-
মোহন প্রেম
মোহন প্রেম
-সুচিত্রা চক্রবর্তীঅনেক হয়েছে
এবার এসো তো মনচোরা
দু’জনে একখানে বসি,
বেদনার ভাঁজ খুলি, কোথায় কতটা পুড়েছে দেখি।
খুলে রাখ দুঃখ বেদনা, গোপন অসুখ
আমি ভালোবেসে মুছে দেবো দাগ,
এসো, বুকের ক্ষতগুলো একে একে ভরে নেই দু’জনে,
পৃথিবীর যাবতীয় যত কাছ বাকি থাক আজ
আমি ছুটে এসেছি শুধু তোমার কাছে,
তোমার হবো বলে তোমাকে নতুন করে পাবো বলে।
ফাগুন চলে গেছে তো কি হয়েছে?
হৃদয়ে আগুন তো রয়ে গেছে।
তুমিই তো আমার ষড়ঋতু প্রেম।
তুমি ডাকলে মরা নদীতেও জোয়ার আসে
তুমি চোখ ফেরালে খরায় পুড়ে যায় সমস্ত ভুবন।আমি মৃত্তিকা, তুমি মাতৃদুগ্ধ হও
মুগ্ধতায় মুড়ে দাও শূন্য এই বসুন্ধরা।
মৃত্যু লিখি আমি তোমার বুকের পাঁজরেতুমি দূরন্ত রৌদ্দুর হয়ে এসো
সমুদ্রের আগ্রাসী ঢেউ নিয়ে এসো
তোমার সমস্ত বিষ দিয়ে যাও আমায়
কালকেউটের দংশনে মৃত্যু রচনা করো তুমি।
মরে গিয়ে বেঁচে যাই আমি অমৃত বিষপানে
তারপর বাতাসে ছড়িয়ে দেই সুরভিত মুগ্ধতা,
মধুর কানাকানি।
আর আশ্রিত কষ্টগুলো শেকড় হয়ে বাঁচুক
তুমি নামক বটবৃক্ষে।
প্রিয় এসো,
বিদায়ী বসন্তে আরেকটা ফাল্গুন লিখো তুমি।
সাতরঙা ভালোবাসায় ভর্তি নৌকোটার অপেক্ষা কেবল “মোহন” তুমি। -
ঝরা পাতা
ঝরা পাতা
-সুচিত্রা চক্রবর্তীযদি চলে যাই দূরে বহুদূরে
না ফেরার দেশকে ভালোবেসে
ফিরে আসি অথবা না আসি
তবু জেনে রাখো ভালোবাসি।
আপন হতে যারে করেছো পর,
অবহেলায় যারে দিয়েছো ভাসিয়ে
বসন্তের দিনগুলো যদি কাঁদায় কখনো,
ঘুম ভেঙ্গে যদি দেখো আমি পাশে নেই
অথবা খালি পরে আছে আমার সাধের
কবিতা বাড়ি, বাগিচায় থরে থরে ফুটে
আছে ফুল, বেলীর সুবাসে মাতিয়ে যায় দুকূল
যদি খুঁজে দেখো আমি নেই অথচ ছিলাম একদিন,
তোমার না চাওয়ার পাশে বসে আছি আমি
আজ ইচ্ছেরা নিতান্তই অসহায়।
তবুও বলে যাই শেষ দিনে শেষ বসন্তে
আমার কবিতায় তুমি বাস করেছো
ভালোবাসি বলে একান্তে অবলীলায়।
আজ যদি ফুরিয়ে যায় ভালোবাসা
যদি ভালোবাসো “হেমন্তকে ”
তবে মনে রেখো আমি মিশে আছি
পাতা ঝরার দিনে বিষন্ন বিকেলে
এক টুকরো আগুন ভালোবাসা হয়ে। -
শিরোনামহীন
শিরোনামহীন
-সুচিত্রা চক্রবর্তীঅথচ আয়না ভেঙ্গে চুরচুর তবুও স্পষ্ট
দেখা যায় তাতে তোর সোনামুখ!
আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত এ’বুক
খন্ডিত দেহের প্রতিটি অংশ আর,
উষ্ণ রক্তের প্রতিটি ফোঁটা বলছে তোর কথা!
দরজা জানালা বন্ধ গুমোট আঁধারে আমার বাস
স্বপ্ন দেখার দু’চোখ শুধু জেগে,
জড়তা ভর করেছে শরীরে!
নিষ্ঠুর পাষানে বেঁধেছি বুক,
যন্ত্রণার মুখে কাপড় গুঁজেছি শুনবেনা কেউ
কাকে দেখায় বলতো?
আকন্ঠ গিলছি তিরস্কারের বিষ
বেদনার বালুচরে বেঁধেছি ঘর!
মনে নেই কারোর আজ আমার পরিচয়
প্রয়োজনের মাদুরে নামে লিখে গেছে
কেউ আমি তার আজন্মের জন্য পর,
ক্ষতি নেই একবিন্দুও আমার হাড় মাংস রক্তে
যদি জীবন ফিরে আসে অন্য কারোর! -
স্বীকৃতিপত্র
স্বীকৃতিপত্র
-সুচিত্রা চক্রবর্তীহাতের তালুতে ভাগ্য রেখায় ভাঁজ পরা কপালে,
রিনিঝিনি চুড়িতে, রুনঝুন নূপুরে কোথাও নেই,
তুমি শুধু নিঃশব্দে বুকের খাঁচায়, শিরায় উপশিরায়,গোপন ইচ্ছায় অকারণে ভেসে যাওয়ায়,
অবাধ্য খোলাচুলে অগোছালো বর্ণমালায় ,
ডাক নামে কবিতার খাতায় লাল শাড়িতে ফুলের গহনাতে,
আঙুলের ডগায় টুপটাপ ঝরে পড়া নোনা ভালোবাসায় ;
স্মৃতির দেওয়ালে,কন্ঠের ভিটায়, মন খারাপির
আরশিটায়, অদম্য ভালোলাগায়, হাসনাহেনার
সুবাসে,ঝুকে আসা চাঁদের আলোয়, নুয়ে পরা মাধবীলতায়,আগুনলাগা ফাগুনে স্পর্শহীন ভালোবাসা মুগ্ধতায় ভরপুর আবেগী ভাষা।
আমাদের নিজস্ব কিছু নেই, যা আছে আর-
যা থাকবে সব কবিতায়, ছোঁয়াছুঁয়ির গল্প নেই,
দেয়ানেয়া নেই,রাগ অনুরাগ আছে, আবদারি
বায়না আছে, আঙুলে প্রেম আছে,কষ্ট পেলে তুমি আছো পাশে মাথায় ছাউনি আছে এমন কিছু বিশ্বাসে ভালোবাসা বেঁচে আছে।
আমাদের প্রচুর তৃষ্ণা আছে কিন্তু জল নেই,
আদূরে ডাক আছে আধো আধো বোল আছে;
হাতের উপর হাত আছে কিন্তু একসাথে চলার
অঙ্গীকার নেই, মাঝে মাঝে দুজনেই স্বার্থপর
পর্দায় আড়াল, কারণ কপালে লালটিপ নেই,
শুদ্ধ অনেক কিছুই আছে অশুদ্ধ লিখি চিঠিগুলো, অসাবধানী কথা যত কবিতায়,
এছাড়া আমাদের আর কিছুই নেই,তুমি অভিমানে বলেছিলে পাত্তা দেইনাতাই আজ স্বীকৃতি দিলাম ভালোবাসি প্রত্যয়ে আরো গভীরে বেঁধে নিলাম।
-
লেনদেন
লেনদেন
-সুচিত্রা চক্রবর্তীপ্রথম যখন নিরুদ্দেশ হলে,
তখন একটা ভাঙ্গা আয়না দিয়েছিলে,
তোলপাড় করা একটা সমুদ্র দিয়েছিলে,
একটুকরো কয়লা দিয়েছিলে
সেগুলো তবুও ভালো ছিলো।
কয়লাটা জ্বালাতো, সমুদ্র ভাসাতো
ডুবাতো না কিন্তু,আয়নাটা তোমার কথা বলতো।
এবার তুমি একটা ঘূর্ণিঝড় দিলে,
একটা ভাঙ্গা চিরুনি দিলে,
কবিতার সংসার ধূলোয় গড়াগড়ি,
এবারের ঘূর্ণিটা আমাকে বিভ্রান্ত করে,
দাঁতভাঙ্গা চিরুনিটা প্রতিক্ষণ রক্তাক্ত করে
কবিতার শরীর হৃদপিন্ড আহাজারি করে
কেউ শুনেনা,শুধু আমি শুনি মুখ বন্ধ করে দেই।
যাওয়ার আগে কয়েকগজ অজুহাতের ফিতে দিলে, ওগুলোতে হাত পা চোখ বেঁধে দিলে,
সান্তনার একটা চাদর দিলে,প্রতিবারের মতো
মিথ্যে কিছু আশ্বাসী বর্ণমালা দিলে,প্রতিশ্রুতির ফুলদানিতে প্রবঞ্চনার ফুল গুঁজে দিলে,
সবশেষে তুমি ধর্মকর্মে ব্যস্ত কিম্বা তীর্থ ভ্রমণে
গেলে, সে যাও ভালো কথা, ভালবেসে কেউ-
যদি মরে যায় অকারণে তাতে তোমার কি?
এতটুকু আসে যাওয়ার দরকার কি?
ভালবেসে তিলে তিলে মরে যাওয়া,
কজন পারে বলো? -
মনের জানালা
মনের জানালা
-সুচিত্রা চক্রবর্তীজানো স্মৃতির জানালা খুলে গেছে বসন্তের পঞ্চমীতেই,
আগুনজ্বলা ফাগুন যখন হাতছানি দিয়ে ডাকে,
তুমি ঢুকে যাও গোপনে মনের ঘরে,
নিশ্বাসে সতেজ হয়ে ওঠে কামিনী,
সুবাস ছড়িয়ে পড়ে বুকের আনাচে -কানাচে তোমার নিবিড় ছোঁয়া টের পাই।
তোমার জ্বালিয়ে দেওয়া মশাল,আর তোমার পড়ানো শব্দ নূপুর আজো রিনিঝিনি বাজে,
তুমি কান পাতলেই শুনতে পাবে,দু’বাহুর বন্ধনে পড়ানো মালা হৃদয় ছুঁয়ে বাড়িয়ে যায় জ্বালা।
কেনো এলে এতো অবেলায়,গোছানো আলনা,আলমারি এলোমেলো হয়ে যাই কাছাকাছি বসলেই।
জানো গহনার বাক্স খালি,আদল ছুঁয়ে বিষাদের জল ঝরে,মেঘলা মনে অকারণে বৃষ্টি নামে,
আমার মন খারাপের নৌকো একলাই শুধু নির্জনে বসে আপনমনে চলে খেয়ালী আলাপন।
ফুলেরা দল মেলে আকাশ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে উজালা ছড়িয়ে পরে সবখানে তুমি কাছে এলেই,
তুমি বোঝো সব তবুও কেনো এমন?
আমার আপাদমস্তক জুড়ে আছো,বাঁশির সুরের সাধনায় আমার ব্রত, তুমি জানো না?
টুনটুনির কতোটা আপন?সুচিত্রা চক্রবর্তী