-
কবিতা- বসন্ত বাতাস
বসন্ত বাতাস
– অমিতাভ সরকারমাঘের সকাল বড্ড ভালো,
ঠান্ডা বাতাস রোদ্রজ্জল।
আলোয়ান গায়ে বড্ড আরাম,
শিশিরের মুখে জ্বলছে আলো।চন্দ্রমল্লিকার হাসির ঝলক,
গাঁদার গায়ে বাসন্তী রং।
চন্দ্রমল্লিকার বাতাস দোলন,
কনকচাঁপার দুলছে নোলক।কুলের গন্ধে দারুণ মোহ,
কিশোর কিশোরী ভীষণ পাগল।
শাঁখালুর রং শঙ্খ বরণ,
শ্রীপঞ্চমীর বার্তাবহ।বাতাস বইছে এলোমেলো,
মনের মাঝে সুরভি এলো।
নীল আকাশ ডাকছে আই,
বসন্তের রঙে ডানা মেলো -
কবিতা- পদধ্বনি
পদধ্বনি
-অমিতাভ সরকারপূর্বরাগ শুরু হয়ে গেছে, বাতাস এলোমেলো,
কান পাতলে পাতা ঝরার শব্দ, সূর্যের উত্তাপ বলছে আমি আসছি।
হাওয়াতে মহুলের মৃদু গন্ধ।
সাঁওতাল পল্লীতে ধামসা মাদলের গোছগাছ শুরু হয়ে গেছে।
রক্তকরবী উঁকি দিয়েছে।
বাসবি তুমি তো কাঁচা হলুদ মেখেছো।
শীতের রুক্ষতা কাটিয়ে নিজেকে সাজিয়ে নেয়া।
মনের মাঝে আন্দোলন শুরু হয়েছে, বাসন্তী রঙেউড়তে ইচ্ছে করছে।
সদ্য কিশোরীরা শাড়ি ব্লাউজ এর খোঁজ করছে।
সর্ষে ফুলের সঙ্গে রঙ মেলাচ্ছে।চন্দ্রমল্লিকা, জিনিয়া তোমরা হাসছো কেন?
আম্রমুকুলও হাসি সরাচ্ছে, যবের শীষ দোল খাচ্ছে, পলাশ মৃদু মৃদু হাসি ছড়াচ্ছে।
সদ্য যুবতীরা আল্পনার রং খুঁজছে মনের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে।
অনেকে রক্ত গোলাপ এর খোঁজ নিয়ে রাখছে বাগদেবীর পূজোর দিন প্রেম নিবেদনের জন্য।
বাসবি তুমিতো কাঁচা হলুদ মেখে রয়েছো!! -
কবিতা- খেয়ালি রঙ
খেয়ালি রঙ
-অমিতাভ সরকারকলমের বয়স হয় না, বয়স হয়না আঁচরের!
কূজ হয় শরীর, চুলে পাক ধরে, চোখে চশমা।
তবুও সবুজ মন খুঁজে বেড়ায় তোমায়।
ঝাপসা চোখে প্রতিমা আঁকি, গালে বসাই গোলাপি রং,
ঠোঁট রাঙাই চাপা বেগুনি রং দিয়ে।
খুঁজে বেড়াই চোখের পাপড়ির মাঝে কালো মাসকারা।
কালো কেশে গুঁজে দিতে ইচ্ছে করে কচি টকটকে লাল গোলাপ ।
ঝকঝকে দাঁত খুঁজি হাসির মাঝ দিয়ে।
হাতের আঙ্গুলের নখ রাঙিয়েতুলি নানা রঙে।
কথার উত্তাপ খোঁজ নেয় আলপনার।কলমের বয়স হয় না, জং ধরেনি এখনো।
তোমার কৈশোর উত্তীর্ণ বয়সটা এখনো চোখের সামনে ভেসে চলেছে।
তুমি কি এখনো তেমনি আছো?
ফিসফিস করে বলবেনা সে মনের কথাগুলো,
যেখানে নিশ্চুপে প্রেম ছিল,ভালোবাসা ছিল শুধু তোমার আর আমার একান্তের। সময় উত্তীর্ণ হতো গোধূলি বেলার শেষে, ছুঁয়ে যেত রঙিন মেঘের কনা।এখনো ভাবি, খেয়ালী মন ভেসে বেড়ায় উদাস হয়ে।
হয়তো এক বুক যন্ত্রণা এখনো জমে আছে বুকে।
হয়তোবা চাপা উচ্ছ্বাস নিয়ে যায় সেই দিগন্তের পারে!!
তাই কলমের মন এখনো সবুজ হয়ে আছে।
তুমি কি বুঝতে পারো এখনো? -
কবিতা- হারানো তুমি
হারানো তুমি
-অমিতাভ সরকারবর্ষ শেষের কবিতা এঁকে রাখি তোমাকে নিয়ে।
তুমি ছিলে তুমি চলে গেলে,
মাঝখানে বিস্তর পথ ;–কত গল্প, কত কথা, কত মান, কত অভিমান।
স্মৃতিতে মিশে আছ তুমি, হাওয়ায় উড়ে যাওয়া ওড়নাকে ধরে রাখা, হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়া।
মুখের উপর উড়ে আসা চুলকে যত্নে রাখা।
মনে পড়ে একাদশীর চাঁদ হাসতে হাসতে আমাদের দুজনের কাছে এসেছিল।
দুজনে হাত ধরে ধ্রুবতারা দেখেছিলাম।
একদিন শুকতারা দেখতে গিয়ে দুজনে দুঃখ পেয়েছিলাম ,অকারনে অভিমান।
মনে পড়ে বটগাছটার কথা, বটের ঝুরি ধরে কত কথা। সময় হারিয়ে যেত সেখানে।
ভাঙ্গা চাতাল, এঁদো পুকুরপাড় , ডুমুর গাছের ছায়া,বৈচি ফলের গল্প।
আরশির সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখা, বিভিন্ন আঙ্গিকে।
হয়তোবা সময়ের অপচয় ছিল কিন্তু এ এক আলাদা পরিতৃপ্তি অন্য এক উন্মাদনা।
তুমি গেছো চলে অনেক দূরে। যা কিছু রেখে গেছ সবই তো স্মৃতি, ইতিহাস হয়ে পড়ে আছে।
সময়ের অবক্ষয়ে একসময় বিস্তৃতি হয়ে যাবে।
অমোঘ নিয়মে যা চলে যায় তা চলে যায় কোনদিন ফিরে আসে না।
কখনবা ইতিহাসের পাতায় কখনবা অবক্ষয়ে শেষ হয়।
বর্ষ শেষের পাতা উল্টাতে গিয়ে এই অনুভূতি গুলো বারবার দুঃখ দিল।
স্মৃতি ও বিস্মৃতির মাঝে তোমার ভেজা ওষ্ঠ আজও মনে পড়ে।
জীবনের শেষ দিনেও হয়তো তুমি বেঁচে থাকবে তোমার নরম পরশের অনুভূতির মাঝে।। -
কবিতা- দুঃসময়
দুঃসময়
-অমিতাভ সরকারহারিয়ে আছি দুঃস্বপ্নের মধ্যে,
ইচ্ছেগুলো কোথায় গেছে জানিনা,
চোখের সামনে ভেসে আসছে আগুনের লেলিহান শিখা।
হাড় বারকরা ট্রেনের কামরা, জ্বলন্ত বাস, অগ্নিদগ্ধ রেলষ্টেশন,
সরকারি দপ্তর, লুটপাট, কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী, মা মেয়ের আর্তনাদ,
মুমূর্ষ রোগীর কাঁপুনি, আত্মরক্ষার দৌড় আর পেট্রোলের জ্যরিকেন হাতে কি উল্লাস! উন্মত্ত কণ্ঠস্বর।
কিংকর্তব্য বিমুঢ় আমি।সত্যি বলছি সোনা কিছু ভাবার মতো অবস্থা আমার ছিলনা।
শীতের প্রথম রোদে গা এলিয়ে শুয়ে ছিলাম –
আমার বার্ধক্যের জন্যে রচিত ব্যালকনিতে দিশাহীন সপ্ন সায়রে।
তুমি কখন এসে দাঁড়িয়েছিলে শিয়রে বুঝতে পারিনি,
মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়াতে সম্বিত ফিরে পেলাম!
অপলকে তোমার দিকে—-
ঝরে পড়ছে থোপ থোপ সুস্থ গনতান্ত্রিক বোধ হৃদয় বেয়ে! -
কবিতা- রুমি তোর জন্য
রুমি তোর জন্য
-অমিতাভ সরকারকল্পনায় সাগর আসে কত কিছু খুঁজে মরি,
কল্পনা ছুঁঁই কোথা থেকে, সেটাও তো হাতরাই।
মনন চেতনা আনে, চেতনা আনে অনুভূতি,
অনুভূতির পিঠে চেপে কল্পনার সায়রে ভাসা।এঁকে ফেলি রুমি তোর স্লিভলেস কুন্তল,
মাশকারা চোখে প্রেমের আগুন,
লিপস্টিক ঘষে দিই নূড লিপে।
চকচকে গালে আপেল রং, কপালে বাহারি রঙের বাঁকা টিপ।তুইতো বলেছিলি রুমি আর্ট কলেজে ভর্তি হতে।
ক্যানভাসে তুলে ধরবি কত কি, প্রকৃতি পাহাড়, ঝরনা
পাখি, নদী সমুদ্র, সূর্য কিরণে ভাসিয়ে দিবি কত রূপ।
কত ললনাকে তুলে আনবি তোর রঙের ছোঁয়ায়। কথায় শ্লেষ ছিল!বল রুমি পেরেছি তো আমি তোকে কল্পনার সায়র থেকে তুলে নিয়ে
আমার হৃদয়ের ক্যানভাসে নিয়ে আসতে।
এরপরেও কি তুই আমায় বলবি তোর জন্য আমি নই।
সেদিনের পেন্সিলে আঁকা রুমি আর আজ আর্ট কলেজের অভিজ্ঞতায় আঁকা রুমি কত তফাৎ। -
মুক্তগদ্য- নস্টালজিক
নস্টালজিক
– অমিতাভ সরকারসুমনা তোর দ্বীপ আমি কবে দখল করতে চেয়েছিলাম সেই কিশোরী বেলায়। কস্তুরীর গন্ধ ছিল। পাগলামি ছিল কিনা জানি না। বাষ্প ছিল, নীল সমুদ্রের গহীন থেকে বাষ্প ছিল। চাপ চাপ লাভা নির্গত হয়ে গলে গলে সমুদ্রে পড়ছিল।
তীব্র যন্ত্রণায় পাহাড় থেকে ঝরে পড়ছিল জল। নাম পেয়েছিল ঝর্ণা। সুমনা তুই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়তিস। নিস্পলক দৃষ্টিতে গ্রাস করতে চাইতাম। তীব্র গতি ছিল ঝর্ণার জলে। সমুদ্রের ডাকছিল। কলকলিয়ে নুপুর বাজিয়ে চলে গেলি।
নদীপারের গাছটা এখন বৃদ্ধ হয়েছে। বৈকালিক ভ্রমণে গাছটার নিচে এসে দাঁড়ালে কস্তুরীর গন্ধ আসে, ঝর্নার নৃত্য, কলকলানি, কৈশোর উত্তীর্ণ ছেলেমানুষি। নীল সমুদ্রের বাষ্প চশমা গলিয়ে দু’টো নয়ন ভার করে। দীর্ঘশ্বাস পড়ে। বিশ্বাস কর সুমনা।
-
মুক্ত গদ্য- ব্যথার সান্নিধ্য
ব্যথার সান্নিধ্য
– অমিতাভ সরকারমোমবাতি জ্বলতে জ্বলতে প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেল। এখনো টিপ টিপে আলো আছে। নিভে যাবে কিছুক্ষণ বাদে। এখন সে চাইছে পলতেটা উস্কে দেক কেউ; পৃথিবীকে আরো কিছুটা আলোময় দেখাই।
ব্যথা তোর অপেক্ষায় আমি আছি অন্তত এই মুহূর্তে তোকে দেখে যেতে চাই। প্রতীক্ষার হোক অবসান। তুই কি শুধু ব্যথা হয়েই থেকে যাবি।
তোর অস্তিত্ব দেখাবি না? তোর আভিজাত্য দিয়ে অন্তত একবার আমাকে মথিত কর।এভাবেই কাউকে চাইলে পাওয়া যায় না। তার দেয়া কষ্ট পেতে চাইছি সে কষ্ট দিতে চাইছে না।
কেউ ভালোবাসা দিতে চাইছে সেটাও নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। মোমবাতি আলো দিতে চাইছে সেও প্রায় নিভে যাবে কিছুক্ষণ বাদে।আলো দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা তার। জীবন এভাবেই রচিত হয়। চাওয়া না চাওয়ার দোলাচলে। অনেক কিছুই পাওয়া যায় জীবনে। আবার অনেক কিছু চেয়েও পাওয়া যায় না। তবুও ব্যথার প্রকট অনুভূতি চাই।
-
কবিতা- বিষন্ন বলাকা
বিষন্ন বলাকা
-অমিতাভ সরকারআমিতো তোমাকে বিষণ্ন বলাকার মতন দেখতে চাইনি।
তোমার দুঃখ, তোমার কষ্ট, তোমার ভাবাবেগ, তোমার আনন্দ-উচ্ছ্বাস,
সবকিছুই তো রেখেছিলে আমার জন্য।
কোন এক গোলার্ধের ভাবনা ভাবতে ভাবতে বিষন্নতা চেপে বসেছিল আমাকে,
তোমার মধ্যেও দেখতে পেলাম বিষন্ন বলাকার ছাপ।
আমি হারাতে থাকলাম অনেক কিছু, যেন তোমাকেও!
বাতায়ন খোলা, আমি লোহার শিক ধরে দাঁড়িয়ে, তুমি ওপারে বিষন্নতায় আলুথালু।
অন্ধকার নামে, জোনাক জ্বলা দেয়ালের গায়ে এসে বসে,
টিপ টিপ এ আলো, মৃদু মন্দ বাতাস, দক্ষিণের কোন বেয়ে হাসনুহানার গন্ধ।
নিকষ আকাশে তারারা কান পেতে শোনে তোমার আমার বিষন্নতার কথা।
তুমি যেন বিড়বিড় করে কি বলছিলে? আর আমার উদাস কথাগুলো।
তুমি বলছিলে কবিতা আঁকতে শেখনি।
আমি বলেছিলাম তোমার চাঁদপানা মুখখানা আমার কবিতার আলপনা।
ওখানে বলাকার বিষণ্ণতা নেই, আছে শুধু তোমার আর আমার বিশ্বাসের কথা।
সারা জীবনের গানের বিস্তার।
-
চিঠি- উন্নাসিক
উন্নাসিক
-অমিতাভ সরকারভীষণ কৃপণ শব্দ দিয়ে তোমাকে চিঠি লিখব ভেবেছিলাম কিন্তু হল কই?
স্বমহিমায় সেই মথিত কথাগুলোই তো বারবার আসতে শুরু করেছে। সুচরিতাসু কেন তুমি বারবার আমার স্বপ্নের মাঝে এসে আমাকে অনুপ্রাণিত করো তোমার দুটি নয়নের দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য। আমি দেখি আর অনুভব করি, তুমি কি লাজুক তাইনা?
আমি বসে থাকি বাতায়নে তোমার অপেক্ষায়, অনেক অপেক্ষায়। তুমি পথ ধরে সোজা চলে যাও, তুমি মুখ তুলো না একটিবারের জন্য। আমি চাই, হ্যাঁ আমি চাই তুমি একটু মুখ তুলে আমার দিকে চাইবে। তোমার এটা উন্নাসিকতা কিনা জানিনা তবে তোমার এই ভাবনাটা তোমাকে আরও কাছে পাওয়ার চাহিদা বাড়িয়ে দেয়।মাঝে মাঝে ভাবি এই ভাবেই তো কবিতার জন্ম হয়। তুমিতো কবিতা আমার প্রথম ভালোবাসা, আমার প্রথম প্রেম তুমি, দ্বিধা নাই বলতে। আমি নিবেদিত তুমি কি গ্রহণ করবে না? না অবক্ত হয়ে আমার হৃদয় মন্দির আলোকিত রাখবে জীবনের প্রথম ভালোবাসা হয়ে। এই জীবনের অনাস্বাদিত সম্পদ হয়ে।একি স্বপ্নের মায়াজালে আমি আবদ্ধ!
না না আমি আকন্দ ফুল হয়ে সারা জীবন থেকে যাব।আমার সোহাগ তোমার শ্রী চরণে গিয়ে তোমাকে আপ্লুত করবেই করবে। তুমি আমাকে গ্রহণ করতে বাধ্য হবেই এই বিশ্বাসই আমার ভালোবাসা ,আমার প্রথম প্রেম। একটা দিনও তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না। তোমার উন্নাসিকতার এটাই হবে শাস্তি।