• কবিতা

    কবিতা- অনুপমা প্রচ্ছদে

    অনুপমা প্রচ্ছদে
    – অমিতাভ সরকার

     

     

    ঝরবে বলে এসেছে, ঝরুক যত খুশি,
    তুলা মেঘে বাঁধ দিয়েছে কালো মেঘের রাশি।

    সিক্ত মাটি ও সিক্ত গাছ, সিক্ত বাড়ির ছাদ,
    বৃষ্টি মেখে হয়েছো সিক্ত, হবে কি গ্রন্থের প্রচ্ছদ?
    মেঘ বরন সিক্ত কুন্তল, সিক্ত মুখমন্ডল,
    বসন সিক্ত, সিক্ত শঙ্খ কায়ায় উরজ যুগল।

    সিক্ত শব্দের গাঁথা মালা, মুক্ত মনের ব্যথা,
    ভেলায় ভেসে চলেছে কত মনের কথা।
    মেঘ কেটেছে শারদ কিরণ পৃথ্বী কেমন হাসছে,
    আর সিক্ত অবয়ব প্রচ্ছদে, কাব্যগ্রন্থে ভাসছে।
    অনুপমা তুমি আবার এলে নীল সাদা আকাশে,
    বলাকারা কেমন ভাসছে শারদ মাখা বাতাসে।

  • কবিতা

    কবিতা- অনুপমার সমর্পণ

    অনুপমার সমর্পণ
    – অমিতাভ সরকার

     

     

    মাঝে মাঝে লগ্ন ফুরিয়ে যায় চাইলেও তোমাকে খুঁজে পায় না।

    কখনো বা তুমি এসে আমাকে ধরতে পারো না- যন্ত্রণার প্রতিমা হারিয়ে যায়।
    এভাবেই চলতে চলতে কখনো বা গোধূলি আসে,
    অস্তাচলের রবি জানান দেয় তুমি আছো।

    ভাগীরথীর জলে প্রতিচ্ছবি ভাসে, ঢেউয়ে ঢেউয়ে কি অপরূপ দৃশ্য।

    খিলখিল করে হেসে বলো দেখো আমি এসেছি।

    নরম রোদ, নৈশ আহারের শেষ প্রচেষ্টায় মাছরাঙ্গা।

    নদী পাড়ের বৃক্ষরাজি ঘুমের দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

    অনুপমা তুমি সর্বক্ষণের জন্য আমার হাড়, মজ্জায়, চিত্তে, অনুভবে জড়িয়ে আছো।

    সব জেনেও তুমি নিজেকে লুকিয়ে রাখো।

    যন্ত্রণা, কি গভীর যন্ত্রণা বহন করে চলেছি।

    গভীর নিম্নচাপ তৈরি হোক, প্রচন্ড ঝড় সঙ্গে ভূমিকম্প।

    রোদন ভরা বর্ষা নামুক তোমার দু’চোখ বেয়ে,

    দু’ হাত প্রসারিত করে বলতে থাকো কবি, তোমায় আমি ভালোবাসি।

    আমি সমর্পিত তোমার কাছে। আমার রূপ-রস-গন্ধ সবই তোমার জন্য।

    তুমি যেমন খুশি আঁকতে থাকো।

  • কবিতা

    কবিতা- স্বপ্ন সায়রে

    স্বপ্ন সায়রে
    – অমিতাভ সরকার

     

     

    কবিতা তোমার মনের মতো চলতে ছিল,
    আলপনাতে গল্প তোমার আঁকা ছিল।
    নিঝুম রাতের আকাশ ভরা তারা তাতে,
    চাঁদের ঢেউয়ে নৌকো, রাজপুত্তুর সাথে।
    জানলা খোলা ,পালঙ্ক ভরা চাঁদের আলো,
    স্বপ্নগুলো নিবিড় ঘুমে চোখ জুড়ালো।
    ঘুমের ঘোরে এপাশ থেকে ওপাশ হলাম,
    আমার পাশে রাজপুত্তুর ঠাহর পেলাম।
    নিশুতি রাত, রাতের পাখি ঘুম ভাঙাল,
    স্বপ্নগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেল।
    প্রেমের স্বপ্ন মধুর ছিল মাঝরাতে,
    বসন্তের রঙিন গন্ধ তার সাথে।
    বাঁশ বাগানে জোনাক জ্বলা উতল ছিল,
    হাসনুহানা গন্ধ ছড়িয়ে নিরব ছিল।
    রাজপুত্তুরের মুখটা চোখে ভেসে এলো,
    দেখতে দেখতে পাখির ডাকে প্রভাত হল।

  • কবিতা

    কবিতা- সৃষ্টির উপাখ্যান

    সৃষ্টির উপাখ্যান
    – অমিতাভ সরকার

     

     

    শরতের শব্দ ভাসে বুক ভর্তি নদীর বুকে,
    ইলশে গুঁড়ির মতো ঝরে পড়ে একে একে।
    ভাসা শব্দগুলোকে নিয়ে মালা গাঁথা হয়,
    সবাই ব্যস্ত হয় শুভ পরিণয় হবে নিশ্চয়।
    কত ফুল চন্দন আসে লবঙ্গের ছোপ,
    হৃদয়ের নিগূঢ়ানন্দ থাকে নিশ্চুপ।
    হয়তো বা কারো ভাগ্যে শিলালিপি তৈরি হয়,
    গ্রন্থের সংকলনে তার হয় শুভ পরিণয়।
    প্রিয়ার আনন্দাশ্রু বিনিদ্র রজনী,
    যুদ্ধ জয়ের আনন্দ বিগলিত তৃপ্ত ধ্বনি।
    শরতের রুপোলী ফসল তেলে ভাজা হয়,
    কত স্বাদ বিস্বাদের চর্চা তৈরি হয়।

  • কবিতা

    কবিতা- শরতের পদধ্বনি

    শরতের পদধ্বনি
    – অমিতাভ সরকার

    আজ প্রভাতে নতুন গন্ধ,
    শিউলি হাসে মুখ তুলে।
    আয় ছুটে আয় সাজি হাতে,
    দুঃখ, ব্যথা সব ভুলে।
    সবুজ মাঠ, ধান্য মঞ্জরী,
    পদ্ম দিঘিতে নেই প্রহরী।
    আকাশ নীল, মেঘের ভেলা,
    নবীন সূর্য করে খেলা।
    কুঞ্জে কুঞ্জে শারদীয়ার সুর,
    দুলে দুলে হাসে ফুল প্রচুর।
    নানা রঙে প্রজাপতি, ফুলে ফুলে খেলে,
    ভ্রমরের দল নানা সুর তোলে।
    নদী ভর্তি জল, করে টলমল,
    মৎস্যজীবীরা তোলে রুপোলি ফসল।
    দূরে নদী চরে কাশ মাথা নারে,
    আগমনীর বার্তা এই প্রথম প্রহরে।
    খুশির সকাল নির্মল বাতাসে,
    বলাকার দল আকাশে ভাসে।

  • কবিতা

    কবিতা- স্বপ্নে সুখের খোঁজ

    স্বপ্নে সুখের খোঁজ
    – অমিতাভ সরকার

     

     

    অনেকদিন তোমার দেখা নাই।
    তোমার আলস্য, তোমার আড়মোড়া ভাঙ্গা সকাল দেখিনি অনেক দিন।
    ঊষা ওঠেনা এখানে, করমোরা রোদে ঘুম ভাঙ্গে।
    কলিংবেল ডাকে, চা নিয়ে এসে। কেন চুল ছড়িয়ে নাইটি পড়ে, গরম চায়ের কাপ নিয়ে আসতে পারো না আমার সামনে? আমার ঘুম ভাঙাতে!
    আমার ভীষন ইচ্ছে করে তোমার হাসি মুখটা সকালবেলায় দেখতে। তুমিতো জানো তোমার রঙিন ফুলতলা নাইটিটা আমার ভীষণ পছন্দের। তোমায় দারুণ মানায়।কি যে হয় তোমার মাঝে মাঝে অবাক করে চুপ হয়ে যাও। দেখা দিতে চাও না।
    এখন মন খারাপের সময় আমি ডালিম গাছের তলায় কেদারা পেতে বসি। রঙিন পাখিটা আসে দেখা দিতে। ডাক দেয়, বলে মন খারাপ কেন তোর?
    আমি হাসি, তুমি খিলখিল করে হেসে ওঠো ঐ পাকা ডালিমের মতো রঙিন হয়ে। তোমার কি মনে পড়ে না ওই ডালিম তলায় তোমার সাথে আমার প্রথম দেখার কথা?
    তুমি বেশ আছো, তুমি বেশ থাকো, যত যন্ত্রণা ভিড় করে আসুক আমার অন্তরে। কুরে কুরে খাক আমাকে। নিঃশেষ করে দেক আমাকে। তবুও আমি ভেবে যাব তোমাকে, ভেবে যাব আমার ভালোবাসাকে। আমার প্রথম ভালোবাসার স্বাভিমান নিয়ে।
    তুমি কি জানতে চাইছো আমি কেমন আছি!
    স্বাচ্ছন্দ আছে, সুখ কই?

  • কবিতা

    কবিতা- ঝিঁঝিঁ পোকার কান্না

    ঝিঁঝিঁ পোকার কান্না
    – অমিতাভ সরকার

     

     

    সব ছেড়ে চলে গেছে,
    সবাই ছেড়ে চলে গেছে।
    গ্রীষ্মের মধ্য দুপুরে ছিল আমার আশ্রয়,
    বটের বাঁধানো স্নিগ্ধ ছায়া তল।
    সুখ দুঃখের স্মৃতির পাতা উল্টানো, উদাস দুপুরে চেয়ে থাকা। কান পেতে শোনা পুকুর পাড় থেকে ভেসে আসা কলসে জল ভরার শব্দ। অষ্টাদশী নববধূর ভেজা কাপড়ের থপ থপ শব্দ। গৃহপথের পদচারণা। দোয়েল শ্যামার ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ। মধ্য দুপুর মুখরিত করা কাকের কা কা ডাক। হয়তো বা সভা বসানোর তারা। কখনো বা ঘুঘুর দুঃখ ভরা ডাক।

    আজ এই ভারাক্রান্ত দুপুরে শুধু দেখি ধ্বংসস্তূপ;–নীড় হারা পাখিদের শবদেহ, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পাখিদের নীড়, মায়ের কোল ছাড়া হাজারো গাছ। ভগ্ন, রক্তাক্ত তাদের দেহ।
    তোমরা কি শুনতে পাচ্ছো তাদের নীরব কান্না!

    দেখতে পাচ্ছ কি গাঁয়ের মেয়েদের চোখের জল
    শুকিয়ে ভাঙ্গা হাঁড়িতে কাঁচা কাঠ পুড়িয়ে এক মুঠো চাল সেদ্ধ করতে? পুরুষরা গালে হাত দিয়ে
    দেখছে সব শেষ হয়ে যাওয়া জমির দিকে। কেউবা ভেঙ্গে পড়া মাথার ছাউনীর দিকে।শিশুরা না খাওয়া মায়েদের স্তন চুষছে। সত্যি কি তারা মায়েদের কাছে বেঁচে থাকার অমৃত পাচ্ছে!

    সবকিছু হারানো জীবনে স্নিগ্ধ বটের ছায়াতলে বসে শুনতাম বাউলের পদধ্বনি, একতারার তান। কখনো বা চোখের কোন বেয়ে জল পড়তো ঝিঁঝিঁপোকার কান্নায়। আজ শুধু চারিদিকে জঞ্জাল। প্রিয় বটগাছ আজ পড়ে আছে রক্তাক্ত অবস্থায়। শেষ সম্বল টুকুর নীরব কান্না আমাকে চেপে ধরেছে, বাকরুদ্ধ আমি।

  • কবিতা

    কবিতা- প্রেম তুমি

    প্রেম তুমি
    – অমিতাভ সরকার

     

     

    তোমার জন্য সাজানো নিজেকে,
    দর্পণে দেখা বারবার।
    তোমার জন্যই পলাশ হাসে,
    শিমুলের রং লালে লাল।
    তোমার জন্যই বৃক্ষের সাজগোজ,
    বায়ু বয় স্নিগ্ধ সকালে।
    তোমার জন্যই শুধু পূর্ণিমা রাত,
    রজনীগন্ধা সুবাসে মাতে।
    তোমার জন্যই গাঁদা ফোটে,
    শুভকামনার ব্রত নিয়ে।
    তোমার জন্যই কুহু কুহু ডাক,
    সবে বলে মধুমাস।
    তোমার জন্যেই আবির ওড়ে,
    রঙিন হয় চারিধার।
    তোমার জন্যই ভুঁইচাঁপা ফোটে,
    বাগানে বাগানে ফুলের সাজ।
    তোমার জন্যই ভ্রমর আসে,
    প্রজাপতি ভাসে নানা শোভায়।
    তোমার জন্যই দখিনা বাতাস,
    মন করে চঞ্চল।
    তোমার জন্যই কৃষ্ণচূড়া দোলে,
    রাধাচূড়া হয় মোহময়।
    তোমার জন্যই বসন্ত বৃষ্টি,
    শঙ্খধ্বনিতে মধুময়।
    তোমার জন্যই ওষ্ঠে স্বেদবিন্দু,
    চৈত্রের দুপুর হয় অসহায়।
    প্রেম তুমি এক বিচিত্র মোহ,
    বসন্তের রঙে তোমার ব্যঞ্জনা।

  • কবিতা

    কবিতা- তুমি রয়ে গেলে

    তুমি রয়ে গেলে
    – অমিতাভ সরকার

     

     

    সব বলা শেষ হয়ে গিয়েও তুমি থেকে গেলে।
    নিঝুম রাতের বালিশে মাথা দিয়ে।
    পাশ বালিশে ভর দিয়ে উঠে তৃষ্ণার্থ ঠোঁট ভিজিয়ে দিতে।

    ঘুমন্ত চোখের পাতায় আবেশ দিতে। তুমি থেকে গেলে।
    তুমি থেকে গেলে পূর্ণিমার রাতে তাজমহলের প্রেম কাহিনী স্মরণ করিয়ে দিতে।

    যমুনার দর্পণে নিজেকে দেখলে। ভেসে উঠল দুর্নিবার দিনগুলো।
    তুমি থেকে গেলে সমুদ্রের ঢেউ গোনার দিনগুলোকে স্মরণ করিয়ে দিতে।
    তুমি থেকে গেলে বসন্তের আবীরে রাঙানো সময়ের পদধ্বনি শোনাতে।

    কোকিলের কুহু কুহু ডাক! কেন তুমি এখনও শিয়রে!
    তুমি কি এখনো থেকে গেলে তোমার নূপুরের শব্দ শোনাতে? চুড়ির রিনিঝিনি!
    তুমি থেকে গেলে অন্যের ঘরনী হয়েও আজন্মের জন্য নিঝুম সময়ের সঙ্গী হয়ে।
    তুমি থেকে গেলে।

  • কবিতা

    কবিতা- মেঘ বসন্ত

    মেঘ বসন্ত
    – অমিতাভ সরকার

     

     

    অনুপমার সময় ছিল
    তার এক আকাশ স্বপ্ন ছিল, স্বপ্নের জাল বুনতো।
    রামধনুর রঙে রাঙাতো নিজেকে।
    অনুপমার নিজস্ব সিঁড়ি ছিল
    সেই সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে প্রেম ডেকে আনতো।
    আনমনে সে প্রেম প্রেম খেলা খেলতো।
    অনুপমার নিজস্ব বাগান ছিল
    বাগানে নানা রঙের ফুল ছিল, আকর্ষণ ছিল।
    নানা রঙিন প্রজাপতি ফুলে ফুলে খেলতো।
    অনুপমার এক নদী ছিল
    নদীতে কুলুকুলু ছন্দ, পাল তোলা নৌকা ছিল।
    নৌকায় বসে রাতে চাঁদের সাথে কথা বলতো।
    অনুপমার পোষা হরিণ ছিল
    দেখতে সুন্দর ছিল, ছোপ ছোপ গায়ে দাগ ছিল।
    তপবনে গিয়ে তার সাথে খেলা করতো।
    অনুপমার এক বটগাছ ছিল
    বটের ঝুরি ছিল, লাল টুসটুসে ফল ছিল।
    চাতালে বসে পাখির ফল খাওয়া দেখে যেত।
    অনুপমার এক বাতায়ন ছিল
    বৃষ্টির জানালা দিয়ে মেঘ দেখতো।
    মেঘের মাঝে এক রাজপুত্রের দেখা পেলো।
    অনুপমা সম্পূর্ণ যুবতী হয়ে হারিয়ে গেল।

You cannot copy content of this page