বর্ষপূর্তি কলম
-
একান্ত আপন, আলাপ
একান্ত আপন, আলাপ
– রীণা চ্যাটার্জীএকান্ত আপন, আলাপ,
কতো কথাই বলা হয়ে যায়, জানা-অজানার মাঝে, ছন্দে-সুরে সুললিত, ভঙ্গিমায় প্রত্যয়ী। অর্থ- অনর্থক কতো কথা জুড়ে তোমার আনাগোনা। আমি না হয় হলাম, ‘কথামালা’- তোমাকে ‘আলাপ’ নামে ডাকি? সই করবে আমায়? দু’জনে মিলেমিশে চারপাশে ছড়িয়ে যাবো অনেক কথা, চেনা-অচেনা, জানা-অজানা নানান আলাপনে।
কখনো শুধুই বলার জন্যই বলতে চাওয়া তোমাকে ঘিরে। কখনো বা নিভৃতে, নীরবে কিছুই না বলায়, দৃষ্টির বিনিময়ে মুর্ত হয়ে ওঠো তুমি। কখনো তুমি চার দেওয়ালে বন্দী ভীষণ সতর্ক ফিসফিসানি, কখনো আলগা কথামালার হুল্লোড়, কখনো বা অসতর্কতার বিতর্ক। কখনো তুমি ফল্গুধারা, জীবনকে নিয়ে বহমান সজীবতা। কখনো এক টুকরো বরফ, নৈঃশব্দের শীতলতা। কখনো তপ্ত অগ্নি পিন্ড, জ্বালাময়ী হুঙ্কার। কখনো খন্ডিত পাথর, হতাশায় স্তব্ধ করে দেওয়া– ‘আলাপ’।গুরুদেবের ‘অবাক জলপান’ এ ভীষণ অদ্ভুত তোমার উপস্থাপনা। একদিকে তৃষ্ণার্ত পথিকের তৃষ্ণা নিবারণের অনুসন্ধান তো অপরদিকে অচেনা মানুষের শুধু বোঝা না বোঝার মাঝে মিলে হলো কতো কথামালা! দুই পক্ষের কথা বিনিময় তো শুধু মাত্র ‘আলাপ’ তোমারই জন্য।
শ্রদ্ধেয় কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘নীরা’র জন্য মনের সাথে কতো কথা জুড়ে তো তুমিই ছিলে আলাপ- একান্তে নিভৃতের আলাপ।
‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’-এ বিদ্রোহী কবি আলাপ করলেন এক উচ্চকিত বিদ্রোহের সাবধান বাণী দিয়ে।
‘আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন, তোমাতে করিব বাস,….. দীর্ঘ বরষ মাস’– ভালোবাসা জুড়ে তো শুধু তুমি আর তুমি। শেষই হতে চায় না যে ভালোবাসায় ‘আলাপ’।
দুই প্রতিবেশীর খেয়াল খুশির কুশল বিনিময়ের মাধ্যম তুমি, ভিড়ে উৎসুক জনতার চোখের চাহনির নীরব জিজ্ঞাসা বিনিময়ে তুমি, ব্যস্ত গৃহবধূর ক্ষণিকের অবসরে সাথী তুমি, কৈশোরের হুল্লোড় তুমি, যৌবনের উন্মাদনা তুমি, থমকে যাওয়া অবসর জীবনের ‘বার্ধক্যের বারাণসী’ ও বোধহয় তুমি– সব বাঁধার প্রাচীর ভেঙ্গে অচেনাকে বন্ধনে বাঁধো শুধুই তুমি।
কোনো ক্ষয়, লয় কোনোদিন আসতে পারবে না আমাদের মাঝে। তোমার আমার এই পথচলা অনন্ত, অসীম। ছড়িয়ে যাবো গলি থেকে রাজপথে, পাহাড়-নদী-সমুদ্রে, আকাশ বাতাস মুখরিত করে তুলে মনের আনাচে-কানাচে বাঁধবো বাসা সুখ, দুঃখে, ভালোবাসায়। ওই শোনো আবার কারা যেন ডাকে তোমায়… চলো শুরু করি মিলেমিশে আবার। “… এই পথচলাতে আনন্দ” -
গল্প নয় সত্যি
গল্প নয় সত্যি
-রাণা চ্যাটার্জী“আপনি কোথাও ভুল করছেন ম্যাডাম। আমি তো আপনাকে কিছুতেই চিনতে পারছি না,একটু যদি নিজের পরিচয় দেন” এই ছিল সুনন্দ স্যানালের প্রথম উত্তর ওই অপরিচিতা মহিলার অনেকগুলো ম্যাসেজ,অনেকদিন ধরে ইনবক্সে পড়ে থাকা দেখে।
আসলে হয়েছে কি, সুনন্দের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কোনভাবে পাসওয়ার্ড হারিয়ে খোলাই যাচ্ছিল না। অনেক ঘাঁটাঘাঁটি, চেষ্টার পরেও ব্যর্থ প্রচেষ্টায় খুলতে না পেরে অগত্যা নিজের নামে আর একটা অ্যাকাউন্ট খোলে সে।কিন্তু প্রায়ই মিস করত সে, পুরনো ফেসবুক অ্যাকাউন্টের বন্ধুদের। তাদের বেশিরভাগই বাইরের দেশের হওয়ায়, তাদের আদব কায়দা, কথপোকথনে সেই সব দেশের আচার আচরণ, শিল্প সংস্কৃতি, উৎসব এসব সুনন্দকে আকর্ষণ করতো বরাবর। আসলে ওর মধ্যে একটা দারুণ গুণও ছিল। খুব সহজেই অন্যের সঙ্গে মিশে গিয়ে, মানিয়ে নেওয়ার, অন্যকে চটজলদি আপন করে নেওয়ার।পুরনো অ্যাকাউন্ট খুলতে না পারার কষ্টের প্রলেপে, নতুন ফেসবুক আইডি, মলম হয়ে যখন ক্ষত প্রায় সারিয়ে তুলছিলো, একদিন অফিসের লকারে, পুরানো ডায়েরির পাতায় পাসওয়ার্ডটা লেখা পেতেই আনন্দে আটখানা হয়ে ওঠে সুনন্দ। পাসওয়ার্ড ফিরে পাওয়ার শুভ মুহূর্তেই ফেসবুক লগ ইন করে দেখে বাপরে বাপ, পায় হাজারের উপর নোটিফিকেশন। সব ধীরেসুস্থে দেখতে দেখতেই নজর পড়ে রুশা চৌধুরী নামে এক অপরিচিতের প্রচুর ম্যাসেজ। যিনি কিনা খুব ঘন ঘন ম্যাসেজ করেই গেছেন লাগাতার এই ক’মাস। খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব মেসেজগুলো দেখে শুনে সুনন্দ, বুঝতে পারল ইনি নিশ্চয়ই তাকে ভুল ভেবে ম্যাসেজ করে চলেছেন হয়তো বা কাউকে খুঁজছেন, কেমন যেন হন্যে হয়ে!
ওনার ম্যাসেজ গুলো খুবই সরল ছিল,এই রকম
“কেমন আছো সাড়া দিচ্ছনা যে!”
“সনু,তুমি ভালো আছো তো?”
এভাবে ছেড়ে যাচ্ছ আমায়!
কতদিন কথাই বলো না!
কি হয়েছে তোমার?
এই ধরনের একটা একটা লাইনে-যেন একটা আকুতি, কাছের কাউকে খোঁজার! আপনারা কি ভাবছেন, কোনো ফাঁদ তাই তো? হ্যাঁ,সে তো দিনকাল খারাপ, সেটা সুনন্দ যথেষ্টই জানে, কিন্তু কোথায় যেন তার মন অনুভব করেছিল, হতেও তো পারে সত্যি সত্যি কাছের বন্ধুটিকে তার প্রয়োজন। কিন্তু একটা খটকাও লাগছিল, তাকে কেন ম্যাসেজ পাঠাচ্ছে!সে দিনটা ছিল শনিবার,সুনন্দ পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই, অপর প্রান্ত থেকে আবার প্রশ্ন আসে, “আগে বলো তুমি কেমন আছো? কেন আনফ্রেন্ড করেছো আমায়? একটা যেন কোথাও জোর, অধিকার প্রশ্ন করার মধ্যে, এটা উপলব্ধি করে সুনন্দ লিখেছিল,”হ্যাঁ, আমি ভালো আছি কিন্তু আপনি কে, আমাকে কি সত্যিই চেনেন?” পরক্ষণেই উত্তর এসেছিল “চিনতে পারছ না এখন আমায়, আমার কিন্তু মন বলছে তুমি আমার বন্ধু সনুই ।”
সুনন্দ সমাজ বিদ্যার ছাত্র হলেও এই বিষয়ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত “মনস্তত্ত্ব” ভীষণভাবে আকর্ষিত করতো তাকে। ফ্রয়েডের চিন্তাভাবনা, স্বপ্ন তত্ত্ব, মানুষের জটিল মন, চেতন অবচেতন এইসব আগ্রহের বিষয় বরাবরই তার অতি পছন্দের তালিকায় ছিল।
চাকরির শুরুতে সুনন্দ বছরখানেক দিল্লিতে সরকারী প্রকল্পে কাউন্সিলর হিসেবে কাজ করেছিল। সে সামনে থেকে উপলব্ধি করেছে সাক্ষাৎকার সহ কথাবার্তায়, মাতাল ব্যক্তি হোক আর প্রসূতি, বখে যাওয়া সন্তান বা আফিম নেশাগ্রস্থ ব্যক্তিগণ বা মানসিক ভারসাম্যহীনদের সাথে একটু বন্ধুর মতো মিশলে তারা গল গল করে সব উগরে দেয় তাদের যাবতীয় সমস্যা সহ। অর্থাৎ কথোপকথনে, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির একটা বন্ধুত্বমূলক পরিবেশ তৈরি করতে পারলে আখেরে উপকার হয় মানসিক চাপগ্রস্থ ব্যক্তির। যদিও সুনন্দ এটা নিশ্চিত নয় যে, এই অপরিচিতা রুশা চৌধুরীর কোনো মানসিক চাপ চলছে! তবে ওনাকে একটু সময় দেওয়া উচিত বন্ধুর মতো মিশে, আর এটা যে খুব দরকার সে বিষয়ে সুনন্দের কোনো দ্বিমত নেই,যদি সত্যিই ওনাকে উপকার করা যায়।
এই ক’দিনে সামান্য চ্যাট করে সুনন্দ, রুশাকে কিছুটা হলেও বোঝাতে সক্ষম হয়েছে- উনি যে সুনন্দকে খুঁজছেন,এই সুনন্দ সে নয়। প্রমাণ স্বরূপ সুনন্দ তার নতুন ফেসবুক আইডি দেখতে দিয়েছে, যেখানে তার পরিবার,সহধর্মিনী,মেয়ের ছবি আছে।সুনন্দ উপলব্ধি করেছে, যত সে নিজেকে অন্য সুনন্দ, তার সনু নয় এটার প্রমাণ দিয়েছে, রুশার যেন একটু একটু করে আফসোসের পাল্লা ভারী হয়েছে, ফুটে উঠেছে কখনো হতাশা, কখনো বিরক্ত করার জন্য দুঃখবোধ।
বন্ধুর মতো মিশে সুনন্দ পরিবেশ হালকা করে দিতেই জড়তা কাটিয়ে রুশা জানিয়েছিল, “এই নামে এক বন্ধু ফেসবুকে ভীষণ আপন হয়ে যায় তার। প্রতিদিন তারা কত গল্পই না করতো। তিনি ভয়ঙ্কর রকম অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সন্তান হওয়ার পর, নার্ভ জনিত সমস্যায় একপ্রকার জর্জরিত।এতটাই বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছিল যে,কচি বাচ্চার পাশে উনি মরার মত অবশ শরীরে শুয়ে দিন কাটাতেন। কোন শক্তি ছিল না, নড়া চড়া করার, চুপ করে মরা মানুষের মত পড়ে থাকতেন মাসের পর মাস আর সিলিং এর ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতেন, একদিন যদি দাঁড়াতে পারি, ঠিক ঝুলে যাবো।” এই সব কথাগুলো শুনে সুনন্দের একদম ছবির মতো ভাসতো রুশার অসহনীয় পরিবেশ, মানসিক অবস্থা। রুশা আরো জানিয়েছিলেন, “আশে পাশের প্রতিবেশী যারা দেখতে আসতো, তাঁদেরকে উনি জনে জনে আকুতি নিয়ে অনুরোধ করে বলতেন, আমার বাচ্চাটাকে নিয়ে যাও না গো তোমরা কেউ, নইলে ও মারা যাবে আর বাঁচবে না।”
ঠিক এই প্রতিকূল পরিবেশে সুনন্দ সান্যাল নামে এক বন্ধুর আবির্ভাব হয় রুশার ফেসবুকে, সে তাকে এতটাই উৎসাহিত করতো সে ঋণ ভোলা সম্ভব নয়। তার জন্যই রুশা, একটু একটু করে সুস্থ হয়ে উঠেছে।বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়ে রুশাকে, মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে স্বামীকে নিয়ে ফ্লাইটে করে মরা মানুষের মতো ব্যাঙ্গালোরে যাওয়া করিয়েছে। কখনো কলকাতার ডাক্তার, কখনো গৌহাটির ডাক্তার এই সব করে, ওই সুনন্দর জন্যই যখন বেঁচে ওঠা, নতুন এই জীবন, ঠিক সেই সময়েই হঠাৎ করে সুনন্দ তথা তার সনুর গায়েব হওয়া। যত শুনছিল, খুব খারাপ একটা মনকষ্ট সুনন্দকে আরো যেন গুম করে তুলছিল। কিন্তু কি আর করতে পারে, সে যে অক্ষম সেই রুশার সুনন্দের জায়গা পূরণ করতে।
তাকে হন্যে হয়ে খুঁজতে ফেসবুকে যত ওই এক নামের “সুনন্দ সান্যাল”পেয়েছে, রুশা তাদের প্রত্যেককে মেসেজ করেছে, যদি তার সুনন্দ, সনুকে খুঁজে পাওয়া যায় কিন্তু এটা দুর্ভাগ্য যে কেউ উত্তর দেয় নি কেবল সুনন্দ ছাড়া। আর একদিন রুশা, ভীষণ আবেগতাড়িত হয়ে বলেছিলো, “আমার মন বলছে আপনি আমার সেই বন্ধু, প্লিজ বলুন না, কেন এমন করে দূরে সরে গিয়ে শাস্তি দিচ্ছেন আমায়,আমি আবার অসুস্থ হয়ে পড়ছি আমি হয়তো আর বাঁচবো না” মাঝে মাঝে এসব শুনে ভীষণ অসহায় লাগতো সুনন্দের,ভাবতো এ কাকে ও এত করে বোঝালো, প্রমাণ দিলো, গিন্নির সাথে পরিচয়ও সব কি তবে বৃথা, এখনো কিনা ভেবে চলেছে এই সুনন্দই তার পূর্ব পরিচিত, হে ভগবান! এর উত্তর ও সে পেয়েছিল রুশার কাছে, রুশা বলতো আর অবাক হতো, দু’টি ভিন্ন মানুষ হয়েও আচরণ, ম্যাসেজে ব্যবহৃত শব্দ সমুহেরও কি সাংঘাতিক নাকি মিল। রুশার এসব কথার কোনো বিজ্ঞান সম্মত জবাব দিতে পারে নি সুনন্দ, বুঝতো রুশার জীবন ওই সুনন্দ নামেই বিভোর হয়ে রয়েছে।
ঘটনার গভীরতা যে কত দূর শেকড় ছড়িয়েছিল, বুদ্ধিমান সুনন্দের বুঝতে বাকি ছিল না। ততদিনে সুনন্দের জানা হয়ে গেছে তার বাপের বাড়ি মুর্শিদাবাদের কান্দিতে।উনার স্বামী কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদে কর্মরত ও রুশারা থাকে গৌহাটি । আস্তে আস্তে খুব ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে এরা দু’জন। এরই ফাঁকে লোকসভার ভোট চলে আসে, ভোটের ডিউটিতে কি কি নিয়ে যেতে হবে এত সুন্দর ভাবে যত্ন নিয়ে লিস্ট বানিয়ে দিয়েছিল রুশা যে সুনন্দ কল্পনাও করতে পারেনি যে সে এত ভাগ্যবান হবে।
সুনন্দের একটা বড় গুণ ছিল, কোন কিছু লুকোছাপা না করে, ফ্রি ভাবে বন্ধুর মতো মিশে যাওয়া, যেন কতখানিই না সে চেনে। তাই প্রতিটা বিষয়ে সে গল্প করতো, ছোট ছোট বিষয়গুলোকে চেষ্টা করত খেয়াল রাখার। ব্যস্ত কৃত্রিমতার জীবনে এই উপলব্ধিটাই সত্যি বলতে কি অনেক। সুনন্দ তার সহধর্মিনী রমার সাথেও ফেসবুকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলি। যখন ওরা দু’জন পরমা, ও রুশা গল্প করতো ভীষণ ভালো লাগতো দেখে সুনন্দের, আর তার মন বারংবার প্রার্থনা করতো যেন রুশার আগামী ভালো কাটে।
ভোটের ডিউটিতে সব কিছু ঠিকঠাক আছে কিনা, খাওয়া-দাওয়ার কি ব্যবস্থা হল, শোবার রাত্রে কোনো অসুবিধা নেই তো এই সব খুঁটিনাটি রুশা বার বার খবর নিচ্ছিল সুনন্দকে ফোন করে সুনন্দের সহধর্মিনী পরমার মতোই। পরে অবশ্য এক প্রশ্নের উত্তরে স্বীকার করে, সে তার অপরিহার্য বন্ধু সনুকে মনে করেই এত খুঁটি নাটি ফোন, খবরাখবর নিয়েছিল! ওই অচেনা পরিবেশ, কিন্তু অচেনা হলেও আপন করে নেওয়া রুশার খোঁজ খবর, নিজেকে খুব গর্বিত লাগছিল সুনন্দের। সে খুব অবাক হয়ে ভাবতো, এত ভালো বন্ধু পেয়ে যে কেউ হঠাৎ গায়েব হয়, এটাই চরম অবাক হওয়া বিষয়।কখনো তার মনে হতো, অনেকবার বলতে চেয়েও বলতে পারেনি যে, “রুশা,তোমার সনু হয়তো ফেক আইডি ছিল, তোমার ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে গায়েব হয়েছে” আবার এটাই বা বলবে কি করে, সে তো সত্যিকারের বন্ধুর মতো কাজ উৎসাহ দিয়ে সুস্থ করে তুলেছে, সত্যিই তার অনেক অবদান।
“কিন্তু সে চলে গেল কেন, তবে কি তার কোনো বিপদ হয়েছে” এই চিন্তা করে রুশা আবার একদিন বলছিল, “আমি কিভাবে বিশ্বাস করব বলতে পারেন আপনি অন্য ব্যক্তি, এতো মিল আপনাদের দু’জনের মধ্যে, আদব কায়দা,আচরণ, এমনকি ম্যাসেজ লেখার ধরনও”-এর কোনো উত্তর দিতে পারে নি সুনন্দ বিস্ময় ভরে। সুনন্দ অবশ্য বারবার, রুশার কাছ থেকে তার সনুর ছবি চেয়েও ব্যর্থ হয়েছিল, পরে অবশ্য রুশা ছবি দেখিয়েছিল কিন্তু বলেছিল, “ওর ছবি দেখানোর দিব্যি দেওয়া আছে।” সুনন্দের মাথায় ঢোকেনি, একটা ছেলে কখন বলতে পারে, যে তার ছবি কাউকে না দিতে, এর জন্য দিব্যি দেওয়া কিসের! তবে ছবিটা দেখে কিন্তু সুনন্দ সান্যাল এর মানুষটাকে বেশ ভালই লেগেছিল অনেকটা তার মত যেন ভাবুক, উদাস চাহনি, খুব সুন্দর মিষ্টি মুখমণ্ডল।
হঠাৎ করেই একদিন রুশা আবেগ তাড়িত হয়ে জানালো যে,”জানো কি হয়েছে, তার সুনন্দ মানে সনু ফিরে এসেছে”-হঠাৎ এক ঝলক খুশির মাঝেও উদাস, অভিমানী গলায় বলেছিল সুনন্দ, “খুব খুব ভালো খবর রুশা,ৎতবে তো আমার ছুটি বন্ধু, আসি বিদায়! “
কিন্তু সুনন্দ এসব চাইলে কি হবে, মনে আছে হোয়াটসঅ্যাপে রুশা ভয়েস দিয়ে আবেগ তাড়িত হয়ে বলেছিলো, “প্লিজ এভাবে বলোনা, আমি তোমাকেও কোনদিন হারাতে চাই না, কথা দাও কোনোদিন তুমি এভাবে ভাববে না, তুমি ওই সময় আমায় পাশে থেকে উৎসাহ না দিলে আমি হয়তো মরেই যেতাম এতদিনে,তোমরা দুই সুনন্দ আসলে আমার কাছে একই মুদ্রার দুই পিঠ।”এই কথাগুলো শুনে আর কিছু বলার থাকতে পারেনা, আজও সুনন্দ ও রুশা পরস্পরের খুব ভালো বন্ধু। মানুষের জীবনে কোথাও এমন ভালো বন্ধু, খুব খুব দরকার, একদম যেন দখিনা বাতাস হয়ে বিরাজ করে হাত বাড়ালেই বন্ধুর মতো। রুশার সুনন্দ ফিরে এলেও, সে আর রুশা আছে নিজেদের মতো, তাতে এই সুনন্দ সান্যাল ও রুশা চৌধুরীর বন্ধুত্বে কোনো চিড় ধরে নি, ধরবেও না এই বিশ্বাসেই উভয়ে কোনোদিন সাক্ষাৎ না করলেও দিব্যি খাসা আছে ফেসবুক আইডির পাস ওয়ার্ড ভুলে আলাপের সূচনা থেকে।
-
প্রথম আলাপ
প্রথম আলাপ
-রেহানা দেবনাথ
আজ ভ্যালেন্টাইনের দিনে পিংকি কফি হাউসে বসে আছে রোহিতের জন্য। একমাস আগে ওদের দু’জনের পরিবার ছবি পছন্দ করে কথা মোটামুটি ভাবে এগিয়ে রেখেছে।রোহিত লন্ডন থেকে এম.বি.বি.এস. করে এখানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে প্র্যাকটিস করছে। ওর জেদ মেয়ের সঙ্গে আলাদা দেখা করে তারপর ফাইনাল জানাবে! পিংকির ও একই ইচ্ছে ছিল তারই ফল স্বরূপ ওদের আজ প্রথম আলাপের দিন। পিংকি মোবাইলে দেখল চারটে দশ ও একটু আগেই চলে এসেছে টেনশনের চোটে!সামনের টেবিলগুলোতে প্রেমিক প্রেমিকার দল ও তাদের হাতে গোলাপ দেখে ওর হারিয়ে যাওয়া কলেজের দিন আর নিশীতের সাথে প্রথম আলাপের কথা মনে পড়ে গেল।সেদিনও ছিল বাঙালির আরেকটি ভ্যালেন্টাইন ডে সরস্বতী পুজোর দিন। সেদিন ফার্স্ট ইয়ার এর ছাত্রী পিংকি, শম্পা,গার্গী আর চন্দ্রা মিলে প্রথম সিনেমা দেখতে যায় প্যারাডাইস হলে। সেখানে গিয়ে দেখে ওদের কলেজের পাঁচটি ছেলে ওখানে ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। ওরা হলো শম্পা, গার্গী র বয়ফ্রেন্ড আর তাদের বন্ধুরা।সেদিন প্রথম নিশীতের সঙ্গে প্রথম আলাপ হয়। আর প্রথম আলাপেই ওর প্রেমে পড়ে যায় পিংকি। তারপর থেকে পিংকি নিশীতের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে কিন্তু কোনদিন বলতে পারেনি যে ওকে ভালোবাসে! ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা হয়ে গেলে পিংকি যেদিন ভাবলো এবার সে তার মনের কথা বলে দেবে সেদিনই জানতে পারে যে গত ছয়মাস ধরে ফার্স্ট ইয়ারের সুন্দরী তনিমার সঙ্গে নিশীতের প্রেম চলছে। সেই থেকে ভাঙ্গা হৃদয়ে আর কাউকে জায়গা দেয় নি পিংকি।
গত তিন মাস হলো পিংকির বাবা খুব অসুস্থ তার শেষ ইচ্ছে মেয়ের বিয়ে দেখে যাওয়া তাই পাত্র দেখার হিড়িক লেগে গেছে। পিংকিও বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে আর না করতে পারেনি। তার শুধু একটা শর্ত পাকা কথার আগে পাত্রের সঙ্গে সে প্রথম আলাপ করবে! এর মধ্যে একজন উকিল ও একজন ব্যবসায়ী পাত্রকে প্রথম আলাপেই বাতিল করেছে পিংকি।পিংকি এইসব ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে পড়ে ছিল রোহিতের ডাকে সম্বিৎ ফিরে পায়।প্রথম আলাপেই রোহিত এত মন খুলে কথা বলে আর নিজের জীবনের প্রতিটি পাতা পিংকির সামনে মেলে ধরে তাতে পিংকি নিজের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা অনায়াসে বলে দেয়।রোহিত জানায় তাদের প্রথম আলাপ বছর খানেক আগে বনহুগলিতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে হয়েছিল যেখানে পিংকি তাকে সেভাবে পাত্তা দেয় নি বলেই হয়তো তার মনে নেই!পিংকি তখন বলে সেই জন্যই রোহিতকে এত চেনা চেনা লাগছে।পিংকি ফেরার জন্য প্রস্তুত হলে রোহিত উঠে দাড়িয়ে বলে এই আলাপই শেষ আলাপ নয় তো?
পিংকি মিষ্টি হেসে জনায়..না। আবার দেখা হবে আপনার বিয়েতে যেখানে প্রথম আলাপ হবে নন্দিনীর সঙ্গে যার জন্য আপনি দশ বছর অপেক্ষা করেছিলেন। সেখানে তো আলাপের জন্য যেতেই হবে।পিংকি বিদায় সম্ভাষণ জানিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে বাড়াতে নিজের মনে মনে বলতে থাকে এরপর কার সঙ্গে কখন কোথায় প্রথম আলাপ হবে বিধাতাই জানে! -
সব ধারা এক ঠিকানায়
সব ধারা এক ঠিকানায়
-সৌরভ ঘোষব্রহ্মপুত্র থেকে বাঁক নিয়ে রাজমহল
সেখান থেকে মুর্শিদাবাদ।দোটানা, ভাগিরথী না পদ্মা!
গন্তব্য ঝাপসা…
এক ঝাপটা কুয়াশা মাখা মেঘ বন্ধু পাতায়।
মেঘে মাদুর পেতে কিছুক্ষণ জিরোন,
উদ্বাস্তুদের সীমান্ত আলাপন।
ঠিকানা জিজ্ঞেস করতেই টিপটিপ।
বিহুর সুর ঝলমলিয়ে বলে-
“আমরা চুলোহীন মেঘে পুড়ি,
গোত্রহীন পোষ্টার পরিচয় লিপি,
কোনোখানেরই নয়।
সম্বল তাড়া,
শুধু তাড়া…”মেঘ নামিয়ে দেয় মোহনায়,
গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-পদ্মা’র ঢেউ ফুটকিতে মিলায়… -
প্রথম আলাপ
প্রথম আলাপ
-তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়আমারই মনের রঙে এঁকেছি তোমায়–প্রথম আলাপে।
আমার অপেক্ষার পাত্র ভরে উঠেছিলো- শুধু একপলক তোমাকে দেখে।
তারপরে শুধুই পূর্ণতা।
কখন যেন ভালোবাসা গোলাপ হল।
তার মিষ্টি গন্ধ পেলেই বুঝতাম তুমি এসেছো।
যখন ফাগুন হাওয়া গান গাইত।
যখন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙে সেজে উঠত।
তখনই তোমার আবীর রাঙা মনকে ছুঁতে পারতাম।
তোমার হাত ধরে হেঁটে যেতাম, দূরে-বহুদূরে।
কোন কথা বলতেনা তুমি-আমিও না।
শুধু নীরবতা অনেক কথা বলে যেতো।
পশ্চিম আকাশে মায়াবী গোধূলি আলো হেসে বলে যেতো…যাচ্ছিইই।
সেই মায়াবী স্তব্ধতা থেকে ফিরে আসতাম স্বপ্নের ডানায়।
দু’চোখের প্রশ্রয়ে বেড়ে উঠত আলো–ভালোবাসার আলো।
আর আমরা ভেসে যেতাম বসন্তের উতল প্রেমিক হাওয়ায়।। -
“পরশমণির আলাপ”
“পরশমণির আলাপ”
-সুমিতা পয়ড়্যাসাহিত্যের আঙিনায় আলাপ,আলাপীমন
সৃজনশীল মনের ছটা, আলোক অনুক্ষণ।
রুচিশীল এক দিশার আলোয় প্রকাশ;
সাহিত্যের আকাশে সাধক মেলায় একরাশ।
প্রতিভার অজস্র ফুল ঝরে দিকে-দিগন্তরে
সুবাসিত দ্যুতি ছড়ায় অন্তরে অন্তরে।
নতুন প্রতিভা নতুন প্রয়াস উদ্যমী স্বপ্ন—–
আলাপীমনের সমৃদ্ধিতে ঋদ্ধ মন মগ্ন।
সুস্থ সাহিত্যের এক পৃথিবীর আগুনের পরশমণি,
সুন্দর আলাপে জমজমাট আলাপী মনের খনি।
উৎকৃষ্ট চিত্তের শুদ্ধ কল্পনার জাল বুনে,
রুচির আস্বাদনে চেতনা আলাপী মনে;
কবিতা-কাব্য সমারোহ, আছে গল্প
তারতম্যের সঞ্চয়নে আলাপন স্বল্প স্বল্প।
কাব্যের তরী আলাপীমন এক সোনার তরী
জৌলুস ভরা সম্পদে মনের ক্ষুধা ভরি।
আলাপনের মালা হাতে ডাকে আলাপীমন;
ভালোবেসে বলে শোন মন দিয়ে শোন!
হরণ করে হৃদয় নিল আলাপের সাথে
আলাপী মন করজোড় করি দুই হাতে।
দূর-বহুদূরে ছড়াবে নাম সুরে সুরে
লেখক-কবি আসবে বারংবার তোমার দ্বারে,
ছন্দোবদ্ধ সৃষ্টির হৃদ পাপড়ি মেলে——
আপনার আপনায় ডুব দিয়ে আপনি খেলে।
সুন্দরের প্রতীক মনোহর সৃষ্টির উল্লাসে
আলাপী মন গড়ে ওঠে আলাপের রঙিন বিশ্বাসে।
যুগে যুগে আলাপ হোক তব স্রষ্টার দ্বারে,
মোদের আসন পাতা রবে তব শ্রেষ্ঠত্বের তরে। -
প্রথম আলাপ
প্রথম আলাপ
-অণুশ্রী দাসখুব সুন্দর রোদ ঝলমলে একটা দিন ছিল সেদিন,
কলেজের সবুজ কার্পেটের গা বেয়ে দুপুর নামছে একটু করে,
ঘড়ির কাঁটার দৌরাত্বে থেমে এসেছিল সারাদিনের কোলাহল,
পাঁচটায় এক্সট্রা ক্লাস যখন শেষ হল,
বাইরে বেড়িয়ে দেখলাম কৃষ্ণচূড়ার আভায়,
গোধূলি সোহাগে মেতেছে,
তখন রাধার অভিসারী মন কেমনের মতো
অজানা শূন্যতায় ভরেছিল আমার সারাটা বিকেল,
তখনও তোমার সাথে হয়নি আলাপ,আড়মোড়া ভেঙে যখন সকাল জাগছে,
কুয়াশার চাদরে উষ্ণতা ছুঁয়ে,
তখন আমার আঙুল মেতেছে,
সেতারের হিন্দোল আলাপনে,
সেই মুহূর্তের স্নিগ্ধতায় যখন আমি ভাসছি,
শুদ্ধ সোনার কনায়, সেই আমির সাথেও
তখনও হয়নি তোমার আলাপবাইরের ধূসর ঘনঘটা,
শহরজুড়ে যখন অরাজকতা চালাচ্ছে,
আমার মনের আকাশেও তখন তুমুল ধ্বংসের ঝড় উঠেছিল অহেতুক কলঙ্কের দাগে,
তার ঠিক পরই বসন্তের শেষ,
বিভৎস বাস্তবের চোখ রাঙানিতে
নিজেকে যখন গুটিয়ে নিচ্ছি,
আমার সব ভালোলাগা,নিজস্ব মতামতের দাবি বিকিয়ে দিয়েছি সময় স্রোতে
তখন সেই একাকী যন্ত্রণার শেষ মুহূর্তে তোমার সাথে প্রথম আলাপ শুভদৃষ্টির বিনিময়ে,দিন এগিয়েছে, প্রথম প্রথম হাত ধরার শিহরণ কাটিয়ে,
আজ আমি এক অন্য মানুষ, তোমার সন্তানের মা,আমার আমি নিঃশেষ হবার ঠিক আগেই,
আগলেছ তুমি ছন্নছাড়া এক শরীরকে,
নতুন করে অঙ্কুরোদ্গমের মতো,
আমার মনে প্রাণ সঞ্চার করেছে ,
তোমার খোলা মনের ছাদ,
আমাদের সেই ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাকে
মোহমায়ায় কাটানো প্রতিটি রাতের সাক্ষী আছে
জ্যোছনায় ঢাকা এক আকাশ তারা।তোমার সাথে আমার সম্পর্ক,
হলুদ সুতোয় বাঁধা পরার অনেক পর,
বুঝেছি কতটা তুমি আমাকে ভালোবাসো,
কিন্তু, আজ বুঝতে পারছি সেই জ্যোছনা,
এক বাগান ফুলের সুভাষে আমাকে ভরিয়ে রাখা,
কিংবা আমার অন্তঃসত্ত্বার মধ্যে সদা জাগ্রত সুরের মূর্ছনা,
যা কিনা আমি ফেলে এসেছিলাম বহু আগে ,
সেই সুরের জীবনেই আমাকে প্রতিষ্ঠা করা-
এগুলো তোমার সবই নিখুঁত পরিকল্পনা ছিল মাত্র ,
যাতে আমি কষ্ট না পাই তোমার চলে যাওয়া নিয়ে
এসবের মাঝে ব্যস্ত থেকে যেন তোমাকে মনে করারই না সুযোগ পাই,,কিন্তু আজও মনের প্রতিটা স্কোয়ার ইঞ্চিতে তোমার অভ্যেসের ছাপ,
আমার কানের পাশে ফিসফিসিয়ে কারা যেন বলে চলে তোমার আমার পুরনো সংলাপ,
আজ তো শুধু ধুধু প্রান্তর,
তোমাকে ছুঁতে চাওয়ার দীর্ঘশ্বাসে ,
গালের দুঃখে জমা ঠান্ডা উত্তাপ
জান,এখনও স্বপ্ন দেখে বাঁচি
আবার নতুন করে প্রেমে পড়বে
আমাদের সন্ধ্যে সাঁঝের ‘প্রথম আলাপ’…।। -
আলাপ-আনন্দ
আলাপ-আনন্দ
-অমিত কুমার জানাকিছুক্ষণের মধ্যেই প্রখ্যাত সাহিত্যিক ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় মঞ্চে উঠবেন। আজ ‘কল্পসাহিত্য’ পত্রিকার প্রথম সংখ্যার আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান উক্ত সাহিত্যিকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। সকাল থেকেই অজয়ের মন ঐ সাহিত্যিকের সঙ্গে আলাপের জন্য অধীর উৎকণ্ঠায় অপেক্ষমান। কল্পসাহিত্য পত্রিকায় অষ্টাদশ বর্ষীয় অজয়ের লেখা একটি গল্প স্থান পেয়েছে এবং সেই সুবাদে সে আজ এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত। অজয় সেই বাল্যকাল থেকেই ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের অনেক লেখা পড়েছে। আজ উনার সঙ্গে যদি একটু আলাপচারিতার সুযোগ পায় তাহলে সত্যিই তার মন অনাবিল আনন্দে ভরে উঠবে। বিশিষ্ট সাহিত্যিক মঞ্চে পদার্পণ করলেন। সারা হলঘর হাততালিতে ভরে উঠল। মোবাইল ক্যামেরায় কত যে ছবি তোলা হল তার কোন হিসেব নেই। মুখোমুখি এহেন বিখ্যাত সাহিত্যিককে অজয় যেন খুশিতে ফেটে পড়লো। মঞ্চে ডেকে নেওয়া অনেক নতুন কবি, লেখকদের। বিশিষ্ট সাহিত্যিক তাদের হাতে তুলে দিলেন নিজের স্বাক্ষর করা শংসাপত্র। অজয়ের নামও ঘোষণা করা হলো। সে এই জগতে একেবারেই নতুন। ভয় মিশ্রিত উত্তেজনায় দুরদুর করে বুক কেঁপে উঠলো। সে ধীরগতিতে মঞ্চে আসীন হলো। ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় তার হাতে তুলে দিলেন শংসাপত্র। অজয় তাঁকে বললো,-” আমি আপনার অনেক লেখা পড়েছি, আমি আপনার ভীষণ অনুগামী।”
প্রখ্যাত সাহিত্যিক অজয়কে সানন্দে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। অজয়ের অনুরোধে তার সাথে একটা সেলফিও তুললেন।
অনুষ্ঠানের শেষে বনভোজনের ব্যবস্থা ছিল। উক্ত সাহিত্যিক নিঃসংকোচে অজয়ের সাথে বসে পরম তৃপ্তিতে বনভোজন সারলেন। অজয়ের বহুদিনের দেখা স্বপ্ন আজ সত্যি হলো। তার চেয়েও যে ব্যাপারটা অজয়কে অভিভূত করলো তা হলো ঐ বিশিষ্ট সাহিত্যিকের নির্ভেজাল অমায়িক ব্যবহার। উনার সঙ্গে অন্তরের আলাপে সত্যিই অজয়ের মন অপার খুশিতে ভরে গেল। -
আলাপ থেকে হৃদ্যতা
আলাপ থেকে হৃদ্যতা
-শচীদুলাল পাল২৭ শে জানুয়ারি ‘১৯। মৌলালি। যুব কেন্দ্র।বিবেকানন্দ অডিটোরিয়াম। কলকাতা। সাহিত্যের আঙিনায়, আলাপি মন ওয়েব ম্যাগাজিনের প্রথম বার্ষিক মুদ্রণ সংখ্যা আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শুরুর কিছু আগেই পৌঁছে গেলাম।যাদের এতদিন ফেসবুকের পেজে ওয়েব সাইটে দেখেছিলাম তাদের চাক্ষুষ দেখলাম। একে অপরের সাথে দেখা সৌজন্য বিনিময়। অমল দাস আর বিভুতি ভূষন বিশ্বাস ছাড়া কেউ পূর্ব পরিচিত নয়। একে অপরের সাথে আলাপে মশগুল।
আমাদের সামনে উপস্থিত হলেন অন্যতম কর্নধার রীনা চ্যাটার্জি। তার সহৃদয় ব্যবহারে মুগ্ধ হলাম।
এরপর অনুষ্ঠান শুরু হলো। রীনা চ্যাটার্জির বক্তব্য রাখছিলেন। লক্ষ্য করলাম শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হলঘরে চমৎকার সাউন্ড সিস্টেম। নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের শব্দও শোনা যাচ্ছে। বক্তব্যে তিনি বলছিলেন সংস্থায় তার মেয়ের অবদানের কথা। বিদেশে থাকে। আসতে পারেনি। বলতে বলতে তিনি আবেগ তাড়িত হয়ে গেলেন। তার স্নেহ মমতা এতটা আবেগময় যে তিনি তার বক্তব্য সমাপ্ত করতেই পারলেন না। তার নীরবতায় এক অব্যক্ত কান্নার ধ্বনি শুনতে পারলাম। মনটি তার নারকেল ফলের মতো।বাইরে বজ্রকঠিন, ভিতরে শাঁস ও জলের মত।স্বরচিত কবিতা পাঠ শুরু হলো। আমার নাম ডাকলে আমি মঞ্চে উঠলাম। পাঠ শেষে যথারীতি করতালি। ‘কিসের অহংকার’ স্বরচিত কবিতা পাঠ শেষে ধীর পদক্ষেপে নিজ আসনের দিকে এগিয়ে আসছি। হঠাৎ এক তরুণী মহিলা নিজ আসন থেকে সবার সামনে উঠে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল। বলল “আপনার কবিতা আমার খুব ভালো লাগে। আমি আপনার অনুরাগী”। তার হাসবেন্ডকে ডেকে পরিচয় করিয়ে দিল। হাসবেন্ডকে বলল “উনি গুরুজন ব্যক্তি। নমস্য। ছবি তুলে দাও। তারপর আমার সাথে অনেক ছবি ও সেলফি তুলল। যা আজও স্মৃতি হয়ে থাকবে। আমি বহু মঞ্চে বহু কবিতা পাঠ করেছি। অসংখ্য করতালি পেয়েছি কিন্তু পাঠ শেষে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম এক সহপথিক অচেনা কবির কাছ থেকে পেয়ে নিজেকে গর্বিত বোধ করলাম। এই প্রণামগুলি আমার প্রেরণা হয়ে থাকবে। মেয়েটির নাম দীপালী পাল।এডভোকেট বারাসাত কোর্ট।
জীবন নদীর স্রোতের মত বহমান। জীবনে চলার পথে নিত্যনতুন মানুষের সাথে আলাপ হয়েছে। কিন্তু আমি শুধু লিখছি ইদানিং সাহিত্য সংস্কৃতিতে যুক্ত ব্যাক্তিদের সাথে প্রথম পরিচয় ও আলাপের কথা।পারিজাতের সাহিত্য পত্রিকার কাব্য সম্মাননা ২০১৯ ও স্বপ্না বিশ্বাস সাহিত্য স্মৃতি পুরস্কার -২০১৯ গ্রহণ করলাম আন্তর্জাতিক বইমেলা কোলকাতায়। অনুষ্ঠানে আলাপ থেকে আন্তরিকতায় স্থান পেল তিনজন। প্রথম প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সাংবাদিক কবি ও গবেষক বরুন চক্রবর্তী (অতন্দ্র), দ্বিতীয় বাচিক শিল্পী, অভিনেত্রী সঞ্চালিকা সর্বানী চ্যাটার্জি। তৃতীয় মৌ নামে এক অতি সাধারণ ঘরের অল্পশিক্ষিতা মেয়ে।
বরুন চক্রবর্তী। প্রথম আলাপে জানলাম হৃদয়টি দরাজ, আবেগময়, প্রভূত জ্ঞানী। বৃক্ষ যেমন ফলভারে নত হয়। তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তি নম্র হয়। ‘বিদ্যা দদাতি বিনায়াং’।এত শক্তি এত কলমের জোর থাকা সত্ত্বেও হৃদয়টি নির্মল।কবিতা পাঠ করতে করতে আবেগ তাড়িত হয়ে চোখে জল এসে গেল।
উপস্থিত অনেক কবি লক্ষ্য করল। আমি বললাম “কবির স্বরচিত কবিতা সন্তানের মতই প্রিয়”।কবি সম্মেলনে বা প্রকাশিত পুস্তকে অন্যের কবিতাগুলি সবাইকে মনযোগ দিয়ে শোনা বা পড়া উচিত। কবি যখন কবিতা লেখে তখন সে তার সমস্ত বিদ্যা উজাড় করে সেরাটুকু দেয়। তার অবদানকে সম্মান জানানো উচিৎ”।বরুন বাবু বললেন “আমার নামে আরোও কয়েকজন লেখক আছে।সেজন্য আমি আমার নাম লিখি বরুন চক্রবর্তী (অতন্দ্র)।আমি একজন যুক্তিবাদী নির্বিবাদী লেখক। গদ্য পদ্য দু’টোতেই লিখি।মানুষের বিপদে আপদে পাশে থাকার চেষ্টা করি।সমাজ সচেতক,মুক্তমনা। বিগত কয়েক দশক ধরে লিখে আসছি বিভিন্ন পত্রিকায়। টালিগঞ্জে অনেক সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত। বিভিন্ন পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছি। সাহিত্যের টানে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় বাংলাদেশ মধ্যপ্রদেশ, সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ও মাসাধিককাল ইউরোপ ভ্রমণ করেছি এবং নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দিল্লি থেকে ডঃআম্বেদকার ন্যাশনাল ফেলোসিপ এওয়ার্ড পেয়েছি। তার সাথে আবার সাক্ষাৎ হলো কল্পসাগর, যুথিকা, আন্তরিক,ও মেঘদুত যৌথ কবি বাসরে কলকাতা বইমেলায়। সেদিন ত অনেকটা সময় আমার সাথেই কাটালেন। অনেক খোলামেলা আলোচনা করলেন। এক কথায় আমাকে তার যে ভালো লেগেছে এবং কবিতা ও পঠন ভঙ্গিমা ভাল সেটি বলেই দিলেন।”
তার বাড়ীতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। সেদিন প্রথম সাক্ষাৎ হলো সর্বগুণসম্পন্না শিল্পী সর্বানী চ্যাটার্জির সাথে। তিনি একাধারে বাচিক শিল্পী, অভিনেত্রী, সঞ্চালিকা। ডি.এ.বি. মডেল স্কুল আই.আই.টি খড়গপুরের প্রাক্তন শিক্ষিকা। Ex. Student of NIFFA Kolkata (acting).
উন্নত মানের ফিল্ম করেছেন। আলাপচারিতায় তিনি বললেন ‘এক ফিচার ফিল্ম করেছেন নাম তার ‘তার গল্প’,। ক্যানসারের উপর এই ফিল্মে তিনি এক নার্সের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। বিশিষ্ট ভূমিকায় আছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।”
এরকম এক গুণী মহিলার সাথে আলাপ হয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আলাপ থেকে ঘনিষ্টতা ও আন্তরিকতা সৃষ্টি। এখন তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন। আমার বিষয়ে নিজে থেকেই বললেন “আপনার কবিতা ও কবিতা পাঠের কলাও ভাল লেগেছে। আপনি সরল প্রকৃতির মানুষ”। আমি বললাম শত্রু মিত্র সবাই এই কথায় বলে। তার মত এক বিশিষ্ট ভদ্রমহিলার আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ। সুগন্ধুযুক্ত ফুল যেমন আদরণীয় তেমনি এই মহান শিল্পী আমার হৃদয়ে চির বিরাজ করবে। তার এক বিশেষ গুণ যে এতবড় মাপের মহিলা হওয়া সত্ত্বেও তিনি সাধারণ মানুষের সাথে মিশতে দ্বিধা বোধ করেন না। পারিজাত সাহিত্য পত্রিকার কলকাতা বই মেলা অনুষ্ঠানে সাক্ষাত হলো মৌ নামে এক অতি সাধারন মেয়ের সাথে।মেয়েটি কবি।পারিজাতে কবিতা লেখে। কখন চাক্ষুষ দেখিনি। হঠাৎ মেয়েটি এসে আমার পা ছুঁয়ে প্রণাম করলো। বলল “আপনার সাথে ফোটো তুলতে চাই।” স্বামীকে বলল “ছবি তুলে দাও”। বলল “আপনাকে আমি খুব শ্রদ্ধা করি। আপনার বাস্তববাদী কবিতা আমার খুব ভালো লাগে। মন ছুঁয়ে যায়।আমি একবার ফেসবুকে লিখে ছিলাম কবিতা লেখা ছেড়ে দেব। আমি শিক্ষিত নই।মাধ্যমিক পাশ”। তখন আপনি লিখেছিলেন “রবীন্দ্রনাথ কোনো স্কুল কলেজে পড়েনি। কোনো ডিগ্রী ছিলনা। তুমি লেখো।” মেয়েটির নাম মৌ।বলল, “আপনার প্রেরণায় আমি লেখা ছাড়িনি। এবারতো দ্বিতীয় সারিতে নাম।”
তার ব্যাক্তিগত জীবনের কাহিনী উজাড় করে জানাল।সে বলল “এখন আমার বয়স ২০ আমি ছোটোবেলা থেকে একটি ছেলেকে ভালবাসতাম। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ভালবেসে তাকেই বিয়ে করলাম। আমরা গরীব। ছেলের পরিবার আমাদের বিয়েকে মেনে নিল না। আমরা ঘর ছেড়ে অন্যত্র ভাড়া বাড়ীতে থাকতাম। দীর্ঘদিন ভাড়া বাড়ীতে কাটাবার পর এখন আমি শ্বশুর বাড়ীতে ঠাঁই পেয়েছি। আমার কাজে কর্মে পরিবারকে খুশি করেছি। আমাকে পড়বার অনুমতি দিয়েছে। আমি মাধ্যমিক পাশ করেছি।শ্বশুরবাড়ীর মন জয় করেছি। এখন তারা আমাকে ভালোবাসে। মাঝখানে আমি একবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। শাশুড়ি মা রাত জেগে আমার দেখভাল করেছিল। আমি ছিলাম অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু আমার গর্ভস্থ সন্তানকে বাঁচানো যায়নি। এছাড়া তাদের অনেক প্রেম কাহিনী জানিয়েছিল। আমি বললাম “এতো চিরন্তন- পারো দেব দাস। কিন্তু পারোর সাথে দেবদাসের বিয়ে হয়নি। তুমিতো তোমার প্রেমিককে বিয়ে করেছ। তুমিতো সৌভাগ্যবতী। “ -
সাচচা আদমি রাম খিলাবন
সাচচা আদমি রাম খিলাবন ..
-জ্যোৎস্না ভট্টাচার্য ত্রিবেদীমাই বাপ গলতি হো গেইলন
ইস বার কি তরহা মাফ কর দেই….
কথাটা বলে দু’হাত জোড়ে দাঁড়ায় এসে রামখিলাবন
এক পোয়া দুধে এক পোয়া জল মেশানোই যার কাজের ধরন ……
12 টা বাজে….দুধ দিতে রোজ দেরির কারণ কি ?
জবাব এর সাথে হলদে দাঁতের উদার হাসি ফ্রী ….
হেসে বলে মালকিন জল এলো আজ দেরিতে …
তাই তো দেরি দুধ নিয়ে আজ আসতে তোমার বাড়ীতে
দুধ জলের সমীকরণ জানে সর্বজন ….
তাই নতুন কোন বিশ্লেষণ এর নাই কো প্রয়োজন ….
খালি একটা প্রশ্ন রোজই আমার মাথায় ঘোরে তাই,
সাহস করে সেদিন তারে বিনয়ে শুধাই ….
ও রামু ভাই ….জলে দুধ …না দুধে জল ….
কোনটা মেশাও বলো …..
রামু আবার দু’হাত জোড়ে বত্রিশ দেখাল …
বললো হেসে “মাইজি আমি সাচচা আদমি আছি …..
ঝুঠ কভি বলবো না এহি কসম খাচ্ছি …..
রোজ সবেরে কোলের জোল ( কলের জল )
আধা বালতি ভরি …..
দো লোটা ( দু’ ঘটি ) দুধ আমি তাতে উপুড় করি ….
জলে দুধ …..না দুধে জল ….জানা হলো ..আর
দেরি কেনো ..পাতলা কেনো …সব হলো পরিস্কার,
সচচা আদমি রামখিলাবন ….বলার কিছুই নাই ..
দুধের দামে জল কিনে আজ খুশি আমি তাই ….