মৃত্যুর মালা
– অমরেশ কুমার
জীবনে, জোৎস্নার সাথে অমাবস্যাও আসে
ঘাত – প্রতিঘাত নেমে আসে আলো-আঁধারে।
ঠিক যেমন, হাসির মাঝে অশ্রু বিন্দু ঝরে পরা,
সব জেনেও, দু’দিনের পৃথিবীতে হাসি মুখে ঘোরা।
জীবিত, চলমান মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে
ধারণ করেছি মৃত্যুর মালা।
কত আত্মীয় পরিজন আসে–
দাঁতে দাঁত চেপে হাসি মুখে বলে,
“ভালো আছিস রে? একদম ভেঙে পড়বি না”
আমিও ছল ছল মুখে ভাঙা স্বরে বলি,
“না থেকে উপায় কি? এই তো আছি বেশ,
এতো দিনের কাল রূপী রোগে
এখনোও যে আছি …… ”
রোজ রোজ কত আয়োজন, কত প্রস্তুতি —
কত কানা ঘুষ কথা আসে ভেসে,
আজ কি শেষদিন? নাকি, আরো কিছু দিন…
নীচু স্বরে কেউ বলে, “ডাক্তার তো বললো তাই”।
দলে দলে লোক, বৈঠক বটে;
সত্যি সে এক, আলোচনার সভাগৃহ।
কেউ কাঁদে ,কেউবা কান্না লুকিয়ে —
বাস্তবের সম্মুখে।
আমি শুধু মনে মনে ভাবি, আছে তো দেহখানি,
মন যে কবেই গ্রহণ করেছে,
এ মৃত্যুর মালা।
দেহের স্মৃতিতে এত কিছু?
হায় রে মন, সবাই মন চাই-
মনের মৃত্যুর হদিস কেউ না পায়।
যত সময় পেরোই ততোই অবসাদ গ্রাস করে,
চিন্তা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণ হতে থাকে —
সব আলোচনায় ফুটে ওঠে,
একটাই সুর; যমালয়ের অট্টহাসি
ব্যাটা পড়েছে মৃত্যুর মালা; তাও, হয়ে কানে কালা
দেহ রেখেছে ধরে …..শুধুই ব্যঙ্গ হাসি।
শেষমেষ, একটাই কথা বারে বারে
মনে আসে, সেই কবরের পাশে–
“দাঁড়াও পথিক,
আজ তুমি যেখানে, কাল আমি সেখানে ছিলাম,
আজ আমি যেখানে, কাল তুমি সেখানে থাকবে”।
সব চিন্তার অবসান,
স্রোতের গতিতে সবই যে ভাসমান।
জোৎস্না রাতে মহামারি ক্যান্সার হলো জয়ী।
ঝিকিমিকি আলোতে অমাবস্যার আগমন,
নিঃস্তব্ধ পরিবারে।
পরিসমাপ্তি সভাগৃহের দেহের মরণজ্বালা,
ঘটল পরাজয়, পড়িল মৃত্যুর মালা;
পরিল —— মৃত্যুর মালা।