• কবিতা

    কবিতা- একটা রাতের জন্য

    একটা রাতের জন্য
    – সীমা চক্রবর্তী

     

     

    রাত্রি জাগা স্বভাব আমার
    আঁধার আমার সাথী,
    তুমিও এসো, কাব্যিক চয়নে
    ছন্দের মালা গাঁথি।

    তারায় ভরা আকাশের নিচে
    সবুজ শ্যামল ঘাসে,
    এসো না একবার চুপটি করে
    বসতে আমার পাশে।

    জমাট নীরব নিঃস্তব্ধ রাতে
    হৃদয়ের ধ্বনি শুনবো,
    খসা তারায় আঁচল ভরিয়ে
    স্বপ্নের জাল বুনবো।

    রাত্রিজলে ভিজবো যখন
    জাগবে শিহরণ মনে,
    হারাবো তখন মধ্যনিশায়
    সুনিবিড় আলিঙ্গনে।

    নিঝুম রাতের গন্ধে আছে
    মাতাল করা নেশা,
    পাগল পাগল সেই সুরাতেই
    প্রাণের সুধা মেশা।

    ভেজা ঘাসে থাকবো শুয়ে
    সাজবো দুজন বন্য,
    হবে কি তুমি সঙ্গী আমার
    একটা রাতের জন্য ?

  • কবিতা

    কবিতা- ভালো আমিও বেসেছিলাম

    ভালো আমিও বেসেছিলাম
    – সীমা চক্রবর্তী

     

     

    আকাশ জুড়ে রামধনু রঙ দেখো যদি তুমি
    বৃষ্টি শেষে স্বচ্ছ মেঘের দেখো অগ্রগামী..
    যদি দেখো তুলসী তলায় জ্বলছে দীপের আলো,
    জানবে তবে আমিও তোমায় বেসেছিলাম ভালো।

    এই তো সেদিন নদীর কূলে পাঠিয়েছিলে ডাক,
    তোমার আসার পথ চেয়ে চেয়ে স্তব্ধ আমি বেবাক।

    একটা দুটো খেয়া আসে, ছলাৎ ছল্ জলে,
    আসবে কি না ভেবে মনে টানাপোড়েন চলে।

    দিন ফুরিয়ে রাত্রি এলো উঠলো নদী জেগে,
    ভাসলো দুকূল ভরা কোটালে পাড়ে আঘাত লেগে।

    জানিনা কখন ভাসালো আমায় আছড়ে এসে ঢেউ,
    হঠাৎ করেই ডুবে গেলাম জানলো নাতো কেউ।

    আজও আছি তোমার জন্য কায়া বিহীন ছায়া,
    আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়েছি তোমার সম্মোহনী মায়া।

    কখনো যদি দেখো তুমি চাঁদের গায়ে দাগ,
    শেষ বিকেলে হলুদ রঙা ভাসছে অস্তরাগ….
    যদি দ্যাখো ভোরাই সূর্য গিলছে রাতের কালো
    জানবে তবে আমিও তোমায় বেসেছিলাম ভালো।

  • কবিতা

    কবিতা- নতুন প্রতিশ্রুতি

    নতুন প্রতিশ্রুতি
    সীমা চক্রবর্তী

     



    রাত্রির ঘোর অন্ধকার ঠেলে এলো নতুন ভোর
    কুসুম কুসুম রঙে ভরলো আকাশ….
    হয়তো এবার শেষ হবে বিশের বিষময় হাহুতাশ।
    হিম হিম কুয়াশায় ভেজা পাতা জানে রাত্রির বিষন্নতা
    জানে ক্ষণকাল তার আয়ু
    তারপর অনাদরে ঝরাপাতা ……

    হয়তো বদলাবেনা কিছুই,
    তবু মুঠো মুঠো গোলাপ পাপঁড়ির মতো
    হাজার স্তোকবাক্যের অনুরণন
    বিশের বিষ থেকে এবার হবেই জীবন সুধার প্রস্রবণ।
    সত্যিই কি হবে…? আশ্বাস সাজাই…
    যদিও এসব স্তুতির নেই কোনো কারণ।

    একটা বিষময় বছর শেষে
    নতুনের চৌকাঠে দাঁড়িয়েছি এসে,
    ভালো হোক… ভালো হোক… সব ভালো হোক
    নতুন বছর ভুলিয়ে দিক
    ফেলে আসা যাবতীয় দুঃখ শোক।
    এই দূরত্ব ঘুচে যাক
    কোনঠাসা জীবন আবার পুরনো ছন্দ ফিরে পাক।

    ভুলতে চাইলেও যাবে না ভোলা
    বিভীষিকাময় দুহাজার কুড়ির খেলা,
    আজ থেকে সে থাক ইতিহাসের পাতায়…
    নববর্ষ নিয়ে আসুক নব প্রাণ – সুধা
    নতুন প্রতিশ্রুতিতে ভাসুক বসুধা।

  • কবিতা

    কবিতা- মনের কথা

    মনের কথা
    -সীমা চক্রবর্তী

     

     

    মনটা যখন ডাক পাঠালো
    স্মৃতির মফঃস্বলে,
    পুরনো যত মনের ময়ুর
    ভাসছে দেখি জলে।

    ফেলে আসা নীরব কথা
    স্বপ্ন পোড়া গন্ধে,
    ধূসর পাতায় রয়েছে লেখা
    ভুলে যাওয়া ছন্দে।

    ভোরাই মেঘে যখন মেশে
    রক্ত বিন্দু বিন্দু,
    ভাবি তখন আর – জন্মে
    হবো সারস – সিন্ধু।

    গোধূলি শেষে রঙিন আকাশ
    সন্ধ্যা মেখে নামে,
    মন – খারাপির বিকেল যেন
    ক্লান্ত হয়ে থামে।

    চলার পথে প্রতি বাঁকে
    বাড়ে জীবনবোধ,
    ছোট্ট ভুলও মাসুল তোলে
    চরম প্রতিশোধ।

    চিতায় পুড়ে ভস্ম হয়
    স্বপ্ন স্মৃতির স্তুপ,
    মনের ভিতর ভবনাগুলো
    ভীষণ রকম চুপ।

    হারিয়ে যাচ্ছে সঙ্গী সাথী
    হারাচ্ছে আপনজন,
    স্মৃতির ফলক ব্যথার বিষে
    হচ্ছে মন – কেমন।

    নির্ঘুম রাতে আকাশে দেখি
    হাজার তারার ভিড়ে,
    পূব কোণের ঐ শুকতারাটা
    ডাকছে তার নীড়ে।

    স্মৃতি গুলো যায়না মুছে
    আসে একলা হলে,
    ভিজায় বালিশ, চুপি চুপি
    আঁকড়ে শয্যা কোলে।

    একটা চিঠি রঙিন খামে
    আসবে দিনের শেষে,
    স্মৃতির বোঝা কাঁধে তুলে
    যাবো অচিন দেশে।

  • কবিতা

    কবিতা- চুপ

    চুপ
    – সীমা চক্রবর্তী

     

     

    ছোট্ট বেলার মাঠ
    কাজলা নদীর ঘাট,
    শুকনো পাতার ভিড়
    রবি সোমের হাট।

    নদীর স্বচ্ছ জল
    জোয়ারে ছলাৎছল,
    উফান নদীর মাছ
    আনন্দে খলবল।

    ভোরের আকাশ চুপ
    মিষ্টি তার রূপ,
    সবুজ গাছের পাতায়
    শশির ঝরে টুপ।

    সকাল আসে একা
    করে না কেউ দেখা,
    যানবাহনের ভিড়
    এখন সব ফাঁকা।

    ধ্যানে মগ্ন দুপুর
    স্তব্ধ তার নুপুর,
    বিরসবদন চোখে
    ঝরছে জল টুপুর।

    শান্ত বিকাল বেলা
    নানা রঙের খেলা,
    দিনের শেষ আলোয়
    অস্তরাগের মেলা।

    ডাকছে বুড়ো ব্যাঙ
    বেসুরো ঘ্যাঙরঘ্যাঙ,
    শান বাঁধানো ঘাটে
    ভাঙলো বুঝি ঠ্যাং।

    বন্দী মানুষ জন
    অন্ধ ঘরের কোণ,
    জোয়ার ভাটা মনে
    প্রবল আলোড়ন।

    ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক
    ওড়ে জোনাই ঝাঁক,
    তাদের দেখেই বাঁচা
    কান্না তোলা থাক।

    রাত্রি নিকষ কালো
    চাঁদের নেই আলো,
    এসব কিছুই নিয়ে
    থাকতে হবে ভালো।

  • কবিতা

    কবিতা- যদি বলো

    যদি বলো
    – সীমা চক্রবর্তী

     

     

    যদি বলো, এখানেই থেমে যাবো আমি,
    হৃদয়ের কাকচক্ষু সরোবরে
    সাঁতরাবো না আর
    এঁকে নেবো তপ্ত মরু – চর
    কাজল হীন চোখের এপাড় ওপাড়।

    যদি বলো, কষ্টগুলো কে চির নির্বাসন পাঠাবো,
    দগদগে যন্ত্রণার কবিতা লিখবে না কলম আর
    জ্যোৎস্নার মতো মিঠে নরম সুখ জড়িয়ে বুকে
    জীর্ণ ক্যানভাসে জীবন্ত হোক
    মন রাখা ভালোবাসার।

    যদি বলো, বেয়াদব ইচ্ছেদের ছেঁটে দেবো ডানা
    সব সাদা পালক মেঘের মতো ঝরিয়ে দেবো,
    বিন্দু বিন্দু জমা রক্ত শুষে নেবে ঠোঁট
    অবাধ্যতার নগরীতে হোক ধ্বংসাত্মক সন্ত্রাসী হানা।

    যদি বলো, দূরত্ব টা রাখবো না আর আমাদের মাঝে,
    মুখোমুখি…শুধু চোখে চোখে কথা হোক,
    ভুলে যাবো আদিম মৃত্যু শোক।
    আয়নার বিম্বে ছায়া – কায়ায় যতটা ফাঁক
    আমাদের নিবিড়তাও ঠিক তেমনটাই থাক।

    যদি বলো, কিছুটা ভালোবাসা এখনো বাকি…
    তবে পুরনো ব্যথার ঘূণে রাখবো না ঢাকাঢাকি।
    যখন প্রবল শীতে চাঁদ যায় গলে
    নীল জ্যোৎস্না মরে সবুজের হলাহলে,
    কিছু ক্ষণিকের আহ্লাদে
    চিৎকারে জানাবো ঝুঁকে পড়া বুড়ো পৃথিবীকে —
    যা চেয়েছি… পেয়েছি এই অবেলায়,
    ভানুমতীর খেলায়…
    অভিমান পুষে কত আর চুপ করে থাকি।

  • কবিতা

    কবিতা- প্রাপ্তি

    প্রাপ্তি
    – সীমা চক্রবর্তী

     

     

    আমি তোমার মাঝে সে স্বপ্ন খুঁজি
    ভাঙে যা হামেশাই,
    আমার আমি কে পেয়েছি তোমাতে
    বড় সুখি আমি তাই।

    ক্রোশ খানেক পথ ঘুরে ঘুরে আমার
    কেটেছে জীবন আধা,
    অবশেষে খুঁজে পেয়েছি তোমাকে
    আমি পাগলিনী রাধা।

    আমি তোমার বিরহে কেঁদেছি কত
    গেয়েছি বিরহী গান,
    আউল বাউল সে গান হাওয়াতে
    রেখে গেছে পিছুটান।

    বুক ভরা আশা ছিল যে প্রাণে
    দরজা ছিল যে হাট,
    ঠিকানা চিনে তুমি আসলে ঠিকই
    পেরিয়ে যক্ষের ঘাট।

    আমি পেয়েছি তোমাকে শেষ লগ্নে
    হারাতে দেবোনা আর,
    তোমার পা’য়ের চিহ্নে পা ফেলে আমি
    ভবসাগর হবো পার।

  • কবিতা

    কবিতা- কি করে ফেরাবো

    কি করে ফেরাবো
    – সীমা চক্রবর্তী

     

     

    যদি কখনো তুমি, ভোরাই আকাশের লালিমা মেখে
    আমার উঠোনে দাঁড়াও,
    কিংবা চোখের পাতা আলতো ছুঁয়ে, ঘুম ভাঙাও…
    সারাদিনের সঙ্গী হতে ভরসার হাত বাড়াও…
    আনমনা মনে জাগাও জীবন দুর্বার…
    আমি কি করে ফেরাবো তোমায় রোজকার!

    যদি কখনো উদাস দুপুরে ক্লান্ত পা’য়ে
    চাও আমার শীতল ছায়ানীড়….
    ক্ষণকালের বিশ্রাম, মলয় বাতাসে সুস্থির,
    কিংবা কোনো তৃষ্ণার্ত পাখি হয়ে
    এক ফোঁটা জলের জন্যে
    খুঁজতে খুঁজতে হন্যে…
    এলে আমার দুয়ার,
    আমি কি করে ফেরাবো তোমায় বারবার?

    যদি কখনো বিষণ্ণতার সন্ধ্যা নিয়ে
    অস্ত আকাশ ভরিয়ে দিয়ে
    এলে দ্বারে বাউল সুরে,
    অলিগলি ঘুরে ঘুরে…
    কিংবা কোনো পথহারা পথিক
    পথ খুঁজতে দিক বিদিক
    পেয়ে গেলে আমার ঠিকানা,
    হঠাৎই দিলে হানা…
    শান্ত চোখ চুয়ে ঝরলো ব্যথা ভার…
    আমি কি করে ফেরাবো তোমায় প্রতিবার।

    যদি কখনো রাতের আঁধার মেখে
    নীল আকাশের এককোণে
    ধ্রুব তারার মতো ওঠো জ্বলে,
    আমাকেই চাও প্রতিপলে…
    কিংবা হুতোম প্যাঁচা হয়ে
    আমার শয্যার একপাশে,
    অনেক স্বপ্ন কুড়িয়ে, নীরবে যাও রেখে দিয়ে,
    আলোকিত করে দাও আমার অন্ধকার….
    আমি কি করে তোমায় ফেরাবো পুনর্বার।

    যতটা দূরে চলে গিয়েছিলে তুমি
    বুঝি তার চেয়েও দূরে সরে গেছি আমি,
    যদিও একাকিত্ব মিশেছে আমার রক্ত ফোঁটায়… শিরায় উপশিরায়
    হাড় – মাংসে… শরীরে … মজ্জায়….
    তবুও যদি আসো ভিক্ষাপাত্র হাতে ধরে,
    আমি তোমাকে ফেরাবো কেমন করে?

  • কবিতা

    কবিতা- অবুঝ সত্য

    অবুঝ সত্য
    -সীমা চক্রবর্তী

     

     

    ভীষণ কল্ক ভারে মিথ্যেরা ভগ্ন হবে যেদিন
    সত্যের পথ হয়ে যাবে আশাতীত মসৃণ।
    নিস্পাপ ভালোবাসা আজও নিলাম হয়
    পাড়ায় পাড়ায়,
    অবুঝেরা সত্যি মিথ্যের দোটানায়
    নির্দ্বিধায় মৃত্যুর পথ মারায়।
    কথার বুদবুদ কল্পনার ভিতে বাস্তব সাজায়…
    স্বপ্নের আবর্তে সোনালী সুখে,
    রাশি রাশি নক্ষত্র জ্বলে ওঠে চোখে মুখে…

    সব বুঝেও অবুঝ হয় মন,
    জীবন বিস্বাদ হওয়ার সমস্ত উপকরণ —
    জড়ো হয় একে একে মিথ্যের দ্বারে,
    ফ্যাকাসে সত্যরা তাই পিছু হটে বারেবারে…।
    বড় দেরি হয়ে যায় বুঝতে সত্যের মানে,
    মিথ্যের দূষিত পাঁকের টানে
    বিশ্বাস ততদিনে হয়ে যায় রাহাজানি…
    সত্যেরা আজও হাত পেতে আছে,
    কখনো পারে না হাসতে শেষ হাসি….
    আগামীর পথটা বড্ড পিছল, সর্বনাশী,
    তবু কেন যে বারেবারে…
    সত্যের মোড়কে পঙ্কিল মিথ্যাকে বুকে টানি!

  • কবিতা

    কবিতা- সংজ্ঞাহীন ভালোবাসা

    সংজ্ঞাহীন ভালোবাসা
    – সীমা চক্রবর্তী

     

     

    আকাশে আজও তেমন কনে দেখা আলো…
    সেদিনের মতো শেষ বিকেলে…
    সেই এক টুকরো সাদা কালো মেঘ
    আর অভিমানী আমি, তোমার চিবুক ছুঁয়ে…

    অন্ধকার নেমে আসাটা শুধু সময়ের অপেক্ষা…,
    নিকোটিনের গন্ধ মাখা চুম্বন
    তখনও ঝুলে তোমার ঠোঁটের ফাঁকে
    অথচ তোমার শরীরি ভঙ্গিতে কী নিদারুণ নিস্তব্ধতা!
    প্রত্যাশার সমাধিতে একাই ভিজে ছিলাম,
    তোমার উদাসীনতায়…

    চোখে চোখ রেখে আর শুনতে পাইনি সামুদ্রিক গর্জন!
    আকাশে কালো মেঘের দাপাদাপি
    ভাঙছিল শাদা মেঘের গুমোর…
    শেষ মুহূর্তরা বুঝি এভাবেই আসে
    এভাবেই অপেক্ষায় থাকে সংঞ্জাহীন ভালোবাসা…
    আর আমার মূল্যবান অনুভূতিরা।

You cannot copy content of this page