• কবিতা

    কবিতা- সভ্যতার দহন

    সভ্যতার দহন
    -সুমিতা পয়ড়্যা

     

     

    সভ্যতার আষ্টেপৃষ্ঠে যখন লাশের গন্ধ
    তখন আমরা অনাঘ্রাত,
    অন্তরাত্মা নৈঃশব্দের অনুরণনে;
    মহাসৃষ্টির চেতনায় মানবতা বিভোর,
    মুখোশের আড়ালে রক্তাক্ত রহস্য মোড়কে
    নিপাট নিগূঢ় বাস্তবে অন্তর দহন,
    ঘটনার পটে পটে অঙ্কিত চিত্রকল্প
    অসহ্যকে সহ্যের সীমায় শীতল আগুনে।
    বেদনা-কান্না-হাসি জুড়ে একরাশ স্বপ্ন
    বিনিদ্র রাতের অচেনা সুবাসে সভ্যতার কথন।
    প্রতিদিন সহ্য করছে অসম্ভবের দহন জ্বালা;
    পুড়ছে, অঙ্গার হচ্ছে, কোন এক অরূপ মায়ায়।
    জ্বলে পুড়ে খাঁক হচ্ছে আর্ত আকুল স্বরে,
    আবেগের ভিড়ে জীবনভর বাঁচার লক্ষ্যে।

  • কবিতা

    কবিতা- “ঘুম ভেঙে দেখি”

    “ঘুম ভেঙে দেখি”
    -সুমিতা পয়ড়্যা

     

     

    তুমি আমাকে যে বইটা দেবে বলেছিলে,
    যে বইটা শুধুমাত্র আমার জন্য কিনেছিলে–
    স্বপ্নে আজ তাকে পেলাম।
    বইটা খুলতেই পেলাম বইয়ের সেই নতুন গন্ধটা
    কী মিষ্টি, কী মিষ্টি সেই গন্ধ,এক অদ্ভুত অনুভূতি
    বইটার পাতায় পাতায় কত কি যে লেখা
    বোধগম্য হল না; আসলে মাথাটা ধরেছিল,
    তাছাড়া কোনো ছবি নেই যা আমার মনকে কাড়ে,
    যা দেখে একমুহুর্তে মিলিয়ে যেতে পারব!
    তুমি তো জান ছবিতে আমার কী এক অদ্ভুত আকর্ষণ,
    কালো কালো অক্ষরগুলো এগিয়ে আসছিল।
    আমি বললাম, এখন তোরা যা, মাথা ধরে আছে
    যেদিন ইচ্ছে হবে পড়বো, সেদিন আসিস কেমন!
    পাতার পর পাতা এত কি লেখা!
    উন্মোচিত হবে কি তা কোনো দিন?জানা নেই
    দিগন্তপারের সূর্যের মত আগামী দিন এভাবে আসবে কি না!
    পৃথিবী ধ্বংস হবার কালে এত ভাববার অবকাশ কোথায়
    বাঁচা-মরা সবই এক কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে,
    অঘোষিত উচ্চারণে হাহাকার কান্নায় গেল ঘুম ভেঙে।
    আমার কি দোষ;বইটা দিলে কোথায়?পড়বো যে
    পেলে হয়ত বা পড়তাম!ভালোই হয়েছে
    না হলে স্বপ্নটা এত সুন্দর হত না।

  • কবিতা

    কবিতা- প্রাণের সন্ধান

    প্রাণের সন্ধান
    -সুমিতা পয়ড়্যা

     

     

    সাগরের বুকে অনেক গুনেছি ঢেউ
    ছোট-বড় ক্লান্ত-শান্ত ওঠা-নামা,
    আঘাতের পর আঘাত উন্মত্ত উচ্ছ্বাস
    তরঙ্গায়িত ফেনিল স্বচ্ছতায় তর্জমা।
    প্রতিদিনের তরুণ তপন উদিত পূর্বাচলে
    রাঙানো গগনে কিরণমালা ঠিকরে পড়ে।
    সাগরের নীল জলরাশি, অন্ধকারে মসি
    আকুল-ব্যাকুল হৃদয়ে নোনা জলেই ভাসি।
    নীলাম্বরী অঞ্চল ভেদ করি মিশেছে সাগর বক্ষে;
    কুল কিনারাহীন দোদুল্যমান জগৎ অক্ষে।
    সৃজনে সৃজনে কৃষ্টি, মিলনে দামী মণিমুক্ত,
    এক হৃদয়ের কলতানে ধ্বনি সুপ্ত।
    বিপুল জলরাশি তরঙ্গঘন কলকল তান;
    আসা-যাওয়ার উচ্ছ্বাসে নিবিড় পরিচয়ের গান।
    উত্থান-পতনে ছান্দিক সুর গায় আনন্দ গান।
    সাগরের বুকে কান পেতে প্রাণ পায় প্রাণ।

  • কবিতা

    কবিতা- একলা সময়ে

    একলা সময়ে
    -সুমিতা পয়ড়্যা

     

     

    সত্যি বলছি, আমি তোমাদের দেখতে পাচ্ছি
    চেনা-অচেনার মাঝে যত কারিকুরি;
    সকালের সূর্য শীতল জলের স্পর্শে
    আকাশী রঙের সাথে সাগর যেথায় মেশে।
    সমুদ্র সৈকতে আদরনীয় তরঙ্গায়িত ঢেউ,
    ভেঙে সুন্দর সফেদ ফেনিলে মুগ্ধতার ঘোর!
    অন্ধকার বিদীর্ণ বক্ষ চিরে চাঁদের আলোকমালা
    সাগরসঙ্গমে সাগর তখন রূপে পাগল পারা।
    তোমাদের হৃদয়ে আমার হৃদয়ে অসম্ভব এক সুখ,
    কপিল মুনির মন্দির প্রাঙ্গণে যত ভক্তবৃন্দের মুখ।
    চোখ বুজলেই সাগর, জল আর জল;
    অবগাহনের কালে রঙিন স্বপ্ন অমর অক্ষয়;
    তলিয়ে যাওয়া, মিশে যাওয়া চকচকে গুঁড়ো সোনা
    বুক পকেটের ছত্রছায়ায় মুক্ত সংসারী মায়া।
    হাত বাড়িয়ে ডাকছি তোমাদের মনেতে এক ছন্দ
    আবার যাব অন্য কোথাও মুক্তির প্রশ্বাসে দারুণ এক গন্ধ।
    কেমন হবে এবার যদি ছুঁয়ে দেখা যায় তিস্তা!
    উড়ন্ত বিহঙ্গের মত দৃষ্টি থাক না তিয়াসা!

  • কবিতা

    কবিতা- অতৃপ্ত

    অতৃপ্ত
    -সুমিতা পয়ড়্যা

    অনেক দিন হল আর দেখা হবে না
    অথবা
    হবে হয়ত কোনো একদিন।
    তখন না হয়……
    দু’জনেই বলব, কতদিন পরে ‘তোমাকে’ দেখলাম;
    হয়ত বা
    দু’জনেই তাকিয়ে থাকব অনেক্ষণ,
    কিংবা
    দু’জনেই হাতে হাত রাখব
    এমনভাবে….
    দু’জনেই উষ্ণতার পরশ নেব দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর।
    তেমন ভাবে
    দু’জনেই অনুভবের ঘরে বাস করব!
    কৌতূহলবশঃত
    দু’জনেই জিজ্ঞাসা করব, কেমন আছ?
    অভ্যাসের অন্তরালে
    দু’জনেই বলব, ভালো আছি!
    হয়ত বা
    দু’জনের ভালো থাকাটাই অভ্যাস।
    এই ভাবেই কেটে যাবে দীর্ঘ সময়,
    দীর্ঘ দিন, দীর্ঘ মাস, দীর্ঘ বছর।
    তারপর হয়ত বা আবার দেখা হবে অসম্ভবের আশায়;
    হয়ত বা হবে না!
    আর কোনো দিনও না।
    কখনো না এক পলকের জন্য না, এক মুহুর্তের জন্যে না।

  • কবিতা

    কবিতা- অনন্ত প্রেম

    অনন্ত প্রেম
    -সুমিতা পয়ড়্যা

     

     

    পূর্ণিমা রাতে রূপালী আলোক উদ্যানে
    ভেসে আসা বাতাসে প্রেমের নীলাকাশে
    আকুলতা; এক তীব্র টানে বর্ণছটা।
    সতত;স্বপনে তৃষা ভুলের দলনে!
    এক আকাশের পবিত্র গন্ধে চন্দ্রিমা
    আবেগের অভিমানে।অজস্র জিজ্ঞাসু
    দৃষ্টি আলোর নীরবতায়, অহংবোধে
    গভীরতায়, কান্নায় অসমাপ্ত গানে।
    রাতের শূণ্যতা; হাতছানি দেয় ক্লান্তি
    জ্যোৎস্নার আভরণে।জ্যোৎস্নার দ্যুতি
    স্মৃতি মাখে, অনন্ত বিষন্নতার সখ্যে।
    যতেক কল্পনা মনিহার সম গাঁথা
    পড়ে; চিরসত্য অনন্ত প্রেম মন্দিরে।
    ঋদ্ধ রবে মন স্বর্গীয় অনুরণনে।

  • কবিতা

    কবিতা- প্রথম ক্ষণ

    প্রথম ক্ষণ
    -সুমিতা পয়ড়্যা

     

     

    প্রথম তোমায় ছুঁয়েছিলাম চোখের আলিঙ্গনে
    মনের কথা মনেই ছিল বোঝো নি তার মানে।
    চোখ বুজলেই তোমার মুখ, খুললেও সেই তোমার মুখ ;
    ভালোবাসার প্রথম ক্ষণে এক পলকে কতই না সুখ!
    এক মুহুর্তে পেয়েছিলাম অনন্তকালের ভালোবাসা,
    হৃদয়ের রূদ্ধদ্বারে তৃষার তৃপ্ত অমৃতসুধা।
    অন্তর বাহির জুড়ে শুধু তুমি আর তুমি
    ভালোবাসার প্রথম ক্ষণে স্বর্গীয় পরশে ভ্রমি।
    এক লহমায় ভেসেছিলাম প্রাণপ্রিয় তোমার সাগরে
    আজন্মের ক্ষুধা প্রতীক্ষায় রূপে রূপান্তরে।
    অনুভবে অনুভবে নিভৃতে নীরবে হৃদয় দিয়েছি ভরে;
    প্রথম ক্ষণেই ভালোবাসা তীব্র বাসনার ঘোরে।

  • কবিতা

    কবিতা- অবগাহন

    অবগাহন
    -সুমিতা পয়ড়্যা

     

     

    তুমি বল আমি নাকি দার্শনিক!
    আমার নির্যাসে অতি সুগন্ধীর বাস,
    আমার ছোঁয়ায় উপচে পড়ে বুকে শোনিত ধারা;
    শুষ্ক পাহাড়ের আমি নাকি পাগলা ঝোরা!
    কোকিলের তানে কুহু কুজনে বসন্তের ফল্গুধারা,
    একমুঠো উষ্ণ পরশ হৃদয়ে তোলে ছিন্নবীণার সুর;
    অনভিপ্রেত নিয়ন আলোয় ভিজিয়ে দেয় আঁধারের বিষন্ন ব্যথাকে,
    পরিত্রাণ পাও ক্লান্তি-শ্রান্তির অনাচার থেকে।
    দর্শিল মনের সব ক্ষোভ রঙিন হয়ে ওঠে আমার কবিতায়।
    অন্তহীন সময় বয়ে নিয়ে যায় এক মুহূর্তে
    কান্নার ভাঁজে ভাঁজে সুখ আসে আবেগের মোহনায়।
    বুদ্ধির অবারিত দ্বারে ত্রিনয়নদর্শী অভিমানী,
    কথার বাষ্পে শূণ্যতাগুলো গর্জন করে নিঃশব্দে
    পিয়াসী মনের আকর্ষণে এক অদ্ভুত অনুভূতির বিচিত্র সাজ, করছে রাজ
    জলন্ত উচ্ছ্বাসে যন্ত্রণাগুলো সুখ পায়।
    রডোডেনড্রন, হাসনুহানারা পাপড়ি মেলে হাসির রাশিতে
    দর্শিত দর্শকের বর্ণনায় উৎসুক মন
    এক দীর্ঘ সুখে আবিষ্ট সুঘ্রাণ নেয়
    তোমার দার্শনিকতার অবগাহিত স্রোতধারায়।

  • কবিতা

    কবিতা- দুজনে-দুজনার

    দুজনে-দুজনার
    -সুমিতা পয়ড়্যা

     

     

    এই শোন না; আমি তোমার সাথে হারিয়ে যেতে চাই।
    নেবে কি আমায়!নেবে কিনা বল!
    বলতে এত দ্বিধা কেন!একী সমুদ্রমন্থন!
    অমৃত না বিষ; ধর বিষটাই তুমি পেলে।
    তবে কি আর আমাকে ছুঁয়েও দেখবে না!
    বিষে বিষে বিষক্ষয়ও তো হতেই পারে।
    দুজনে দুজনার হয়ে জল-মাটি-আকাশের সঙ্গমে পৌঁছালাম।
    ভালো হবে না বলছ!অবাক হবার কি আছে!
    এক আত্মা, এক হৃদয়, এক অঙ্গ–তুমিই তো বল—–
    আমরা হব চলতি হাওয়ার পন্থী; দুঁহুরে মেলাবে দোঁহে।
    জোয়ারে ভাসব, ভাঁটায় যুগলে হাত ধরে হাঁটব।
    প্রতিটি কদম একসাথে ফেলব।পারবে না!
    এক অমোঘ স্পর্শে অবগাহন করব।
    নীল আকাশ, নীল সাগর, নীল হব বিষে।
    খুব ভালো হবে তাই না!বল না!বল না গো!
    ওই দিগন্তপারের বাতাস কানাকানি করবে;
    দ্রুত হাওয়ার বেগে ছুটে চলবে উদ্দামিত হৃদয়ের ছান্দিক সুর;
    দুইজনাই পাগল হব;অনন্ত ছায়াপথ পার হব।
    রাতের তারাদের চাহনিতে নৈসর্গিক প্রেম বিরাজিত হবে উন্মাদনায়।
    চতুর্দিক উদ্ভাসিত দিগন্তপারের আলোয় গভীর গহনে দুজনে-দুজনার; আজন্ম আপনার।

  • কবিতা

    কবিতা-কেমন করে ভালো থাকি!

    কেমন করে ভালো থাকি!
     সুমিতা পয়ড়‍্যা

     

     

    যেমন করে থাকলে মানুষ
    মানুষ নাকি ভালো থাকে।
    রুদ্ধদ্বারে বসে থেকে
    যেমন ভাবে মানুষ ভাবে।
    এক আকাশে উড়ন্ত মেঘে
    যেমন করে ছবি আঁকে।
    যেমন করে পাহাড় পুরে
    ঝর্ণা শোনায় তান।
    তেমন করে, তেমন করে।
    যেমন করে সময় চলে
    নিজের খেয়ালে গান গেয়ে।
    যেমন করে বাঁচলে মানুষ
    বাঁচার মাঝে প্রাণ পায়।
    তেমন করে তেমন করে।
    যেমন করে বৃষ্টি ধারা
    চোখের জলকে ধুইয়ে দেয়।
    বালিশ ভরে সোঁদা গন্ধে
    যেমন করে নীরব মনে।
    তেমন করে তেমন করে।
    যেমন করে হাসলে মানুষ
    মানুষ ভাবে বেশ তো আছে।
    যেমন করে বইলে হাওয়া
    মানুষের মন শীতল হয়।
    যেমন করে সকাল হলে
    সূর্য্যি ওঠে পূর্বাচলে।
    তেমন করে তেমন করে।
    যেমন করে হঠাৎ লাগে ভালো
    সব কিছু কে সঙ্গে নিয়ে।
    যেমন ভাবে এভবে একা
    জনম-মরণ -অমরত্বের লেখা।
    যেভাবে পদ্ম পাতায় মুক্ত ফলে
    টলটলে জল রূপের বলে।
    তেমন করে তেমন করে।
    যেমন করে নিঃশ্বাস নিলে
    প্রাণ খুলে হাসতে পারে।
    যেমন ভাবে কম্পিত হৃদয়
    ফল্গুধারায় বন্যা বয়।
    যেমন করে বাঁচলে পরে
    বাঁচার মত বাঁচা বলে।
    তেমন করে, তেমন ক‍রে।
    ভালো থেকো ভালো থেকো
    এমন করেই ভালো থেকো।
    যেমন করে থাকে সবাই
    তেমন করেই ভালো থেকো।

You cannot copy content of this page