• কবিতা

    কবিতা- নারী

    নারী
    – অমরেশ কুমার

     

    নারী তুমি কার অধিকারে?
    সমাজের! পুরুষের! নাকি সন্তানের?
    সমাজ? সে তো কবেই তোমাকে সেবিকার
    তর্জমা লাগিয়ে অসতী করেছে।
    তাও, সমাজ তোমাকে চায় —
    তুমি না থাকলে ভক্ষকদের বাঁচাই যে দায় ।
    যারা তোমাকে এই কাজে টেনে নিয়ে এলো
    তারা যে একে একে এলো আর গেলো
    তাও, তাড়াই যে তোমাকে বলে —
    নারীর আবার জাত কি ?
    অচল সমাজের সচল পুতুল সেজে থাকা
    প্রকৃত পরিচয় নয় কি ?

    সমাজ,
    সে তো দেখেও না দেখার ছলনায় মুখ ফিরিয়ে থাকে
    যখন, তোমার রক্তমাখা দেহ ছড়িয়ে চারিদিকে
    ভাবছো ? সাংসারিক বন্ধনে আবদ্ধ জীবন
    স্বপ্ন , স্পর্শ , স্মৃতি সবকিছু ভুলিয়ে
    বরণডালা সাজায়ে এ পুরুষ হৃদয়ে পূজিত হবে–
    স্বপ্ন ? সে তো মায়া !
    স্পর্শ ? সে তো অনুশোচনা !
    স্মৃতি ? সে তো বেদনা হয়ে ফিরে আসে
    বারে বারে হৃদমাঝারে ।
    আর , এই সংসার জীবনের স্মৃতির ঘেরা স্পর্শের মায়া
    দিবাস্বপ্ন স্বরূপ মায়াবী রূপে
    জোৎস্নার রাতের আলোর মতো ছড়িয়ে পড়ে হৃদয় জুড়ে ।

    পুরুষ !
    আসবে ফিরে ? নাকি এসেছে কখনও ?
    কত পুরুষ , রোজ রাতে যায় আর আসে
    কখনো কি কেউ ভালোবেসে বসেছে পাশে ?
    নাকি! তারাও খুঁজে চলে —-
    সেই রূপ, সেই স্মৃতি ,সেই স্পর্শের টান
    মাঠ-ঘাট জীবনের কত পথ সবকিছু ফেলে
    ছুটে আসে স্মৃতি ঘেরা বন্ধন ভুলতে ,
    আবেগ ঘন মেঘ হয়ে, স্মৃতির বন্ধনে ঝরে পরে বর্ষার বারি হয়ে —
    তুমি কি পারলে, সেই স্মৃতিয় স্মৃতি মেলাতে
    নাকি, চোরা নদীর স্রোতের ন্যায় স্মৃতির বেদনায়
    কল কল করে বইলে—

    ভোগ্য পণ্যের ভাগী হয়ে যেতেই হয় রয়ে
    তাইতো তানপুরারই তারের টানে ফকির কহে–
    “জীবের যাওয়া আসা নদীর ভিতর, স্বর্গ নরক দুঃখ ক্লেশ,
    যত লোভী কামি যায় রসাতল, দেখে নদীর পরিবেশ ” ।

    বৃদ্ধকালে বৃদ্ধাশ্রমে, জোটে না ঘরে স্থান
    তোমার কুঁচকে পড়া মুখের ভাঁজ,
    ছেলের ঘরে বাড়ায় না আর, সৌন্দর্যের মান
    ছোটবেলায় থাকতো ছেলে, আঁচল তলে
    ডাকতো, মা, মা বলে
    হাজার হাজার বায়না করতো
    উঠতো চড়ে কোলে ;
    মা ডাক, এখন হয়েছে বাসি —-
    তুমি যে আজ, ছেলের বাড়ির, কাজের মাসি ।
    তাও, হাজার দুঃখ কষ্ট বুকে চেপে, হাসো তুমি
    ছেলের হাসি দেখবে বলে;
    খোকা আমার বাড়ি ফিরে, খেলো কিনা ,
    জিজ্ঞাসা করতে তা যাওনা ভুলে ।

    তাও!
    তুমি ভাবছো, তুমি কার?
    তুমি যে সামাজিক
    তুমি যে বিশ্বের চালিকাশক্তি
    তুমি যে মন্ডপের কল্পিত পূজিত মূর্তি
    সমাজের তুমি সেবিকা
    পুরুষের তুমি কাঙ্খিত সতী
    সন্তানের তুমি ভালোবাসা
    তাইতো, তুমি মাতৃত্বের ভালোবাসায় মোড়া
    অসীম শক্তির অধিকারিণী দেবী।

  • কবিতা

    কবিতা- গতির অবসান

    গতির অবসান
    – অমরেশ কুমার

     

    কঠোর, রুক্ষ সমাজ, গতিবিহীন জীবন
    রুদ্ধশ্বাসে ছুটে চলা যৌবনের
    পিছু পিছু হেসে ছোটে মরণ;
    লুকোচুরি লুকিয়ে খেলা,
    খেলছে জীবন, খেলছে মরণ
    খেলছে প্রাণের খেলা দু’বেলা।

    অর্থ, সম্পদ, রূপ, যৌবন
    সব যে গতিশীল ,
    একদিন, গতি কমবে..
    সব কিছুর গতি শূণ্যে নামবে
    আর ! শুধু পিছনে ছোটা মরন ,
    সামনে আসবে..
    অট্টহাসিতে ফেটে পড়বে;
    চারিদিকে শুধু ক্রন্দন- ক্রন্দন, আর ক্রন্দন
    অশ্রু মাঝে নোনা জলের ঝর্ণা নামবে।

    বাস্তবমুখী সবকিছু,
    ঘুরছে পৃথিবী, ঘুরছে সমাজ,
    ঘুরছি আমি, ঘুরছো তুমি;
    সব ঘূর্ণনের অবসান…
    শ্মশানে কিংবা কবরে;
    কম্পিত হবে, ক্রন্দন তুলে,
    দাউ! দাউ! করে,
    শুধু ঘুরবে..
    বিশ্ব মায়ের বক্ষভূমি ।।

  • কবিতা

    কবিতা- বসন্তের দিনে

    বসন্তের দিনে
    – অমরেশ কুমার

     

    কখনো তোমার বসন্তে আমাকে ডেকো,আমি বসন্তের কোকিল হব..
    ভুলে যেও না তুমি, ডাকতে আমায়, আমি যে মিষ্টি সুরে
    কুহু কুহু গান শোনাবো। কখনো তোমার মনের মাঝে একটু জায়গা দিও
    স্বপ্নে আমি সেথা, নতুন করে ঘর সাজাবো,
    রাখবো ধরে মনের মাঝে, স্মৃতির সুতোয় বেঁধে।।

    যদি না ডাকো বসন্তের দিনে, ডেকো আমায়… ঝিরঝিরে বরষায়।
    ছাতাটা উড়িয়ে দিয়ে একই সাথে তোমার ওড়নার নিচে ভিজবো ।।
    হাতে হাত রেখে হেঁটে চলা আর মুখে চুপি চুপি বলা
    স্মৃতিগুলো যাক ধুয়ে এ ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে।।
    সত্যিই মনোরম! মনোরম বিধাতার সৃষ্টি
    প্রেম-ভালোবাসা, তুমি-আমি, আর আজ এই বৃষ্টি ।
    সব যেন আসে ফিরে, সবকিছু ঘুরে ফিরে;
    সত্যিই লীলার জগৎ মায়াময়।।
    যে বসন্ত গেছে চলে, সেকি এলো বর্ষার দিনে ফিরে?

    আজ তুমি বসন্তে পুষ্পটিত ফুল ,
    তুমি বিকশিত হয়ে ফুটিয়েছ নতুন মুকুল ;
    তুমিও ফিরে পেতে চাও সেই বসন্তের দিনগুলি
    তুমিও ফিরে পেতে চাও সেই বর্ষায় ভেজা স্মৃতিগুলি
    কিন্তু, হায়! বাস্তব বড় কঠিন, বাস্তব বড় কঠোর
    মুকুলের টানে, বিকশিত হয়ে রয়ে যেতে হয় জঠরে ।

    আমিও স্মৃতিকে পিছনে ফেলে খুঁজে পেয়েছি কুঁড়ি
    ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে লুকায়ে মন চুরি
    ভিজে ওড়নার গন্ধেতে সেই বাস্তব প্রতিশ্রুতি
    “ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ যে বসন্ত”।।

  • কবিতা

    কবিতা-“কতটা পথ চললে পথিক?”

    “কতটা পথ চললে পথিক?”
    -অমরেশ কুমার

     

    বাস্তবতা দর্শক আর আমি পথিক,
    আমি ছুটছি, আর? সে দেখছে
    দিনের শেষে শুধায়
    “কতটা পথ চললে পথিক ?”

    ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত শরীরটাকে
    আগলে রাখে আত্মীয় পরিজন
    তারাই আবার সযত্নে
    প্রাণশক্তি ঢেলে দিয়ে,পথিক করে তোলে।

    কত পথ চললে পথিক? কত পথ আছে বাকি?
    নাকি, মরীচিকার ন্যয় রাস্তাও দিচ্ছে ফাঁকি?
    ধুলো মাখা ধুলোর পথে
    কিংবা, রাজপ্রাসাদের ফুটপাতে
    দিনের শেষে, বাড়ি ফেরার তাড়া;
    সকাল হলে আবার শুরু জীবন যুদ্ধে লড়া।
    ভাবছো পথিক চললে তুমি, চললে অনেক পথ
    ঘোড়ার গাড়ির সারথি হয়ে চালিয়ে নিয়ে রথ।

    হাসছে দেখো বিশ্বকর্মা কর্মস্থলে নেমে
    জীবন যুদ্ধে জয়ী হবে হাসির পাত্র জেনে
    চলছি দেখো, চলছি আমি,চলছি আপন ভোলা মনে
    অলিগলি হেঁটে চলি, আপন মনে আপনা বলি
    সহস্রাধিক ভিড়ের মাঝে,
    কে বা কাকে রাখে মনের মাঝে?
    সবাই ছুটে সবার কাজে, কেউ বা লাজে
    কেউবা নতুন রূপে সাজে
    সৃষ্টিকর্তা থাকছে সাথে, যাত্রী সেজে আপন বেশে
    কেমন ভাবে থাকি মোরা সারথী হয়ে দিনের শেষে
    বেলা শেষে, মিষ্টি সুরে কহেন হেসে,
    ছুটতে রেসে রথের চাকা, গেল যে বসে;
    ব্যঙ্গ শব্দ অট্টহাসি যমরাজের ঘরে
    পাপ পূর্ণ বিচার হবে আসছে ধেয়ে কানে
    মুখে বাঁশি মিষ্টি হাসি ,
    আঘাত লাগে প্রাণে।

    হাসছি দেখো, হাসছি আমি
    হাসিগুলি মুখের হাসি, মনের হাসি নয়
    হৃদয়েতে লালচে রঙের নোনতা জলে
    কষ্টগুলো বাড়ছে ভারী বোঝার উপায় নাই;
    আবেগপূর্ণ চূর্ণবিচূর্ণ শূন্য মনে
    সর্ব শরীর স্পন্দনেতে ঢেউ তুলে
    লালচে রঙের তরলগুলো যাত্রা পথের যাত্রী হয়ে
    পথ চলতে যাবে ভুলে;
    সাঙ্গ হবে ভবলীলা, সাঙ্গ হবে যাত্রাপথ
    অন্য পথিক আসবে পথে, বসবে চেপে রথে
    শক্ত হাতে ধরে লাগাম ছুটিয়ে যাবে রথ।

    আমি! আমি যে পথিক
    আমার বিরাম কোথায় ?

  • কবিতা

    কবিতা- বিদায় বেদনা

    বিদায় বেদনা
    -অমরেশ কুমার

    মাগো! তুমি বিদায় নিলে
    অশ্রু জলে ভাসিয়ে দিয়ে
    মাগো! তুমি কি কষ্টে ছিলে?
    তবে, কেনই গেলে, শেষ কথা না বলে;
    মনের মাঝে স্রোতের টানে
    স্মৃতি মাখা দিনগুলো সব উতলা হয়ে
    করছে আঘাত শান্ত প্রাণে
    রাতে-দিনে অশ্রু বিন্দু পড়ছে ঝরে, যাচ্ছে উবে।

    হঠাৎ হঠাৎ নিদ্রাকালে
    ঘুম ভাঙে মা, তোমার কোলে
    চমকে জাগি অন্ধকারে
    চেয়ে থাকি বন্ধ দুয়ারে,
    ঘুম আসেনা রাত্রিকালে
    স্বপ্নে ভাসে,ছায়ায় ঘেরা মায়ার জালে।

    চিরকালই অন্তরালে ছিলে তুমি
    আজ বুঝেছি, কদর কত মাতৃভূমির।

    মাতৃবক্ষে লালন ক্ষেত্র বিচরণের ভূমি
    বাল্যকালে ঘরছাড়া মা,
    অর্থাদায়ে দূরে থাকা, থাকতে কাছে মানা
    চিরকালই দূরেই ছিলাম, আজও আছি দূরে
    বুঝিনি তখন, আজ বুঝেছি, দুঃখ কত…
    পাওনি কাছে কোলের ছেলে তুমি।

    অগ্নি কক্ষে জ্বলছ তুমি, জ্বলছে মোদের বুক
    দহন তাপে ঢাকছি মোরা হাতের মাঝে মুখ,
    সর্ব শরীর ছাই ভস্ম মাংসপিণ্ড হাতে
    রক্ত মাংস মাটিই মিশে..
    গঙ্গা জলে অশ্রু মেশে অন্ধকারের রাতে।
    শেষ কথা মা হয়নি আমার
    হয়নি শোনা, বাবা, আসবি কবে ঘরে?
    আজ ঘরে ঘরে খুঁজে বেড়ায়,
    সেই হাসি মাখা স্বরে…
    “বাবা তুই এসেছিস?”
    স্তব্ধ মুখে মাথা নত,চুঁইয়ে পড়ে চোখের জল
    যেন ঝরছে টোপে, মাতৃস্নেহের
    ভালোবাসার ছল।

  • কবিতা

    কবিতা- তোমার চোখে আমার পৃথিবী

    তোমার চোখে আমার পৃথিবী
    -অমরেশ কুমার

     

    তোমার চোখে আমার স্বপ্ন
    তোমার নিঃশ্বাসে আমার প্রাপ্তি
    হুম, ভালোবাসি, না না আবেগ নয়,
    সবটুকু দিয়েই;
    থাকতে চাই, তোমার ভালোমন্দ,
    সবকিছুই আপন করে নিয়ে;
    ছুঁতে চেয়েছি মন, ছুঁতে চেয়েছি,
    তোমার না বলা অনুভূতি গুলি;
    চাই সবটুকু পেতে, চাই তোমার..
    মুষ্টিবদ্ধ বক্ষে আবদ্ধ থাকতে।

    চোখে, চোখ রেখে; বন্ধ চোখে
    কল্পনায় তোমার মনেতে প্রবেশ-
    বাস্তব যেন আজ স্বপ্নের মতো,
    বর্ণময় রঙিন ছদ্মবেশী ;
    আজ আমি দিলাম খুলে, মনের জানালা
    চলুক সেখানে, তোমার রঙিন মনের আনাগোনা।।

  • কবিতা

    কবিতা- সব বিবাহ কি সুখের?

    সব বিবাহ কি সুখের ?
    -অমরেশ কুমার

     

    সব বিবাহ কি সুখের?
    কিছুও তো হয় মনের অসুখে-

    সর্ব সমর্থনে শুভ দৃষ্টি
    চোখে জল, মুখে হাসি
    তাও, বলে সবাই, মেয়ের যে আজ
    লাগছে ভারী মিষ্টি।

    জীবনের আনন্দ, সুখ
    নিক্ষেপ করা অগ্নিসাক্ষীতে
    হাতে হাত রেখে,
    নীরবে সব কিছু সয়ে যেতে হবে সাথে—
    যে বন্ধনে নেই মনের বাঁধন,
    তা ভাঙতে কতক্ষণ?
    বিবাহ বন্ধন মানেই কি চারহাত?
    নাকি কাটানো একই সাথে রাত?

    এ যে, স্বীকৃতিতে সতীত্ব হরণ
    নারী সমাজ করেছে বরণ।

  • প্রবন্ধ

    প্রবন্ধ- ” মানবিকতার ধ্রুবক “

    ” মানবিকতার ধ্রুবক “
    – অমরেশ কুমার

     

    কখনো কখনো অর্থের কাছে সামর্থ্যের পরাজয়, কখনো অর্থ মানুষ হতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, কখনো প্রয়োজনে সেই অর্থ মানুষ চিনতে শেখায়।
    আর যখন অর্থের কাছে সামর্থ্যের জয় হয় তখন চারিদিকে জয় জয়কার রব । ব্যাপারটা অনেকটাই শিক্ষা আর অশিক্ষার লড়াই, বলা যেতে পারে শিক্ষিত আর অশিক্ষিতর সংক্ষিপ্ত পরিচয় । কেননা গল্পের সারমর্ম তো সবার জানা-” ‘ওই যাবি?’ ‘কোথায় যাবেন বাবু’।

    আরো গুছিয়ে বললে বলা যায় , শিক্ষাই শিক্ষিতের পরিচয় নয় , শিক্ষাই একমাত্র যোগ্য মানুষের নির্ধারক নয় , অশিক্ষিতও শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারে যদি মানবতাবোধ বজায় থাকে । তেমনি ধনকুবের হলেই লক্ষ্মীর বরপুত্ৰ হবে এমনটা নয়, গাধা ঘাড়ে করে লক্ষাধিক অর্থ বহন করা মানে অর্থের মালিক হয়ে যায় না । আর অর্থের মাধ্যমে মনুষ্যত্ব ক্রয় বিক্রয়ও করা যায় না ; হ্যাঁ , মানুষ কেনা যায় বটে তবে ‘বোধ’ কেনার মতো অর্থ সারাজীবন ধরে পরিশ্রম করলেও জমানো সম্ভবপর নয় , আর সে ‘বোধ’ যেদিন কিনতে পারবেন সেদিন অবশ্যই ‘বোধগম্য’ হবেন তার জন্য ধনকুবের হতে লাগে না । যার মনুষ্যত্ববোধ নেই তার কাছে অর্থ থেকে লাভ কি ? অর্থের পাহাড়ে বসে থেকেও গাধার মতো মাল বহন করছি মনে হওয়াটা অবাঞ্চিত নয় ।

    শিক্ষিত বা অশিক্ষিত , ধনকুবের বা দিনমজুর যাই হোন না কেন এগুলির কোনোটিই আপনার পরিচয়ের চূড়ান্ত মাপকাঠি বলা বাঞ্ছনীয় নয় , মানুষের মানবিকতার ধ্রুবক নির্ধারিত হয় মনুষত্ববোধের উপর । এই ‘ধ্রুবক’ পেন্ডুলামের মতো দোদুল্যমান । কারো কাছে বোধগম্য কারো কাছে অবোধগম্য হয়ে কখনো সুগম কখনো দুর্গম হয়ে ওঠে ; সুগম হতে পারলেই প্রকাশ —- প্রকৃত মানুষের ।।

  • প্রবন্ধ

    প্রবন্ধ- মুখ্যমন্ত্রী , আপনি কি শুনছেন ?

    মুখ্যমন্ত্রী , আপনি কি শুনছেন ?
    – অমরেশ কুমার

     

    মুখ্যমন্ত্রী , আপনি কি শুনছেন ?
    আমরা, শিক্ষিত যুবসমাজ বলছি ……
    মুখ্যমন্ত্রী , আপনার আন্দোলনে আমরাই ছিলাম আপনার পাশে, মানে আমাদের বাপ-কাকারা; তারাই রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করে আপনাকে সিংহাসনে বসিয়েছে। কেননা তাদের লক্ষ্য ছিল পরিবর্তন, উদ্দেশ্য ছিল কর্মসংস্থান ।

    মুখ্যমন্ত্রী, মনে আছে তো সে সব কথা ? গ্রাম গঞ্জের প্রতিটি বাবা মা বলতেন, “আমরা তো বেঁচে আছি কুকুরের মতো, যে দিন জোটে সে দিন খাই; তাই আমার রক্ত ঘামে পরিবর্তন হয় হোক তবু আমার সন্তান যেন কারো কাছে হাত না পাতে, তাই দরকার সরকারের পরিবর্তন, দরকার কর্মসংস্থান।”

    মুখ্যমন্ত্রী, ভুলে গেছেন নিশ্চয় সেদিনের রক্তঝরানোর ইতিহাস, নাকি ভোলার চেষ্টা করছেন? ভাবছেন মানুষ সব ভুলে যাবে! ভাবছেন ইতিহাস হয়ে যাবে;
    কিন্তু, ইতিহাস ভবিষৎ বানায়, ইতিহাস অতীত লড়াইকে বাস্তবে রূপ দেয়।
    আমরা শিক্ষিত যুবসমাজ, আমাদের শরীরেও বইছে সেই একই আন্দোলের রক্ত।

    আপনার উন্নয়ন হলো সস্তার পাইয়ে দেওয়ার দু’টাকার রাজনীতি, যে উন্নয়ন দেখতে রাস্তায় নামতে হয়। আপনার উন্নয়ন অনুদান, আপনার উন্নয়ন বিভাজন, আপনার উন্নয়ন রোগে জরাজীর্ণ রাজ্যের মানচিত্রে বাহারি রং লাগিয়ে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা। হাসপাতাল আছে ডাক্তার নেই, স্কুল আছে শিক্ষক নেই, সরকারি দপ্তর আছে আধিকারিক নেই; কলিংপঙ থেকে কোলকাতা বিজ্ঞাপনে বাংলা ঢাকা। নবান্ন থেকে কর্পোরেশন ভোট ব্যাংকে দু’টাকায় রেশন। পিতার রক্ত ঝরানো ঘামের মূল্য চক্রান্তে ছেলেকেও দাঁড়াতে হচ্ছে অনুদানের লাইনে।

    কিন্তু, আমাদের বাপ- কাকারা ছিলতো অশিক্ষিত, তাও লড়াই চালিয়ে গিয়েছে; সেই একই লাইনে আপনি শিক্ষিত হয়ে দাঁড়িয়ে। পিতার লড়াই ছিল কর্মসংস্থান এর জন্য, পারেনি তা এনে দিতে কিন্তু আপনাকে করেছে শিক্ষিত। তাইতো আপনার লড়াই এবং দায়িত্ব আরো বেশি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। প্রাথমিক উন্নয়ন বলতে বোঝাই শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসুনিশ্চয়তা, যাতে সমাজে মানুষ সুষ্ঠ ভাবে জীবনযাপন করতে পারে। যা এখনো মুখ্যমন্ত্রীর কাছ দিয়ে আশা করা মানে “সোনার পাথর বাটি” আশা করা। তাই সময় হয়েছে যুব সমাজের অধিকার যুব সমাজের বুঝে নেওয়ার ।।

    ( শিক্ষিত বেকার যুবসমাজের আমিও একজন ; আমি অমরেশ কুমার )

  • কবিতা

    কবিতা- ছুটি

    ছুটি
    -অমরেশ কুমার

     

    মাগো ! আমার ছুটি হলো দাওগো বিদায়
    তবে আমি যাই ।
    যাবার কালে ডাকবো মা, মা বলে
    সাড়া যেন পাই ।।

    মোর মুখপানে চেয়ে ছলছল নয়নে
    বাড়িও দুহাত খানি
    চুমু এঁকে দিও বুকে টেনে নিও
    মোর দেহ খানি ।।

    মাগো ! প্রণাম নিও এবার আমি যাই
    হয়েছে আমার ছুটি
    বেলা যে বয়ে যায় দিন শেষ প্রায়
    যেতে হবে গুটি গুটি ।।

    স্বপ্ন মাঝে আসবো ফিরে তোমারই শুন্য হৃদয় নীড়ে
    ছেড়োনা মা , তখন আমায়
    স্বপ্ন ভাঙার সাথে সাথে হারিয়ে যাবো গভীর রাতে
    ভুলবো না মা আমি তোমায়।।

    হঠাৎ রাতে উঠবে জেগে খুঁজবে আমায় আঁচল তুলে
    ডাকবে তখন খোকা বলে
    হাসবো আমি খিল খিলিয়ে।

    তুমি, দেখবে চেয়ে অবাক হয়ে
    পাবে না সাড়া আমার কাছে
    তবু আমি আছি তোমারই পাছে
    আদর করে বলবে, আয় খোকা আয় আমার বুকে
    ঘুমো তুই মনের সুখে ।।

You cannot copy content of this page