• কবিতা

    কবিতা- অমলকান্তি ও আমি

    অমলকান্তি ও আমি
    -সুদীপ্তা মন্ডল

    “অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল…”
    আর আমি চেয়েছিলাম রোদ্দুর গায়ে মাখতে।
    সকালের সোনা রোদ গায়ে মেখে
    ডানা মেলতে মেলতে জোনাকি হয়ে যেতে।
    ক্ষান্ত-বর্ষার চিলতে রোদ্দুরে ভিজতে ভিজতে
    রামধনুর রঙে মিলিয়ে যেতে।
    মধ্য দুপুরের খর রৌদ্রে উষ্ণ হতে হতে
    বাষ্প হয়ে ধূসর মেঘে হারিয়ে যেতে।
    “অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল…”
    আমি চেয়েছিলাম রোদ্দুর গায়ে মাখতে।
    অমলকান্তি ও আমার দেখা হয়নি কখনো,
    আমাদের ইচ্ছেরও সাদৃশ্য নেই কোনো।
    অথচ আমরা বেলাশেষে দাঁড়িয়ে একবিন্দুতে।
    অমলকান্তি, রোদ্দুর হতে পারেনি
    আমিও পারিনি রোদ্দুর গায়ে মাখতে।
    অমলকান্তির মতো আমারও বেয়াড়া ইচ্ছেরা
    উড়ে যেত ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে—
    আর তারপর? তারপর একটা একটা করে
    স্বপ্নের পালক পড়ল খসে
    অবশেষটুকু বিলীন হলো স্বপ্নহীন নিদ্রা হয়ে।।

  • কবিতা

    আরও একবার

    আরও একবার
    -সুদীপ্তা মন্ডল

     

     

    ভাবছি আবার নতূন করে
    নির্মাণ করব জীবনটা।
    শেষ থেকে শুরু পথে
    ধাবিত করব চলাটা।
    মনের গভীরে শুকিয়ে যাওয়া
    প্রত্যাশার শিশির অবিরত,
    জমা করি পাখির পালকে
    বিন্দু বিন্দু করে আবারও।

    ভাবছি আবার জ্বালব
    সাঁঝবাতি রূপকথার।
    মোম-জ্যোৎস্না গায়ে মেখে
    পথ হারাব তারায় তারায়।
    আবারও, ‘কিশোরীর’ নিক্কনে
    সোহাগী পায়ের উচ্ছলতায়,
    অন্তহীন হুল্লোড় তুলি
    নিষেধ না-মানা নিয়মে ‌।

    ভাবছি—
    ভাবছি হয়ে উঠি আবার,
    নাম-না-জানা প্রেমিকের প্রেম,
    যা কেবলই নিকষিত হেম।
    অথবা যে প্রেমের আকুলতায়,
    হিন্দোলিত হয়
    নিষ্পলক দৃষ্টির আবেগ।

    ভাবছি—
    ভাবছি ফিরি আবার
    কৈশোরের ভীরুতায়।
    দেখি নিষ্পাপ চোখে
    অফুরান আবেশে
    নতূন জীবনের অভীপ্সায়।

  • অণু কবিতা

    সে–দিন

    সে–দিন
    -সুদীপ্তা মন্ডল

     

     

    সে ছিল এক বৃষ্টি-দিন।
    রিমঝিম রিমঝিম অনুরণন
    কানে মেখে ভেসে যাওয়া।
    সোহাগের সাম্পানে
    ঝুপ্পুস মেঘের দলে
    হারিয়ে যাওয়া।

    আর ছিল দোলনচাঁপার
    আন্দোলনে,কদম ফুলের
    রেণুর ভেজা আহ্বান।
    সেদিন ছিল কৃষ্ণমেঘের
    চঞ্চলতা। জল-নূপুরের ঝমঝম
    মাদকতার শিহরণ।

    আর ছিল পূবালী হাওয়ার
    দুষ্টুমিতে, এলোমেলো
    আঁচলের অবাধ্যতা।
    আজও এক বৃষ্টি-দিন।
    আজও বাতাসে
    চাঁপা ফুলের মদিরতা।।

  • কবিতা

    লেখার জন্য

    লেখার জন্য
    -সুদীপ্তা মন্ডল

    লেখার জন্য একটা মন চাই।
    যে মনে, ঘোরাফেরা করবে শব্দরাশি।
    অবাধে করবে তারা আনাগোনা,
    স্বচ্ছন্দ হবে তাদের চলরাশি।
    ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়বে ইচ্ছেরা।

     

    লেখার জন্য একটা মন চাই।
    যে মনটিতে ছন্দরা খেলে বেড়াবে,
    অনায়াস হবে তাদের বিচরণ।
    বিক্ষিপ্ত কথারা একের পরে মিলবে
    যেখানে, হবে ছন্দের মেলবন্ধন।

     

    লিখতে হলে হৃদয় চাই একটা,–
    যে হৃদয়ে হবে কল্পনার বিস্তার।
    ঝরে পড়বে হৈমন্তী হিমের মতো,
    স্বপ্নরা আসবে শত শত
    কল্পিত কথা বিন্যস্ত হবে অবলীলায়।

     

    লিখতে হলে হৃদয় চাই একটা,–
    যে হৃদয়ে বর্ন আসবে বর্ণালীর ছটায়।
    বর্ণের সঙ্গে বর্ন যোগে হবে শব্দমালা।
    রামধনুর মতো ই যার,
    সাতরঙের ভেলায় মিলবে কথামালা।

     

    লেখার জন্য হৃদয় চাই একটা,
    একটা চাই মন।
    তবেই হবে স্রষ্টা তুমি,
    তোমার হবে সৃজন

  • কবিতা

    তোমাকে লেখা

    তোমাকে লেখা
    -সুদীপ্তা মন্ডল

     

     

    ভয় পাচ্ছ–কথা বলতে ?
    ভাবছ ? যদি আবার ও
    দেখা করতে বলি ?
    ভেবো না , বলব না আর
    কোনো দিনই।
    লজ্জাহীনতার ও তো
    শেষ আছে , না কি।
    আর কতো নির্লজ্জ হব , বলতো
    আর ও কতো চাইব করুণা ?
    বরং তুলে নিই বিষের পেয়ালা।

    যন্ত্রনা-বিদ্ধ শরীর বেয়ে
    নামতে থাকে উপচে পড়া বিষ।
    কোষে কোষে তীব্র বেগে
    ধাবিত হয়। তীক্ষ্ণ জ্বালায় নীল
    অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। চির নিষুপ্তির
    অখন্ড নীরবতায় হয় নিশ্চুপ।

  • কবিতা

    ভয়ার্ত

    ভয়ার্ত
    -সুদীপ্তা মন্ডল

     

     

    প্রত্যহ রাত্রি যাপনের পর
    একটা ভয়ার্ত দিন শুরু হয়।
    ভয় হয় ক্ষুদ্র হতে থাকা
    আমাদের মননকে।
    ভয় হয় সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া
    অনুদার হৃদয়কে।

     

    ভাঙাচোরা দিনে,মনে ও
    ধরেছে পচন।
    জাত-ধর্ম দেখে ঠিক হয়
    প্রতিবাদের প্রকরণ।
    শঙ্কিত হৃদয়ে চোখ মেলি
    দিন-প্রতিদিন।

     

    শঙ্কা ; সঙ্কুচিত হতে থাকা
    অন্তরকে।
    শঙ্কা; অসংবেদনশীল হয়ে ওঠা
    চিন্তনকে।
    প্রত্যক্ষ করি , কুঁকড়ে থাকা
    সন্ত্রস্ত দিন-সমাপন।
    প্রত্যহ করি এক ভয়ার্ত
    দিন যাপন।
    করি প্রত্যহ তবুও;এক নূতন
    ভোরের আবাহন ‌।

  • কবিতা

    দেখেছ কখনও

    দেখেছ কখনও
    -সুদীপ্তা মন্ডল

     

     

    কখনো কারো জীবনকে
    চলে যেতে দেখেছ?
    ওই দেখো আমার জীবন চলে যায়।
    দেখো কেমন করে সে
    মোচড়ানো স্বপ্ন রেখে যায়।
    স্বপ্নরা অনাথ হয়।

    জীবনহীন শরীরকে
    কেউ কখনো দেখেছ?
    কেমন করে পাপের পঙ্কিলে
    আবর্তিত হয়?
    ক্লিষ্ট শরীর,–
    বোধহীন হয়ে রয়।

    করেছ কখন ও,–
    ছেড়ে যাওয়া জীবনের খোঁজ?
    জীবন ছুঁতে গিয়ে মৃত্যুকে চুম্বন?
    তার হিমশীতল চাহনিতে
    পরম শান্তির আবাহন।

    তনুমনে লেগে থাকা
    মরণের আঘ্রান
    নিতে নিতে; আবার ও
    অনাস্বাদিত জীবনের
    অভীপ্সায় ফিরে আসা।
    আর কঠিন শীতলতায়
    নতজানু হওয়া।
    দেখেছ কখনও?।

  • কবিতা

    মুক্ত আজ

    মুক্ত আজ

    -সুদীপ্তা মন্ডল

     

     

    ‘ ভাবনা’ তোমাকে দিলাম ছুটি, –
    পুঞ্জীভূত অভিমান আমার
    তুমি যাও, যেখানে দিগন্ত
    ছুঁয়েছে আকাশ।

    রুদ্ধ আকুল আবেগ আমার
    চলে যাও, দূর সাম্পানে
    অতলান্ত সাগরের পাশ।

    ধ্বস্ত বিমোচিত মন আমার
    যাও চলে, মহাশূন্যের গর্ভে
    যেখানে অমানিশার আঁধার।

    আহত বিক্ষত হৃদয় আমার
    তুমি ও যাও, দূর আকাশে-
    ওই কৃষ্ণগহ্বরে চির নিদ্রায়।
    ‘ভাবনা’ আজ তোমার ছূটি,
    ‘কল্পনা’ তোমায় ও দিই ছুটি,
    ‘স্বপ্ন’ আজ তোমার চির মুক্তি।।

  • অণু কবিতা

    শুধু তোমাকেই

    শুধু তোমাকেই

    -সুদীপ্তা মণ্ডল

     

     

    তোমার আবছায়াতে –

    একটা জীবন অতিক্রান্ত করতে পারি।

    তোমার প্রতিমূর্তির কাছে-

    আমৃত্যু নত জানু হতে পারি।

    তোমার চেতনায়,

    আমার অবচেতনের বাঙ্‌ময় করতে পারি।

    শুধু তোমাতেই-

    আমার স্খলিত জীবন

    পুনর্নির্মাণ করতে পারি।

    আমার সুপ্ত অন্তর প্রস্ফুটিত করতে পারি।

    আমার নিদ্রিত হৃদয়

    উন্মোচন করতে পারি।

    তোমাতে , শুধু তোমাতেই।

  • অণু কবিতা

    হেরেছি

    হেরেছি
    – সুদীপ্তা মন্ডল

     

    হেরেছি আমি-

    তাই মায়া-কাজল দিইনা আর।

    রুঢ়তার কাছে পরাভূত বারংবার।

    হেরেছি তো,
    তাই স্বপ্নিল-আবেশ নেই আর।
    নির্লিপ্ততার কাছে পরাজয় করি স্বীকার।
    মূঢ় আমি-
    তাই অসারতার কাছে
    অবনত হই আজ।
    মূঢ়তাই তো,
    তাই নৈরাশ্যের মাঝে,
    ‘আশ্রিত-ছলের’ কাছে
    আশাহত আমি বারংবার।।

You cannot copy content of this page