-
হেমন্তেরদিন
হেমন্তেরদিন
-অযান্ত্রিকআজ কোনো কথা বলোনা প্রিয়তমা, আজ নৈশব্দ্য ভালোবাসো,
আকাশের বুকে অগুনিত ফানুসের সারি,তারা কথা বলে শব্দহীনতায়।
কার্তিকের আকাশের বুকে সন্ধ্যা প্রদীপের আলোর জাগায় বিশ্বাসও,
মাধবীলতার গায়ে সদস্য শিশির আর ভ্রমরের কোনো একটানা কথায়,
আর সামিল হয়েও না।যতবার স্থিরতা আর শব্দহীনতার ফারাক খুঁজতে ছুটে গেছি আমি,
ততবার দেখেছি মধুকুপি ঘাসের বিরহ মাখা মাঠে, আয়েশ করে।
ঝুঁটি বাঁধা কোকিলা মোরগের সেনা খুঁজেছে খিদের মাশুল অথচ সংযমী,
কাঠ গোলাপের ঝাড়, মেঠো ইঁদুরের সান্তনা সাজিয়েছে পাপড়ির পরে।যতটা আঁধারের দরকারে, নকশী ফোটায় বিচ্ছুরণ শিল্পী ভালোবেসে,
মেনে নেয় আলোর হাতছানি, “শব্দের বাজিকর” সেতো সেরকম নয়।
অহেতুক কোটর যাপন চেনে প্রেমিকের চোখ,পেঁচা হয়ে নবান্নের মাসে,
প্ররোচিত সন্ধ্যা সারস ডুবন্ত সূর্যের গায়ে লিখে যায় ফেরার হয়নি সময়।আলোর নিশ্চুপ উদযাপনে মুহূর্তেরা পাহাড়ের মতন গভীর ও অগ্রগামী,
পূর্ণ যৌবনা ধানের বুকে ক্ষুধিত তৃপ্তিরা একে একে পূর্ণতায় হয়েছে বিলীন।
যতবার স্থিরতা আর শব্দহীনতার ফারাক খুঁজতে ছুটে গেছি আমি,
ততবার ধানের শীষে, মাধবীলতায় দেখছি হাতছানি হেমন্তের দিন। -
মেঘ
মেঘ
-অযান্ত্রিকমেঘ যেদিন দেখেছিলাম প্রথম ,
হলুদ শিফনের শাড়ি, সরু অক্সিডাইজ চুড়ি,
কপালের উপর হালকা বাদামী রঙের চুল,
ঠোঁটের কোনায় তিল।
একটা হাসি, গালের টোল মাখা,
সেদিন নাম দিয়েছিলাম মেঘ,আমার মনের আকাশে।
হয়তো কোন পোশাকি নাম ছিলো,
যেমন থাকে স্বরস্বতী পুজোয়,
কলেজ ক্যান্টিনে, গানের স্কুলের পথে,
হঠাৎ মিষ্টি হয়ে আসা বিকালে।
চারপাশের মানুষের ভিড়ে বন্ধু,
অথচ আমার মনের আকাশে মেঘ।কেউ যেন বলেছিলো গোঁড়া পরিবার, ভেবে এগোস,
কিন্তু বন্ধু তো নয় ,প্রেমই,
প্রেমে পড়লে কি আর ঠিক থাকে মানুষ,
হাসতে হাসতে পড়ে নিয়ে কাঁটার মুকুট
হেটে যাওয়া কাঁধে নিয়ে ক্রুশ।মনের পাহাড়ের চূড়ায় ,অসীম সাহস।
রোজ খুঁজে যাওয়া বাংলার ক্লাসে,
ভালো লাগার মিনারের উপরে,
পেরিয়ে সওদাগরী অফিসের চাকুরে বাবা, অবিবাহিত বোন বুকের পাঁজরে।একটা চাহুনি, গালের টোল মাখা,
সেদিন নাম দিয়েছিলাম মেঘ,তারপর,
তারপর চিরাচরিত কব্জিতে বেড়ি কেটে বসে ,
কনুই বেয়ে রক্ত,
সব শহরে তো ফোটে না গোলাপ,
প্রেম বুকে নিয়ে বাঁচাটাও খুব শক্ত।
বুকের বামপাশে জঙ্গলে ঝড় নোনা বৃষ্টি,
একটু নীচে পেট নামক কৃষ্ণ গহ্বর ডেকে যায়,মনের আকাশে কালো মেঘ ঘনায়।
যেদিন দেখেছিলাম শেষ ,লাল বেনারসী শাড়ি,জড়োয়া ভারী গয়না, চুড়ি,
কপালের উপর চন্দনের আলপনা, ঠোঁটের কোনায় সেই চেনা তিল।
একটা হাসি, গালের টোল মাখা,
সেদিন নাম দিয়েছিলাম ভালোবাসা,
অন্যের মনের আকাশে।
যে সব হৃদয়ের বাগানে গোলাপ ফোটে না,
তারা বন্ধুই হয়,
বুকের বাম পাশে ভেঙে পড়া প্রাসাদ, জীর্ণ জলাভূমি,
থেমে তো নেই ঘড়িতে সময়। -
জীবিত মহল
জীবিত মহল
-অযান্ত্রিকযারা বৃষ্টি আর অন্ধকার ,
বৃষ্টি আর অন্ধকারের মতোই দেখে,
তাদের চুম্বনাসক্তি থাকে কিনা জানা নেই,
তাদের জন্য বড় কষ্ট হয় নিলোফার।অভিধানে মন দিলে তাদের জন্য,
একটা করুন অনুভূতি ঠেলে আসতে থাকে;
দুই চোখের পরিধীতে যত টুকু আলোর দাগ,
তারা বুঝতে পারে শ্যামা পোকার মতো;সেটা যে কতটা কম কতটা নির্জীব,
তারা জানেও না, জানার চেষ্টাও করে না।
কালের কলম তুলি থামার তোয়াক্কা না করেই,
তারা ছুটে যান এক ক্যানভাস থেকে অন্য ক্যানভাসে,
প্রতিবার ক্যানভাসের কোনায় লেখা ব্যবহারিক মূল্য,
দেখে মিলিয়ে দেখেন উদ্বৃত্ত খোলাম কুচি।তাদের ভালোবাসা শরীরী ক্ষুধার বিবর্তীত চিত্ররূপ,
সেটাকেই প্রেমের মুখোশ পরিয়ে রাখেন,
তারা গান করেন না,কবিতা পড়েন না,
নিদেন পক্ষে প্রথম সূর্যের আলো সারা শরীরে মেখে,
বলেন না সুপ্রভাত।তারা কেবলই ডুবন্ত সূর্যের সাক্ষী,
তাদের ভাবায় রুজিরোজগার,চালের দাম,দুধের হিসাব,
তারা প্রত্যেকেই বড় হন ,বুড়ো হন ,
শৈশবের দেওয়াল ডিঙিয়ে বর্তমান দেখেন,
কিন্তু ভবিষ্যৎ দেখেন সন্তানের মুখে,
নিজেরা নিজেদের আয়নায় দেখেন শুধু,
কতটা চামড়া ঝুলছে,
কতটা চুল পেকেছে,
আর শেষের কতটা বাকি তাই জানতে।এদের অনেকেই বহুদিন রাতের আকাশে দেখেননি,
দেখেননি লক্ষী পেঁচা কেমন শুক্লা দ্বাদশীর জ্যোৎস্নায়,
হেমন্তের সদ্য প্রসবিত বুকভরা মাঠে,
মেখে নেয় নবান্নের নির্যাস ইঁদুর খোঁজার অছিলায়।দেখেননি উন্মত্ত যৌবনা বাতাবী লেবুর গাছের গন্ধে,
মাতাল মাজরা পোকার দলের ছুটে যাওয়া।
এরা দেখেননি আকুল শিশিরের স্রোতে,
ঝরে যাওয়া শিউলির থরে থরে সায়িত তাপের শবদেহ।ভোরের আলো মাটি ছুতেই,আশেপাশের পুকুরের জলের,
সদ্য বিবাহিতার মতো লজ্জা পাওয়া,
যেখানে দৃষ্টি আর আকাশের সীমারেখা আঁকা,
সেখানে কেমন ঝুপ করে নেমে আসে আঁধারের চাঁদর,
তার গায়ে জোনাকির জ্বলা নেভায় যে অবিস্মরণীয়,
কলমকারী নকশা ফুটে ওঠে,তাও দেখেননি চোখ ভরে।
তাদের বৃষ্টিতে ভিজে খোলা মাঠে ছুটে যাওয়া নেই,
তাদের টিনের চালে বৃষ্টির জলের ঝরে পরার
নিরলস তরঙ্গের মূর্ছনায় স্বাদ জানা নেই,
অঝোর ধরা ঝালোরের ঢাকা মাঠে কোনো গাছের কোটোরে,
ফুটন্ত প্রেমের তপ্ত উচ্ছাসের অনুভূতিস্বাদ জানা নেই,তারা শুধু পয়সার, ক্ষমতার প্রভুত্ব জানেন,
তারা শুধু বছর বছর সময়অধিকাল ধরে এক ভাবে বেঁচে থাকা জানেন।
যারা বৃষ্টি আর অন্ধকার ,বৃষ্টি আর অন্ধকারের মতোই দেখে,
তারা জানেনও না তারা সত্যিই মৃত
এই প্রাকৃতিক জীবিত মহলে -
শিকড়ের খোঁজ
শিকড়ের খোঁজ
-অযান্ত্রিকএভাবে যদি পালানো যেতো ,নিজের থেকে;
যদি আমার কোনো বটগাছের শেকড়ের মতো টান থাকতো,
হারানো শেকড় খোঁজার অছিলায় পালানোর পথে থাকতো খোলা।
তাহলে পালিয়েই যেতাম,যেতাম হঠাৎ করে কোনো হেমন্তের দুপুরে,যখন,
স্নান সেরে চকচক করতো রোদ্দুর,
গায়ে মেখে নিতাম আমার ছায়ার বিশ্বাসঘাতকতা,
আমার ছায়া সারাদিন আমার সাথে ঘুরঘুরির পর,
মিশে যেতো একটা রেখায়,ছুটে গিয়ে উঠে পড়তাম ভিড় স্টেশনে,
কোনো সদ্য, বেঁচে উঠতে থাকা রেলের কামরায়,
একজন এগিয়ে এসে বলতো দাদা আগুন আছে ?
সপাট জবাবে না করে দিতাম,
সে আমায় চিনতে পারতেন না,
জানতে পারতেন না
আমি সদ্য আমার শহুরে শব দাহ করে এসেছি;
আমার আগুন ছোয়া মানা।একজন ,জলের বোতল থেকে জল খেতে গিয়ে ,
আমায় দেখলেন ,ভাবলেন খুব চেনা লাগছে।
আমি তার দৃষ্টিতে সদ্য দাহিত চিতার ধোঁয়ার,
আড়াল খুঁজে পালিয়ে গেলাম,
আমার পরিচয় দেয়া মানা।আমাকে দেখলেন একজন রাজনৈতিক নেতা,
যিনি তার পরবর্তী সভায় বক্তৃতা দিতে যাচ্ছেন।
আমাকে দেখলেন একজন ফল বিক্রেতা,
হাসলেন সম্ভাব্য ক্রেতার সাথে মিল খুঁজে পেয়ে।
আমি তাদের সবাইকে মানুষের সামিল চেহারার কথা,
মনে করিয়ে দিলাম,তারপর হঠাৎ করে কোনো অচেনা স্টেশনে নেবে পরে,
খুঁজতে শুরু করতাম আমার না থাকা শিকড়,
আমার গ্রামের বাড়ি, দুর্গাদালান, বেনে পুকুর,
একটা সামনের চায়ের দোকানে চা খেতে গেলাম,
যেখানে কোনো কল্প পরিচিত মুখে,
আমার হারিয়ে যাওয়ার কথা ,
আমার গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার কথা আলোচনা হতে থাকলো।
কিন্তু কেউ আমায় চিনতে পারলো না
শুধু মধুকুপি ঘাসের ফাঁকে একটা অনন্য যৌবন লাউডুগি,
আমায় চেরা জিভ দেখিয়ে ভঙ্গিয়ে গেল।আমি একটা পুরোনো সন্তানহারা ভেঙে পরা বাড়ির দরজায় টোকা দিলাম,
যে দরজাটা বহুদিন ধরে অপেক্ষায় আছে তার পরিচিত হাতের স্পর্শের জন্যে।
যে দরজার পিছনে দুটো কান অপেক্ষায় ক্লান্ত হয়নি একটা স্বর শোনার জন্য।
যে স্বর দূর থেকে শুনলে না মনেহয়,
কিন্তু তীক্ষিত কানে “মা” ছাড়া আর কিচ্ছু নয়।সেই দরজা খুলে ফিরে পাবো সেই চেনা আঁচলের গন্ধ,
সেই আটপৌরে ভালোলাগা, ভাবনার ছাদ, বারান্দা,
সেই মুড়ির বাটি, কাঁসার গেলাসে জল।
যেখানা উড়ানের দাগ আজও সিঁথির সিঁদুরের মতো জ্বলছে।কতগুলো কল্পিত মুখের সারি,চরম উত্তেজনায় চেয়ে থাকবে আমার দিকে,
তাদের রাশি রাশি জোনাকির মতো প্রশ্ন ছুটে আসবে আমার দিকে,
আমার শহুরে জীবন, আমার শহুরে পাওয়া ,শহুরে হারানো সব নিয়ে।
ধীরে ধীরে অন্ধকার ঢেকে ফেলবে আমার চোখ নাক, মুখ গলাআমি একটা প্রদীপের আলো কে সাক্ষী করে চিৎকার করে উঠে বলবো
“আমি ওসবের কিছু জানি না,আমি ওসবের কিছু জানিনা”
কেউ বিশ্বাস করবেনা,
কেউ বিশ্বাস করবেনা,
আমার ঘুম ভেঙে যাবে। -
খনন
খনন
-অযান্ত্রিকআমার শরীরের কোদাল,কিংবা কুড়ুল চালিয়ে দেখ,
কি পেলি? পায় চলা দাগ,বন্ধুদের একের পর এক।
পায়ের ছাপ মিলিয়ে দেখে বুঝে নিতে পারিস কিনা বল,
কোনটা নারী,কোনটা পুরুষ, কোনটা বেহায়ার দঙ্গল।
আরও কিছুটা ,ঘোলাটে ঘাম রক্ত কিংবা মাংসমাটি খুঁড়ে ,
দেখনা ,দেখ, কি দেখিস? সারিবদ্ধ শব্দেরা সাদা কাপড় মুড়ে।
শুয়ে আছে, নিশ্চল যেমন মাটির কাছাকাছির দিনে,
কথারা পাল্টাত রং,কে বন্ধু ,আর কে বন্ধু নয় তা চিনে।
আরো নীচে যেখানে নিকশী নালার মতো সেখানে একটু বোস,
দেখ চেনা চাদরের রং একলা আজও জেগে আঁকড়ে তক্তপোষ।
একটু জিরিয়ে নে, জানি হাঁপ ধরে বহুদিন খুঁড়াখুঁড়ি নেই অভ্যেস,
আরও আরো নীচে অবধি খুঁড়ে যেতে হবে,খুঁড়লে হয়ত পাবি দেশ।
কোনো মানবিক আস্তরণ ,অধভাঙ্গা হাঁড়ি, কলসী পুরোনো সভ্যতা,
বন্ধুত্বের আয়ু মাপা,শেষ হয় কাটা হাতের রেখায় ,ম্লান নির্ভরতা।
শব হাতে তুলে দেখ, কারো মৃত্যু দশে কুড়িতে কেউ তিরিশেরও আগে।
দেখ মনে হয় না কি মানুষ অসভ্য, শুধু সভ্যতা বাঁচিয়ে রাখতে লাগে।
আমার শরীরের কোদাল,কিংবা কুড়ুল চালিয়ে দেখ একদিন
যেভাবে বেঁচে আছি বন্ধুদের স্মৃতি শব নিয়ে, সেটা কত কঠিন -
লুট
লুট
-অযান্ত্রিকচাঁদের সঙ্গী খুঁজেছে যে আকাশ;
তার বুকের বামপাশে কালো তিল।
চায়ের আড্ডায় পাড়াতুতো মন;
সীমানা মেপে রেখেছে দীর্ঘশ্বাস।যতবার নাম নিয়ে ভরেছে নিঃশ্বাসে;
পাখোয়াজি বেলুনে ফুসফুসের গন্ধেও।
চিতা পোড়া ধোয়াও, মিশেছে বাতাসে;
হারানোর ভয় জড়িয়ে পাশাপাশি সন্দেহ।নিলোফার, ভাগাভাগিতে বেগতিক সময়;
যতটা ভালো লাগে উদাসী বিশেষণে।
পেটের তাগিদদেরও বাড়ি ফিরতে হয়;
ঘামে ভেজা রুমালের শেষ স্টেশনে।যেভাবে মাঠের মাঝখানে চেরা দাগও,
লাঙ্গলের ফলা। জিভ দিয়ে চেটে যায়।
যতটা শব্দের এখতিয়ার তুমি ভাবো,
চোখ দিয়ে তার বেশী ভোগ করে যায়।দলছুট মুরগির মতো, একা অখাদ্যের দলে
মোমবাতি,গলে,তবু ভেজে না মাটির শিরদাঁড়া;
উড়ে আসা ঝরা পাতার ইশারায়, ছলেবলে
আততায়ী অযান্ত্রিক কলম লুটে নেয় শব্দ ,এক নিলোফার তুমি ছাড়া
-
শেষ পৃষ্ঠায়
শেষ পৃষ্ঠায়
-অযান্ত্রিকস্টেশনের নির্জনতা ভেদ করে,পরবর্তী প্রেমের খবর হয়,
পূর্ববর্তী ভালোবাসার যাত্রীরা একে একে চলে যায় নিজস্ব গন্তব্যে।
প্রাক্তন ভালোবাসা
সদ্য প্রসবা নদীর বুকে ভাসিয়ে আনে অপরিচিত শব,
লোকে দূর থেকে দেখে, চিনতে পারে না ,চিনতে চায়ও না।
আত্মজীবনীর একটা পরিচ্ছদের শেষে
দীর্ঘশ্বাস ,যতিচিহ্ন হয়ে থেকে যায়।প্রতি বিরহে, কিছু অন্যায়, কিছু অনমনীয়তা থাকে
যাতে ভালবাসা আয়নার মতো, খুব কাছাকাছি গেলে দেখা যায়,
কেউ কেউ দেখে যায় উঁকি দিয়ে,কেউ ঘেন্নায় মুখ ফেরায়।
আত্মজীবনীর আরেকটা পরিচ্ছদের শেষে
দীর্ঘশ্বাস ,যতিচিহ্ন হয়ে থেকে যায়।তবে, এক এক রকম ভালোবাসা আছে,যা উৎসবের দিনে ,
হঠাৎ নোঙরা হওয়া পোশাকের মতন বদলানো যায় না প্রকাশ্যে,
এক এক রকম ভালোবাসা আছে যা দেখা যায় না কিন্তু অনুভব ,
ভোরে যায় আত্মজীবনীর পাতার পর পাতা।আবার এক সময় ,ভালোবাসা হয়ে যায় বন্ধুর মতো ,কড়া নাড়ে দরজায়,
এক এক রকম ভালোবাসা শুধু মাত্র স্বপ্নেই সুন্দর লাগে,
এক এক রকম ভালোবাসা রাত্রির বিছানায় প্রমত্ত সুখের মতন,
অথচ ঠোঁটের কোনে প্রগাঢ় প্রতিশোধ,
তবু জীবন জেগে থাকে অলীক সপ্নের কেল্লার বিনিদ্র প্রহরীর মতো,
আত্মজীবনীর পাতার পর পাতা ভরে যায়।
শুধু সমাপ্ত লেখা থাকে আবছা কালির দাগে শেষ পৃষ্ঠায়। -
বোড়ে
বোড়ে
-অযান্ত্রিকবোড়েই জানে ,জিতলেও মরতে হবে, ঘোড়ার কিন্তু চেনা আড়াই ঘর,
পাশাপাশি অনেক মুখোশের ভিড় ,মুখগুলো সব নেহাতই স্বার্থপর।
জীবন চৌকো, আট ঘরেতে লড়াই, রাজার হদিশ পাওয়াটাই কৌশল,
কোনাকুনি গজ, সামলে দৃষ্টি এড়াই , মোটা চামড়াই বাঁচার সম্বল।খোপগুলো সব, হয় সাদা নয় কালো, ঘরবন্দী নিছক অজুহাতে,
সাদা ভালোবাসা ,লড়াই চালিয়ে যায়, কালো দুঃখের চৌখোপ্পির সাথে।
যেভাবে তুমি বাঁচতে চাইলে সোজা, নৌকা কিন্তু পাশাপাশিও চোখ রাখে,
অঙ্ক কোশে ,তবেই যাবে বোঝা, ভাঙলেও সিঁড়ি পারদ চড়তে থাকে।আজকে পেরোলে লাভের গন্ডীগুলো, লোকসান গোনা বাকি রয়েছে কাল,
দাম পেলে, যে টানটান ত্বক দিয়ে, কাল মুদিখানায় বিকোবে সেই ছাল।
রাজাই জিতবে, রাজারাই জেতে, শুধু তুমি আর আমি দিয়ে যাবো গুনাগার,
যেভাবেই দেখো ,আট খাপেবন্দী আমি তুমি , প্রতীকী বোড়ে কালের পাহারাদার।সাদাকে কাটলে কালো, সোজাসুজি বা আড়াই চালের মাপে,
জীবনের কড়ি জমে না জীব্য দশায়, শুধুই খরচ বাঁচার অভিশাপে।
প্রাপ্তির চেয়ে প্রার্থী অনেক বেশী, তোমার থেকে তোমার দরজা বড়,
প্রবেশ নিষেধ বুকের বাম পাশে,খোপে মৃত্যু, তবুও তো ঘর করো।সবাই জানে থামে না দাবা , খেলা শেষ হলে আবার নতুন শুরু হবে,
রাজারা শুধু একই থেকে যায়, লড়াই চলবে বোড়ে গুলো বদলাবে।
হয়তো সময় সাদা কালোতেই বন্দী,বিষাদ আর খুশি দাবার চেনা খোপ,
যে ছিল রাজা গতকালের জেতা দানে, আজকের দানে সেই হবে সদগোপ। -
অবাস্তব
অবাস্তব
-অযান্ত্রিকবাইরে শ্রাবণ শেষের সন্ধ্যা ,ভিতরে চোখ পরলেই স্থির ছায়া,নিশ্চল নির্বিকার ,
সাড়াহীন সুপ্ত চৌকাঠ আঁকড়ে, সপ্তকর্ণিকা মূর্তি,কে তুমি অপরিচিতা?
কি নাম ?কেন তমসাবৃত অধররেখা?
অথবা জানতে চাও আমার পরিচয় ?
বাইরে সন্ধ্যার আয়োজন, জানি ভিতরে চোখ পড়লেই,
অচেনা অবয়ব চেনা চৌকাঠে।
বহুবার ভ্রম হয়,
এই কে আছো ? খুলে দিযে যাও মনের, শরীরের, মগজের, জানালা গুলো সরিয়ে দাও পর্দা
উদ্দীপ্ত শিখায় উন্মোচিত হোক পরিচয়,
বুঝে নিতে পারি কল্পনা নাকি বাস্তব। -
মিতিনের খেলাঘর
মিতিনের খেলাঘর
-অযান্ত্রিকবহুবার আমি গিয়েছি মিতিনের সংসারে, ছুটির দিনে কিংবা আপিস থেকে ফিরে,
খেলাঘর, ছোটো সংসার, ঝুটা উনুন, ছোটো ছোটো হাঁড়ি কড়ায় ,
গামছার বড় চুল,এলোখোঁপা,কুচোনো কাগজের ভাত, ডাল,সদ্যগৃহিণীর দরজায়,
বহুবার আমি অতিথি হয়েছি, মিতিনের খেলাঘরে, জীর্ণ সময়ের শরীরে।ও ভাত রাঁধে,খেতে দেয়, আপ্যায়ন করে এগিয়ে দেয় চুমুকের থেকেও ছোটো চা
নিছক ব্যস্ততায় ছুটে যায় বাজারে থলি হাতে, বিছানার ওপাশেই সেজেছে বাজার,
প্রতীকী দরদাম ,পারণহীন সবজির তদবিরে জেগে ওঠে অতিথি সৎকার।
কৃত্তিম চিন্তার ঘোরে বকাবকি করে আরো কাল্পনিক ছোটদের , বলে পড়তে যা।ওরা কয়েকজন মিলে শুরু করে কোনোদিন, কোনোদিন হয়তো একাই লড়ে যায়,
বিছানার ঘর, বালিশের আওতায় জুটে যায় সাথী, প্রাণহীন কিন্তু মানুষের মতো,
চোখে মুখে সীমাহীন পূর্ণতা, অপূর্ণতা জানেনা ,বোঝার চেষ্টাও করে না সংগত।
ছোটো ছোটো শরীর, চাদরের চত্বরে ,নিজের সংসার সাজায় অবলীলায়।কয়েক ঘন্টা বয়ে যায় সংসারী হাওয়া, তারপর বাস্তব গুটিয়ে আসে পরীধিতে,
ওড়ে না সাজানো শুকপাখী সারা জীবন, ফিরে আসে বাস্তব জমিনেতে
ওরা ছোটো তাই বড় হতে চায়, যারা বড় তারা ছোট হতে চায় বহুবার,
বড়দের চোখে ঘুম নেই,কপালে ভাঁজ, সময় মানচিত্র আঁকা চামড়ায় সবার।বৈষম্য বেষ্টিত জীবন বলে বার বার ,”ওরা ভালো ছিলো, ওরাই ভালো থাকে চিরকাল”