-
কবিতা- ঝাড়বাতি আমলকির কথা
ঝাড়বাতি আমলকির কথা
– পারমিতা ভট্টাচার্যঅনিমেষ অপেক্ষা করে পথ
পায়ের নূপুর কখন পড়বে খুলে তার বুকে!!
এক যে আছে মেঘমল্লার মৌনতা
যার শরীর জুড়ে রোদের আঁকিবুকিজাফরিকাটা বাতাস খুঁটে বাঁধে আমলকি ঝাড়বাতি
পথ হয়তো নূপুর বুকে ধরে
যক্ষপ্রিয়ার হৃদস্পন্দন মাপে ঊনকোটি,কাদা মেখে নবাবী মেজাজে কোন উড়োখাই পথিক!
শ্রাবণ রাত অঝরধারা মেখে মাদকতা মিশিয়ে
মেঘের হাতে পাঠাবে অনুচ্চারিত শব্দ বাহারআমি একটা পানসি পেলেই
পাড়ি দেবো নক্ষত্র সমাহারে……
নদীর বুকে বালিয়ারির ঝুপ করে আত্মসমর্পণ
আর ঢেউয়ের শীৎকারে
একটা তারা খসে পড়বে গ্যালাক্সির গা ঘেঁষেপথের শুরুটা একা পা ভেজালেও
মাঝ পথে আসবে অরণ্য সংহার গন্ধ
দুয়ে দুয়ে চার মেলেনা পাথরকুচির গালিচায়
তাই বলে ছাইদানি রাখবনা জীবনের চৌরাস্তায়!! -
কবিতা- মেয়েটি যদি উত্তর চায়!
মেয়েটি যদি উত্তর চায়!
-পারমিতা ভট্টাচার্যগাছের গায়ে স্মৃতিফলক লেখে হিংস্রতা
বিষাক্ত জিহ্বা চেটে খায় শামুকের মাংসপেশি….
মানুষ হতে চাইলে
ঠিক কতটা অপরাধ হয়!!পরিত্যক্ত সময়ের মেঝে ভেজে
চাপ চাপ বিষাক্ত নিঃশ্বাসে…মেয়েটির ঠিক কী ভুল ছিল?
অপমানিত হবো জেনেই পাখা মেলেছিল স্বপ্ন
কাঠগড়ায় ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল
হলুদরঙা নদী…
শ্যাওলার রঙের শাড়ী পড়া মেয়েটি
পায়ে যদি ঘুড়ির নূপুর বাঁধে..
ধানক্ষেতে ছড়িয়ে দেয়
মুক্ত খিলখিল বসন্ত..
তবে আঁশটে গন্ধে জিভ
লালাঝরিয়ে মাংসগন্ধ খুঁজে ফেরে বুঝি!চেটেপুটে খাবার পর
হলুদ নদীর আঁচলে মুখ মুছে..
সন্ন্যাসী আদলে সমাজে তুলসী যাপন হলে,
পৃথিবীর সব মন্দিরের চাতালে
ভক্ত আর শ্বাপদের উপবাসী জমায়েত বসে.
উভয়ের মুখেই জ্বলে ভক্তির চুরুট…আমি কারো মৃত্যুর কারণ হতে চাইনি
অভিমানে গোলাপী নদীও জানে সে কথা..
একটু হাঁটবার রাস্তা চেয়েছিলাম মাত্র
আর জানতে চেয়েছিলাম,
এই পৃথিবী কাদের?
এই মাটির দখলদার কারা?
একটা শরীর, কিছু মাংসল বাকল
ডালপালা ছাঁটা এক ছটাক শিকল বাঁধা
ঘর,দুয়ারে অন্তহীন প্রাচীর
আর একটা কপাল জোড়া সূর্য…..
ব্যাস, এইটুকুই আমার!একটা দিন যদি অরণ্যের প্রাচীনতায় মুখ ঘষে,
একটানে আবিল মুখোশ টেনে খুলি!
আঁশটে গন্ধে মিশিয়ে দিই চন্দনী,আতর!
সুবোধ বালক কি তবে সেদিন
মাংসল উপত্যকার গভীর ক্ষতের
যুপ কাষ্ঠে মাথা গলিয়ে
তুলসী মালা জপবে? -
কবিতা- সম্পৃক্ত সেতুযোগ……
সম্পৃক্ত সেতুযোগ……
– পারমিতা ভট্টাচার্যবুঝলেই না,তোমাকে এখনও কেউ আজন্ম চায়
জল ছুঁয়ে হয়তো কোনও বৈঠা,হলুদ চিঠি হাতরায়
“ভালো থেকো” জানি বলা বড় সোজা
কঠিন তো জীবনের অভিমুখ খোঁজা
তবু বলি “বাঁচো” জীবনেরও আছে মানে
নদীর নরম ছোঁয়ায় যেমন পাহাড় বাঁচতে জানে!!
অভিমান! সে তো শার্সিতে গড়ানো জল
চলে গেলে কে বলবে “ভালবাসি!” বল…
কে আমায় চেনাবে স্পর্ধিত কবিতার ওম
এখনও হাতছানি দিয়ে ডাকে, একাকী প্ল্যাটফর্ম
চেতনার অবগুণ্ঠন জুড়ে মৃত্যু নয়, জীবনের কলতান
ব্যস্ততা মেখে একা হেঁটে চলে পথ,শুনসান
একা তো সবাই;পাহাড়, নদী, দুঃখ, বৃক্ষরাজি
একচিলতে সুখ মেখে সারাজীবনের দেঁতো হাসিনিকোটিন ফুৎকারে মাপো কোন অভিমান?
খোঁজ রেখো তার; মনিকর্নিকায় আঁকা থাক অভিজ্ঞান
বৃষ্টি মেখে তুমি মেঘমল্লারে ভাসাও যত শোক
কবিতার প্রতিটি অক্ষর আজ ব্যাকুলতা মেখে শুধুই তোমার হোক….একমুঠো খইয়ের আগে আসুক অনুরণিত ডাক,সম্পৃক্ত সেতুযোগ..
-
কবিতা- পতনের শব্দ অক্ষর জুড়ে
পতনের শব্দ অক্ষর জুড়ে
– পারমিতা ভট্টাচার্যনিপুণতম আয়োজন সারা হলে
খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত হয় পতনের ধ্বনি
শরীর থেকে ছিঁড়ে খুঁড়ে অচলায়তন শোক
এখন সরিয়ে রাখার পালা।প্রপাতের ওড়া জলকণায় হাত রাখি
কি সুচারু তার মায়াবী প্রলেপ
পাইনের গায়ে জড়ানো চন্দ্রলোকের প্রাচীনমত্ততা……খণ্ড খণ্ড ব্যর্থতা ঘিরে তবু
বেড়ে ওঠে মাঠময় চারা ধানগাছ
শিকড়ে তখন বাঁচার অদম্য উচ্ছ্বাস।বিন্দু বিন্দু ঘাম গড়িয়ে পড়া গ্লাসে
রঙিন আহ্বান নিঃশেষিত হলে
বাতিস্তম্ভের নিভু নিভু আলোয় ধোয়া জনপথ
তার টলমলে পায়ে ঝাঁপি খুলে বসে।এখন সঙ্গোপনে থাকা অক্ষর বিলাস
সংসার পাতে ত্রিপলের নীচে
ক্লান্তি প্রথা ভেঙ্গে কোথায় যেনো
তারাদের ছন্দপতন ভঙ্গিমা….ঈশ্বরের বাগানে বাকল খুলে রাখে বৃক্ষেরা
উড়োচিঠি জুড়ে….. -
কবিতা- ঈশ্বরী নয়,মানবী হতে চাই..
ঈশ্বরী নয়,মানবী হতে চাই..
– পারমিতা ভট্টাচার্যশরীর জুড়ে নোনতা ঘামের প্রপাত, উশ্রী আদলে,
বুকের উপত্যকায় সাজানো থাকুক একটা দীর্ঘ..অতি উতরাই দিঘলশ্বাস..
মাটি যেমন ঝরা পাতা বুকে চেপে রাখে,
শিকড় যেমন মাটি!!
স্রোত বুকে চেপে স্বচ্ছতোয়ার
প্রতিটি পাহাড়ি বাঁক নগ্নতা ঢাকে
অরণ্যের অন্তরালে, একলা…চোখের নিচে ঝড় উঠেছে…
ভেঙে যাচ্ছে অহংকারের ছাউনি…
পাল ভাঙা, হাল ভাঙা নৌকায়
টালমাটাল পোষাকী নামের বৃন্ত..
খুলে যাচ্ছে রাত পোশাকের কিশোরী রিবন
পেলবতা মেখে উদ্ধত ঘুঙুর
ছিনিয়ে নিচ্ছে জ্যোৎস্না বিছানো সুখ..
ধূপের গন্ধেরা মেতে উঠছে
ভরা কোটালের মাদকতায়..প্রতিটা ভাঙ্গন শেষে পলি জমে মনে,
ঘুরে দাঁড়াবার শেষ খুঁটি ভেঙ্গে গেলে
গিলে খায় নোঙরের অবসাদ…
আর একটা নিখুঁত তারা খসা দেখতে দেখতে…
আর এক পেগ শিহরিত বাতাস হাতে নিয়ে
আমি ঈশ্বরী নয়, শুধু মানবী হতে চাই.. -
কবিতা- কৃষ্ণচূড়া কলমে জন্মান্তর
কৃষ্ণচূড়া কলমে জন্মান্তর
– পারমিতা ভট্টাচার্যতোমায় যদি ভালোবেসে নদী বলে ডাকি?
কিংবা ধরো যদি বলি আমার খোঁপার কাঠচাঁপা?
কিংবা ধরো ঠোঁটের তিলে,সূর্য টিপে,কাজললতায় এঁকে রাখি তোমার ভালোবাসার মোহর?
তবে কী তুমি দেবে সাড়া?
ভেসে যাবে অবধারিত জোয়ার অভিমুখে?
ডাহুক ডাকা দুপুর মনে করাবে আমার নাম?
রাতের অন্ধকার খুঁড়ে তুলে আনবে আদিম ভাস্কর্য খচিত আমার মুখ?
কয়েক আলোকবর্ষ দূর থেকে নিরন্তর, নির্বাক শ্রোতা হয়ে
শুনবো শ্রাবণ রাতে বাঁধ ভাঙার গান।আমায় তুমি বৃক্ষ বলে ডেকো
আমার পর্ণমোচী পাতায় লিখো তোমার প্রিয় নাম
আমার কিশোরী শিকড় জুড়ে ছড়িয়ে দিও সিঞ্জিনী ধ্বনি
বাকল ছাড়িয়ে হৃদয় খন্ডে জড়িয়ে দিও
রাত সাঁজোয়া সাজ
দিনলিপির নির্যাস মেখে নদীর আঁচলে
বাঁধা থাক বৃক্ষছায়া
আসছে বসন্তে তোমার নদীবুকে
একটা গোটা জন্মান্তর লিখবো আমি
কৃষ্ণচূড়া কলমে
মনে থাকবে? -
কবিতা- পাতায় পাতায় শোক
পাতায় পাতায় শোক
– পারমিতা ভট্টাচার্যবৈশাখী রাতে কাগজের নৌকা ভাসাই
কলমের আদরে সেজে ওঠে কাগজ
স্তাবকের স্তুতিবাক্যে মেতে ওঠে মন
তোমার বিহনে ব্যর্থ শিলাইদহের সাজগোজ।আমিত্বে মোড়া শূন্য অচলায়তন
মেকি উপঢৌকনে চর্বিত হয় স্তব
বাসি মালা বাৎসল্য খোঁজে আবক্ষ মূর্তিতে
আসছে বৈশাখের ঝাঁপিতে তোলা থাক সব।পাতায় পাতায় লিখি কবিতা রাশি
দিনে দিনে জন্ম নেয় অহংকারের স্তূপ
অন্ধকারে বাঁচি তবু তোমাকেই আকঁড়ে ধরে
জীবনের শেষে দেখি সফলতার অবাঙমুখ।বদ্ধ খিড়কি পেরিয়ে চৌকাঠ ছোঁয়া মানা
আতঙ্কের রেললাইন সিঁধ কাটে কুঁড়ে ঘরে
অকাল দিনে ঝরে গেল কত ক্ষুধা, তৃষ্ণা
এপিডেমিক এরা’য় তাই রবিজ আবহ বহু দূরে।আসছে বৈশাখ,আবার সাজবে রবির সুরে সুরে।।
-
কবিতা- ইচ্ছে ব্যথার কথা
ইচ্ছে ব্যথার কথা
– পারমিতা ভট্টাচার্যউঠোন জুড়ে হড়পা প্লাবন তোড়
তছনছ যত অনূঢ়া পংক্তি বিলাস
মুখ মুখোশের রেসের ঘোড়ার নালে
মুখোশ হাসে ছ্যাতলা ধরা অট্টহাস।অন্ধকারে নির্মাণরা স্তব্ধ, বেবাক
চেনা সুখে আঁচড় কাটে মোহের অসুখ
কোন সূত্রে মেলানো যায় বলতে পারো
হৃদকমলে লালন করা একটি মুখ।ইচ্ছে ও অনিচ্ছেরা দ্রোহের বশে
দ্রাঘিমা – অক্ষাংশ পরিক্রমা অহর্নিশ
দীর্ঘ যাপন ভুলে যারা আলোর পথে
আত্মাভিমান জানায় তাদের লাখ কুর্নিশ।শরীর জুড়ে সুখ দিয়ে যায় আগুন পরশ
নিমগ্ন রাতে গল্প শোনায় ইচ্ছে ব্যথা
ঘাটের সিঁড়ি ভাঁটার স্রোতে ক্লান্তপথিক
জারিত শোকে নদীও হয় খরস্রোতা।জীবন হোক পাতা ঝরার শব্দ শ্রোতা।
-
কবিতা- তাকে বলে দিও
তাকে বলে দিও
– পারমিতা ভট্টাচার্যএখন তুমি কার কপালে জলপটি দাও বৃষ্টি প্রবল জ্বরে?
আকাশ, কার চিবুকের নরম তিলে খোঁজো
বকুলের মাদকতা?
আর পাহাড়, কার ঠোঁট ছুঁয়ে অনুভব করো
জলপ্রপাতের বাষ্পাকুল সুর মূর্ছনা?
ওর কানে কানে বলে দিও অরণ্য
এখনও আমি ভিজতে ভালোবাসি,
এখনও আমি গঙ্গার তীরে দাঁড়িয়ে দেখি
গোধূলির মায়াবী অস্তরাগ,
এখনও আমি জানি
চোখের থেকে দূরদৃষ্টি সরে গেলেও
কারও নূপুর পরা পায়ে চুমু খেতে খেতে
আজও কেঁপে ওঠে তার ওষ্ঠ যুগল,
ধূপের মতো অন্তর পুড়ে ছাই হয়ে গেলে
পড়ে থাকে নিঃশর্ত অপেক্ষার
অসহায়, ভগ্ন, নগ্ন স্থাপত্য,
হিউয়েন সাঙ যদিও আমায় কখনও
জীবন ভ্রমণের ইতিবৃত্তান্ত শোনায়নি,
কখনও ইবন বতুতা হাত ধরে চেনায়নি
স্বপ্ন ছোঁয়ার সুড়িপথ
তাই এক জন্ম ভুবনভোলা পথিক হয়ে
অলকানন্দার পথে সেই গভীর সরোবরে ডুব দিতে চাই, যেখানে
পদ্মের বুকের উপর পদ্মরেনু মেখে
গোখরো আর ভ্রমর একসাথে খেলা করে। -
কবিতা- ক্ষমা করে দিও
ক্ষমা করে দিও
– পারমিতা ভট্টাচার্যআকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নেমেছে আজ
অনেকদূর ছুটতে ছুটতে এসে দাঁড়াই
সেই গাছটার নিচেবটের ঝুড়ির মতো যেখানে নেমে আসে
তোমার আকাচা জামার গন্ধ
গাছের প্রাচীন গুঁড়িটাতে ঠেস দিয়ে বসিমৃদু হাওয়ায় হাসতে হাসতে বেগুনি ফুলগুলো
তোমার হাসির মতো ঝরে পড়ে আমার শরীরে।হঠাৎ দূরে তাকিয়ে দেখি ঠিক যেনো তুমি
হাতে তোমার অসমাপ্ত উপন্যাসের ছেঁড়া পাতা।
চোখে সেই আমায় হারিয়ে ফেলার উদ্বিগ্নতাতুমি হাত নেড়ে কাছে ডাকো
পাগলের মতো ছুটে যেতে ইচ্ছে করে কিন্তু আমি জানি,
কাছে গেলেই তুমি মিলিয়ে যাবে হাওয়ায়
ফুরিয়ে যাবে কর্পুরের মতো।ফুলের সুগন্ধের মতো
ছেয়ে থাকো সর্বদা আমায়
আমি সেই আঘ্রানের কাছে চির দণ্ডবত।কিন্তু আমার যে দুটো কথা
এখনও তোমায় বলার ছিল শুনবে?
সময় হাতে আছে কী একটুও?স্মিত হেসে তুমি বলে ওঠো ‘ বলো ‘
বৃষ্টির শব্দের অনুরণিত হতে থাকে আমার কথাগুলো
‘ তোমাকে বুঝিনি আমি,আমাকেও তুমি নয়
করেছি হয়তো অজান্তে অনেককিছু ভুলও
আজ এই অপরিসর সময়ে দাঁড়িয়ে বলি
পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও।
শুধু ক্ষমা করে দিও।’