি…
না, কোনোটাই না…
এতোটা গভীর কল্পনা আসেনা মননে…তাই, তোমার সান-বাঁধানো শীতল কবরে
প্রতিবারই রেখে আসি
একগুচ্ছ শিশির ভেজা রক্ত গোলাপ, তোমার জন্মদিনে…
প্রতিবারই বলি, —
পাষাণী অহল্যা, একবার নীরবতা ভাঙো….. -
কবিতা- ল্যাম্পপোস্ট
ল্যাম্পপোস্ট
– সীমা চক্রবর্তীএকা ল্যাম্পপোস্ট
আলো মেশা রাত
ফুটপাতে হাঁটে ভেজা পদ্য,
চেয়ে ফিরে যায়
রাত টুপটাপ
এই প্রেম ভেঙে যায় সদ্য।ঠোঁট নির্বাক
ঝরে নোনা জল
চোখ উদাসীন, পাতা বন্ধ,
নেই প্রশ্ন
ফাঁকা রাস্তায়
অনুভূতি হীন দ্বিধা দ্বন্দ্ব।ভাঙা আলপথ
জল থৈ থৈ
ছেঁড়া ডাইরির চুরি লব্ধ,
ওড়ে পল্লব
ঝড় ছুঁয়ে যায়
চলে ঝগড়া ফাটে শব্দ।ঘুম পস্তায়
চাঁদ টপকায়
মুছে যায় ফেরা রাস্তা,
বুকে স্বপ্ন
ভেঙে চুরমার
চোরা চাউনি বড় সস্তা।এ যে সত্যি
বড় সত্যি
ভেজা শিশিরে আঁকা পদ্য,
বাকি মিথ্যে
সব মিথ্যে
রাত নাগরিক চেনা গদ্য। -
কবিতা- সুখ
সুখ
– সীমা চক্রবর্তীকি এমন পূণ্য করেছো যে —
সুখ চাওয়ার স্পৃহা জাগে ?
তোমার বুকে একরোখা জলন্ত সূর্য
জ্বলছে আর জ্বালাচ্ছে সবুজের অংশ
ঘুমের চাদরে চোখ ঢেকে অনন্ত নিশিযাপন…সব কিছুই তো দৃশ্যমান—
তবু শূন্যতার খোঁজে পেরিয়ে এসেছো এক-একটা মাইলফলক,
যেখানে জন্ম মৃত্যু… মূল্যহীন।ডুবে যেতে যেতে খড়কুটো ভেবে আঁকড়েছ অন্বয়
এ ভাবে কি… সুখ পাবে…?
সমস্ত উত্তর তোমার বোধগম্যের বাইরে….
উন্মুক্ত চেতনার প্রবাহে তোমার স্বত্বা আদিকাল যাবৎ
শিকড় ছড়িয়েছে মহাশূন্য জুড়ে,
বুক ভরা ক্ষত নিয়েও মুখের হাসি অম্লান।নিকোটিনের ঠোঁটে লেগে থাকা চুম্বনের স্বর্গীয় সুখ
নিজস্ব সাধনায় খোঁজ তুমি তাকে
আকাশের ভোঁ কাট্টা ঘুড়ির মতোই বেসামাল!
ক্ষয় করা জীবন জয় করবে কি ভাবে ?
অদ্ভুত!
তার চেয়ে ভালো অপেক্ষা করা
নিভে আসা নক্ষত্রের ছায়ায়
মোম গলা পার্থিব সত্যে…
পেলেও পেতে পারো তোমার কাঙ্ক্ষিত মৃত্যুলোক। -
কবিতা- শাসন বেড়ি
শাসন বেড়ি
– সীমা চক্রবর্তীপ্রশ্ন করো যখন তখন, জানো কি কেমন আছি?
একলা ঘরে এখন থাকি
মৃত্যু’র কাছাকাছি।জানতে চাও এতো দুঃখ কোথা থেকে আসে?
দুঃখের বিষ পান করেছি
মিশেছে তাই শ্বাসে।শুনতে চাও কেমন করে হারালো সুখের ঘর?
কারণ ছাড়াই বাদল এলো
এলো বালির ঝড়।ভাবতে পারো, কি যন্ত্রণায় ঘুমেই চমকে উঠি?
দানব রূপী স্বপ্নরা আমায়
বানায় তাদের গুঠি।মাপতে চাও কতটা আঘাত, ভাঙে আমায় রোজ?
সেই সে যেদিন আমায় ফেলে
হলে তুমি নিখোঁজ।মানতে পারো মূল্য কি, এমন করে বাঁচা?
হাতে কড়া পায়ে বেড়ি
দমচাপা এক খাঁচা।হানবে কি আরও চাবুক আমার নগ্ন বুকে?
একটা কোপেই নামাও মাথা
যাক না সব চুকে। -
কবিতা- আর নয়
আর নয়
– সীমা চক্রবর্তীহতাশার কাব্য তো অনেক হলো,
অনেক শুনলাম বিমর্ষতার গান
ডাইরির পাতায়… কলমের আঁচড়ে ….
আর নয়….মৃত্যু ভয়ে ভীত নই আমি,
তবু কপালের গভীর ভাঁজে জমাট অন্ধকার,
প্রতিটি লোমকূপে দুশ্চিন্তার অগ্নি পাত।হৃদয়ে ধরতে চাই প্রত্যয়,
শেষের কবিতা এখনই নয়…
আরও কিছু যুগ হয়তো হেঁটে যেতে হবে,
নগ্ন পা’য়ে… আরও কিছু মরুপথ হবো পার।নতুন চেতনার কলবর হোক আবার শুরু
যেভাবে হয়ে ছিল সেদিন।
যত আছে আক্ষরিক নীরব চিৎকার
অন্ধকূপে দেবো বিসর্জন।মৃত্যুর মহড়া আর নয়…
আরও একবার ভাসতে চাই বিদেহী সুরের বাতাসে,
আতঙ্কের আবহে আত্মাহুতির চিতা জ্বালবো না আর।
একবার ছুঁয়ে দাও আমায়, হে অন্তর্যামী…
খুলে ফেলো কফিনের পেরেকগুলো
আরও একবার তোমার বরাভয় রূপ দেখতে চাই। -
কবিতা- চোখ পেতে রাখি
চোখ পেতে রাখি
– সীমা চক্রবর্তীএকদিন হারিয়ে যেতে হবে জানি
তবু হারিয়ে যেতেই ভয়…
ক্লান্ত হচ্ছে মন নিস্তব্ধতা কে সঙ্গী করে,
সব আশা আকাঙ্খার শেষে
এভাবেই কি বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ ভাসে ?বিছানা জুড়ে অনিদ্রা… শব্দহীন… ভীরু…
আমার পৃথিবী বড্ড ছন্নছাড়া,
আগুনে নেই কোনো শোক তাপ,
চৈতী হাওয়ায় উড়ে গেছে মনের ঠিকানা।
চেনা ছবি গুলো ঝাপসা কুয়াশায় মাখামাখি…
বৃদ্ধ চিন্তার জীবাশ্ম… পড়ে শুধু ছাই…।কেউ আসেনা তবু পলক পেতে রাখে চোখ
মায়া জাল আর ছত্রাকের উৎসে,
বেহালার ছরে এক বিমর্ষ বিকেলের হাতছানি
হৃদয়ের ছেঁড়া তন্ত্রীতে বন্দী স্বজন হারানোর যন্ত্রণা।নিরালা দুপুর, নিঝুম রাত চলে একই ছন্দে
তবু দেখা যায় দূরে এক ক্ষীণ আলো…
হয়তো আমারই প্রতীক্ষায়….