• কবিতা

    ভুল ছিল

    ভুল ছিল
    -সীমা চক্রবর্তী

     

     

    হয়তো আমার চিন্তাধারায় বিরাট কোনো ভুল ছিল
    স্বপ্নরা তাই থমকে গেলো, সময়ও প্রতিকুল ছিল।
    দেইনি তুলে জীবনটাকে ভবিষ্যতের হাতে
    বর্তমানকেও তাচ্ছিল্য করেছি দিনে রাতে।
    দেখিনি আমার চলার পথে সহস্র বাঁধার পাহাড় ছিল
    অন্তত পথের যাত্রা শেষে তাই এতো হাহাকার ছিল।
    কখন যে ভুলে গড্ডলিকায় ভাসিয়ে ছিলাম তরী
    যুগের সাথে তাল মেলাতে, খেলো সে গড়াগড়ি।
    কূল হারানো তরীখানির তুফানে পাল ছিঁড়েছিল।
    ভাঙা হালে ভাঙা তরী হতাশ হয়ে ফিরে ছিল।
    ভুলটা আজো পারিনি যুজতে, মাসুল যাচ্ছি গুণে
    যতোই জট চাইছি খুলতে, ততোই যাচ্ছি বুনে।
    শাস্তি যেটা পেলাম আমি, হয়তো সেটা পাওয়ার ছিল
    মানছি আমার চিন্তা ধারায়একটা ভুলের লহর ছিল।

  • অণু কবিতা

    শব্দহীনতা

    শব্দহীনতা
    -সীমা চক্রবর্তী

     

     

    যখন ভাবি লিখবো এক দীর্ঘ কবিতা
    তখনই শব্দ জগতে অদ্ভুত এক নিঃসীম নিস্তব্ধতা।
    নীরব শব্দকে সরব করি কোন সুপ্ত সাধনায়
    শব্দিত বহু শব্দ – বিম্ব পলাতক আয়নায়।
    সংযত কতো কল্প – শব্দর গোপনে অভিসার
    শব্দবিনা হয় না লিখন সৃষ্টি, শব্দঅনিবার।
    শব্দেরা আজ বিশৃঙ্খল, বিপন্ন শব্দ – বিন্যাস
    শব্দহীনতার শব্দে কবিতার, নিঃশব্দে দীর্ঘশ্বাস।

  • কবিতা

    অলীক

    অলীক
    – সীমা চক্রবর্তী

     

     

    এই যে তুমি যেমন আছো তেমন থাকো, আমারই থাকো
    নাম না ধরেও আমায় তুমি কাছেতে ডাকো, হৃদয়ে রাখো।
    তোমার সাথে কাটাই আমি সারাটা দুপুর, অলস দুপুর
    রুমঝুম করে অবিরত বাজে লাজের নুপুর, স্বপ্নের সুর।
    যদিও আছো আমার থেকে অনেক দূরে, বড্ডো দূরে
    কথাগুলো সব কল্লোলিত মুঠোফোন জুড়ে গানের সুরে।
    দেখা না দেখার ওপারে রয়েছি আমরা দুজন, শুধুই দুজন
    জানি সবই অলীক তবুও তুমি আমার সুজন, কাকলি কূজন।
    ভালো লাগে খুব অবসরে বসে ভাবতে, এটুকু ভাবতে
    মিষ্টি মধুর হাসি দিয়ে ভরে রাখতে, যদি থাকতে।
    লাল নীল সাদা মেঘ হয়ে ঝরে তোমার কথা, আমার কথা
    সবই তো অলীক, সত্যি শুধু নীরবতা, এই কবিতা।

  • কবিতা

    সেই সে দিন

    সেই সে দিন

    -সীমা চক্রবর্তী

    সেদিন জোছনা ভেজা রাতি,
    তুমি ছিলে পাশে তে আমার
    দু’চোখে ছিল নতুন দিনের স্বপন
    এক হলো জীবন দু’জনার।
    তোমার একান্তে এসে,
    বলিলাম অতি সর্তপনে
    “কথার মালিকা দিও,
    যুগ যুগ ধরে রাখিব স্মরণে”।
    সে দিন তোমার চোখে
    ভালবাসা ছিলো কি, জানি না
    জানি না কোনো সুর
    তব মনো বীণায় বেজেছিল কিনা।
    তারপর কেটে গেছে বহু বছর
    ফুরায়েছে কতো মাধবী রাতি
    তুমি ফিরো নাই
    আমি একাকী নিরালোকে, ম্রিয়মান সাঁঁঝবাতি।
    হয়ত সে ভালবাসা ছিলো
    তোমার এক ক্ষণিক স্বপন – বিলাস
    আজ তাই, নাই ছন্দ, নাই রক্তিম স্বাদ
    নাই সেই মধুপের মাস।
    গৌরী আকাশ নিঠুর নিসাড়
    গহন দূখে মানিলাম পরাজয়
    শেষ চেতনা দিয়ে রুদ্ধ করেছি দ্বার
    শূন্য করি মনের সঞ্চয়।
    সেদিনের জনতা মুখোর গৃহ-উৎসবে
    লভেছিনু এক সুখ – পল্লবিতা
    কোলাহল শেষে, আজ নিরালা ক্ষণে
    রচিনু একটি কবিতা।

  • কবিতা

    তুমি চলে গেছো

    তুমি চলে গেছো
    -সীমা চক্রবর্তী

     

     

    যাবার সময় বলেছিলে তুমি মোর দু’টি হাত ধরে
    “নিও খোঁজ, রেখো যোগাযোগ, নীল পত্র প’রে”।
    রাত জাগা তোমার দু’ নয়ন ছিল অশ্রুতে ছলছল
    হয়নি তো পত্রলেখা, শুকনো হয়েছে ক্লান্ত চোখের জল।
    কি যে লিখি তোমায় এতো যুগ পরে, ভেবেই হই আকুল।
    “তুমি চলে গেছো” এটুকু সত্যি, আর সব লাগে ভুল।
    যবে চলে গেছো আমার প্রভাতে ওঠেনি সূর্য আর
    কি ভাবে জানাই শব্দে ছন্দে, আমি নই তো লিপিকার।
    নানা কাজের ছ’লে – আছিলে তোমারে চেয়েছি ভুলতে
    মন কে বুঝিয়েছি, তোমা বিনা একা-একা পথ চলতে।
    কি যে লিখি নীল পত্র প’রে, জমছে শুধুই খুচরো ধূল
    “তুমি চলে গেছো” এটুকু সত্যি, আর সব লাগে ভুল।
    বুকের গভীরে চাপা পরে আছে পুরনো কত শত ব্যথা
    পত্রে কি ভাবে ব্যক্ত করবো, সেই সব স্মৃতি কথা।
    দু’জনাই আজ দু’জনার কাছে বিচ্ছিন্ন পথের যাত্রী
    মান-অভিমানের দিন ফুরিয়ে, নেমেছে নিশীথ রাত্রি।
    কি যে লিখি তোমায়, কথা-মালার শুকিয়ে গিয়েছে ফুল
    “তুমি চলে গেছো” এটুকু সত্যি, আর সব লাগে ভুল।

  • কবিতা

    ছোট্টো দাবী

    ছোট্টো দাবী
    -সীমা চক্রবর্তী

     

    অনেক কোলাহল আর স্বীকারোক্তির শেষে
    এবার আমায় একটু নীরব থাকতে দাও
    কল্পনার গোপন রঙে রাঙিয়ে তুলি
    মনের পর্দায় কারও ছবি আঁকতে দাও।
    বহু কালের পুরাণ পাখি জাগাতে চেয়ে
    ঘর-ছাড়া বয়ে-বয়ে সারাজীবন ক্লান্ত আমি
    অশান্ত ভাবনার অজানা তরঙ্গ আর
    তপ্ত ঝড়ের প্রহর আমার অনুগামী।
    এবার শুধু শেষের অশ্রু টুকু আমার
    আঁখির কোণে সংগোপনে ধরতে চাই
    স্বপ্নের নীল রঙ আর স্মৃতির ধূসরতাকে
    শান্ত সবুজ নিবিড়তায় ভরতে চাই।
    কবে কার অনুরাগে নদী হওয়া মন
    অথৈ নোনা-জলে জমিয়েছে পাড়ি
    বিফল আয়োজন,শিথিল রক্তাক্ত চরণ
    আধারমাণিক হোক আলোর দিশারী।
    না-বলা সে কথা সুপ্ত ব্যথার গভীরে
    তাকে ডাকতে দাও নীরব আহ্বানে
    রামধনু ধোয়া জলের রঙে কিছু ছবি
    অঙ্কিত করতে চাই শেষ অঙ্কনে।

    ভোরের শিশিরে,হিমেল কুয়াশায় ভিজতে দাও
    আর কথা নয় এটুকু দাবী আজ পূর্ণ হতে দাও।

  • কবিতা

    ভাল্লাগে না ছাই

    ভাল্লাগে না ছাই
    -সীমা চক্রবর্তী 

     

     

    হটাৎ আজ খুব সকালে ভাঙলো ঘুমঘোর

    জানলা পানে তাকিয়ে দেখি স্বপ্ন-মাখা ভোর।

    পাখির মিষ্টি কুজন আর মন্দ মন্দ হাওয়া

    নীল আকাশে এক টুকরো মেঘের তরী বাওয়া।

    কানে কানে বলল এসে রঙ্গিন প্রজাপতি

    ‘ভালো করে তাকিয়ে দ্যাখ,ফুরালো যে রাতি’।

    মন-খারাপের জায়গা নেই আর নতুন এই ভোরে

    মখমলি আলোয় বদ্ধ রাত যাচ্ছে সরে সরে।

    এতো আনন্দ!  ভাবছি যে কোথায় তাকে রাখি

    দেখে দেখে আশ মেটেনা ক্লান্ত হয়না আখি।

    হলুদ একটা পাতা উড়ে পরলো আমার গায়ে

    চমকে উঠে বসি, স্বপ্ন-ঘোর ভেঙে যায়।

    কোথায় ভোর কোথায় পাখি,নেই তো কিছুই আর

    তীব্র রোদের ঝলকানি আর বাহন দের চিৎকার।

    মন টা গেল খারাপ হয়ে, ভাল্লাগে না ছাই

    এতো সুন্দর মেজাজ টার হলো ফর্দাফাঁই।

  • কবিতা

    তুমি

    তুমি
    -সীমা চক্রবর্তী

     

    আমার সমস্ত অন্তর জুড়ে আছো তুমি
    আছো আমার দু’নয়নে
    আছো আমার আত্মার গভীরে
    আছো কজ্জলের মৌন প্রসাধনে।
    সত্ত্বায় কোনো হিন্দোল নেই
    নেই কোনো মিৎসুবিসির আগ্নেয়পাত
    ত্রস্ত ভীতু পায়ে কেবল হেঁটে চলা
    হিসাবের পাহাড় জমে দিন-রাত।
    কতো আদিম কাল ধরে তুমি আছো
    আমার শিরায়, আমার দেহে
    মনের ভিতর মন হয়ে মিশে আছো
    যুগ যুগ ধরে অপার বিরহে।
    আশা – প্রত্যাশার চাহিদা – যোগানে
    নীরব রাতের ক্লান্ত জাগরণে
    মেলেছো তোমার বিস্ময় নয়ন
    উড়ান ভরেছো অবাধ বিচারণে।
    আমার প্রতিটি শোণিত প্রবাহে
    প্রতিক্ষণে শুনি তোমার পদ-ধ্বনি
    অন্ধকারে হেঁটে যাই, জ্বালি না আগুন
    তুমি আছো অবধারিত জানি।
  • কবিতা

    ছোট্ট সুখ

    ছোট্ট সুখ 
    -সীমা চক্রবর্তী 
    একটু খানি চাওয়া আর একটু খানি পাওয়া
    তাই নিয়ে তোমার আমার নিত্য তরী বাওয়া।
    পুড়ছে দেখো পুড়ছে এ মন পুড়েই হবে শুদ্ধ
    দহন জ্বালা জানবে না কেউ মনের কপাট রুদ্ধ।
    কষ্টটাকে বুকে চেপে হাসো কতো যত্নে
    আমিও আমার নকল হাসি সাজিয়েছি রত্নে।
    আমি জানি তোমার ব্যথা, তুমিও জানো আমার
    প্রতীক্ষা করা অ-হেতুক, সময় নয় তো থামার।
    তবুও আমরা বাঁচবো নিয়ে নকল-মুখোশ হাসি
    সর্বনাশের খেলায় মেতে হবই সর্বনাশী ।
  • কবিতা

    ব্যর্থতা

    ব্যর্থতা

    -সীমা চক্রবর্তী

     

    আমার অন্তর থেকে জেগে উঠছে
    এক অন্তঃসার শূণ্য হাওয়া
    আমি ব্যর্থ আমারই কাছে প্রতি মুহূর্তে
    অনুভবে তাই আসন্ন ঝড়ের ছোঁয়া।
    অসাফল্যের আঘাতে জর্জরিত আমি
    পরাজিত যোদ্ধা, ক্লান্ত নিঃশোষিত
    কেটেছে কতো লগ্নের পর লগ্ন
    আমার চলার মসৃণ গতি হয়েছে ব্যাহত।
    হতাশার অঙ্গার জীবন শক্তি কে করেছে গ্রাস
    আমিত্বর গরিমায় শুরু হয়েছে মন্দন
    অখণ্ড ক্ষমতা নিয়েও আজ সমাপ্তির প্রতীক্ষায়
    ভগ্ন হৃদয় মাঝে এক শীর্ণ করুণ স্পন্দন।
    উন্মুক্ত আকাশে অগ্নি বর্ষণ, গুরু গম্ভীর নাদে
    জানি না কাল কি হবে!
    হয়ত সেই বর্ষণেই সিক্ত হবে আমার আত্মা
    বিরামহীন এই অস্থিরতার শীতল অনুভবে।

You cannot copy content of this page