• কবিতা

    আজব দেশপ্রেম

    আজব দেশপ্রেম
    -বুদ্ধেশ্বর মোদক

    দেশপ্রেম আজ মঞ্চে বন্দী ,বাস্তবেতে ফিকে…
    রাজনীতিটাই হচ্ছে বিস্তর, দেশের চারিদিকে।
    গুণীজনের মহান বাণী,ভাষণ জুড়ে সাজে…

    সান্ত্বনা ও ভালোবাসা জনগনের মাঝে।
    বীর নেতাজির ভারত জুড়েহিংসা,হানাহানি…
    ব্যক্তিগত চাহিদাটাই সকল ক্ষেত্রে দামি।
    বিসদৃশ হচ্ছে কেউ, নিজের কসুর বুঝে…
    মুখোশধারী ভদ্র মানুষ ভদ্র বেশে সাজে।
    শান্তির নামে গ্রামে-গঞ্জে, গোষ্ঠী কোন্দল সৃষ্টি…
    মুখোশ দিয়ে যায়না পাওয়া নিরপেক্ষ দৃষ্টি।
    আসবে কি আর বীর বি-বা-দী ভগৎ-ক্ষুদিরাম,
    অগ্রগামী নেতার জন্য ছুটছি অবিরাম।

  • কবিতা

    পিদিমের অভিজ্ঞতা

    পিদিমের অভিজ্ঞতা
    -বুদ্ধেশ্বর মোদক

     

     

    পিদিম চাই? পিদিম নেবেন পিদিম?
    ময়লা ধুতি,কাঁধে গামছা,
    মাথায় প্রদীপের ডালা নিয়ে
    বড়ো রাস্তায় এগিয়ে চলে এক জীর্ণ বৃদ্ধ।
    বড়োবাড়ির দোতলার জানালা খুলে,
    উঁকি মারে বিকাশবাবুর চার বছরের নাতনি।
    পিদিম কী? কী হয়?
    জানার ইচ্ছে জাগে তার।
    হাঁক শুনে দ্রুতবেগে
    সটান নিচের রায়দুয়ারে।
    “ও পিদিম দাদু!” ডাক ছাড়ে সে।
    বাবার বাইকের প্রচন্ড শব্দের কাছে পরাজিত সে।
    মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে,
    চুমু খেয়ে,মাথায় হাত বুলিয়ে,
    ঘরের ভেতর পানে চলতে থাকে।
    এক হাতে ঝোলাভর্তি বিদেশি বাতি।
    বাচ্চাটার কাছে পিদিমের অভিজ্ঞতা অধরাই রইল।
    আর সেই জীর্ণ পিদিম দাদু?
    গোধূলি বেলায় নীড়মুখী পাখির মতো,
    গ্রামের রাস্তা চেয়ে, ভিড়ের মাঝে হারিয়ে যায়!

  • কবিতা

    ব্যর্থ

    ব্যর্থ
    -বুদ্ধেশ্বর মোদক

     

     

    আজ আমি সুখী।
    সূর্যের তেজালো স্বভাবেই আমি সুখী।
    কারণ বৃষ্টির শীতল ছোঁয়া আমার কাছে সোনার পাথরবাটি।
    বৃষ্টির স্নিগ্ধ স্পর্শ সকলেই আশা করে।
    আমিও চেয়েছিলাম তাকে।
    সুখ কি আর সবার কপালে থাকে!
    প্রতি মুহূর্তে চাতকের মতো বৃষ্টির কামনা করে
    আজ আমি ক্লান্ত! সর্বশান্ত!
    সূর্যের ঝাঁঝালো রোদে, জ্বলে পুড়ে
    আজ আমার উপাধি মরুভূমি।
    বক্ষদেশ ভরে ওঠে ক্যাকটাসে।
    আমি তাতেই সুখী।
    আর সেই বৃষ্টি?
    সেতো মেঘালয়ে অনবিরত।

  • কবিতা

    স্বপ্নপূরণ

    স্বপ্ন পূরণ

    -বুদ্ধেশ্বর মোদক 

     

     

    সমাজ বাঁধন ছিন্ন করে
    যাচ্ছে মানুষ মঙ্গলেতে…
    দিচ্ছে পাড়ি ভিন্নগ্রহে,
    রকেট চড়ে আকাশপথে।
    নিত্যনতুন আবিষ্কারে
    এগিয়ে যাচ্ছে নিজলক্ষ‍্যে…
    এমন সাহস নেইকো কারো,
    লক্ষ্যপথে তোমায় রোখে।
    ভেঙে ফেলো আজ সমাজরীতি
    মনের কথা শোনো…
    করবে যদি স্বপ্নপূরন
    মহাপুরুষদের মানো।
    গিয়েছে যারা তোমার পথে,
    তুমিও যেতে চাও…
    কুসংস্কার না মেনে আজ
    বাড়ির বাইরে যাও।
    বেরোতে হবে সমাজ থেকে
    দেখতে বিশ্বটাকে…
    করতে হবে লক্ষ্যপূরণ
    এগিয়ে সবার থেকে।
    তাও যদি আজ না পারো তবে,
    বোঝাও সমাজটাকে…
    ভাঙতে শেখাও কারার কপাট
    এগোতে শেখাও আগে।
    পৌঁছে যাবে নিজের লক্ষ্যে,
    ইচ্ছে হবে পূরণ…
    দেশের দশের হবে একজন
    করবে সবাই স্মরণ।

  • কবিতা

    রজনীগন্ধা

    রজনীগন্ধা
    -বুদ্ধেশ্বর মোদক

     

     

    আমি এক রজনীগন্ধা…
    সূর্যালোকের সাথে সাথে বিকশিত হয়ে উঠি।
    রূপ,রস,গন্ধ…আহা!
    সে কি বাহার!
    সব কিছুর প্রেমে মত্ত হয়ে ওঠে কীটেরা।
    বিশ্বাস করো,ভালোবাসো,
    স্থান দাও তোমার হৃদয়ে…
    একই ভাষা প্রতি কন্ঠে।
    অহংকারের গর্ব নিয়ে গর্জে উঠি আমি।
    মিষ্টতায় মোহিত করে
    স্থান পায় এক অনন্য।
    ম্লান হয় সূর্যের আলো,
    ঘনিয়ে আসে অন্ধকার।
    ঘুটঘুটে এই অন্ধকারে
    আমার মাঝে বাসস্থান খোঁজে সে।
    গভীরে,আরো গভীরে,
    ধীরে ধীরে, নিঃশব্দে,
    আমায় গ্রাস করতে থাকে সে।
    আমি নির্বাক,আমি নিশ্চুপ।
    আমি বাধা দানে অক্ষম।
    আর আমার সেই
    রূপ?রস?গন্ধ?
    আমি আজ বসন্তের পাতাঝরা গাছ।
    কিন্তু সেই কীট আমার মতো
    প্রতিনিয়ত ভালোবাসে কাউকে।
    ভালোবাসে? হ্যাঁ।ভালোবাসে।
    তার কাছে সেটাই ভালোবাসা।

  • কবিতা

    বর্তমান

    বর্তমান
    -বুদ্ধেশ্বর মোদক

     

     

    প্রযুক্তিরই দিনকাল আজ
    বইখাতা সব ঘরের কোনে…
    সাহিত্যের ও হচ্ছে চর্চা,
    ইন্টারনেটে স্মার্টফোনে।
    কম্পিউটার ও ল্যাপটপেতে
    বন্দি আজ সকল নথি…
    যন্ত্রের দ্বারা হচ্ছে কাজ,
    নিখুঁত ও দ্রুতগতি।
    কিশোর-যুবক যাচ্ছে ভুলে
    খেলার মাঠের সবুজ ঘাস…
    স্মার্টফোনেতেই খেলছে খেলা,
    COC- তেই খাচ্ছে ক্রাশ।
    ফেসবুক আর হোয়াটস‍্অ্যাপে
    শেয়ার-কমেন্ট কতশত…
    দেবদেবীও হচ্ছে শেয়ার,
    প্রযুক্তিতেই অবিরত।
    শরীরগুলো সব হচ্ছে অচল
    কেনাকাটা সব স্মার্টফোনে…
    হয়না দেখা সবুজ বাহার,
    ব্যস্ত সবাই ঘরের কোনে।
    দ্রুততার এই ভিন্ন নেশায়
    বন্দি যখন স্মার্টফোনে…
    মাকড়সাটাও জাল বুনবে,
    শরীরের বিভিন্ন খানে।

  • কবিতা

    দেবীপক্ষ

    দেবীপক্ষ
    -বুদ্ধেশ্বর মোদক

     

     

    মায়ের হাসি ভেসে আসে,
    শিউলি আর সাদা কাশের
    মনমাতানো গন্ধে…
    শিশির ভেজা দূর্বা ঘাসে,
    শরতের এই নীলাকাশে
    সকল ভালো মন্দে।
    মহালয়ার স্নিগ্ধ ভোরে,
    প্রতিটি ঘর উঠে ভরে
    ধুপ-ধুনোরই দ্বন্দ্বে..
    জড়ো হয়ে নদীতীরে,
    তর্পণ হয় করজোড়ে
    সুরেলা এক ছন্দে।
    ষষ্ঠী থেকে মণ্ডপ মাঝে,
    মানুষ সাজে নতুন সাজে
    সোনা,রুপো, হীরে..
    নিজের সকল চাহিদা বুঝে,
    মা দুর্গার চরণ খোঁজে
    পুষ্পার্ঘ্যের ভিড়ে।
    মাকে খুঁজি প্রতিমাতে,
    মা রয়েছেন প্রতি মাতে,
    আবেগ খুশি ছেড়ে…
    ব্যবহার হায়!মায়ের সাথে
    অত্যাচার হয় দিনে রাতে
    কলির নিয়ম ধরে।

  • কবিতা

    বাস্তবের রুটিন

    বাস্তবের রুটিন
    -বুদ্ধেশ্বর মোদক

     

     

    ঊষার আলো ফুটে উঠেছে।
    আজ হয়তো সংসারে সুখের ফুলঝুরি জ্বলে উঠবে,
    মরদটা আমায় একটু ভালোবাসবে।
    সকাল কেটে সন্ধ্যা গড়ায়,
    রাস্তার ঝাপসা আলোয় বাড়ি ফিরে স্বামী।
    ক্ষণিক বিশ্রাম বাড়ির আঙিনায়।
    ঘুটঘুটে অন্ধকারে, ঘামের গন্ধে ভরা শরীর,
    হিংস্র পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে বিছানায়…
    পেটের ক্ষুধা, স্ত্রীর আবেগ, সবভুলে
    নেশার ঘোরে শরীর ভোগে লিপ্ত সে…
    প্রতিদিন, প্রতিক্ষণে মেটাতে হয় খিদে।
    আমি নারী। তো? আমি তো বাচ্চা জন্মানোর যন্ত্র!

You cannot copy content of this page