-
বেদনা পথিক
বেদনার পথিক
-বিকাশ কুমার মাইতি
এ ভুবনে হায় !
সেই চরম ব্যাথা পায়
অন্ধ প্রেমের প্রতিজ্ঞায়।আঁধারেও সাথী আছে
আগুনেরও বাহার
প্রেমেরও সাথী আছে
কুলকুল ধ্বনি উষ্ণ যমুনার।বেদনায় সুখ খোঁজে
চন্দ্র-তারা, আকাশ নীলিমায়
বেদনাও হাসি থাকে
গোপন সৌন্দর্যের মধুরতায়।অন্ধ প্রেমেরও পথিক
আঁঁধার নয়ন তারায়
উজ্জ্বল প্রেমচ্ছবি মনেরও অমরতায়। -
চলন্ত যৌবন
চলন্ত যৌবন
-বিকাশ কুমার মাইতিমাতৃভূমির কোলে যৌবন আসে
নব নব সাজে, নব রূপ ক্ষণে ক্ষণে
চারিদিক শোভিত নব নব আঙ্গিকে|যত দূর দৃষ্টিশক্তি মেলে দেখি,মুগ্ধ সৌরভ
দিকে দিকে জীবন্ত ভাসে
রবির কিরণে ঝলমলিয়ে খেলে|
পশ্চাতে আমি
অনন্ত পিছিয়ে পিছিয়ে ছুটি
ধরেছি, মনে হয়!
পৌঁছে দেখি লক্ষযোজন শূণ্যতা গড়ে-
অসীম আকাশে লুকায় ছুটে|থমকে নিরুপায়, বদন ধারা গড়িয়ে পড়ে
অনন্ত যৌবন ডাক দিয়ে যায়
জানালার ফাঁকে মনের ঘরে|আঁধার নামবে ধরণীর বুকে
আকাশ তারা উঁকি দিয়ে অট্টহাসে
ধরা অধরা থেকে যায় সবে, শেষে আমি
একা অসীম আকাশের নীচে
চলে যাব ক্ষণিক পরে এ বক্ক ছিঁড়ে
যৌবন থেকে বৃদ্ধ কঙ্কাল হয়েকত শতক পরে খুঁজে পাবে নৃতত্ববিদ-
তবু তুমি যৌবনে রসোত্তীর্ণ ধরণীর বুকে
অনন্ত যৌবন তোমার সাজে;
তোমার রূপ তুলনা বিলাপ বাক্য ভ্রমে
তুলনার সাড়া কাহার অন্তরে বাজে?এ জীব অহংকারী হবে
একে একে হারাবে যৌবন, গচ্ছিত যাদু ঘরে
তুমি অনন্য অনন্ত তিলোতমা
ধরণীর বুকে| -
মনে কী পড়ে ?
মনে কী পড়ে?
-বিকাশ কুমার মাইতি
কোন সেই গোধূলি বেলা
তুমি বসে একলা
মনে কী পড়ে সেই স্মৃতি রেখা?চকিত বালির ছটা, গোণা
অপেক্ষায় অভিমান ধরা
উত্তাল তরঙ্গে–
সবই ভুলে যাওয়া।সমুদ্রের কান্না লাল জলে
পরিবার কোথায়!
সমুদ্রে আকাশ মিলায়
হাতে হাত ধরে চলা
আলো- আঁধারের; শপথ সঙ্গম।সম্পর্কের হাত আদিমতা থেকে
মিথ্যে অহংকার জলে ভেসে
নিবিড় মিলন সৃষ্টির লগ্ন হতে
স্রষ্টার অবস্থান তাহার মাঝে| -
কে আসছে এবার
কে আসছে এবার
-বিকাশ কুমার মাইতি
সব কথা যায় না বলা
সব অনুভূতি পায় না ভাষা|
বিকেল গড়িয়ে গোধূলি
তুমি আমি বসে ভাবি
সূর্য ডুবে ঐ সন্ধ্যা হল এই|
সব কথা যায় না বোঝা
অর্থ নয় চরিত্র দেখতে হয়|
মন দিলে, পাওয়া যোগ্য হতে হয়
শঠতায় ভালোবাসা বৃথা
মনের নীচ কামনার প্রকাশ|
প্রতিদিন অস্ত যায় পশ্চিমে-
আজ যা ধরা, কাল অধরা
যা অধরা , অধরাই থাকে
নয় অধরা , ধরা দেয় পশ্চাতে|
মোহের কামে ভুল হলে
অস্ত যাবে যমের দ্বারে
না ঘর-পর বাঁচাবে
স্বচ্ছতার বাঁধ তোমার কাছে|
বিপথ আছে পদে পদে
সব দায় তোমারও পরিবারের|
ছিন্ন-ভিন্ন দেহ দেখে সবাই জাগে
অনন্ত ঘুম ঐ দলে, সন্ধ্যা হলে
সূর্য গেছে অস্ত চলে|
রক্ষার কবচ হাতে রাখ সতর্ক হতে
বিপথ আসছে ধেয়ে; বেগ হতে গভীর বেগে
মার কোলজে ধরে,জব্দ করে
না পারলে কলঙ্ক চাঁদের দেহে|
সন্ধ্যা হল শয়তান জেগে
সজাগ হয়ে চল, না হলে ধরবে ঝোপে
উদ্ধার দেহ আলোর অপেক্ষাতে
দূষণ আছে অন্ধকার পথে|
তুমি আমি বসে ভাবি ঘরে
যে গেল আসবে কি ফিরে?
চিন্তায় বলে, ‘সুয্যু যাও দাঁড়ি’–
নয়তো কোণ অবালা যমের দ্বারে
কড়া নেড়ে ডাকে- ওঠ, ওঠ
আমি এলাম তোমাদের কাছে;
এখন পথে অনেকে আছে
তারা আসবে তারা হয়ে
ক্ষণিক পরে| -
মোমের আলো
মোমের আলো
-বিকাশ কুমার মাইতি
আলো তুমি আর আমি
ঘুম ঘুমন্ত দীপ শিখা
কত প্রহর সুপ্ত চাওয়া পাওয়াতুমি প্রজ্জ্বল আমি দিশা হারা
মোমবাতি ঘরে তন্দ্রালুতা,
জেগে কয়েক জোনাকির আলো
দূষণে মুছে গেল—
তবু জেগে প্রহর গোণাআছো আলোর ঘুমে
বোধ এখন জলাভূমির জল শয়নে
তবু তুমি আলো জ্বাললে
ধোঁয়াশায় আমি তোমার বুকে মৃত প্রায়আলো এলো, জ্বল না সুপ্ত ঘুমে
ঝিমিয়ে কাঁদে
বালি’শ চাইলাম নধর নধর
তোমাকে চাইলাম না,তোমার করে–
চেয়েছি আপন করেনষ্ট আজ, আলো রুদ্ধ ঘরে
শেষ আশায় বসে
এসো আলোক ছন্দে
পদ ধ্বনি হতে–এবার দেখি, তোমাকে তোমার করে
মোমবাতি জ্বেলে স্নিগ্ধ পরশে
তুমি জেগে থাকো নবজন্ম জন্মের বুকে
থেকো যুগ যুগ ধরে ঐ আসরেমরণে তোমার বুকে অপেক্ষায়
সমাধি তব মোর বুকে
শেষ সান্ত্বনা তোমাতে আমি মিশে
এই অন্ধকার সমাজ আড়ালে থেকো
উজ্জ্বল হয়ে, অবোধ সন্তানের বক্ষে| -
রঙবাহারে মুখ
রঙবাহারে মুখ
-বিকাশ কুমার মাইতি
মানুষ নামে মুখ উজ্জ্বল
কনক উজ্জ্বল নিখাত গুণে
মনের হাব-ভাব মুখে ভাসে—
মনের ভাষা মুখে মুখে মুকুট উজ্জ্বলে
ভালো-মন্দে বদন ম্লান;অম্লান..মুখে কারুকার্য হয় জন্মান্তে
ফেশানে কারুকার্য সুন্দর কক্ষে
ঐ মুখে মুখোশ আছে,এক পলক আড়াল হলে
পষ্ট হয় অন্যের অসতর্ক,অসচেতন সভাবে
জন্ম শ্রী মুছে আপন শ্রী ধরে
ছাইপাস মেখে মুখ মুখোশে অভিনয় করে|মুখের কত শত গুণ, এক এক জনে
দেখে আকৃষ্ট পিছু ধায় , ফাঁদে জীবন রুদ্ধ
ধ্বনি ঝংকার নানা স্বরে, মৃদু-বজ্র-গোঙানি
শ্রী দেখে মন আকাশ পরী; ডানা ঝাপট হৃদয় তরী
কত উপোষ নীরবে, চকমকিও তার গতি
নদী বান কৃষ্ণ বর্ণালি উচ্ছল ডালি–মুখ চক্ষুতে দগ্ধ-দঙ্গল-বন্দি-সাক্ষ্য
আরো কত শত কটাক্ষ মুগ্ধ ছবি-
বরফ গলা উষ্ণকাজল বেড়ার ভাঙ্
শত আকৃতি দিনে আগম,মিলন,মুছন
ললাট বিনা মুখ কুজ্ঝটি বে’ভ-মন।মুখ মুখে উজ্জল অলং ;আয়নায় প্রতিফলন
জীবন-মরণ শ্রী চল,শ্রী বয়স কলম
খাদ্য-শ্বাস গ্রহণ, রোধ কাল স্রোতে–
সত্য-মিথ্য কলঙ্ক লেপ-লেপন সবে
মরণে ঐ মুখে অগ্নি-মাটি সর্বাগ্রে
ওখানে শেষ ভেদ রেখা মোছে| -
আকাশ আজ আকাশ নেই
আকাশ আজ আকাশ নেই
-বিকাশ কুমার মাইতিআকাশ আজ আকাশ নেই আগের মত
তারা আজ তাঁরা হয়ে পড়ছে ঘুমিয়ে
কত প্রশ্ন জাগে মনে; পদ পদতলে তৃষ্ণার্ত মকর শিলে
বরফ ঝরে ঝরে শেষ জলবিন্দু বাষ্পে উবে
জন শূন্য প্রান্তর গড়ে দূর দূর ছত্র পতাকা হতে|কত চান্দ আকাশে ছিল কে জানে?
বিজ্ঞান বলে স্নিগ্ধ চাঁদ একটাই আছে|
আজ চাঁদ চান্দ শকুন অনল রোষে
প্রেম প্রীতি রক্ত রণসফলতা জনগণ হবে
বরফ ঝরে ঝরে শেষ জলবিন্দু বাষ্পে উবে।মেঘ আর মেঘ নেই হয়েছে পলিমার পলি
জল না ধরে মাখে লোহিত বোধা প্রলেপ সহে;
আকাশ আজ আকাশ নেই আগের মত
হয়েছে হুঙ্কার অন্ধ গলি, ক্রন্দনতারা জ্বলে মিটি মিটি।সভ্যতার হাতছানি অন্ধ গলির চোরা পথে
পশু; মানুষ নামে আজ পশুর দলে|
এক পশু করে চলে জঙ্গল রাজ রাজকে
এক লোহিত সঙ্গে গড়া, পশুরাজ সিংহ আর কি হবে
যে বুক সভ্য সভ্যতা আছে তা আজ শেয়ালের পদতলে|দেবী চন্ডীর কালকেতু তন্ত্র আজ অস্ত্রে মারণ
তুমি কাল খাবার লোভে এক দলে চল তাল|মাঝে অনল চুলকানে তারা ঝরিয়ে কী লভে শবে?
বনের পশু বনের রাজ ফিরে পাবে
ঐ শেয়াল জুটবে কাল ভারিদলে–
ইন্দুর মরবে সাপ বিড়ালের মুখে|আকাশ আজ আকাশ নেই আগের মত
ভরেছে ভীষণ রোষে লোহিত অনল তুষেবন্য নিয়ন্ত্রক বিভীষিকার বুভুক্ষু পোষা জীবে
এর ভালে বিষ সুধা বোলবচন পানে|মানুষ আজ মানুষ নেই গেছে আদিমতা ভরে
আকাশ আজ আকাশ নেই হয়েছে জমাট বাঁধা শব|আদিম পশুরাজ চন্ডী গড়ে হল বন দেবী
কাল কেতুর গ্রাসে মরে সাধারণ পশু
আকাশ আজ আকাশ নেই হয়েছে
মরণতারা ধরা বাঁধার বিহ্বল স্থল|এ যুদ্ধ শেষে কত কত পরিবার পথে নামে
চাঁদ আর চাঁদ নেই জ্বলছে অনল দাবা ঘৃতে
আকাশে চাঁদ নেই আছে সব শবে|
যুদ্ধের প্রাপ্য চোখ দেখে ঘুমঘুম চুরি
দুর্গতি চকিতে নিশ্চিত আশ্বাসে যাবে চলে|