-
রাণী
রাণী
-মানিক দাক্ষিতচেম্বারে রোগী দেখছি। লাইন আসতেই হাড় জিরজিরে বছর আড়াইয়ের বাচ্ছাটাকে নিয়ে করুণ মিনতি স্বরে মেয়েটি বলল—“ডাক্তারবাবু, বাইরে লেখা রয়েছে–দু:স্থ ব্যক্তিদের বিনামূল্য্যে চিকিত্সা করা হয়। আমি ভীষণ গরীব। টাকা দিতে পারবো না। আমার মেয়েটাকে দেখে একটু ওষুধ দিয়ে দেন না—দুদিন ধরে সর্দি-জ্বর্। কাশছে। কিচ্ছু খাচ্ছে না। যা খাওয়াচ্ছি—সাথে সাথে বমি হয়ে যাচ্ছে। ছোটবেলায় তো মায়ের সাথে কত এসেছি আপনার কাছে। আপনার ওষুধ পেটে না পড়লে আমাদের কারুর অসুখ সারতো না!”
মেয়েটির দিকে তাকালাম। রোগা পাতলা কণ্ঠা বেরোনো।পরনে সস্তা দামের আধময়লা আটপৌরে শাড়ী। দুই হাতে প্লাস্টিকের শাঁখা। গাল তোবড়ানো। বয়স বাইশের কোটায় হলেও মনে হয় অনেকটা। অবিন্যস্ত রুক্ষ চুল। কান-গলা খালি। দারিদ্র্যতার ছাপ স্পষ্ট। লালিত্যহীন পোড়া কপালে এক চিলতে আধমোছা সিঁদুর ধিকি ধিকি জ্বলছে। সন্দেহের চোখে তাকাতেই চোখ দুটো বড় করে একগাল হেসে মেয়েটি বলল–“আমাকে চিনতে পারছেন না ডাক্তারবাবু, আমি রাণী! রাণী চৌধুরী। আমার বাবার নাম বিমল—-
—তোমার বাবার নাম বিমল চৌধুরী। মায়ের নাম সুদীপা চৌধুরী! তুমি বাঁশদ্রোণী গার্লস স্কুলের ফার্স্ট গার্ল ছিলে না? তুমি তো বাবার একমাত্র সন্তান। বাড়ী থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিলে না? একি হাল তোমার! মেয়েটি নিরুত্তর্। অপরাধীর ন্যায় নিষ্পলক দৃষ্টি তার নীচের দিকে।বিমল কলকাতা পোর্টট্রাস্টের মস্ত বড় অফিসার। মানুষ হিসাবে খুব ভাল লোক ছিল। এক ডাকে এলাকার সব মানুষ তাকে চিনতো। বাঁশদ্রোণীতে তার সাজানো
গোছানো তিনতলা বাড়ী। একমাত্র মেয়ে রাণী। ব্রিলিয়াণ্ট। স্মার্ট। স্কুলের ফার্স্ট গার্ল। বাবা মায়ের কত স্বপ্ন—লেখা-পড়া শিখিয়ে রাণীকে মানুষের মত মানুষ করবে। মা-বাবার দুজনের ইচ্ছে মেয়ে মস্ত বড় ডাক্তার হোক। অনেক আগে থেকেই তাই জয়েণ্টের প্রস্তুতি নেওয়াচ্ছিল।কিন্তু নেওয়ালে কি হবে ! মা-বাবার ইচ্ছাতে তো আর সব কিছু হয় না। সন্তানের ইচ্ছা আর একাগ্রতাটাও তো থাকার দরকার্। বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের মুখে লাথি মেরে মেয়ে পালালো মিষ্টির দোকানে কাজ করা একটা ছেলের সাথে। বাবা-মায়ের যত্নে লালিত স্নেহ-মায়া-মমতা-ভালবাসা-সেবা-যত্ন নিমেষে হয়ে গেল তার কাছে অতি তুচ্ছ।–তোমার হাসব্যাণ্ড কোথায়?
—তার দেশের বাড়ীতে। আমি ওখান থেকে পালিয়ে এসেছি। ওরা সবসময় আমায় মারধোর করতো। ছেলেটা আমায় ঠকিয়েছে। বিবাহিত। আগের পক্ষের বউ-ছেলে আছে।
–তোমার বাবা থানায় জানিয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি?
প্রশ্ন করতেই রাণী কাঁচুমাচু হয়ে বলল —“থানা পুলিশ করে আমাকে বাবা বাড়ীতে ফেরানোর চেষ্টা করেছিল। আমি ফিরিনি। থানায় জবানবন্দী দিয়ে
বয়সের প্রমাণপত্র দিয়ে বলেছিলাম– আমার বয়স আঠারো প্লাস। আমি স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছি। ওকে আমি ভালবাসি। সেইসময় আমরা কালীঘাটে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতাম। ও-যে বিবাহিত তখন পর্যন্ত ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি আমি।”একটু থেমে চোখ দুটি কাপড়ের আঁচলে মুছে অশ্রুরুদ্ধকণ্ঠে বলল –“মা অনেক কষ্ট পেয়েছিল। কয়েকমাসের মধ্যেই স্ট্রোক হয়ে মা মারা যায়।”
—তোমার বাবার সাথেও তো আমার অনেকদিন দেখা- সাক্ষাত্ হয়নি। কি খবর?
— মা মারা যাবার বছর খানেকের মধ্যেই বাবাও মারা যায়। এখন বুঝতে পারি, মা-বাবা আমার এই ব্যাপারে
খুব কষ্ট পেয়েছিল। মারা যাবার আগে আমাকেও বাবা উচিত শিক্ষা দিয়ে গেছে।
—উচিত শিক্ষা!
একরাশ হতাশাসুরে বলে, “বাবার তিনতলা বাড়ী, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, নগদ টাকা পয়সা আমি কিছুই পাইনি।
— তার মানে! তোমার আত্মীয়স্বজনরা ঠকিয়ে তোমার বাবার সম্পত্তি আত্মসাত্ করেছে?
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রাণী। বলে, “বাবা মারা যাবার আগে বাবা তার স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি রামকৃষ্ণ
মিশনকে দান করে গেছে। আমি বাবার তাজ্যকন্যা বলে উইলে লেখা আছে।”
মনটা ভারাক্রান্ত হল। জিগ্যেস করলাম –এখন কোথায় আছো?
–দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়ীতে। সংসারের যাবতীয় কাজ রান্নাবান্না, বাসনমাজা, ঘরমোছা সব কাজ আমায় করতে হয়, বিনিময়ে আমাকে মেয়েকে খেতে পরতে দেয়। অসুখে বিসুখে হাতখরচার জন্য কিছু টাকা চাইলে মুখ ঝামটানি খেতে হয়। বড় কষ্টে আছি ডাক্তারবাবু। আমি সুস্থভাবে থেকে মেয়েটাকে মানুষ করতে চাই।সব বাবা-মা-ই ছেলেমেয়েদের মঙ্গল কামনা করে। সুন্দর করে মানুষ করার চেষ্টা করে। স্বপ্ন দেখে। কিন্তু অপরিণত মন, অল্প বয়স, সাময়িক মোহ আর অবুঝ অদম্য জেদের কাছে সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।
মনটা ভারাক্রান্ত হলো। রাণীকে বললাম -উপলব্ধি থেকে তোমার মত মেয়েরা যে সর্বনাশের দিকে এখনও পা বাড়িয়ে আছে, তাদেরকে এই মূহুর্তে কি বলবে ?
রাণী এই প্রশ্নের উত্তর দিতে একমূহুর্তও দেরী করলো না। সোজাসাপ্টা উত্তর দিল। বলল–“বলবো –আমার মত মোহগ্রস্ত হয়ে, আবেগতাড়িত হয়ে দুম করে কোন কাজ করে বসো না। পস্তাতে হবে। ভেসে যাবে। এইসময় পড়াশুনা ছাড়া আর অন্য কিছু মনে আনবে না। আগে নিজের পায়ে দাঁড়াও। মা বাবা সবসময় চান সন্তানের মঙ্গল। তাদের অবাধ্য হয়ো না। তাদের অভিজ্ঞতা আমাদের থেকে অনেক বেশী। তাদের ভাবনা-চিন্তা অনেক পরিণত—মঙ্গলকামী। তাদের কথা শোনো—ভাল হবে।”দু:খ কষ্টের জাঁতাকলে পড়ে এই বয়সেই রাণী জীবন বোধের আসল সত্যটা সত্যিই উপলব্ধি করেছে। মুখ তুলে আমার দিকে তাকায় রাণী।
–আমি এখন বুঝতে পারছি, আমি বড় ভুল করেছিলাম
ডাক্তারবাবু।
–ভুল বুঝেছো, কিন্তু বড্ড দেরী করে। ধরো এটা–আমার হাতে ধরা কাগজটা নিতে নিতে বিস্ময়ের সুরে
রাণী বলে, কি এটা!
—মহিলা পরিচালিত একটা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সেক্রেটারীর ঠিকানা। দেখা করো। আশা রাখি বেঁচে থাকার রসদ পাবে। অসুবিধায় পড়লে জানিও।
আনন্দে রাণীর দুচোখে জল টলটল করছে। রুগ্ন মেয়েটাকে বুকে চেপে প্রণাম করার চেষ্টা করতেই
বাধা দিলাম। আশীর্বাদের হাত তুলে বললাম– “হেরো না। যুদ্ধ চালিয়ে যাও। জীবনে সফলতা আসবেই।” -
রাষ্ট্রকর্তা ধৃতরাষ্ট্র
রাষ্ট্রকর্তা ধৃতরাষ্ট্র
-মানিক দাক্ষিতরাষ্ট্রকর্তা ধৃতরাষ্ট্র অজ্ঞান অন্ধ।
প্রবৃত্তিমূলক শতপুত্র
উন্মাদনায় উন্মত্ত বিনাশের অপেক্ষায়
দিব্যদৃষ্টি পঞ্চজ্ঞানী জনে।
রাগ-দ্বেষ ধৃতরাষ্ট্রের ছত্রছায়ায়
বৃদ্ধি পায় কংসের অট্টহাসিতে।
সত্ত্বা ঢাকা ধৃতরাষ্ট্র রাষ্ট্রকর্তা
তবু তিনি শাসন পরিচালনায় দক্ষ
শতপুত্রের উন্মত্ত সাধনায়।
নিজস্ব স্বরূপ এখন বিলীন
কেননা, ধৃতরাষ্টের ভূমিকায় চরম সফলতায়
হৃদয় উত্তীর্ণ।
ধৃতরাষ্ট্রের প্রভাবে ক্রমশ:
লোভী মানসিক বৃত্তিগুলি
বেশ সক্রিয় দেহের অস্থিমজ্জায়। -
বাঁচার অর্থ খুঁজতে হবে
বাঁচার অর্থ খুঁজতে হবে
-মাণিক দাক্ষিতবীরত্বটা দুর্বলের ওপর দেখিয়ে
কর্তৃত্বের কাজটা চালানো সহজ।
তবুও দিব্যোক ঘোড়া ছুটিয়ে
অধিকার চায়—হোক না সব খরচ।।পুঞ্জীভূত ক্ষোভ জমে দুর্বলের
অস্থাবর নিরাপত্তাহীন হৃদয়ে।
ঘুমন্ত শার্দুল জাগে
মহীপালের বিপদ সংকেত জানিয়ে।।মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যুর ইতিহাস
প্রায় দাঁড়ায় একই সীমায়।
তবুও বাঁচার ধরন খানিকটা
পুড়ে মরা পতঙ্গের নিংড়ানো অগ্নিশিখায়।।যদিও জন্মের সহজ বেলায় বাঁচা খুবই সহজ,
তবুও মৃত্যুর পথে হাঁটা বেশই জটিল।
বাঁচার জন্য বাঁচা নয় কথাটা ভাবলেই
তৈরী হয় হিজিবিজি একরাশ দলিল।।লুকিয়ে থাকা বাঁচার অর্থ
খুঁজতে হবে পূর্ণিমার আলোয় ,
কিংবা কাটফাটা রোদে ;
যেখানে অজস্র মাথার খুলি
বাতাসের সাথে শিশু হয়ে কাঁদে। -
হেঁচকী
হেঁচকী
-মানিক দাক্ষিতকি গেরোয় পড়লাম। থামার নাম নাই। হেঁচকী উঠছে তো উঠেই যাচ্ছে। হেঁচকীর চোটে আমি দুলছি, খাট দুলছে,গোটা বাড়ী দুলে উঠছে। সারাদিন — সারা রাত। আজ নিয়ে তিন দিন। বাড়ীর লোক বিপদের আশু সম্ভাবনা দেখলো।
পাড়ার লোকেরা প্রমাদ গুনলো ; বুঝে নিল–শক্ত ব্যামো।
আর বেশীক্ষণ নয়। অচিরেই পটল তুলবো। আমায়
দেখার জন্য বাড়ীতে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার ভিড়। লোকে
লোকারণ্য! সবার মুখে সমবেদনার ঝড়। আহা! মানুষটা
বড্ড ভাল ছিল। বড় তৃপ্তি পেলাম। মরার আগে দেখে
গেলাম–পাড়ার লোকেদের এক-আকাশ ভালবাসার দৃশ্য।
বড় ছেলে সময় নষ্ট করতে চায় না। এক্ষুনি সুপার স্পেশালিটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করাতে চায়। বহুকষ্টে শিবনেত্রে বড়ছেলেকে কাছে ডাকতেই জলভরা চোখে আমার পাশে এসে বসলো। আমি তার হাতখানা বুকের মধ্যে রেখে অনুনয়ের সুরে বললাম–“আমায় নার্সিংহোমে ভর্তি করিসনে বাবা। ওরা আমাকে তো মারবেই, তোদেরকেও ধনে-প্রাণে মারবে। প্রাণে না মারলেও পথের ভিখিরি করে ছেড়ে দেবে। তুই বরং বাড়ীতে একটা ভাল ডাক্তার ডেকে আন।ছেলের আবার হোমিওপ্যাথীতে এলার্জী।বিশ্বাস নাই। ঐ দু-এক ফোঁটা ওষুধে কিস্যু হয় না। তারকাছে সবটাই বুজরুকি।
নামকরা মেডিসিনের ডাক্তার এলেন। দেখলেন। ভ্রু কুঁচকে একরাশ চিন্তামুখে বললেন–পেসেণ্টের অবস্থা তো দেখছি ভাল নয়। মনে হচ্ছে–কিডনীটা একেবারে ড্যামেজ হয়ে গেছে। প্রেসক্রিপশানে ওষুধ, একগাদা টেস্ট লিখে কড়কড়ে চারটে ৫০০ টাকার নোট পকেটে গুঁজে বিদেয় হলেন।
কপাল মন্দ, কিছুই হলো না। ওষুধ পেটে পড়া মাত্রেই
ওষুধের চাবকানি আর কড়কানিতে হেঁচকীর মাত্রা বেড়ে গেল। বন্ধ হল ওষুধ। পরীক্ষায় হাজার বারো গেল কিন্তু কিছুই ধরা পড়লো না। পাড়ার পদীপিসি হাঁক ছেড়ে বলল, “ওরে, এ রোগ অষুদে সারবে নি। শরীলে হাওয়া নেগেচে। ঝাঁড়ফুক করতি হবে।” ঝাঁড়ফুক হল। কিছুই হল না। শরীর ক্রমশ নিস্তেজ। খাওয়া ঘুম বন্ধ। মনে হল হয়তো আজই শেষ রাত।
অবশেষে গিন্নির তত্পরতায় রাত এগারোটায় ডাকা হল হোমিওপ্যাথিক মলয় ডাক্তারকে। এলাকায় বেশ নাম-ডাক আছে। বয়স আশি ছুঁই ছুঁই হলেও মনে হবে ষাটের কোটায়।
সৌম্যদর্শন। এসে সব শুনে কঠোর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে মস্ত বড় একটা ধমক দিয়ে পেটের পিলে চমকে
দিলেন। চীত্কার করে বললেন, “জানো, তুমি এ-পাড়ার
কত মানুষের ক্ষতি করেছো? তোমার কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।” আমি হতভম্ব। মাথায় বজ্রাঘাত! ঘেমে নেয়ে উঠলাম। দুর্বল শরীরে আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবো……অমনি আবার ধমক–“একদম চুপ, কোন কথা নয়। ভিডিও ফুটেজ আছে ক্লাব সেক্রেটারীর কাছে।দেখতে পাবে তুমি কাল-ই। নাও হাঁ করো–জিভ বার করো।”
জিভের মধ্যে পরপর তিনফোঁটা ওষুধ ফেলে বললেন,
মুখ বন্ধ করো।” আমি গোবেচারী মানুষ। নিপাট ভদ্রলোক।
কারোর ক্ষতি করবো–আমি ভাবতেই পারি না। ভয়ে আমি বাকরূদ্ধ! এদিক ওদিক উথাল পাথাল করছি। পাশ ফিরে শুলাম। দেখি হেঁচকীটা আর উঠছে না। যতরাজ্যের ঘুম নিমেষেতে আমার চোখে নেমে চোখ দুটিকে বন্ধ করে দিলো। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।সকালে উঠে আমি বিস্ময়ে হতবাক। আমার হেঁচকী আর নাই। আমি একদম স্বাভাবিক। আমি নিজেকে নিজে জড়িয়ে ধরে বেঁচে থাকার আনন্দে বিছানায় লাফিয়ে চীত্কার করে উঠলাম–কোথায় তোমরা? এসো, দেখে যাও, আমি আরও কিছুদিন এই সুন্দর পৃথিবীতে থাকার অনুমতি পেয়ে গেছি।
হারিয়ে যেতে বসা গোটা বিশ্বটা এই মূহুর্তে আমার কাছে বড় সুন্দর বড় মধুর, একান্ত আপন। বড্ড ভাল লাগছে।
-
না
না
-মানিক দাক্ষিতসারাদিন অফিসে কলম পিষে ক্লান্ত হয়ে সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরে চায়ে চুমুক দিয়েছি কিনা পাশের ঘর থেকে বিশ্রী রকমের একটা এলোপাথাড়ী ‘ধুপ-ধাপ’ শব্দ। সচকিতভাবে গিন্নির দিকে তাকাতেই ম্লান মুখে বলে, “নকুল বউটাকে পেটাচ্ছে। বেচারী বউটাকে কথায় কথায় মারে।
–কান্নাকাটির তো আওয়াজ নাই?
—লোকে শুনতে পাবে বলে বউটা আওয়াজ
করে না। যন্ত্রণা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে।মটকা গরম হয়।পাশের ঘরে গিয়ে ধাক্কা মারতেই দরজা খুলে নকুল বেরিয়ে আসে। চোখ মুখ লাল। ঘরের এক কোণে বউটা জড়সড় হয়ে নি:শব্দে কাঁদছে। মুখ ফুলে গেছে। মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে।
চীত্কার করে উঠলাম–“তুমি মানুষ, না জানোয়ার, বউটাকে এমনিভাবে মেরেছো? পুলিশ ডেকে তোমার এক্ষুণি একটা ব্যবস্থা করছি।
আমার মুখের কাছে মুখ এনে নকুল ধীর শান্ত গলায় তীর্যকভঙ্গীতে বলে, “কেন খামোকা আমাদের ব্যাপারে নাক গলাচ্ছেন। যান, নিজের চরকায় তেল দিন।”
রাগে অপমানে আমার গোটা শরীর কাঁপতে লাগল। উদ্বিগ্নচিত্তে বউটা আমার দিকে এগিয়ে এসে সলজ্জ ভঙ্গীতে মাথা নীচু করে দাঁড়ায়। বলে, “বাবু, থানায় খবর দেবেন না! “—“তোমাকে কি রোজই নকুল মারে? ”
এদিক ওদিক দুদিকে মাথা নেড়ে বউটা উত্তর দেয়, “না”—-একটু আগে তোমায় নকুল মারছিল না!
আবারও একই ভঙ্গীতে মাথা নেড়ে বউটা উত্তর দেয়, “না।”—তোমার মাথা ফাটলো কি করে?
—বাথরুমে স্লিপকেটে পড়ে গিয়ে।