-
কবিতা- যেদিন রবো না
।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।
যেদিন রবো না
-অমর দাসযেদিন রবো না পৃথ্বী মাঝে আমি যে তোমার
সেদিন এই পৃথিবীটা তোমার হবে যে অন্ধকার ।
যে প্রেম দিয়েছো মোরে আর না লভিবো আমি।
যে প্রেম দিয়েছি তোমায় সে যে ফুরাবে জানি।
কত দুঃখ দিয়েছি তোমায় আর কত যে বেদনা,
তবু তুমি মোরে দিয়েছো সুখ দাওনি তো যন্ত্রণা ।
সারা জীবন মুখ বুজে সহেছো কত ক্লেশ সীমাহীন,
স্নিগ্ধ শীতল স্বভাবে কর্ম করেছো তুমি বিরামহীন।
রোগগ্রস্ত হতভাগ্য মোরে তুমি দিয়েছো যে সাহারা,
তুমিই তো হয়েছো মোর বন্ধু যখন আমি দিশেহারা।
কখনো আমি হয়েছি তোমার দিশা তুমি যে আমার,
রবোনা যেদিন বিশ্বমাঝে এ পৃথিবী মোর অন্ধকার।
কত ভালোবাসা দিয়েছি আমি মোর সন্তানের তরে।
শুনবো না “বাবা” ডাক যবে রবোনা ধরণী পরে।
জন্ম মৃত্যুর এ যে কি খেলা কাহারো তো মুক্তি নাই
জন্ম মৃত্যুর মাঝে দেখো মোদের কোথাও নেই ঠাঁই।
জানি আমি অনেক অভিমান আছে আমার উপরে
লয়ে যাবো সাথে সব অভিমান মুক্ত করি তোমারে।
যতো সুখ আছে আমার সব দিয়ে যাবো তোমারে।
যতো দুঃখ দিয়েছি তোমায় ফিরিয়ে দাও মোরে।
শিক্ষা, দিক্ষা, প্রেম-প্রীতি,ভালোবাসা,আর সংস্কার
পড়ে রবে সবই মোর যবে চলে যাবো মরনের ওপার।
আমার শৈশব, কৈশোর আর আমার জীবন যৌবন,
আজ হয়েছে ইতিহাস ,নেই যে যৌবনের কলতান ।
চারিদিকে শুধু শুনিতে যে পাই আহ্বান ওপারে ।
যেতে হবে ওপারে তোমায় আমায় বিধাতার বিচারে।
যাবার বেলায় শুধু বলে যাই কখনো ভুলোনা মোরে।
তোমার স্মৃতি লয়ে চলে যাবো আমি মরনের ওপারে। -
কবিতা- কবির হৃদয়ের কথা
।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।
কবির হৃদয়ের কথা
-অমর দাসআমি কবি হবো শোষিত নিপীড়িতের ,
আমি কবি হবো যত গৃহহারা পথিকের।
বেকার যুবক পথহারা যতো আছে
হবো কবি আমি তাদের তরে।
আমি রচিব কাব্য আজ তাদের জন্য,
যারা আজো থাকে নিরন্ন ।
আমি কবি হবো ওদের জন্য ,
যারা পায়না শিক্ষার আলো সামান্য।
যারা পায়না চিকিৎসা বাঁচার জন্য
অসহায় মানুষ যারা চিকিৎসার লাগি
ঘোরে দ্বারে দ্বারে,চিৎকার করে কাঁদে,
তবু তো পায়না কোনো চিকিৎসা,
অকালে ঝড়ে পড়ে সে প্রাণ পথের ধারে।
ধর্ষিতার চোখের জলে আমি লিখি কাব্য,
আমার কলমে জ্বলে প্রতিবাদের আগুন।
আমার কবিতায় কাঁপন ধরাতে চাই
যারা অসহায় নারী কে করে পণ্য।
আমি কবি হবো তাহাদের লাগি
যারা স্বাধীনতা ছিনিয়া আনিল দেশের তরে।
আমি হতে চাই কবি শুধু সাম্যের জন্য ।
স্বাধীনতা রক্ষার তরে যারা দিলো রক্ত,
তাদের রক্তে রচিতে চাই দেশপ্রেমের কাব্য।
যারা দেশ কে হিন্দু মুসলিমুসলিমে করে ভাগ,
আমার কলমে গর্জে ওঠে তাদের সর্বনাশ।
আমি কবি হবো অসহায় কৃষকের ,
আমি কবি প্রেমিক, কবি আমি প্রেমের ,
আমি রচিতে চাই প্রেমিকার কবিতা,
আমার কাব্যের লেখনীর প্রেমের ধারায়।
আমি কবি সন্তানের তরে, পত্নীর লাগি।
আমি কবি হবো বন্ধুর প্রেমের হৃদয়ে
বন্ধুর প্রেমরসে সিক্ত কলমে লিখে যাবো কাব্য।
আমি হবো সবার কবি হবো সকলের তরে। -
কবিতা- বিবেকের ঘুম নেই
।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ।।
বিবেকের ঘুম নেই
-অমর দাসআমি বিবেক, হ্যাঁ আমার নাম বিবেক।
সারা পৃথিবীর মানুষ আমাকে এই নামেই চেনে।
আমি হাজার হাজার বছর ধরে ঘুমাতে পারি না।
যখনি আমি চোখ বুজি, দেখতে পাই আমার দেশ,
আমার পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের ভুখা মুখগুলি
চিৎকার করে বলছে “আমাদের খেতে দাও,
আমরা ক্ষুধার্ত,আমাদের পড়ণে বস্ত্র নেই, বস্ত্র দাও”।
আমার ঘুম ভেঙে যায়, আমার আর ঘুম আসে না।
কারণ আমার নাম যে বিবেক, হাজারো বছর ধরে
আমি ঘুমাতে পারিনা। হয়তো আগামী হাজার বছরেও
আমি ঘুমাতে পারবো না। আমি চোখ বুজলে দেখি,
রাস্তার দুধারে, রেল লাইনের পাশে, নদীর কিনারে
বনে জঙ্গলে আজো মানুষ ঝুপড়িতে বাস করছে।
তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই।ঝড়,বৃষ্টি বন্যায়
তারা ভেসে যায়, তাদের বাঁচাবার কেউ নেই। আছে
এই অসহায় মানুষগুলোর জন্য বক্তৃতার ফুলঝুরি।
আবার আমার ঘুম ভেঙে যায়।রাত প্রায় শেষের দিকে,
না ঘুম আমার হলোনা, আমি যে অভিশপ্ত বিবেক।
আবার চোখ বুজলাম, আমি দেখতে পাচ্ছি অসহায়
কোটি কোটি বেকার শিক্ষিত যুবক পৃথিবীর একপ্রান্ত
থেকে অন্নপ্রান্তে ছুটে চলেছে একটা চাকরীর আশায়।
তারা চিৎকার করে বলছে “আমাদের চাকরী দাও”।
আমি চোখবুজে দেখতে পাই চাকরীর জন্য ওরা
বিক্ষোভ আন্দোলন করছে, পুলিশের লাঠির ঘায়ে
ওরা রক্তাক্ত হচ্ছে, মরছে, তবুও ওদের চাকরী চাই।
না কেউ এই কর্মহীন অসহায় বেকার যুবকদের দুঃখ
যন্ত্রনা বুঝবে না, কেউ ওদের চাকরী দেবেনা,ওদের
আছে যোজ্ঞতা কিন্তু নেই চাকরী নেই রোজগার,
আমি চোক বুজলে দেখি , নেতারা ওদের কাছে
ভাষন দিচ্ছে কিন্তু চাকরী দিচ্ছে না,মহামারীতে আমার
দেশের কোটি কোটি যুবকের চাকরী গেছে। ওরা কেউ
নিজের দেশের শ্রমিক কেউ বা পরিযায়ী শ্রমিক।
মহামারীতে রেল বন্ধ, সড়ক বন্ধ,পায়ে হেঁটেই
নিজের রাজ্যে পারি দিয়েছে,রেল লাইনের উপরেই
ক্লান্ত হয়ে ওরা ঘুমিয়ে পড়লো। একটা ট্রেন ওদের
সামনে এসে পড়লো, ক্লান্ত দেহগুলির ওপর দিয়েই
ঐ জল্লাদ ট্রেনটা চলে গেলো। দেখলাম অনেক গুলো
শ্রমিকের মৃত দেহ রেল লাইনে রক্তাক্ত ,বিভৎস
অবস্থায় পড়ে আছে, একটা শ্মশানের নিস্তব্ধতা।
এবার শেষবারের মতো আমার ঘুম ভেঙে গেলো।
আমি বোধহয় আর কোনদিন ঘুমাতে পারবো না।
কারণ নাম যে আমার বিবেক, জাগরুক বিবেক,
যতদিন সারা বিশ্ব জুড়ে শোষন বঞ্চনা থাকবে,আমি
ঘুমাতে পারবো না, কারণ আমি যে জাগ্রত বিবেক। -
কবিতা- আমি আর তুমি
।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ।।
আমি আর তুমি
-অমর দাসযদি তুমি হও বৃষ্টি আমি আকাশ হতে পারি,
যবে মোর হৃদয় আকাশ হতে ঝড়ে প্রেম বারি।
যদি নদী হও তুমি আমি সাগর হতে পারি।
তব প্রেম নদী মম প্রেমসাগরে পড়ে আছাড়ি।
যদি তুমি হও শিশিরবিন্দু আমি সবুজ দূর্বাদল,
তোমার প্রেম শিশিরবিন্দু ঝড়িছে অবিচল।
যদি তুমি পাহাড়ী ঝরণা রুক্ষ পাহাড় আমি,
তোমার প্রেমের ঝরণা ধারায় স্নিগ্ধ হলাম আমি।
তুমি আমার প্রকৃতি হলে আমি যে প্রেম তোমার।
প্রকৃতি-প্রেমের মহামিলন হলো মোদের ভালোবাসার।
আমি তোমার সঙ্গীত আর আমার সুর যে তুমি।
সুর-সঙ্গীতের ঐক্যতানে বাঁধা মোদের প্রেম কাহিনী।
তুমি আমার কবিতা যদি আমি তো ছন্দ তোমার,
তোমার আমার মিলনে রচিব কাহিনী ভালোবাসার।
আমি তোমার মরুভূমি যদি তুমি আমার মরুদ্যান ,
তোমার স্নিগ্ধ স্পর্শে সিক্ত হোক আমার সুষ্ক প্রাণ।
আমি রাতের আঁধার তুমি মোর রবির আলো,
ঘুচাও আঁধার জীবনে মোর জ্বালো আলো জ্বালো।
আমি তোমার প্রেম , তুমি যে প্রেয়সী আমার ,
আমাদের প্রেমে গড়িব আমরা পবিত্র স্বর্গদ্বার।
প্রেমসাগরে ভাসায়েছি নাও চলো প্রেমনগরে ,
তুমি আমার কাণ্ডারী এই গহিণ প্রেম সাগরে।
তুমি আমার সাহিত্য জীবনে কাব্য প্রেমের ধারা,
তুমি আমার কাব্য সৃষ্টি নতুন সাহিত্য ধারা।
আমি যদি প্রতিবাদী তুমি প্রতিবাদের ভাষা,
আমাদের মিলনে মোদের জাগ্রত ভালোবাসা।
আমি যদি আঁধার রাত্রি তুমি যে আমার স্বপ্ন,
বিনিদ্র রজনী আমি তোমার স্বপ্নে নিমগ্ন।
আমি তোমার জীবন যদি তুমি মোর জীবনধারা
মোদের হৃদয়ে বহিছে এক প্রেমের অমৃতধারা।