-
মুক্তগদ্য- কার্তিকের সোনালী মেঘ
কার্তিকের সোনালী মেঘ
– অমিতাভ সরকারমুখ নিচু করে হাঁটতে হাঁটতে মুখ তুলে দেখো,
হালকা হাসি লেগে থাকে ঠোঁটে কি যেন বলতে চেয়েও বলা হয় না তোমার।
কার্তিকের হিমেল সকালটা রেখেছিলাম তোমার জন্য;–শিশিরের মেঘ থাকবে পাকা ধানে, পেছনে দাঁড়িয়ে থাকবে তুমি, তোমার সোনালী চুল আর পাকা ধান একাকার হয়ে থাকবে। আমি হেমন্তের ভেজা চোখ দিয়ে তোমাকে দেখবো কত অপরূপ তুমি। রজনীগন্ধা ফুটতে শুরু করেছে, টগর তো আছেই, কাগজ ফুলের নকশী কাঁথা সেলাই হয়েছে চারিদিকে।
এখন কার্তিকের অন্ধকার রাত। কার্তিকের পাকা ধানের ঘ্রান ম ম করছে। হাতছানি দিয়ে ডাকছে পরিযায়ী পাখির দল কে। আকাশ বিদীর্ণ করে ছুটে আসছে পাখির দল, ধীরে ধীরে নেমে পড়ছে কার্তিকের হিমেল মাঠে। রচনা করে ফেলবে অস্থায়ী বাসস্থান আশপাশের গাছপালায় পুকুরপাড়ে, নদীর ধারে। আমি আকাশ পানে চেয়ে চেয়ে ফুটন্ত তারাদের পাশে পাশে তোমাকে খুঁজে ফেলি। কখনো বা তোমার কথা ভেবে ভেবে পার করি রাত।
হেমন্তের শিশির ভেজা সকালে কাক ডাক দেয় কাকা করে, হয়তোবা শিশিরকে মেঘভেবে ময়ূরের দল পাখনা তুলে নৃত্য শুরু করে। ধীরে ধীরে ভোর হয়। সূর্য ফলক হঠাৎ ধানে ছড়িয়ে পড়ে। ওপারে তুমি সোনালী চুল মেলে নিচু চোখের আড়াল থেকে দেখে যাচ্ছো, তোমার অবক্ত বাসনায় কি যেন মায়ার আকর্ষণ। নতুবা হেমন্তের মেঘ। -
কবিতা- মনন
মনন
– অমিতাভ সরকারএক অনুভূতিতে আকাশ ছুঁয়ে দেখা যায়,
অন্য অনুভূতিতে পূর্ণ গ্রাস সূর্যগ্রহণ।
এক লহমায় তোমাকে দেখে ফেলা,
না দেখার অনুযোগ নিয়ে তোমাকে বলা।সবুজ দেখতে গিয়ে গোলাপে নত মুখ,
ঝর্নার জল দেখতে গিয়ে বৃষ্টিকে ছুঁয়ে ফেলা।
মেঘের অনুভূতি খুঁজতে গিয়ে বাষ্প কে ধরে ফেলা,
তারার ঝিকিমিকি দেখতে গিয়ে তোমার চোখের আলো দেখা।
আনন্দধারা খুঁজতে গিয়ে তোমার বিরহের ছবি এঁকে ফেলা,
গদ্যের জগতে বসে ছিলে তুমি আমার কবিতা হলো আঁকা। -
কবিতা- আলপনার ভূবন
আলপনার ভূবন
-অমিতাভ সরকারমনের নৈসর্গ যখন বাস্তবে মিলে যায়,
রোমাঞ্চকর মাধূর্যে ভরে জীবন।
বলোনা আমরা কি চাইনি সে জীবন!জীবন স্রোতের বিচিত্র আলপনায় পা রেখে
চলতে চলতে কোন এক সিক্ত আলপনায় হরকে গেল পা।
তুমি এক নতুন নৈসর্গখুঁজে পেলে।
অনাবিল আনন্দ সেথায়, পারিজাতের সুগন্ধ,
পালঙ্কে চাঁদ ভাসে ,গুনগুন করে ঘুমের গান,
স্বপ্ন সায়র ঢেউ খেলে যায় দুচোখ বেয়ে।ঘুমানন্দে সুখময়।
নদীর ওপার ভাঙ্গে ঘুরন্ত স্রোতে, ভেঙে পড়ে কাশবন, শরতের শিউলি ভরা তল ।
অনাবিল আনন্দে ভেসে যায় শিশির সিক্ত দুর্বা ,
শতদল, ভাটফুল, কত কি।
দেউলে ঘন্টা বাজে, শঙ্খ ধ্বনিতে মথিত ভূবন।
অলক্তরাগে সূর্য নামে মোর ঘরে। একি বোধনের
আমন্ত্রণ! ঘুম ভাঙ্গে স্বপ্ন চলে যায়।আমিতো সেই আছি আলপনার পায়ে পায়ে।
-
কবিতা- শুধুই না
শুধুই না
– অমিতাভ সরকারকাব্য পাঠ হলো না আমার,
কাব্য হয়েও এলেনা।
দূর হতে শুধু সোহাগ দিলে,
তোমায় চেনা হলো না।প্রেমের মোহে বিভোর ছিলাম,
কৃষ্ণচূড়াও হোলে না।
পুজোর থালা রইল সাজানো,
পূজা হয়েও এলেনা।প্রেমের টিয়া উড়ছে গাছে,
প্রেমের চিঠি এলো না।
বাউল এসে নাচল শুধু,
একতারা তো বাজলো না।রাঙামাটির দেশে গেলাম,
শাল পিয়াল দেখল না।
কালো মেয়ে দেখেই এলাম,
সেও ভালোবাসলো না।আমার শুধু পথ দেখা কাজ,
পথের শেষ তো পেলাম না।
সামনে শুধু মরীচিকা,
তার নাগালও পেলাম না। -
কবিতা- আমলকি গন্ধে
আমলকি গন্ধে
-আমি অমিতাভতুমি কি এসেছিলে একবারও বলতে?
কালো মেঘ সরিয়ে, সাদা মেঘ বললে;—আমি এসেছি।
আমার সকালে শিউলি ফুটেছে,
দূর্বা গুলো শিশির মুখে হাসছে।
কমলালয়ে টলটলে জলে কমল কেমন ভাসছে।
তুমি এলে পরে উদার হয়ে, কোমল হাসির ভালোবাসা নিয়ে।শরৎ আদরে মন ভেসে ছিল, চাহনি তে তোমার প্রেম ভেসে এলো।
তোমার হাসি ছিল পদ্ম চাকার মত, দাঁতগুলো টগর ফুল।
তুমি এলে পূজোর ঘন্টা বাজিয়ে, হাতে কাশের গুচ্ছ, শেফালী মালা,ডালায় নবীন ধানের মঞ্জরি, নীল পদ্ম, সবুজ দূর্বা, আম্রপল্লব ,রঙিন শারদীয় ফুল।
লাল পার রেশমি শাড়ি, আলক্ত পায়ে ,আমলকি গন্ধে তুমি অপরুপা।তুমি পুজোর সৌন্দর্য।আমার উৎসব।
-
কবিতা- স্মৃতি
স্মৃতি
-অমিতাভ সরকারহঠাৎ মনটা খারাপ হলো,
কেন হলো নিজেই বুঝিনা।
তুমি তো বলেই গেলে ক’দিন দেখা হচ্ছে না।জোনা জলপ্রপাতের কথা মনে পড়ে গেল।
দু’পাশ দিয়ে পাহাড়ি জঙ্গল,
পিচঢালা রাস্তা। বিরাট পাথরের
উপরে দাঁড়িয়ে, পাহাড় থেকে
ঝরে পড়া জলের খেলা দেখছিলাম।
ছিটানো জলের জানালা, ওপারে রামধনু ।
নানা রংয়ের প্রজাপতির ওড়াউড়ি,
দেখতে দেখতে পাথরের ঢালে ,কোন অজান্তে তোমাকে আমি জড়িয়ে ধরেছিলাম আমি নিজেই জানিনা।
ফিরছিলাম অ্যামপালা গাড়িতে ।
তুমি বসে ছিলে আমার পাশে,
প্রহরী বিহিন রেলগেট ,
পাহাড়ে বাঁকানো রেলপথ।
আমাদের গাড়ি প্রহরী হীন
রেল পথের মাঝখানে,
বাঁকানো রেলপথে দ্রুতগতিতে
এক ট্রেন এসে হাজির। আঁতকে উঠে
পাশাপাশি যে যাকে পেরেছি চেপে ধরেছি
চোখ বন্ধ করে।
অভিজ্ঞ ড্রাইভার বিচলিত না হয়ে,
শুধু ক্লাচের উপর ভর করে
গাড়ি টেনে বার করে নিল।
মুহূর্তের মধ্যে বিদ্যুৎ গতিতে ট্রেন চলে গেল, তখনো তুমি জড়িয়ে আমাকে।
দু’ ফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ল। -
কবিতা- ভোরের আলোতে
ভোরের আলোতে
-অমিতাভ সরকারমেঘের আড়ালে ভোরের সূর্য প্রকাশে,
জলজ জমিতে ভাঙ্গা আলো ভাসে।
তোমার রূপ যে সোনার বরণ,
দেখ সকলের হৃদয় করেছ হরণ।জল ধরে আছে সোনার জমি,
ধানের চারাতে মৃদু বাতাসের ধ্বনী।
শোন শঙ্খ ধ্বনি সূর্য উদয়নে,
সকলের হাসি খিল খিলে মনে।ভৈরবীর ধ্বনিতে মন ভরে যায়,
সকালের পাখিগুলো আকাশ ভরায়।
বাগানে বর্ষাতি ফুল ডাক দেয়,
প্রজাপতি নানা রঙে বারবার ধায়।নব পরিণীতা বধু ঘোমটা মাথাতে,
মৃদু পায়ে লাজে সাজি হাতেতে।
মন খুশি খুশি ফুল তুলিবাড়ে,
প্রাণের শ্রীহরির চরণে অঞ্জলি তরে। -
কবিতা- অচেনা মিছিল
অচেনা মিছিল
– অমিতাভ সরকারচিনে নিতে পার মিছিলের মাঝে আমাকে,
যদি ঘৃণা খাকে আমার উপরে অবিশ্বাসের।
নখের আঁচড় যদি ক্ষত-বিক্ষত করে থাকে,
মনের শিউলি ফোটার আগে যদি বিধ্বস্ত হয়ে থাক প্রলুব্ধ বাতাসে অসহায় হয়ে।
শকুনের দৃষ্টি ভাগাড়ে নির্লজ্জ শিকারের উচ্ছিষ্টের দিকে।হতভাগী অসহায় ছিল বীরদর্পে চলা মিছিলের সারথীর কাছে।
মধ্যদুপুরের আলোয়ান গায়ে ছিল তোমার, তুমি দেখেছিলে বর্বর ,
পিশাচ, রাক্ষসকে মিছিলের পুরোভাগে।
ক্রোধে তুমি রক্তবর্ণা, অট্টহাসিতে মিছিল কেঁপে উঠেছিল,
বুলেটের আঘাতে মিছিলের শ্লোগান স্তব্ধ।
পেরেছি পেরেছি বলে বেরিয়ে গেল ক্রোধ বর্ণা অপর এক নারী।
আকাশের শকুন তীর বেগে ছুটে এল ভাগাড়ে।
দুপুরের আলোয়ান সরে গেছে, স্নিগ্ধ দখিনা বাতাস।
প্রয়োজন হয় না মিথ্যা মিছিলের। অস্তিত্ব! অন্ধকারে চলে গেছে আমার।
-
কবিতা- স্বপ্নের পৃথিবী
স্বপ্নের পৃথিবী
– অমিতাভ সরকারতুমি ছিলে মোর অন্তরের বাসনা,
সোহাগী মন ছিল এলে তুমি ঘরে।
ছেড়ে এলে সবকিছু আনন্দের তরে,
বৃন্দাবন রূপ নিল নতুন বাসরে।আনন্দ আশ্রমে এলো নতুন ধ্রুবতারা,
আনন্দে উৎফুল্ল সবাই হলো দিশেহারা।
চাঁদের আলো আজ ঢেউ তুলে এলো ,
চরাচর বিকশিত যেন সবকিছু পেল।হাত দু’টি মুষ্টিবদ্ধ প্রতিশ্রুতির পর্ব,
আগামীর পৃথিবী শুধু তার শর্ত।
চন্দ্রিমার আলো শান্ত পরিবেশ;—
ক্ষুধাহীন পৃথিবী, কবিতার দেশ। -
কবিতা- স্বপ্নে দেখা
স্বপ্নে দেখা
-অমিতাভ সরকারএক অতৃপ্তির রাতে তৃপ্তি এসে হাজির হলো,
বাতায়নে গভীর রাতে তারারা হাজির ছিল।
চাপ চাপ জোনাক জ্বলা, মোলায়েম চাঁদের আলো,
ঝিরি ঝিরি বাতাস, হাসনুহানার সুগন্ধ ঘরের আনাচে কানাচে।
তুমি প্রেম এলে,আমাকে, আমার মনকে, আমার হৃদয়কে,আমারঅস্তিত্বকে উৎফুল্লিত করলে।
আমি আমার পালঙ্কে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তোমাকে অনুভব করলাম ।
হৃদয় জুড়ালে আমার।সহসা তুমি চলে গেলে কেন?
খান খান হয়ে গেল আমার জীবন।
আছড়ে পড়ল সমুদ্রের ঢেউ পারে একের পর এক।
আমি আছাড় খেতে থাকলাম সেই ঢেউয়ে।
কি যন্ত্রনা বোঝানোর ক্ষমতা নেই আমার।
হঠাৎ বসন্তের কোকিল ডেকে উঠল কুহু কুহু রবে।
বাতায়নের ওপারে গোছা গোছা তখন সজনে ফুল,
দূরান্তে হলুদ রঙের সরষে ফুল, অফুরন্ত নানা রঙের ফুলের বাহার।
তুমি আবার খিলখিল করে হেসে উঠলে।
চা হয়েছে ওঠো শব্দে তুমি হারিয়ে গেলে আবার।
মায়াবী রাত হারিয়ে গেল।
স্নান সেরে লাল পেড়ে শাড়ি পড়ে ,এলো চুলে, চায়ের ট্রে হাতে তুমি অনন্যা রুমা।
আমার বাস্তব জীবন।