-
কবিতা- স্নিগ্ধতা তুমি
স্নিগ্ধতা তুমি
-অমিতাভ সরকারসংগ্রাম অনেক হল।
এখন একটু থিতু হতে চায়;—
হ্যাঁ এখন শুধু তোমাকে নিয়েই বাঁচতে চাই।
সেই ছেড়ে চলে এসেছিলাম কবে,
সংসার সংগ্রামে লড়াইয়ের সৈনিক হয়ে।
কত যুদ্ধ জিতেছি, সেনাপতি হতে পারিনি।
দুঃখ কুরে কুরে খায়।
তোমার সাথে প্রেম ঠিক মত করে উঠতে পারিনি।
তুমি কি একটু জায়গা দেবে তোমার মন্দিরে বসতে!
একটু তোমার স্নিগ্ধতার ছোঁয়া পেতে।
কোকিলের কুহু কুহু ডাক, বসন্তবাউরির ছায়া,
হলুদ পাখির নাচানাচি, টুনটুনি কোয়েলের আনাগোনা।
পশ্চিমের ঢলে পড়া রোদ্দুর যে পুকুরে স্নান করে
সেই চাতালে আমাকে একটু স্থান দাও।
বসে বসে বাবুইয়ের বাসা বোনা দেখব। -
কবিতা- শেষ ইচ্ছা
শেষ ইচ্ছা
– অমিতাভ সরকারএকদিন তো হারাতে হবে ,
আজ না হয় হারিয়ে যাই।
প্রহর গুনতে গুনতে ক্লান্ত,
অগ্নুৎপাত কবে হবে জানিনা।জাবর কাটতে কাটতে নিশ্চুপ,
ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে ঢেউ গোনা।
টুপটুপ বৃষ্টির শব্দ শোনা,
ঝড়ো হাওয়ায় স্বপ্নগুলোকে হারিয়ে ফেলা।নিকিতাকে কাছে পেয়েও
কিশোরী শরীরকে ছুঁতে চাওয়া ,
নদীর স্রোতে হাঁটুজল পার হওয়া,
ফিরে ফিরে নস্টালজিয়ায় ভোগা।নিকিতা আজকে জড়িয়ে ধরবে একটু,
কিশোরী বেলার প্রথম ভেজা ঠোঁট
পেতে চাইছি, ওই দেখো মহাকাল ডাকছে।
আর বেশি দেরি নেই–মেঘ উঠেছে ,ঘন কালো মেঘ,
উত্তরে টুপ টুপ বৃষ্টি তীব্র হল।
করাত করাত বিদ্যুতের ঝলকানি,
বারান্দার লাগোয়া তালগাছে বজ্রপাত! -
কবিতা-অনন্ত অবসরে
অনন্ত অবসরে
– অমিতাভ সরকারঘরে বসে একমনে সময়ের গতি গুনি,
তিল তিল করে তোমাতেই জাল বুনি।
তুমি আমি গৃহবন্দি,
নিঃস্ব সব মনসন্ধি।
প্রেমের অলস গল্প রয়ে আছে খিল বন্দি।বাঁধানো বকুলতলা, বকুলে ভ্রমর খেলা,
সুনসান পথঘাট, বয়ে যায় অলস বেলা।
তুমি আমি স্বপ্ন দেখি,
প্রেমে আজ মলিন আঁখি।
ঝরে পড়া বকুল রাশি নিরবে ঊর্ধ্বমুখী।চৈত্রের দুপুর এখন, বাতায়নে খোলামন,
সজিনা ফুলের মতন জ্বলজ্বলে শিহরণ।
আমি তুমি এক সনে,
গান গাহি এক মনে।
দুপুর গড়িয়ে মন গোধূলির বরিষণে। -
কবিতা- তুমি ও কবিতা
তুমি ও কবিতা
– অমিতাভ সরকারকেন জানিনা দুর্বলতাকে মাপকাঠিতে
মাপতে পারিনা। বয়সের তারতম্যের হদিস পায় না। পড়তে পড়তে কবিতাকে ভালোবাসি। ভালবাসি ভাবনার উত্তরাধিকারী কে। কখনোবা বিনম্র শ্রদ্ধায় আবার চঞ্চলতার অভিব্যক্তিতে। চৈত্রের সজনে ফুলের মত শুভ্রতায়, রজনীগন্ধার সৌরভময় মাদকতায়।
আমার লেখা কবিতা কারো মনে দোলা দেয় কিনা জানিনা, জানিনা তার হৃদয়ের খোঁজ। বসন্তের কুহু কুহু সুর, চৈত্রের মধ্য দুপুরে রঙিন রঙে মন ভরে ওঠে কিনা।
কবিতা। কবিতার জন্য লেখা হয়। মন রাঙ্গিয়ে তোলার জন্য, ভাবিয়ে তোলার জন্য, বিবর্ষ মনকে উদ্দীপ্ত করার জন্য, ভালোলাগা আর ভালোবাসার রেশ রেখে যাওয়ার জন্য। -
কবিতা- তুমি থেকো
তুমি থেকো
– অমিতাভ সরকারছুঁতে চাইনি, কল্লোলিনী স্রোতের মতো দেখতে চেয়েছি।
পাহাড় থেকে ঝরে পড়তে, জলপ্রপাতের মতো শব্দের বিস্তার করতে।
কিম্বা ঝর্নার মতো নানা মুদ্রায় নর্তকীর মতো, বাংলার রূপের সাথে মিশে যেতে।
বাংলার নদী নালায়, উপচে ওঠা জলে প্রান্তর জনপদে, পুকুরে, খালে, পানকৌড়ির ডুবসাঁতারে শঙ্খচিল অথবা গাঙচিলের দৃষ্টিতে।
পানা ভর্তি পুকুরে, শাপলা শালুকের হাসির মধ্যে।
পদ্মপুকুরের নীল জলে।
শুধু তোমাকেই দেখতে চেয়েছি।
বকের দৃষ্টিতে নতুবা পায়রার সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে।
মাঠ ভরা ফসলের ক্ষেতে, অজয়ের ঘোলা জলে, কখনো বা ভাগীরথীর চরে মধ্যাহ্নে চোখাচোখির অলস ভালোবাসায়,অথবা শিরীষের ডালে।
বাবলা বনের ঝোপঝাড়ে,হিজল তরু ছায়ে। দোয়েল, শ্যামা ,শিষপাখিদের ডাকে।
পালং শিষ কিংবা নোটেশাকের শিশির বিন্দুতে শুধু তোমাকে দেখতে চাই।
কুল, শাল, বেল, সেগুনের ঝরাপাতার মর্মর শব্দে তোমাকে অনুভব করতে চাই। প্রজাপতির পাখনার মত রঙ্গীন হতে চাই। গিরগিটির মত নানা রঙে রূপসীর মতো দেখতে চাই।
রাজ হংসীর গলার ছায়ায় নতুবা বাংলা মায়ের আঁচলের শীতলতায় আমি বেঁচে থাকতে চাই। মা বলে ডাকতে চাই।
তোমার ভাষা..তোমার স্নেহ, তোমার দুঃখ বুক পেতে মেনে নিতে চাই।
বাংলার মুখ চেয়ে চেয়ে দেখতে চাই।
বাংলার মাটিতে বারবার জন্মে মাগো তোমার মুখ দেখতে চাই।
নিকিতা তুমি পাশে থেকো প্রাণ ভোরে এই বাংলার শ্যামলীমায় হাসি কান্নায় যেন শীতলপাটি পাততে পারি। অস্তাচলের সূর্যকিরণে আবীর রঙে নাইতে পারি। -
কবিতা- বসন্ত হারানো রাত
বসন্ত হারানো রাত
– অমিতাভ সরকারবৃষ্টির কান্না শুনতে শুনতে ফাগুন
রাতের চোখে জল এসে গেছিল।
ঘুমোতে পারেনি রাত।
তারারা আকাশে ছিল না।
ফালি চাঁদের দেখা মেলেনি।
ঝিঁঝিঁ পোকার কান্না শোনা যায়নি।
নিশুত রাতের পাখিরা নিশ্চুপ।
রজনীগন্ধার গন্ধ হারিয়ে গেছিল।
টুপটুপ শব্দে পলাশ, শিমুল ঝরে পড়ছিল।
ভোরের কোকিল কুহু কুহু ডাকেনি।
ভরা বসন্তের আঁচ ছিল না কোথাও।
দীপান্বিতা তুমিও ফিরিয়ে রাখলে মুখ
এই রঙীন বসন্তে। -
কবিতা- প্রেম বসন্ত
প্রেম বসন্ত
– অমিতাভ সরকারবসন্তের এক আবেগ আছে–
কিনতে পারবে তাকে?
অনুভব রোমাঞ্চ মাখা–
অনুভূতি রয়না ঢেকে।আবেগ থাকে রঙিন মনে–
হৃদয় উথলে ।
মধ্যদুপুরে সূর্য কঠোর–
ঘাম বিন্দু ফোটে।উতল হাওয়া শুষ্ক পত্র–
লুটোপুটি মর্মর শব্দ।
শিমুলডাল রক্তবর্ণ–
বাউলের নাচ বাকরুদ্ধ।রুদ্ধ মনের আগল খুলেছে–
মনের মধ্যে পাল তুলেছে।
কিংশুক বনে প্রেম ডেকেছে–
ভ্রমরের গুনগুনানি তান তুলেছে।রাধাচূড়া কৃষ্ণচূড়ার ঢলা-ঢলি দেখেছে?
মহুল বাতাসে কান পেতে শোনো।
চন্দ্রমল্লিকা — ডালিয়া দোল দিয়ে যায়–
প্রেমের আবেশ জাল বোনে জেনো। -
কবিতা- ভ্যালেন্টাইনের রঙ
ভ্যালেন্টাইনের রঙ
-অমিতাভ সরকারপ্রভাত গোলাপ কুঁড়ি মুখ তুলে বললো,
এসো এসো কাছে চুপি চুপি বলি।
দাওনা তুমি আমায় তোমার ভালোবাসার কাছে।সাজিয়ে দেবো আমার আভায় তোমার প্রণয়ীকে।
দেখিবে তুমি নয়ন ভরে-চোখ ফেরানো ভার।
তুলে নিলাম গোলাপ কুঁড়ি শিশির ভেজা প্রাতে।
রাজার বেশে হাজির হলাম ভালোবাসার কাছে।
এগিয়ে গোলাপ পাণিপ্রার্থী আবেশ ভরা চোখে।
ভালোবাসা গোলাপ নিয়ে আরচোখেতে অন্য পুরুষ দেখে। -
কবিতা- নিভৃত প্রেম
নিভৃত প্রেম
– অমিতাভ সরকারসহসা একি অঘটন;
পুঞ্জ পুঞ্জ দুঃখগুলো জমাট বেঁধে
এক আকাশ মেঘ তৈরি হল।
হারিয়ে গেল কবিতার শব্দগুলো।
বৃষ্টি নামল, অঝোর ধারায় বৃষ্টি।
ঝাপসা চারিদিক তুমি হারিয়ে গেলে,
বৃষ্টির জানালা তোমার খোঁজ দিতে পারল না।
অবক্ত প্রেম থেকে গেল হৃদয়ের গভীরে ছিন্নভিন্ন অবস্থায়।
এক সময় তারা ফুটল নীল আকাশে,
জোনাকির দল এসে আবেগ মাখিয়ে গেল।বাঁশপাতার দোলা হাওয়া মাখিয়ে গেল।
তবুও তুমি এসে বৃষ্টির জানালা ভেদ করে আমায় দেখা দাও নি।
যেটা আমি গভীরভাবে চেয়েছিলাম অন্তত সেই মুহূর্তে।
ব্যথাতুর সেই মুহূর্ত আজও কেঁদে কেঁদে মরে। -
কবিতা- বসন্ত এসেছিল
বসন্ত এসেছিল
-অমিতাভ সরকারলিপিকার সঙ্গে দেখা হয়েছিলো
বীরভূমের এক নির্জন রাস্তায়।
দু’পাশে গাছ ছিল; কৃষ্ণচুড়া ছিল, রাধাচূড়া ছিল আর ছিল সুন্দর একটা কাজু গাছ।
রাস্তার একপাশে প্রশস্ত মাঠ। কাঁকর বিছানো লাল মাটি।
অদূরে হাটছিল। ওখানে পলাশ, শিমুল ছিল।
একপাশে শান বাঁধানো বটগাছ ছিল। হাটে বেচাকেনা ছিল।
সাঁওতাল মেয়েদের ভিড় ছিল। কুচ কুচে মাথায় চুল ছিল। চুলের বেনিতে বনফুল ছিল।
হাটে কাঁচের চুড়ি ছিল, নানা রংয়ের মাথায় বাঁধা ফিতে ছিল, ছোট্ট ছোট্ট পুতুল ছিল।
তাল পাতার টুপি ছিল। হাটে বিক্রির জন্য কচু ছিল, আলু বেগুন পেঁয়াজ ছিল, পাঁঠার মাংস ছিল, ক্যানেলের কুচ মাছ ছিল।
আর ছিল আদিবাসী মেয়ের কাছে পাকানো শন। চটে বিছানো খেড় । মুড়ি, বেগুনি, চপ ছিল। সবার মুখে অনাবিল হাসি ছিল। বাউলের একতারা ছিল। মুখে প্রেমের গান ছিল।লিপিকার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। গায়ের রং কালো ছিল। সুন্দর দাঁতের হাসি ছিল। মিষ্টি মুখ ছিল। কথার মধ্যে আবেগ ছিল। ভালোলাগা ছিল। প্রেমের আবেশ ছিল। শরীরে উষ্ণ আতর ছিল। আকাশ নীল ছিল। শিমুল মেশানো বাতাস ছিল। খড়িমাটির সাদা আবির ছিল। পেয়ারা তলায় হৃদয় দোল খেয়েছিলো।
এমন সময় বাস এসে দাঁড়ালো। বাসে উঠতে উঠতে বিদায়ের হাত নড়ে ছিল।
লিপিকার চোখ দিয়ে দু’ফোঁটা জল গড়িয়েছিল।