-
ছাড়াছাড়ি
ছাড়াছাড়ি
– সোহিনী সামন্ত“সেই দিনটা তোর মনে আছে…
যে দিন আমাদের ব্রেক আপ হয়েছিল”।
কত কেঁদেছিলাম মাথার বালিশ জড়িয়ে ধরে…
তোর অনেক খোঁজ করতে গিয়ে ব্যর্থ ব্যথায় ঝিমিয়ে পরতাম…
কত রাত জেগে চোখের নীচের কালশিটে আরও কালো হয়ে উঠত…
কাজ করতে গিয়ে অশ্রুবিন্দুরা শিশিরের মতন ঝড়ে পড়ত।
হঠাৎ একদিন বেদনার সীমা ছাড়িয়ে গেল। ছুটে চলে যাই
গঙ্গার ধারে। সবে পা বাড়াব তখনই কে যেন বলে উঠল
“আত্মার শান্তি কীসে?”
কে যেন দূর থেকে চেঁচিয়ে বলল “ বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের শান্তি তোমার শান্তি।
আর কোথাও খুঁজো না নিজের শান্তি।”
ফিরে আসি বাড়ি সেই শেষ রাতে। -
বেহিসাবি ঋতু
বেহিসাবি ঋতু
-সোহিনী সামন্তমরশুমি বায়ু দিকভ্রষ্ট হয়ে বেগতিক ঠিকানায় নাম লেখায়…
মেয়েলী ঋতু তেমনই নিজস্ব বৃত্তি ছেড়ে অসময় গোড়াপত্তন ঘটায়।।
ঝড়ের মতন মেদের ব্যাপক আগ্রাসী সেতুবন্ধনে,
শরীরে ক্ষতির পাহাড় গড়ন হয়…।
নিমেষে রক্তস্রোত সাতরাঙা উচ্ছ্বাসি ঢেউয়ের ন্যায়ে,
বিপ্লবী নেশায় কেবল মেতে ওঠে।
সিষ্ট ও ফ্রাইব্রয়েডের আক্রমণে হরমোন কেঁদে ,
বেড়ায় বেহিসাবি যন্ত্রণায়।
টালমাটাল হরমোনের অসহায়তায় সুনামির ঢেউ ওঠে…
দিকভ্রষ্ট হয়ে নাবিক খুঁজে পায় না নিজবাড়ির ঠিকানা…
দেখা যায় শুধু উন্মাত্ত আবহাওয়ার আগ্রাসী কামনা..
-
বন্ধ্যা
বন্ধ্যা
-সোহিনী সামন্তসমাজের বটবৃক্ষের প্যাঁচালো নীতিতে বন্ধ আছে ইমোশানের রত্নভাণ্ডার …
আচার বিচারের উপটোপ আধিপত্য গড়েছে মনসীমান্তের আকুল প্রান্তর …
বন্ধ্যা নারীর মনের মন ময়ূরী কেঁদে ওঠে সমাজের সমালোচনায় …
ক্লান্ত নদীর নিশিসিক্ত অবসাদ মিশে থাকে শুকনো তটের বর্ণণায় …
খড়া মাটির সীমাহীন প্রার্থনা শুধুই দুরন্ত বৃষ্টির অপেক্ষায় …
স্বপ্নের সুত্রপাত জেগে ওঠে অঙ্কুরিত চারার নির্ভেজাল অর্চনায় …
খালি পড়ে থাকা বাবুইয়ের বাসা শ্রান্ত হয়ে থাকে সিক্ত আশায় …
পাখির হৃদ পিণ্ডের বালুকারাশি উড়ে চলে ভ্রান্ত অবন্তিকায় …।।
-
দাঙ্গা
দাঙ্গা
–সোহিনী সামন্তমরণের অস্তিত্ব ব্যক্ত করে ভেদাভেদী ত্রিশূলের
জন্মজন্মান্তরের বিষাক্ত মনের
বিস্ময়ের আয়না…আয়নায় প্রতিফলিত হয়হিংসা, দ্বেষ, জাত ভেদাভেদীর
কোমল প্রতিবিম্ব …প্রতিবিম্ব ভেঙে দেয়কাঁচের পাটাতন …গুঁড়িয়ে দেয় প্রেম,
ভালবাসা ও বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন..তেঁতো বিশ্বাসে অগ্নিকুণ্ড জ্বলে ওঠে …
লাঠালাঠি হয়ে বিবেক ক্লান্তিতে শুয়ে থাকে…অব্যক্ত নিশি প্রেমের অবগুণ্ঠনে
ভোরের আলো শিশির ভেজা কুয়াশায় পরিণত হয়..মৃত আত্মার খোঁজ কেউ রাখে না … শেষ হয়ে যায় সর্ব বাসনা …।।
-
ডেঙ্গু
ডেঙ্গু
-সোহিনী সামন্তম্যানহোলের ঘামে জমে থাকে গাঢ় কালো কাঁদার নিঃশ্বাস ……
মশাদের কৌমার্যে বিষাক্ত মৃত্যুদূতের জন্ম হয় …
রক্তবীজের মোহজালে কামানের গোলা নিভে যায় …মানুষের
জীবন কষ্টের কষ্টিপাথরের বদ্ধ হয়ে শ্বাস হারায় …।
প্রভাতী আলোয় বীজের বপন হয় অহর্নিশ …
চারিদিকে জীবাণুর ত্রাস …হসপিটালের অভিশপ্ত ঘরগুলি কেঁদে ওঠে…
মুক্তি পায় জীবন …… নিস্তারহিন অবগাহন
-
মন
মন
-সোহিনী সামন্তমনের খাঁজে খাঁজে কয়লা জমাট খাদ ….
খাদের পরিসীমা মন গহ্বরে হীরের আশায় শুধুই ব্যাকুল হয়…।
তবে হীরে অমূল্য , তার খোঁজে খালি কান্নার ঢেউ ওঠে …
সৃষ্টিশীলতার ব্যাপ্তি ঘটে আনাচে কানাচে ..,.তবে মন চুরির
দায় আজ বিচারের খাতায় অচিরেই বন্ধ হয়েছে…।
কিলবিলে চিন্তায় … প্রবাসীর গন্ধ বন্ধ দরজা ভেদ করে…
খালি বাকি পরে থাকে মন খাঁচার পাখিটি …
ভাবনায় ডুবে যায় অসীম নীলচে জ্ঞানী সমুদ্রের সীমানায় …
অন্তিম চেতনায় ……।।
-
বিষয়ের বিবাহ
বিষয়ের বিবাহ
-সোহিনী সামন্তগোলাপের দুঃখ বোঝেনি কেউ …
কেনই বা বুঝবে ! গোলাপের যৌবন এল…বেমালুম “বিষয়”
নামক কাঠগড়ায় সে বন্দী হয়ে দাড়িয়ে রইল …
গোলাপের যৌবন চেয়েছে কুঞ্জবনের মাদকতা… কিন্তু দুর্ভাগ্য …
বিবাহ হল তার “সম্পত্তি ” নামক কাঁটাতারের সাথে …সম্পত্তি
এঁকেবেঁকে কেবল ছিন্নভিন্ন করল গোলাপের যৌবন …শেষে
শান্তির ক্ষয় হল ভ্রান্ত ধারণায় …
প্রেমের ঠিকানায় বিষের আধিপত্য …
সম্পত্তির গরলগ্রাসে মৃতপ্রায় গোলাপ ,
পায়নি কোন মনের অন্তিম সত্য…
কঠিন বাস্তবতায় সম্পত্তি প্রদান করে মরণের ফাঁদ…
মনের ফকির বড্ড স্বার্থপর …,
নির্ধিদায়ে পায় গরল আস্বাদ …।
-
তুমি নেই
তুমি নেই
-সোহিনী সামন্তদিগন্ত দূরে তোমার মধুর বসবাস …
আমি জানি তুমি আর ফিরবে না…।।
তবু মনে স্ফুলিঙ্গের অবকাশ ,
আলোর দীপ্ত মৌনতা রয়েছে নির্ঝঞ্ঝাটে……।।
জানি তুমি ফিরবে না…।।
তবে আজও সোনালী গোধূলি পেরিয়ে ,
নগ্ন রাত্রি নামে …ক্লান্ত হয়ে …মন কষ্টে …।।
তুমি বলেছিলে রঙের রামধনু মনের কোণে চিরস্থায়ী…
তাই আজও ক্ষ্যাপা বুনোহাঁস রঙিন কানন ও তটিনীর
কূলে অপেক্ষায় রত …।।
তুমি আজ নেই …তবে মরাকান্না বিশ্ব যুদ্ধ আজ ও আছে…
অসীম আকাশের ও ভাগাভাগি হয় …দায় পরে …
আজ ও জনমানব হয় ক্ষিপ্ত ……
-
পাঁচিল
পাঁচিল
-সোহিনী সামন্তস্যাঁতস্যাঁতে বিবর্ণ শ্যাওলার চারিদিকে কীট পতঙ্গের চঞ্চলতা ……
খানিক বিশৃঙ্খলে ভরা ইট ও সিমেন্ট দিয়ে তৈরি পাঁচিলের রুঢ়তা ……
ভেদাভেদের স্তম্ভ রীতিনীতির যুগান্তর গড়েছে …,
মনের আঙ্গিনায় বিক্ষুব্ধ দিগন্ত রেখা টেনেছে ……।।
মন মহনার গহ্বরের অস্তশেখরে পাঁচিলের ন্যায় পক্ষপাতের ,
লক্ষ ঘণ্টা বাজে……খানিক অস্থিরতার সাজে ……।।
পিরামিডের মতন ভেদাভেদের শিখর ঢেউ তুলেছে …
কখন আর্থিক বৈষম্যের বহির্প্রকাশ …কখন জাতের
স্পন্দনহীন গোঁড়ামির বিশ্বাস …অন্যদিকে দেখা যায়
নারীপুরুষের সমতা লড়াইয়ের বিস্ময়কর ইতিকথা …।।
মরচে পরা মনের পাঁচিলে হাজারও পক্ষপাতের রহস্যবিন্দু……
যা প্রদান করে কেবল শুষ্ক অনুভূতির অশ্রুবিন্দু…।।