• অণু গল্প

    কমলার স্মৃতিচারণ

    কমলার স্মৃতিচারণ

    মৌসুমী সাহা মহালানাবীশ

     

     

    কুন্তল ছিল কমলার একমাত্র সন্তান,
    শৈশব থেকেই বাপ হারা ছেলেকে নিয়ে লড়াইটা ছিল কমলার!
    দিনের পর দিন বাবুদের বাড়ি ঘর মুছে,কাপড় কেচে,বাসন মেজে চলতো কমলার সংসার।
    পড়াশোনার প্রতি ভারি মনযোগ ছিল কুন্তলের।

    কমলা তা ভালোই বুঝতে পারতো—-
    তাইতো রাতের পর রাত জেগে,ঠোঙা বানিয়ে দিয়ে আসত কাক ডাকা ভোরে।
    কমলার জীবনের কষ্টের কাহিনীর অন্তর্গত ছিল কুন্তল, সবই ছিল তাকেই ঘিরে—–
    অভাবের সংসারে মা-ছেলের একটাই স্বপ্ন,
    একদিন এ আঁধার কাটিয়ে রবির কিরণ এসে পড়বে জানালার এপারে,
    তাদের স্পর্শ করে যাবে সোনালি রোদের ছটাক,,,,

    বহু বছর কেটে গেছে——
    আজ কমলা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে মা-ছেলের পুরোনো স্মৃতিচারণ করছে।

    আজ আর সংসারে অভাব নেই,
    কুন্তল আজ সমাজের বুকে প্রতিষ্ঠিত,সে যে আজ বড়ো অফিসে চাকরি করে।
    আজ কুন্তল বিবাহিত,নিজেই পছন্দ করে বিয়ে করেছে।
    তবে এতটুকু শান্তি নেই,ওদের বিবাহিত জীবনে—–
    যত যুদ্ধ যেন বৃদ্ধা কমলাকে ঘিরে……
    পাশের ঘরে প্রতিনিয়ত ছেলে-বউ এর অশান্তি যে চরমে…
    শুনতে শুনতে কমলা দগ্ধে মরে!
    যুদ্ধ যে চলে পাশের ঘরে!
    আর যে সহ্য হয়না—-

    কি কাজে লাগে উনি আমার?
    কতোবার বলেছি,এসব দায়িত্ব আমি ঘাড়ে নিতে পারবনা…পারবনা…পারবনা…
    শুধু বসে বসে অন্নের ধ্বংস ছাড়া আর কি আছে ?

    রুনা তোমাকে কত্তো বার বলেছি! মা কে ওভাবে বলবেনা।
    তুমিতো জানো,মা কতো কষ্ট করে আমাকে বড়ো করেছে,
    মানুষ করেছে!

    সে তো সব্বাই করে কুন্তল,
    এটা তো ওনাদের দায়িত্ব…
    আলটিমেটলি,ওনারা তোমাকে জন্ম দিয়েছে।

    সেটাই তো বোঝাতে চাইছি রুনা….
    উনি আমাকে জন্ম দিয়েছে,উনি যে আমার মা!
    আমি ছাড়া কে দেখবে মাকে ?
    এটাও কি আমার দায়িত্ব না!!

    প্লিজ কুন্তল,
    এক্সকিউজ দিওনা…
    কালই আমি রনিতকে নিয়ে বাপির কাছে যাচ্ছি!

    রুনা…

    থাক,,,অনেক হয়েছে,
    তুমি থাকো তোমার বৃদ্ধা মা কে নিয়ে—–

    পাশের ঘর থেকে কমলা ছুটে এসে!
    বাবু!
    শুনেছি বৃদ্ধাশ্রমে নাকি আমার মতন অনেকে থাকেন,
    দেখনা বাবা!
    আমাকে একবার ওখানে রেখে আয় না!
    এমনিতেও সারাটাদিন একঘরে থাকতে আমারও ভালো লাগে না,
    শুনেছি ওখানে সবাই খুব ভালো থাকে!
    তুই নাহলে মাঝেমধ্যে গিয়ে একটু দেখে আসিস!!!

    মা তুমি শেষে বৃদ্ধাশ্রমে…

    তাতে কি হয়েছে বাবা!
    আমিতো তোমার হৃদয় থেকে দূরে যাচ্ছি না!
    এতো বছর তো আমরা একসাথেই ছিলাম,
    আজ একটু নিজের সংসারে মন দাও…..
    তুমি না বাবা হয়েছ,,,,
    মনের মতন করে সন্তান মানুষ করো,
    আমি যে আজ আছি ,কাল নেই…..
    ওদেরকে সাথে নিয়েই যে তোমাকে বাকিটা পথ চলতে হবে বাবা……!

    তবে তোমার বাকিটা পথ বুঝি ওই বৃদ্ধা আ….

    আমি জানি তুমি আমার লক্ষ্মী ছেলে!
    এবার আমার একটা ব্যবস্থা করো বাবা!
    যত তাড়াতাড়ি পারো…

    মা…..

    হ্যাঁ বাবা আমি সব সময়ই তোমার সাথে থাকবো!

    নীরবে চোখের জল মুছে ঘরে গেল কমলা!
    কুন্তলের বুকের হাহাকার বুঝি শুনতে পায়নি রুনা!

    সত্যিই এবার বুঝি বিদায় দেবার পালা—-
    এবার বুঝি সূর্য ডোবার পালা—-

  • কবিতা

    অন্দরমহলের চারুলতা

    অন্দরমহলের চারুলতা
    -সানজিদা শোভা

     

    অন্দরমহলে যে চারুলতার বাস…
    তার চারপাশটা বিষণ্ণতা প্রকষ্ঠের বেরাজালে ঘেরা..
    সে এক বিষন্নময়ী…
    চঞ্চলা হরিনীর ন্যায় ছিলো তাহার কৈশোরকাল..
    দাপিয়ে বেরোতো পুরো পাড়া।
    চারুলতার সুলভ ছিলো সত্যতায় পরিপূর্ণ,
    লেখাপড়ায় বেশ পটু…
    মেয়ে মানুষ বলে কথা,
    সমাজের অন্দরমহলে তাহারা বন্দিনী..
    চঞ্চলতা স্বভাবে থাকলেও
    তাহাদের লাল শাড়ীর শিকল বেঁধে দেয়া হয়।
    চারুলতাও প্রকৃতির নিয়মে যৌবনে পা রাখলো একদিন!
    তাকেও বেঁধে দেয়া হলো অন্দর মহলের লাল শিকলে..
    এখন তার জীবন ঐ চারটি দেয়াল আর কিছু সংখ্যক লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ..
    বাহিরে না বেরনোর করা নির্দেশ ..
    বাপের বাড়ী যাইবারও তাহার নেই অনুমতি,
    পন দিয়া কিনিয়া লইয়াছেন যে তারে তাহার স্বামী।
    সে এখন আর চঞ্চলা হরিনী নয়..
    এখন সে এক অন্দরমমহলের বন্দিনী…
    যার চারপাশটা বিষন্নতার মরুভুমি।

  • কবিতা

    ঈর্ষান্বিত

    ঈর্ষান্বিত
    -সানজিদা শোভা

     

     

    রোজ ঠিক ভোরে নিয়ম করে আমার প্রিয় বার্তাটা মুঠো ফোনে পাঠিয়ে দিবি ক্ষন…
    ওটাই যে আমার সারাদিনের অক্সিজেন।
    রোজ সকাল গড়িয়ে দুপুর নামবে যখন
    আমার চোখে আর চোখে দৃষ্টি রাখবি ক্ষন…
    ওটাই যে আমার তোমাতে বিভোর হবার ক্ষন।
    রোজ দ্বিপ্রহরে আমার ফোনে নিয়ম করে ঘন্টা বাজাবি
    নয়তো তোর সঙ্গে আমার চলবে মন কষাকষি।
    রোজ বিকেলের হাওয়া তোকে এক ঝলক নিয়ম করে দেখতে দিবি আমায়…
    নয়তো বিষন্নতায় ডুববে আমার হৃদয়…
    বেলা শেষে রোজ সন্ধ্যা হবে যখন..
    লোকের ভীড়ে কর্ম ব্যস্ত হবি তুই তখন..
    আমি তখন একলা ঘরে তোকে নিয়ে নীল কাব্য করবো চয়ন…
    রোজ রাত্রিরে তোর নীড়ে ফিরবি যখন…
    তোর কন্ঠ স্বরে..
    আমার সারাদিনের অপেক্ষার দহন কিছুটা নিভবে তখন
    তবে বুকে ভেতরটা ঈর্ষান্বিত হবে এই ভেবে…
    কেনো আমার প্রতিটা রাত্র হলোনা তোর বুকেতে শয়ন।

  • ধারাবাহিক

    অপ্রত্যাশিত চিঠি -পর্ব ১/৮

    অপ্রত্যাশিত চিঠি
    -রুদ্র প্রসাদ 

     

     

     ( ০১ )
       কয়েক দিন হল, একটানা বৃষ্টি হয়ে চলেছে । আজও সকাল থেকে আকাশের মুখ ভার । সারারাত এক নাগাড়ে ঝরার পরও বিরাম নেই । এখনও টিপ্-টিপ্ করে পড়ে চলেছে । আর এই রকম আবহাওয়ার সাথে সমান তালে পাল্লা দিয়ে চলছে লোডশেডিং । সোলার এনার্জির আর কতটুকু ক্ষমতা !
       এমন একটা মনোরম সকালকেও উপভোগ করতে পারছিলেন না প্রৌঢ় ভদ্রলোকটি । পঁচাত্তর পেরিয়েছেন বেশ কিছুদিন হল, কিন্তু মাঝারি উচ্চতার নির্মেদ শরীরে এখনও সেভাবে থাবা বসাতে পারেনি সময় । কাজ নিয়েই মেতে আছেন নিজের খেয়ালে । বয়সের ভারে পাতলা হয়ে আসা ব্যাকব্রাশ করা কাঁচাপাকা চুল আর পরিচ্ছন্ন – পরিপাটি পোশাকে সদা প্রাণোচ্ছল মানুষটার আজ হঠাৎ হল টা কি !!! দুদিন হল দাড়ি কামাতে ভুলে গেছেন । খাওয়া – দাওয়া সারছেন অন্যমনস্কভাবে । নিজের প্রিয় আরাম কেদারাটায় বসেও ভেতরে ভেতরে ছটপট করছিলেন তিনি । সুন্দর সকালের আপাত শান্ত প্রকৃতির বৃষ্টিভেজা অনুপম রূপ, বা সাউণ্ড সিস্টেমে বাজতে থাকা পছন্দের রবীন্দ্রসঙ্গীত, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গলায় ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল …’ –  কোনও কিছুই কাঙ্ক্ষিত মানসিক শান্তি দিতে পারছিল না । মাঝেমাঝেই উঠে ঘরময় পায়চারি করছিলেন অস্থিরভাবে আর সময়ে সময়ে শক্ত হয়ে উঠছিল বয়সের সাথে চারটে দাঁত হারানো চোয়াল দুটো । কখনও নিষ্ফল আক্রোশে মুঠো করছেন আঙুল । কোনওভাবেই অস্বস্তিটা ভুলতে পারছেন না । বেশ কিছু সময় একভাবে বসে থাকার পর উঠলেন, মনস্থির করে গলা তুলে ডাক দিলেন, “হরি, এই হরি” ।
       মিউজিক সিস্টেমটা বন্ধ করতে করতেই হাজির হরি । দেখে আশ্বস্ত হলেন, সেই কর্মজীবনে প্রায় সমবয়সী সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন একে, এই অবসরোত্তর জীবনে এখনও একমাত্র বিশ্বস্ত ও অনুগত সহচর, মেদিনীপুরের এই রাখহরি মন্ডল – আজও টিকে আছে । বললেন, ‘জলখাবার আর চা টা ঠান্ডা হয়ে গেছে, গরম করে নিয়ে আয় ।”
       হরি চলে যাবার পর নিজের বন্ধ কম্পিউটারটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে হেসে ফেললেন, আসলে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেও আজকালের সোশ্যাল মিডিয়াতে অভ্যস্ত নন তিনি, বড়জোর ই-মেলটুকু করতে পারেন । বেশি কিছু করতে ইচ্ছে তাঁর করে না, নাহলে হয়ত আজকের দিনে যোগাযোগ অনেক সুবিধাজনক হত । ভদ্রলোক এবার গিয়ে বসলেন নিজের লেখার জায়গায়, না চাইতেই কিছু ব্যক্তিবিশেষ বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সাহায্যপ্রার্থী হতে হয় বলে চিঠিপত্র নিয়মিত লিখতে হয় তাঁকে, লিখতে বসে নিজের ভাবনায় ডুবে গেলেন ভদ্রলোক, আবারও জুড়িয়ে গেল হরির গরম করে দিয়ে যাওয়া চা – জলখাবার । সময় গড়িয়ে চলল ।
       এক সময় লেখা শেষ করে খাম বন্ধ করতে করতে হরিকে ডাকলেন । হরি এলে বললেন, “এগুলো খুব জরুরী চিঠি । তাড়াতাড়ি যা, আজকের ডাকে দেওয়া চাই । দুটোর মধ্যে রেজিস্ট্রি করে দিবি, বুঝেছিস ।”
       চিঠিপত্র নিয়ে হরির চলে যাওয়ার পথে শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে আনমনে ভাবতে লাগলেন, ‘চিঠিটা সময়মতো পৌঁছাবে তো ? আবেদন কার্যকর ঠিক সময়মতো হবে তো ? অতিবিলম্ব না হয়ে যায় ।’
       অন্যমনস্কভাবে দৈনন্দিন কাজকর্ম শেষ করে রাতে শুতে গিয়েও মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগল ভাবনাগুলো, ‘চিঠিটা সময়মতো পৌঁছাবে তো ? সাহায্য আসবে তো ? না এলে কি করণীয় …..’। এই সব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন । হঠাৎ অস্পষ্ট শব্দে ঘুম ভেঙে গেল তাঁর, আবছায়ায় বুঝতে পারলেন ঘরের ভেতর দু-তিনজন লোক কিছু যেন খুঁজে চলেছে । ধড়ফড় করে উঠে বসতে গিয়ে শুনতে পেলেন, “উঠে পড়েছেন দেখছি । ভালোই হল, এবার বলে ফেলুন জিনিসটা কোথায় রেখেছেন । তাহলে আর কষ্ট করে খুঁজতে হয় না” । বিছানা হাতড়ে বুঝলেন টর্চলাইটটা বিছানায় নেই । ঠিক সেই মুহূর্তে কেউ ঘরের মধ্যেকার সোলারের আলোটা জ্বালালো । আলোয় সামনে দাঁড়ানো লোকটাকে দেখতে পেয়ে সবিস্ময়ে চেঁচিয়ে উঠলেন, “এ কি ! তুই ! এখন এখানে ….!!!!”
       ( ০২ )
       সদাই কর্মচঞ্চল লবনহ্রদের অফিসে দিনের শেষবেলায় হাতের কাজ মোটামুটি শেষ করে নিজের ডেস্কে বসেই মোবাইলে গেম খেলছিলাম । ওদিকে আমাদের গ্রুপ লিডার অপূর্বদা লিস্ট বানাচ্ছিলেন । আগামী বুধবার অফিসেরই এক সহকর্মীর ( ডিপার্টমেন্ট আলাদা হলেও সখ্যতা আছে ) বিয়ে, কে কে যাবেন, কি উপহার দেওয়া হবে ইত্যাদি আলোচনা হচ্ছিল । হঠাৎ পাশের ডেস্ক থেকে পৌষালী বলল, “রুদ্র, তুই কি পরবি ? শেরওয়ানী পরিস, তোকে বেশ মানাবে ।”
       মোবাইল থেকে মুখ তুলে বললাম, “ক্ষেপেছিস ! আমার যা চেহারা, তাতে ওসব পরলে পুরো কাকতাড়ুয়া লাগবে ।” দেখলাম কথাটা শুনে কৃষ্ণাদি তাঁর সেই বিখ্যাত হাসিটা দিয়ে নিজের ডেস্কের দিকে হাঁটা দিলেন । অন্যদিকে দেখি, গোলাপ না অর্কিড – কিসের তোড়া ভালো হবে, সেই নিয়ে শিব শঙ্করদা আর ভূষণদার ভেতর চাপান-উতোর চলছে । একটু সুখটানের আশায় অমল, অশোক আর প্রদীপদার সাথে বেরতেই যাব, এমন সময়ই পেছনে ধনঞ্জয়দার বিখ্যাত গলা, “এই যে, পটলডাঙার চারমূর্তি, বলি সব চললেন কোথায় ?”
       অশোক বলল, “দাদা, আপনারা প্ল্যানিংটা করুন, আমরা এই দু-মিনিটে আসছি ।”
       ধনঞ্জয়দা গম্ভীর হয়ে বললেন, “এখন একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে । আপনাদের মুখাগ্নি পরে করলেও চলবে ।” কি আর করা যায়, বিরস বদনে ফিরে এলাম । দেখি পৌষালী মুখ টিপে টিপে হাসছে ।
       যাই হ’ক, শেষ পর্যন্ত ঠিক হ’ল, কেনাকাটার দায়িত্ব কৃষ্ণাদি আর পৌষালীর, খরচ যা হবে পরে হিসাব করে সকলে সমান ভাগে ভাগ করে নিলেই চলবে, বাকিদের সময়ে পৌঁছে গেলেই হবে ।
       মনে মনে একটা মতলব ভেঁজে ডিপার্টমেন্টাল হেড সুধাংশু স্যারের কেবিনে গিয়ে কথাটা বলতে, স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে বললেন, “বিয়েবাড়িতে যেতে চাইছ না ? … হুঁ … ঠিক আছে । তবে শুক্রবার যেন ডুব মেরো না ।” ঘাড় নেড়ে বাইরে এলাম । শেষে যখন সকলে বেরতে যাবে এমন সময় অপূর্বদা গলা তুলে বললেন, “সবাই ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবেন আশা করছি ।”
       আমার পাশ থেকে অমল ফুট কাটল, “না হলে ফ্লাইটটা মিস হয়ে যাবে !”
       পাশ থেকে প্রদীপদা অস্ফুটে শুধু, “হুঁ” – বলে থেমে গেলেন । হাসি-ঠাট্টা করতে করতে আমরা অফিস থেকে বেরিয়ে এলাম ।
       ( ০৩ )
       পার্কিং থেকে বাইকটা নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় ভাবছিলাম, অযাচিতভাবে বেশ কয়েকদিন ছুটি পাওয়া গেল, শনি-রবি এমনিতে ছুটি, সোমবার – জন্মাষ্টমী, মঙ্গলবার – স্বাধীনতা দিবস, বুধবার – বিয়েবাড়ি, বৃহস্পতিবার – বৌভাত — সব মিলিয়ে ছ-দিন । বাড়িতে আমি একা, মা-বাবা বোনের বাড়িতে, ভাইও বাইরে – কি করা যায় …।
       ফেরার পথে সাবওয়ে থেকে বাটার নান আর চিলি চিকেন নিয়ে নিলাম । রাতে খেতে বসে মনে হ’ল, কোথাও একটা ঘুরে আসতে পারলে মন্দ হত না । ভাবতে ভাবতেই গত সপ্তাহে আসা একটা চিঠির কথা মনে পড়ল, ছিলাম না বলে নিচে সিকিওরিটির লোকেরা নিয়ে রেখেছিল, পরে পেয়েছিলাম বটে, তবে দেখা হয়নি । তারপর কাজের চাপে বেমালুম ভুলে গিয়েছি । খাওয়ার পর বেশ কিছু সময় খোঁজার পর চিঠিটা পেলাম, দেখি প্রেরক – শ্রী শুভ্রাংশু শেখর ভৌমিক । মনে পড়ে গেল এক উচ্ছল চিরতরুণ মানুষের কথা । বোটানিস্ট ভদ্রলোক আমার স্বর্গীয় দাদুর বন্ধু । অকৃতদার মানুষটির সাথে দীর্ঘকাল যোগাযোগ করা হয়নি ভেবেই লজ্জিত হলাম । এতদিন পর কি মনে করে চিঠি লিখলেন, ভাবতে ভাবতে চিঠিটা খাম থেকে বের করলাম । মনে মনে বয়স হিসেব করে হাতের লেখার তারিফ না করে পারলাম না, লিখেছেন …,
    “স্নেহাস্পদেষু বড় দাদুভাই,
       আশা করি পরম মঙ্গলময়ের অশেষ কৃপায় সপরিবারে কুশলে রয়েছ । দীর্ঘদিনের নীরবতার কারণ হিসাবে বলি, পারিপার্শ্বিক নানাবিধ কারণবশতঃ যোগাযোগ হয়নি । অভিমান কিছুটা আছে বটে, তবে অভিযোগ নেই । আমি আর হরি বহাল তবিয়তে, কোনোক্রমে এখনও টিকে আছি ।
       গত কয়েকদিন যাবত তোমার কথা খুব মনে পড়ছে । একবার এসে ঘুরে যাও । আমার পক্ষে এদের সান্নিধ্য ছেড়ে বেরোনো মুশকিল । বয়সও হয়েছে, আজ আছি – কাল নেই । জরুরী অনেক কিছু আছে, জনান্তিকে বলার মতো । তোমার ছবি তোলা আর অ্যাডভেঞ্চারের নেশা যদি এখনও আগের মতো থাকে, চলে এসো, মস্তিষ্কের পুষ্টি হবে ।
       ঈশ্বরের কাছে তোমার মঙ্গল ও সার্বিক উন্নতি প্রার্থনা করি । তোমার মা-বাবা-ভাই-বোন — সকলকে আমার শুভেচ্ছা দিও ।
       সত্ত্বর সাক্ষাৎ হবে, বৃদ্ধকে নিরাশ করবে না, এই আশা করি ।
    আশীর্বাদান্তে,
                                                           ইতি,
                                              তোমার গাছ দাদু,
                                     শুভ্রাংশু শেখর ভৌমিক ।
                                              ৬ই আগস্ট ২০১৭
    পুনশ্চঃ যেখানেই দেখিবে ……”
       চিঠিটা পড়ে আনমনা হয়ে গিয়েছিলাম, সম্বিত ফিরল মোবাইলের আওয়াজে । মায়ের ফোন – কি করছি, কি খেয়েছি ইত্যাদি হাজারো প্রশ্নবাণ সামলে চিঠির কথা বললাম । এ ও বললাম যে, কাল যাব । দেখলাম সম্মতি সহজেই পাওয়া গেল । মায়ের সাথে কথা বলে ঘুমোতে গিয়েও পুরোনো কথাই ভাবছিলাম । অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে দাদুর সাথে ।
       সকাল থেকে উঠেই একটা অদ্ভুত উত্তেজনা অনুভব করছিলাম, অনেকদিন পর আবার একা একা কোথাও যাচ্ছি । প্রাতরাশ সেরে ব্যাগ গোছাতে শুরু করলাম । ফার্স্ট এড আর এমার্জেন্সী কিটটা পরীক্ষা করে দেখলাম ঠিকই আছে । কাজ গুছিয়ে সাড়ে এগারটার দিকে বেরিয়ে পড়লাম । প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে বাইকটা পরিচিত সার্ভিস সেন্টারে জমা করে দিলাম । চায়না টাউনে দুপুরের খাওয়া সেরে দুটোর সময় বাসে উঠলাম, ধর্মতলা থেকে । গন্তব্য – তাজপুর । জানালার ধারে বসার পেয়ে ইয়ারপ্লাগ গুঁজে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মাথায় চিঠির কথাগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছিল ।



    to be continued…

    Chapter 2  (Coming soon, 21st April, 18)
  • কবিতা

    লেখলিপি

    লেখলিপি 
    -রুদ্র প্রসাদ

     

    ধীর পদসঞ্চারে সময়ের অমোঘ লয়সারণী বেয়ে,
    দিনপঞ্জির পাতা উল্টে সবকিছু চলছে এগিয়ে ।
    কালক্ষয় প্রতি পদে পদে, বন্ধুর পথ যে অচেনা,
    কত কিছুই রহস্যে ঘেরা, রয়ে গেছে অজানা ।
    সন্ত্রস্ত, আচ্ছন্ন সবই অশান্ত আবহের অনুপনে,
    ঘনঘোর তমসাচ্ছন্ন নিশীথ আবৃত অতিগোপনে ।
    জাত-ধর্ম-সাম্যের নেশায় ধ্বস্ত মনের বিকাশ,
    সম্ভ্রম বিকিয়েই কুলীন, শালীনতার বহিঃপ্রকাশ !
    ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর, ক্রমান্বয়ে ক্ষয়িষ্ণু আয়ু,
    জর্জরিত দূষিত হলাহলে নিষ্পেষিত শ্বাস বায়ু ।
    চাহিদা প্রবল, স্বকীয়তা যে সব হারানোর সাজে,
    স্তুপীকৃত জঞ্জালে আজ ফেরা কিসের খোঁজে !
    অস্তিত্ব বিরাজে দেখ সুদূর পরাহত কষ্টকল্পসুখে,
    বিগত স্মৃতিপট ভারাক্রান্ত ক্লান্তিতে আর দুঃখে ।
    দুর্বার অশনি সদম্ভে গরজে মেঘের বাঁকে বাঁকে,
    আপন প্রতারিত হয়ে চলে মিথ্যা ছলনার ফাঁকে ।
    রিপুর আদিম তাড়নায় কিছু স্পৃহা অবদমিত ;
    দিশাহারা অবরুদ্ধ পাখি সংকটে ভীত, শঙ্কিত ।
    সুপ্ত বিবেক সংযমহীন লোলুপ লালসার ফাঁদে,
    দলিত-মথিত গলিত ভ্রষ্ট আবেগ ডুকরে কাঁদে ।
    তবুও ঔৎসুক্য চরমে, অসার অপেক্ষায় উন্মুখ;
    মানসপটে যতনে লালিত স্নিগ্ধ প্রিয়জনের মুখ ।
    উষ্ণতাহীন নগ্ন উগ্রতার তীব্রতায় দেহ মন ক্লান্ত,
    স্নেহ-ভালবাসার শীতল সুহৃদ পরশে হবে শান্ত ।
    সময়ের চাকা ঘোরে, চলবে সদাই আপন গতিতে,
    কিছু কথা, কিছু ব্যথা, ভাস্বর অমলিন স্মৃতিতে ।
    ছোট থেকে বড় হতে হতে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া,
    মিলিয়ে-মিলে হিসাবনিকাশ যত চাওয়া-পাওয়া ।
    খুঁজে ফেরা সঠিক পথে একটু আলোর নিশানা,
    সত্তা হারিয়ে উজান বেয়ে দেখা আপন ঠিকানা ।
    নূতনের আগমনে আশা, মিটে যাবে আঁধারখানি,
    ঘুচে যাবে যত দূরত্ব, বৈরিতা, স্ব-দ্বেষ আর গ্লানি ।
    সাফল্য-ব্যর্থতার ভেদাভেদ ভুলে মেলাব সবারে,
    সৌহার্দ্যের আলোক শিখা জ্বলবে হৃদমাঝারে ।
    নূতনের সূচনা দিগন্তে সোনালি আভা সহকারে,
    নূতন পাতায় লেখা হবে আচারে আর ব্যবহারে ।
    আগামীর চিরন্তন আশায় উড়িয়ে নিজ ধ্বজা…,
    নবারুণচ্ছ্বটায় আলোকিত, উদ্ভাসিত হবে শ্রীজা ।
    উদিত ভানু জাগতিক রীতে হবে অস্তগামী সাঁঝে,
    প্রেম-প্রীতির বইবে জোয়ার সবার মনের ভাঁজে ।
    দোলাচলহীন, শুভ হবে সবার, এই হোক প্রার্থনা,
    জীবনের খাতায় হল আরও একটি সনের সূচনা ।
    সুখ-শান্তি-প্রগতি সাথে মিলেমিশে হোক কথা বলা,
    সৌভ্রাতৃত্বের অঙ্গীকারে সুমধুর হোক সকলের পথচলা ।।

  • কবিতা
    কবিতা

    কবিতায়-আমি

    কবিতায়-আমি
    -শর্মিষ্ঠা শেঠ

     

    যখন আমি থাকবো না আর…এই পৃথিবীতে,

    থেকে যাবে শুধু…লেখা আমার কবিতাগুলোI এলোমেলো হয়ে টেবিলের ওপর…কিংবা থাকবে মুখ লুকিয়ে তোমার সেই ছোট্ট কাঠের আলমারির ভিতরll

    আমাদের সেই হাতে গড়া সংসার
    তার সুখ -দুঃখের স্মৃতি
    যখন পরবে তোমার মনে…
    আমার লেখা কবিতা গুলো জানান দেবে
    আমি যেন আছি তোমার কাছে ll

    বলবো না আর তোমাকে কিছু…
    বলবে আমার কবিতা গুলো
    শুনবে তখন তুমি মৌন মুগ্ধ হয়ে
    ফেলে আসা সেই সুখ- দুঃখের কাহিনীগুলো ll

    আর হবেনা দেখা আমাদের
    পাবে দেখা শুধু কবিতা গুলোর
    আকাশে বাতাসে খবরের কাগজে
    কিংবা বইয়ের পাতায়…
    বেড়াবো তখন ভেসে আমি
    মিথ্যে তখন খুঁজবে আমায় হেথা হোথা…
    …অন্য কোনোখানে ll

  • কবিতা

    প্রিয় কবিতারা

    প্রিয় কবিতারা
    -সানজিদা শোভা

     

     

    প্রিয় কবিতারা ভীড় করে…
    মস্তিস্কের আনাচে কানাচে।

    ফোটায় নীলকমল যন্ত্রনার অভিলাষে,,,
    নির্মলতা ছোঁয়ায় ভালোলাগার…
    কামনার বাসনা জাগায়,,,
    কখনো বা উম্মাদনায় মাতায় মাতাল নৃত্যে।
    কখনো বা অযাচিত ভাবে ফুটে ওঠে ভালোবাসা গুলো..
    কখনো বা রাগ-ক্ষোভ – অভিমান
    লুকিয়ে থাকা সুর,,,,
    ভালোবাসার গান।

    প্রিয় কবিতা,,,
    কখনো তুমি বর্ষার মূখরিত প্রাণ ,,,
    কখনো বা চৈত্রের তৃষ্ণার দাহ প্রাণ।

    বেঁচে থেকো প্রিয় কবিতারা
    মাঝে মাঝে দেখা দিয়ো,
    অভিমানের ছলে,,,, ভালোবাসার শত হাজার রাঙা রঙ এ

    ভালো থেকো প্রিয় কবিতারা…
    আমার অন্তিম যাত্রারও পরে।

  • কবিতা

    চেনা তুমি

    চেনা তুমি
    -পাপিয়া ঘোষ সিংহ

     

    তোমাকে আজ বড় অচেনা লাগে,
    তোমার সাথে আছি তো দীর্ঘ সময়,
    যেদিন প্রথম দেখেছিলাম তোমায়–
    তুমি ছিলে সম্পূর্ণ অচেনা,
    তবুও মন বলেছিল তুমি আমার।
    তোমার দৃষ্টিতেও ছিল সে প্রশ্রয়।

     

    আমার এলোমেলো স্বপ্ন, অগোছালো আবদার,
    আমার অনুরাগ সবকিছু ছিল
    তোমার মানসপটে আঁকা ছবি ,
    তোমার ভালোবাসা আমাকে করেছিল গরবিনী,
    আমার তুমিময় জীবনে আজও পড়েনি ছেদ
    তুমি কেমন বদলে গেলে !!!
    গুটিয়ে নিলে নিজেকে
    নিজের চারপাশে তৈরি করলে বলয় ।

    পাশে থেকেও তুমি আজ অধরা ,
    একদিন আমার কন্ঠধ্বনি তোমার প্রাণে
    সুরের ঝংকার তুলত,দূরীভূত হোতো ক্লান্তি,
    আজ সেই তোমার সময় নেই আমার কথা শোনার,
    এক‌ই শয্যায় থেকেও আমাদের দূরত্ব যোজন খানেক ।

    আমি তো আগের মতোই তোমাকে ভালোবাসি,

    আমি নদী হয়ে তোমার সাগর বক্ষে বিলীন হ’তে চাই,
    আমার প্রেমের উষ্ণতায় গলাতে চাই
    তোমার বরফ কঠিন হৃদয়।
    থেকোনা অচেনা ,সেই তোমাকে ফিরিয়ে দাও
    আমার একান্ত আপন তোমাকে।।

  • কবিতা

    বঙ্গ নারী

    বঙ্গ নারী
    -কল্যাণী ত্রিবেদী

     

    সাতদিনের কামাই, মায়া এলো নাতো কাজে
    ভাবি নিশ্চিত কিছু ঘটনা ঘটে গেছে বাজে!
    মায়ার সাথে মায়ার বরের হয়েছে মারামারি,
    কোমড় ভেঙ্গে মাটিতে খায় গড়াগড়ি…
    বরের সাথে মায়া করেছে আজ আড়ি,
    ভাত দেবেনা ঠিক করেছে মুখ করেছে ভারী
    আহাঃ বঙ্গ নারী!
    বর বাবাজী পাছে ঘোরে ভাতটি খাবার লোভে
    ছেলে মেয়ের ভীষণ শাসন,’ ভাত দেবে না ওকে,
    মারের কথা কি তোমার মনে নেইকো মোটে?’
    মায়ার মনে ভীষণ ব্যথা, চোখে আসে জল…
    এমনি যদি হয় মানুষটা বাঁচবে কতকাল?
    ভরসা করে মায়াদেবী ভাত বেড়ে দেয় তাকে
    ছেলে মেয়ের ভয়ে মায়া মুখ লুকিয়ে রাখে,
    আমায় এসে কেঁদে বলে ‘আমি কি যে করি?’
    আমি হাসি, হেসে বলি ‘ঠিক করেছিস’
    ওহেঃ বঙ্গ নারী।

  • গল্প

    মায়ায় ভরা এই পৃথিবী

    মায়ায় ভরা এই পৃথিবী
    -সোমা বৈদ্য
    নিরিবিলি নদীর পাশে গিয়ে বসলাম। নদী নিজের গতিতে আসে যায়, তবুও সে একাকী নিরালায়। কখনো বা জোয়ারের টানে আছড়ে পড়ে নদীর পারে,
    আবার ভাঁটাই চলে যায় দূর থেকে বহুদূরে অপরূপ দৃশ্য তার। বসে বসে আনমনে দেখি আর ভাবি প্রতিদিন কত ভঙ্গী তার অপরূপ সৃষ্টি, নদীর পারে বাঁধা শ্যাওলা সে আঁকড়ে ধরে নদীর পারকে। কিন্তু নদীর ভাঁটার টানে ছিনিয়ে নিয়ে যায় দূর থেকে বহুদূর মাঝ গঙ্গায়, ভাসতে ভাসতে চলে যায় কোন অজানা ঠিকানায়। ভাবতে ভাবতে মনটা কেমন আনমনা হয়ে যায়, হঠাৎ শুনি অদ্ভুত এক ধ্বনি ‘বলো, হরি,হরি,বোল। যে আওয়াজ শুনেই বুকের মধ্যে চমকে উঠলো, এই ধ্বনিতেই যে হারিয়েছি কত আপন জন। আমি নদীর পার থেকে উঠে এক পা দু পা করে এগিয়ে গেলাম সামনে, কিছু মানুষের ভিড় তার মাঝে মাটিতে শুয়ে আছে এক নিথর নিঃস্ব প্রাণ দেহ! সাদা কাপড়ে ঢাকা। তার একপাশে এক শিশু বয়স অনুমানে পাঁচ থেকে ছয় বছর, শিশুটিকে জড়িয়ে আছে তার মা! মাথায় সিঁন্দুর মোছা এলো মেলো চুল হাতের শাঁখা ভাঙা পরনে সাদা শাড়ি অদ্ভুত দৃশ্য। শিশুটি বার বার তার মাকে বলছে বাবা এমন ভাবে কেন শুয়ে আছে, কেন? বাবা আমায় কোলে নেবে না? তুমি কেন এমন সাদা শাড়ি পড়েছ মা? আমার ভয় করছে, যে কথা গুলো সবার বুকে বিঁধে যাচ্ছে চোখের জল ঝরাচ্ছে। আসলে শিশুটি জানে না যে তার বাবা আর তাকে কোলে নেবে না, সে মানুষটি সারা জীবনের জন্য ঘুমিয়ে আছে আর উঠবে না। সবার চোখে জল শিশুটির মা বারবার লুটিয়ে পড়ছে মাটিতে, এই শেষ দেখা শিশুটির বাবার সাথে শিশুটির। স্নেহের বাঁধন ছিন্ন করে চলে গেলো শিশুটির বাবা, শিশুটির বাবাকে যখন সবাই নিয়ে যায়, তখন অবুজ শিশুটি শেষ বার বলে ওঠে। বাবা তুমি কোথায় যাচ্ছ আমি যাব তোমার সাথে, শিশুটি আর কোন সাড়া পায়নি তার বাবার। পাথর চোখে দেখতে পারবে না নিজের বরযাএী, তখন তার শেষ বিদায় নেওয়ার পালা। সবাই তাকে বিদায় দিলো তাদের চোখের জলে, চার-কাঁধেতে উঠলো সে আপন ঘর আপন বাড়ি সব-ই ছেড়ে চলল নিজের মাটির ঘরে। শ্মশানঘাটে হবে স্নান,দেখবে না কেউ ঘুরে। সবাই মিলে নিথর নিঃশ্ব প্রান দেহটা চন্দনের কাঠে সাজিয়ে তুলে দিলো কাঠের চিতায়, চিতার আগুনে পুড়বে দেহ যেটা যত্নে রাখা ছিলো। যে দেহটা পুড়ে এক মুঠো ছাই হবে, তাকেও যে শেষ অস্তিত্ব বলে ভাসিয়ে দেবে গঙ্গা জলে। এভাবেই মিশে যাবে আমাদের শেষ চিহ্ন টুকু প্রকৃতির বুকে, এভাবেই হারিয়ে যাবে সবাই। আমাদের নামের “প্রথম অক্ষর বদলে যাবে ঈশ্বর চিহ্নে”! এই তো পৃথিবীর কঠিন নিয়ম।

You cannot copy content of this page