• কবিতা

    কবিতা- নিজেকে খুঁজতে রৌদ্রস্নান

    নিজেকে খুঁজতে রৌদ্রস্নান
    -সুজাতা দাস

     

     

    তখনও রাত্রিটা, এক আকাশ স্বপ্ন দেখেছিল।
    আমি দেখেছিলাম, ফাল্গুনি বাতাস–
    চেয়েছিলাম ভোরের আকাশ, আর একটু, রৌদ্রস্নান।
    তারপর…
    একমুঠো রোদ্দুর খুঁজেছিলাম,
    চেয়েছিলাম একটা ভাতঘুম, আর একটু অলসতা,
    কিন্তু, সব চাওয়া কি পূর্ণতা পায়!!
    না পাওয়ারা, আবেশে হারায়…
    তবু পেতে ইচ্ছে করে, অবগাহনের উৎসকে।
    তারপর…
    আবার হারিয়ে যাওয়া, এক আকাশ শূন্যতায়,
    চেয়েছিলাম তো, এক পূর্ণ জ্ঞান অসমাপ্তির।
    কিন্তু, হারানো কথার সাম্রাজ্যে,
    যার পুরোটাই অপাংক্তেয় ছিল-
    তবুও পূর্ণতা ফিরে এলো, ফিরে এলো ফাল্গুনি বাতাস।
    তারপর…
    ফিরে এসেছিল, সেই রাত্রিটা, যে এক আকাশ শূন্যতার মাঝেও, স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিল…
    শুরু করেছিল, স্বপ্ন দেখতে নতুন ভাবে।
    শুধু নিজেকেই খুঁজতে।।

  • গল্প

    গল্প- মুক্তি

    মুক্তি
    -সুজাতা দাস

     

     

    যেই স্বপ্ন মনে মনে দেখে আরাধ্যা, তা যে পূরণ হবার নয় সেটা নিজেও বোঝে। তাই মাঝে মাঝে নিজের গলা নিজেই টিপে ধরে আরাধ্যা।
    যাতে কোনও স্বপ্ন আর না রাখতে পারে সে তার মনের মাঝে, কোনও স্বপ্ন না; কিছুই না। কিন্তু স্বপ্নগুলো কিছুতেই বুঝতে চায় না, কিছু মানুষের যে স্বপ্ন দেখতেও মানা! এটা কি ভাবে বোঝাবে তার স্বপ্নদের আরাধ্যা!
    জীবনের প্রতিকূলতাকে ভেঙে এগিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়ে মাঝ মাঝেই সেইসব মানুষগুলোর ক্ষেত্রে, যারা স্বপ্ন দেখে কিন্তু স্বপ্ন দেখা বারণ তাদের জন্য। তবুও স্বপ্নেরা নিঃশব্দে আসে, এসে ভীড় করে মনের মধ্যে, যখনই একা একা থাকে আরাধ্যা।

    একা থাকতে চায় না কখনও আরাধ্যা, কিন্তু যখনি মানব অফিসের কাজে বেরিয়ে যায় কয়েক দিনের জন্য অফিস ট্যুরে, তখনই এইসব স্বপ্নগুলো ভীড় করে আরাধ্যার একাকিত্বের সুযোগে।
    এমন তো ছিল না তার জগৎ, সব কিছু খুব সুন্দর ভাবেই শুরু হয়ে এগিয়ে ছিল।কিন্তু হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করলো আরাধ্যা, মানবের মনের কোথাও জায়গা নেই তার। সেখানে রয়েছে অন্য কারো অবস্থান।
    যেদিন বুঝতে পারলো প্রথম আরাধ্যা নিজে এই কথাটা, সেদিন নিজের ভেতরটাকে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে যেতে দেখেছিল সেসময়।কিন্তু একবারের জন্যও বুঝতে দেয়নি মানবকে।

    নিজের হাতে সাজানো পুরো সংসারটাকে আবার নতুন করে সাজাতে শুরু করেছিল সে, মিথ্যার তাসের ঘর জেনেও। কারণ সময় কাটতে চাইতো না তার, যখন মানব অফিসের কাজে বাইরে যেতো কয়েকদিনের জন্য তাকে একা রেখে, মিথ্যা সংসারটাকেই আরাধ্যা সেই সময় নিজের করে বুকে আগলে রাখতো। জীবনের পাওয়া আর না পাওয়ার হিসাব মেলানো যে খুবই কঠিন, তত দিনে বুঝতে পেরেছিল আরাধ্যা।
    তাই জীবনটাকে নতুন করে সাজানোর কথা ভাবতে শুরু করে দিল আরাধ্যা একদম নিশ্চুপে মানবের অগোচরে। কারণ আরাধ্যা এভাবে একজন হেরে যাওয়া মানুষ হিসেবে নিজেকে কখনোই দেখতে চায় নি। তাই মানবের আড়ালে আবার নিজের মতো করে শুরু করলো লেখাপড়া, নিজেকে নতুন করে তৈরি করা যা সে হতে চেয়েছিল।
    কয়েক বছরের অনভ্যাস সত্ত্বেও কঠোর পরিশ্রমের ফলে একদিন হেরে যাওয়া নিজেকে দেখলো। জিতে গেল আরাধ্যা চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে। একদিন স্কুলের চাকরিটা পেয়ে গেল হঠাৎ করেই আরাধ্যা, মালদার একটা স্কুলে এপয়েন্টমেন্ট লেটারটা আসার পর প্রথম দু’টো দিন সময় কেটেছে মানবকে কিভাবে বলবে আরাধ্যা এটা ভেবেই, তারপরের দুদিন টিকিট ও আনুষঙ্গিক টুকিটাকি কেনাকাটা করতেই চলে গেল।

    হাতে আর মাত্র দু’দিন এটা ভেবেই appointment letter-টা হাতে নিয়ে ঢুকলো মানবের ঘরে। অনেকদিন বাদে এই ঘরটায় ঢুকে দেখলো দরজার দিকে পেছন ফিরে ইজিচেয়ারে বসে আছে মানব। মাত্র তিন বছর হলো বিয়ে হয়েছে ওদের, কিন্তু মনের অনেক গভীরেও যে এই সম্পর্কের অনু মাত্র আর অবশিষ্ট নেই এটা বুঝতে পেরেছিল বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই আরাধ্যা। সম্পর্কের গভীরতা টিকে থাকে বিশ্বাস এর উপর, ঐ শব্দটিই যদি.. ভাবছিল মনে মনে আরাধ্যা।
    অনেক সুসম্পর্কের দিন কেটেছে এই ঘরে সেগুলো মনে পড়তে থাকলো আরাধ্যার না ভাবতে চেয়েও, চোখের কোনটা কি ভিজে যাচ্ছে আরাধ্যার! একটু হাসল মনে মনে এখনও ফল্গু বয়ে চলেছে দেখে শুকনো মরুভূমিতে।

    অবাক হলেও অনেক কিছুই মনে পড়তে থাকলো আরাধ্যার পরপর আপন মনেই। যেদিন বিয়ে হয়ে এই বাড়িতে এসেছিল আরাধ্যা, বরণ করে ঘরে নেওয়ার জন্য কেউই দাঁড়িয়ে ছিল না দরজায়। অবশ্য এই ঘটনায় অবাক হয়নি আরাধ্যা, যখন দেখতে গিয়েছিলো সেইসময় তাদের বাড়িতে বলেছিল মানব তার নিজের কেউ নেই, দেখতেও গেছিল দুই বন্ধুকে নিয়ে নিজের কেউ ছিল না বলে।
    বাবা একটু খুঁতখুঁত করেছিলেন, কিন্তু মায়ের জেদের আগে টিঁকতে পারেননি তিনি, মায়ের একটিই কারণ ছিল পছন্দের, কোনো ঝামেলা নেই সংসারে। নিজের সংসার, শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ, দেবর, কারও উৎপাত নেই, একাই সংসারের মালিক হবে আরাধ্যা।
    হয়তো মেয়ের ঝুট ঝামেলাহীন সংসার মায়ের আনন্দের কারণও হয়েছিল সে সময়, আজ যদি মা জানতে পারতেন কতটা অন্তঃসার শূন্য ছিল এই সংসার!

    ভাবছিল মনে মনে আরাধ্যা- মানিয়ে নেবারও একটা পরিমাপ থাকে, যেটা লঙ্ঘন করলে আত্মসম্মান হারাতে হয়। এটা যদি মা বুঝতে পারতেন, তাহলে আজ হয়তো এই দিন দেখতে হতো না আরাধ্যাকে কখনও।

    তবে আত্মসম্মান হারানোটা, মৃত্যুরই সমান মনে হয়েছিল আরাধ্যার কাছে, যে মানবের হতে পারেনি সে কোন অধিকারে এই সংসারে থাকবে মানবের স্ত্রী হয়ে, তাকে ফিরতেই হবে নিজের জগতে। তাই নিজেই সরে যাবার এই পরিকল্পনা করেছে আরাধ্যা।
    আজ অনেক দিন বাদে এই ঘরে ঢুকে শক্ত মনটা কি নরম হচ্ছে! একটু ভাবলো আরাধ্যা। তারপর নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে গলাটা একটু খুকখুক করলো আরাধ্যা। গলার আওয়াজ শুনে ঘুরে আরাধ্যাকে দেখে আবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ মানব, কারণ বহুদিন বাদে আরাধ্যা এই ঘরে পা দিলো। প্রথমে খানিক অবাক হলেও একটু ভেবে নিয়ে তারপর মানব আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে বললো, কিছু বলবে?
    মানবের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে হাতের খামটা এগিয়ে ধরলো মানবের দিকে আরাধ্যা, মানব চোখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়ে তাকিয়ে রইলো খানিক খামটার দিকে, তারপর হাত বাড়িয়ে দিল আরাধ্যার দিকে খামটা নেবার জন্য।

    খামটা থেকে কাগজটা বার করে দেখে নিয়ে অবাক হয়ে মানব বললো, তুমি চাকরি করবে?
    কেন নয়? জিজ্ঞাসা আরাধ্যার।
    বার্লো গার্লস স্কুল মালদা? আরাধ্যার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো মানব।
    মাথা নাড়লো আরাধ্যা, মুখে হ্যাঁ বললো, সে।
    কিন্তু সে’তো অনেক দুর, বললো মানব।
    স্কুল কর্তৃপক্ষ সব ব্যবস্থা করে রেখেছেন চিন্তা করো না, আমি যেতে পারবো।
    একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আরাধ্যার দিকে মানব, ভাবলো এতটা মনের জোর পেল কোথা থেকে আরাধ্যা।

    একবার জানতেও পারেনি সে, তৈরি করলো কখন নিজেকে আরাধ্যা! মনে মনে ভাবলো মানব।
    এবার ট্যুর থেকে ফিরে এসে মানব ঠিক করেছিল সব খুলে বলবে আরাধ্যাকে এবং এরপর কিভাবে চলবে আরাধ্যার সেই ব্যবস্থাও…কিন্তু পুরো ব্যাপারটাই অন্যরকম হয়ে যাওয়ায় নিজেও কিছুটা অবাক হলো, তবে আরাধ্যাকে দেখে একটু বেশি অবাক হলো মানব।
    সেই আরাধ্যা যে একদিন তার স্ত্রী হয়ে এই বাড়িতে এসেছিল, একটা নরম ফুলের মতো মেয়ে কি করে এতটা শক্ত হতে পারলো ভাবতে ভাবতে তাকালো মুখ তুলে আরাধ্যার দিকে মানব- কিন্তু ততক্ষণে আরাধ্যা ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে।
    কারণ অনেক গোছানো বাকি আছে তার, কিছু কাজ এখনও বাকি থেকে গেছে যা সে যাবার আগেই শেষ করতে চায়।
    মাত্র দুদিন বাকি তাই দাঁড়ানোর প্রয়োজন মনে করেনি আর আরাধ্যা।

    রাতের খাওয়া শেষ হলে নিজের ঘরে ঢুকে গোছানো শুরু করলো আরাধ্যা। অবাক হয়ে দেখলো তার বেশির ভাগ জিনিস মানবেরই দেওয়া- তার থেকেই দেখে দেখে গুছিয়ে নিল ঠিক তার যতটুকু প্রয়োজন লাগবে কিছু দিনের জন্য। আজ আর কোনও পুরানো স্মৃতি মনে ঘুরপাক খেল না আরাধ্যার, নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লো অনেক দিন বাদে।

    অনেক ভোরে উঠে তৈরি হয়ে নিল সে, একবার ভেবেছিল মানবকে বলে যাবে কিন্তু পরক্ষণেই মত পাল্টালো আরাধ্যা, কারণ তার জন্য মানবের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটুক মানবের তা সে চাইনি, তাছাড়া সম্পর্কের আছেই বা কী। তৈরি হয়ে একটা ছোট্ট সুটকেস আর একটা সাইড ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। দরজা খুলতেই অবাক হয়ে দেখলো, মানব দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আজ আরাধ্যাকে অবাক করে দিয়ে। মানব হাত বাড়িয়ে ব্যাগটা তুলতে গেলে আরাধ্যা বললো, আমাকেই বইতে দাও এবার, কারণ এর পর তো আমারটা আমাকেই বইতে হবে।

    ঝুঁকে সুটকেসটা তুলতে গিয়েও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো মানব!
    মুখে বললো, মানে?
    একটু ছোট্ট হেসে আরাধ্যা বললো মানবকে, সব কথার কি মানে থাকে?
    ততক্ষণে উবের চলে এসেছে, ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এলো বাড়ি থেকে আরাধ্যা, গাড়িতে ওঠার আগে একবার ফিরে তাকালো সদর দরজার দিকে, একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো আপন মনেই আরাধ্যার বুক থেকে। কি হতে পারতো আর কি হলো এই ভাবনা নিয়েই গাড়িতে উঠে বসলো আরাধ্যা, আর সাথে সাথেই স্টেশনের উদ্দেশ্যে গাড়ি এগিয়ে চললো।

    আরাধ্যাকে নিয়ে গাড়িটা বেড়িয়ে গেলে দরজা বন্ধ করে আস্তে আস্তে ঘরের দিকে যেতে থাকলো মানব। কিন্তু ঘরে না ঢুকে আরাধ্যার ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো নিজের অজান্তেই। আরাধ্যা যে এভাবে তাকে হারিয়ে দেবে হয়তো ভাবতে পারে নি মানব।
    ভেবেছিল অনেক কান্নাকাটি দিয়ে শেষ হবে তার বলতে চাওয়া কথাগুলো- কিন্তু আরাধ্যার চলে যাওয়াটা কিছুটা এলোমেলো করে দিল মানবকে। আরাধ্যার ঘরে ঢুকে দেখলো একটা খাম পড়ে আছে খাটের উপর, একটু অবাক হয়ে ভাবলো কাগজপত্র ফেলে রেখে চলে গেল নাকি আরাধ্যা।

    সেটা মনে করে তাড়াতাড়ি খামটা হাতে নিয়ে খুলে ফেললো মানব আর বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ কাগজটার দিকে অবাক হয়ে- অস্ফুটেই বলে উঠলো মানব- “ডিভোর্স পেপার”!!
    হাত থেকে পড়ে যাচ্ছিল কাগজটা, তাড়াতাড়ি ধরলো কাগজটাকে মানব আর ঠিক তখনই নজরে এলো কাগজটাতে সই করে দিয়ে গেছে আরাধ্যা।

  • কবিতা

    কবিতা- আজও সঙ্গী বিঠোফেন

    আজও সঙ্গী বিঠোফেন
    -সুজাতা দাস

     

     

    তুই কি জানিস?
    তোর একটা কথাকে সঙ্গে করে কাটাতে
    পারি সারাজীবন,
    বিঠোফেনের সেই আশ্চর্য সুরে
    ডুব দিয়ে খুঁজতে পারি
    তোর না বলা ভাষা-
    মোৎযার্ট শুনতে শুনতে হারিয়ে যেতে পারি
    দিগন্ত বিস্তৃত নীলিমায়
    তোকে ভালোবেসে——-
    হ্যাঁ তোকে ভালোবেসে সঙ্গী করেছি
    অদম্য মৃত্যু পরোয়ানা,
    খুঁজে ফেরা জীবনের শেষ অবস্থান
    হয়তো কল্পনার মাঝেই-
    একটু ছুঁয়ে দেখার আগ্রহটা বেড়েই চলেছে,
    বিঠোফেন মোৎযার্টকে সঙ্গী করেছি রাতের কবিতায়-
    ভাষা পাল্টে যাচ্ছে….
    পাল্টাচ্ছে ছন্দ লয় তাল প্রতি মূহূর্তে-
    খুঁজছি নন্দন চত্বর নয়তো রবীন্দ্র সরোবর,
    পথ ভেঙেই পথ খোঁজা
    তুইতো নোস কুড়ি বা আমিও নই ষোলো
    তবুও বয়ে চলে স্রোত ভালোবাসার-
    ভেঙে পড়া চুলের রাশির মাঝে
    একপেশে মুখের অবয়বে
    হয়তো অবাক তুই!!
    তবুও আক্ষেপটা থেকেই যাবে,
    তোকে হারানোর আনন্দে-
    সে সময়ও হয়তো থেকে যাবে বিসমিল্লা
    খাঁ-এর করুন সুরের আলাপ।।

  • গল্প

    গল্প- সময়ের অপেক্ষা

    সময়ের অপেক্ষা
    – সুজাতা দাস

     

     

    এই যে অনিন্দ্য সুন্দর ঘন নীল অথবা শৈবাল রূপ জলরাশি এ’তো শুধু রূপসী নয়! সে’তো মহা জলধী, বৈভবে পরিপূর্ণ সাগর, যার ডাকে এখানে ছুটে ছুটে আসা এর অমোঘ ডাক শুনে বারে বারে বলতে বলতে এগিয়ে যেতে থাকলো শৈবাল জলরাশির দিকে দুই হাত ছড়িয়ে।
    শৈবালের এগিয়ে যাওয়া দেখে আরতি চেঁচিয়ে বলতে থাকলো- আর যাবেন না শৈবালদা, এরপর জল অনেক গভীর ।

    কিন্তু শৈবালকে আজ শৈল্পিকতায় ভর করেছে, সে যেন কোনও কথা কানে নিতে চাইছে না বা কানে যাচ্ছে না এমন ভাবেই চলতে থাকলো সকলের চিৎকারকে অমান্য করে। 
    হঠাৎ এক হ্যাঁচকা টান, উল্টো দিকে পড়তে পড়তে এক সুন্দরী মহিলার বাহুপাশে আবদ্ধ হয়ে চোখ পিটপিট করতে থাকলো সকলের শৈবালদা মানে শৈবাল চট্টরাজ। 
    কী ব্যাপার মরার আর জায়গা খুঁজে পাননি সোজা টিকিট কেটে পুরী ধামে চলে এসেছেন? বললেন এক মহিলা উচ্চস্বরে। 
    চমকিত শৈবাল বলে উঠলো, নন ন না মানে…..

    বলতে বলতেই হঠাৎ এক বিরাট ঢেউ এসে দুজকেই ভাসিয়ে নিলো।
    নিজেকে সোজা রাখতে না পেরে আবার ঐ মহিলার ঘাড়েই হুমড়ি খেয়ে পড়তে পড়তে শৈবালদা বলতে থাকলেন, সরি সরি ম্যাডাম..
    কিন্তু প্রচণ্ড জলের ঢেউয়ে দুজনেই একসাথে প্রপাতধরনীতলে। 
    একটা সময় জলের ধাক্কায় নাকানিচোবানি খেয়ে পাড়ে এসে দাঁড়ালেন দুজনেই, ততক্ষণে ভদ্রমহিলার অবস্থাও শোচনীয়। মহিলার মুখের বচন আর জলের ধাক্কা সামলে শৈবালদার অবস্থাও দেখার মতো তখন।
    কিন্তু দুই ধাক্কায় কাহিল হয়েও শৈবালদা খুব ম্লান হেসে অত্যন্ত বিনীত কণ্ঠে মহিলাকে বললেন, আসলে অতটা দূরে চলে গেছি আমিও বুঝতে পারিনি ম্যাডাম।
    হঠাৎ মহিলা হাত বাড়িয়ে শৈবালের কান থেকে টান দিয়ে একটা তার খুলে আনলেন শৈবালের চোখের সামনে, আর কটমট করে তাকিয়ে বললেন, এটা কানে গুজলে আর শুনবেন কী ভাবে? আজকাল’যে কী’ফ্যাসান হয়েছে যত্তসব! বুড়ো মানুষেরাও বাদ যান’না বলতে বলতে এগিয়ে গেলেন রাস্তার দিকে।
    এতক্ষণ আরতি ও আর সকলে দুর থেকে দেখছিল ব্যাপারটা, মহিলা চলে যেতেই আরতি এগিয়ে এসে বলল,  কী’হতো বলুন তো শৈবালদা আমরা মাসিমাকে কী কৈফিয়ত দিতাম! কী’যে ছেলেমানুষি করেন কে’জানে? এবার চলুন ফেরা যাক, বলে হাঁটতে থাকলো আরতি পেছন দিকে না তাকিয়েই।
    সকলেই কম’বেশি বলতে থাকলো শৈবালকে,  সাথে আশেপাশের অনেকেই, জোর বেঁচে গেলেন দাদা ঐ মহিলার জন্য একটু ধন্যবাদ দেবেন তাকে। 
    শৈবাল কিন্তু সেই এক’রকম ভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো, মহিলার কন্ঠস্বর এখনও তার কানে ভ্রমরের মতোই গুঞ্জন করছিল তখনও আর সাথে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ।
    সংসারে মা ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনও নারীকে কখনও আনার কথা চিন্তা করেননি শৈবাল কারণ সেই মেয়েটি মায়ের সাথে যদি মানিয়ে চলতে না পারেন, মাকে সে দুঃখ দিতে পারবে’না শেষ বয়সে। আবার হাতে ধরে নিয়ে আসা মেয়েটিকে দুঃখ দেবেন কীভাবে এটা ভাবতে ভাবতেই বিয়ে আর করা হয়ে উঠলো না মধ্য পঁয়তাল্লিশের শৈবালের।
    ইন্ডিয়ান অয়েলে চাকরি করা এই মানুষটি শুধু নিরীহই না বাচ্চাদের ভীষণ ভালোবাসেন এবং ভীষণ কেয়ারিং, আর মানিয়ে নেওয়ার বা মানানোর ক্ষমতাও অপরিসীম। তাই প্রতি বছর এই পুরীতে বেড়ানোয় অফিস কোলিগদের সঙ্গী হন শৈবাল।
    গ্রুপের বাচ্চা থেকে বড় সবাই শৈবালকে খুব ভালোবাসেন কারণ এই নির্ঝঞ্ঝাট মানুষটি সব বাচ্চাদের আগলে রাখেন সন্তানের মতো এই ঘোরার কটা দিন।
    এহেন শৈবালদা হঠাৎ নিজেই এমন একটা কাজ করে বসবেন সেটা কেউই হয়তো ভাবতে পারেনি তাই সকলেই একটু একটু রাগ প্রকাশ করে ফেললেন। মাসিমাকে কী জবাব দিতেন ফিরে গিয়ে যদি কোনও অঘটন ঘটত এই কারণে!
    অনেকটা সময় নিজের মনেই দাঁড়িয়ে রইলেন শৈবাল সমুদ্রের ধারে ভিজে জামা কাপড়ে, হঠাৎ সম্বিত ফিরলো একজনের কথায় দাদা এবার হোটেলে যান অনেকক্ষণ ভিজে কাপড়ে দাঁড়িয়ে আছেন ঠান্ডা লেগে যাবে।
    একটু বোকা হেসে হ্যাঁ, যাই বলে হাঁটতে থাকলেন হোটেলের দিকে শৈবাল কিন্তু মন থেকে মহিলার ছোঁয়া আর কন্ঠস্বর মুছতে পারলেন’না কিছুতেই।
    বারেবারেই অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছেন শৈবাল আর খুঁজে চলেছেন ঐ মহিলাকে যার একটু স্পর্শ তাকে অনেক আনন্দ দিয়েছে।
    সেইদিন বিকেল থেকেই খোঁজ শুরু করেছে শৈবাল অন্তত ধন্যবাদ তো দিতে হবে কারণ তিনি হয়তো বিবাহিতাও হতে পারেন।
    এই ভাবেই খুঁজতে খুঁজতে একদিন মন্দিরের ভিরের ভিতর থেকে একটা চিৎকারের শব্দে চমকে উঠলেন শৈবাল।
    এক মহিলা বলছেন, আপনি তখন থেকে আমাকে ঠেলে এগোনোর চেষ্টা চালিয়ে গেলেও, আমাকে সরিয়ে আপনি এগোবেন সেটা আমি হতে দেবো’না।
    গলার আওয়াজ শুনেই চিনতে পারলেন শৈবালদা কারণ সেদিন এই মহিলা তাকে সারা জীবনের ঝাড় একসাথে ঝেড়েছিলেন, যদিও জলে বার বার পড়ে যাবার কারণে বেশিটাই শুনতে পাননি।
    মন্দিরের একটা কোনায় দাঁড়িয়ে থাকলেন এই মনে করে দেখা যখন পেয়েছি আজ ধন্যবাদ দিয়েই ফিরবো, এই মনোভাব নিয়ে
    অনেক কষ্ট করে মনকে শক্ত আর সাহস সঞ্চয় করে মহিলা বেরোনোর সাথে সাথে বললেন সেদিন আমাকে যে বিপদ থেকে আপনি উদ্ধার করে নিয়ে এসেছিলেন তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ম্যাডাম।
    আচমকা শৈবালের কথায় অবাক হয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে, ভ্রূ’যুগল কুঁচকে বললেন, অঅ আপনি..ধন্যবাদ দেবার মতো এমন কোনও কাজ আমি করিনি। তবে দ্বিতীয়বারে এই কাজটি করার আগে দু’বার ভাববেন কারণ বারবার আমি বাঁচাতে আসবো’না।
    -তা’তো ঠিকই, তা’তো ঠিকই ম্যাডাম- বললো শৈবাল।
    -আপনি একা? মানে আপনার সাথে আর কেউ মানে আপনার স্বামীকে দেখছি না ম্যাডাম? বললো শৈবাল।
    হাঁটতে হাঁটতেই পেছন ঘুরে ভদ্রমহিলা কটমট করে তাকিয়ে বললেন, কেন স্বামী ছাড়া মহিলারা চলতে পারেন’না আপনাকে এই কথাটা কে বললেন শৈবাল বাবু? আর তখন থেকে মানে মানে করছেন কেন প্রতিটি সেন্টেন্সের আগে! যত বাজে অভ্যাস।
    নিজের নামটা মহিলার মুখে শুনে একটু অবাক হলেও আনন্দে ভাসলেন এই ভাবনায় যে মহিলা তার কথা মনে রেখেছেন।
    মনে মনে আনন্দ পেলেও মুখে প্রকাশ না করে বললেন, না মানে একা তো কেউ আসেন না মানে বিবাহিত নারী’পুরুষই তো বেশি দেখি তাই আর কী, বললো শৈবাল।
    এতো মানে মানে না করে আপনি বলুন তো আপনি স্ত্রীকে সঙ্গে আনেন নি কেন? হঠাৎ জিজ্ঞাসা মহিলাটির।
    শৈবাল আমতা আমতা করে বললো, আসলে আমার স্ত্রী নেই।
    -মরে বেঁচেছেন তাহলে, বললেন মহিলা।
    -আরে না আমি বিয়েই করিনি। মানে সময় পাইনি আর কি..
    এই ভাবেই শুরু হয়ে যখন কথোপকথন শেষ হলো ততক্ষণে শৈবাল জানতে পেরেছে মহিলার নাম শিবানী এবং সে এখনও অনূঢ়া।
    অজস্র বাকবিতণ্ডার মাঝেও দুজনেই অনুভব করলেন কিছু ভালো গুণ দুজনেরই আছে সুতরাং আগামীতে আবার দেখা হবে এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে আর দিয়ে ফিরে চললেন হোটেলের দিকে শৈবাল।
    প্রথম প্রথম সকলেই এই অন্যমনস্কতাকে আগের দিনের সকালের ঘটনার কথাই ভাবিয়েছে, কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ শৈবালদার অন্তর্ধান রহস্য সকলের কাছে পরিষ্কার না হওয়ায় সকলেই অবাক হলো বিশেষ করে আরতি।
    কারণ একদিন আরতি দেখলো প্রতিদিনের রুটিনে বিঘ্ন ঘটেছে, শৈবালদা কারও দরজায় ঠক্ ঠক্ আওয়াজ করছেন না সকালের চা খাওয়ার আর সমুদ্র স্নানে যাবার জন্য।
    তখনই ব্যাপার কী! দেখার জন্য সকলে শৈবালের ঘরের সামনে এসে দেখলো তালা দেওয়া, তাদের না জানিয়ে যাওয়ায় সকলেই অবাক হলো।
    কোথায় গেল শৈবালদা কখনও তো এমন করেন না!
    হয়তো সকলের কথায় দুঃখ পেয়েছেন, তাই কাউকে ডাকেননি এটা মনে করে আরতি তার ছেলে বর ও আর সকলেই সমুদ্রের দিকে রওনা দিল সমুদ্রের ধারেই আছেন মনে করে।
    এর মধ্যে মৈত্রেয়ী আর মৈনাক এরা হ্যানিমুন করতে এসেছে তাই একটু দুরে দুরেই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে, আর সকলেই ওদের মতো করেই চলতে দেয়। কারণ ওরা সকলের থেকে অনেকটাই ছোট।
    একদিন মৈনাক আর মৈত্রেয়ী সকালের বাসে পুরীর আসে পাশের সাইড সিন দেখতে গিয়ে কোনারকের সূর্য মন্দিরে শৈবালদাকে ঐ মহিলার সাথে দেখে অবাক হলো, শুধু তাই নয় দুজনের অন্তরঙ্গতা দেখে তাদের দুজনের চক্ষু চরকগাছে ওঠার অবস্থা। যদিও শৈবালদা আর ঐ মহিলা এতটাই নিজেদের নিয়ে মশগুল যে এঁদের দুজনকে খেয়ালই করলো না দুজনে। ওখান থেকেই আরতিকে ফোন করে জানিয়ে দিল মৈনাক সবকিছু ।
    আরতি শুনতে শুনতে প্রথমে একটু অবাক হলেও মনে মনে খুশিই হলো এই সংবাদে কারণ সেও মনে প্রাণে চাইত শৈবালদার একটা সংসার হোক্, মাসিমা আর ক’দিন..তারপর কে দেখবে এই লোকটাকে স্বার্থের সংসারে সবাই স্বার্থে চলে।
    শুধু মহিলা সম্বন্ধে একটু খোঁজ খবর নিতে হবে একটু ভালো করে, ভাবলো মনে মনে আরতি।
    অনেক রাতে শৈবাল ফিরলে আরতি এলো শৈবালের দরজায়, ঠক্ ঠক্ শব্দ করতে লাগলো দরজায়।
    আসছি, ভেতর থেকে আওয়াজ এলো এবং সাথে সাথেই দরজা খুলে গেল।
    আরতিকে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু চমকালো শৈবাল, কারণ এই মেয়েটিকে যেমন সে শ্রদ্ধা করে তেমনই অনেক ভালোবাসে আর ভয়ও পায়। আরতির তাকানোতে একটা অদ্ভুত শক্তি আছে, ও তাকালে মনে হয় শৈবালের ভেতরটা পুরোটা দেখতে পাচ্ছে।
    তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে নিয়ে শৈবাল বললো, কিছু বলবি আরি?
    তোমার সময় হবে একটু শৈবালদা? বললো আরতি।
    একবার তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিয়ে শৈবাল বললো, আয় ভিতরে-
    কোনো রকম ভনিতায় না গিয়ে আরতি বললো, তুমি খুশি তো দাদা?
    চমকে তাকিয়ে মাথা নিচু করলো শৈবাল। 
    বারবার মাথা কেন নিচু করছো দাদা, আমি খুব খুশী তবে আমি এটাও চাই শেষে তুমি দুঃখ না’পাও তাই আমি একবার ঐ ভদ্রমহিলার সাথে কথা বলতে চাই দাদা তুমি যদি অনুমতি দাও।
    -আমিই বলতাম তোকে আরি, কারণ একমাত্র তুইই আমার ভালো চাস এটা আমি জানি’রে আরি। কিন্তু তুই ব্যপারটা ভালো মতো নিবি কিনা ভাবছিলাম, তুই তো দেখেছিস শিবানীকে মা পছন্দ করবেন তো আরি?
    বলে এক চোখ জিজ্ঞাসা নিয়ে তাকিয়ে থাকলো আরতির দিকে শৈবাল।
    -আসলে বড্ড কটকট করে কথা বলে তবে মনটা ভালোরে আরি। 
    আরতি চমকে তাকালো শৈবালের দিকে তারপর একটু হেসে বললো, ওটা নিয়ে তুমি ভেব না দাদা আমি আছি তো বলতে বলতে উঠে দাঁড়ালো আরতি। বেরিয়ে যেতে যেতে বললো, মাসিমার দায়িত্ব আমার উপরেই ছাড়ো দাদা। তাহলে কাল বিকেলে উনাকে ডেকে নাও আমি কথা বলতে চাই ওনার সাথে কারণ তুমি কষ্ট পাও, এটা আমি দেখতে পারবো না -বলে বেড়িয়ে এলো আরতি শৈবালের ঘর থেকে।

    আজ ফিরে চলেছে সকলে পুরি থেকে সকলেরই মন খুব খারাপ কারণ আবার হয়তো এক বছর বা তারও পরে আসবে সময় সুযোগ মতো, গাড়িতে উঠে যার যার মতো খেয়ে নিল তারপর বিছানা পেতে নিয়ে নিজের নিজের মতো সকলেই শুয়ে পড়লো।
    শিবানীদি এসেছিল সকলকে সী’অফ করতে কারণ তার টিকিট দুদিন পরের।
    সবাই গাড়িতে উঠে এলে আরতি দেখেছিল শিবানীদির মন খারাপের মুখটা।
    সবাই ঘুমিয়ে পরলেও শুধু আরতি জেগে রইলো কারণ, সে কিছুতেই ট্রেনে ঘুমাতে পারে না তবে আজ ঘুম না আসার জন্য তার কোনও খেদ নেই কারণ প্রথম দিনের ব্যবহারে একটু হলেও ভয় ছিল আরতির, মহিলা যেভাবে কথা শোনাচ্ছিলেন শৈবালদাকে তাই দেখে মনে হয়েছিল মহিলাটি জাঁদরেল। কিন্তু কাল শিবানীদির ব্যবহারে ও আন্তরিকতায় আরতি মুগ্ধ।
    পেশায় উকিল হওয়ায় তার মধ্যে এই কঠোরতা চলে এসেছে সেটা শুধু বাইরের খোলসে ভেতরে নরম এক মাতৃভাব বর্তমান।
    ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর ভাইবোনদের মানুষ করে বিয়ে দিয়ে তাদের সংসারে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে নিজের জীবনের অনেকটা সময় চলে গেছে তারপর মায়ের দেখাশোনা বিয়ের কথা আর ভাবতে পারে নি। 
    এখানে এসে যে এরকম একটা সম্পর্কে জড়িয়ে যাবে সেটা দু’দিন আগেও চিন্তা করেনি আসলে মা মারা যাবার পর প্রতি বছরই আসে শিবানীদি পুরী কোনও দিন তো দেখা হয়নি তাদের সাথে আসলে সময়, সময় না হলে কিছুই হবে না।
    আজ মনটা খুব ভালো হয়ে আছে.. শৈবালদা এখান থেকেই দেরি হলেও নিজের জীবনসঙ্গী খুঁজে পেয়েছে।
    চিন্তার মাঝেই ট্রেনের থামা আর চলার শব্দের সাথে এক স্টেশন থেকে আর এক স্টেশন পেরোনোর খবর জানান দিয়ে যাচ্ছিল জেগে থাকা আরতিকে।
    হঠাৎ শোয়া অবস্থাতেই দুই হাত জোড় করে কপালে ঠেকালো জগন্নাথের উদ্দেশ্যে তারপর নিশ্চিন্ত মনে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো আরতি।
    আর অদ্ভুত ভাবে কখন যেন তার এতোদিনের পুরোনো অভ্যাস পাল্টে ফেলে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লো আরতি।

  • গল্প

    গল্প- মুক্তি

    মুক্তি
    – সুজাতা দাস

     

     

    যেই স্বপ্ন মনে মনে দেখে আরাধ্যা, তা’যে পূরণ হবার নয় সেটা নিজেও বোঝে, তাই মাঝে মাঝে নিজের গলা নিজেই টিপে ধরে আরাধ্যা।
    যাতে কোনও স্বপ্ন আর না রাখতে পারে সে তার মনের মধ্যে- কোনও স্বপ্ন না, কিছুই না।
    কিন্তু স্বপ্নগুলো কিছুতেই বুঝতে চায় না- কিছু মানুষের স্বপ্ন দেখতেও যে মানা।
    জীবনের প্রতিকূলতাকে ভেঙে এগিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পরে মাঝমাঝেই সেইসব মানুষগুলোর ক্ষেত্রে।তবুও স্বপ্নরা আসে, এসে ভীড় করে মনের মধ্যে, যখনই একা একা থাকে আরাধ্যা। একা থাকতে চায়না কখনও সে, কিন্তু যখনি মানব বেরিয়ে যায় কয়েক দিনের জন্য অফিস ট্যুরে তখনই এইসব স্বপ্নগুলো ভীড় করে আরাধ্যার একাকীত্বের সুযোগে।
    এমন তো ছিল না তার জগৎ সব কিছু খুব সুন্দর ভাবেই শুরু হয়ে এগিয়ে ছিল, কিন্তু হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করল আরাধ্যা মানবের মনের কোথাও ওর জায়গা নেই।
    যেদিন বুঝতে পারলো আরাধ্যা নিজে, সেদিন নিজের ভেতরটাকে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে যেতে দেখেছিল সে, কিন্তু একবারের জন্যও বুঝতে দেয়নি মানবকে।
    নিজের হাতে সাজানো পুরো সংসারটাকে আবার নতুন করে সাজাতে শুরু করেছিল সে, মিথ্যার তাসের ঘর জেনেও।
    কারণ সময় কাটতে চাইতো না তার। যখন মানব অফিসের কাজে বাইরে যেত জীবনের পাওয়া আর না পাওয়ার হিসাব মেলানো যে খুবই কঠিন, তত দিনে বুঝতে পারছিল আরাধ্যা। তাই জীবনটাকে নতুন করে সাজানোর কথা ভাবতে শুরু করে দিল আরাধ্যা, কারণ সে এভাবে কখনও নিজেকে দেখতে চায় নি। আবার নিজের মতো করে শুরু করলো নতুন করে নিজেকে তৈরি করতে, এভাবেই একদিন স্কুলের চাকরিটা পেয়ে গেল হঠাৎ করেই আরাধ্যা মালদার একটা স্কুলে।
    অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা হাতে নিয়ে ঢুকলো মানবের ঘরে, অনেকদিন বাদে এই ঘরটায় ঢুকে দেখলো দরজার দিকে পেছন ফিরে ইজিচেয়ারে বসে আছে মানব। মাত্র তিন বছর হলো বিয়ে হয়েছে ওদের, কিন্তু মনের অনেক গভীরে এই সম্পর্কের অণু মাত্র আর অবশিষ্ট নেই।সম্পর্কের গভীরতা টিকে থাকে বিশ্বাসের উপর- ঐ শব্দটিই যদি…
    অনেক সুসম্পর্কের দিন কেটেছে এই ঘরে সেগুলো মনে পড়তে থাকলো আরাধ্যার। চোখের কোণটা কী ভিজে যাচ্ছে আরাধ্যার!! অবাক হলেও অনেক কিছুই মনে পড়তে থাকলো আরাধ্যার।
    যেদিন বিয়ে হয়ে এই বাড়িতে এসেছিল আরাধ্যা, বরণ করে ঘরে নেওয়ার জন্য কেউই দাঁড়িয়ে ছিল‌ না ওদের জন্য। অবশ্য এই ঘটনায় অবাক হয়নি আরাধ্যা, যখন দেখতে গিয়েছিলো সেইসময় তাদের বাড়িতে বলেছিল মানব, দেখতেও গেছিল দুই বন্ধুকে নিয়ে নিজের কেউ ছিল না।
    বাবা একটু খুঁতখুঁত করেছিলেন কিন্তু মায়ের আগে টিঁকতে পারেননি, কারণ কোন ঝামেলা নেই সংসারে। নিজের সংসার- শ্বশুর শাশুড়ি ননদ দেবর কারও উৎপাত নেই, একাই সংসারের মালিক।
    আজ যদি মা জানতে পারতেন কতটা অন্তঃসার শূন্য এই সংসার!!
    মানিয়ে নেবারও একটা পরিমাপ থাকে, যেটা লঙ্ঘন করলে আত্মসম্মান হারাতে হয়, এটা যদি মা বুঝতে পারতেন। তাহলে আজ হয়তো..
    তবে আত্মসম্মান হারানোটা মৃত্যুরই সমান মনে হয়েছে আরাধ্যার কাছে, তাই নিজেকেই সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা। আজ অনেক দিন বাদে এই ঘরে ঢুকে শক্ত মনটা কী নরম হয়ে যাচ্ছে! ভাবলো আরাধ্যা।
    নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে গলাটা একটু খুকখুক করল আরাধ্যা।
    ঘুরে আবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ মানব। কারণ বহুদিন বাদে আরাধ্যা এই ঘরে, প্রথমে অবাক হলেও একটু ভেবে তারপর মানব বললো কিছু বলবে?
    হাতের কাগজটা এগিয়ে ধরল মানবের দিকে আরাধ্যা, মানব প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়ে তাকিয়ে রইলো খানিক।
    তারপর হাত বাড়িয়ে দিল আরাধ্যার দিকে। কাগজটা দেখে নিয়ে অবাক হয়ে বললো, তুমি চাকরি করবে?
    কেন নয়? জিজ্ঞাসা আরাধ্যার।
    বার্লো গার্লস স্কুল মালদা? আরাধ্যার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো মানব।
    মাথা নাড়ল আরাধ্যা- মুখে ‘হ্যাঁ: বললো।
    কিন্তু সেতো অনেক দুর, বললো মানব।
    স্কুল কর্তৃপক্ষ সব ব্যবস্থা করে রেখেছেন চিন্তা করো না, আমি যেতে পারবো।
    একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আরাধ্যার দিকে মানব, ভাবলো এতটা মনের জোর পেল কোথা থেকে আরাধ্যা।একবার জানতেও পারেনি তৈরি করলো কখন নিজেকে আরাধ্যা; মনে মনে ভাবলো মানব।
    এবার ট্যুর থেকে ফিরে এসে ঠিক করেছিল সব খুলে বলবে আরাধ্যাকে, কিন্তু পুরো ব্যাপারটাই অন্য রকম হলো। দেখে একটু কী অবাক হল মানব। সেই আরাধ্যা যে একদিন তার স্ত্রী হয়ে এই বাড়িতে এসেছিল, একটা নরম ফুলের মতো মেয়ে কী করে এতটা শক্ত হতে পারলো ভাবতে ভাবতে তাকাল মুখ তুলে আরাধ্য দিকে।
    ততক্ষণে আরাধ্যা ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে, অনেক গোছানো আছে তার মাত্র দু’দিন বাকি। রাতের খাওয়া শেষ হলে নিজের ঘরে ঢুকে গোছানো শুরু করলো আরাধ্যা। অবাক হয়ে দেখলো বেশির ভাগ জিনিস মানবেরই দেওয়া। তার থেকেই দেখে দেখে গুছিয়ে নিল ঠিক তার যতটুকু প্রয়োজন।
    আজ আর পুরানো স্মৃতি মনে ঘুরপাক খেলো না আরাধ্যার, নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লো অনেক দিন বাদে।
    অনেক ভোরে উঠে তৈরি হয়ে নিল সে একবার ভেবেছিল মানবকে বলে যাবে, কিন্তু পরক্ষণেই মত পাল্টালো আরাধ্য। কারণ তার জন্য মানবের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটুক সে চায় নি, তাছাড়া সম্পর্কের আছেই বা কী!
    তৈরি হয়ে একটা ছোট্ট সুটকেস আর একটা সাইড ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে।অবাক হয়ে দেখল মানব দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আজ আরাধ্যকে অবাক করে দিয়ে।
    মানব হাত বাড়িয়ে ব্যাগটা তুলতে গেলে আরাধ্যা বললো, আমাকেই নিতে দাও, এর পর তো আমারটা আমাকেই বইতে হবে।
    ঝুঁকে সুটকেসটা তুলতে গিয়েও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো মানব! মুখে বললো, মানে?
    একটু ছোট্ট হেসে আরাধ্যা বলল মানবকে, সব কথার কী মানে থাকে? 
    ততক্ষণে উবের ট্যাক্সি চলে এসেছে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এলো আর গাড়িতে চড়ে বেরিয়ে গেল স্টেশনের উদ্দেশ্যে। আরাধ্যাকে নিয়ে গাড়িটা বেরিয়ে গেলে দরজা বন্ধ করে আস্তে আস্তে ঘরের দিকে যেতে থাকলো মানব, কিন্তু ঘরে না ঢুকে আরাধ্যার ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো নিজের অজান্তেই।
    আরাধ্যার ঘরে ঢুকে দেখলো একটা খাম পড়ে আছে খাটের উপর, একটু অবাক হয়ে ভাবলো কাগজপত্র ফেলে রেখে চলে গেল নাকি! সেটা মনে করে তাড়াতাড়ি খামটা হাতে নিয়ে খুলে ফেললো, মানব আর বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ কাগজটার দিকে অবাক হয়ে।
    অস্ফুটেই বলে উঠলো মানব, ডিভোর্স পেপার!! হাত থেকে পড়ে যাচ্ছিল কাগজটা, তাড়াতাড়ি ধরলো কাগজটা আর ঠিক তখনই নজরে এলো কাগজটাতে সই করে দিয়ে গেছে আরাধ্যা …

  • কবিতা

    কবিতা- নীলা সবার সহ্য হয়না

    নীলা সবার সহ্য হয়না
    -সুজাতা দাস

     

     

    স্বপ্ন কী কিনতে পাওয়া যায়!!
    তুই কী জানিস নীলা?
    সেই যে প্রথম দেখেছিলাম তোকে!!

    সেটা আমার কাছে স্বপ্নই ছিল জানিস;
    সেদিন ছিল ফাল্গুনী পূর্ণিমা-
    এখনও তোর আঁচলের নীল বুটিগুলো উজ্জ্বল হয়ে আছে আমার চোখে-
    বেলা শেষের শেষ গানটা তোর গলায় খুব সুরেলা ছিল-
    নীলা সবার সহ্য হয়না তুই বলেছিলি!!
    একদম ঠিক ছিলি তুই-
    তাই হয়তো তুই আজ অনেক অনেক দুরে-
    ব্যথারা মাঝে মাঝে গান শোনায় জীবনমুখী,
    কিছু দুঃখ’ সুখের পাশাপাশিই বসত করে-
    কিছু কুণ্ঠিত রাত্রি যাপনের মতো’ কিছু কথা থেকে যায় গোপনে-
    থেকে যায় আট কুঠুরির কোনওটিতে-
    যেমন ভাবে নীলারাও হারিয়ে যায় জীবন থেকে-
    কিন্তু থেকে যায়! কোনও কুঠুরিতে যা শুধুই মনে করায় অবসরে’

    বাইরে আসার সাহস দেখায় না কখনও।

  • কবিতা

    কবিতা- অনুভূতি

    অনুভূতি
    – সুজাতা দাস

     

     

    একটা ব্যথা’ ঐ আকাশের মতো গাঢ় নীল যেন কালকূট।
    একটু খুশি ছোট্ট ঘাস ফুলের মত শুধুই স্বপ্নিল।
    একটু মমতা যেটা মূল্যে বিচার হয় না কখনও শুধুই অনুভূতির স্পর্শ।
    একটু ভালোবাসা যার প্রমাণ দিতে হয় বরেবার অবিরত।
    ছোট্ট শব্দ প্রেম যার অনেক আবেগ থাকে কিন্তু স্পর্শে আসে’না ।
    এই শব্দগুলো কেন জড়িয়ে থাকে
    জীবনের ছোট্ট চাওয়া পাওয়ার সাথে!
    মনটাকে কেন হারাতে ভালো লাগে?
    নানা অছিলায় ঐ অসীম অনন্তে কী শুধুই হাহাকার!
    যেখানে শুধুই আমার আনাগোনা স্বপ্নগুলো কী ব্যর্থ হবার জন্যই?
    যেগুলো শুধুই আমার দেখা তবুও খুঁজে ফেরে এই’মন বারেবার,
    অসময়ে আবার নতুন কোনও অজানা এক আকুল ভালোবাসার।।

  • কবিতা

    কবিতা- খোঁজ

    খোঁজ
    -সুজাতা দাস

     

     

    জীবন যদি কখনও ছুঁয়ে দেখার অভিলাষী হয় নিজের অজান্তেই ভালোবেসে তোর আঙুলের স্পর্শকে,
    হয়তো অবাক হওয়ার অছিলায় চোখ পাকিয়ে তাকাবি তুই-
    তখনও আমি অবাক হবো না কিছুতেই শুধু হাসবো একটু ঠোঁট উল্টে, যেভাবে তুই দেখতে অভ্যস্ত-
    ভালোবাসার বোধহয় রঙ থাকে যা অন্তর দিয়েই অনুভূত হয় শুধু, বাইরে সবটাই ফ্যাকাশে রঙহীন ধূসর-
    যদি কখনও নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায় পাগল হই আমি, তখনও তুই অবাক ভীষণ মনে মনে-
    ভাবছিস পাল্টে যাচ্ছে কীভাবে সেই মেয়েটি যে শুধুই জানতো ভালোবাসতে,
    পাল্টানোর নামই জীবন যা জানতে পেরেছে আবার নতুন করে-
    রঙমাখা মুখোশের ভিড়ে খুঁজে চলা একটা সরলতা মাখানো মুখ, যা অমিল আজ সবখানে-
    তবুও খুঁজে ফেরে মন অসময়ে আবার নতুন করে একটু স্পর্শের আশায় যেখানে আছে শুধুই ভালোবাসার খোঁজ-

  • কবিতা

    কবিতা- আজও ভালোবাসা তোর জন্যই

    আজও ভালোবাসা তোর জন্যই
    -সুজাতা দাস

     

     

    চাইনা ধার করা ভালোবাসা যা আমারই ছিলনা কখনও-
    চাই সাস্বত প্রেম যা আমি প্রত্যাশা করি আমার জন্য প্রতিনিয়ত-
    না দিতে পারো ক্ষতি নেই, নেই অভিযোগ কোনও তবুও আমি খুশি জেন-
    শরীরী ভালোবাসায় আছে কী কোনও মূল্য
    যা শরীরের সাথেই হয় শেষ-
    তেষ্টা যদি না পায় মূল্য তো জলেরও নেই
    বিশ্বাসই সব, মূল্যহীন নাহলে হয়-
    কখনও ভাঙাগড়ার খেলায় যদি হার হয়,
    তবুও খুজবো এক চিলতে রোদ্দুর-
    যা ধার নয়, আমাকে দেওয়া এক মুঠো ভালোবাসা যা অবহেলায় পাওয়া-
    জীবনের মূল্যায়ন করা কী তোমার সাজে?
    নির্ধারণের ক্ষমতা যদি না থাকে-
    ভালোবাসায় নাআছে অধিকার না ফেরার অনুমতি, তবুও কেন মন চায়!!
    কখনও বৃষ্টির ফোঁটায় মনটাকে ভিজিয়ে দিক আবার কোনও রূপকথারা-
    ভালোবাসা শুধু শব্দ মাত্র ভালোলাগাতেই
    সীমাবদ্ধ একটা পরিসর-
    সময়ের স্থায়ীত্বে হারিয়ে ফেলা ভালোবাসা,
    আজও তোমার জন্যই রইলো।।

  • কবিতা

    কবিতা- কিছুতো নিজেরই থাক

    কিছুতো নিজেরই থাক
    -সুজাতা দাস 

     

    জানি শেষ হয়েও শেষ হয়না কিছু-
    ফুরিয়ে যায় না ভালোলাগা কিছু শব্দ-
    গভীর বেদনা চেপে হাসি অবহেলে-
    তবুও কিছু বাকি থাকে জীবনে কষ্ট-

    কখনও সুখের খোঁজে হারিয়ে যাওয়া-
    যেখানে মুখরিত করে স্মৃতি অন্য মুখে-
    সেখানেই সুখের বাসরে কাঁদে বেহুলা
    বাঁচানোর আক্ষরিকে জলে ভেসে চলে-

    যদি বিশ্বাস বারেবারে হারায় নিজেই-
    মিথ্যা কলেবরে শুধু নিজেকেই ঢাকা-
    তবুও হাসি মুখে লুকোচুরি খেলা চলে-
    খুঁজতে নিজেকেই নিজে হারিয়ে ফেলা-

    স্বপ্ন শুধুতো স্বপ্নই দেখায়, হয়না পূরণ-
    তবুও দিবাস্বপ্নে বিভোর থাকি সদাই-
    এর নামই তো জীবন, যা হারিয়ে যায়-
    তবুও খুঁজি স্বীয় অস্তিত্ব আজ নিজের-

    ভালোলাগাগুলো তবুও ভালোবাসা হয়-
    জড়িয়ে রাখি পুরোটাই নিজের হৃদয়ে-
    তবুও হারায় অসময়ে হায় নতুন করে-
    কিছু তো থাক শুধু নিজের, নিজেরই হয়ে।।

You cannot copy content of this page