-
কবিতা- কলঙ্ক
কলঙ্ক
– মঙ্গল মন্ডলতুমি শত কলঙ্ক মাথায় নিয়ে
বেঁচে থাকতে শিখেছো,
আমি তোমাকে আগলে রাখার
অহংকারে বাঁচতে পারি;
তুমি মাটির পুতুল হয়ে অসহ্য
যন্ত্রণার আঘাত সইতে শিখেছো,
আমি তোমার যন্ত্রণার প্রতিষেধক
হয়ে সারাটা জনম হাত ধরতে পারি;
তুমি কলঙ্ক হয়েছো সমাজের ছলনায়
দোষী ভাবাও দোষের
শুদ্ধ পৃথিবীতে সব প্রবিত্র,
ভালো মন্দ কেবল –
মানুষের লালসা আর মোহের ফলে;
আমিও পারি ধরতে হাত চোখের জল মুছিয়ে,
তোমরাও ঘৃণা ভুলে বাঁচতে শেখাও
নোংরা হয়েছে ওরা আমাদেরই বোঝার ভুলে। -
কবিতা- মায়াময়
মায়াময়
– মঙ্গল মন্ডলযত দিন যায় তত আকর্ষিত হই
কি যেন একটা অদৃশ্য বাঁধন,
অতিরিক্ত চাওয়া পাওয়ার আশায়
হতাশেই দিন যায়; কখনও ‘প্রাণ যায়’
মুখে বুলি হয়, তবু বেঁচে থাকার অভিনয়;
দূরদর্শন ঘুরে ঘুরে এখন হাতে আধুনিক
প্রযুক্তির দর্শন পায়, আরও মোহে ভেসে
যায় আরও কিছু বেশি বাঁচার অভিনয়বেড়ে যায়;
‘ভালোবাসার মানুষ চায়’ বলে চিৎকার সর্বময় ,
স্বার্থপ্রেম বিনিময়ে আরও মায়া বেড়ে যায়, পরকীয়া বৈধ ভেবে অনেক
জীবন সংশয়ে পড়ে যায়,
আরও মায়া বেড়ে যায়;
দোকানি তার জিনিসের গুণ ছেড়ে টাকায় নজর বাড়ায়, রাজনীতি তোমাকে
বাঁধতে পারে যদি ভালোবাসা ছেড়ে দাও;
আরও মায়া বেড়ে যায় যখন তোমার অপেক্ষায়
থাকা আমি ও পথে তোমার মরীচিকা দেখতে পাই। -
কবিতা- অভিনয়
অভিনয়
– মঙ্গল মন্ডলরঙ্গ মঞ্চে শ্রেষ্ঠ অভিনয়টা
সবাই করে চলেছে,
সবাই প্রথম স্তরের অভিনেতা
কেউ কারোর থেকে কম যায় না,
আমি দর্শক হওয়ার চেষ্টায়,
অভিনয়টা ঠিক আসে না,
আরো কিছু চরিত্র আছে তারা
নাটকের মূল রঙ্গ মঞ্চের ভূমি তবে
অভিনয় তারা জানে না,
ওই তো রবি শশী প্রকৃতি;
বাকি সবাই অভিনেতার মূল চরিত্রে,
শ্রেষ্ঠ অভিনয়টা তারাই করে চলেছে,
আমি দর্শক হওয়ার চেষ্টায়
অভিনয়টা ঠিক আসে না;
কেউ দেখছে মুখ লুকাচ্ছে,
-ওরে পাগল ওরাই সেরা চরিত্র ধরে রেখেছে;
কেউ লাঠি হাতে নির্দোষ পেটাচ্ছে
দোষী তাদের মিষ্টি খাওয়াচ্ছে,,
একটা নাটক মঞ্চে অনেক নামের নাটক হয়
-সেরা দুটি ‘ধর্ম’ আর ‘রাজনীতি’
সবাই মেতেছে চরিত্র হতে, ভাঙুক যতই
মেরুদন্ডের শিরা উপশিরা ধমনী ;
তারপর আছে ‘মানবিকতা’,যার
চরিত্রগুলো কেউ করতে রাজি হয়না ,
আমি তো দর্শক হওয়ার চেষ্টায়
অভিনয়টা ঠিক আসে না। -
কবিতা- শেষের ইচ্ছে
শেষের ইচ্ছে
– মঙ্গল মন্ডলআমার মধ্যে থাকা কাল্পনিক প্রতিভা আজও অপূর্ণ,
উঁকি মেরে লুকিয়ে যায়,পূর্ণ প্রকাশ যেন পেতে চায় না,
লজ্জা তার স্বভাব, তাই আমি আজও
লুকিয়ে, আজও অপূর্ণ, আজও তার
আত্মপ্রকাশ বাকি; হয়তো সারাজীবন
লেগে যাবে, হয়তো ওই মধ্যাহ্নের আগেই
সবাই জেনে যাবে, হয়তো ডান হাত তুলে প্রশ্নের স্বরে- ‘এবার আমি, এবার আমি’
চিৎকারেই বেলা শেষ হয়ে যাবে; আমি
অধরা হয়ে রয়েছি ধরাতলে, ইচ্ছে হয়
ডানা মেলে উড়ে যাওয়ার , শুধু অদৃশ্য বন্ধন
ডানা বেঁধে রেখেছে; যেদিন বন্ধন ভাঙবে
সেদিন সকল দেশের আমি সেই বাতাস হবো,সবার হৃদয়স্পন্দনের মাঝে আমি
থাকব,প্রাণী উদ্ভিদ তথা জীবের সাথী হবো,
আদর স্নেহ ভালোবাসা ভক্তি ছড়িয়ে
সম্পূর্ণ জগত থেকে মুক্তি নেব;
আমি কি পারব ?
আমি কি সেই প্রেমের ধ্বজা ধরে উড়তে পারবো?
পারবো কি জয় করতে?
সবার মাঝে থাকা হিংসা ঘৃণা লোভ
অহংকার দমন করে পারবো কি
মানবিক সমাজ গড়তে?
হ্যাঁ, আমি পারবো,
যদি আমার ভাবনা আমাদের হয়,
তবে পারবো, হ্যাঁ, আমি জিতবো,
আমার মানব ধর্ম যদি আমাদের হয়,
আমি জয়ী হব, আমরা জয়ী হবো,
বাঁচবো ভালোবেসে, মরবো তা দান করে। -
কবিতা- বাঁচতে পারি নতুন করে
বাঁচতে পারি নতুন করে
– মঙ্গল মন্ডলআমি দেখি নীরব পৃথিবী, দেখি হিংসার
নির্মম পরিণতি; দেখেছি দুর্ভিক্ষের
হাহাকার, খরার অলস তাপদাহ,
দেখছি মহামারীর বিচার, দেখেই
যাচ্ছি মানুষের নির্মম মানবিকতা; তাই
দেখতে পায় না ভক্তি প্রেম শ্রদ্ধা স্নেহ;
দেখিনি নমস্কার সেলাম এক হতে;
আরও দেখা যায় ওই যে শান্ত শীতল
রাতেও মর্মান্তিক তাপের অশান্ত মেলা;
দেখেছি কখনো অরণ্যে দাবানল, কখনওবা
কন্যার কন্ঠে; তুমি কি সত্যিই নিষ্ঠুর হতে
জন্ম নিলে, তবু বীর বলে বুক ঠোকো যে,
জন্ম নিলেই মরতে হবে, তোমার আসা যদি
মায়ের আনন্দ হয় তবে হিংসা বিবাদে
আনন্দ কোথা থেকে খুঁজে আনো হে?
ভালোবাসা ছড়াও যদি ভালোবাসা পাবে
তবে, হিংসা ঘৃণা লোভ কেবল দুঃখই আনে
সমাজে; দু’হাত বাড়াও তোমরা একবার
ভক্তি শ্রদ্ধা স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে বেঁচে দেখো,
আমরা নতুন করে বাঁচতে পারি আরো একবার। -
কবিতা- তুমি কি আসবে
তুমি কি আসবে
– মঙ্গল মন্ডলদিনের শেষে আলোর অভাবে চারিধার অন্ধকার নামে,
অমাবস্যায় চাঁদ হারিয়ে দৃষ্টিহীন দশা হল নিজ ভ্রমে;
কবি হওয়ার নেশা না করেও জমেছিল অযথা অহংকার,
ভাঙছে দৃষ্টি ভঙ্গি কাটছে কুজ্ঝটিকা তবু মিটছে না আশার দ্বার;
প্রভাতফেরী গান গায় ওই যে দূরে মাঠের পারে ছন্দ ধরে,
আমি শুনে কাঁদি, ও যে গাইবে না আর,যাবে ফিরে তার নিজ ঘরে;
রবিশশী নেই মোর আকাশে, হারিয়েছি লালসার বশে দিনের আবেশে,
গান না শুনি না গায়, কথা না শুনি না বলি, বধির আজ কণ্ঠ দেশে;
হারানো পথ খুঁজে বেরায় লুকোচুরি খেলায় রবিহারা চোখে,
তুমি কি আসবে? ছদ্মবেশে আমায় ভালোবেসে শশী হয়ে মোর সুখে;
একদিন সামনে ছিলাম, তুমিও ছিলে, শুধু ছিল না অবুঝ মন,
ছেঁড়া পাতা শেষ ডালে মরাগাছে ঝুলছে এখন
তবু দেখে তোমার স্বপন।
মরুভূমির মরীচিকা হয়েছো তবু ছুটেছি তোমায় চেয়েছি বালু স্তরে,
তপ্ত বাতাস আমায় ছুঁয়ে যায় থামেনি আশা, মরীচিকা আনবো মোর ঘরে। -
কবিতা- আমরা বাঁচব ওদের নিয়ে
আমরা বাঁচব ওদের নিয়ে
– মঙ্গল মন্ডলসকালে মিষ্টি রঙ,
ওই রঙ সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে
ওই ধরণীকে সবুজ করে তোলে ;
সবাই মাখতে চাই মিষ্টি আলো ,
সবাই মন ভোলাতে চাই
নাতিশীতোষ্ণ তাপে,আবার
যদি ওই দুপুর বেলা
মেঘ করে ভরে দেয় আকাশ আর
ভেজায় সবুজ পাতা ও শুষ্ক মাটিগুলো ,
তখন ওই মাটির গন্ধে
একদৃষ্টে আশা করে চাওয়া ,
আর ওই চরণদুটি একটু
লাফিয়ে বৃষ্টি ভেজার নেশা।তবু নাকি আমরা থাকবো না,
কারা যেন কেড়ে নেবে আমাদের,
কারা যেন বন্দী করবে বধির কারাগারে;
তবে কি বৃষ্টি আর আসবে না ,
উঠবে না শান্ত আকাশে মিষ্টি রবি?
আমরা কি পারি না তোমায় খুঁজে
এনে ওদের সম্মূখীন করতে , আর
বলতে, এই এনেছি তোমাদের নেশা,
এবার আমাদের বাঁচতে দাও , ফিরিয়ে
দাও মধুর আকাশ শরতের মেঘ, আমার
দৃঢ় বিশ্বাস আমরা
নতুন করে আবার বিশ্ব গড়ব।মাটি থাকবে আর বাতাস
আকাশ জল আগুন থাকবে;
আবার নিঃশ্বাস যেন স্বাভাবিক হবে,
হাতে হাত রেখে আবার গড়ব ইন্দ্রপ্রস্থ।যদি এমন হয়, একে অপরকে
মারবে না, খেয়ে ফেলবে না কোনো
সন্তানদের খাদ্য অন্বেষণে মাতা পিতাকে,
তবে কতই সুন্দর হত, হিংসা আর লোভ
হারিয়ে স্বর্গ পেতাম, গাছেরা যেমন
বাঁচতে খাদ্যের যোগান দেয়
তেমনি হবে আমাদের বিশ্ব, এক নতুন
আকাশে নতুন রবি প্রকৃতির মাথার সিন্দুর
হবে, আমরা বাঁচব ওদের নিয়ে, কেউ
কেড়ে নেবে না,বন্দী হবেনা অন্ধ কারাগারে।
সবাই স্বাধীন আকাশের মিষ্টি প্রজাপতি;
স্বাধীন পাখি আমরা, মিলে মিশে গান গায়। -
কবিতা- শুকানো অশ্রু
শুকানো অশ্রু
– মঙ্গল মন্ডলচোখে এক ফোঁটা জল এসেছিল ,
স্বাভাবিক ভাবেই নিচে গড়াতে যাবে
ঠিক তখনই হঠাৎ অশ্রু থেমে গেল ,
তাকে আর ঝরে পরতে হলো না মাটিতে,
চোখের কোণে শান্ত মনে শুকিয়ে গেছে ,
পূর্ণ দু চোখে কান্না শোভা পায় না যে আর!
সে তো অনেক বড় হয়ে গেছে আজ,
চোখের জলে নয় চলতে হবে মনের বলে।পাহাড় কাঁধে নিয়ে পর্বত চূড়ায় উঠতে হবে,
তবু আড়ালে সকালে দুপুরে শুকানো অশ্রু
আজও মুখের আদলে দাগ টেনে দেয়,
কান্না আসে আর চলে যায় যেন ডুমুরের ফুল,
তাই দেখতে পাবে না কেউ, এমনকি সে নিজেও।
শুকনো চোখের জলে এক ফোঁটা লোনা রয়ে গেছে।একদিন সকালে হঠাৎ পিরিত জাগলো মনে,
ভাবলাম একার পথে পাশে পথিক পেলাম বুঝি,
পিরিত করা কি এতই সহজ? ভাবলেই আসবে?
পাশের ওই পথিক না দেখেই চলে গেল নিরব করে,
আমার যেন আবার শুকানো অশ্রু ভিজেছিল,
মনের বলে উৎসে আবার লাগাম দিয়েছিলাম।
সেই জলমগ্ন বৃষ্টি চোখের পাতায় এসে লুকালো।আর না আসে অচেনা পথিক
না জাগে পিরিত এ মনে
তবু শুকানো অশ্রু আজও
দেখা যায় কাঁপানো ঠোঁটের কোণে। -
কবিতা- রক্তে শক্তি আছে
রক্তে শক্তি আছে
– মঙ্গল মন্ডলরক্তে শক্তি আছে ওই তো
তোমার শিরায় শিরায়, তবে
ভাঙছ কেন ভয় দেখে?
পায়ে মাটি আঁকড়ে ধরে হাঁটতে
পারো,তবে দৌড়াতে পারো না কেন
ভরসা যদি থাকে তোমার সাথে;ঘুমানোর তীব্র নেশা তোমায় অলস
করেছে, বন্দী করেছে ভঙ্গুরতায়,
এই বেলায় জেগে ওঠো প্রভাত বন্দনায়;
যুদ্ধ শুনেছো, তবে দেখেছো কি? চোখ
কান পেতে থাকো যুদ্ধ তুমিই ডেকেছো,
আসবেই হবেই কুরুক্ষেত্রের মতো লড়াই।জিতবে তুমি নিশ্চিত, তোমার কাছে আছে
দিব্য অস্ত্র, ঘুম ভেঙে জেগে ওঠাই এখন
দরকার,অস্ত্রে অর্জুন আর বুদ্ধিতে কৃষ্ণ হবে;
রক্তে শক্তি আছে খুঁজে নিও এই সকালে,
বেলা বয়ে তো যাবে, অলস ঘুম হারবে , দৃঢ়
বিশ্বাস তুমি সব নিধন করবে তুমি জয়ী রবে। -
কবিতা- বেনামী প্রেম
বেনামী প্রেম
– মঙ্গল মন্ডলতুমি যেদিন চোখে স্বপ্ন হবে
সেদিন ঘুমন্ত ঠোঁটে হাসি রবে,
স্বপ্ন ভেঙে আসবে চোখের বাইরে
নয়ন ভরে দেখব তোমায় হৃদয় দ্বারে।প্রেম হলে মিষ্টি ব্যথা লাগে ,
পাওয়া না পাওয়ার আশায় না থেকে
কেবল মনে মিষ্টি ব্যথা জাগে।চোখের সামনে উপস্থিতির কামনা সাজে,
আর একটু কথা বলার বাসনা জাগে,
ভাবতে তারে বেশ ভালো লাগে ।যত কঠিন কাজ
সহজ হয় স্বতঃস্ফূর্তভাবে,
প্রেমে মিষ্টি ব্যথা বসে যায় অনুরাগে।এক তরফা প্রেমটা
জানে কত তৃপ্তি মনে,
কত খুশি ওই তার ছবি
চোখে ভাসলে গানে।না তার আমাকে ছেড়ে দেওয়ার ভয়,
না মনোমালিন্যে প্রেম ভাঙার সংশয়।কেবল তারে ভেবে
প্রেম সাগরে ভেসে বেড়ায় ,
জগতের এমন খুশি সদা
না রয়, তাও খুঁজি তার হৃদয়।মিষ্টি প্রেমটাও মিষ্টি
ব্যথা দেবে প্রতি ক্ষণে
সবাই জানবে , রাগাবে
তবুও সে না জানে ।