-
ঈশ্বর
ঈশ্বর
-সঙ্কর্ষণ ঘোষ
এ এক, চিরকালের ঘটনা।
বহু যুগ, বহু প্রজন্ম ধরে, এ কর্মকাণ্ডের… ;
সাক্ষী আমরা।
অদৃশ্য, তাঁর সুতোর টানে… বদলে যাচ্ছি আমরা,
নতুন রাগে বেজে উঠছে,
অন্য কোনো আবহসঙ্গীত… ।
মেঘের চাদরে মুখ ঢেকে সে অনবদ্য উপস্থাপনায়, আমরা কিছু খেলনা মাত্র।
এ পুতুলনাচের নেই কোনো ইতিকথা,
থেমে থাকবেনা এ মঞ্চ…,
কোনো নতুন-পুরোনোর আনাগোনায়।
তবু… ;তবু কিছু নগণ্য প্রাণ…
হিসেব পাল্টে দেবে সে প্রাজ্ঞ ঐন্দ্রজালিকের।
এ সময়ের চাকা জুড়ে জারি থাকবে তাঁর পূজা,
আস্তিকতার ঝিমঝিমে নেশায় বুঁদ হয়ে… ;
আমরা মাতিয়ে চলবো তাঁর খেলাঘর।
নায়ক হয়ে ওঠার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাতে,
বারবার ফিরতে চাইবো তাঁর ধরা’ধামে’…
আর ‘ধামা’ধরা যতো পুতুলের মাঝে…
তিনি চালিয়ে যাবেন, এক মুক্তমনার সন্ধান।
থেকে যাবেন সে যাদুকর…
এক অদেখা অজানা প্রণম্য শক্তি রূপে।
আমরা তাঁকে হাসিয়ে চলবো,বিরামহীন,রাত্রিদিন। -
রূপান্তর
রূপান্তর
-সঙ্কর্ষণ ঘোষ
একটা সে’রকম দিন আসবে,
রোজকার, চামড়া-পোড়ানো রোদ্দুরের থেকে
একটু আলাদাই একটা…
নিরুৎসাহী অপেক্ষার দিন।
যখন একটা ভাবনাও,
হৃদয়ের কোনো খবর নেবেনা
বিগত কয়েক বছরে পাঠানো চিঠির মতোন।
নতুন বিষয়ের অন্তঃস্থল বিদ্ধ করতে,
ফের একজোট হবেনা ফর্সা কাগজ, কালচে নিব।
কাব্যি করার বেয়াড়া মৌতাত,
হঠাৎই কেটে যাবে নতুন কোনো দুপুরে বাতিকে।
দম ফুরানো ঘড়ির অ্যালঝাইমার্সের ডাক্তারিতে,
দুম করেই রাইটার্স-ব্লকের ওষুধ খুঁজবো সেদিন।
প্রাক্তন প্রেমিকার উপহারের ওপর পুরু ধূলোতে,
শ্মশানযাত্রা আটকাতে মুখের ফেনা তুলে দেবে;
বহুপ্রশংসিত কবিসত্ত্বা… ।
সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে ন্যাকামির দিনে…
পোড়া ছাইয়ের গাদা থেকে ডানা মেলতে চাইবে,
বাস্তবের ফিনিক্স… ;
প্রকৃতি, প্রেমিকা, পুরাণে, পরাণে খুঁজে নিতে
এ ডিপ্রেশনের থাবা থেকে চিরমুক্তি।
বুঝে ওঠার আগেই কখন… ;
কবি থেকে আঁতেল হয়ে যাবো কে জানে -
পথনাটিকা
পথনাটিকা
-সঙ্কর্ষণ ঘোষ
ঐ শুরু হলো হাততালি… ;
শাবাশ কেয়াবাত এর বন্যায় ভেসে যাচ্ছে সব।
সত্যি অদ্ভুত কিছু ঘটেছে,
বড়ো অস্বাভাবিক ব্যাপার আর কী… ।
কিছু ছোটো ছোটো হাত, রশি টানছে
আমাদের কুচোগুলোরই সাথে… ;
হাহা হিহির মধ্যে হঠাৎ আওয়াজ উঠলো
“অ্যাই সাহিল, পাতাটা পড়ে যাবে তো; তোলনা।”
আশীর্বাদী স্পর্শে… ;ক্কচিৎ হাতে সুড়সুড় করছে ঝকঝকে ফেজ টুপিগুলো।
বুক ভরে উঠছে এক অজানা পৈশাচিক উল্লাসে,
হাসান-হোসেনের ব্যাটারা রথ টানছে বলে কথা।
রোজকার কাটাকাটির কালো ধোঁয়ায়,
বুক ভরে উঠছে টাটকা বাতাসে… ।
ক্যামেরার ক্লিকে ভরে ভরে ওঠে ফেসবুক…,
সেরা ছবি, সম্প্রীতির বার্তা নাম দিয়ে,
পুরোনো কাসুন্দি ঘেঁটে হাত নোংরা করি আমরা।
কবিতা, গল্প, প্রতিবেদনের মোটা অক্ষরে,
চোখ ঠিকরে আসে আমাদের সকালে।
কোনোদিনও মনে হয়না, এটাই তো হওয়ার কথা।
আল্লা-রামের লড়াইতে, ছোট্ট হরফে
ওদের মিষ্টি বিলানোর গল্পগুলো…
বাদ পড়তে থাকে বিরামহীন।
কলম কেঁদে ওঠে, “ক্ষমা করো প্রভু”… ।
রথের চাকার গড়গড়ানিতে,
জগতের নাথ বার্তা ছড়ান, “আল্লা হো আকবর। -
উল্টোরথ
উল্টোরথ
-সঙ্কর্ষণ ঘোষআবার, আবারও চলে যাচ্ছে রথ ;
পথে ইতিউতি আল্পনা এঁকে… ।
প্রতিটা বছরের মতোন, সেই চেনা ছবিটাই
ফিরে ফিরে আসে… ;
হাসি হাসি ছোটোবেলার হাতগুলো ছুঁয়ে,
এক-দো’তলা, ছোটো-বড়ো আকার নিয়ে।
চাকার ঘষায় পুণ্য ছিটে এসে লাগে,
বৃষ্টিভেজা রাস্তায় নোংরা কাদাজলের মতোন…
উঠতেই চায়না মোটে।
অকারণেই যেন কারা…
গলায় রশি বেঁধে ছুটে বেড়ায়,
রথের ঠিক পেছনে…
হয়তো একবার হাতকাটা ঠাকুরের;
হাতটা ধরার ইচ্ছেয়।
ধূপ, ফুলপাতা, সন্দেশের ভীড়ে কখন…
আড়াল হয়ে যান, রাস্তাজোড়া অসংখ্য দারুব্রহ্ম।
“ও দিদি, ও কাকু…
আমার রথ সাজানো দেখো”-র মাঝে
পুরোনো রথ সাজাবার ইচ্ছেডানাগুলো… ;
চোখ মোছে কখন, খবর রাখার সময় কই?
জিলিপি, পাঁপড়ের ঢেঁকুরে; নিঃশব্দে
মুচকি হাসে খালিপেট।
ছোঁড়া ফুলের উল্লাসে, কারা চীৎকার করে ওঠে
-“জয় জগন্নাথ”