• কবিতা

    কবিতা- বেমানান বসন্ত

    বেমানান বসন্ত
    -অযান্ত্রিক

     


    এই যে ছড়ালে আবীর বসন্তের দোহাই,
    ধকে দিয়ে কত কান্না ভেজা মুখ।
    সেটা কি শুধু সময় রাঙানোর চেষ্টাই,
    নাকি বোঝালে যুগের অসুখ।

    কত রং দিতে পারবে তোমরা বলো,
    কি আবিরে ঢেকে দেবে মরে যাওয়া মানুষ,
    এবার বসন্তে সবাই নাহয় চলো,
    পালন করি ভাইয়ের মৃত্যুর অশৌচ।

    লাল আবিরে মিশেছে মানুষের মৃত বিশ্বাস,
    গোলাপিতে ভাইয়ের জন্য ভয়।
    সবুজে খেলে বেড়াচ্ছে রাজনৈতিক উচ্ছাস,
    এই দ্বেষ তো আমার দেশ নয়।

    কোন রঙে হারানোর দুঃখে ফোঁটাবে হাসি,
    কি করে ভোলাবে ওদেরকে বাস্তব।
    যে দেখেছে সামনে কালো হিংসা সর্বনাশী,
    তাকে কি মানায় ,বসন্ত উৎসব।

  • কবিতা

    কবিতা- ঋণনাত্বক

    ঋণনাত্বক
    -অযান্ত্রিক

     


    যদি বলি ,ভালোবাসি তোমায় ,বিশ্বাস করবেনা,
    যদি নির্মেশ দৃষ্টি জালে জড়িয়ে রাখি কিছুক্ষন,
    যদি মুখের দিকে তাকিয়ে তৃপ্তিতে নিজেই হাসি,
    জানি ,কোনোটাই বিশ্বাস করবেনা বরং
    বুকের উপর টেনে নেবে না সরে যাওয়া আঁচল,
    ফিরিয়ে নেবে মুখ চরম বিরক্তিতে,
    চলে যেতে চাইবে চোখের আড়ালে,
    যেমন ,কস্তুরী হরিণ পালায় নিজের থেকে,
    ঝোঁপ ঝাড়, পেরিয়ে কাঁটাতার পেরিয়ে,
    ঢেকে রাখতে চাইবে চেয়ে থাকা চোখের থেকে,
    আসলে, জন্ম চরাচর থেকে মানুষ ভালবাসতে শিখেছে,
    তৃপ্তির জন্য নিজের পাওয়া গুলোকে লোভ নাম দিয়েছে,
    অথচ, আজও খালি চোখে দুটোর মধ্যে ফারাক,শিখলোনা।

  • কবিতা

    কবিতা- অনেক কথা

    অনেক কথা
    -অযান্ত্রিক

     


    অনেকেরই নিজের মতো একটা বৃষ্টি থাকে,
    থাকে নিজের একান্ত ব্যক্তিগত ঢলে পরা বিকেল।
    একটা মুখোমুখি সুপ্রভাত,একটা ক্লান্তির শুভ রাত্রি,
    চারটে দেওয়াল তোলা একটা নিজস্ব পৃথিবী।
    অথচ,কেউই জানে না সবার কাছে থাকে একটা আয়না।
    যেখানে প্রতিবিম্বের প্রশ্নের জবাবে উত্তর দেয়া কঠিন।
    অনেকেই রাস্তা পেরোয়, পথে কেউ এগিয়ে দেয় ভিখারির থালা,
    অনেকেই রাস্তায় বেরোয়, জানে না পথে লুকিয়ে আছে শরীর হারানো কলা।
    অনেকেই ফিরে আসে চেনা পথ ধরে, না দেখে অসহায় কোনো আর্তি,
    অনেকেই পেরোয় রুটির উঠোন, বোঝে না ওপারে আছে নিঃসঙ্গ সহযাত্রী।
    অনেকেই কাছে আসতে চেয়ে একটু একটু করে চলে যায় দূরে,
    তাগিদের ঠিকানায় নামহীন চিঠি দিয়ে আসে চেনা ভবঘুরে।
    সবাই বাঁচতে চায় গন্ডির আবডালে,দরজা খোলে না,
    যে প্রশ্ন নিজের দিকে আসে ধেয়ে, জানা উত্তর হাতে রেখে,
    অনেকেই কোনো কথাই বলে না।

  • কবিতা

    কবিতা- অগোচর

    অগোচর
    -অযান্ত্রিক

     


    ক্ষমা চাওয়াটা কোনো বড় ব্যাপার নয়,কিন্তু কার কাছে চাই,
    ধ্যান মগ্ন তথাগত বোধিবৃক্ষ তলে ,ক্ষমাশীল শুষ্ক প্রস্রবণ।
    তার কাছে তো প্রবেশ সংরক্ষিত, তাহলে কার কাছে যাই,
    অথচ ,আমরা শান্ত পৃথিবীর কথা বলছি সারাক্ষন।

    তর্কপ্রবন মানুষের জন্মের হার বেশি,মৃত্যু অনেক কম,
    অথচ অবলীলায় অন্যেরা ফোঁটায় ফুল অন্যের বাগানে,
    আমার শুধু কোদাল,গাইতি শাবল জুড়ে একলা পরিশ্রম,
    মৌমাছি আসে প্রজাপতি আসে ,ফুল আসে না সেইখানে।

    জানি না অপরাধ কি,নিষেধাজ্ঞা জানি না, চাইবো ক্ষমা কার কাছে,
    বিচারক ,যারা চিরকাল হাততালির জন্ম দিয়েছে তারা বিপরীত শ্রেণী।
    রাস্তার এক পাশ দিয়ে যেতে যেতে অনেকেই অনুসরণ হারিয়ে ফেলেছে,
    হাত বাড়িয়ে মঞ্চের কাছে পৌঁছালেও কোনদিন কেউ তাদের মঞ্চে ডাকেনি।

    ক্ষমা চাওয়াটা কোনো বড় ব্যাপার নয়,কিন্তু কার কাছে চাই,
    ধ্যান মগ্ন তথাগত বোধিবৃক্ষ তলে ,ক্ষমাশীল শুষ্ক প্রস্রবণ।
    তার কাছে তো প্রবেশ সংরক্ষিত, তাহলে কার কাছে যাই,
    অথচ ,আমরা শান্ত পৃথিবীর কথা বলছি সারাক্ষন।

  • কবিতা

    কবিতা- পূজনীয় আঁধার

    পূজনীয় আঁধার
    অযান্ত্রিক

     


    এক এক করে পেরোয় চাঁদের সিঁড়ি ,তঞ্চকতা বাড়ে
    ধীরে ধীরে ক্ষয়ে আসে আলো জোৎস্না আঁধারে।
    এই সেই জোৎস্না এই সেই আলো ,অনন্ত পাপাচারী তৃষা,
    শতত পূর্ণ লগ্না প্রবাহিনী, কুহক ,মেয়ে ভোলানো প্রভা,
    চঞ্চলতা ছড়িয়ে একাকী রাতে, বলিয়েছে কতবার,
    “আহা,কি মনোরম কি অদ্ভুত সুন্দর, অলীক প্রবর”
    সে দোষেই আজ ক্ষয়িষ্ণু রূপালী জীবন ,বর্ধিত কৃষ্ণ গহ্বর।
    জানি,বেশ জানি, প্রহেলিকায় ভাসিয়েছো কত নবদম্পতি,
    উপমার হাত ধরে বিপরীত গোপন গাঢ় স্বরে,
    বলিয়েছ ,নারী ! নীতু চাঁদের মত সুন্দরী ,নিখুঁত জোৎস্নাতটে।
    কবির ভাবনায় ভাবনায় ওহে মৃদ পদচারিণী,আমি জানি,
    কতটা মিথ্যের দোষে তিলে তিলে ক্ষয়ে যাচ্ছো তুমি।
    পূর্ণিমা আলোয় যতদিন যতবার বিবিধ উপায়ে ,
    প্রলুব্ধিত চয়নে বলেছো তৃষ্ণার স্বরে ,আয় আয়।
    আমি আসিনি ,আমার আসিনা, আমরা জানি,
    জানি তুমি মিথ্যাচারী ,গৃহত্যাগী চেতনাকে ভাসাবে বার বার,
    আমাদের অনুগ্যতঃ রাখা আছে অমাবশ্যার কাছে,
    আমাদের পূজিত অন্ধকার ।

  • কবিতা

    কবিতা- তথাকথিত

    তথাকথিত
    -অযান্ত্রিক

     

    এই গায়ের সবুজ রাঙা জামা,ওই যে সুতির পাতলুন, ওগুলো নয়,
    চোখের কানাচ ভেজা নোনতা জলের দাগ,ওইটাই, ওইটাই শুধু সম্বল।
    আমরা তো উড়তে শিখিনি তবে পাখিদের দেখি, ডানায় ভরে বিস্ময়,
    দিগন্তের কাছ থেকে জেনে আসে অন্তের কত দেরী, ওইটাই মনোবল।

    ইট কাঠ পাথরের কথা বলে বলে ক্লান্ত হয়ে গেছে সংসারী দুপেয়ের দল,
    যারা কোনো নিভন্ত প্রদীপের আলোয়, ঝুঁকে পড়ে শিখেছে রক্তের বানান।
    শেষ বাজারের থেঁতলানো শাকের ক্লেদ মাটি ,কাদা, পুষ্টির বীর্য অবিকল,
    পড়ে আসা রোদের ঠিকানায় রাস্তার পাশে দড়ি দরার বিছানায় করে স্নান।

    মনের পিছনে ফিরে যাওয়া আটকাতে লাগে না, তিতিবিরক্ত অন্ধকারে,
    মানুষের মুখের ভিতর ফুটে ওঠে মানচিত্র, ভাগ হওয়া কত কত দেশ।
    যেভাবে ফুরালে নিশি, আজানে শোনায়, যা যেখানে ভুল, ক্ষমা কর তারে,
    শরীরী রেকাবি থেকে তুলে নিয়ে প্রথম আপেল, ঈশ্বর প্রতিদান, বেশ বেশ।

  • কবিতা

    কবিতা- খানিক দেরী হয়ে যায়

    খানিক দেরী হয়ে যায়
    -অযান্ত্রিক

     


    সেবারেও এসেছিলে,অনুষ্ঠানের একদম শেষে,
    বলে ছিলে ,”জানোই তো আমার খানিকটা দেরী হয়ে যায়”
    মুখে মুখে বিলোতে ,বিলোতে ভালোবাসা,দেরী হয়ে যায়।
    অন্য রকম ভালোবাসার মোহর লাগানো শরীরে,
    ফুরিয়ে আসে আলো,
    বাগানের দুর্বলতম গাছে দোলে নয়নতারা গতজন্মের হওয়ায়
    জানি বলেই মানি,”তোমার খানিকটা দেরী হয়ে যায়”

    আজও খোলা রেখেছি পান্থনিবাস,বাগানের রংচটা বেঞ্চি,
    শূন্যতায় তরুণ পলাশ আপন উরসে,হেসে ওঠেছে,
    কিন্তু ঝরেছে না পাতা।
    যাদের সাথে কথা হয়েছিলো গত বসন্ত মেলায়,
    কথা হয়েছিলো পাঁজরের মাঝে বন্দি করে রাখা,
    অন্য রকম ভালোবাসার হীরের টুকরো দেখানোর ,
    তারা সবাই এসে গেছে ,মঞ্চ প্রদক্ষিণা আলো ,বার বার নিস্ফল,
    ভাবছে এই বুঝি তুমি এলে,এই বুঝি বললে,
    “আমার খানিক দেরী হয়ে যায়”
    আমাদের কান গত সতেরো বছর ধরে রয়েছে ,অপেক্ষায়।

  • কবিতা

    কবিতা- বিবাদ বিষম

    বিবাদ বিষম
    -অযান্ত্রিক

     


    যেটুকু পাওয়ার ছিলো, যেটুকু ছিলো নিজের ভাগে,
    সেটা জানা হয়নি কোনোদিন,
    তবে, সেটুকু না পেলেও বিবাদ করিনা ।
    মনোবিদের দায় থাকে না ,অতীত ভোলানোর,
    লাল লাভা স্রোত থেমে গেলে “চা”ঠান্ডা হয়ে, পাশে বসে,
    না বলা কথার চলে নিঃশব্দ কথোপকথন,
    ঘামে ভেজা কলার থেকে নেমে আসে ,শৈত।
    পলক জানে যে টুকু দেখার সেটাই দেখা কর্তব্য,
    তার বেশী দেখলে ,
    চিৎকার করা ছাড়া ,উপাওয়ান্তর থাকে না।
    ভাগ্য আর হাসি ,হঠাৎ করে সরে গেলে পাশ থেকে,
    সুখ চিঠি দিয়ে আর না ফেরার কথা জানালে
    বিবাদ করি না,হাহুতাশ করিনা।
    শুধু দেখতে থাকি,
    দূরের কোনো বিন্দুতে এক হয় যাচ্ছে সোনালী আকাশ,
    পর্দা বিহীন ,আধো আলো, আধো অন্ধকার আমার ঘর,
    পাওয়া টুকু নিয়ে জানলায় বসি,বলি অস্ফুটে বলি
    ঈশ্বর !ঈশ্বর
    সবাইকে শান্তি দাও,ভালোবাসা দাও।

  • কবিতা

    কবিতা- কানন

    কানন
    -অযান্ত্রিক

     


    সরিও না পর্দা,এপার থেকে হলুদ লাগছে রোদের আবেগে,
    কারা যেনো, ওপারে বিছিয়ে দিয়েছে ধুধু মাঠ,শিশির,
    ঝমঝম পাকা ধানের গান,খড়ের বিছানা,
    যারা একদিন চাইতো “অমলকান্তি”রোদ্দুর হোক,
    তারা মেঘের চাদর ভালোবেসে আজ মানাচ্ছে শোক।

    হাতে না হয় কিছু থাক অশুদ্ধ, অপ্রতিম পাখির স্বভাবে,
    মলিন ছায়া মাখা বাতাস ছুঁয়ে যাক জানলা কপাটে।
    শান্ত সুস্থির ভাবে মৃদু কৌতুকে ,বলুক ,এসে গেছি,
    এসে গেছি দেখো ,ঝুকে পড়া মানুষ ,হেমন্ত উত্তাপে,
    যারা একদিন জানত অমলকান্তি রোদ্দুর হবে,
    তারা, পর্দার ওপারে হলুদ রোদের দিকে তাকিয়ে থাকে।

  • কবিতা

    কবিতা- যা বলতে চাইলাম

    যা বলতে চাইলাম
    -অযান্ত্রিক

     


    যা তোমার ভেতর থেকে উঠে আসে,
    যার হাত ধরে তুমি সূর্যকে চেনো সূর্য বলে,কিংবা,
    রাত,ঝড় বৃষ্টি,শিশির ,সেটাই প্রকৃতি।
    তুমি ক্লান্ত হলে, তৃষ্ণার্ত হলে ,ভাবো নদীর কাছে যাই
    দু হাত পেতে শুধু করুণাই চাই।
    তুমি মেঘের দিকে চেয়ে চেয়ে,মখমল ভেবে
    দিগন্তের দিকে গেছি ধেয়ে।
    পাখির কাছে ছুঁড়ে এসেছি উড়ে যাওয়া মন,
    তুমি ব্যথিত হৃদয় বয়ে, গেছ পাহাড়ের কাছে
    অস্ফুটে চেয়েছো করুণা ভিক্ষা পাত্র হাতে।
    কতবার ,নীরবতার প্রতিবর্ত ক্রিয়ার খোঁজে,
    জঙ্গলে পথ হারিয়েছো সহজে।
    রুক্ষ বনস্পতি ফাঁকে রেখেছো আর্তিটাকে,
    চেয়েছো মুক্তির সরল জানা পথ, ঝরাপাতার ঘাসে।
    এটাই প্রকৃতি, বোধ, যেটা মনের ভিতর থেকেই আসে।
    এর বেশী কিছু নয়।

<p>You cannot copy content of this page</p>