• কবিতা

    কবিতা- বিসর্গ

    বিসর্গ

    -অমল দাস

     

     

     

    বর্গীদের গিলে অবশেষ

               -এই যে এই পিচ-মোড়া পথ,   

    এই দিকে সেই প্রান্ত -ওই দিকে ওই..

    এ পথেরই কোনও এক কোণে-

    বনানী ত্যাগী অশ্বত্থের বিমর্ষ ভাঙা পোড়া ঘর।   

    তুমি প্রায়ই চুপি-চুপি আসো আর চুপি-চুপি যাও!

    হয়তো পরিখায় ঘেরা জীর্ণ দূর্গের ভিতর-

    অন্ধকার কূপে মনে মনে হাসো! 

    যে হাসিতে নিভে যায় বৈকুণ্ঠেরও তৈলাক্ত শিখা।  

    বিদ্রূপের জলাশয়ে থৈ-থৈ জল  – উপচে পড়ে..

    অথচ ভুলোসাথী -রোজ জল ঢেলে তৃষ্ণার পাথরে

    ধুয়ে নিতে পারতে বিগত শতাব্দীর ভগ্নস্তূপ শ্মশানের ছাই! 

    উষ্ণ নিঃশ্বাসের বিন্দুর বিসর্গ.. ভেঙে দিতে পারতো

    মৃতপ্রায় মূলে মৌন-দুয়ারে শয্যা শায়িত

    • অশ্বত্থের চিরায়িত ঘুম!

    বসন্তে সবুজের কচি কচি পাতা এলে-

           তুমি নাম লিখে দিতে প্রতিটি বৃন্তে।   

    হৃদয়ের মত কোমল আঙুল দিয়ে-  

       প্রাক গোধূলির স্নিগ্ধতায় ছুঁয়ে যেতে রোজ।

    অশ্বত্থ ঝুঁকে আছে – আরও একটু ঝুঁকে 

    তুমি ছুঁয়ে নিতে চোখে, চুলে-ঠোঁটে-গালে..

     

  • কবিতা

    কবিতা- তোমায় পাওয়ার মতো

    তোমায় পাওয়ার মতো

    -অমল দাস

     

     

     

    সন্ধ্যে শীতের শিশির যেন চুমু দিয়ে যায় ঠোঁটে

    আঁখির পাতা মেঘ-শীতল; তোমার পরশ খোঁজে।

    খোলা চুলের আলিঙ্গনে -গভীর তাপ প্রবাহ ছোটে

    কি মধু যে তোমার ঠোঁটে –মন ছাড়া কে বোঝে?

     

     

    বুঝুক ছাই নাই বা বুঝুক, তুমি-ই মন্দ-ভালো

    সিক্ত ঘাসের মন উঠোনে সে হাসির শিউলি ঝরে

    ওই যে তোমার গল্প পাতা -মনের কথা বলো..

    আনমনা পথ সাঙ্গ করি -তোমার আভা রোদ্দুরে…  

     

     

    তোমার চোখের ধূসর নদে -জীবন করেছি জড়ো

    বক্ষ-দ্বয়ের বিভাজিকায় সময় ভেসে যায় স্রোতে

    ডুব অতলে সুখের নুড়ি –তুমি ডুবের আঙুল ধরো

    জলাশয়ে যত মৎস্যগুলি -আমি আপ্লুত লুটে নিতে…

     

     

    আমি লুটবো কেন? লুটবো না, লুটেরা নই মোটেও

    একটু শীত -একটু ছোঁয়া, আর হারিয়ে যাওয়া যত…

    শিকড় দিয়ে বাঁধব শিকড় –পাতা ডালের জটেও

    এ পাওয়াটাই সেই পাওয়া গো, তোমায় পাওয়ার মতো।

     

     

     

        

  • কবিতা

    কবিতা- চেতনা

    চেতনা

    -অমল দাস

     

     

     

    বর্ষার জলে তৃপ্তি উপচে পড়ার পর

    নিংড়ে তোলা দিনগুলি কাঠগোলার শাল-কাঠের মত

    ভাপ ছেড়ে সিদ্ধ হতে থাকে।  

    সাঁঝের র‍্যাঁদা ঘষতে -একটু মসৃণতা পেলে  

    জোনাকির আলোয় চমকাতে চায়!

    যদিও ঘর্ষণ আধিক্যে-  

            ‘ন’ মাত্রা হারিয়ে ‘ণ’-এ খাবি খায়  

    ফিতে দিয়ে পরিমাপের পর দৈর্ঘ্য ডেকে বলে,   

    প্রস্থের ঘাটতি।  

     

     

    তখন প্রতিবিম্বের আয়নাটা মৃদু হাওয়ায় পড়ে ভাঙলে

    ডেনড্রাইট দিয়ে খাড়া করা যায়-

                       জোড়া-তাপ্তির সূত্র কষে।  

    ভঙ্গুর তলের উপরিভাগে চেতনার প্রলেপ ঢাললেও

    ক্ষতের দাগ মুছে পূর্বরাগ আর ফিরে আসেনা!              

     

    মনসামঙ্গল থেকে বেহুলাও আর ফিরে আসেনি-

    নিথর কাঠামোয় কিশলয়ের রঙ লাগাতে। 

     

     

    সওদাগরের পাল-ডিঙা –যন্ত্র শক্তির জাহাজ এখন

    সৌহার্দ্য গোয়ালে বেঁধে- 

             বন্দরে বন্দরে ধান্দার নোঙর ফেলে।

    আসা যাওয়া পথে কতগুলি খিলান সমুদ্রের লাথ খায়

    ক্যালানের মত দাঁড়িয়ে -তারা গোনে জলে

    ভ্রমণ-পিয়াসী দল এফোঁড়-ওফোঁড়ে সুখ পায়!

    সুখ..

    সূর্যের রঙ তট ছুঁয়ে ডুবে গেলে

    একঝাক সমুদ্র চিল আঁধারে হারিয়ে যায়

    শাড়ির আঁচলে জ্যোৎস্না বেঁধে ইন্দুবালা তুমি এলে না…   

     

  • গল্প

    গল্প- অসম্পূর্ণ

    অসম্পূর্ণ

    -অমল দাস

    পায়ে হাঁটা মোড় ঘুরতেই তিয়াসা আর সাত্ত্বিকের মুখোমুখি দেখা হয়েই গেলো। অপ্রত্যাশিত সপ্তমীর সকাল। পাট ভাঙা শাড়ি। চারিদিকের উৎসবের আবহ। খোলা চুল ছুঁয়ে সুগন্ধি বাতাস। বারুদ বারুদ ধোঁয়া। ছোটদের ক্যাপ ফোটানর উল্লাস।

    ওদের চোখে চোখ। তখন তারস্বরে ভেসে আসা বাপ্পিদার গানটাই যেন সাত্বিকের অন্তরে গেয়ে উঠলো   … তুমি তো জানো না , খবরও রাখো না.. শিল্পী করেছো আমাকে…”

    বছর আটেক আগের ঘটনা। তিয়াসা সপ্তমী সকালে ফোন করেছিল সাত্বিককে- কি গো আসবে আজ? এসোনা!

    সাত্বিক কোন উত্তর দেয় তার আগেই তিয়াসার মা ফোনে ওপ্রান্ত থেকে বলে ওঠেন -বাবা এসো, চলে এসো আমি রান্না করছি, দুপুরে খাওয়া দাওয়া হবে, সন্ধ্যায় সকলে মিলে ঠাকুর দেখব। তাড়াতাড়ি চলে এসো।

    সাত্ত্বিক আর কিছু বলতে পারল না। মনে মনে রাগ হল তিয়াসার উপর। সব পণ্ড হয়ে গেল। কোথায় দুজনে হাতে হাত রেখে নিজেদেরমতো করে ঘুরবে, তা না! ফ্যামিলির লেজ জুড়তে হবে। যে সেই লেজ নয় মস্ত বড় লেজ।

    নাহ্‌ সব আশায় জল। মা এর আব্দার যেতেই হবে।

    হ্যাঁ মা বলেই ডাকতে শুরু করেছিল সাত্বিক। তিয়াসা নিজের -এছাড়া অন্য কোন ভাবনা ছিলনা মনে। তেমনই একপ্রকার পাকাপোক্ত হয়ে এসেছিল তিয়াসা সাত্ত্বিকের সম্পর্ক। শুধু সিঁদুর ছোঁয়া বাকি।

    আজও বকেয়া রয়ে গেলো…

    ঠাকুর দেখে রাত তখন বারোটা। বাড়ি ফিরতে হবে। সাত্বিক তাই স্টেশনের পথ নিতে গেলে, তিয়াসা তার মাকে কিছু একটা ইশারা করে। মা এগিয়ে এসে বললেন- তোমার কি এতো রাতে যাওয়া খুব প্রয়োজন?

    -হ্যাঁ মা যেতে হবে। চিন্তা করবেন না -রাস্তায় লোক থাকবে আলো থাকবে..

    -না না ও কথা বললে হবে না। এতো রাতে আমি ছাড়বো না…

    তিয়াসা বললো- মা যখন বলছে থেকে যেতে -তখন মানা করছো কেন? তুমি আজ থেকে যাও…

    তিয়াসা সাত্বিকের বাঁ হাতের কড়ে আঙুলটা ধরলো। সাত্বিকের শরীরে কেমন একটা ঢেউ বয়ে গেল। কিন্তু অবিচল রইল। কখনো কখনো অবিচল থাকতে হয়।

    তিয়াসার দাদা নীরবতা ভেঙে অনেকটা দায়সারা ভাবে বললো- হ্যাঁ যেতে হবে না! চলো বরং আর দুটো পুজো দেখি! তারপর বাড়ির দিকে না হয় ফিরবো।

    -না-না, আর না। আমি এবার ফিরে যাই। এর পর আর ট্রেন নেই। রাতটা না হলে স্টেশনেই কেটে যাবে।

    মা একটু ধমকের সুরে বললেন –কেন আমরা কি নেই ? রাত এখানে কাটাতে হবে! সবাই মিলে বলছি তাতেও হচ্ছে না? কি সমস্যা তোমার?

    -না তেমন কিছু নয়।তবে সমস্যা নেই আবার আছেও। আপনাদের সমস্যা হলেও সেটা আমার। যতই আমরা সম্পর্কে থাকি। বিয়ের আগে আপনার বাড়ি রাত কাটানোটা খারাপ ভাবেই নেবে সবাই। আমায় তো হাতে নাগালে পাবেনা কেউ, আপনাদের নিয়েই কথা হতে পারে। আর ওকে কেউ কিছু বললে আপনাদের যেমন ভালো লাগবে না আমারও তাই। তার চেয়ে আমি …

    শেষ না করা কথায় সাত্বিকের দৃষ্টিটা ট্রেন আসার দিকে চলে গেলো।

    সাত্বিকের নিশ্চয়ই ঠিক বলেছে। সবাইকে ছুঁয়ে গিয়েছিল কথার সারমর্ম। কেউ আর মানা করলো না। ট্রেন আসা পর্যন্ত সবাই প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করলো।

    সেবারই শেষ পুজো কেটে ছিল একসাথে। আজ সপ্তমী। আবার আজ দেখা। শুধু মধ্যখানের বিভেদ মাঝে বিপ্রতীপ হাওয়া। পর-গ্রহের সূর্যের লাল -রাস্তা এঁকেছে তিয়াসার সিঁথিতে। আর চোখের পাতায় অবিশ্বাসের অসম্পূর্ণ কথা…

  • কবিতা

    কবিতা- মেঘ বালিকা

    মেঘ বালিকা

    -অমল দাস

     

     

     

    মেঘের খামে বার্তা এলো- এক পশলা বৃষ্টি,

    এক ঝাপটা হাওয়া। পলক পলক দৃষ্টি –

    ভিজে, চেয়েছিলাম হারিয়ে যাবো-  

              কোনো মেঘ বালিকার খোঁজে!

    হয়তো সে মেঘের গায়ে, মেঘের শাড়ি, মেঘের চুড়ি পরে-

    সিঁদুর মেঘের রঙে -আলতা পায়ে সেজে,

    শান্ত জলের ঘুম ভাঙাবে অভিমানী আনমনা ঝিল চরে।

    আমি উতল হাওয়ার মাতলামিতে উড়িয়ে নেবো

                            বুকের আঁচলটারে।

     

     

    মেঘের খামে বার্তা এলো- একপশলা বৃষ্টি..

    ফেরার পথে ফিরব না আর! যা কিছু মোর সৃষ্টি-

    আজ – সবই দেবো আঁচল বেঁধে তার!

    এই জল থৈ থৈ খণ্ড শ্রাবণ -সেই বালিকার আমায় উপহার।

    ভগ্ন তটে নিলাম তবে গোধূল বেলার ঢেউ

    পাল ছিঁড়েছে? ছিঁড়ুক দেখি! হাল ধরো না কেউ!

    হাল-হাকিকৎ পাঁজির খাতায় তিথির দোষে

    জাবর কাটে। মেঘ বালিকার মুখোমুখি বসে

    আমি কাটিয়ে দেবো সমস্ত দিনমান।

    স্বরলিপি সাঙ্গ করি তার আঙুলে গীটার তারে জন্ম নেবে গান..

     

     

    মেঘের খামে বার্তা এলো- এক পশলা বৃষ্টি..

    ধান চাতালে আকাশের নীল ছেড়ে -আমি মিষ্টি

    ময়নার ডানায় চরে মেঘের গ্রামে গ্রামে

    পৌঁছে যাবো। লিখব চিঠি মেঘ বালিকার নামে-

    যে ঠিকানায়, সেই ঠিকানায় পালক ঝরে। তার গঙ্গাবেণী কেশ-

    ছুঁয়ে বৃষ্টি দানায় ত্বক ভিজিয়ে দেখব অনিমেষ

    তার রূপের ছটায় জ্বলছি কেমন করে!

    পৃথিবীর গর্ভ থেকেও উঠবো জেগে

                যদি সে ডাকে -নাম ধরে… 

     

  • কবিতা

    কবিতা- আমরা চেয়ে চেয়ে দেখি..

    আমরা চেয়ে চেয়ে দেখি..

    -অমল দাস

    পিদিমের আলো নিভে গেলে

    যন্ত্রণা ভাগ করে সহবাসে মাটির দেয়াল

    উলুখাগড়ার চাল হাল ধরে আঁধার বন্যায়

    নৈশ প্রহরী কীট মাঘী জ্যোৎস্নায় বেসামাল।  

    থোকা থোকা ফুল ঝরে ফুলের শহরে

    রোজ অনাদরে বাগানের মালির দেবতা,

    রোদ্দুর বুকে নিয়ে হেঁটে যায় যে কিশোরী

    হয়তো অভাগী ’স্বর্গের কোনো পরিণীতা!

    দিক-বলয় সীমা পায়না ধরিতে

    জলের জঠর নিয়ে ছোটে মেঘ বৈধতাহীন,

    কেলাসিত কলহ ঝরে আদ্যোপান্ত জুড়ে

    কামুকে পৃথিবী তৃষা মেটেনি কোনদিন।

    কত শালুকের ঝিলেরা ঠিকানা ভুলেছে

    ফড়িঙের দিন – হারিয়েছে মিশরীয় রাত..  

    আলো-ছায়া চাতুরীর শাণিত ছুরিতে

    লোহিত রক্ত লিপিতে লেপা সময়ের ঘাত।

    নিখিল নিলয় ডুবে আকণ্ঠ নীলে

    প্রতিভূরা ফিরে গেছে কোন এক প্রত্যুষে,  

    ঠিকানাহীন উত্তাপে ধূলিপথ পড়ে আছে

    আমরা চেয়ে চেয়ে দেখেছি পুরুষে-পুরুষে! 

  • কবিতা

    কবিতা- অনুসারীর ঘ্রাণে… 

    অনুসারীর ঘ্রাণে…  

    -অমল দাস

     

     

    পূর্বসূরীর উপন্যাসে স্থাবরের হদিশ পেলেও,

    প্রলেপের আস্তরণ বহুকাল খসে গেছে।

    উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া খাঁটি কাঁসার ঘটি-বাটিগুলি

    কাঠের পাটাতনে ঝুল-ধূলোয় মঞ্চ সাজায় বিনোদনের।

    অতীত কিছু আত্মতৃপ্তি পলিথিনে মুড়ে এখানেই পড়ে থাকে

    আড়ার আড়াই হাত নীচে…

    এর নীচের ছ’হাতে যে পাখির খোপ,

    তা আমার, আমাদের সন্তান-সন্ততির

    কোলাহলের চারণ ক্ষেত্র।  

    বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম – আসবাব – রতি সুখ- ঔরসজাতের দায়

    আমাকে সংসার চক্রব্যূহে শর বিদ্ধ করতে পারেনা!

    কানাঘুষোর উত্তপ্ত হাওয়া ঘুলঘুলির যে পথে আবহাওয়ায় মুক্তি পায়,

    সেই পথেরই অনুসারী আমি…

    আমার হৃদয় হারিয়ে যায় লালনের সন্ধানে  

    দূরে… অনেক দূরে… বাউলের গ্রাম..

    পল্লীগীতি.. ভাটিয়ালী চরে.. .   

    সেখানে ভোরের সূর্য নদীর জলে রঙ তুলিতে চিত্র আঁকে,

    নবান্নের সবুজ ধানে ঢেউ ওঠে, 

    মাঘীপূর্ণিমা রাধাচূড়াকে পোয়াতি করে ফাগুনের তরে,

    বালুকা বেলায় সমুদ্রের সোপান জুড়ে শামুক ঝিনুক খেলা করে,  

    সান্ধ্যেয়-স্রোত নদীর পাড়ে ছলাৎ-ছলাৎ গল্প করে,

    সেখানে অনাত্মীয়ের আত্মীয়েরা স্বপ্ন বোনে

    সবুজ মাঠের ঘাসের উপর,  

    শাল সেগুনের মোহনায় গড়ান গেওয়া বাড়ায় হাত…  

    সেখানেই হারিয়ে যাই আপন মনে..

    ফিরতে চাইনা আর…

    ফিরবো একদিন ফেরার পথে নিঃস্ব হাহাকার হাওয়ায় ছেড়ে।

  • কবিতা

    কবিতা- তবু আশা বেঁচে থাকা

    তবু আশা বেঁচে থাকা

    -অমল দাস

     

     

    হঠাৎ জীবন মাঝে বেগতিক ঝড় জাগে,

    সাজানো চালা উড়ে হৃদয়ে আঘাত লাগে ।

    স্বপনের প্রাপ্ত সুখ খোলা নেত্রে অদৃশ্য তা ,

    বয়ে চলে দিবানিশি আত্মরোদন বিফলতা ।

    সবুজ কানন নেই মরু হয়ে আসে সব ,

    শ্মশানে বুভুক্ষু শকুনের যুগান্তর কলরব ।  

    আঁধারের কঠিনতা আমৃত্যু অঙ্গ সঙ্গী হয়,

    দূর্বা বিস্তার চায় -প্রকৃতির অসীম ভয় ।

    অনাবিল সুখ আজ গিরিখাতে হাবুডুবু ,

    পার্বত্য উপত্যকায় ক্লান্ত কায়া জবুথবু ।

    জঙ্গলে অধিবাসী তল্লাশী নিরাপদ আশ্রয়

    প্রতি প্রহরে শেষ সঞ্চিত নেই কোন সাশ্রয় ।

    বিশ্বাসে ঘতাক বসে সাপ লুডু খেলা খেলে,

    আপনের বিষাক্ত ঘ্রাণ রন্ধ্রে অবাধে চলে। 

    বসন্ত বিরাগ সেথা অভিমানী শ্রাবণী দোসর

    যাপনের পথে সতত চৈতালির মধ্যাহ্ন লহর ।

    ভরা উতলা নদী ছলছল, তৃষ্ণায় হাঁসফাঁস

    ছুটে দেখা শুখা সব মরীচিকার পরিহাস ।

    রোপণের যত ফল নেই আশাতীত মিষ্টতা,

    আসলে লাওয়ারিশ প্রাণ জগৎ পিতার ধৃষ্টতা।

    প্রান্তিকে থেমে পথ সম্মুখে শূন্য নীল সুদুর ,

    নিকষা আস্তরণে ছায় কর্ণে অশরীরী নূপুর ।

    যাতনার খেলা ঘরে যৌবন শোষণ চলে,

    সমাজ চাবুকাঘাত জীবনের শোধ তোলে ।

    কূল হীন সাগর জলে মরা-ই সুখ বুঝি ,

    তবু আশা বেঁচে থাকা বাঁচার মানে খুঁজি । 

     

     

     

     

  • কবিতা

    কবিতা- “সূত্র”

    “সূত্র”

    -অমল দাস

     

     

    সমাধান চাই…

    অনেকটা সময় নিয়ে প্ল্যাটফর্ম অতিক্রম করছি

    প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য একশ মিটার, আমার কতো?

     

    মিলবে ? মিলবে না..

    অমীমাংসিত ভাগশেষের মতো!

     

    জীবনের উপপাদ্যে পা ঘষতে ঘষতে বেলা চৌকাঠে হোঁচট খায়

    পাটিগণিতগুলি হাঁ করে চেয়ে থাকে,  

             লাল লিটমাসে ধুয়ে নীল হবে বলে।

    অথচ পরিখা ডিঙিয়ে তাদের সিংহদুয়ারের তালা ভাঙা হয়নি খাতায়।  

     

    শূন্য টেবিলের কৌণিক দূরত্ব মাপতে গিয়ে যে সূত্রের জন্ম হয়

    তার উত্তরীয় জড়িয়েও উৎপাদক বিশ্লেষিত হয় না।  

    বরং অজ্ঞতার চারাগাছকে মেঘের মতো আচ্ছন্ন করে রাখে।

     

    বৃত্তের পরিধি আঁকতে গিয়ে বিচ্যুতি ঘটে,

      দেখি তির্যক রশ্মির মতো দূর ছায়াপথে সরে যায় রৈখিক টান।

    কেবল প্রতিফলক তলের অভাবে-

               প্রতিফলনে ফিরে আসা হয় না।  

     

  • কবিতা

    কবিতা- ওদের ভাঙতে পারবে না..

    ওদের ভাঙতে পারবে না..

    -অমল দাস 

     

     

    আবহাওয়ার খবর -বজ্রঘন ঝড় বৃষ্টি..  

    এখন চৈত। চৈতের শেষ

    কালবৈশাখী আসবে – চালা ঘরে আতঙ্ক

     

    কালবৈশাখী! আসুক…

    তাতে ছেলেটির কি?

    ওকে ভাঙতে পারবে? ভাঙার কিছু নেই…  

    অনেক আগেই ভেঙেছে – বাপ মারা গেলো..  

    আবার ভাঙলো যখন মা চলে গেলো

    আবার যখন হাতের খাবার কুকুরে খেয়েছে

    উদ্বায়ী প্রেম বাতাসে মিশেছে..  

     

    কালবৈশাখী! আসুক…

    তাতে মেয়েটিরই বা কি?

    সে কবেই বিধবা রঙ গায়ে ঢেলেছে

    লাথ খেয়ে গৃহ হারা –রাস্তায় নেমেছে

    এগিয়ে আসা সাহায্যের হাত কাপড়ও খুলেছে

    তারপর নিয়ন আলোর গলিতে পশুর গালে চুমু দিয়েছে..

     

    কালবৈশাখী! আসুক…

    ওদের ভাঙতেই পারবে না

    নিঠুর পৃথিবীর ঘা সয়ে সয়ে ‘স্টেনলেস স্টিল’ হয়েছে

    কালবৈশাখী -খড়ের চালা উড়িয়ে নেবে

    গাছের ডাল ভাঙবে -পাতা ঝরাবে

    বৃষ্টি জলে চুবিয়ে রাতের ঘুম কাড়বে

    তাতে কিই বা হবে…

    অসহায়কে পিষছে সবাই -প্রকৃতিও পিষবে

    কাল আবার প্রভাতী আলো জ্বলবে

    আবার লড়বে –মচকাবে- ভাঙবে না

    কালবৈশাখী ভাঙতে পারবেও না!  

     

You cannot copy content of this page