বিবেক দংশন– পারমিতা ভট্টাচার্য ‘আচ্ছা মা আর কতদিন সহ্য করবে ওই পাগলীটার অত্যাচার? ওকে কোনও অ্যাসাইলামে পাঠানোর ব্যবস্থা তো করলেই হয়। বহু বছর তো হলো মা।’কিছুটা রাগান্বিত গলায় রীণা কথাগুলো বলছিল তার মাকে।‘পাগলী বলিস না। হাজার হোক ওতো তোর বোন।’‘আমিও আর পারছি না মা। প্রতি দিন এতো মারধোর, অশান্তি আমিও আর সহ্য করতে […]
গল্প- ছন্দপতন
ছন্দপতন– পারমিতা ভট্টাচার্য আজ মহাসপ্তমী। আলোর রোশনাই আর ঢাকের আওয়াজে গমগম করছে চারিদিক। একরাশ অন্ধকার শুধু রাইয়ের মনের গহীনে। তার জীবনে কোথাও কোনও খুশি নেই, আনন্দের ঝলকানিও নেই। গাঢ় অন্ধকারে ঢেকে গেছে তার বর্তমান, ভবিষ্যৎ সব। আজ রাস্তায় খুশির ঝলকে মেতে ওঠা মানুষের ঢল দেখে তার মনে পড়ে যায় শুধুই অর্কর কথা। দু’ বছর […]
গল্প- বোধন
বোধন-পারমিতা ভট্টাচার্য অঞ্জন আর দীপিকার বিয়ে হয়েছে সাত বছর। কলকাতার বহুতল আবাসনে বেশ অনেকটা অর্থ খরচ করে ওরা একটা দুই কামরার ফ্ল্যাট কিনেছিল। দু’জনেই চাকরি করে। ফ্ল্যাটটাও খুব সুন্দর করে সাজিয়েছিল দীপিকা। এভাবে বেশ ভালই কাটছিল দু’জনের জীবন। এরপর দীপিকা প্রেগন্যান্ট হল। ওদের তো খুশির অন্ত নেই। সাথে দুই পারিবারেরও।অঞ্জনের চাপেই প্রায় বলতে গেলে […]
কবিতা- জলকলমে আঁকা ছবি
জলকলমে আঁকা ছবি– পারমিতা ভট্টাচার্য মন চায় হেঁটে যাই বেলাভূমি ধরেগায়ে মাখি সমুদ্র সফেন ঢেউজলকলমে লিখে রাখি জলকেলি সুখঅবসরে কখনও পড়বে কি কেউ? রাত্রির তৃষিত বুক চুঁইয়ে টুপ্ টাপনরম শিশিরের কণা নেমে আসেরাত জাগা ফুলেরা নেয় অপূর্ব সেই ঘ্রাণআনন্দধারার লহমা উঠে সতেজ সবুজ ঘাসে। আসে আসুক জীবন নদে দুকূল ভাসানো বানহেলায় আমি টপকে যাবো […]
কবিতা- তুলসীর ওম
তুলসীর ওম– পারমিতা ভট্টাচার্য চারিদিকে দেখি মুখ- মুখোশের রংমিলান্তি খেলাব্যস্তানুপাতিক সম্পর্কে মিশে যায় উষ্ণতার পারদ,ধূসর,বালুকাময় আজ হৃদয়ের তটভূমিএকমুঠো উড়োসুখ জমা হয়ধূসর ছাইদানির অন্তরালে… রোদ চশমার আড়ালে লুকিয়ে রাখিচোখের গভীর কালি,মুখে অনাবিল হাসি,অথচ বুকেবিদ্ধ বিচ্ছেদের তরবারি,প্রাক্তন স্মৃতিরা টেনে হিঁচড়েনিয়ে গিয়ে ফেলে শ্মশানের ছাইয়ের স্তুপে। শেষমেষ পড়ে তো থাকবে সেই একমুঠো ছাই,তবুও এতো অহংকার,এতো ঘৃণা মনেলোভ […]
কবিতা- আহরণ
আহরণ– পারমিতা ভট্টাচার্য কুয়াশার চাদর জড়িয়ে রাত্রি নেমে আসেঅভিমানী পৃথিবীর বুকে।চাঁদের আলোয় সে হয় আরও মোহময়ী,স্বচ্ছবসনা চিন্তাগুলো তখন জন্ম দেয় আরও একটা কবিতার।ঢেউ এর তরঙ্গে ফুটে ওঠেপ্রতিটা অক্ষরের কাব্যিক বিন্যাস।একলা ঢেউ, সারারাত বালিয়াড়ির বুকেলুটোপুটি খায় অন্তহীন সোহাগে।সমুদ্রের ধার ঘেঁষে হেঁটে যাই আমি একা,দিগন্তরেখা হাতছানি দিলে,ডিঙি নৌকার আর ভরসা করিনা।পাড় ভেঙ্গে, ঢেউ ভেঙে এগিয়ে যাইমুক্তোর […]
কবিতা- মানুষের ধর্ম
মানুষের ধর্ম– পারমিতা ভট্টাচার্য আজ আর অন্যায়ের সাথে কোনও আপোস নয়এবার তোলো প্রতিবাদের বজ্রকঠিন আওয়াজ,জাতের নামে বজ্জাতি করা ধর্মান্ধরা জানে নাআসলে ধর্ম নামের কী মানে।যে ধর্ম তরোয়ালের সাথে ত্রিশূলেরভয়ংকর যুদ্ধ বাঁধায়,যে ধর্ম মানুষের চোখের জল মোছানোর বদলেলাশ ফেলে প্রতিনিয়ত ধর্মের জিগির তুলে,যে ধর্মধ্বজার বাহকেরা শয়তানের আস্তানা করেপবিত্র মন্দির- মসজিদ- গির্জা,সে ধর্ম আমি চাই না, […]
কবিতা- মা গাছ
মা গাছ– পারমিতা ভট্টাচার্য সুবিশাল প্রান্তরে একা দাঁড়িয়েএকটি মা গাছ।তীব্র রোদে মা গাছের আড়াল করা ছায়ায়গুটিসুটি মেরে নিশ্চিন্তে ঘুমোয়শিশু চারা গাছটি।মৃদু হাওয়ায় ঝাঁকড়া মাথা নাড়তে নাড়তেজঙ্গলের রূপকথার গল্প শোনায় মা গাছ,ছোট্ট চারা গাছ ঘুমিয়ে পড়ে নিশ্চিন্তে।রাতের ছায়ার আলো- আঁধারিতে মা গাছআলতো করে বিলি কেটে দেয় সন্তানের মাথায়।এক দিন মেঘ কালো করে নেমে আসে অন্ধকারচারিদিকে […]
কবিতা- অতঃপর
অতঃপর– পারমিতা ভট্টাচার্য কোনো এক অলৌকিক ছায়াপথ ধরেচলো হাঁটি, গুটি গুটি পায়ে।তোমার চোখের দৃষ্টি পথে আজ গড়ি বসত,প্রদীপখানি জ্বেলে ধরো আমার হৃদয়পানে,অতৃপ্ত যত বাসনারা আজ প্রকাশিত হোকলজ্জাসন্ধি ছিঁড়ে।নিঃশ্বাসে মিশুক আজ নাড়ীর যত গতি,শীৎকারে মাঠময় হোক গলার মুক্তমালা।আলোর শিখায় যেমন বাদল পোকা দেয় ঝাঁপ,আমিও দেখি তোমার চোখে আমার সর্বনাশ। না, বাদল পোকা হতে পারিনি কখনো,খড়কুটোর […]
কবিতা- সাড়ে তিন হাত জমি
সাড়ে তিন হাত জমি-পারমিতা ভট্টাচার্য সহানুভূতি কাম্য ছিল না কখনোই,অনুভূতিরা তাই সূক্ষ্ম আচ্ছাদনভেদ করে,স্ফুলিঙ্গের মত প্রকাশিত হতে চায়। জীবনে হিসেবী হতেই হবে বুঝি?দুয়ে – দুয়ে চার যদি নাই হয়!!তবে কী স্তব্ধ হয়ে যাবে জীবনের গতি? হিসেবেও ভুল হয় মাঝে মাঝেএকটু বেহিসেবী হলে ক্ষতি কী? সারা জীবন জুড়ে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকে,হিসেবী দস্তখত,কিন্তু বরাদ্দ জমি তো সেই, […]