• কবিতা

    কবিতা- ইচ্ছেগুলো

    ইচ্ছেগুলো
    -উজ্জ্বল দাস

     

     

    তখন একটা সময় ছিলো
    ভাল্বসেট রেডিও ছিলো।।
    সাটার দেওয়া টিভি ছিলো
    ছাঁচের নারকোল ছাবা ছিলো।।

    আমরা যারা দূরে ছিলাম
    বাড়ি ফেরার ইচ্ছে ছিলো।।
    এন্টেনা তে কাক ছিলো
    ঘুরিয়ে দেওয়ার তাগিদ ছিলো।।

    ভালোবাসার ইচ্ছে ছিলো
    দেদার গলায় গান ছিলো।।
    ভোরের বেলার সূর্য ছিলো
    ছেলে বেলার কাশ ছিলো।।

    ঠাকুর দেখার বায়না ছিলো
    জামা গোনার স্বপ্ন ছিলো।।
    মহালয়ার রেডিও ছিলো
    চালিয়ে দেবার ইচ্ছে ছিলো।।

    রবিতে রামায়ণ ছিলো
    পুজোর আগের নাটক ছিলো।।
    সহজ সরল বন্ধু ছিলো
    দশমীতে প্রণাম ছিলো।।

    ছিলো ছিলো সবই ছিলো
    ইচ্ছে গুলো আজও আছে।।
    মজার সঙ্গে আজও বাঁচে
    ইচ্ছে ডানার পাখার ধাঁচে।।

  • কবিতা

    কবিতা- কিসের অপেক্ষা

    কিসের অপেক্ষা
    -উজ্জ্বল দাস

    বেআব্রু জ্বলন্ত অগ্নিকন্যা,
    নাহ, এ আমার দেশ নয়।
    ভয়াবহতা চাক্ষুস করছে
    একশ চল্লিশ কোটির দেশ-
    নাহ, এ আমার দেশ নয়।

    আমার দেশ তো ভালোবাসতে জানে-
    আমার দেশ তো প্রতিবাদ করতে জানে,
    আমার দেশ তো কাছে টেনে নিতে জানে…
    তবে !
    আমার দেশ তো বাঘাযতিন, মাতঙ্গিনীর দেশ
    আমার দেশ তো আজাদহিন্দ ফৌজের দেশ
    আমার দেশ তো সুভাষের দেশ-
    তবে এত বর্বরতা কিসের !

    সদ্য জন্ম নেওয়া কোনো ভ্রূণ যেন জানতে না পারে একথা-
    সদ্য লোক পরিবর্তন করা মনুষটা
    জেনে গেল আমার মাটির এই তীব্রতা-
    ঝাঁঝালো কণ্ঠের চিৎকার-
    রগরগে লালসার হুঙ্কার।
    খবর পৌঁছে যাবে ইন্দ্রলোকে, ওপরে।
    ওরা জেনে যাবে আমাদের মানসিক দারিদ্রতার কথা।

    কর্ণাটক, কন্যাকুমারী, মহারাষ্ট্র, রাজধানী-
    টালিগঞ্জ, পার্কস্ট্রিট, শ্যামবাজারের মোড়ে মোড়ে গোলে পড়বে মোম।
    কথা বলবে #Sound_of_silence…

    নিশ্চিন্তে ব্যালকনিতে বসে কফির কাপে চুমুক দেওয়া ঠোঁট-
    অপেক্ষা করবে-
    নিজের বাড়িতে আগুন লাগার অপেক্ষা-

    আর কতটা সহ্য করবে আমার দেশ!
    আর কতগুলো কাপুরুষের জন্ম দেবে আমার ভারত!
    আর কতগুলো নেতার বদল হলে-
    ধর্ষণ রোগ থেকে মুক্তি পাবে আমার রাষ্ট্র?

    আমার ভারত,
    আমার দেশ।
    মেরা ভারত মহান…

  • গল্প

    গল্প- রাতের কালো

    রাতের কালো
    -উজ্জ্বল দাস

    কলকাতায় একটা চায়ের কোম্পানিতে কাজ করার সূত্রে রোজ ভোরবেলা বাড়ি থেকে বেরোতে হয়, ফিরতে ফিরতেও প্রায় রাত নটা। এভাবেই অভ্যস্ত মসলন্দপুর স্টেশন অন্তর্গত রসুই গ্রাম নিবাসী শম্ভুনাথ মন্ডল। হেসে খেলেই দিন গুজরান এককথায়।

    কোনো এক হেমন্তের সকালে শিরশিরানি হাওয়ায় বেশ ফুরফুরে মনেই পৌঁছে ছিলেন অফিস। কাজকম্ম সেরে সারাদিন পর যখন বাড়ির পথে রওয়ানা হলেন তখন সন্ধে। ভিড় বাসের হাতল ধরে শিয়ালদহ স্টেশনে এসে তো ওনার চোখ কপালে উঠেছে। থিকথিক করছে কালো মাথা। ট্রেন অবরোধ। সারাদিন অফিস সামলে, ফেরার সময় এ যে মহা বিপদ। কিন্তু উপায় নেই। এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। খাবারও নেই। সাকুল্যে সঙ্গে রয়েছে আধ বোতল জল। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন শম্ভুনাথবাবু। এদিকে অবরোধ উঠে ট্রেন কখন চালু হবে তার বিন্দুমাত্র আভাস নেই এই জনারণ্যে। শিয়ালদহ থেকে মসলন্দপুর প্রায় দেড় ঘন্টার জার্নি। অগত্যা ট্রেনের অপেক্ষাই ভরসা।

    একটা পিলারের গায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শম্ভুনাথবাবু চোখ দুটো বুজে সবে হালকা ঝিমিয়ে নিচ্ছিলেন। হঠাৎই যেন কানে এলো ট্রেনের নাম ঘোষণা হচ্ছে মাইকে। একটু আশার আলো দেখলেন শম্ভুনাথবাবু। ক্লান্ত শরীরটাকে টানতে টানতে ঘোষণা মতো এগিয়ে চললেন প্লাটফর্মের দিকে। আর যাই হোক অন্য দিনের মতন নিশ্চয়ই ট্রেনটা একটু আধটু ফাঁকা থাকবে এ আশা করা বিলাসিতা। এদিকে ঘড়ি বলছে প্রায় পৌনে বারোটা।

    ভিড় ঠেলে কোনও রকমে এক কোণে গিয়ে দাঁড়ালেন একটা কম্পার্টমেন্টে। গাদাগাদি লোকারণ্যের মাঝখানে শম্ভুনাথবাবু ট্রেনে যে উঠতে পেরেছেন এটাই ওনার কাছে বড় অংকের লটারি। এরপর একের পর এক স্টেশন আসছে আর গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে বহু নিত্যযাত্রী। এইভাবে একটা সময় ঘড়ির দিকে তাকালেন রাত একটা কুড়ি। মসলন্দপুর নামতে আরও কুড়ি পঁচিশ মিনিট তো বটেই।

    শুনসান মসলন্দপুর স্টেশনে নেমে দেখলেন হাতেগোনা পনেরো কুড়ি জন কিংবা তারও কম। সারাদিন ভাগ্য পরিহাস করলেও মাঝরাতে যেন কপাল খুলে গেল। গোটা পাঁচেক সাইকেল ভ্যান শেষ গাড়ির প্যাসেঞ্জার নিয়ে যাবার জন্য লাইনের ধারে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে। তার মধ্যেই একটা ভ্যান রিক্সায় চেপে বসলেন শম্ভুবাবু।

    ক্লান্ত বিষণ্ণ মনে ঘুটঘুটে অন্ধকারে গিয়ে নামলেন চারঘাট। এখান থেকে রসুই গ্রাম প্রায় মিনিট চল্লিশ হাঁটা পথ। শুরু করলেন হাঁটা। কোথাও আল পথ তো কোথাও মোরামের লাল রাস্তা। হঠাৎই দেখলেন বড় ঝিলপাড় চলে এসেছে সেখান থেকে বাড়ি হাতেগোনা মিনিট সাতেক। হনহনিয়ে পা চালালেন। একটু এগোতেই সামনে দেখলেন মেজো শালা পরেশ দাঁত বের করে এগিয়ে এসেছে।

    -আরে, জামাইবাবু যে? এত রাতে!

    -এই অফিস থেকে ফিরছি। আর বোলো না। প্রাণে যে বেঁচে আছি এই অনেক।

    -কেন কেন?

    -সারা কলকাতা স্তব্ধ। কথায় কথায় এরা ট্রেন অবরোধ করবে।

    -ইসসস, কী ভোগান্তি…

    -তারপরে তুমি এখন এত রাতে! কি করছো?

    এক গাল হেসে উত্তর পরেশের- আরে জামাইবাবু আপনি দেখছি সবই ভুলে যান।

    -হ্যাঁ সত্যিই, আমার আজকে আর মাথার কোন ঠিক নেই কথাটা বলে বাড়ির দিকে পা বাড়িয়েছেন…

    হঠাৎই যেন শম্ভুনাথ বাবুর ঘোর কাটলো। মনে পড়ে গেল গোটা গ্রাম যখন কলেরা রোগে উজাড় হয়ে যাচ্ছিল পরেশও তখন বাদ পড়েনি। দেড় মাস আগে মারা যায় পরেশ।
    তাহলে এতক্ষণ…

    সাহসে ভর করে একবার পেছনে তাকালেন শম্ভুবাবু। নিকষ কালো অন্ধকার আর ঝিঁঝিঁ পোকারা কানে তালা লাগিয়ে গিলতে আসছে। দমকা একটা ঠান্ডা হাওয়া কানের গোড়ায় এসে সজোরে ধাক্কা মারলো, দেখতে পেলেন না কাউকে। তারপর আর কিছু মনে নেই।

  • কবিতা

    কবিতা- ভারত আবার স্বাধীন হোক

    ভারত আবার স্বাধীন হোক
    -উজ্জ্বল দাস

     

     

    এখন তো কেউ রক্ত চায়না
    স্বাধীনতা কেউ দেয় না আর,
    আজ স্বাধীনতা অন্য কারুর
    ভগ্ন দেশে যে যার তার?

    গণতান্ত্রিক উপমহাদেশ প্রস্তর যুগ ফিরিয়ে দিক
    বৈদিক বা লৌহ যুগ আর মগধ রাজ্য সঙ্গ নিক।
    স্বাধীনতাহীন ব্রিটিশ শাসনে আমার ভারত ভাগ হলো-
    শৃঙ্খলা ঘুচে এলো শৈশব তেরঙ্গারই জিত হলো।

    পায়ে পায়ে আজ স্বাধীনতার সত্তর পার,
    পঁচাত্তর বা ছিয়াত্তর পেরিয়েও আমরা ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছি না তো?
    অর্জিত স্বাধীনতা কোথাও জবুথবু অথর্ব হয়ে যাচ্ছে না তো !
    অভিজ্ঞতার বদলে কোথাও, বার্ধক্যের ঘুণে আক্রান্ত হচ্ছে না তো আমার দেশ !
    এ প্রশ্ন তোমার, এ প্রশ্ন আমার,
    রেখে গেলাম সকলের দরবারে।
    উন্নতশীল একটা দেশের সফটয়্যার যেখানে সারা বিশ্বে সমাদৃত,
    উন্নতশীল একটা দেশের প্রতিরক্ষা যেখানে বিশ্ব বন্দিত,
    সবথেকে বড় গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো আজ হুমকির মুখে !

    যে দেশে রাত্রি গড়ালে,
    নিশ্চিন্তে চোখের দুপাতা এক করে খেটে খাওয়া মানুষ-
    সে দেশে আর যা কিছু হোক অনুদান আছে,
    স্বাধীনতা বেশ খানিকটা অধরা এখনো।
    দয়া দাক্ষিণ্যে চলতে থাকা ভারতবাসীর মেরুদন্ড-
    ধীরে ধীরে নুইয়ে পড়ছে না তো?

    রাজধানীর রাজ্যপাটের অন্তরালে এখনো আর্তনাদ করে লুটিয়ে পড়ে-
    একলা ঘরে ফেরা যুবতী-
    এখনো মুমূর্ষু রোগীর পকেট কাটে
    এদেশের চিকিৎসা।
    দরজায় দরজায় ঘুরতে হয় একটু রক্তের জন্য।
    যে দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিক্রি হয় চড়া দামে,
    আলো নিভলেই শহরের ফুটপথে নিদ্রামগ্ন হয় হাজার হাজার কচিকাঁচার দল-
    এখনো মেধার থেকে সুপারিশকেই প্রাধান্য দেয়া আমার ভারত,
    পড়ে পাওয়া চোদ্দআনা কখনও যত্নে লালিত হয় না।
    সংগ্রাম করে অর্জন করা বস্তুতেই যে আসল প্রেম।

    মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করুক
    শিল্পে এ দেশ দরাজ হোক-
    বাস্তবমুখী হোক রোজগার
    ভুলুক ক্ষুধার ক্লান্তি শোক।

    দুমড়ে যাওয়া মুচড়ে পড়া
    স্বাধীনতাটার বিকাশ হোক।
    জঠর ভরাক দুবেলা দু-মুঠো
    বদ্ধ খাঁচার মৃত্যু হোক।

    গর্জে উঠুক আমার এ দেশ,
    স্বীকৃতি পাক পতিতালয়
    শিক্ষিত হোক আ-সমুদ্র
    শিক্ষিত হোক- এ হিমালয়।

    দাম্ভিকতা কাটিয়ে উঠুক
    মার্জিত হোক আমার দেশ
    স্বাধীনতা হোক সংক্রমিত
    পরাধীনতার কাটুক রেশ।

    গোত্রহীন- হয়ে এসো তুমি,
    তোমায় ছুঁয়ে দেখতে চাই।
    জাতপাত সব হোক না গৌণ
    হাতিয়ার হোক স্বাধীনতাই।

  • কবিতা

    কবিতা- আবার সুভাষ

    আবার সুভাষ
    -উজ্জ্বল দাস

     

     

    আরো একটা সুভাষ চায় ভারতবর্ষ।
    আরো একটা তুমি চায় ভারতবর্ষের মানুষ
    আরো একটা হিম শীতল চাহনি চায় একশ তিরিশ কোটির দেশ।
    যে চাহনি তে কেঁপে ওঠে গোটা পৃথিবী-
    কেঁপে ওঠে বর্বরতা, অসভ্যতা, অমানবিকতা, অসহিষ্ণুতা।
    কেঁপে ওঠে কাপুরুষের বুটের শব্দ, রুদ্ধ হয় কন্ঠস্বর।।

    হাজার বার পরাধীন হতে চাই তোমার শাসনে,
    হাজার বছর পরাধীন থাক একশ তিরিশ কোটির বর্বর ভূখণ্ড।
    হাজার বছর পরাধীন থাক ধর্ষণ রোগে আক্রান্ত ভারত,
    হাজার বছর পরাধীন থাক মুমূর্ষু রোগীর পকেট কাটা দেশ।
    হাজার বছর পরাধীন থাক উলু খাগড়ার প্রাণ ভিক্ষা করা অসভ্য প্রজাতি।
    হাজার বছর পরাধীন থাক ক্ষুধার্থ পৃথিবীর ঘুষ খোর দেশ।।

    হাজার বছর তোমাকে চাই।
    বাচঁতে চাই, প্রাণস্পন্দন চাই।
    মাথা উঁচু করে চিৎকার করে বলতে চাই,
    আমরা ইতর নয়, আমরা অসভ্য নয়, আমরা বর্বর নয়।
    আমাদের দেশে ধর্ষণ হয় না, আমাদের দেশে ছিনতাই হয় না
    আমাদের দেশে অন্ধকারেও ফিসফিস করে কথা হয় না।

    ফিরে এসো সুভাষ।
    পরাধীন ভারত তৈরি হোক তোমার শাসনে।
    আরো একটা সুভাষচন্দ্র চায় ভারতবর্ষের মানুষ।
    আরো একটা সুভাষ চায় ভারত।।

  • কবিতা

    কবিতা- নিরুদ্দেশ

    নিরুদ্দেশ
    – উজ্জ্বল দাস

     

     

    হারিয়ে গেছে ঝগড়া করা
    হারিয়ে গেছে লাল দালান,
    হারিয়ে গেছে যৌথ থাকা
    হারিয়ে গেছে দিন গুলান।

    সকাল বেলায় নেই কো লাইন
    কে যাবে আগে স্নান ঘরে,
    এখন মোটে তিন চার জন-
    সারা দিনে স্নান করে।

    আজকে উধাও জ্যেঠুন কাকাই
    উধাও কাম্মা জেম্মা-রা।
    যায় না দেখা এক পরিবার
    উঠোন জুড়ে চাল ঝাড়া।

    হারিয়ে গেছে বিরাট কড়াই
    রান্না বাড়ি আলাদা আজ।
    ব্যস্ত সবাই যে যার মতো
    বিপদ কালে মাথায় বাজ।।

    হারিয়ে গেছে নিত্যদিনের
    জায়ে জায়ে ঝগড়া-টা।
    ফ্যান গালাবে আজ কে বলো
    আজ রবিবার হোক পাঁঠা।

    হারিয়ে গেছে গল্প গাছা
    হারিকেন আর লম্ফ-রা।
    হয়না তেমন লোডশেডিং আর
    ভূতের গল্প মন জোড়া।

    দুইটি শালিক আর আসে না
    চড়ুই মেলা বেজায় ভার।
    বলতে পারো এমন কেন
    কেনই বা এই অস্থি সার।

    হারিয়ে গেছে শনি রবির
    হাতুড়ি মার্কা ফিনাইল এক্স।
    খুঁজতে হবে পাড়া গ্রামের
    লম্বা মেঝেতে পাত পারা।

    কি মজা সেই মামা মাসি
    কদিন এসে থাকতো বেশ।
    হয়না থাকা, হয়না যাওয়া
    কমছে মনের সেই আবেশ।

    কে দেবে আজ ফিরে আমায়
    ট্রামের ভাড়া মাত্র বিশ।
    হয়না এখন সুরেলা গানের
    সঙ্গে তাল আর দেদার শিস।

    মন খুলে আজ হয়না কথা
    রক ভরে না আড্ডা তে।
    রাস্তা ঘাটে হয়না খেলা
    বল পরে না মাঠ টাতে।

    আজকে সবাই ব্রিটিশ বেশে
    কাঁটা চামচে হাত পাকায়।
    চোটকে খাওয়া ভাতের মজা
    সে সব জেনো গল্প নয়।

    আজকে হঠাৎ উধাও টা টা
    কোত্থুকে এলো বাই বাই।
    দিম্মা আর ঠাম্মা-দেরও
    গল্প বলার বালাই নাই।

    ডাল ভাতে তে বিয়ে বাড়ি
    গামছা কাঁধে মিষ্টির হাঁড়ি।
    সে সবই আজ কল্পনা
    সত্যি বলছি, গল্প না।।

    একান্নবর্তী নামটা শোনা
    ভাই বোনে নেই খুনসুঁটি
    ভর দুপুরে আচার খাওয়ার
    নেই কো গণশা নেই পুঁটি।

    সেই পরিবার আজকে রোগা
    জেদের বশে কমছে মেদ।
    এমন ধারা চলতে দিলে
    হার মানবে অশ্বমেধ।

  • কবিতা

    কবিতা- অন্য স্বাধীনতা

    অন্য স্বাধীনতা
    – উজ্জ্বল দাস

    এটাই হলো সেই স্বাধীনতা-

    রোজ সকালে চায়ের কাপে
    ধর্ষণ হয় হেড লাইন।
    ধুঁকতে থাকা চিকিৎসাতে
    পকেট কাটাই ডেড লাইন।

    এটাই হলো সেই স্বাধীনতা-

    শিক্ষা গৃহের অন্দরে-তে
    পার্টি অফিসের বিরাট হেল্প।
    পুলিশ তখন ছাড়ছে ধোঁয়া
    পাবলিক করে ডিফেন্স সেল্ফ।

    বুক বাজিয়ে চাপড়ে টেবিল
    ঘুষটা যখন রোজ গেলা যায়,
    পাড়ার মোড়ে স্বাধীনতা-
    গাঁক গাঁকিয়ে ঠিক বেজে যায়।

    এই স্বাধীনতা হয়তো আসে
    চায়ের দোকানে আড্ডা-তে,
    এই স্বাধীনতা হয়তো আসে
    বারান্দা বা আলনাতে।

    লাল সিগনালে হাত পেতে রোজ
    যে হাত দু’টো ভিক্ষা চায়,
    কেমন তর স্বাধীনতা-
    ফুটপাতে যে রাত কাটায়।

    সবাই যখন যুদ্ধ চেয়ে
    তর্ক করে গ্রূপ চ্যাটে,
    হোয়াটস অ্যাপের বাগ বিতন্ডা
    ফেস বুকে হয় পোস্টাতে।

    যে ছেলেটার বাপ শুয়ে থাকে
    গান হাতে ওই সীমান্তে,
    যে মেয়েটার চোখ ফেটে যায়
    যন্ত্রনা হয় বুকটাতে।

    সেই ছেলেটার স্বাধীনতা-
    ফিরুক বাবা, যুদ্ধ নয়
    সেই বাবা আজ কফিন বন্ধি
    এই সমাজের কি আসে যায়!

    এই স্বাধীনতা গান স্যালুটে
    সীমান্তে হয় উদযাপন,
    পুলওয়ামা বা পাঠান কোটের-
    শহীদ যখন আপনজন!

    কজন-ই বা এমন স্বাধীন
    বিলাস বহুল বাথরুমে!
    ইচ্ছেগুলোর লাশ পড়ে যায়
    শব দেহ যায় শীত ঘুমে।

    ভারতবর্ষ কেমন হবে
    কেমন হবে রূপরেখা,
    হোক সুজলম্ হোক সুফলম্
    হোকনা শ্রেষ্ঠ এ দেশটা।

    শ্রেষ্ঠ হোক আমার এ দেশ
    হোক না ভারত মাতার জয়
    “জয়হিন্দ” হোক সবার শ্লোগান
    আসুক শান্তি না থাক ভয়।

  • কবিতা

    কবিতা- পরজন্ম

    পরজন্ম
    – উজ্জ্বল দাস

    কেবল আমায় প্রশ্ন করো
    পরের জন্মে থাকবো নাকি!
    কেবল আমায় প্রশ্ন করো
    তোমার সুরে বাজবো নাকি।

    কেবলই বলো, পেলাম না তো
    তোমার হয়ে থাকতে পুরো,
    কেবলই ভাবো তোমার কাছে
    নামেই প্রেমিক, এক বেসুরো।

    এই জন্মে তোমার চাওয়ায়
    হয়তো কিছু খামতি ছিলো, জানো-
    এই জন্মে তোমায় পাওয়া
    হয়তো বেশি স্বস্তি দিলো, জানিনা।

    পরের জন্মে প্রথম থেকেই
    আমায় তুমি রাখবে কিনে,
    এই জন্মের জন্ম দাগটা
    গোপন ঘরে রাখবে চিনে।।

    এমন করেই আর কটা দিন
    পার করে দাও দগ্ধ হয়ে
    পর জন্মের দায়িত্বটা
    বইবো দুজন, রয়ে সয়ে।

    তোমার হয়েই পিটপিটিয়ে
    থাকবে চেয়ে চোখের পাতা,
    তোমার জন্যে মেলবে পাখা
    অলীক কুসুম কল্পনাটা।

    এবার তাদের মুক্তি দিলাম
    যোজন ক্রোশ বা আরো দূরে,
    চোখের পলক স্থির হয়ে যাক
    বাষ্প জমা গেলাস জুড়ে।

    পরের জন্মে কথা দিলাম
    প্রথম থেকেই থাকবো দুজন-
    কথা দিলাম এই জন্মের
    ভুল বোঝাটা মুছে নিয়ে-
    আলতো করে আকাশ টাতে
    হাঁটবো দুজন গা ভিজিয়ে।

  • কবিতা

    কবিতা- একটু ঘেন্না করিস আমায়

    একটু ঘেন্না করিস আমায়
    – উজ্জ্বল দাস

     

     

    জানিস তোর কথা যে আজ প্রথমবার একা একা ভাবি
    তা কিন্তু নয়।
    তোর কথা আমার রোজ মনে পড়ে,
    হ্যাঁ হ্যাঁ রোজ রোজ রোজ… সবসময় মনে পড়ে।
    আলবাত পড়ে, একশো বার পড়বে।

    তোকে আমি একা একা ভাবতেই ভালবাসি।
    কেউ যাতে ঘুণাক্ষরেও বিরক্ত না করে সেই ভাবনায়।
    তোকে আমি একা একা ভাবতেই ভালোবাসি
    ঠিক, সূর্য ডোবার পরে,
    তোকে আমি একা একা ভাবতেই ভালোবাসি
    ঠিক, চাঁদ জাগার পরে,
    তোকে আমি একা একা ভাবতেই ভালোবাসি…
    চাঁদের কলঙ্কগুলো ঝলসে ওঠার পরে…
    তারা খসে গুহা তৈরি হবার আগে।
    তারা খসে মৃত্যু হবার আগে।
    তোকে আমি একা একা ভাবতেই ভালোবাসি..

    ~~~~~~~~~~~~~

    “উফফ!  আর না এবার ছেড়ে দে”
    যেদিন আমায় একলা পেয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলি,
    আমিও দৌড়ে পালিয়ে গেলাম স্কুল বাড়িটার পেছনে।
    তখন আমার হার্টটা যেন ভয়ে হরতাল করেছিলো।
    কাজ করা থামিয়ে দিয়েছিলো।
    তখন যদি কান পাততিস, শুনতে পেতিস
    একশো ঘোড়ার ছুটে চলার কম্পন।
    কি ভয়ানক অনুভূতি,
    সেই প্রথম, তোকে একলা ভাবা শুরু।

    তির তির করে কেঁপে উঠে ছিলাম আমি, আমার ঠোঁট,
    আমার বুক, মুখ, চিবুক, কপাল আমার –আমার
    আমার শিরা, উপশিরা, আমার ধমনী, আমার সব।
    চোখ বন্ধ করে তোকে স্পর্শ করে ছিলাম আমি-
    আমার সবটুকুতে ছিলিস তুই শুধু তুই।
    কিন্তু সেদিন বুঝতে পারিসনি স্কুল বাড়িটার পেছনে
    আমি তখনো একা দাঁড়িয়ে কাঁপছি,
    আর সেই কম্পনে রয়েছে তোর স্পর্শ পাবার
    একটা সুস্বাদু আকুল আমন্ত্রণ।

    এলিনা তুই।
    ভেবেই চললাম তোকে।
    তোকে আমি একা একা ভাবতেই ভালোবাসি
    বেশ মনে পড়ে।

    তারপর?
    ভেবে দেখলাম। তুই তো আমার নয়।
    আর আমি! আমার সিঁথিতে এখন অন্য কারুর দেওয়া লাল।
    আমার শাঁখা পলা, সে তো অন্য কারুর দান।
    দু’বেলা যখন নেশার ঘোরে আমার শরীরটাকে
    কুকুরের মত ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় রোজ…
    ঠিক তখনও
    তোকে আমি একা একা ভাবতেই ভালোবাসি।

    মনে পড়ে?

    লুকিয়ে দেখা হতো সঙ্গীতাদের বাড়ির তেতলায়।
    পেছন দিকের মরচে পড়া খাড়াই ঘোরানো লোহার সিঁড়ি,
    লম্বা লাল বারান্দা পেরিয়ে ছোট্টপানা ঘর।
    ওর ঘরে গিয়ে ঢুকলেই,
    আমার দিকে তাকিয়ে নিজের বাঁ চোখটা চিপে দিতো,
    ঘর থেকে বেরিয়ে যেত নানা অছিলায়।

    ফিরতো কখন?
    ঠিক সন্ধ্যে নামার আগে,
    আমাদের নিঃশ্বাসের তাপমাত্রা যখন শূন্যাঙ্ক ছুঁই ছুঁই,
    চোখে মুখে লাজুক তৃপ্তি।
    তোকে আমি একা একা ভাবতেই ভালোবাসি,আজও

    মনে পড়ে?
    এরকমই একটা সন্ধ্যের ক্লান্ত কলেবরে-
    সঙ্গীতার মা বলেছিলো-

    “তোদের দুটিকে মানিয়েছে কিন্তু বেশ,
    একটা কালো টিপ পরিস”
    সেদিন তোকে বারবার বলতাম–
    “এত ভালোবাসিস না আমায়,
    একটু ঘেন্নাও কর, শুনিসনি।

    আর আজ?
    নাহ্ পরিণতি পায়নি,
    আমাদের ভালোবাসাটা অমর হয়ে গেছে রে।
    হারিয়ে গেলি তুই।
    হয়তো মন্দবাসা ছিলো তোর মনে।
    আজও তোকে আমি একা একা ভাবতেই ভালোবাসি..

    আর? জানিস! আমি কি বোকা!
    কালো টিপ’টাই পরি,
    আর বলি,

    যদি তুই মন্দ-বাসিস
    কালো টিপের খবর রাখিস।।

    “বেশি ভালো বাসিস না আমায়,
    একটু ঘেন্নাও কর, একটু ঘেন্নাও কর।”
    তোকে কিন্তু আজও আমি একা একাই ভাবতে ভালোবাসি

  • কবিতা

    কবিতা- পেহেলগাঁও

    পেহেলগাঁও
    – উজ্জ্বল দাস

     

     

    কি যেন নাম,
    একটা কাঠের ছোট্ট পারাপারের সেতু,
    ঠিক, কল্পনায় যেমনটা ভেবেছিলাম।
    চারদিক সবুজের চাদর মোড়া,
    গাঢ়- ঘন- কচি কলাপাতার আস্তরণে ডুবে।
    সামনেই আমাদের চালা ঘরখানা।
    তারও গায়ের রঙ সবজে।
    কি যেন নাম জায়গাটার।
    স্মৃতির বিস্মরণে ভুলতে বসা দুহাজার কুড়ি।

    ছোট্ট কাঠের সেতুটাই যে সব, আজ বুঝতে পারি।
    নীচ দিয়ে বিন বিন করে এঁকে বেঁকে বয়ে চলছে-
    নাম না জানা, এক ফালি পাহাড়ি নদী।
    অনতি দূরে সশব্দে পড়ে চলেছে ঝর্ণার জল-
    সেতুর গায়ে হেলান দেওয়া আমি,
    কাঠের হাতলটা ধরে ফিরে গেছি-
    কুচকুচে কালো চুলের বয়সে।
    খুব সন্তর্পণে পা ফেলছি, আবার বিচ্যুতি না ঘটে।
    আবার না হারিয়ে ফেলি তোকে।

    কানে কিন্তু বেজে চলেছে জলধ্বনি,
    কুমারী ঝর্ণার- পরিচিত উচ্ছাস, রিন্-রিন্- রিন্।
    জল চলকে এসে ঠেকছে পায়ে, গায়ে, সারা মনে।
    আজ পূর্ণিমা, ঢলে পড়বো ষোড়শী চাঁদের কলঙ্কে,
    একটু জোৎস্না মেখে নেবো, সেতুটাই যে ভরসা,

    আর তুই যত্ন করে আমার হাতটা ছুঁয়ে দিয়ে বলবি
    “এই তো আমি।”

    মনে পড়েছে। হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে…
    পেহেলগাঁও, পেহেলগাঁও নামটা।
    পেহেলগাঁও- পেহেলগাঁও – পেহেলগাঁও।
    গায়ে হাতটা না দিলেই তো পারতিস।
    ঘোরটা কেটে গেলো,
    শব্দ করে ভেঙে যাওয়া স্বপ্নগুলো,
    খান খান হয়ে চুরমার হয়ে গেলো।
    এরকম ভেঙে চুরে ভালোবাসতে পারলাম কই -তোকে।

    ভেঙে যাওয়া স্বপ্নগুলোর ঝন ঝন আওয়াজ,
    প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো-
    ঝর্ণার ছিটকে পড়া জল কণার গায়ে।
    দুলে উঠলো কাঠের সেতুটা, ধর ধর আমায় ধর-
    আমি যে পড়ে যাচ্ছি।

    তুই যত্ন করে আমার হাতটা ছুঁয়ে দিয়ে বললি
    “এই তো আমি।”

    তুই মিলিয়ে গেলি চাঁদের কলঙ্কের গায়ে।
    ধীরে ধীরে।।

You cannot copy content of this page