-
কবিতা- “ঈশ্বর ,ধর্ম ও মানবতা”
“ঈশ্বর ,ধর্ম ও মানবতা”
-উজ্জ্বল সামন্তদেবতা কি শুধু বিরাজ করেন বিগ্রহে?
ঈশ্বর তো অন্তরাত্মায় মানুষের মনে
সর্ব ধর্মের পরমাত্মা বিরাজমান
শ্রদ্ধায় স্মরণ জ্ঞান ভক্তি কর্মযোগে।মুমূর্ষ রোগীর রক্তের প্রয়োজনে
জাতপাত ধর্ম ভুলে বাঁচার তাগিদে
মানুষ মানুষের জন্যে উপলব্ধিতে
ধর্ম কি আছে! মন্দির ,মসজিদ, গির্জাতে ?জন্মসূত্রে পৃথিবীর বুকে আসা মার্তৃগর্ভে
বিবস্ত্র হয়ে নেই পৈতা মালা তিলক ফোঁটা
রক্তের রঙ লাল নেই বিভেদ সেখানে
তবে কেন ধর্মের নামে হানাহানির স্ফুলিংগ ওঠা ?রাম যে রহিম ও সে খোদা-আল্লাহ যীশু
ধর্মের বিভেদ জানেনা কোনো নিষ্পাপ শিশু
জন্মের পরে ধর্মান্তর নামকরণে
সমাজে বেড়ে ওঠা আত্ম পরিচয়ে ।গীতা বাইবেল পুরাণ কোরানে
ঈশ্বর এক ভিন্ন পথে মতাদর্শে
সমাজ দেশ ও জাতির কল্যাণে
মানুষ মনুষ্যত্ব ভালোবাসা সর্বাগ্রে।মানুষ মনুষ্যত্ব ধর্মের দাড়িপাল্লায়
বিবেক ভালবাসা সম্পর্ক ভুলে
কিছু স্বার্থানেষ্বী ধর্মভীরুর উস্কানিতে
মানবতা বিপন্ন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে।ঈশ্বর আছেন বিশ্বাসের ভক্তিতে
কেন তাঁকে আমরা চার দেয়ালে আবদ্ধ রাখি!
তিনিতো মুক্ত আত্মা পরমাত্মা শক্তির উৎসে
তবে কেন তার নামের বিভেদ,আমাদের স্বার্থে ?ধর্মের অন্ধকার অজ্ঞানতা ও কুসংস্কারে
এক চিলতে আলোর উৎসে অন্ধকার ঘোচে
ধর্ম তার জ্ঞানে যুক্তিতর্কে বিশ্লেষণী পরিচয়ে
শিক্ষা সভ্যতা সংস্কৃতির মেলবন্ধনে
জীব সেবাই শিব সেবা মনে রেখে,
একই সূত্রে গাঁথা মোরা ভারতবাসী
জাত পাত ধর্ম বর্ণ ভুলে কীর্তিমান বিশ্বে….” -
কবিতা- আগমনী
আগমনী
– উজ্জ্বল সামন্তআগমনীর আকাশে ডানা মেলে গাঙচিল
নীল আকাশে শরৎ মেঘেরা খোঁজে মনজিল,
কাশফুলের দোলায় চড়ে খাল বিল মতিঝিল
শারদীয়ার উৎসবে আনন্দ মুহূর্তে স্বপ্ননীল।ভোরের ঘাসে শিশির বিন্দুর মুক্তির মিছিল
শিউলির প্রাণ ভূমির ছোঁয়ায় যখন সলিল,
চরণস্পর্শ ঠাঁইয়ের আশায় পঙ্কজও সামিল
কাদামাটি অবয়ব শিল্পীর সৃষ্টি রাখে নজির।মরশুমি শরতে সেজে অপরূপা পৃথিবী
রূপে রসে গন্ধে মৌসুমী যৌবনা প্রকৃতি,
আসুরিক শক্তির বিরুদ্ধ পরীক্ষাতে নিয়তি
আশায় মর্ত্যবাসী প্রার্থনায় আগমনীর স্তুতি। -
কবিতা- এমন একটা প্রেমিকা হোক
এমন একটা প্রেমিকা হোক
-উজ্জ্বল সামন্তএমন একটা প্রেমিকা হোক যে আধুনিকা হয়েও সাবেকি ভাবে নিজস্বতা থাকবে
যে টপ চুরিদার জিনসের ফ্যাশন কে এড়িয়ে শাড়ির আঁচলে বেঁধে রাখবে
এমন একটা প্রেমিকা হোক যে কৃত্তিমতা হারিয়ে সচ্ছল প্রাণবন্ত হাসিতে মুখ ঢাকবে
মুখে চড়া মেকাপের পর্দা সরিয়ে ছোট্ট টিপ হালকা লিপস্টিকেই মন ভোলাবেএমন একটা প্রেমিকা হোক যে আবদারে নতুনত্ব সৌখিনতা রাখবে
দামী গিফট দামী গহনার বদলে ফুচকা নুডুলস কিংবা আইসক্রিমে খুশি থাকবে
শপিংমলে মাল্টিপ্লেক্সের থেকেও যার পছন্দ হবে ময়দানের ঘাসের উপর হাত ধরে পথ চলতে
এমন একটা প্রেমিকা হোক যে ব্যস্ততার অজুহাত না দেখিয়ে অকপটে মন খুলে গল্প করবেএমন একটা প্রেমিকা হোক যে স্বপ্ন দেখাবে , নিজেও স্বপ্নপূরণের সাক্ষী হবে
এমন একটা প্রেমিকা হোক যে অল্পতেই সন্তুষ্ট হবে চাওয়া-পাওয়ার গন্ডি মুছে
এমন একটা প্রেমিকা হোক যার খাঁটি মনের গভীরে ইচ্ছে হবে ডুব দিতে
এমন একটা প্রেমিকা হোক যার কাছে
অর্থ প্রাচুর্য সামাজিক স্ট্যাটাস গৌণ হয়ে ভালোবাসাই মুখ্য হবে…. -
কবিতা- যদি হাত ফিরিয়ে নাও”
“যদি হাত ফিরিয়ে নাও”
-উজ্জ্বল সামন্ত
যদি হাত ফিরিয়ে নাও একাকিত্বের সাক্ষী থাকবো
নিঃসঙ্গতায় কিছু শিখলে মনের গভীরে রাখবো
চোখের জল কান্নার আওয়াজ পৌঁছাবে না দূরে
যন্ত্রণা যখন অসহ্য অসহায় হয়ে নিংড়ে নেবে একটু একটু করেযদি হাত ফিরিয়ে নাও তোমার স্পর্শ অধরাই রবে
চিরসঙ্গী থাকার প্রতিশ্রুতি ভেঙে অভিনয়টা বিরতিতেই শেষ হবে
অকালেই ঝড়ে যাবে ফুল সুপ্ত বাসনার পাপড়ি খসে
যখন ভালবাসা ও ঘৃণা ঠোক্কর খায় ঘূর্ণাবর্তে আটকেযদি হাত ফিরিয়ে নাও মন্দবাসায় বোঝাপড়া করে
জীবনকে ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে এক পলকে নষ্ট নীড়ে
মনের নির্বাসন মেনে নেওয়া বড় আতঙ্কিত কষ্টের
অন্ধকার গভীর হলে ঢেকে যাবে চাওয়া-পাওয়ার হিসেবসাথে থেকে পাশে থাকার অঙ্গীকারে আবদ্ধ ছিলে
ভালোবাসার হাতছানিতে সম্পর্ক সৃষ্টি করে কাছে এলে
বেরঙিন জীবন ভালবাসায় রাঙিয়ে উদাসী হলে
হাত যদি ফিরিয়েই নেবে তবে কেন বাড়িয়ে ছিলে ? -
অণুগল্প- সহচরী
“সহচরী”
– উজ্জ্বল সামন্তকোম্পানির উচ্চপদে থাকায় ইয়ার এন্ডিং-এর মিটিংটা শেষ হতে রাত বারোটা বাজলো। অয়নের বাড়ি ফিরছে নিজে ড্রাইভ করে। হালকা বৃষ্টি পড়ছে। রাস্তায় দেখে একটি অষ্টাদশী মেয়ে দাঁড়িয়ে লিফট চাইছে। অয়ন গাড়ি থামিয়ে গাড়ির জানালার কাঁচ নামালে, মেয়েটি কাছে এসে বলে আমাকে নিয়ে যাবেন? যা দেবেন তাতেই হবে, আমার খুব বিপদ, বড্ড সমস্যায় পড়েছি।
মেয়েটির মুখের সঙ্গে অনিশার অনেক মিল। পুরনো দিনের কিছু স্মৃতি এক পলকে চোখের সামনে ভেসে উঠলো অয়নের। অয়ন ও অনিশা খুব ভালো বন্ধু ছিল। কলেজে তারা ছিল প্রেমের লিজেন্ড। বিগত কয়েক বছর অয়ন নেশাগ্রস্ত। তার ছন্দহীন জীবন নিয়ে তাঁর বাবা-মা চিন্তিত। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আজ নিজেকে শেষ করার লড়াইয়ে নেমেছে, যেন নিজের সঙ্গে নিজের যুদ্ধ। পরকীয়া সম্পর্কেও জড়িয়েছে অয়ন। আর অনিশা বাবা-মার ইচ্ছেতে, নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ করে। এক কন্যার মা, স্বামী একটা প্রাইভেট ফার্মে কর্মচারী ছিল। আজ ২৫ বছর কোন যোগাযোগ নেই।
অয়ন ওই বয়সী একটা মেয়েকে একাকী রাস্তায় দেখে, তার নিজস্ব ফ্ল্যাটে নিয়ে আসে। মেয়েটি বিছানায় আমন্ত্রণ জানায়। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় একটি সিগারেট ধরায়। মেয়েটির সিগারেটের ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট হয়। রাত গভীর হয়। মেয়েটি প্রশ্ন করে আপনি আসবেন না? অয়ন গিয়ে ইজি চেয়ারে বসে পড়ে। কিছুক্ষণ পরে মেয়েটির কাছে যায় তার মুখখানা দেখে তার জীবনের গল্প জানতে চায়।
মেয়েটি কাঁদো কাঁদো গলায় জানায় ওর মা খুব অসুস্থ। বাইরে নিয়ে যেতে হবে চিকিৎসার জন্য কিন্তু খরচ যোগাতে পারছেনা। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসার অচল। মায়ের চিকিৎসার জন্য আজকে সে বাধ্য হয়ে এই এসকট সার্ভিসে নেমেছে। অয়ন পকেট থেকে দুই হাজার টাকা দিয়ে দেয়।
অয়ন তাকে পরের দিন আবার আসতে বলে। মেয়েটি এলে অয়ন তাকে নিয়ে হাসপাতালে যায়। কিন্তু একি দেখে অয়ন? হাসপাতালের বেডে শুয়ে তার প্রাক্তন প্রেমিকা, একসময়ের অন্তরঙ্গ বন্ধু। ডাক্তারকে প্রশ্ন করলে জানতে পারে সময় শেষের দিকে। অয়ন অনিশার চিকিৎসার যথাসাধ্য চেষ্টা করে কিন্তু নিয়তির কাছে হার মানে।
অয়নকে অনিশা অনুরোধ করেছিলো মেয়েটির দেখাশোনার জন্য । অয়ন মেয়েটিকে আরো লেখাপড়া শেখায়। উচ্চশিক্ষিত করে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠা করে। হয়তো এভাবেই অয়ন অনিশার প্রেমকে ও একজন নারীকে সম্মান জানায়, সমাজের কথায় চিন্তা না করে।”সমাজ প্রশ্ন করবে- সহচরী? শেষ ভালো যার, সব ভালো তার… ” অয়ন মেয়েটিকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়…
-
কবিতা- “শব্দের চাষ”
“শব্দের চাষ”
– উজ্জ্বল সামন্তজানতে ইচ্ছে করে তুমি কি আগের মতই আছো
না বদল হয়েছে তোমার সবটুকু বাহ্যিক দৃষ্টিতে
আধুনিক সময় কি গ্রাস করেছে নির্ভেজাল সরলতাকে
তুমি কি আগের মতোই ভালোবাসা-কে ঢাকো লজ্জার আড়ালেতুমি কি আগের মতোই প্রতিবাদ করো অন্যায় দেখলে
না সমঝোতায় এড়িয়ে চলো সত্যকে ঝামেলায় না জড়িয়ে
জানো আজ চোখ থেকেও অন্ধ মানুষ বিবেক মনুষত্বের লোপ
অসহায় রোগী পড়ে থাকে রাস্তায় সাহায্যের জন্য হাত বাড়ায় না কেউআধুনিক জীবন নিজেকে ব্যস্ত রাখে অট্টালিকার দু’ কামরার ফ্ল্যাটে
অসহায় কান্নার আওয়াজ পৌঁছায় না উচ্চতার শিখরে আটকে
জানো আজ কৃত্রিমতায় মেতেছে জনজীবন সভ্যতা
লজ্জা আভূষণ বেমানান তাই অবলোপনে নির্লজ্জতাই গ্রহণযোগ্যতাবদলাচ্ছে সময় বদলাচ্ছে মানুষ আবহাওয়া প্রকৃতি
জীবনের চেয়ে বড় মুল্য আর কিছু আছে কি?
তুমি স্বার্থপর হয়ো না বাড়িয়ে দিও কিছু সাহায্যের হাত
অলিখিতই থাক তোমার মনের গভীরে আমার শব্দের চাষ… -
কবিতা- তুই
“তুই”
– উজ্জ্বল সামন্তকেমন আছিস তুই ভালো তো? খোঁজ রাখিনি
জানিস আজকাল তোকে খুব মিস করি
কেন? একাকীত্ব কুড়ে কুড়ে খায় আমাকে
সেই বর্ণালী দিনগুলো স্মৃতিতে এখনো ভাসেমনে আছে রাগ করে তুই নাক ফুলিয়ে থাকতিস
রাগ যেন নাকের ডগায় চোখের জলে বানভাসি
আনন্দের মুহূর্তে গালের টোলে তুই লাস্যময়ী
তুই ছিল আমার ক্রাশ কিন্তু কোনদিন জানায়নিকেন? যদি মিষ্টি বন্ধুত্বটা নষ্ট হয় দমকা হাওয়ায়
ইগো বড় হয়ে সম্পর্ক যদি পিছু ছাড়ায়
সম্পর্কের টানাপোড়েনে যদি বন্ধুত্ব হারায়
ভালোবাসা যদি বিষ ছড়ায় বন্ধুত্বের চেহারায়তুই যে আমার আপন ছিলি একান্তই
আজ তেমন কেউ খোঁজ রাখে না জানিসতো
জানিস এখন প্রেম হয় স্ট্যাটাস আউটলুকে
চড়া মেকাপের আড়ালে মুখ মুখোশে ঢাকেআধুনিকা সুন্দরীদের ভিড় সোশ্যাল সাইটে
এখন চিঠি নয় কথা হয় হোয়াটসঅ্যাপ মেসেঞ্জারে
টেক সেবী যুগে সম্পর্কগুলো কাঁচের মত ঠুনকো
সামান্য আঘাতে ব্রেকআপ সম্পর্ক ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণআসলে কি বলতো বিশ্বাসের অভাব বড়ই
একসাথে কয়েকজোড়া প্রেম চলে অহরহ
সম্পর্ক এখন জামা কাপড় চেঞ্জের মত
চাওয়া পাওয়ার হিসেব নিকেষে কিংকর্তব্যবিমূঢ়জানিস আজ আমার একটা তুই চাই
ভীষণ মিস করি তোকে কোথায় খুঁজে পাই?
চারিদিকে মুখোশের ভীড়ে আমি হারিয়ে যাই
সম্পর্ক অনেক কিন্তু কোথাও যেন তুই নাই… -
কবিতা- সমীকরণ
“সমীকরণ”
– উজ্জ্বল সামন্তপরিচয় হতে অপরিচয়ের যাত্রাপথ দীর্ঘশ্বাস ফেলে
আপন কখন পর হয়ে যায় স্বার্থের চোরাবালিতে ঢেকে
জীবনের বাঁকে যদি অন্ধকার ডুবে থাকে তবে
ভাঙা-গড়ার খেলায় কেন মনই ভাঙে নিঃশব্দেভালোবাসার সরলরেখায় কখনো বিভিন্ন বাঁক
মিথ্যে প্রতিশ্রুতি আ-মরণ পথ চলার অঙ্গীকার
ভালোবাসা কি শুধুই কামনা-বাসনার অলিখিত চুক্তি
ভালোবেসে কেউ উন্মাদ কেউ সুখী কারো পরিতৃপ্তিভালবাসায় এত কষ্ট জেনেও মন কেন ভালোবাসে
কেন স্বপ্ন দেখে ঘর বাঁধার খোলা আকাশের নীচে
দমকা হাওয়ায় স্বপ্নগুলো ভেঙে চুরমার একপলকে
ঠিক ভুলের সমীকরণ অন্তর্দ্বন্দ্বে সম্পর্কে ঘুণ ধরেঘুণপোকা কুরে কুরে খায় সম্পর্কের মজবুত ভিত
কাছের মানুষটা পর হয়ে ওঠে জীবন দুর্বিষহ অহর্নিশ
বিশ্বাসী বিশ্বাসঘাতক অলীক কল্পনাও বিশ্বাস্য
ভালোবাসার পোস্টমর্টেমে কাটাছেঁড়া সম্পর্কশূন্যতায় মন ভেসে পৌঁছে দেয় অতীত স্মৃতিতে
একাকিত্বের নীলকন্ঠ বিষ কখনো অমৃতের স্বাদে
রক্ত যখন জল হয়ে ঝরে পড়ে চিবুক বেয়ে গড়িয়ে
নির্জীব পাশবালিশ টা কখন আঁকড়ে ধরে আপন ভেবেবালিশটা সাক্ষী থাকে মধ্য নিশিতে চাপা কান্নার
ভালোবাসার যন্ত্রণার তীব্র দহনে বাঁধভাঙা হাহাকার
মনের সঙ্গে লড়াইটা দুর্বিষহ অহরহ ঘটছে অন্তর্ঘাত
মন বড় অবুঝ সমীকরণের ফাঁদে ফেলে দীর্ঘশ্বাস… -
অণুগল্প- ফেরা
“ফেরা”
– উজ্জ্বল সামন্তঅভিক অল্প বয়সে পিতৃহারা। বিধবা মা ও বড় বোনকে নিয়ে মধ্যবিত্ত সংসার। দারিদ্রতা সঙ্গে লড়াই করতে করতে একসময় বড় হয়ে ওঠে অভীক। আত্মীয়-স্বজন নাম মাত্রেই আছে। অভিক বুঝতে শেখে তার বাবা নেই, জীবনে সংগ্রাম করে দাঁড়াতে হবে। কলেজ পাশ করে জীবন সংগ্রামের পথে নামে। স্পষ্টবাদী হওয়ায় বড় কোম্পানিতে চাকরি করলেও হেনস্থার শিকার হতে হয়। অদম্য জেদ ও লড়াইয়ে ব্যর্থ হতে হতে একসময় সরকারি চাকরিও জুটে যায়। অভিকের দিদি রেনুর বিবাহের পনেরো বছর অতিক্রান্ত। একমাত্র ভাগ্নে তেরো বছরে ওপেন হার্ট সার্জারির পর হঠাৎ হৃদরোগে মারা যায়। বছর তিন পরে একটি কন্যা সন্তান দত্তক নেয়। অভীক বিবাহের জন্য অনলাইন ম্যাট্রিমনিতে আবেদন করে। দু-এক মাসের মধ্যে সুন্দরী শিক্ষিতা মধ্যবিত্ত পরিবারে বিবাহ হয়। অভিক মনে মনে খুব খুশি। কিন্তু তাঁর সুখ স্থায়ী হয়নি, বিবাহের এক দুই মাসের মধ্যে সংসারের চরম অশান্তিতে তাসের ঘরের মতো স্বপ্নগুলো ভেঙে যায়। অকারণে শ্বশুরবাড়ির লোকজন চূড়ান্ত অপমান ও লাঞ্ছনা গঞ্জনায় মান সম্মানে আঘাত আনে কয়েকবার অভীকের পরিবারে। অভীক ও তার মায়ের কিন্তু এতে কোন দোষ ছিলনা। তারা বহুবার বুঝিয়ে বিফল হয়েছিল। অভীক তার স্ত্রীর সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশেছিল। সাধ্যমত তার আবদার ইচ্ছা পূরণ করার চেষ্টা করতো। স্ত্রীর আচার-আচরণ খুব একটা স্বাভাবিক ছিল না। মানসিক অসুস্থতা ছিল নন্দিতার। সন্দেহবাতিক, বদমেজাজী, স্বার্থপর, লোভী, কোন বিশেষণই যথেষ্ট ছিল না নন্দিতার জন্য। একসময় সম্পর্কের কঙ্কালসার চেহারা প্রকাশ পায় নন্দিতার কটূ কথায়। অভিকের সম্মানহানি ও তাকে বিপদে ফেলতে শ্বশুর বাড়ির লোক সব রকম চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এক সময় সম্পর্ক কাঠগড়ায় ওঠে। অভীক এখন ব্লাড প্রেসারের পেশেন্ট। এই মিথ্যা সম্পর্কের ইতি টানতে ডিভোর্সের আবেদন করে। অভিক মন থেকে নন্দিতাকে ভালবেসে ছিল, নন্দিতা ছিল তার স্ত্রীর থেকেও বেশি কিছু। এই সমাজে নারীদের উপর শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারের ঘটনা অনেক শোনা যায়, কিন্তু এমন অনেক ঘটনা ঘটে যেখানে নিরীহ শ্বশুরবাড়ির লোকদের ওপর স্ত্রী অত্যাচার করে স্বামীকে বাধ্য করে সম্পর্কের ইতি টানতে। খোরপোষ নিয়ে হয়তো কিছু অর্থ আদায় হয় ঠিকই কিন্তু সম্পর্ক? সম্পর্কে কি আর ফিরে আসা যায়?
কখন যেন অচেনা হয় আইনের চোখে… -
কবিতা- “ভালোবাসা প্রশ্নচিহ্নে “
“ভালোবাসা প্রশ্নচিহ্নে “
– উজ্জ্বল সামন্ততোমার আলিঙ্গনের উষ্ণতায় জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে
বুকের উতালপাতাল ঢেউ সমুদ্র মন্থন করে অনুভবে
তোমার চুলের ঘনঘটায় যেন ভালোবাসা আকাশ ঢাকে
বিদ্যুতের ঝিলিকের উপস্থিতি উঁকিঝুঁকি বাহুডোরেনিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে কথা বলে চুপিসারেই কানে কানে
নিঃশ্বাস বায়ুর উষ্ণতা পড়ে অহরহ প্রেমিকের বুকে
নিরাপত্তা বিশ্বাস যেন পথ খুঁজতে খুঁজতে কাঁধে
রঙিন স্বপ্নে বিভোর চারটি চোখ স্বপ্নের আকাশে ভাসেআরো কাছে টেনে নিয়ে বাহুডোরে আবদ্ধ হতেই
লজ্জায় রাঙ্গা মুখে ফুটে ওঠে সুখের অনুভূতি অচিরেই
অতৃপ্ত বাসনা কামনার আগুনে জ্বলে ওঠে নিভৃতে
দুটি দেহ মন নাগপাশে ভালোবাসার চরম মুহূর্তেচিরদিনের মত সুখে দুঃখে সাথে থাকার অঙ্গীকারে
ভালোবাসায় অমৃত আছে বিষও আছে জেনেও
অপূর্ণতা সম্পর্কে দুঃখ কষ্ট মান অভিমানে ঘৃণা তিরস্কারে
কেন দুটি মন ভালোবাসে পরস্পরে একাত্ম হয়ে..?