• কবিতা

    কবিতা- কি দিতে পারো আমায়

    কি দিতে পারো আমায়
    -শুক্লা রায় চৌধুরী

     

     

    আমায় একটু বাতাস দিতে পারো?
    ফুসফুসে ভরে বাঁচবো কিছু দিন;
    সোঁদা মাটির গন্ধ মেখে মৃন্ময়ী হয়ে –
    তোমার হাতে ধরা দেই যদি?
    ফিরিয়ে দেবে কি আমায়!
    নাকি সেই হারিয়ে যাওয়া প্রেমের বাঁধনে –
    ওই পুরুষালি পাঁজরে বেঁধে রাখবে!

    আমায় একটু জীবন দিতে পারো?
    সঞ্জীবনীর টানে ভাসবো সুখ চাবি ছুঁয়ে।
    আমার করেই খুঁজে পাবো কি তোমায়?
    ভালোলাগার নেশায় কাটাবো –
    ভীষণ প্রিয় একটা রাত!
    আড়মোড়া ভাঙা রোদের আলতো চুমু-
    একটা একটা করে স্বপ্ন রাঙাবে।

    আমায় একটু আগুন দিতে পারো?
    তোমার জমানো অভিমান পুড়িয়ে-
    কষ্টি পাথরে সাজাবো আমার জগৎ।
    আবার নিভিয়ে দেবে কি আমায়?
    নাকি অদম্য উষ্ণতায় ভরিয়ে-
    শুরু করবে এক নতুন অধ্যায়ের;
    মিষ্টি সোহাগে জাগবে সেই আনকোরা প্রেম।

  • কবিতা

    কবিতা- দুই ঘর

    দুই ঘর
    – শুক্লা রায় চৌধুরী

     

     

    উজ্জ্বলতার বন্যা হয়ে রঙ্গীন আলোর খেলা,
    তোমার ঘরে হাজার বাতি আমার ঘরে অন্ধকারের মেলা;
    মধুর বাতাস করছে যে বাস নানান ফুলের সাজ,
    তোমার ঘরের ভ্যাপসানো রাত তাই কি এত লাজ?
    হাসির লহর আমার ঘরে সুখের প্রাসাদ একেই বলে,
    কান্নাগুলোও বোবার মত তোমার মনন ধুয়েই চলে;
    একটি বেলুন সারা বছর তোমার হাতেই বিরাজ করে,
    আমার ঘরে হরেক রকম, জন্মদিন তো লেগেই থাকে;
    রকমারী ওই সুস্বাদু কেক মুখে মাখাই মজার ছলে,
    বাসী রুটির স্বাদ যে কঠিন ওতেই তোমার উদর ভরে।

  • কবিতা

    কবিতা- আর্তনাদ

    আর্তনাদ
    -শুক্লা রায় চৌধুরী

     


    অন্ধ স্নেহের পুত্র যদি নারী-লোভী দুর্যোধন হয়,
    কোল জোড়া ওই বংশ বাতির সুখ কি আদৌ রয়!
    চূর্ণ করে মৌনতাকে বিশ্লেষণের সূত্র খোঁজা শুরু ,
    স্বল্প বসন দেখলে তবেই মন কি করে উড়ু উড়ু?
    যে শিশুর বয়স কেবল মাস দিয়ে যায় গোনা,
    উত্তেজনা জাগায় কি রূপে রেচন অঙ্গ যাদের চেনা;
    বৃদ্ধা যেথায় ছাড় না যে পায় পশুর পেষণ থেকে,
    লোলুপ চোখের খিদে বাড়ায় নারী শরীর দেখে;
    আশ না মেটায় ছিঁড়ছে যে তাই খেলনা দু ভাগ করে,
    পিশাচ মনের খেয়াল হতেই দিলো আগুন ছুঁড়ে;
    এরাই আবার ছাড় পেয়ে যায় নিয়ম জালের ফাঁকে,
    বালক বেশে মিশে থাকে কলুষ পাকের মাঝে;
    পৌরুষত্বের প্রমান দিয়ে নিঙরে নিলো প্রাণ,
    সময় স্রোতে বিচার পিছয় তাই জমছে অভিমান;
    যন্ত্রণাময় মৃত্যু আসুক অমোঘ চক্রবুহ্যের ফাঁদে,
    কালের হাসি ফুটবে জানি নিস্তারহীন আর্তনাদে।।

  • কবিতা

    কবিতা- রুগ্ন হাতে ফুল

    রুগ্ন হাতে ফুল
    – শুক্লা রায় চৌধুরী

     

     

    ট্রাফিক জ্যামে গল্প ওড়ে,
    রুগ্ন হাতে ফুল,
    জানলা ঘেঁষে দাঁড়াই যদি
    তাতেও আমার ভুল!
    ইস্কুলে আর হয়না যাওয়া-
    সতীন মায়ের বিষম জ্বালা,
    ফোস্কা ওঠা পায়ের তলে,
    এমনি করেই রুজি চলে;
    একটা দু’টো গোলাপ বেচে,
    জীবন কাটে নিজের মতে-
    হিসেব করেই কাটে সময়,
    নতুন দিনের ঘেন্নার ভয়;
    স্বপ্ন আসে চোখ জুড়িয়ে,
    রাত যে কাটে মন ভরিয়ে;
    হারিয়ে যাবার একটু আগে,
    বাতাস নেব প্রাণটা ভরে;
    পরের বারে জন্ম নিতে,
    আসব ফিরে গদির খাটে!

  • কবিতা

    কবিতা- অশুচি

    অশুচি
    – শুক্লা রায় চৌধুরী

     

    নিয়ন আলোর রঙ্গিন নেশায় মত্ত নগর সাজে,
    আলগা হওয়া জুঁইএর মালা কবরী জড়িয়ে থাকে;
    আসমানী রঙ শাড়ির আঁচল উজ্জ্বলতায় ঢাকা,
    আতর মাখে এমন যে সাজ বুকে বারুদ চেপে রাখা;
    তামস ঢাকা গলির মাঝেই ছড়িয়ে আমার বাস,
    লালসা ভরা খিদের টানে শুধু তোমার যাতায়াত;
    আমার ঘরেও ক্ষুধার জ্বালা চালের হাঁড়ি শূণ্য,
    সমাজের কাছে তুচ্ছ আমি হইনা কভু গণ্য;
    ব্রাত্য হয়ে সকল কাজে অশুচির প্রাচীর তুলে থাকি,
    সকল সে পাপ তোমার দেওয়া ধারণ করেই বাঁচি;
    আমায় ছুঁয়ে শুদ্ধতা পাও এমন তোমার ধর্ম,
    পবিত্রতার ঋণের ভারে হও না যে আরও নম্র,
    কুলটা নাম সইছি হেলায় এমনই আমার কাজ,
    আমার ঘরের মাটি নিয়েই দুগ্গা মায়ের সাজ।

  • অণু কবিতা

    অণু কবিতা- জীর্ণ রক্ষা কবজ

    জীর্ণ রক্ষা কবজ
    – শুক্লা রায় চৌধুরী

    মখমলের ওই আসন পড়ে তোমার দম্ভ কিসের রাজন?
    জীর্ণ বর্মে যুদ্ধ আমার তোমার হয়েই রক্ত করি হরণ;
    কূটনীতিতে সিদ্ধ তুমি আমিই কেবল স্থূল,
    ঠিকের রাজ্যে শাসন তোমার আমিই কেবল ভুল;
    শীর্ষে যে ওই বিরাজ করো সুখ তো তোমার হস্তগত,
    রক্ষা কবজ হয়েও আমি রয়েছি তোমার পদানত।।

  • কবিতা

    কবিতা- আমার কথা

    আমার কথা
    -শুক্লা রায় চৌধুরী

     

    আজও পুড়ছি আমি ওই রাস্তারই পাশে,
    ছুঁড়ে ফেলা তোমার আধ খাওয়া সিগারেটের বেশে;
    কত শত বৃষ্টিও নেভাতে পারে না বুকের দহন,
    কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়া শোনায় গল্প শেষের সাত-কাহন;
    কোঁকড়ানো শরীরে এখনো একটু প্রাণের গন্ধ বাকি,
    তোমার আগুন শুধু খোঁজে আজ নতুন মোহের সাথী;
    স্বপ্ন ভাঙা অন্ধকারে করছি আমি বাস,
    এখন মৃত্যু চায় আমার প্রতিটি নিশ্বাস।।

  • কবিতা

    কবিতা- উদ্বাস্তু

    উদ্বাস্তু
    – শুক্লা রায় চৌধুরী

     

    স্থান বদলের অভ্যেস হলো না তো আর রপ্ত,
    লাট্টু সেজে পাক খেতে খেতে হলাম শুধুই জব্দ!
    আমার পুতুল বৌমা সাজে গেল সইয়ের ঘরে,
    ফাঁকা আকাশ তখন থেকেই ভিতরে বাস করে;
    মেয়েবেলার খেলার সাথী হারিয়ে গেল ভিড়ে,
    স্কুলের বেঞ্চে একলা বসে আঁকিবুকি পাতা জুড়ে;
    আলতা পেড়ে সাজের বাতি সলতের বুক জ্বালা,
    বাপের ঘরের অন্ধপ্রদীপ কেঁদে মরে একলা;
    সংসারের এই রঙ্গ-মঞ্চে ভুলের মাশুল ব্রাত্য,
    যাতার কলে পিষছি পড়ে হইনা তবু ক্লান্ত;
    ঠিকনাহীন চিঠিগুলি সব পড়ুক বেনামী ডাকে,
    পথ হারানো পথিক হয়েই ঘুরছি সময়ের বাঁকে;
    শেষ না হওয়া উলট পুরাণ বুনছি উপরন্তু,
    আগল ভাঙা ঝড়ের মাঝে হলাম উদ্বাস্তু।

  • কবিতা

    কবিতা- ভালোবাসা না উপেক্ষা

    ভালোবাসা না উপেক্ষা
    – শুক্লা রায় চৌধুরী

     

    তোমার ভুলের ঘরে বন্দি আমার একাকীত্ব;
    খুঁজে পেলে কি আদুরে সোহাগভরা নতুনত্ব?
    আমার মনের ছোঁয়াছুঁইরা আজ সব ছুটির দেশে,
    আকাশ ছুঁয়ে উড়ছো তুমি ‘তার’ স্বপ্ন-ভেলায় ভেসে;
    আমিও আর বাঁধিনি তোমায় আমার সেই গল্পে,
    ঘৃণার আগুন যতই লাগুক কষ্ট ভুলি না আর অল্পে;
    রপ্ত আমার উপেক্ষা যে তোমার থেকেই শেখা,
    ঘুম ভাঙা রাত জানান দিলো আজ বড্ড আমি একা।

  • কবিতা

    কবিতা- স্তব্ধ উড়ান

    স্তব্ধ উড়ান
    – শুক্লা

     

    মন পাখি ওই উড়ছে সাগর পারে,
    সিক্ত হলো ঢেউয়ের পরশ মেখে গায়ে;
    ঝাউ বনে সে নাচছে শাখে শাখে,
    হরিৎ হলো নবীন হওয়ার সাধে;
    গাইছে সে গান স্বাধীন হওয়ার আশায়,
    হঠাৎ চমকে দেখে বন্দী সে তার বাসায়;
    উলু ধ্বনি দেয় কারা উল্লাসে,
    শঙ্খ নিনাদ ভেসে আসে তার সাথে;
    ভঙ্গ হলো তার স্বপ্নের অঞ্চল,
    পড়বে সে আজ লাল সাদা শৃঙ্খল।।

You cannot copy content of this page