-
কবিতা- ‘কবির কবিতা হতে চাই’
কবির কবিতা হতে চাই
-শর্মিষ্ঠা শেঠকবি ! আমি একটি কবিতা চাই
সূচির শুভ্ৰতায় আকাশ হোক ভরা,
আমি একটা আকাশ হবো তোমার,
দিন রাতের থাকবে নন্দিত পরম্পরা !কবি! আমাকে একটি কবিতা দাও
আমি নেড়ে চেড়ে দেখবো মমতা ভরে,
আমিও কবিতা হতে পারি
আগুন আছে আমারও অন্তরে!কবি ! একটি কবিতা হতে চাই তোমার
ভাবনার হেয়ালী খেয়ালে অহর্নিশ বৈভবে,
আমার হাসি তোমার মুখে
একবার দেখতে চাই অনুভবে!কবি! একটি কবিতা, শুধু একটি কবিতা
যেখানে আমি আমার উপস্থিতি টের পাই ,
শিঁকল পায়ের অধীর আগ্ৰহ বাড়ে ইদানিং
জগতের গ্লানির পরিত্ৰাণ নাই!কবি! আমি তোমার কবিতা হতে চেয়েছি
তা তো ভুলে থাকার কথা নয়,
হে আমার বিহঙ্গ কবি…
আমি হতে চাই তোমার সঞ্চিতার সঞ্চয়!কবি! একটি কবিতা হতে চাই
কবিতার আদলে শ্যামল গুঞ্জনে ,
আমার কৈশোর ফিরে পেতে চাই।
কবি, একটি কবিতা লিখো তোমার প্রেমের ব্যঞ্জনে! -
গল্প- অগ্নিস্নাতা
অগ্নিস্নাতা
– শর্মিষ্ঠা শেঠগুনগুনিয়ে একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে গাইতে ঘরটা একটু গুছিয়ে রাখছিল লাবণ্য। কোনো জিনিস অগোছালো থাকলে ভীষণ অসন্তুষ্ট হয় আদিত্য। টেবিলে রাখা মোবাইলটা বেজে উঠতেই ও বুঝলো এটা সঙ্গীতার কল। একটু মনে মনে বিরক্তই হলো লাবণ্য। আসলে বিরক্ত হবার কারণও আছে। সঙ্গীতা মানে ওর মাসতুতো বোনের বিয়ে হয়েছে ওর বিয়ের ঠিক একমাস সতেরো দিন পর। ওর ফাল্গুনে, আর সঙ্গীতার পরের বৈশাখে। সঙ্গীতারা তার কয়েকদিন পরেই হানিমুনে গেছিল গোয়া। এখন ফোন করলেই শুধু বলে আদিত্যদা কি মানুষ রে? ছয় মাস হয়ে গেল তোরা এখনো…
শোন বিয়ের পরপরই হানিমুনে না গেলে দাম্পত্যের চাবিকাঠিটা ঠিক খুঁজে পাওয়া যায় না। তারপর শুরু হয় ওর হানিমুন ট্রিপের গল্প। ওই একই গল্প শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে।
লাবণ্য ফোনটা ধরতেই আদিত্য- কি গো, ফোনটা বেজে চলেছে, ধরবে তো।
লাবণ্যর বুকটা ধক করে ওঠে। এসময় আদিত্য তো কোনোদিন ফোন করে না।
ও বলল- হ্যাঁ, বলো। তোমার শরীর ঠিক আছে তো?
-আরে বাবা, সব ঠিক আছে। ভালো খবর আছে একটা। শোনো, এই বৃহস্পতিবার আর শুক্রবার দু’দিন ছুটি পেয়েছি অনেক কষ্টে। শনি আর রবি মিলিয়ে চার দিন। তুমি রেডি হও। বলেই ফোনটা কেটে দিল।লাবণ্যর মনে যেন বর্ষার ময়ূর নেচে উঠলো বিয়ের সাড়ে পাঁচ মাস গত হয়েছে তাদের সময় হচ্ছিল না মধুচন্দ্রিমায় যাওয়ার। নতুন চাকরী কোনো ভাবেই ছুটি ম্যানেজ হচ্ছিল না আদিত্যর।
যাক বাবা, সবশেষে ছুটি মঞ্জুর হলো তাহলে চারদিনের জন্য।আদিত্য বুধবার অফিস থেকে ফিরে আসার পর, ওরা রাতের বাস ধরবে। তাহলে বৃহস্পতিবার সকাল ন’টা নাগাদ পৌঁছে যাবে।
বুধবার অফিস থেকে ফিরে, বেডরুমে ঢুকেই আদিত্য কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেলো। লাবণ্য টুকটুকে লাল শাড়ি পরে বসে আছে।
আদিত্য একবার লাবণ্যর আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বললো, – তুমি এইসব পরে যাবে?
– কেন এসব শাড়ি পরলে কি হয়?
– আমার পছন্দ না, তুমি সালোয়ার কামিজ পরো।
— আমার বৌদির অফিসের কলিগরা বেড়াতে যাবার সময় তো এরকম পোশাক পরে। আমি এটা পরেই যাবো।
– তর্ক করাই বৃথা। তোমার স্বভাবটা গেঁয়ো হয়েই থেকে গেল। এতদিন বিয়ে হয়েছে আমার পছন্দটাও এখনো বুঝতে পারলে না। মা-বাবা দেখছে তোমার এই সাজ?
– মা তো দেখে নজর টিপ দিয়ে গেলো।বিগড়ানো মেজাজ অনেক কষ্টে সামলে নিল আদিত্য। সে ঠিক করেছে আগামী চারদিন লাবণ্য যাই করুক কোনো ভাবেই ঝগড়া করবে না।
আদিত্য আর লাবণ্যর বিয়েটা খুব ধুমধাম করে হওয়ায় প্রচুর আত্মীয় স্বজনের সমাবেশ হয়েছিল। প্রত্যেকে কিছু না কিছু উপহার দিয়েছে। সোনাদানা, ঘর সাজানোর টুকিটাকি জিনিসপত্র ছাড়াও প্রচুর শাড়ি পেয়েছিল। লাবণ্য বরাবরই শাড়ি পরতে খুব ভালোবাসে। বিয়ের আগে বৌদির থেকে দু’ চারটে শাড়ি চেয়ে পরতো। এখন আলমারি ভর্তি তার নিজের শাড়ি। এত শাড়ি একসঙ্গে সে জীবনে দেখেনি।লাগেজ গোছাতে গোছাতে অনেকগুলো শাড়ির মধ্যে হালকা নীল রঙের শাড়ি যেটা আদিত্য ওর জন্মদিনের দিন নিজের হাতে কিনে এনে দিয়েছিল ওটা নিতে ভুললো না।
– তোমার লাগেজ এগুলো?
লাবণ্য নির্লিপ্ত কন্ঠে বললো, হ্যাঁ।
– তিনটে লাগেজ? এতো লাগেজে কি নিয়েছো?
– খুলে দেখো অপ্রয়োজনীয় জিনিষ একটাও পাবে না।
ভাগ্য ভালো বাস ছাড়ার পনেরো মিনিট আগে ওরা পৌঁছালো বাসস্ট্যান্ডে। প্রথম হানিমুনে বাস ফেল করলে মান-সম্মান থাকতো না।আদিত্যর কথায় লাবণ্যর মন খারাপ হয়ে আছে, কতো সখ করে লাল শাড়ি পরলো আর আদিত্য এমন রিয়াক্ট করলো যেন পেত্নীর মতো লাগছে।
লাবণ্য বিষয়টা ভুলে মনটা ভালো করার প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগলো। জীবনে প্রথম সমুদ্র দেখার অনুভূতি কেমন হবে তা ভাবতে চেষ্টা করলো। আদিত্যকে বেশি পাত্তা দেওয়া ঠিক হবে না। বাস ছাড়তেই লাবণ্য চোখ বন্ধ করে একটু রিলাক্স হতে চেষ্টা করে। আজ সারাদিন যা ধকল গেছে ওর ওপর দিয়ে।– কী হলো সুইটি খুব টায়ার্ড লাগছে?
আদিত্য যখন রোমান্টিক মুডে থাকে তখন ও লাবণ্যকে সুইটি নামে ডাকে। সুইটি নামটা লাবণ্যর মোটেও পছন্দ নয় তারপরও সহ্য করে এসব। আলগা আহ্ণাদ অবশ্য মাঝে মাঝে ভালোই লাগে।
– আমি ঠিক আছি।
– তোমাকে না এই লাল শাড়িটাতে দারুণ লাগছে।
– তখন না বললে বাজে লাগছে?
– আসলে বাড়িতে সবার সামনে কেমন জানি অস্বস্তি লাগছিলো।
– ওরে আমার লাজুক বর, শাড়ি পরেছি আমি আর লজ্জা পেলে তুমি।লাবণ্য মাথা হেলিয়ে দেয় আদিত্যর কাঁধে। যদিও সে জানে আদিত্য এখন অস্বস্তি বোধ করছে, কাঁধে মাথা রাখাতে।
রাতের বাসে এই প্রথম চাপলো লাবণ্য। বেশ ভালোই লাগছে। রাত যখন প্রায় সাড়ে বারোটা তখন রাস্তার ধারে একটা বড় হোটেলের সামনে দাঁড়ালো বাস। ড্রাইভার বললো চা, কফি খেতে হলে এখানে খেয়ে নিন সবাই। সবাই নেমে যাচ্ছে, আদিত্য বললো, চলো। লাবণ্য সাধারণত চা,কফি খুব একটা পছন্দ করে না। তবু নামলো।আদিত্যর কাছে শুনলো এই ধরণের হোটেলগুলোকে নাকি ধাবা বলে। আদিত্য দু’ গ্লাস চায়ের অর্ডার দিল। লাবণ্য জিজ্ঞাসা করলো, – এখানে বাথরুমের ব্যবস্থা নেই?
– থাকার তো কথা।
বলে মালিকের সাথে কি যেন বললো।
তারপর লাবণ্যকে বললো, – ওই যে ওদিকটায় যাও।আধ ঘন্টা পর আবার বাস ছাড়লো। রাতের রাস্তা, গাড়ি যেন হওয়ার মতো ছুটছে। আধো ঘুম,আধো জাগা অবস্থায় অবশেষে এসে পৌঁছালো সমুদ্রের কাছাকাছি বুকিং করা একটা লজে। লজের নামটা লাবণ্যর খুব পছন্দ হয়েছে “অলীক সুখ”। সত্যিই তো এমন সুখের জন্যই তো মধুচন্দ্রিমায় আসা।
লজের এটেন্ডার ওদের রুম খুলে দিল, ওদের লাগেজ ঘরে দিয়ে গেল। লজের ঘরটা খুব সুন্দর করে সাজানো।
লাবণ্য স্নান সেরে এর মধ্যে হালকা গোলাপি রঙের একটা নাইটি পরে নিয়েছে, চুল খোলা অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। আদিত্য পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে লাবণ্যকে। অবাধ্য ঠোঁটের ছোঁয়ায় ভাসিয়ে দেয় আদরে আদরে।
– এই শুনছো একটা জরুরী কথা আছে।
– এখন না। একবারে চুপ।
– লক্ষীটি শোনো না।
– আচ্ছা বলো কি বলবে।
– তুমি… তুমি বাবা হতে চলেছো।
আদিত্য অবাক হয়ে চেয়ে রইলো লাবণ্যর দিকে। লাবণ্য আদিত্যর বুকে মাথা রেখে বলতে লাগলো,
–কালকেই ডাক্তারের রিপোর্টটা হাতে পেলাম। আমার খুব আনন্দ হচ্ছিল তোমাকে জানাবো বলে, কিন্তু তুমি ঘরে ঢুকেই যেভাবে মাথা গরম করে পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে আর বলা হয়ে উঠলো না।
আদিত্য লাবণ্যকে বুকের গভীরে পরম তৃপ্তিতে জড়িয়ে ধরে বাবা হওয়ার সুখটা অনুভব করলো।একটা দিন কিভাবে কেটে গেল বোঝাই গেল না। সবাই বলে ভোরের সূর্যোদয় না দেখলে নাকি সাগর দেখা বৃথা কিন্তু ওরা পরের দিন বেলা আটটার সময় ঘুম থেকে উঠলো। ফ্রেশ হয়ে লাবণ্য সেই হালকা নীল শাড়িটা পরেছে সাথে প্রিন্টেড ব্লাউজ। গলায় বেশ ভারী পাথরের একগাছা মালা।
– তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। আবার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি সুইটি।
আদিত্য এগিয়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে।ডিসেম্বরের তীব্র শীত এখনো পড়েনি আবার গরম একবারে নেই, পারফেক্ট হানিমুন ওয়েদার। বিশাল সমুদ্রের গর্জন আর সুনীল স্রোত দেখে সময় দ্রুত কেটে যায়। সূর্যাস্ত দেখার জন্য সমুদ্র সৈকতে দুজনে এসে দাঁড়ায়। চমৎকার এক নৈসর্গিক দৃশ্য। বেশ কিছুক্ষণ ওরা হাত ধরাধরি করে সমুদ্রের জলের ধারে ধরে হাঁটলো। একেকবার ঢেউ এসে ওদের পায়ের পাতা ছুঁয়ে যাচ্ছিল। এ দিকটায় মানুষ জন একটু কম। আদিত্য দরাজ গলায় একটা গান গাইছে ‘আমার হৃদয়,তোমার আপন হাতের দোলায়’ লাবণ্যর খুব পছন্দের গান। সন্ধ্যাটা কেটে গেল এভাবেই।
কাল ওরা এখান থেকে একটু সাইট সিয়িং এ বেরোবে। সব ব্যবস্থা লজ কর্তৃপক্ষের। গাড়ি, খাবার, টিফিন সব ওরাই দেবে।
রাতটা কেটে গেল প্রায় না ঘুমিয়ে। কত কথা, কত গল্প ওরা যেন এই এক রাতেই দু’জন দু’জনকে নতুন করে আবিস্কার করলো।
পরদিন বেলা দশটা নাগাদ লজ মালিক জানালো তাদের গাড়ি এসে গেছে।ওরা গাড়িতেই টিফিন, খাবার, জল সব ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আদিত্য আর লাবণ্য গাড়িতে উঠে বসলো। ছোট গাড়ি। সামনে ড্রাইভার আর একজন, পিছনের সিটে লাবণ্য আর আদিত্য।
সেদিন রাতে দেখা যায় নি, কিন্তু আজ লাবণ্য দেখলো বিশাল হাইওয়ে দিয়ে গাড়ি ছুটছে। আদিত্য চোখ বন্ধ করে কি যেন একটা গান গুনগুন করে গাইছে। হঠাৎ একটা বিকট আওয়াজ! দ্রাম!!! আর কিছু মনে নেই লাবণ্যর।তিনদিন পর যখন লাবণ্য চোখ মেলে, তখন দেখে সে হাসপাতালে শুয়ে আছে। ওর বাপের বাড়ির লোকজন ওকে ছুটি করিয়ে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। ও তখনো কিছু বুঝতে পারছে না।
বাড়িতে ঢোকার আগে কিছু লোককে ইতস্তত ঘোরাঘুরি করতে দেখে।তারপর আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বেশ কিছুক্ষণ পরে, এখন যেন একটু ভালো লাগছে শরীরটা। ঘুম ঘুম ভাবটা আর নেই। এতক্ষণে ওর মনে পড়লো আদিত্যর কথা।আদিত্য কোথায়? লাবণ্য উঠে এদিক ওদিক তাকাতেই আয়নায় নিজেকে দেখতে পেলো, সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না। একি? তার পরনে সাদা থান !
তারপর দিন দুপুরে বাড়ির সবাই যখন ঘুমিয়ে, ঠিক তখনই সমস্ত শাড়ি আলমারি থেকে বের করে দোতালার বারান্দা থেকে উড়িয়ে দিলো সে নীচের পৃথিবীতে। আর আগুনের একেবারে মাঝখানে এসে দাঁড়ালো লাবণ্য। আগে লাবণ্য আগুনের ধারে কাছে থাকতো না, সবসময় ভয় ছিল যদি সে পুড়ে মারা যায়। এখন এসে দাঁড়িয়েছে আগুনের একেবারে মাঝখানে। হাত পুড়ছে, মুখ পুড়ছে, বুক পুড়ছে, এখন আর ভয় নেই।
লাবণ্য অবাক হয়ে দেখছে …..
যে আগুন ওকে পোড়াচ্ছে, সেই আগুন নিজেও পুড়ছে। লাবণ্য নিজের পেটে হাত দিয়ে একটা কথাই মনে মনে বললো। আমাকে ক্ষমা করিস। -
তুমিহীনে
তুমিহীনে
-শর্মিষ্ঠা শেঠতোমার কি ইচ্ছে করে না
আমাকে দেখতে কিংবা কথা বলতে,
গোধূলী বেলা যায় …..আসে সন্ধ্যে
তেল নেই প্রদীপে পুড়ছে সলতে !!তোমার কি ইচ্ছে করে না
বাতাসে ওড়া চুলে উন্মাদ হতে,
বসন্ত গেলো বর্ষা এলো
শালবন বিহারে বদলের আবর্তে !তোমার কি ইচ্ছে করেনা
জলছাপা শাড়ীর আঁচলের সুবাস নিতে,
খেয়ালী বসন্তে সব সুবাস আসে
বহুকাল গড়িয়ে গেল এই শীতে !বোবা তুমি, আমিও তাই সাজি
রিক্তের বেদনে চিৎকার করে কাঁদি,
এলে না আজও তুমি
কষ্টের ডোরে সকল প্রেম যাই বাঁধি !তুমি কি রাতকে ভয় পাও
ঘুমিয়ে কি চশমা পড়ো ঝামেলা বলে,
কি ভালবাসা তোমার নিত্য মরে
সরাসরি উন্মাদ হই ভাসি চক্ষু জলে!বিন্নি ধানের খই পোকায় খায়
জমিয়ে রাখি তেলের পরিত্যক্ত টিনে,
তুমি আসবে ভেবে
ভাত না খেয়েই পড়ে থাকি রাত দিনে !দিনটি আমার অবোধ শিশুর মত কাঁদে
প্রহরগুলি যখন শূণ্যতায় দেয় হামাগুড়ি ,
আমি পারি না ভাবতে তোমায়
হৃৎপিণ্ড ছিড়ে যায় ত্রাসে ফাটে শীলানূরি !তোমার কি ইচ্ছে করে না
বউকে পুতুলের মত করে সাজাতে
আমি নিতা আম্বানী হতে চাইনি
দুই টাকার লাল ফিতেই যথেষ্ট মন ভরাতে !তোমার একটু হাসিই
আমার হৃদয় প্রশান্তিতে নোঙর ফেলে,
কালো মেশি পড়া দাঁতের
তিল পড়া হাসিতে অপূর্ব দরদ মেলে !আজ প্রশ্নরা বড় বেশী তৎপর
অজুহাত ফিরে যাবার
একবার কি ভেবে দেখেছ
তুমিহীনে কি হবে এই আমার ? -
তোমার জন্য
তোমার জন্য
-শর্মিষ্ঠা শেঠআজকাল খুব বেশী লিখতে ইচ্ছে করেনা,
অনুভূতিগুলো বুকের ভেতরই অহর্নিশি দুমড়ে মরে,
তবুও অনেক কিছুই প্রকাশ করিনা।
কি লাভ তোমায় জানিয়ে,
যে লেখার কোন প্রতিকার নেই,
সে লেখা যে লেখাই বৃথা।
তবু লিখছি তোমার কাছে বারবার হেরে যাই বলে, তোমার কাছে হারতে ভালো লাগে বলে।
অবশ্য আজ আর কোথাও ভালোবাসা খুঁজে পাইনা,
সবকিছুতেই কেমন যেন একটা মিথ্যে অভিনয়।
একটা মিথ্যে মুখোশের আড়ালে সত্য ঢেকে রাখার আপ্রাণ চেষ্টায় ব্যস্ত সবাই।
একমাত্র আমিই বোধহয় বেকার বসে অকারণ ভাবনায়,
থামিয়ে রেখেছি নিজের পৃথিবীটাকে।
তোমাকে এত সহজেই ভুলি কি করে?
ডায়েরীর পৃষ্ঠার ভাজে শুকিয়ে যাওয়া ঐ গোলাপটাতে যে আজও অনেকটা ভালবাসা জমে আছে তোমার জন্য।
আর কেউ জানুক বা না জানুক;
এই আমার প্রতিটা নির্ঘুম রাত জানে তোমাকে ভুলতে না পারার ইতিহাস।
যে ইতিহাস হয়তো কোন বইয়ে লেখা থাকবে না,
তবুও এই ছোট্ট ছোট্ট লেখায় আমৃত্যু সে ইতিহাসের কাহিনী লিখে যাই তোমার জন্য।
যদি কোনদিন নিজেকে খুব একা মনে হয় তোমার,
সেদিন এসে আমার এই লেখাগুলো খুলে দেখোl
আমার এ লেখা সেদিন কথা বলবে তোমার সাথে,
জানাবে আমার ভালবাসার কথা তোমাকে।
সেদিন ঠিক জানতে পারবে কেউ একজন তোমাকে ভালবেসেছিলো পরম বিশ্বস্ততায় ও সন্তর্পণেll -
মানুষ ভেবে
মানুষ ভেবে
-শর্মিষ্ঠা শেঠ
আমি কুৎসিত কদাকার
তাই বলে নিঃশ্বাস নিতে
আমার কষ্ট হয় না মোটেও
ঠোঁটের সহযোগী কথাগুলো
বেশ গুছিয়ে বলতে পারি,
রাগ হলে আকাশে চোখ রাখি
কান্না পেলে তারা গুনি
হাসি পেলে দুঃখগুলোর
যোগফল নির্ণয়ে
ব্যস্ত থাকার অভিনয় করি,
আর কুপিবাতির কালি লাগা
টেবিলে জমানো বইগুলোর
অভিযোগ শুনি
নির্জলা উপোসে ক্লান্ত শরীর
কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে
বিস্তর অবহেলার মাঠে
বুঝতে না পারার আগেই জাগ্রত আমি
হিসেবের ইতিহাস রচনা করি
কপালের খালি জমিতে
বলি আমি ——-
অসুন্দর মানুষ আমি ক্ষমা করো
সুন্দর নয় একটি মানুষ ভেবে! -
বোবা কলতান
বোবা কলতান
-শর্মিষ্ঠা শেঠহৃদয়ের ভাষা তুমি?
শুনতে কি পাও নৈশব্দের মাঝে শব্দের কলতান?
এই সকরুণ চোখের ভাষা বুঝতে চাওনি কখনো
একবার রাখ চোখ আমার এই দুচোখে…
দেখবে হাজার তারায় সাজানো স্বপ্নিল আকাশ
যেখানে বইছে সফেদ শুভ্র ভালবাসার ঝর্ণাধারা
সুদুরের পানে পেতে রাখ কান
কানে বাজে যে শব্দের ঝংকার
সেতো বহে যাওয়া বাতাসের শব্দ নয়
এ শুধু আমারি দীর্ঘশ্বাস….
মনের কথাটুকু বলতে না পাড়ার কষ্টে
তপ্ত মরুময় বুকে বহে চলা উষ্ণপ্রস্রবণ
জমে আছে হাজারো কথার ফুলঝুরি,
না ফোটা ইচ্ছের কুসুম কলি…
যাহা কেহই দাওনি পাঁপড়ি ছড়ানো ফুল হয়ে ফুটতে।। -
আমি চিনিনা আমায়
আমি চিনিনা আমায়
-শর্মিষ্ঠা শেঠআবেগের বিদ্রোহে
বিদ্রোহী হয়ে উঠি আমি,
বিবেকের কাঠগড়ায়
আমিই হই বিচারক কিংবা আসামী !আমি নিঃশব্দ শূণ্যতায়
রাত্রির সাথে যুদ্ধ করি একাই ,
সকাল দেখি আমি
ক্ষয়ে পড়া মনে পাতার বাঁশি বাজাই !আমি আমারে খুন করি
প্রহরের বিলাপ হৃদপিণ্ডে ধরি একা ,
কেউ আমার পাশে নেই
ভেঙে যায় যখন ধরি যে গাছের শাখা !দেশলাই ভেজে অশ্রু জলে
কঙ্কর ভরা চোখে অন্ধের ভরে,
কোকিলের সারা বেলা
চাতকের প্রাণে হাহাকার করে !আমার কেউ নেই আজ
দু’দণ্ড হাতটি ধরে পাশে বসার ,
সবাই স্বার্থপর সেই দলেই সে
যে আমার পৃথিবী ভালবাসার !আমি চিনিনা আমারে আজও
কে আমি কেন এমন জীবন সঞ্চিতায়,
মরন এলে হাসে অন্তর
কেন যে সম্পর্কগুলি আমারে বাঁচায় ? -
রক্তে জীবনদান
রক্তে জীবনদান
-শর্মিষ্ঠা শেঠ
হে জীবন্ত রক্ত
সাধ্যাতীত মানব হাত পাতছে
তোমার দ্বারে,
তোমার দেওয়া রক্তে যদি
অন্য একটি জীবন বেঁচে ওঠে
এই প্রত্যাশে lঅসাধ্য মানব তোমার সৃষ্টিতে
পরাজিতll
নিরুপায় হয়ে এক মানব
অন্য একজনের কাছে দ্বারস্থ,
সর্বহারা ভিক্ষুকের মত llহে জীবন্ত রক্ত
তুমি ওদের ফিরিয়ে দিও না I
বিজ্ঞানের পাঠানো থলিগুলো
ভরে দাও l
তুমিহীন অভাবে অকালে যারা
মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে,
তাদের তুমি রক্ষা কর ll -
কবিতায়-আমি
কবিতায়-আমি
-শর্মিষ্ঠা শেঠযখন আমি থাকবো না আর…এই পৃথিবীতে,
থেকে যাবে শুধু…লেখা আমার কবিতাগুলোI এলোমেলো হয়ে টেবিলের ওপর…কিংবা থাকবে মুখ লুকিয়ে তোমার সেই ছোট্ট কাঠের আলমারির ভিতরll
আমাদের সেই হাতে গড়া সংসার
তার সুখ -দুঃখের স্মৃতি
যখন পরবে তোমার মনে…
আমার লেখা কবিতা গুলো জানান দেবে
আমি যেন আছি তোমার কাছে llবলবো না আর তোমাকে কিছু…
বলবে আমার কবিতা গুলো
শুনবে তখন তুমি মৌন মুগ্ধ হয়ে
ফেলে আসা সেই সুখ- দুঃখের কাহিনীগুলো llআর হবেনা দেখা আমাদের
পাবে দেখা শুধু কবিতা গুলোর
আকাশে বাতাসে খবরের কাগজে
কিংবা বইয়ের পাতায়…
বেড়াবো তখন ভেসে আমি
মিথ্যে তখন খুঁজবে আমায় হেথা হোথা…
…অন্য কোনোখানে ll -
ক্ষুধার মাতৃভাষা
ক্ষুধার মাতৃভাষা
-শর্মিষ্ঠা শেঠমৌলবীবাড়ির রমজান আলী
পুরা গেরামের সবচে ধনী,
প্রতি শুক্কুরবার জুম্মার পর
একশজন খাওয়ান গুনি গুনি।
মসজিদের সামনে লাইন করে
বসেন গরিব মুসল্লিগণ,
“আল্লাহর নামে দোয়া করে পেট ভরে খান”
সুমধুর আওয়াজে রমজান আলী কন।সমস্বরে সবাই ডাকে, “আল্লাহু আকবর”!
এক শুক্কুরবারে খেতে বসিলো,
চন্দনমালা পরা জীর্ণ এক বুড়ো,
জ্বর ছিলো কিনা অজানা, তবে হাত পা কাঁপছিলো।
একখান চাদর মাথায় দিয়া
বারবার চাইছে নিজেরে লুকাইতে,
সেবক আইসা কয়, মশাই, আইছেন কোন ধর্ম হইতে?ক্ষুধার্ত, পীড়িত বুড়ো মানুষটা মিনমিন করে কয়,
“আমি ধর্মের নাম জানিনে বাপু, পেটে ক্ষুধা না সয়”,
তিনদিন ধরে জল ছাড়া খাইনে কিছুই,
কার নামে খাওন মিলবে কও, এক্ষুণি তার নাম লই।”নিরানব্বইয়ের লগে সেও কইয়া উঠে “আল্লাহু আকবর”
রমজান আলীর দৃষ্টি পড়ে হঠাৎ নিজের উপর।পর শুক্কুরবার হইতে, খাইতো ঠিকই একশ জনে,
কিন্তু দোয়া করিতো যে যার মনে মনে।