-
সাম্প্রদায়িক
সাম্প্রদায়িক
-কৃষ্ণ বর্মনযে সম্প্রীতি শুধু গানের সুরে বাঁধা
যে সম্প্রীতি কবিতার ছন্দে
কিংবা নাটকের সংঘাত দ্বন্দে
সেই সম্প্রীতি আমি চাই না।সম্প্রীতির নামে যারা উদাহরণ দেয়
নজরুল কিংবা রবির
তাঁরা আসলে কবির বোঝে না
বোঝে কদর ছবির।সম্প্রীতির জন্য তারা সর্বচারী সর্ব পথগামী।
তারা চাইলেই শান্তি নামে অশান্ত নগরে
তারা চাইলেই গ্রামের পথে পথে
সম্প্রীতি একতারা বাজায়
কিংবা কন্ঠ মেলায় জারি গানের সুরে।না। আমি এই সম্প্রীতিও চাই না।
সম্প্রতি সম্প্রীতিকে যারা সম্পত্তি ভেবে
নিজেদের দাক্ষিণ্য দেখায় ধর্মীয় অনুদানে
কিংবা ধর্মনিরপেক্ষতার পদক্ষেপ করে মন্দিরে মসজিদে
আমি সেই সম্প্রীতিকেও ঘৃণা করি।আমি সম্প্রদায়গত বিভেদ চাই
বিভেদ চাই স্বতন্ত্রতায়
বিভেদ চাই মৌলিকতায়।
আমি সংঘর্ষ চাই
চিন্তা,চেতনা আর বিশ্বাসে।
আমি বিজ্ঞাপন নয় বিদ্রুপ চাই
যারা ছবির সারিতে ছবি বসিয়ে
নিজেকে মানব ধর্মের প্রতীক ভাবে
তাঁদের বিরুদ্ধে।আমি সত্যিই এই সকল সম্প্রীতি
আর সাম্প্রতিকদের বর্জন করেছি
কারণ আমি সাম্প্রদায়িক। -
সরীসৃপ
সরীসৃপ
-কৃষ্ণ বর্মনকথা ছিল অনেক কিছু লেখার।
লিখিত চিহ্নগুলি ভষা হোক বা না হোক
বুঝে নেওয়ার দায় তো বর্তমানের কারোর ছিল না।
হাজারো বছর পরের ঐতিহাসিকদের
গবেষণার রসদ হয়ে থাকতে পারতো লেখাগুলি।
অথচ কেউ লিখল না।
কিছুই লিখল না।এই সময়ের স্বাক্ষর
কোনো দিনই আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
তবুও কারো কোনো হেলদোল নেই,
কোনো আফসোস নেই।
সবাই সন্তুষ্ট।
সবাই তুষ্ট।
অতএব আড়ষ্টতা ভাঙার সব দায়িত্ব থেকে
অব্যাহতি নিল লেখক। -
জোড়ের জোর
জোড়ের জোর
-কৃষ্ণ বর্মনজোরে জোড়া যেমন লাগে
তেমনি জোরে জোড় ভাঙেও।
জোর নেই যাদের
তাঁরা জোড়ে যদি থাকেও আদতে বিজোড়।চারিদিকে একটা ঘোর চলছে।
বিভোর জোর তাই
জোড় ভাঙার খেলায় মেতেছে।
বিজোড়ের বিজয়োল্লাসে
জোড়ের পরাজয়ের কান্না
শোনে না কেউ।জোরের জুলুম জারি রেখে
জোড়কে ভাঙার চক্রান্ত যত তীব্র হবে
বিজোড়গুলো ততই জোর অর্জন করে
কোনো না কোনো দিন গর্জন করে উঠবেই।সেদিনের প্রতীক্ষায় বিজোড়গুলি
তিলে তিলে জোর সঞ্চয় করে
জড়ত্ব কাটিয়ে উঠছে।
জোরের বীরত্ব তাই ক্রমে
দাসত্বের কাছে আত্ম সমর্পন করে
নিজেই নিজের তর্পন করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। -
মাননীয়
মাননীয়
-কৃষ্ণ বর্মনযদি সব মেনে নিতে পারো
যদি মানিয়ে নিতে পারো সব
তবেই তুমি মাননীয়
তোমার মৌনতা মূর্খতাকে প্রশ্রয় দিলে
তুমি মুখরিত উল্লাসে মুখ্য
বিরোধিতা তারাই করে
যাদের বোধ নয় অতীব সূক্ষ্ম।তোমার সম্মতিই তোমার সদ্গতি
তোমার মতামত তোমার বিপদ
তুমি তখনই বাঁচার মত বেঁচে আছো
যখন মস্তিষ্ক তোমার মৃত
যদি সকলেই তোমার কাছে নগন্য হয়
তবেই হবে তুমি গন্য
তখন তুমি সত্যিই মাননীয়
যদি মান্যকে কর অমান্য। -
দানপত্র
দানপত্র
-কৃষ্ণ বর্মনআমি এত দিয়েছি।
উনি অত দিয়েছেন।
গুরুদেব এত এত দিল।
তিনি এত দিয়ে প্রমান করলেন
যে তিনি কত বড় মাপের মানুষ!সত্যিই মন কতটা বড় হলে
এত এত দেওয়া যায়!
ক্ষতিটা হয়েছিল বলেই না
এই ভারত জানতে পারছে
এই পৃথিবীতে কত মহান মানুষের বাস!তাহলে কেন যে কবিরা এত
নেই নেই বলে;
কেন যে লেখকরা অসন্তোষের কালিতে লেখে
হবেনা;এদের দ্বারা কিছু হবেনা;
কে জানে।দিতে দিতে যেদিন ক্ষতি পূরণ হয়ে যাবে
যেদিন অভাব থাকবে না আর কোনো দিকে
সেদিন এই দাতা বিধাতারা
কোথায় দেবেন?
কাকে দেবেন?
কেন দেবেন?
অথচ দিতে তো তাঁদের হবেই।
না দেওয়াটা যে এক প্রকার দ্রোহিতা!
দানপত্র লেখা হোক বিজ্ঞাপনে-প্রচারে
থাকুক বা নাই থাকুক গ্রহীতা। -
তিনি হাসতে পারেন
তিনি হাসতে পারেন
-কৃষ্ণ বর্মনতিনি হাসেন
তিনি হাসতে পারেন
তিনি হাসাতেও পারেন
শহরে যখন মড়ক লাগে
তিনি হাসেন
বুড়ি গঙ্গার জলে
প্রতিবাদের নিথর দেহ ভেসে উঠলে
তিনি হাসেন
হায়নার কামড়ে ক্ষতবিক্ষত চার বছরের
সাকিনার দেহটা খড়ের গাদায় পড়ে থাকলে
তিনি হাসেন
পুলিশ ছাত্রকে বুলেটে ঝাঝরা করলে
তিনি হাসেন
প্রাইমারী শিক্ষক তিনকড়ি মন্ডলের স্ত্রী অনাহারে মারা গেলে
তিনি হাসেন
পনেরো বছরের মোল্লা পনেরো বছরের সাহানাকে বিয়ে করলে
তার হাসি পায়
তিনি ক্ষুধার্তকে দেখে হাসেন
তিনি বেকারকে দেখে হাসেন
বন্যার জলে হাসেন
তিনি জাতি দাঙ্গায় হাসেন
তিনি গৃহযুদ্ধে হাসেন
আর্থিক মন্দায় দেশটা বিক্রী হয়ে গেলেও তিনি হাসেন।হাসিটা তার সহজাত
হাসিটা তার স্বভাব
গাড়ির চাকা পিষে মারলেও
হাসিটা তার লা-জবাব।তিনি হাসতে পারেন
তিনি হাসাতেও পারেন
হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরেও গেলেও
এই অভাগা দুঃখী দেশে হাসি বিতরণ করতে
তিনি বদ্ধ পরিকর।হাসুন
মন ভরে হাসুন
হাসিতে পেটও পরে
হাসিটা আজ অমিল শুধু
পিষে দেওয়া দুজনের শূন্য ঘরে। -
গ্রহণ
গ্রহণ
-কৃষ্ণ বর্মনগ্রহণ নিয়ে ব্যস্ত
গ্রহণ নিয়ে ভীত
অথচ কেউ গ্রহণে রাজী নয়।
গ্রহের ফেরের অজুহাত দিয়ে
সবাই দায়িত্ব এড়িয়ে যায়।
আগ্রহেও ক্রমশ গ্রহণ ধরে
স্হির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে শুধু অস্হিরতার বিগ্রহ।গোগ্রাসে গিলতে গিলতে
অংশটারও পূর্ণাঙ্গের পঙ্গুত্ব প্রাপ্তি হবে।
ভরসা শুধু তুলসী পাতা।অপ্রাপ্তির গঙ্গাটা ক্রমশঃ পাড় ভাঙতে ভাঙতে
নিজেই ভঙ্গুর হয়ে পড়বে।
সেদিন গ্রহণ আরো দীর্ঘস্হায়ী।
যেদিন সত্যি সত্যিই গ্রহণ করতে শিখবে
সেদিন সত্যিই গ্রহণ কেটে যাবে।সেদিন ক্ষণিকের গ্রাসের ভয়ে
চাঁদ মুখ লুকাবে না মেঘের আড়ালে।
সেদিন আকাশ ও মেঘমুক্ত থাকবে।
চাঁদ নিজেই অপেক্ষা করবে গ্রহণের
কারণ সেদিন সে গ্রহণ করতে শিখে গেছে। -
আজ মুক্তির দিন
আজ মুক্তির দিন
-কৃষ্ণ বর্মনআজ বিষাদের দিন নয়
আজ নয় বিচ্ছেদের দিন
আজ মুক্তির দিন
আজ মিলনের দিন
আলোয় আলোয় এই আকাশে
আজ তোমার মুক্তির কিরনের ছটা
পথের ধূলার কনিকায় সবুজ ঘাসে
তোমার ক্ষণিকা আজ শাশ্বত অস্তিত্বে বিলীন।আজ বিরাগের দিন নয়
আজ নয় বেদনার দিন
আজ আনন্দের দিন
আজ আবাহনের দিন
আনন্দ যজ্ঞের আনন্দধারায়
আজ বয়ে যায় তোমার অনন্ত স্রোত
শতবর্ষ পরেও তুমি চির নবীন
তোমার এই পথ চলা আজো অন্তহীন
শ্রাবণে কিংবা প্লাবনে আজ আর কান্না নেই
আজ যে তোমার মুক্তির দিন। -
হলদে পাতা
হলদে পাতা
-কৃষ্ণ বর্মনযত্ন করে রেখে দেওয়া হলদে পাতাগুলো
আজ আবার সবুজ হতে চায়,
দমকা হাওয়ার আবদারে অবুঝ হতে চায়।
ক্লোরোফিলগুলো বলে গেছে আর ফিরবে না,
ঝরা পাতায় নকশা এঁকেছে ধূলো
এক ফোঁটা জলেরও প্রতিশ্রুতি দেয়নি কেউ
তবুও বসন্তের প্রতিক্ষায়।একটা বিপ্লবী ফোটন কণা
শুধু বলেছিলো “বিশ্বাস রাখো।”
সেই বিশ্বাসেই বিশ্ব জয়ের স্বপ্নে বিভোর হলদে পাতা।
শত্রুরা আনুক যতই গুপ্ত হানা
হলদে আবার সবুজ হবেই
সম্পর্কের সম্পৃক্ততায়,
প্রতিবন্ধকতার বন্ধুত্বে। -
মেঘলা মনের বৃষ্টি
মেঘলা মনের বৃষ্টি
-কৃষ্ণ বর্মনঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হলে মেঘলা করে মন
একলা নীড়ে আমি দূরে আপনজন।
এ মধুর বেলায় আকাশ পানে চেয়ে
মন চাতক যায় উড়ে অচিন দেশে ধেয়ে।মেঘের ডাক পিয়ন আমার চিঠি নিয়ে
খুঁজে তো পায়নি তোমার বাড়ি গিয়ে।
ফিরে এসেছে তাই বিনা উত্তর হাতে
তোমায় খুঁজি আজো বৃষ্টি ঝরা রাতে।তোমার মনেও যেদিন অঝোর বৃষ্টি হবে
তোমার আকাশও যেদিন হবে কালো
ঝড়ের চোখের বজ্রে খুঁজোনা যেন
আমার নিভে যাওয়া শিখার আলো।সেদিন হয়তো নেই আমি আর
আমিও অচিন পাখি
ফেলে যাবো শুধু শরীরটুকু
সোনার খাঁচায় রাখি।সেদিনও ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হবে
মেঘলা হবে মন
সেদিন দূরে গিয়েও আমি
তোমার আপনজন।