অণু কবিতা
-
অণু কবিতা- স্নিগ্ধ
স্নিগ্ধ
– রাজশ্রী রাহা চক্রবর্তীসমুদ্র শান্ত
তবু উন্মাদ গভীর ভালবাসায়
স্নিগ্ধ সমাহিত
তবুও উচ্ছাসে ভেঙে পড়ে
কিসের আশায়।গভীর অরণ্য যদি
শান্ত থাকে নিভৃত স্বপনে
অনন্ত শান্তি তার
জেগে ওঠে পাখির কুজনে।তেমনি শান্ত থাক
অস্ফুট কিছু আকুলতা
কখনো তুমুল ঝড়ে
ভাঙবেই তার নীরবতা। -
অণু কবিতা- কাঁটাতার
কাঁটাতার
-জিৎ সাহ
অযাচিত অনুপ্রবেশে ছিঁড়ে যায় তন মন,
জানি না, কি কারন !
বারে বারে বিচলিত হয় উতলা প্রায় মম হৃদয়।
ছিঁড়ে যায় তানপুরা, হারিয়ে যায় সুর।
ছিঁড়ে যায়
ইতস্তত স্মৃতিরা সব উদ্ভ্রান্ত উল্কাপিন্ডের ন্যায় ধায়!
–এই বুঝি পথ হারায়।
হয়তো বা কৃষ্ণ গহ্বরে হায় !
তবুও
হাতড়ায় দুর্ভেদ্য আঁধারে জানি না কিসের অভিপ্রায়। -
অণু কবিতা- হাস্যকর
হাস্যকর
– শম্পা সাহাবছরের চারটে দিন নারী শক্তির জাগরণ
আবাহন আত্মশুদ্ধি মন্ত্রোচ্চারণ
পরিণতি বিসর্জন
নোংরা পূঁতিগন্ধময় ক্লেদাক্ত জলে
ধুয়ে যায় রং গলে যায় মাটি
খড়ের কাঠামো দাঁত বের করে হাসে
আঙ্গুল তোলে সেই সমাজের দিকে
যাদের সারা বছর ধর্ষণ নারী নির্যাতন
ভিড়ে অথবা ফাঁকা পেয়ে
শারীরিক বা মানসিক নিষ্পেষণ
তারপরে হাস্যকর এই
বার্ষিকী শারদীয়া মাতৃ পূজন! -
অণু কবিতা- সমর্পণ
সমর্পণ
– তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়দু’দিনের অতিথি হয়ে আশ্রয় নিয়েছি
আকাশের নীচে।
আর শুধু জেনেছি সমর্পণ।জীবনের কাছে সমর্পণ।
সময়ের কাছে সমর্পণ।
নিয়তির কাছে সমর্পণ।সবকিছু হাতে নেই।
তাই মাথা নীচু করে সমর্পণ
করে যাই চিরকাল।
ক্লান্ত মন পথ খোঁজে অন্ধকার থেকে আলোয়।
পায়ের বালুরাশি ধুয়ে দেয় সময়ের জল।
আকাশের নক্ষত্ররাজি ঘুম আনে চোখে।। -
অণু কবিতা- চন্দ্রিমার আঙিনা
চন্দ্রিমার আঙিনা
– রাখী চক্রবর্তীগোধুলি লগ্নে সিঁদুর মাখা মেঘে চেয়ে থাকি আনমনে,
অরণ্যের সারি, নাকি ভালবাসার আড়ি
চন্দিমার আঙিনায়
স্থান পেয়েছে কে জানে?
ভাঙা ভাঙা আঁধারি আলো আছড়ে পড়েছে আমার
শূন্যতাবিহীন এ জীবনে
কত স্মৃতি, কত আবেগে মাখা ছিল আমার রাতের আকাশ,
আজ হাহাকার মূর্ছনা গ্রাস করেছে
আমার প্রতিক্ষণের উল্লাস। -
অণু কবিতা- আমার চোখে জীবন
আমার চোখে জীবন
-মিনাক্ষী পতিজীবন হলো বেঁচে থাকার বিশ্বাস,
জীবন হলো ভালোবাসার আশ্বাস।
জীবন হলো দুঃখকে হারিয়ে সুখ খোঁজার
প্রয়াস।,
জীবন হলো অন্ধকার থেকে আলোর প্রকাশ।
জীবন হলো প্রতিমুহূর্তের সংঘর্ষ,
জীবন হলো আপন জনের স্নেহের স্পর্শ।
জীবন হলো অমূল্য আশিস ভগবানের,
জীবন হলো আকাঙ্খা অন্তিম নিশ্বাস অব্ধি
সবার হৃদয়ে থাকার। -
অণুকবিতা- সংস্কারের গপ্প
সংস্কারের গপ্প
– শুক্লা রায়চৌধুরীআমায় ঘিরে বাড়তে থাকে এক ঘুন ধরা পাঁচিল,
অধমুখী মনের গভীর সে জাল বড়ই জটিল;
সোঁদা শ্যাওলায় ঢাকা পরে আলোর ওই উৎস,
সভ্যতার ইতিহাস হয়ে ওঠে বড়ই বেরঙ্গীন ক্ষুদ্র;
অন্ধ বিশ্বাসের কাটাকুটি খেলায় সতীর সহ মরণ,
সংস্কারের ছলে কেবল চলে মানের অপহরণ;
ভাঙুক এই গোলোক ধাঁধা হয় যদি চির ক্ষয়,
কু এর ঘরে তবেই হবে সু এর বিরাট জয়। -
কবিতা- প্রজাপতি ও তুমি
প্রজাপতি ও তুমি
– সুশান্ত দাসহে নাবালিকা তুমি সজীব প্রকৃতি,
তোমার বক্ষ মাঝের প্রস্ফুটিত হতে থাকা
ফুলের কুঁড়ির সুবাস মাখতে চাওয়া বাতাস,
স্পর্শ গন্ধের অপেক্ষায় থাকা আকাশ।
নির্বোধের হৃদয় অন্তপুরের প্রকৃত চাওয়া,
আমার অজানা আবছা অপরাধ।
দূরন্ত দুপুরের অচেনা অবহেলা,
অনেকটা বৃষ্টি ভেজা পড়ন্ত বিকেল বেলা।
যদি বাড়িয়ে দাও আলগা বাহুদয় আনমনে,
আমি প্রজাপতি হতে পারি প্রেমেরই গানে। -
অণু কবিতা- ভাষা
ভাষা
– মানিক দাক্ষিতভাষা হাসায় ভাষা কাঁদায়
ভাষা সর্বনাশা।
ভাষা আবার মনেতে দেয়
গভীর ভালবাসা।ভাষা করে পরকে আপন
আপন করে পর্।
ভাষাই বাধায় দক্ষযজ্ঞ
মনেতে আনে ঝড়।ভাষা ঘটায় বিরহ মিলন
ভাষা আনে রাগ।
ভাষা মনের বড় ওষুধ
মিষ্টি মধু সোহাগ।এসো আমরা সবাই মিলে
মিষ্টি করি ভাষা।
জিভের আগায় লাগাম টানি
বাড়ুক ভালবাসা। -
অণু কবিতা- মুক্তি
মুক্তি
– উজ্জ্বল মল্লিকচাওয়া-পাওয়ার মাঝে যতদিন,
লোভ-বিদ্বেষে হবে মমতাবিহীন;
অহংবোধে আচ্ছাদিত সোহম্-বাণী
অতীতের নালন্দা-স্তূপেরই মত।আত্মকেন্দ্রিকের অনন্ত একাকীত্ব,
নগর-সভ্যতা, রহিত মনুষ্যত্ব,
মুখোশে ঢাকা সব যান্ত্রিক, কৃত্রিম,
আত্মারামের ক্রন্দন রয় অব্যক্ত:কালে, মুক্তির আনন্দে রয় সতত।