-
মুখে স্বাধীন আমারা
মুখে স্বাধীন আমারা
-সানজিদা শোভাআমরা নাকি স্বাধীন বাঙ্গালী…
হাক পাকিয়ে বলে ফিরি…
ঐ যে খালা ফুটপাতে থাকে তাহার কাছে জানতে চাইলুম স্বাধীনতার মানে..
বললেন তিনি সে আবার কি?নুন আন্তে মোর পান্তা ফুরায়..
ভাতের জন্য থালা পাতলে দূরছাই করে বেরায়…
ওসব এর মানে আমি জানিনা
আমার কাছে স্বাধীনতা বলে কিছুই হয়না,
দু’মুঠো ভাত আর মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলেই হলো।ঐ পার্কে ছোট্ট খুকি,
খুকি বললে ভুল হবে
পা দিয়েছে ১৪ কিংবা ১৫ হবে…
জানতে চাইলাম তাহার কাছে,
সুধালো সে..
রোজ থাকি ভয়ে ভয়ে..
একে বুঝি স্বাধীনতা বলে?
উল্টে প্রশ্ন ছুঁড়লো আমার পানে।বড়লোকের ছেলে মেয়ের কাছে শুধালুম স্বাধীনতার মানে…
উত্তর শুনে বোকা বনে।
তাদের কাছে স্বাধীনতা মানে,মার্চ মাসের ঐ পাঁচ-দশ টাকার পতাকা কিনে দেশের নাম গেয়ে ফেরা…
পতাকার রঙ্গে রঙ মিশিয়ে শাড়ী পড়া,
হট্টগোল আর আড্ডাবাজী।রাজনৈতিক নেতার কাছে প্রশ্নটা আর নাইবা করলাম
তাহারাই তো দেশটা বেঁচে ফিরে লাঠে তোলে…
স্বাধীনতা বলে কিছুই নেই, আসলে আমরা সবাই মুখে স্বাধীন…
অন্তরে বাঁধা পরাধীনতার শিকল আর লৌহ তালা। -
তোমার নতুন তুমি কেমন?
তোমার নতুন তুমি কেমন?
-সানজিদা শোভাতোমার কাছে ফিরতে চাইলেও আর ফেরা হয় না,
বাগান বাড়ীর পিছনের সিঁড়ির সব চেয়ে গোপন সিঁড়িতে অগোচরে তোমায় নিয়ে বসা হয়না।বইয়ের ভাঁজে চিঠিগুলো পড়া হয়না,
কিংবা খুব যতনে তোমার চিঠি লিখিনা।
লিখবো কি করে আমি এখন আর ছন্দ জানিনা,
চিঠির বাক্সের ঠিকানাটা যে আজ আমার অজানা।অথচ,
এই ঠিকানা একদিন আমার খুব চেনা ছিলো,
ঐ ঠিকানায় আমার ঘর হবার ছিলো।
স্বপ্ন ছিলো গুটিগুটি,
একখানা ঐ তারার জুটি
রৌদ্র মেঘের ছোটাছুটি।হঠাৎ করে তোমায় দেখে মনে পড়লো সেসব দিনের কথা,
না পাওয়ার ঐ ব্যথা।তুমিও কি ভাবো আমার কথা..!
নাকি তোমার পায়েও আমার মত আস্ত শিকল বাঁধা?
শিকলগুলো কি আমার মত খুব ব্যথা দেয়…
যখন তখন কেঁদে ভাসায়?আচ্ছা তোমার নতুন তুমি কি আমার মতন…
খামখেয়ালী একরোখা ঐ বদমেজাজি?
যখন তখন তোমায় নিয়ে বায়না জুড়ে দেয়,আচ্ছা তোমার নতুন তুমি গান শোনে তোমার গলায়..
আমার মত ঝাপটে ধরে তোমায় আদর করে,
সেও কি আমার মত যখন তখন সাজতে বসে
তোমার প্রিয় শাড়ীতে প্রিয় ফুলে গন্ধ মাখে?আচ্ছা তুমি কি সেই আগের মতই আছো,
আমার প্রিয় রঙটা আজো ভালোবাসো!
গন্ধ মাখো বকুল ফুলের
তার চুলে কি মালা পড়াও তোমার ফুরফুরে মেজাজ থাকে যখন!আচ্ছা তোমার নতুন তুমি কেমন…
খুব ভালো কি সে,
তোমার জন্য রান্না করে..
মিষ্টি কথায় মন ভুলায় কি সে
রক্ত জবা ঠোঁটে মাখে?
আমার পায়ে শিকলের বাঁধন….আচ্ছা তোমার নতুন তুমি কেমন,
সেও কি তোমায় ভালোবাসে আমার মতন? -
প্রিয়তা
প্রিয়তা
-সানজিদা শোভাপ্রিয়তা নাম বেশ সুন্দর,
কেমন একটা প্রেম প্রেম ভাব
বিশ্লেষণ হবে হয়তো বিশাল!
তোমার নামে একটা প্রিয় প্রিয় গন্ধ,
আমার নাকের ডগা থেকে শুরু করে সর্ব দেহ মোহিত করে
হয়তো তুমি আমায় সম্মোহন করে রেখেছোনয়তো তোমার নামটাই সর্বক্ষন আমায় কেন গ্রাস করে বলতো?
প্রিয়তা বেশ মায়াময় নাম তোমার,
মনের মধ্যে নামটা বেজে উঠলেই আমি ছন্নছাড়া হয়ে যাই…
আমার কিচ্ছু ভালো লাগেনা।
ধ্যানে জ্ঞানে কর্মে কেবল তুমি আর তুমিময়,,,
প্রিয়তা এ কেমন অনুভব?এ কেমন চাওয়া…
আমি জানিনে প্রিয়তা…
আমি কিচ্ছু জানিনে!আচ্ছা প্রিয়তা, তুমি কি জানো আমার কেন এমন হয়!
কেন তোমাকে পাবার বাসনায় আমার মস্তিস্কের সমস্তটা উন্মাদ হয়ে থাকে সর্বক্ষণ?
আমি কিচ্ছু জানিনে,
এ কেমন মায়া, এ কেমন চাওয়া? -
দূরত্ব তবুও ভালোবাসি
দূরত্ব তবুও ভালোবাসি
-সানজিদা শোভাভালোবাসি সকাল সাঝে, রাত্রিদুপুর…
দুরে থাকি তবু মুখের হাসি ফুটিয়ে রাখি,
দূরে থাকলেই কি বলো ভালোবাসা মুছে যায়?
ভালোবাসা তো লেগে থাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে হৃদয়ের আঙ্গিনায়।তোমায় নিয়ে ভাবুক মনে স্বপ্ন দেখি,
চোখের পাতায় কাজল আঁকি…
তোমার দূরত্বে দুচোখের কাজল নোনা জলে লেপ্টে ফেলি…
সব ভুলে আবার আমি সাজতে বসি।গোধূলীর লগ্নে দীগন্তের পাখিরা যখন নীড়ে ফেরে আমি তোমার ফেরার অপেক্ষা করে
ক্লান্ত মনে ঘরের দোর দিয়ে ছন্নছাড়া হয়ে বসে পড়ি,
তবুও তোমায় অনেকখানি ভালোবাসি।এই দূরত্বে কখনো ফিকে পড়েনি তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার হাসি।
তোমায় বড্ড ভালোবাসি। -
বসন্ত
বসন্ত
-সানজিদা শোভাতোমকে ছুঁইবে বলে বসন্ত ছুঁয়েছে মন,
শীতকে বিদায় জানিয়ে, জানায় বসন্ত উষ্ণ আহ্বান।
রঙে রঙে মিলে মিশে ফুলেদের মৌ মৌ গান…
বসন্তে এসে গেছে ককিল করিবে কলতান।নদীর পাড়ে বসেছে প্রেমিক প্রেমিকার হাট..
ফুলের দোকানে ফুলের সমারহ, গায় বসন্তের গান।প্রিয় তোমায় জানাই আহ্বান..
চলো মিলে মিশে গাই প্রেমেরও গান,
বিরহ মিলনো সুখে রহিবো মিলিয়ে গলেতে বাঁধিয়া গান।বসন্তের উৎসবে মাতিবো রঙে রঙে,
ফুলের ঢলে বাঁধিবো খোঁপা,
হৃদয়ও বাধিবো হৃদয়ও তারে।শাড়ীর আঁচলে প্রেমের গল্প বুনিবো বসন্তের ফুলে ফুলে,
তোমার চরণ ছুইবো আমার নতুন দিনের শুরুতে।
তুমি প্রেমও ভুবন আমার তোমারে ছুঁয়ে যাক আমার সকল বসন্তের সুখ… -
থাকবেনা একদিন জীবন পটের স্মৃতি
থাকবেনা একদিন জীবন পটের স্মৃতি
-সানজিদা শোভাএকদিন হুট করে নিভে যাবে জীবন প্রদীপ,
সকালের রৌদ্রময় লাবন্যময় আলোর ছটায় সিক্ত হওয়া হবে না আর…
হবেনা ভোর হতেই মৃদ্রু পায়ে হেটে হেটে ভোরের স্নিগ্ধ বাতাসে মুগ্ধ হওয়া,
হবেনা দুপুরবেলা গা এলিয়ে এলোপাথাড়ি বিছানায় শুয়ে
গোটা কয়েক ডায়রি নিয়ে জীবন কাব্য লিখতে বসা,
মায়ের বকুনি গুলো একদিন অধরা হয়ে যাবে
নিজেকে শুধরে নেবার সময়টুকু হারিয়ে ফেলবো কোন একসময়,
কিংবা বিকেলের আলসেমি ছেড়ে হাটতে হাটতে নদীর পাড়ে গিয়ে মুখরিত হবোনা কখনো।
সন্ধ্যার আকাশে তারা গোনা হবেনা আর…
হবেনা রাতের পর রাত একলা চাঁদের সাথে মিতালী করতে..
ফুরিয়ে যাবে একদিন জীবনের সব চাওয়া পাওয়া…
থাকবেনা কোন বিষাদের গানের পালা,
এ যে জীবনের শেষ কাঁথা। -
সর্ব উৎকৃষ্ট মাতৃপ্রেম
সর্ব উৎকৃষ্ট মাতৃপ্রেম
-সানজিদা শোভামাতৃপ্রেম এর চেয়ে উৎকৃষ্ট কোন প্রেম নেই এ ধরায়,
মাতৃপ্রেম ভালোবাসার বিনিময় কোন প্রতিদান চায় না,
চায় শুধু তার বুকের ধনের মুখে হাসি তাহার খুশি।
মা তো শুধু ব্যাথাই বইতে পারে নিশব্দে…
যখন মা প্রথম অনুভব করে আমি তার কোলে আসছিআলো হয়ে সে যে কি খুশি মায়ের
তখন থেকেই মাকে জ্বালাই,
মা কিচ্ছু খেতে পারেনা…
এপাশ ওপাশ করেও মা ঠিক মত ঘুমতে পারেনা,
পেটের মধ্য আমি লাথ মারি খেলায় মাতিমা ব্যাথা পায় তাও মা কিচ্ছু বলেনা,
আমার সাথে কথা বলে,গান শুনায়এটা ওটা খাবার বায়না ধরি মা কষ্ট হলে এনে দেয়
না দিতে পারলে দুচোখ ভাসায়,
যখন আমি ভূমিষ্ঠ হলাম,মাকে পাজর ভাঙ্গা কষ্ট দিলাম..
মা তাও আমায় কিছুই বললো না, হাসি দিয়ে বুকে টেনে নিলো,
এ নাকি তার স্বর্গ সুখ,জীবনের পরম প্রাপ্তি..
মায়েরা এমন কেন হয়?
রাতে পর রাত মাকে জাগানো শুরু হলো আমার,
মা নিঘুম কাটালো রাতের পর,
আমায় হাত ধরে হাটা শিখালো,মুখের বুলি শিখালো
এটা সেটা বায়না পুরন করলো…
আমার কত শত জ্বালাতন সয্য করে তাও মা আমায় কিছুই বলেনা…
মায়েরা এমন কেনো হয়?
ভালোবাসি মা ভীষণ ভালোবাসি তোমায়…
উৎসর্গ মা তোমায় আমার সকল ভালোবাসা। -
কোথায় এতো ভালোবাসা
কোথায় এতো ভালোবাসা
– সানজিদা শোভাআজকাল এই যে এত ভালোবাসার সমাহার,
কোথায় এতো ভালোবাসা বলোতো?
কোথাও কি আছে ভালোবাসা…
কোথাও নেই।
নেই চায়ের কাপে, নেই হাতের মুঠো..
দেয়না কেউ কদমের গুচ্ছ।
খোপাতে ফুল পড়েনা শখের বসে, হাতেতে বাজেনা চুড়ি প্রিয়জনের তরে,
কয় না কথা কেউ হেসেখেলে সবাই যে যার মত মান-অভিমান নিয়ে বসে থাকে।
অভিযোগ পাহাড় সমান, মিথ্যে যেন আকাশ ভরা…
হাতগুলো তারার মেলা,
কোনটা ছেড়ে কোনটা যে নেয় পায়না ভেবে…
কোথায় এতো ভালোবাসা,
সব কিছুতে নাটক ভরা…
হৃদয় ভরা লালসাতে…
ভালোবাসা ভরাট বুকে, গভীর তটে..
দেহের কাছে দেহের ছোয়া কেবল।
ভালোবাসা আজ দাড়িয়ে নাকি যৌবনের ঐ তাড়নাতে,
কোথায় এতো ভালোবাসা পাও খুঁজে পাও তোমারা সবাই!
সবগুলো ঐ লোক দেখানো নাট্যমঞ্চের নাটক রচানো,
সবই কেবল লালসা।
তবে ভাগ্যবান – ভাগ্যবতী তো তারা যারা রয়েছে এই লালসা থেকে বহু দূরে….
পবিত্রতায় ঘেরা। -
কন্যা তোর ভাগ্য নেইরে
কন্যা তোর ভাগ্য নেইরে
-সানজিদা শোভারূপ আর গুণ থাকিলেই সুখী হওয়া যায়নে কন্যা,
ভাগ্য থাকা লাগেরে ভাগ্য।দালানকোঠা, জায়গা -জমি,গাড়ী, সোনাদানা, থর ভরতি কাপড় থাকলেও সুখী হওয়া যায়নে কন্যা,
ভাগ্য লাগে ভাগ্য।সব আছে তোর এ-কুল ও-কুল দুই কুলই তোর আছে
তবে সুখ নামের ঐ অচিন পাখি দূরঅজানায় বদ্ধ।
তোর চেষ্টা আছে ধৈর্য আছে,
নেই যে তোর ভাগ্য কন্যা।ভাগ্য লাগেরে ভাগ্য
তোর নয়ন ভরা কাজল আছে চক্ষু ভরা জল আছে
বুকের মধ্যে হাহাকার আছে,
বেদনার গান আছে
মস্তিস্ক জুড়ে কাব্য আছে,
কোল জুড়ে নক্ষত্র আছে,
তোর দীঘল কালো চুল আছে, তোর খানিকটা রূপ আছে
তুই নাচতে জানিস,তুই দুঃখু নিয়ে হাসতে জানিস
তুই রঙ তুলির রঙ দিয়ে আলপনা আঁকতে জানিস..
তুই রাঁধতে জানিস চুল বাঁধতে জানিস..ঘর কন্যার সবি পারিস।
তুই অপমান,অবহেলা অকারণে নিন্দা যত সব মুখ বুজে সইতে জানিস,
তুই আপন লোকের দেয়া যন্ত্রনা ভুলতে জানিস..
আর কি চাই তোর?এই তো ঢের পাওনারে তোর সুখী হতে ভাগ্য লাগেরে কন্যা….
যা তোর নেই,,
তা নিয়ে কেনো এত হাহাকার করে মরিস? -
অন্দরমহলের চারুলতা
অন্দরমহলের চারুলতা
-সানজিদা শোভাঅন্দরমহলে যে চারুলতার বাস…
তার চারপাশটা বিষণ্ণতা প্রকষ্ঠের বেরাজালে ঘেরা..
সে এক বিষন্নময়ী…
চঞ্চলা হরিনীর ন্যায় ছিলো তাহার কৈশোরকাল..
দাপিয়ে বেরোতো পুরো পাড়া।
চারুলতার সুলভ ছিলো সত্যতায় পরিপূর্ণ,
লেখাপড়ায় বেশ পটু…
মেয়ে মানুষ বলে কথা,
সমাজের অন্দরমহলে তাহারা বন্দিনী..
চঞ্চলতা স্বভাবে থাকলেও
তাহাদের লাল শাড়ীর শিকল বেঁধে দেয়া হয়।
চারুলতাও প্রকৃতির নিয়মে যৌবনে পা রাখলো একদিন!
তাকেও বেঁধে দেয়া হলো অন্দর মহলের লাল শিকলে..
এখন তার জীবন ঐ চারটি দেয়াল আর কিছু সংখ্যক লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ..
বাহিরে না বেরনোর করা নির্দেশ ..
বাপের বাড়ী যাইবারও তাহার নেই অনুমতি,
পন দিয়া কিনিয়া লইয়াছেন যে তারে তাহার স্বামী।
সে এখন আর চঞ্চলা হরিনী নয়..
এখন সে এক অন্দরমমহলের বন্দিনী…
যার চারপাশটা বিষন্নতার মরুভুমি।